ছোরাটির কিছু কথা

এক।
এবং সে ছোরা,
খালের ঘোলাজলের
কোলাহলে
পড়ে থাকা সে
একদা-রক্তাক্ত
ক্লান্ত হতাশ ছোরা –
রাগে নিশপিশ বাঁট নিয়ে
একদা-উদ্ধত
একবুক যৌবন নিয়ে
মিছেমিছিই
দেখে স্বপ্ন
আর গুনগুন করে গান :
আ হা,
তেমন হাতে
ফিরে গেলে ফের
যকৃৎ কণ্ঠনালী চিরে চিরে
ফোটাতো কত
বর্ণিল বাগান!

দুই।
আর এই মেয়েছেলের
বুকে বিঁধিয়ে দিয়ে
ঠা ঠা করে হাসছে
হন্তারক শহর কিংবা নিয়তি

ইত্যবসরে তারই
প্রেমে পড়ে গেছি।
ভগবান,
সে কি যে সে দুর্গতি!

তিন।
আরে আমারে শুধাইছেন!
আমারে জিগান না ক্যান ধর্মাবতার?

পলিথিনের ভিত্‌রে
এমনে আধোয়া অপবিত্র
ফ্যালাইয়া
‘এক্সিবিট এক্সিবিট’
না চিল্লাইয়া
দোহাই লাগে
আমারেই জিগান

চার।
হলোই না হয়
একফালি
নির্দোষ আপেল,
তা কাটার নাম করে
নিষ্পলক তুমি
কী করে
ফেঁড়ে যাও
ছোঁড়াটার বুক
সারাদিন রিহার্সেল
দিয়ে আসা
ছন্দের অসুখ!

পাঁচ।
অথচ খেলশেষে
রঙিন তারস্বরে
তুমিই
ঝাঁপ দিয়েছিলে জলে,
আঙুলছাপ শোণিত
দূ-উ-রে ভেসে গেলে
কেঁদে বুক ভাসিয়েছিলে
দূরাগত কৌতূহলে

৩,০৯৫ বার দেখা হয়েছে

২৯ টি মন্তব্য : “ছোরাটির কিছু কথা”

    • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

      কিছু নতুনত্ব আনার চেষ্টা বিষয়ে।
      শাম বেনেগাল এর একটা ছবি দেখেছিলাম -- সূরজ কা সাতওঁয়া ঘোড়া (The seventh horse of the Sun). দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম, তাতে একজন লেখকের চরিত্র ছিলো, ইয়ারদোস্তদের মাঝে তার লেখালেখি নিয়ে ঠাট্টাজনিত একটা প্রশ্নের উত্তরে সে বলেছিলো -- যে কোন কিছু নিয়েই গল্প হতে পারে, এমন কি আপাত মামুলি কোন কিছুরও অবিশাস্য গল্প থাকতে পারে। বন্ধুদের একজন ততোধিক আমোদে আঙুল তোলে টেবিলের কাছেই পড়ে থাকা একটা ছোরার দিকে -- এমনকি এটারো? লেখক তখন সে ছোরাটা নিয়েই গল্পটা বলতে শুরু করে --- যে গল্পে আসলে তার চারপাশে বন্ধুরা সবাই এক একটা চরিত্র। ছুরিটা সেই গল্পের একটা উল্লেখযোগ্য বাঁক --- না দেখিয়ে দিলে মানা কঠিন।

      তো এক এক সময় এসব মামুলি জিনিস , ধরো সেফটিপিন বা বোতামের হাত ধরেও আসতে পারে গল্প রহস্য বা কবিতা। কি বলো?

      তবে শেষপর্যন্ত আমি লিখে ফেলি ওই কেমন প্রেমমার্কা কবিতা --- যা আমার মস্ত দুর্বলতা। একেবারে শুদ্ধ দার্শনিক বা নান্দনিক কবিতা লিখে উঠতে পারিনা।

      জবাব দিন
  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আপনার সব কবিতায় দারুন, অসাধারন ইত্যাদি বলতে এখন বিব্রত বোধ হয়, কিন্তু এর থেকে ভাল কিছু খুঁজে পাই না 🙁

    :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    একসময়ে আমার ধারনা ছিল, কবিতা পড়া মানেই একধরনের ধাঁধার উত্তর খোঁজা। লেখক কি বলতে, বুঝাতে চেয়েছেন সেটা বের করে আনা। লেখকের বলতে চাওয়া কথাটার যত কাছাকাছি যাওয়া যাবে, কবিতা পাঠ ততই সার্থক।
    এটা কবিতা পাঠে একটা অকারন চাপ সৃষ্ট করে, যেটা ঠিক না।
    কবিতা পড়া নিয়ে এইরকম ধারনার এক সময়য়ে রফিক নওশাদ স্যারের উপদেশ পেলাম: কবি কি বুঝাতে চেয়েছেন খুজতে যেও না। তুমি তোমার দৃষ্টভঙ্গি থেকে কবিতার অর্থ কর। সেটা কবির বক্তব্যের উল্টো কিছু হলেও তাতে কিছু যায় আসে না। কবির যেমন স্বাধিনতা আছে যা খুশি লিখার, পাঠকেরও স্বাধীনতা আছে যাখুশি অর্থ করারা। আর পাঠক যে অর্থ করছে, কবি তা বুঝাতে চাক বা না চাক, পাঠকও ঠিক।
    কবিতা পাঠ নিয়ে ওনার আরেকটা উপদেশ ছিল, "অর্থ বোঝাটাই কবিতা পাঠ থেকে অনন্দ আহরনের শেষ কথা নয়। কবি যে শব্দ-বর্ণ নিয়ে খেলা করছেন এবং এর মধ্য দিয়ে যে একটা মোহময় পরিবেশ সৃষ্টি করছেন কবিতা পাঠের সময়য়ে সেটার সৌন্দর্য উপভোগ করাটাও জানতে হবে। তখন আর কবিতা পাঠে কোন ক্লান্তি আসবে না।
    ব্যাপারটা ওয়ার্ড নাবুঝেও কেবলি সুরের মুর্ছনায় গান শোনার মত।

    এই ভুমিকা এইজন্য যে এই কবিতাটা আমার কাছে সুখপাঠ্য লেগেছে কিন্তু তার কারন বলতে পারবো না।
    কতটা বোঝার জন্য, কবির কাছে পৌছানোর জন্য আর কতটা শব্দের খেলায় সেটা অনির্ধারিতই থাক......


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

      এত চমৎকার একটা মন্তব্য পেয়ে আজকের ভীষণ হতাশার দিনটা একবারে শেষপ্রান্তে এসে ঝলমল করে উঠলো পারভেজ ভাই। 'কবিতায় আছি' কেবল এই বোধটা থেকে লেখালেখির সংগ্রাম চালু রাখা। পাঠকের ভাললাগা শিরে ধারণ করে নিয়ে আরেকটি লেখার জন্যে তৈরী হওয়া।

      ক্যাডেট কলেজে আমাদের সময়েও বাংলা এবং ইংরেজীর বেশ কিছু অত্যন্ত উঁচুমানের শিক্ষক পেয়েছিলাম যাঁদের কারণে সাহিত্য অন্ততপক্ষে মন দিয়ে পড়ার মন তৈরী হচ্ছিলো তখনকার দিনগুলোতে। রফিক নওশাদ স্যারের কথাগুলো অব্যর্থ এবং অমূল্য। আমরা পেয়েছিলাম হাসনাত হারুণ স্যারকে (এই ক'দিন আগে রংপুরের অধ্যক্ষ হলেন), হুমায়ূন কবীর, নজরুল ইসলাম, আখতার হোসেন স্যারদের ---- পথের পাঁচালী, লালসালু, পদ্মা নদীর মাঝি দিয়ে সেই যে পাঠ দিলেন তা পাথেয় হয়ে রইলো সারা জীবনের জন্য।

      জবাব দিন
      • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

        বাঙলা সাহিত্যে আগ্রহটা বেড়ে উঠেনি। অথবা বলবো বেড়ে উঠতে কেউ সহায়তা করেনি। কোন এক লাইব্রেরী পিরিয়ডে ক্লাশ টেনে থাকতে হাসুলী বাঁকের উপকথা ইস্যু করেছিলাম। পোলাপান সেদিন সকাল সন্ধ্যা হরতালের মত পচানি দিয়েছিল। বাঙলা পরীক্ষাগুলোতে শেষ মিনিটে টেনে হিঁচড়ে গ্রামান্তর দৌড় শেষ করার মত পাশ করে যেতাম। যেই কয়জন বাঙলার শিক্ষক পেয়েছি ক্যাডেট কলেজের ছয়টি বছরে, তাদের কেউ ডেড পোয়েট'স সোসাইটির মত আগ্রহ তৈরী করতে পারেন নি। এক সেলিনা খাতুন ম্যাডাম হয়তো পারতেন কিন্তু তিনিও টিকতে পারেন নি ক্যাডেট কলেজের ধরাবাঁধা নিয়মে। হয়তো ঐ পরিবেশে এতকিছু সামলে সম্ভব নয়। তারপরেও কিছু মানুষ আছেন যারা চেষ্টা করে যান। আপনারা সৌভাগ্যবান এরকম শিক্ষক পেয়েছেন। আমাদের এরকম যিনি ছিলেন তিনি ততদিনে অধ্যক্ষ এবং আমরা দুই চোখে দেখতে পারতাম না; এখনো পারি না। রফিক কায়সার স্যার। উনি মাঝে একদিন কোন এক কারণে ইলেভেনের একটা বাঙলা ক্লাশ নিয়েছিলেন। সেই ৪০ মিনিটের জন্য উনাকে ঘৃণা করা ভুলে গিয়েছিলাম। কিছুটা আফস‌োস জন্মেছিল, এই লোককে অধ্যক্ষ হিসেবে ঘৃণাই করা লাগলো, বাঙলার শিক্ষক হিসেবে ভালবাসা যেত। ইদানিং মনে হয় অনেক কিছু পড়া বাকি। এক জীবনে সম্ভব নয়।


        \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
        অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

        জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোস্তাফিজ (১৯৮৩-১৯৮৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।