ব্যক্তিগত রেসিপি-৭

একেকদিন অফিস পালিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াতে বেশ লাগে।কি একটা জরুরী কাজ পড়ে গেছে ভান করে বেরিয়েই একটা লম্বা শ্বাস-উফ্‌, দম বন্ধ হয়ে আসছিলো!ঘাড় কাত করে তার আর দালানের জঙ্গল থেকে আকাশটাকে আলাদা করতে চেষ্টা করি, পারিনা।একটুকরো আকাশও আজকাল এত দুর্লভ হয়ে গেছে এই শহরে!

অফিস পালিয়ে মানুষ দেখি,ছককাটা আকাশের নীচে ঢাকার উদভ্রান্ত ছুটে চলা দেখি।
দিনটাকে এত মনোরম আর রঙিন মনে হয়!অঢেল সময় হাতে নিয়ে একেকটা মুহূর্তকে নবাবী মেজাজে ছুঁড়ে ফেলতে ফেলতে ফুটপাত ধরে এগিয়ে চলা।ঘাড়ের কাছে কয়েকটা রিকশা এসে দেনদরবার করে উড়িয়ে নিয়ে যাবার প্রত্যয়ে।না হে, আজকে আমার হাঁটার দিন।

এ রাস্তা সে রাস্তা পেরিয়ে কখন যে পৃ-র অফিসপাড়ায় এসে পড়েছি খেয়ালই করিনি।আহা, অভাগা পৃ।নিশ্চয়ই খুব মন লাগিয়ে কাজ করে যেতে হচ্ছে ওকে।বেশ আয়েশ করে ওর জানালাটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করি নীচে থেকে।এমন সময় মোবাইল ফোনটা কেঁপে কেঁপে উঠলেও ধরিনা।হাট করে পৃ-র জানালাটা অগত্যা খুলে গেলে ভীষণ আলস্যে ওর কলটা ধরি।

‘হচ্ছেটা কি’
‘তোর জানালাটা খুঁজে বার করলাম’

‘জানলায় তোর টোকা শুনে’
নিমন্ত্রণ পেয়ে গেছি তো
আকশচারিতার।গুনে
দেখিনি অবাধ্য মুহূর্ত
কত পড়ে ছিলো অভিমানে।
চল পালাই চল পালাই,
দিনটাকে ভরে তুলি
যৌথ পলায়নে…’

শাড়ির পাল উড়িয়ে পৃ নেমে এলে আকাশের ঘুড়িগুলো আরো নাচতে শুরু করে, এক্কেবারে নতুন একশোটা রিকশা বেল বাজাতে বাজাতে রাস্তায় নেমে পড়ে।ফোনটাকে সুইচ অফ করে নিয়ে এবার ওর ঘাড়ে টোকা দিলাম, কোন পথে? হাতের মুদ্রায় ওর জবাব,কেন,আকাশপথে!

তথাস্তু।বলেই ফুটপাতে আনারস বিক্রেতার সংগে দরদামে লেগে গেলে পৃ-র হতাশাটা চোখে পড়ার মতো হয়।একটু চোখ টিপে ভরসা রাখো বার্তা পাঠাতেই আবার ফুরফুরে মেজাজটা ফিরে আসে চোখেমুখে।

তারপর একজোড়া আনারস হাতে ঝুলিয়ে অন্যহাতে ওর হাতটাকে পাকড়ে চললাম সেই সুধা বানাতে যা দিয়ে আজ থেকে ঠিক দু সপ্তা পর আরেকটি পলায়ন উদযাপন করবো।

আনারস ফালি ফালি করে কেটে মাঝারি সাইজের করে নিয়ে একটা এয়ারটাইট বয়মে থরে থরে সাজিয়ে নিলাম।
বয়মে Smirnoff ভদকা ঢেলে আনারস-টুকরোগুলোকে পুরো চুবিয়ে বয়মটি ভালো করে বন্ধ করে একটু ঠান্ডানমতন জায়গায়
আলো থেকে দূরে রেখে দিলাম।

দশদিন পর বয়ম থেকে ছেঁকে ভদকা একটা বোতলে নিয়ে ফ্রিজে চালান করে দিতে হবে।
আরো চারদিন পর গ্লাসভর্তি আইসকিউবের ওপর এই জিনিস ঢেলে নিয়ে (আর কোন কিছু না মিশিয়ে) পৃ-র গেলাসে টোকা দিয়ে বলবো, চিয়ার্স!আর এটাও মনে করিয়ে দিতে ভুলবোনা এটা কিন্তু স্ট্রেইট ভদকা,রয়েসয়ে প্রিয়ে! আমি জানি ও বলবে,আই ডোন্ট কেয়ার।

আপনি?

৩,৮৫৮ বার দেখা হয়েছে

৩৮ টি মন্তব্য : “ব্যক্তিগত রেসিপি-৭”

  1. সামিয়া (৯৯-০৫)

    অসাধারণ! সিসিবিতে ঢুকতেই ব্যক্তিগত রেসিপি দেখে মনটা ভালো হয়ে গেলো। যাকে বলে একেবারে তাড়িয়ে তাড়িয়ে লেখাটার স্বাদ নিলাম। রেসিপিটাও চেখে দেখবো মাস্ট, বড় হলে 😀

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)
    যাকে বলে একেবারে তাড়িয়ে তাড়িয়ে লেখাটার স্বাদ নিলাম

    😀


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. রাব্বী (৯২-৯৮)

    আপনার এই রেসিপি সাহিত্য পড়ে কেমন যেন আকাশে মেঘের সাথে ভেসে চলার অনুভূতি হলো! ড্রিংক রেসিপিও এমন মোলায়েম পেলব গল্পের ছলে হতে পারে! এই ড্রিংকটার নাম কি চার্লিগুজ?

    তবে বলে রাখি সিসিবি'র ছেলে-ছোকড়া, আবালবৃদ্ধবনিতা বখে গেলে সে দায় আপনার! 🙂

    আপনি পলাশ নামে কাউকে চেনেন?


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
  4. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    নূপুর ভাই,

    ভাবছি, আমিও একদিন ব্যক্তিগত রেসিপি লিখে দিবো- বাঙালি রান্নার...... 🙂


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  5. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    এহেন বিশুদ্ধ আকাশচারিতার নিমন্ত্রণে
    শিহরিত হলো তনুমন।
    আকাশে মেঘেদের দলাদলি
    আর
    বাতাসে ওঁর সাথে আমার কানাকানি...

    সাদু দাদা সাধু।
    আপনার রেসিপি নুপুর'দা সে তো - সর্বদাই জিহবায় জল আনে।
    আমি আপনার সব রেসিপিগুলোর ই-সংকলন করার জন্য জোর আহবান জানাচ্ছি।
    :clap:


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন
  6. আজিজুল (১৯৭২-১৯৭৮)

    নূপুর, বেনসন হেজেস এর পর দ্বিতীয় যে জিনিসটার প্রতি আমার অনেক দুর্বলতা ছিল, সেটা ওই "ভোদকা উইথ বিটার লিমন"।পানীয়টাতে একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে মেহদি হাসানের ভাষায় ...জান্নাত সে কম নেহি...।
    '৮২ তে রাশিয়া ও সফর করেছিলাম শুধু ওদের সাথে গলা মিলিয়ে "নাস্ত্রভিয়া" হাঁকতে!

    তোমার সুন্দর লিখা পড়ে পুরনো 'বৈশাখি ঝড়ো দিনগুলি ' মনে পরে গেল।ক্ষমা করো।
    ভাল থেকো।

    পুনশ্চ; 'আইরিশ কফি' বানানোর রেসিপি কি তোমার প্রয়োজন আছে? You can easily knock-out a Bull with just two Irish Coffee! (LOL!)


    Smile n live, help let others do!

    জবাব দিন
    • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

      আজিজ ভাই,
      আপনার মন্তব্য পেয়ে মহা ফুর্তি ফুর্তি ভাব চলে এসেছে আমার.. 🙂
      আমি আবার ভাবছিলাম রেসিপিটা পড়ে আপনি বকাটকা দেবেন কি না... 😀

      আপনার বৈশাখি দিনগুলোর কথা যে মনে পড়ে গেলো এ লেখা পড়ে তাতে ধন্যবোধ করছি। ক্ষমা করার কথা বললেন কেন বুঝতে পারছিনা অবশ্য।
      আইরিশ কফি-ই শুধু নয়, আপনার জানা যে কোন উত্তম রেসিপি শেয়ার করতে পারেন নির্দ্বিধায় , অথবা এখানেই লিখে ফেলুন আরো কিছু রুদ্ধশ্বাস রেসিপিময় গল্প।
      আপনিও ভালো থাকুন।

      জবাব দিন
      • আজিজুল (১৯৭২-১৯৭৮)

        একটা ওয়াইন গ্লাসে মোটা মোটি দুই বড় পেগ কনিয়াগ/রাম নাও। দুইটা চিনির কিউব ওতে ফেল। চিনি কনিয়াগে গলবে না। ওয়াইন গ্লাস টা বাহাতে একটু কাত করে ধরে, ডান হাতে লাইটারের শিখা লিকারের উপর ধরলে, ঈষৎ নীলচে আলো গ্লাসের উপরি ভাগে জ্বলতে থাকবে, এবং আস্তে আস্তে গ্লাস দোলালে চিনিও গলে যাবে। মোটা মোটি অর্ধেক লিকার জ্বলে যাওয়ার পর আগুন আস্তে নিভিয়ে, ওতে ফ্রেশলি ব্রিউইড্ একটু কড়া কফি গ্লাস ভর্তি করে, উপরে ক্রিম দিয়ে নিলেই "আইরিশ কফি" তৈয়ার।
        খেয়াল রাখতে হবে যেন দুইটার বেশি কেও যেন পান না করে।এতেই মাইনাস ত্রিশ অনেক "গরম কাল" মনে হবে।
        (ইনস্ট্যান্ট কফি না নিলেই ভাল)


        Smile n live, help let others do!

        জবাব দিন
  7. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আহা নূপুরদা !

    কবে যে আপনার রেসিপিগুলো চেখে দেখার সুযোগ হবে :dreamy:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মনজুর (৮৯-৯৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।