ব্যক্তিগত রেসিপি-৮

প্রায় সিগারেটের সমান হয়ে এসে ছাইয়ের লম্বাটে কায়াটা আর পারলোনা, টুপ করে খসে পড়লো মেঝেয়।আরেকটা ধরাবো কি ধরাবোনা ভাবতে ভাবতে মার্লবোরোর প্যাকেটটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকি, অস্থিরতাটুকু আড়াল করবো বলে।
জানলা দিয়ে বারোতলা থেকে আকাশ দেখছে পৃ, দেখেই চলেছে।অনেকক্ষণ কোন শব্দবিনিময় নেই, কেবল মনে মনে নিরুচ্চারে পরষ্পর কথা কয়ে চলেছি দুজনে।ও জানলায়, আমি এইখানে ছাইদানের পাশে উবু হয়ে।
সিগারেটের একচোখা আগুনটাকে পিষে ফেলতে ফেলতে আমি ওকে জিজ্ঞেস করি, না গেলে হয়না?
হয়না, যেতেই হবে।
এই তো এলি, এরি মধ্যে আবার দেশছাড়া হবি?
উপায় নেই জানিস।তবু কেন রক্ত ঝরাস এমন করে!

কোন কথা খুঁজে পাইনা।পৃ ভালো করেই জানে আটকে রাখার মানুষ আমি নই, অক্ষম হাহাকারটা শুধু দুজনের মধ্যিখানে হা হা করে ওঠে।
বাইরে তখন তপ্ত দুপুরবেলাটা কেবল মোলায়েম বিকেলের দিকে ঝুঁকে পড়তে শুরু করেছে।আকাশে সাদা মেঘেরা ছোট ছোট দলে উপদলে বিস্রস্ত ছড়িয়ে।নীচে স্রোতের মতো বয়ে চলা ঢাকা।আর আমরা দুটি পলায়নপর ইমোশনাল জীব অফিস কামাই করে এই ঘরটায় পৌঁছে দুটো নিস্পন্দ মোমের মূর্তি দু’কোণায় একটু একটু করে গলছি।
প্রাণপণ ইচ্ছে হয় একছুটে পৃ-র কাছে যাই, দুহাতে কাঁধ ঝাঁকাই কি জড়িয়ে ধরি। অথচ এইটুকুনি দূরত্ব কি দুর্লঙ্ঘ্য মনে হয়!

একেকটা সবুজ-বাঘের-মতো
-বিকেলবেলার পেটে
আমরা দুজনে
অনায়াসে এঁটে
যেতাম কি না
এমন উদ্ভট তর্কে নেমে
পার্কের পেটে
চলে গেছি রোজ,
ঘাসে ঘাসে ছড়িয়ে
বাদামের খোসার অরাজকতা
রাখিনি খোঁজ
আকাশের চেয়েও কতটা
কমনীয় ভেবে গেছি
তোর ওড়নার নীল অত্যাচার….

হঠাৎই একটা বাঘের মতোই আমি লাফিয়ে উঠি।
পৃ চমকে উঠে পেছনে তাকিয়েই খিলখিল করে হেসে ফেলে, এক্ষুণি ট্যাক্সি চলে আসবে।ড্রিংকটা বানাবিনা?
সে আর বলতে!দু-তিন লাফেই গিয়ে ভদকার ঘাড়টা মটকে ধরি।

আজকে খুব তাড়াতাড়ি যা বানাচ্ছি তার উপকরণগুলো:
Absolut Citron (লেমন ফ্লেভারড যে কোন ভদকা হলেও চলবে)- ৬০ মি.লি.
Tequila – ৩০ মি.লি.
Sweet Vermouth – ১/২ চা চামচ
লেমনেড – ৬০ মি.লি.
সোডা – ৩০ মি.লি.
স্ট্রবেরি (মাঝারি সাইজ) – ৩টা
লেবু – ১ টুকরো ও ১টা গোল স্লাইস
আইসকিউব কয়েকটা

প্রথমে গ্লাসটাকে উল্টো করে ধরে কিনারায় লেবুর টুকরোটা দিয়ে হালকা করে বুলিয়ে নি’। তারপর কিনারাটাকে একটা প্লেটে রাখা লবণে একটু চেপে চেপে ঘুরিয়ে নিলে লবণের দানাগুলো লেপ্টে যাবে সেখানটায়।
২টা স্ট্রবেরি চপিং বোর্ডে নিয়ে একটা গ্লাসের পরিস্কার তলা দিয়ে ভালো করে পিষে নিলাম।(ব্লেন্ড-ও করে নেয়া যেতে পারে)
তারপর shaker এ ভদকা, টেকিলা, সুইট ভেরমুথ, লেমনেড, পিষে নেয়া স্ট্রবেরি আর ৪-৫ টা আইস কিউব নিয়ে মুখ বন্ধ করে ভালোমতো ঝাঁকালাম যতক্ষণ পর্যন্ত shaker-এর গা-টা বেশ chilled না হয়েছে।
এই মিশ্রণকে অতঃপর ছেঁকে গ্লাসটাতে নিয়ে সোডা যোগ করে দিলাম।
হালকা নেড়ে লেবু স্লাইসটাকে গ্লাসে ছেড়ে দিয়ে বাকি স্ট্রবেরিটাকে একটু চিরে গ্লাসের ঠোঁটে ঝুলিয়ে পৃ-র ঠোঁটের দিকে জুলুজুলু চাইতেই ও চিয়ার্স বলে জড়িয়ে ধরলো।
আলতো করে ওর গাল ছুঁয়ে দিতে সেখানে স্ট্রবেরির লাল ছোপ লেগে গেলো।
আমি ফিসফিসিয়ে উঠেছি,
যাই বলা নাই, বলো আসি
বলো আবার আসমু, হইবে দেখা…

দ্বিতীয় কবিতা-উদ্ধৃতি: তারাপদ রায়।

২,৭২২ বার দেখা হয়েছে

৪১ টি মন্তব্য : “ব্যক্তিগত রেসিপি-৮”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    লেখা ভালো
    রেসিপি ভালো
    কিন্তু ক্যান জানি আবার মিক্সচার ভাল লাগে না।
    চাইরটা বরফ আর কিছু না; না কোক না পেপসি, না অন্য কিছু।
    বুদ্ধদেব গুহের বইতে ভাল ভাল রেসিপি পাওয়া যায়।
    কোন তরল কিভাবে পান করতে হয় তাও বলেছেন উনি।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  2. জিয়া হায়দার সোহেল (৮৯-৯৫)

    নুপুর ভাই আপনার রেসিপি পড়ে যাদের অভ্যাস আছে, তারা বসে থাকতে পারবে না আর আমরা যারা একসময় একটু আধটু টেস্ট করতাম, এখন মিস করছি। নেক্সট এ একটা জুসের রেসিপি দিবেন, টেস্ট করবো। :))

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।