মিলন হবে কতো দিনে …


ক্লাসে মেয়েদের অলিখিত দলনেত্রীর পদটি বাগে রাখার জন্য ভেতরে ভেতরে আমাকে অনেক রাজনীতির হিসেবনিকেশ কশে চলতে হতো। তাই তিথির সৌন্দর্য নিয়ে কেউ যাতে বেশি উচ্ছ্বসিত প্রসংশায় মেতে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে ছিল আমার কড়া নজরদারী। মসনদ – তা সে ময়ূর সিংহাসনেরই হোক কিম্বা পদ্মপাতার উপর দু’ফোঁটা পানিরই হোক – কব্জা করা আর তা ধরে রাখা এতো সহজ নয়। প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন কথার যন্তর-মন্তরে আমার শিষ্যানুসদকে বশ করে রাখতে হতো। অল্পতেই এই যন্তর-মন্তরের গুণাবলী ধ্বসে যেতে পারে। তাই খুব সাবধান! তিথির প্রতি কাউকেই মুগ্ধ হতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু বাস্তব যে বড়ই করুণ। হানিফ স্যারের আবার একটু সুন্দরী-প্রীতি আছে। ক্লাসে আসলেই তিথির বেঞ্চের সামনে দাঁড়াবেন। আমরা তখন হাসি চেপে পরবর্তী কৌতুক দেখার অপেক্ষায়। প্রায় প্রতিদিনই তিথিকে উনি একই কথা শোনাবেন,”তিথি, আল্লাহর কাছে প্রতিদিন শুকরিয়া আদায় করো তো? তুমি দেখতে একদম ইন্দিরা গান্ধির মতো। ইন্দিরা গান্ধীর আরেকটা কি নাম ছিল জান তো?”
“প্রিয়দর্শিনী”, ক্লাসের বাদ-বাকী মেয়েরা প্রায় সমস্বরে চিৎকার দিয়ে উঠতাম। এই চলটা অবশ্য আমিই চালু করেছিলাম। এতে স্যারের কথার গুরুত্ব কমে যেত। প্রিয়্দর্শিনী বিষয়টি আমাদের কাছে হাস্যকর হয়ে উঠত। সৌন্দর্যকে রসিকতার পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারলে মনের উপর থেকে চাপ অনেকখানি কমে যায়।আমরা কেউই তেমন একটা আহামরি গোছের দেখতে নই। তবে আমাদের বাইরেও একটা পৃথিবী আছে। সে পৃথিবীতে চাইলেও আমরা হানিফ স্যারের কথাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারবো না। যা হওয়ার তা হবেই। অবধারিতভাবে ছাইচাপা আগুন ফুলকি ছুটিয়ে ফুঁসে উঠে, সত্য গোপন থাকে না, এবং অবশেষে অবধারিতভাবে সৌন্দর্য বিকশিত হবেই।
আমাদের স্কুলের সবচেয়ে কড়া ম্যাডামের নাম ছিল আনোয়ারা। পেছন পেছন আমরা তাকে জিলাপির প্যাঁচ বলে ডাকতাম। ম্যাডাম একদিন ক্লাসে এসে বলতে গেলে প্রায় অকারণে তিথিকে শাস্তি দিলেন। একই অপরাধ আরও অনেকের ছিল। আমারও ছিল। ভূগোল পরীক্ষায় জাপানের ম্যাপ দেখতে অষ্ট্রেলিয়ার মতো হয়ে গেছে। শুধু বেচারা তিথিকে সারা ক্লাস দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। হয়তো ওর ম্যাপটা জিলাপির মতো হয়ে গিয়েছিল। আনোয়ারা ম্যাডাম তিথিকে শুধু দাড় করিয়েই ক্ষান্ত হননি, সেই সাথে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে মচমচ করে ঝনঝনিয়ে উঠেছিলেন, “খালি সাজগোজে ব্যস্ত থাকলেই হবে, লেখাপড়ায় তো লবডংকা।”
অস্বীকার করবো না যে সেদিন আনোয়ারা ম্যাডামকে আমার খুব একটা খারাপ লেগেছে। কিন্তু কে জানতো যে সেদিন টিফিন পিরিয়ডে পাশার দান উলটে যাবে। সারা টিফিন পিরিয়ড তিথি এক নাগারে কেঁদে-কেটে হয়ে গেল সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। মনে হচ্ছিল আমার শিষ্যকূলের ভরকেন্দ্র বোধহয় কিছুটা সরে গেল।
“চুলে শুধু দুটো ক্লিপ বেঁধেছি। আর কোথায় সেজেছি বলতো?” তিথির কথায় যুক্তি আছে। আমরা সবাই সেটা অনুধাবন করলাম। তাই আমাদের সান্ত্বানার বাণীও তীব্রবেগে তেজস্বয়ী হতে থাকলো। ফাতিমা বললো, “আমরা দশটা ববি ক্লিপ চুলে লাগালেও চোখে পড়বো না। আর তুই তো কোন ক্লিপ ছাড়াই সুন্দরী।” কথার বুলেটে হাতি-ঘোড়া মারার মতো ফতোয়া দিয়ে আনোয়ারা ম্যাডামকে জিলেপির প্যাঁচ থেকে সজারুতে প্রমোশন দেওয়া হলো। জিলাপির মধ্যে তাও কিছু রস আছে। সজারুতে তো শুধুই কাঁটা। পাল বুঝে আবেগের বসে আমিও বলে বসলাম, “আসলে তুই ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে তো। তাই অকারণে তোকেই শুধু শাস্তি দিল।” মনে হলো এতক্ষণ আমার মুখ থেকে এ কথাটা শোনার অপেক্ষাতেই ছিল তিথি। আমার দিকে তাকিয়ে অবশেষে সে তার হাফ-ম্যারাথন কান্না থামালো। সেই সাথে আমার বুকের মধ্যে শুরু হলো এক চিনচিন ব্যথা। আবেগ বিষয়টা বড়ই খারাপ। মনের ভেতরের বরফ-জমা অনুভূতিকে তাপ দিয়ে বাষ্প বানিয়ে দেয়। তখন মুখটা খুললেই সর্বনাশ।
এরপর অনেকদিনের জন্য মসনদ বদলে গেল। সব মেয়েরা দলে দলে ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ের শিষ্যত্ব গ্রহণ করলো।

“ইফ যদি ইজ হয় বাট কিন্তু হোয়াট কি?”, ফাতিমা খুব কায়দা করে প্রশ্ন করলো।
“গাধার মতো প্রশ্ন করলে উত্তর দিব কি?”, সুমি খুব নিরাসক্তভাবে উত্তর দিল।
আসলে আমরা এখন অনেক বড় হয়ে গেছি। শুধু ফাতিমা ছাড়া। ওর এখনও মাসিক হয়নি। ওকে দেখে মনে হয় আগামী দু’বছরেও তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই এখনও মেয়েটা ক্রমাগত গাধার মতো কুইজ জিজ্ঞাসা করে। অবশ্য ওর সরলতা আমাদের বাঁচিয়ে দেয়। বড় হলেও আমাদের ছোট সেজে থাকতে হয়। ছোট মানে মানসিক অপরিপক্কতা। আশপাশের আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা সবার কাছে আমাদের ভাল মেয়ে সেজে থাকতে হয়। ভালমেয়ের সংজ্ঞা হলো সবাইকে বুঝিয়ে দেওয়া যে আমরা “ওসব” কিচ্ছু বুঝি না। এমনকি আমরা প্রথম প্রথম কাছের বান্ধবীদের কাছেও ওসব কিছু না বোঝার ভান করতাম। এখন অবশ্য তা আর করতে হয়না। তাই সুমির কাছ থেকে অনায়াসে মাসুদ রানা সিরিজের নতুন বই চেয়ে নিয়ে পড়তে পারি। তবে সুমিকে ওর বড় ভাইয়ের চোখ এড়িয়ে অনেক কষরৎ করে বই যোগার করতে হয়। আমাকেও সে বই বাসায় নিয়ে লেপের নিচে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তে হয়। আমরা হচ্ছি ক্লাসের মধ্যবিত্ত শ্রেনীয়। না পুরোপুরি ভালোর দলে, না খারাপের দলে। কোনরকমে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। পরিবারও আমাদেরকে নিয়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। আমরাও তাদের সেই স্বপ্ন-পূরণ করার লক্ষ্যে পাল্লা দিয়ে স্কুল-বাসা-প্রাইভেট এই চক্রের মধ্যে ক্রমশ ঘুরপাক খাচ্ছি। আর মাঝে-মধ্যে ফাতিমার “না বোঝা” ব্যাপারগুলো নিয়ে ওকে বোকা বানিয়ে নিজেদের মধ্যে হাসি-ঠাট্টা করতে থাকি। নীচের ক্লাসে পড়ার সময়কার মতো মসনদ দখলের টেনশনটা এখন আর নেই। বড় হবার সাথে সাথে আমাদের মধ্যে এখন আরও অন্য বিষয় প্রাধান্য পেতে শুরু করেছে। আর তাছাড়া বিজ্ঞান বিভাগে চান্স না পাবার কারণে তিথির গুরুত্ব এখন অনেকটাই কমে গেছে। ওর সামনে অনেক ভাব নিয়ে চলি। কিন্ত আসল কথা হলো এখনও ওকে খুব ঈর্ষা করি। মনে মনে। তার অবশ্য কারণ আছে। আমাদের কোন প্রেমিক নেই। কেউ আমাদের দিকে একটু অন্যরকম করে তাকায়ও না। কিন্তু তিথির প্রেমিকের সংখ্যা অগণিত। দূর-দূরান্ত থেকে তিথির প্রেমিকদের গল্প কানে ভেসে আসে। তবে প্রেমিক না বলে ভক্তসমাজ বলাটা অধিক যুক্তিযুক্ত হবে। তারা তিথিকে প্রেমপত্র দেয়, ওর চলার পথে ফুলের পাপঁড়ি ছিটিয়ে দেয়। এই বিষয়ে তিথিকে কিছু জিজ্ঞেস করলে সে হাই তুলে উলটো এমন ভাব দেখায় তাতে মনে মনে আমরা মানতে বাধ্য হই যে বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে পারাটাই শেষ কথা নয়। প্রেমিককুলের নৈর্বেদ্য না জুটলে এই নারী জন্মই বৃথা।

আমরা চাই তিথি একটা প্রেম করুক। তারপর আমাদের শোনাক ওর সেই প্রেমের কাহিনি। বুঝতে পারছি দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর বাগধারাটা আসলেই অনেক বাস্তবসম্মত। কিন্তু তিথি বড়ই নিরস প্রকৃতির। ও কোন প্রেমিককে কথা দেয়না – এমনকি ঝুলিয়েও রাখে না। আমাদের আর জানা হয়ে উঠে না আড়ালে বসে বসে একজোড়া ছেলে আর মেয়ে কি এতো কথা বলে; কি করেই বা ছেলেটা মেয়েটাকে ছুঁইয়ে দেওয়ার জন্য আবদার করে; আর সে আবদার সফল হলে মেয়েটার কেমন লাগতে থাকে। শুধু গল্প-উপন্যাস পড়ে কি মন ভরে? সিনেমা দেখলে তো মনে হয় সব ষোল বছরের মেয়েদেরই প্রেমের বাজার রমরমা। অথচ বাস্তব কতো ভিন্ন! ঘোলও যখন জুটেনা তখন দুধের স্বাদ মেটাবো কি করে? রক্ষণশীল এ সমাজে কোন সাংস্কৃতিক চর্চা নেই। খুব স্বাভাবিকভাবে ছেলেমেয়েদের মেলামেশার সুযোগ নেই। নিজ পরিবারের বাইরে একটা ছেলের সাথে মিশতে চাইলে চুপিচুপি প্রেম কতো নয়তো বিয়ের অপেক্ষায় থাক। আরেকটা পথ অবশ্য খোলা আছে। তা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া। সেই আশাতেই চোখ-কান বন্ধ করে লেখাপড়া করতে করতে ক্রমশ আত্মকেন্দ্রিক মেশিনে পরিণত হতে থাকি। আমাদের আর কিই বা করার আছে? মেয়েটাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করলেও সমাজের চোখে আমরা আসলে এক-একজন নিষ্পাপ ফাতিমা হতে চাই। কিম্বা সোনিয়া। ক্লাসে প্রথম হতে পারলে আর দশটা অপরাধ মাপ। সেই সাথে হিজাব পড়লে তো কথাই নেই। কোন ছার মৌসুমি-পূর্নিমা, সাথে সাথে সে তখন সমাজের সুপারস্টার। যেহেতু সেরকম হতে পারি না, তাই আমাদেরকে ভালো মেয়ের ভান করতে হয়। এভাবে মুখোস এঁটে চলতে চলতে একটা সময় সেই মুখোসটাই আমাদের মুখশ্রী হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের আম্মারাও এই একই মুখোসে আটকে ছিলেন। এখন পর্যন্ত এটাই তাদের কাছে উৎড়ে যাবার জন্য একমাত্র কার্যকরী পদ্ধতি। তাই তারা আর কোন নতুন পদ্ধতি পরীক্ষা করে দেখতে চাননা। আর আমরাও ‘কখনই আমাদের আম্মাদের মতো এতো পানসে জীবন কাটাবো না’ মনে মনে এই প্রতিজ্ঞা করে বড় হতে থাকি। এই স্বপ্নই আমাদের ভুলিয়ে দেয় বর্তমান পানসে জীবনকে।
এরকমই এক নিথর পানসে সময়ে একদিন হঠাৎ তিথি ওর গল্পের ঝুড়ি নিয়ে হাজির হয়।

মনে আছে এরপর থেকে ক্লাস টেনের টিফিন পিরিয়ডটা আমাদের কাটতো খুব টেনশনে। চপলা আপা আর ছন্দ ভাইয়ের বিয়েটা হবে কি হবে না – এই ক্ল্যাইমেক্সের পরবর্তী দৃশ্যে আর পৌছাতে পারতাম না। সামাদ চাচা যেহেতু তিথির আব্বা তাই উনাকে তো আর আমরা ভিলেন বানাতে পারিনা। আবার ভিলেন ছাড়া প্রেম কাহিনি অতো জমে উঠে না। তাই ভিলেন খুঁজতে গল্পটাকে আবার আতশী কাঁচের নিচে মেলে ধরি।
কি দরকার ছিল ছন্দ ভাইয়ের গায়ের রঙ ওরকম আবলুস কাঠের মতো নিকষ কালো হওয়ার? অবশ্য আবলুস কাঠটা কিরকম তা আমাদের কারও জানা ছিল না। উপন্যাস থেকে শব্দ সংগ্রহ করে আমরা আমাদের চারপাশের বাস্তব ঘটনাগুলোর একটা ভাষাচিত্র আঁকতাম। এই যেমন চপলা আপার সৌন্দর্যের উপমার জন্য মায়াবতী শব্দটাকে যথার্থ মনে হতো। এতে সুমি একটু আপত্তি জানিয়ে বলেছিল যে মায়াবতী আসলে সুন্দরের থেকে একজন স্নেহময়ী মহিলার উপমা হিসেবে বেশি মানানসই। আমার তীব্র আপত্তির মুখে সুমির যুক্তি খাটেনি। আমার যুক্তি ছিল হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের নায়িকারা প্রায় সবাই রূপবতী। তাদের বর্ণনায় হুমায়ূন আহমেদ মায়াবতী শব্দটা বেশি উল্লেখ করতেন। তারমানে দাঁড়ায় মায়াবতী আর রূপবতী অনেকটা সমর্থক শব্দ। তবে সাথে পশ্চিমা রূপকথার গল্পের নায়িকাদের প্রভাবে আরও একটু যোগ করে বলতাম ‘চপলা আপাকে দেখলে মনে হয় খুব যত্ন করে বানানো পোরসেলিনের একটি পুতুল হঠাৎ প্রাণ পেয়ে গেছে।’
মোট কথা হচ্ছে চপলা আপা আসলেই খুব সুন্দর। মনের ভুলেও আমরা কখনও ‘তিথি না চপলা আপা’ কে বেশি সুন্দরী এই তর্কে যাইনি। তিথির সৌন্দর্য মুগ্ধ করে। কিন্তু চপলা আপার সৌন্দর্য স্তব্ধ করে দেয়। প্রায় প্রায়ই আমরা আফসোস করে বলে ফেলি, “তিথি, দু’বোন না হয়ে তোদের আসলে সাত বোন হওয়া উচিত ছিল। এই পৃথিবীতে তাহলে অন্তত কয়েকজন সুন্দর মেয়ের সংখ্যা বেড়ে যেত।” উত্তরে তিথি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বলে, “সুন্দর হয়ে কি লাভ হলো বলতো? আব্বা কিছুতেই ছন্দ ভাইকে মেনে নিবে না।” আমরাও যোগ দিয়ে দীর্ঘশ্বাসের মিছিল বাড়াতে থাকি। আর কিছু খুঁজে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত নিয়তিই আমাদের কাছে এটিএম শামসুজ্জামান। কেন সুন্দরী চপলা আপা কালো ছন্দ ভাইয়ের প্রেমে পড়বে? কেন, কেন, কেন – আমরা সবাই এটিএম শামসুজ্জামানের কাছে জবাব চাই। তবে এ ঘটনায় সুমির উপলদ্ধি হলো “আগে জানতাম শুধু কালো মেয়েদেরই বিয়ে হতে অসুবিধা। এখন তো দেখছি কালো হলে ছেলেদেরও রক্ষা নেই।” আমাদের কাছে এক নতুন পৃথিবী উন্মোচিত হলো – বর্ণবৈষম্য শুধু আফ্রিকার মানুষের সমস্যা নয় এবং লিঙ্গবৈষম্যের সাথে একে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। এই আবিষ্কার সুমিকে অনেকটা উৎফুল্ল করে তুললেও আমাদের তাতে খুব একটা আগ্রহ ছিল না। অধিকাংশ সময়ই বান্ধবীদের দলের সাথে চলতে গেলে নিজের অনুভূতিকে গিলে খেতে হয়। তাই সুমিও মুখ গোমড়া করে চপলা আপা আর ছন্দ ভাইয়ের অনাগত, অনিশ্চিত ভবিষৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরে।

“আচ্ছা চপলা আপা কি ছন্দ ভাইকে আগে একবারও দেখেনি?”
“প্রথমেই কণ্ঠস্বর শুনে মজে গেল?”
“না, না, চিঠি পেয়ে চপলা আপা প্রথম প্রেমে পড়েছিল।”
আমাদের অনেক কৌতুহল। অনেক মতামত। অন্য সবার কথা জানি না, আমি তখন ভেতরে ভেতরে জ্বলে-পুড়ে মরে যাচ্ছি। আমাদের পাড়ার মোড়ের ভিডিও দোকানটা একটা খুব সুদর্শন ছেলে চালায়। একেবারে প্রথম দর্শণের প্রেম। তবে অর্ধেক, ফিফটি পার্সেন্ট। ছেলেটার কথা জানিনা। একবার মনে হয় হ্যাঁ, আরেকবার মনে হয় না। শেষবার ছেলেটা ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গা’ ক্যাসেটটা খুব আগ্রহ করে হাতে তুলে দিল। তখন মনে হয় আমার হাত একটু ছুঁয়েও দিয়েছিল। বাসায় এসে ছবিটা দেখে তো আমার মাথা খারাপ। এখন খালি আব্বাকে দেখলে ওমপুরির কথা মনে হয়। একটা ভিডিও দোকানদারের সাথে মেয়ের প্রেম কি মেনে নেবে? মনের দুঃখের কথা কাউকে বলতে পারিনা। তবে বলার সুযোগ খুঁজছি। এই জন্য ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খালি চপলা আপা আর ছন্দ ভাইয়ের প্রসংগ নিয়ে আসি। তবে এটাও ঠিক আমি আসলে বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে আমার মতো একজন আটপৌরে সুন্দরী মেয়ে যদি শুধুই সুদর্শন হবার কারণে কোন ছেলের প্রেমে পড়ে তাহলে চপলা আপার ক্ষেত্রে অন্যরকম হলো কেন?
“আপু দরজার ফাঁক দিয়ে ছন্দ ভাইকে কয়েকবার দেখেছিলো। কিন্তু ছন্দ ভাই আপুকে আগে দেখেনি। আমাদের বাসা থেকে যাওয়ার পরই আপুকে সেই বিশাল চিঠি লেখে।” তিথি এইটুকু তথ্য দিয়েই থামলো না, আবারও উনাদের প্রেম হবার কাহিনি বলতে লাগলো। এই পর্যন্ত এ
ই গল্প আমরা কয়েকবার শুনে ফেলেছি। শুনতে খারাপ লাগে না। কারণ প্রতিবারই তিথি গল্পে নতুন নতুন কিছু সংযোজন করতে থাকে। যেমন এবার যোগ চপলা আপার সাথে প্রথম দেখার দিন ছন্দ ভাইয়ের পায়ে নাইকী কোম্পানির জুতো ছিল। আমার ধারণা নাইকী নামটা তিথি দু-একদিন আগে শুনেছে। গল্প বাঁচলে তিথির রাজত্ব দীর্ঘস্থায়ী হবে। আর বাদবাকী কাহিনি আগের মতোই আছে।
ফ্লোরটা মোটামুটি তিথির হাতে থেকে যায়। যে উদ্দেশ্যে এই প্রসংগ উত্থাপন করলাম সে উদ্দেশ্য আর সফল হয়ন। আমার আর বান্ধবীদের বলা হয়ে উঠে না ভিডিওম্যানের গল্প।

ছন্দ ভাই যশোর ক্যান্টনমেন্টে এসেছিলেন কয়েকদিনের জন্য। অনু ভাই ছন্দ ভাইকে চিনতেন। রংপুরে থাকার সময় উনারা একই স্কুলে পড়তেন। তবে একই ক্লাসে নয়। ছন্দ ভাই অনু ভাইয়ের তিন’বছরের সিনিয়র। যশোরে এসে ছন্দ ভাই অনু ভাইকে একটা ফোন করলেন। অনু ভাই উনাকে সে রাতে বাসায় এসে খেতে বললেন। পুরনো দিনের স্কুলের গল্প শেষ হতে হতে সেদিন রাত বেশ গভীর হয়ে গিয়েছিল। ক্যান্টনমেন্টটা ছিল শহর থেকে একটু দূরে। অনু ভাই আর চাচী, মানে তিথি আর চপলা আপার আম্মা, সে রাতে উনাকে তাদের বাসায় থেকে যেতে বললেন। একরাতেরই ব্যাপার ছিল। ছন্দ ভাই থাকলেন চপলা আপার রুমে। চপলা আপা খুব সৌখিন মানুষ। মনে আছে আমরা চপলা আপার রুমে ঢুকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। টিপটপ পরিপাটি। আমার তখন মনে হতো কখনও যদি আমার নিজের একটা রুম হয় তাহলে ঠিক এভাবে সাজাবো। তেমন কোন বাড়তি খরচ নেই। জানালার পর্দা চাচীর পুরনো শাড়ী কেটে বানানো। কাটওয়ার্কের কাজ করে সেই পর্দাকে রীতিমতো অভিজাত বানিয়ে ফেলেছিলেন। ঘরের এককোণে ছোট্ট চৌকনো একটা সাইড টেবিল ঠাস-বুনুনের কুরুস কাজের টেবিল-ক্লথে আপাদমস্তক ঢেকে আছে। তার উপর একটা ফুলদানী। সেখানে রজনীগন্ধার দু’টো ডান্ডি। সুঘ্রানে সারা ঘর মৌ মৌ। ফুলদানীটার উপর পুঁতি আর কাঁচের টুকরোর কারুকাজ। একদিন খুব ভালো করে খেয়াল করে দেখি ফুলদানীটা আসলে একটা কোকের বোতল। ষোল আউন্সের। বাজারে সাত টাকা দাম। মফস্বলের মধ্যেবিত্ত পরিবারগুলোতে সাধারণত বাড়ির প্রথম মেয়ের বিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত বাসায় কোন সত্যিকারের ফুলদানী থাকে না। একটা বিয়ের অনুষ্ঠান হলেই বাড়িতে সাত-আটটা পিতলের ফুলদানী জমে যায়।
সে রাতে ছন্দ ভাই থাকলেন চপলা আপার রুমে। তারপর নিজের কাজের জায়গায় ফিরে চপলা আপাকে একটা দীর্ঘ চিঠি লেখেন। রজনীগন্ধার সুবাসে সারারাত নাকি ছন্দ ভাই ঘুমাতে পারেননি। জেগে জেগে ভেবেছে কেমন সেই মেয়ে? নিঃসন্দেহে রুচিশীলা। কিন্তু দেখতে কেমন? বোঝা যায় ফুল তার পছন্দ। আর গান? রাত জাগা না ভোর দেখা – কোনটা তার বেশি ভাল লাগে?
যতোটুকু সুন্দর হলে একটা বয়সের পর থেকে মেয়েরা একটু-আধটু ছেলেদের চিঠি পেয়ে থাকে, চপলা আপা তার থেকে অনেক বেশি সুন্দর হওয়ায় ছেলেরা আর উনাকে চিঠি লিখতো না। দূর থেকে দেখে শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলতো। ছন্দ ভাই যদি চপলা আপাকে দেখতেন তাহলে তিনিও আর চিঠি লেখার সাহস পেতেন না। সুখের বিষয় যে তা হয়নি। তাই সাহস করে চিঠিটা লিখেই ফেললেন। সেই থেকে শুরু। এক চিঠিতেই চপলা আপা কুপোকাত। এটাই ছিল উনার জীবনে প্রথম প্রেমপত্র। আপাও লুকিয়ে লুকিয়ে উত্তর দিয়ে ফেললেন। সে সময়টা চপলা আপার আসলে কিছুই করার ছিল না। সবে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। হাতে আকাশের বিশালতার মতো অবসর। সে সময়টাতে পরিচিতদের কেউ না কেউ প্রায় প্রতিদিনই উনার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতেন। চপলা আপা হিসেব করে দেখলেন যে অজানা অচেনা একটা লোককে বিয়ে করার সাহস থাকলে একটা অল্প পরিচিত লোককে চিঠি লেখা আরও কম সাহসের কাজ। তাহলে কম সাহসী কাজটা বেছে নিলে অসুবিধা কোথায়? সেই থেকে শুরু। উনাদের দুজনের প্রেম হয়ে গেল। এলাকার ডাকপিয়নের কাজ কিছুটা বাড়লো। ঘটনা জানাজানি হবার পর বাড়লো সামাদ চাচার প্রেসার। চপলা আপার জন্য লণ্ডন-আমেরিকা থেকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারদের বিয়ের প্রস্তার আসতে শুরু করেছে। চাচা বুঝে উঠতে পারছিলেন না কোনটা ছেড়ে কোনটা বেছে নিবেন? আর তখনই কিনা এই প্রেমপর্ব! চাচার সব হিসেব গরবর হয়ে গেল। পোলাও-কোরমা ফেলে কেউ শুধু কদুর তরকারি বেছে নেয়? আহাম্মকরাই শুধু এ কাজ করতে পারে। অল্পবয়সের ঝোঁক আদরের মেয়েকে একদম আহম্মক বানিয়ে ছেড়েছে। মেয়েকে বকতে পারেন না। তার বদলে চাচীকে প্রায়ই একটু করে বকে দেন। প্রথমদিকে চাচী কিছুটা আত্মপক্ষ সমর্থন করতেন। কিন্তু প্রতিনিয়ত একই অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হতে এখন চাচী নিজেও কিছুটা অপরাধবোধে ভূগছেন। কোন দুঃখে যে সেদিন ছেলেটাকে বাড়িতে থাকতে বলেছিল। ছেলেটা দেখতে যেমনই হোক, স্বভাবটা ভারী মিষ্টি। সারাজীবন সুদর্শন স্বামীর সংসার করেই সুন্দরের প্রতি উনার আগ্রহ উড়ে গেছে। মানুষ যদি বদরাগী হয় তবে চেহারা ধুয়ে কি পানি খাবে? অথচ ছন্দ সেদিন বাড়ির কাজের বুয়াকে যেরকম সম্মান দেখালো তা কয়জন করে। মনের অজান্তে কি চাচী একবারও ভাবেননি যে চপলার সাথে এই ছেলেটার বিয়ে হলে মেয়েটা খারাপ থাকবে না?

আমরা সবাই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলাম। স্কুলের বান্ধবীরা দিন দিন ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছি। এখন আর আগের মতো আমাদের এক হওয়া হয়না। চপলা আপা বা ছন্দ ভাইয়ের গল্পের জোসও এখন অনেকটা কমে গেছে। আমার সেই ভিডিওম্যানের জায়গা এখন কোচিং সেন্টারের মামুন ভাই দখল করে নিয়েছে। আগেরটাও কাউকে বলা হয়নি। এবারেরটাও। আমরা বোধহয় সবাই কমবেশি মনের ভেতর প্রেম প্রেম ভাব নিয়ে বাইরের ভূবনে একটা গোবেচারা ভাব করে থাকি। নইলে যে ভালো মেয়ে হওয়া সম্ভব নয়। তারপরও ভালো হবার পরীক্ষায় ফুল মার্ক পাইনা। নিজের চাচী কিম্বা পাড়াত চাচী আমাদের কোন না কোন ভুল ধরে ফেলে। বুঝে গেছি দিন দিন ভালো হবার পরীক্ষা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এখন আর শুধু ছেলেদের দিকে না তাকালেই ভালো হওয়া যায় না। নিচু স্বরে কথা বলতে হবে, হাটতে হবে বাতাসের মতো নিঃশব্দে। যতো বেশি বোবা, অন্ধ বা কালা হতে পারবো ততবেশি ভালোমেয়ে হবার নম্বর পাব। আচ্ছা মা-চাচীরা কি বোঝেন তারা যেটাকে তাদের মুখশ্রী ভাবছেন সেটা আসলে একসময় তাদের মুখোস ছিল? নিজেরা ক্রমশ অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছেন, এখন আমাদেরকে অস্তিত্বহীন করে তোলার পণ করেছেন।
স্কুল-কলেজ না থাকলে পৃথিবীটার আয়তনটা আমাদের ঘরের সমান হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে সেই ছোট্ট পৃথিবীর হাসপাশ থেকে বেড়ুনোর জন্য অন্য বান্ধবীর বাসায় যাই। আবার আগের মতো উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠি। কথায় কথায় ছন্দ ভাই আর চপলা আপার কথা উঠে আসে। যতটা ভেবেছিলাম তার থেকেও জটিল আকার ধারণ করেছে উনাদের প্রেম কাহিনি।
লন্ডন প্রবাসী এক ডাক্তার চপলা আপাকে দেখে খুব পছন্দ করেছে। চপলা আপার হাজার কান্নাকাটি সত্বেও চাচা পানচিনির দিনতারিখ ঠিক করে ফেলেছেন। ঐদিন পাত্রপক্ষ এসে মেয়েকে আংটি পরিয়ে যাবে। চপলা আপা ছন্দ ভাইকে বলেছে বাসা থেকে পালিয়ে বিয়ে করবার কথা। এদিকে ছন্দ ভাই গোঁ ধরে বসে আছে পালিয়ে বিয়ে করবেন না। উনি পাত্র হিসেবে খারাপ নয়। উনাকে কেন পালিয়ে বিয়ে করতে হবে? কয়েকদিনের মধ্যে ছন্দ ভাইয়ের আত্মিয়স্বজন এসে চপলা আপার বিয়ের প্রস্তাব দিবে। এদিকে চপলা আপা ছন্দ ভাইকে ভুল বুঝছেন। জটিল অবস্থা। রীতিমতো ল্যাজেগোবরে অবস্থা। এই ঘটনার জন্য কি পরিসমাপ্তি কী হয় তা দেখার জন্য গাল্যারীতে বসে আছি।
আমাদের নিস্তরংগ জীবনে ছন্দ ভাই আর চপলা আপা ছিল একমাত্র বিনোদন। অধীর আগ্রহে যখন অপেক্ষা করছি কি হয় তা জানার জন্য – ঠিক তখনই আব্বার বদলী হয়ে গেল। আমরা যশোর ছেড়ে খুলনায় চলে এলাম।

আমার আর ডাক্তার হয়ে উঠা সম্ভব হয়নি। তবে ইডেনে পদার্থ বিজ্ঞানে ভর্তি হয়েছিলাম। তৃতীয় বর্ষে উঠার পর এক ডাক্তারের সাথে বিয়ে হয়ে যায়। এতে আব্বা-আম্মা বড়ই খুশী। উনাদের খুশী দেখে আমিও খুশী। কারণ আমি শেষ পর্যন্ত ভালো মেয়ে হবার চেষ্টায় টিকে ছিলাম। শুধু একটু যা মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় টিকতে না পেরে প্রতিযোগিতা থেকে কিছুটা দূরে সরে গিয়েছিলাম। ভিডিওম্যান, কোচিংসেন্টারের বড়ভাই এরকম ঘুরে ঘুরে আরও কিছু প্রেমে পড়া হলেও শেষ পর্যন্ত আর প্রেম করা হয়নি। আংগুর ফল আসলেই টক। এই মরিচিকার পেছনে ঘোরে কারা? বান্ধবীদের যা অবস্থা দেখলাম! আর আজকালকার মেয়েরা হয়েছে আরও বদ। বদের থেকেও বেশি বেহায়া। মাঝে মধ্যে পুরনো দিনের উদাস করা গান শুনে হঠাৎই মনের মাঝে ঝলক দিয়ে উঠে – আসলে ওরা বেশি বেহায়া নাকি আমি দিনদিন মুখোসের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছি? অথচ কৌশরে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম কখনই মা-চাচীদের মতো হবো না। আর এখন বাসার সামনে দিয়ে অকারনে কোন ছেলে-মেয়েকে একসাথে চলতে দেখলে নিজের অজান্তেই ভ্রু কুঁচকে আসে। বুঝতে পারি না ছেলে-মেয়েদের একসাথে একটু দেখলেই কেন খালি কুচিন্তাটাই মাথার মধ্যে ঝলক দিয়ে উঠবে? ছেলে মেয়েরা কি বন্ধু হতে পারে না? কেন পারবে না? রসমালাইএর হাড়ি সামনে রাখলে কি সবাই একগ্রাসে সাবরে দিতে চাইবে? সভ্যতা-ভব্যতা বলে একটা কথা আছে না? সবাই কি আর পেটুক হয়? খিধে তো আর সবার সমস্যা নয়। এখন মনে হয় অল্পবয়সে ছেলেদের সাথে একটু মিশতে পারলে কিই বা এমন ক্ষতি হতো? বরং অপরলিংগদের আরেকটু বুঝতে পারলে স্বামীদের মনের মতিগতি বুঝতে আরেকটু সুবিধা হতো। আমরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাই। সেখানে স্বাধীন একটি মুক্ত জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। তারপর হটাৎ করেই বিয়ের পরে এক বদ্ধ জীবনে প্রবেশ করি যার জন্য কোন প্রস্তুতি ছিল না। আমি বলছি না স্বামীরা সব আমাদের বন্দি করে রাখে। আসল সমস্যা হচ্ছে আমরা নিজেরাই জানি না কিভাবে মুক্তি পেতে হয়? চাকরি করলেই বা বিয়ে না করলেই একটা মেয়ে মুক্ত হয়ে যায় না তার ভূড়ি ভূড়ি উদাহরণ আছে। এরকম হাজারো অমিমাংসিত প্রশ্নের উত্তর বাকী রেখেই আমাদের দিন এগুতে থাকে। অবশ্য আমরা এসব নিয়ে তামন একটা চিন্তা করি না। প্রতিদিনকার নানান অমীমাংশিত প্রশনগুলোই মনকে নাড়াচাড়া করে বিক্ষিপ্ত রাখে। এই যেমন ছেলের অংক পরীক্ষায় নম্বর কেন কম আসলো। মেয়ে মাছ খায় না। কিভাবে তা খাওয়াবো? স্বামীর কোলেস্টরেল বেড়ে গেছে। বাসায় আর গরুর মাংশ রান্না করা যাবে না। ইত্যাদি ইত্যাদি।
তারপরও শৈশব-কৈশর আমদের পিছু ছাড়েনা। এখনও জিলিপি দেখলে আনোয়ারা ম্যাডামের কথা মনে পড়ে। বয়স্ক লোকদের সৌন্দর্য প্রীতি হানিফ স্যারের কথা মনে করিয়ে দেয়। দুই নেত্রী আজকে দেশের মসনদে বসে যে রাজনীতি খেলছে তা আমি সেই কবে প্রাইমারী স্কুলে থাকতেই খেলে এসেছি। কোকের বোতল হাতে নিয়ে আনমনা হয়ে পড়ি। চোখের সামনে ভেসে উঠে চপলা আপার রুমের সেই নকসাদার ফুলদানীটি। আর ঠিক তখনই ঝলক দিয়ে জেগে উঠে সেই অমীমাংসিত প্রশ্নটি – শেষ পর্যন্ত চপলা আপা আর ছন্দ ভাইয়ের কি মিল হয়েছিল?

গত সাতদিন ধরে বাংলাদেশের টেলিভিশনে ক্রমাগত পিলখানা ট্র্যাজেডি দেখাচ্ছে। পঁচিশে ফেব্রয়ারী পিলখানার বিডিয়ার সদরদপ্তরে সৈনিকরা বিদ্রোহ করে বসে। তারা বেশ কয়েকজন আর্মি অফিসারকে মেরে ফেলেছে। টেলিভিশন আর পত্রিকার পাতায় লাস, রক্ত, আর স্বজনহারা আহাজারি। এসব দেখে নিজের চোখ দুটিকে শুষ্ক রাখা যায় না। ওদের জায়গায় নিজেকে দেখতে পাই। বরকে প্রতিদিন নিজ হাতে নাস্তা খাইয়ে চেম্বারে পাঠাই। এখন হঠাৎ যদি দুপুর বেলায় একটা ফোন করে কেউ আমাকে বলে যে আমার বরকে খুন করা হয়েছে; ভুল চিকিৎসা করার অপরাধে রোগীর আত্মীয়রা তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে – তখন কেমন লাগবে? স্বামীহারা এক-একজন আর্মি অফিসারের স্ত্রীদের মুখ দেখি আর নিজের বুকটা ধ্বক করে উঠে। বরকে ফোন করে খোঁজ নিই সে সুস্থ আছে কিনা। এখন প্রায় রাতেই বাসায় এসে বর বলে যে, “কি ব্যাপার? হঠাৎ করে এতো ভাল হয়ে গেলে কেন? কোন ঝগড়া নেই, অভিযোগ নেই। শরীর ভালো আছে তো?” আমি কিছু বলি না। পরদিন টেলিভিশন চালাবো না চালোবো করেও তা চালিয়ে চুপচাপ খবর দেখতে থাকি। কয়জন মারা গেল, কয়টা লাস পাওয়া গেল, কিভাবে পাওয়া গেল – উৎকন্ঠা নিয়ে সব শুনে যাই।
এক সাংবাদিক পিলখানায় নিহত আর্মি অফিসারদের স্ত্রীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। তারা এখন স্বামীশোক ভুলে বাচ্চাদের ভবিষৎ নিয়ে চিন্তিত। না, আর সহ্য করা যায় না। টেলিভিশনটা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য রিমোট কন্ট্রোলটা হাতে নিয়েছি আর তখনই একটি পরিচিত মুখ দেখে থমকে গেলাম। কিছুটা বয়স হয়েছে তারপরও সেই স্তব্ধ করে দেওয়া সৌন্দর্য চিনতে একটুও দেরি হলো না। একটি ঘর। দেওয়ালে সাদা রঙ। সেখানে একটি পারিবারিক ছবি। অনেক আগে তিথি একবার আমাদের ছন্দ ভাইয়ের ছবি দেখিয়েছিল। অনেকদিন পর আবার ছন্দ ভাইকে দেখলাম। সেই ছবিতেই। সাগরের সামনে ছন্দ ভাই আর চপলা আপা দু’ছেলেকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর এখন সেই চপলা আপা স্তদ্ধ নিথর। বসে আছে একটি সোফার উপর। দু’পাশে দু’ছেলে।
১০
ছন্দ ভাই আর চপলা আপার চরম বিচ্ছেদের সময়টাতে জানতে পারলাম যে উনাদের মিলন হয়েছিল।

৮,৫৩২ বার দেখা হয়েছে

৩২ টি মন্তব্য : “মিলন হবে কতো দিনে …”

  1. তানভীর (২০০১-২০০৭)

    আপু, একনাগাড়ে পড়ে যাচ্ছিলাম....সম্বিৎ যখন ফিরলো তখন শেষ স্তবকে।
    ছোট ছোট ব্যাপার গুলান মনে ধরেছে....মসনদ, মায়াবতী-রূপবতী, মুখোশ এর প্রস্তাবনা গল্পের ভাজে ভাজে পরিপক্বতা এনেছে ঢের।
    আমদের পারিপার্শ্বিকতায় ভালো ছেলে বা মেয়ের যে উদাহরণ দেখি সেটি অনেকাংশে শুধুই সুজোগের অভাবে ভালো মনে হয় আমার....!!!
    ভালোবাসা দিবসের একরাশ ভালোবাসা নিয়েন।


    তানভীর আহমেদ

    জবাব দিন
  2. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    লেখা হিসাবে ভালো লাগছে। তবে গল্প হিসাবে খুবই দায়সারা মনে হইছে। মানে খুবই অগোছালো মনে হয়েছে। বিক্ষিপ্ত কাহিনী গুলোর মাঝের সুতোটি ধরতে পারি নি এমনও হতে পারে। অনেক জায়গাতেই গল্পের ফোকাস খুব দ্রুট শিফট হয়েছে যা পাঠকের জন্য কিছুটা ক্লান্তিকর। তবে গল্পের পিছনের দর্শন এবং মনস্তত্ত্ব দেখবার চেষ্টা টা প্রশংসনীয় এবং ভালো লেগেছে। লেখনীর সাবলীলতা তো বটেই অন্যান্য অনেক কাটাছেঁড়ার ডিটেইলিংও ভালো।

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      স্লো সিসিবিতে সমালোচনা বিষয়টা প্রায় দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে। ভালো লাগলো তোমাকে স্বরূপে দেখে। অনেক জায়গাতেই গল্পের ফোকাস খুব দ্রুট শিফট হয়েছে যা পাঠকের জন্য কিছুটা ক্লান্তিকর" - ভাবছি কী করা যেতে পারতো?


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
      • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

        আমার মন্তব্য খুব সিরিয়াসলি নেয়ার দরকার নাই। আমি পাঠক হিসাবে যেভাবে দেখতে চাই সেই প্রেক্ষিতেই কমেন্ট করেছিলাম। এখন পড়ে মনে হলো কমেন্টের কিছু টার্ম একটু স্ট্রং হয়ে গেছে। একটু ক্লেরিফিকেশন দরকার।

        আপনার ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌বিতংস‌‌‌ --এর পুরোটা আমার পড়া আছে বলেই বলতে পারি, মফস্বলের কিশোরীদের জীবনচিত্র আঁকায় আপনার দক্ষতা অসাধারণ। সেই তুলনায় এই গল্পে এসে কিচুটা খাপছাড়া মনে হয়েছে এক থেকে তিনে। আর চার থেকে সাতে কাহিনীর মূল বিস্তৃতি, সেটা একটু ছাড়াছাড়া ভাবে মিশেছে প্রথম অংশের সাথে এমনটি মনে হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে আপনি ঔপন্যাসিক বলেই হয়তো ছোটগল্পে সচেতনে বা অচেতনে কিছুটা ব্রিফ থাকবার চেষ্টা করেছেন।

        আট অংশটি গল্পের জন্য অগুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে আমার কাছে। এর মধ্য দিয়ে যদিও মেসেজ এসেছে তবে সেটুকু কেটে দিয়েও গল্প চলতে পারতো। বরং বিডিআরের ব্যাপারটায় হয়তো একটু বেশি ফোকাস করা যেত।

        যাহোক আমার কাটাছেড়া আমার কাছেই। এগুলো পরামর্শ না। লেখা নিয়ে আমার ভাবনা। আপনার লেখনীর ব্যাপারে আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে বলেই উপযাচক হয়ে দু চার কথা বলে ফেলি হয়তো। আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

        জবাব দিন
  3. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    অনেকদিন পর নাক ডুবিয়ে পড়ার মত একটা গল্পের দেখা মিললো সিসিবিতে.....
    ভাল লেগেছে।
    অনেক সিকোয়েন্সই চেনা তাই ভাললাগাটা বোধহয় একটু বেশিই।
    সম্প্রতি দেখা হলো ৩৮ বছর আগে ছেড়ে আসা স্কুলের ফ্রেন্ডদের সাথে।
    যাদের সাথে এতদিন পর প্রথম দেখা, তারা আমার আর কিছু মনে করতে না পারলেও ক্লাসচলা কালে লুকিয়ে মাসুদ রানা পড়ার কথা দেখলাম এখনো মনে রেখেছে।
    অবাক কান্ড!!!!


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      আমাদের জেনারেশন পর্যন্ত মাসুদ রানা একটি কমন ঘটনা। আমি অবশ্য ভাইয়ার ঘরে খুঁজে খুঁজে লুকিয়ে রাখা মাসুদ রানা পড়তাম। কঠিন শব্দ যেসব বুঝতাম না সেসব আম্মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করতাম। ধন্যবাদ ভাই মন্তব্যের জন্য।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
  4. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    এক নিঃশ্বাসে পড়লাম- শেষ লাইনে এসে বিশাল একটা ধাক্কা খেলাম- মনে হচ্ছিল কোন এক মাঝবয়েসি নারী অবলীলায় , একতানে তাঁর সারাজীবনের গল্প বলে গেলেন, ফিরিয়ে আনলেন টুকরো টুকরো স্মৃতি দিয়ে ঘেরা এক অপূর্ব কথামালা!

    হ্যাটস অফ, আপু!!!!!

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      তোমার একটা লেখা পড়ি যেখানে তুমি দৌড়াও আর তোমার সাথে পেছন পেছন গ্রামের অনেকে দৌড়ায়। তারপর থেকে তোমার অভিজ্ঞতার উপর একটা সাক্ষাৎকার নেওয়ার ইচ্ছে। অনেকদিন ধরে গ্রামের পটভূমিকায় একটা উপন্যাস মাথার মধ্যে নাড়াচাড়া করতেছে। সেটার জন্যে। অনেকদিন পর তোমাকে এখানে দেখে খুব ভালো লাগলো।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
      • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

        আমি খুব কঠিন সময় পার করছি আপু, ফেসবুক থেকে সরে এসেছি বহুদিন। ফিনিক্স পাখির মত পুড়ে পুড়ে পুনর্জন্ম নেবার অপেক্ষায় আছি, জানিনা কবে আসবে সেদিন। আপনার এই লেখাটা দেখে এত অসাধারণ লেগেছে যে মন্তব্য না করে পারিনি। অসামান্য লেখনি আপনার- প্লিজ প্লিজ প্লিজ উপন্যাসটা লেখা শুরু করে দিন!!

        জবাব দিন
  5. তারেক (৯৪ - ০০)

    খুবই ভাল লাগলো গল্পটা। কিছু লাইন মনে রাখার মত-

    সৌন্দর্যকে রসিকতার পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারলে মনের উপর থেকে চাপ অনেকখানি কমে যায়।
    স্কুল-কলেজ না থাকলে পৃথিবীটার আয়তনটা আমাদের ঘরের সমান হয়ে যায়।

    না দেখেই ছন্দ ভাইয়ের চিঠি লেখাটা ইউনিক লেগেছে, মানে চপলা আপাকে দেখতে লিখতে পারতেন না, এটা ভেবে ইউনিক লেগেছে সব মিলিয়ে।
    কিছু বানান, আর ওমপুরী না, অমরেশ পুরী হবে। আউন্স কি ইউএসে চলে? দেশে কিন্তু গ্রাম।
    শেষটুকু আবার লেইখেন আপু, বিডিয়ার-দের মৃত্যুর অংশটা খানিকটা দায়সারা লাগাতে ছন্দ ভাইয়ের মৃত্যু তেমন আবেদন আনতে পারেনি মনে হল। আরেকবার দেখবেন?
    শেষ লাইনটা অসাধারণ। :boss:


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      আমার জন্য খুবই মূল্যবান মন্তব্য। আমি অবশ্য চেয়েছিলাম একদম শেষ লাইনে একটা ছোটখাট ধাক্কা দিতে। এই জন্য এর আগ পর্যন্ত ক্যাজুয়্যাল ছিলাম। তবে এই ঘটনায় যারা নিজেদের কাছের মানুষদের হারিয়েছে, তাঁদের আবেগ স্পর্শ করার মতো ক্ষমতা আমার নেই। তারপরও ৯ প্যারাটা আবার লিখব?

      একজন বাংলার শিক্ষকের খোঁজ দিতে পারবে? স্কাইপে বানান শিখব।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
    • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

      তারেক ভাই, আপনার লিঙ্ক থেকে লেখাটা পড়লাম। আগেরবার মিস করে গেছিলাম।

      সেই দিন গুলি চোখে ভেসে উঠলো এক পলকেই। পিলখানার ঘটনায় আমার সরাসরি আত্মীয় হয়তো কেউ হারিয়ে যান নি, তবে সেই কয়টা দিন সিসিবির পাতায় চোখ বুলিয়ে দিন-রাত পার করেছিলাম সেই দৃশ্য গুলো চোখের সামনেই ভেসে উঠলো। মাজহার ভাই, হায়দার ভাই, শাহনেওয়াজ ভাই, সামিয়ার আব্বার গল্প সিসিবিতেই জেনেছি। এবং সত্যি বলতে এক মিনিটের জন্য তাদের অনাত্মীয় মনে হয় নি। প্রতিটি হারিয়ে যাওয়ার সংবাদে চোখ ঝাপসা হয়ে গিয়েছিলো।

      সেই সময়ের অনুভূতি গুলোই আবার ফিরে আসলো। (সম্পাদিত)

      জবাব দিন
  6. আহমদ (৮৮-৯৪)

    আপনার গল্প না পড়ে উপায় নেই।
    এক নিশ্বাসে সাবাড়।
    মন্তব্যের কোন ভাষা নেই।
    গল্পের শেষে যে এক বিরাট ধাক্কা।
    সবাই ভাল থাকুক।


    চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

    জবাব দিন
  7. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    শান্তাপা, অসাধারণ লাগল।
    বিশেষ করে শেষের ধাক্কাটা...একেবারে বনফুল টাইপ হয়েছে!

    আমার ছোট্ট পর্যবেক্ষণ হল- প্রথমদিকের লেখাগুলো একটু বেশি ভারি হয়ে গেছে। মানে ৭, ৮, ৯ ক্লাসের কিশোরীর তুলনায়...
    মাঝে মাঝে হালকা কিছু থাকলে ভাল হত। যেমন, কেন্দ্রীয় চরিত্রটি কাউকে ল্যাং মারতে চাইছে বা ধুম করে কিল বসিয়ে দিল ইত্যাদি। অর্থাৎ ওদের মাঝে কিশোরী সুলভ চপলতা দেখতে পারলে ভাল লাগত। সবচেয়ে ভাল হত মাস্তান টাইপ একটি চরিত্র থাকলে। যে 'আমি'র হয়ে ক্লাসে মাস্তানী করবে। এমনকি রাস্তায় কোন ছেলে টিজ করলে মন খারাপ না করে উলটো মাথা ফাটিয়ে দেবার কথা বলে শাসিয়ে দেবে...

    অবশ্য সেক্ষেত্রে লেখাটি আরও বড় হয়ে যাবার কথা। এই গল্পটিই উপন্যাস আকারে লেখার কথা ভেবে দেখতে পারেন...


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  8. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    আমি না কখনই ডাকাবুকা ছিলাম না। তাই তাঁদের চরিত্র চিত্রণ আমার জন্য সহজ নয়। তবে জানি পারব। সুন্দর ইনপুট।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  9. একনাগারে শেষ করার পরে, অসার নিজেকে ধাতস্হ করতে কয়েক সেকেন্ড সময় লেগেছিলো।
    মনটাও বেশ খারাপ হয়েছিলো বৈকি।
    তারপর 'ছন্দ-চপলার' কথা ভাবতে ভাবতে কয়েক মিনিটে কয়েকশ ভালো-মন্দ চিন্তা চিন্তাজগতে হানা দিয়ে গেলো, শেষ হলো অ্যাপ্রোদিতিতে।
    চমৎকার একটি লেখা, তাই মন খারাপ দিয়ে শেষ করতে ইচ্ছে করলো না।
    ধন্যবাদ!

    জবাব দিন
  10. কাজী আব্দুল্লাহ-আল-মামুন (১৯৮৫-১৯৯১)

    অসাধারণ... এক কথায় চমৎকার। যেমন সাবলীল লেখার ধরন তেমনি সুন্দর রচনাশৈলী। খুব ভাল লাগল পড়ে। জীবন ত অপ্রতিরোধ্যভাবে চলমান, থেমে থাকার কোন ফুরসত নেই। জীবনের কঠিন বাস্তবতাও জীবনকে কখনো ছেড়ে যায় না - এ আমাদের ভাগ্যের নির্মম পরিহাস!!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আমিন (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।