ভেতরে কেউ কাঁদছিল

লেখালেখির বিশেষ কিছু না পেয়ে অগত্যা কবিতাপাঠ।আমার অত্যন্ত পছন্দের একটি কবিতা।
কবিতা: কাঁদছিল, কেউ কাঁদছিল। সৈয়দ শামসুল হক।
সুর কৃতজ্ঞতা: Missing you, আনন্দ শংকর।

ভেতরে কেউ কাঁদছিল

কাঁদছিল, কেউ কাঁদছিল

ভেতরে কেউ কাঁদছিল তখন থেকে কাঁদছিল
সেই তখন থেকে
যখন আমার সাজানো এক ঘর ছিল
যখন তার দরোজা থেকে বিরাট তালা ঝুলছিল
ভেতরে কেউ কাঁদছিল
তখন থেকে যখন থেকে
তোমার মতো কারোর দিকে দেখার দুটো চোখ ছিল
যখন কিছু বলতে গিয়ে
হঠাৎ করে ভয় ছিল
নাম ধরে যে ডাকব তখন
সেই সাহসের টান ছিল
তখন থেকে কাঁদছিল ভেতরে কেউ কাঁদছিল
কানে আমার যাচ্ছিল
বোকা যেমন – সে নিজে নয়
এই রকমই ভাবছিল
ভেতর থেকে ভাবছিল
অন্য কেউ কাঁদছিল
যখন তোমার গাছে গোলাপ ধরছিল
তখন আমার বুকটা ভীষণ কাঁপছিল
যখন তোমার হাতে আমার হাত ছিল
তখন আমার মনটা কেমন করছিল
তখন হঠাৎ সাগর উঠে পাহাড় কিছু ভাঙছিল
চোখের পরে
ঠোঁটের পরে
শূন্যতার হাত ছিল
বুকের পরে স্তব্ধতার ভার ছিল
বেলার আগে বেলা পড়ে যাচ্ছিল
তোমার দেখা পাবো কিনা সেই রকমই ভয় ছিল
ভেবেছিলাম আলাদা কেউ কাঁদছিল
তারপরে যেই এগিয়ে এলে
শূন্যতাকে সরিয়ে দিলে
স্তব্ধতাকে গড়িয়ে দিলে
দরোজা খুলে দেখিয়ে দিলে
আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিলে
আমার মধ্যে একলা আমি তখন থেকে কাঁদছিল।।

১২ টি মন্তব্য : “ভেতরে কেউ কাঁদছিল”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    খুব ভালো একটা কাজ হলো। সেই সাথে খুবই ভালো একটা উদ্যোগ।
    তবে একটা খুব ছোট একটা অনুরোধ কবিতার লেখনী যদি দিয়ে দেয়া যায় তবে বেশ হয়। আমাদের যাদের গলায় আবৃত্তি নেই তারা একটু চেষ্টা করতাম একা একা।
    আশা করছি আপনার উদ্যোগে আরো অনেকেই আগ্রহ পাবে।
    কলেজে অনেকেই চমৎকার আবৃত্তি করতেন। আবার তাদের আবৃত্তি শুনতে পাবার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

      ধন্যবাদ রাজীব।আসলেই কবিতাটা উদ্ধৃত করা উচিত ছিলো।দিচ্ছি কিছুক্ষণের মধ্যেই।
      আমার কাছে মনে হয়, ব্লগে শুধু লেখাই না- অডিও বা ভিডিও-ও পোস্ট হিসেবে আসা উচিত।ভিডিও ব্লগের আবদার আমার সমসময়েই ছিলো পিকনিক বা গেট টুগেদারের স্মৃতিচারণমূলক পোস্টের জন্য।

      আমিও একা একা প্র‍্যাকটিস করার লোক।সাহস করে এখানে দিয়ে দিলাম। 🙂

      জবাব দিন
          • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

            অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।
            সৈয়দ হকের গেরিলা কবিতাটার কথা মনে আছে দাদা?
            আমি আপনারে হক সাহেবের ই মেইল এড্রেসটা দিতাছি। আপনি তারে মেইল কইরা দিয়েন আপনার প্রচেষ্টাটা।


            এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

            জবাব দিন
            • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

              রাজীব,
              'গেরিলা' কবিতাটা হচ্ছে ক্যালিগ্রামের উৎকৃষ্ট উদাহরণ, গিওম অ্যাপোলিন্যাখ্‌ যার শ্রষ্টা - আমার খুব পছন্দ 'গেরিলা'।

              হক সাহেবের ইমেইলের জন্য ধন্যবাদ।কিন্তু এই কবিতা অনেক রথী-মহারথী আবৃত্তিকারের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে, আমি খামাখা এটা পাঠিয়ে বর্ষীয়ান এই কবিকে বিব্রত করতে চাইনা। 😛

              তাছাড়া সৈয়দ হক নিজের কবিতা পাঠ করেন অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ভাবে, তুলনা হয়না; আমার শোনার সৌভাগ্য হয়েছিলো।

              জবাব দিন
              • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

                ক্যালিগ্রামের শ্রষ্ঠা কে জানতাম না। এই সুযোগে জানা গেলো।
                অনেকেই করেছেন মানি।
                কবির সাথে মেলায় দেখা হয়েছে কয়েকবার; সালাম দিয়েছি, কয়েক লাইনে মুগ্ধতা জানিয়েছি।
                আর আপনার আবৃত্তি নিয়ে বলছি।
                কেউ কি আলী যাকেরের চেয়ে ভালো নূরলদীন করতে পারবে; কিনবা প্রস্তাবনাটা নূরের চেয়ে ভালো!
                তবুও তো অনেকে চেষ্টা করে যাবে।
                আপনারটা দুরস্ত হয়েছে।
                সবাই তো আর মালাকারদের মতো ফুলের মালা বা মঞ্জরী বানাতে পারে না। কবি কি পারে ক্ষুদ্র বা অপরিপক্ক মালাটি দূরে ঠেলে দিতে।
                কবি তো ব্যাবসায়ী নয়।


                এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

                জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।