দুঃসংবাদের জন্য দৈনিক পত্রিকা, সুসংবাদের জন্য ফেসবুক


উপরের শিরোনামটি লেখার পর একবার ফেসবুকে ঢুঁ মারলাম। প্রথম খবরটিই ছিল একটি দুঃসংবাদ। জিহাদের বাবা আর এই পৃথিবীতে নেই। আমাদের জিহাদ। এই ব্লগের একজন মুখ্য কারিগর। কত বয়স জিহাদের? ত্রিশের আশপাশ কিছু হবে। সত্তর বছর বয়সে যার মা মারা যান তিনিও দুঃখ পান। অবশ্য বৃদ্ধাশ্রমের অধিবাসীদের সন্তানদের কী অবস্থা তা হয়তো জানি না। সে খবর আপাতত না জানলেও চলবে। জিহাদ এখন কী ভাবছে? দুঃখ-শোক না বাস্তবতা? আব্বার মৃত্যুর সময় আমি কী ভেবেছিলাম? ঘটনাটা কত আগে ঘটেছিল? আমি তখন সদ্যই ক্যাডেট কলেজে ঢুকেছিলাম। আব্বাই আমাকে পড়াতেন। সকালবেলা আধো আধো ঘুম-ঘুম চোখে শুনতাম আম্মা কানের কাছে বলতেন, “শান্তুমনি তোমার আব্বা তোমাকে শান্তিনিকেতনে ডাকছে।” আমাদের বাসার সামনে গেঁটের উপরে অনেকটা অংশ জুড়ে একটা লোহার ছাউনি ছিল। সেখানে ছিল মাধবীলতার ঝাড়। সকালবেলা সেই ঝাড়ের নীচটা ছিল ছায়া-ছায়া মায়া-মায়া। আব্বা সেই জায়গার নাম দিয়েছিলেন শান্তিনিকেতন। আব্বা নাকি মাধবীলতার বদলে আইভিলতা লাগাতে চেয়েছিলেন। বাড়িটার সাথে সেটাই বেশি মানানসই হতো। কারণ বাড়ির নাম ছিল আইভি ভিলা। আম্মার নামে নাম। আম্মার দুটো নামই খুব সুন্দর। ডাক নাম আইভি আর ভালো নাম ইলিম। আমার খালাতো ভাইয়ের একটা মেয়ে হলো। আম্মার নামের সাথে মিলিয়ে তার নাম রাখা হলো ইলমা। আমার ভাইদের এখন পর্যন্ত কারো মেয়ে হয়নি। আমি নিশ্চিত হলে পরে তারা আইভি নামটি পছন্দ করতো। আমাদের বোনদের নামের শেষে জুড়ে দেওয়া হয় নূর আফজা। এই নূর শব্দটি এসেছে আব্বার নামের অংশ থেকে। নামের ব্যাপারে আম্মার খুব খুঁতখুঁতে স্বভাব ছিল। আমার বড় তিন ভাইবোনদের নাম খুব ভেবেচিন্তে রাখা হয়। আম্মা তার চাচা শ্বশুরের সাথে অনেক পরামর্শ করে তবেই নূর আফজা পদবী ঠিক করেন। বাদবাকি অংশগুলোও। সেই তুলনায় আমার নামগুলো আমার ঠিক অতো পছন্দের ছিল না। শান্তা নামটা অনেক শোনা যায়। আর ওয়াহিদা নামটা তো বড়ই প্রাগৌতিহাসিক। এস এস সি পরীক্ষার সময় ক্লাসের অনেকের দেখাদেখি আমিও নাম বদলে ফেলতে চেয়েছিলাম। কথাটা চুপি চুপি বড় বোনকে বলেছিলাম। তাই শুনে সে কী মন খারাপ করলো। “জান, তোমার দুটো নামই আব্বার রাখা। ওয়াহিদা নামটি আব্বা এতো শখ করে তার মায়ের নামে রাখল আর তুমি কী না সেটা বদলে ফেলতে চাও।” হ্যাঁ, আমার দাদির নাম ওয়াহিদা। এটা একটা অদ্ভুত রসিকতা। এ-টিম, বি-টিমের মতো আমাদের পরিবারেও দুটো ধারা ছিলঃ একটি নর্থ বেঙ্গল আর আরেকটি সাউথ বেঙ্গল। আরও পরিষ্কার ভাবে বলতে গেলে একটি নানি বাড়ির ধারা আর একটি দাদি বাড়ির ধারা। আমি বলি একটি আধুনিকতার ধারা আর একটি প্রাচীনপন্থার ধারা। আমার বোঝার বয়স হতে হতে দাদি মারা যান। আর তখনই নানি বাড়ির ধারা জোরালো হয়। সৌভাগ্যক্রমে আমি আধুনিকতার ধারায় পরে যাই। আচ্ছা, আমি কী দাদির মৃত্যুকে পরিহাস করলাম? না, সময় আমাকে বুঝিয়েছে প্রাচীনপন্থার সাথে পরিচয় থাকাটার প্রয়োজন রয়েছে। নিজের শেকড় চিনতে সাহায্য করে। এই জীবন চালাতে দুটোরই সমান প্রয়োজনীয়তা। অনেকটা গাড়ির এক্সেলেরেটর আর ব্রেকের মতো। এই জীবনকে যেমন এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, আবার ঠিক সময় মতো থামতে জানতে হয়।

উপরে শিরোনাম শুরু করলাম একভাবে আর গল্প জুড়ে দিলাম অন্য কিছুর। আসলে আমার ভাবনাগুলো কোন দিক-নির্দেশনা মানতে চায় না। কিম্বা লেখা প্রসঙ্গে একটি নতুন ধারণায় আসলাম। জীবনের দুঃসংবাদগুলো আসলে অনেকটা ব্রেকের মতো। জিহাদ জানে এখন ওকে কিছুটা সময় থামতে হবে। তারপর আবার চলতে হবে। বেঁচে থাকা একটি চলমান প্রক্রিয়া। ব্রেক যার একটি অপরিহার্য উপকরণ। এই ফেসবুক ঘাটতে গিয়েই সেখানে দেখলাম যুক্তির বিয়ে হল। মেয়েটার নামটা মাথায় গেঁথে গেছে। যুক্তি নামটা আমি আগে কখনো শুনিনি। অনেক ভাবনাচিন্তা করে নামটা রাখা হয়েছিল হয়তো। আসলে ফেসবুকে গিয়েছিলাম জাফর স্যারের খবর জানতে। গত সপ্তাহে গিয়েছিলাম ক্যারিবিয়ান ক্রুজে। গত কয়েক মাসে যে ধকল গেল তার থেকে একটু মুক্তি পেতে কয়েকদিন কিছু না করে চুপচাপ নিজের মতো থাকতে চাচ্ছিলাম। যেদিন ক্রুজে যাব সেদিনই টেলিভিশনে ইয়াসমিন ম্যাডামকে কথা বল্যতে শুনলাম। ছাত্ররা উনাদের লাঞ্ছিত করেছেন। এ দেশে এও সম্ভব। তেমন খবর পেলাম না। কিছু এক্টিভিস্টের দেয়ালে গেলাম খবরের সন্ধানে। স্যার তো স্যারের জায়গায় আছেন। আমি খুব ইয়াসমিন ম্যাডামের ভক্ত ছিলাম। ওনার সাথে প্রথম দেখা হয় ১৯৯৬ সালের দিকে। বুয়েট থেকে শিক্ষা সফরে বের হয়েছিলাম। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক রাত ছিলাম। তখন আমরা মেয়েরা স্যারের বাসায় গিয়েছিলাম। ইয়াসমিন ম্যাডামের স্মার্টনেস খুব মুগ্ধ করেছিল। তখন আমি চুপি চুপি করে একজন/একাধিক রোল মডেল খুঁজতাম। এই যেমন আমার ত্রিশ বছর বয়সটা কার মতো করে কাটাতে চাই, ঠিক তেমনিভাবে চল্লিশ, পঞ্চাশ … । ম্যাডাম আমার একজন রোল মডেল হয়ে যান। দুবছর আগে যখন বই মেলায় গেলাম তখন আবার ম্যাডামের সাথে দেখা। বটতলার বেদিতে আমরা কজন বসেছিলাম। হঠাৎ হই-চই শব্দ দেখে তাকিয়ে দেখলাম স্যার আসছেন তার পেছনে একঝাঁক স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছেলের দল। স্যার একদম আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন। আমি তাড়াতাড়ি উঠে পড়লাম ইয়াসমিন ম্যাডামের খোঁজে। ম্যাডাম একাই ছিলেন। এবং তিনি দেখতে একই রকম রয়ে গেছেন। সেই একই রকম স্মার্ট, সপ্রতিভ এবং আলাপি। সেই তুলনায় স্যার অনেক বদলে গেছেন। এখন তাঁর চুলগুলো সব সাদা। তবে সবচেয়ে বদলেছে স্যারের গ্রহণযোগ্যতার গ্রাফ। আমি যখন দেশ ছাড়ি সেই ১৯৯৮ সালে, স্যার তখন সব ধরণের মানুষের কাছে ছিলেন একটি বাতিঘর। হয়তো এখনও আছেন, কিন্তু নেই সেই সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা। বাংলাদেশের যে অংশটি ষাট দশকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সাথে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন, বয়স বাড়লেও এখনও যারা একুশে ফেব্র্য়ারীতে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যেতে চান, রাজাকারদের বিচারে তারা আন্তরিকভাবেই আনন্দিত – প্রতিনিধি স্বরূপ তাদেরই কয়েকজনকে দেখলাম এই সময়টায় ইচ্ছে করে স্যারের লেখা, নাটক – সব কিছু এড়িয়ে যাচ্ছেন। এই প্রতিনিধিদের আমি গুরুত্ব দিচ্ছে এই কারণে যে উনারা মোটামুটি পূর্ণ একটি জীবন কাটিয়ে এসেছেন, জীবনের কাছে আর তেমন চাওয়া-পাওয়া নেই, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর আগামি দেখতে চান। অবাক হয়ে ভাবলাম কেন এমনটা হলো?

না, আজকে আর কোন রাজনৈতিক প্যাঁচালে যাব না। তার থেকে শিরোনামটি কেন লিখলাম তার একটি ব্যাখ্যা। অন্তর্জালে মাঝে মধ্যে দৈনিক পত্রিকা আর ফেসবুকে যাওয়া হয়। দেশের মানুষ আর পরিচিত মানুষদের খবরাখবর জানতে। খবর কতো বীভৎস হতে পারে তার উদাহরণ আমাদের দেশের দৈনিক পত্রিকা। বাংলাদেশের সাইকোরা অ্যামেরিকার সাইকোদেরকেও হার মানাচ্ছে। শুধু বাতাস পাম্প করে একটা ছেলেকে মেরে ফেললো! এক টাইটানিক কবে ডুবল, আজও তার খবর শুনতে হয়; আর এতো এতো শরনার্থী ডুবছে তার কথা একটি হেডলাইনেই শেষ? দিন শেষে এটাই বাস্তবতা, গরীবের জীবন জীবন না। কয়েকটা সেমিনারে অংশগ্রহণ করে সাদাদের যা ভাব বুঝলাম তা হলো গরীব হয়ে জন্মানো অপরাধ না, অপরাধ হলো গরীব থাকাটা। দরকার হোলে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করবে। এক্কেবারে ফরাসী বিপ্লবের সময় রাণী ম্যারির কথার প্রতিধ্বনি, ‘ এরা পাউরুটি খেতে পারে না তো কেক খাবে না।’ মতান্তরে রাণী নাকি এ কথা বলেননি। বড়লোকদের আবার এ সমস্যা তাদের নিয়ে ভালোমন্দ গুজব প্রচার পায় বেশি। ধনী হয়েও যে জীবন খুব সুমধুর তা তো নয়। সেখানে আবার আরেক সমস্যা। এই যেমন বুকের জমাট বাঁধা শ্বাসটা ফেলতে দৈনিক পত্রিকা থেকে তাড়াতাড়ি ফেসবুকে চোখ রাখি। এখানে আমার প্রবাসী ফ্রেন্ডদের জীবন মোটামোটি একই রকম। প্রবাসী দাওয়াতের হরেকরকম ছবি। নানারকম খাদ্যদ্রব্য। মহিলারা সব সেজেগুজে সার বেঁধে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবার মুখ হাস্যোজ্জ্বল। সব সুখী মানুষের ঢল। এর মধ্যে একজন ফোন করলেন। জানালেন স্বামীর অসুখ, মেয়ে এক ড্রাগ এডিক্টের সাথে পালিয়েছে, অর্থনৈতিক অবস্থাও প্রায় তলানিতে। বললাম, এতো কিছু, কিন্তু ফেসবুক দেখে ভাবলাম খুব ভালো আছেন। “রাখ, তোমার ফেসবুক …” বলে আরেক গল্পের প্রস্থ শুরু হল। এটাই দেখছি সুখী জীবনগুলো আতশি কাঁচের নীচে কেমন জানি মেকী হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। এতো সাধের সিদ্দীকা কবির কোর্মা-পোলাও কেমন জানি বিস্বাদ দেখতে হয়ে যাচ্ছে। সব গল্পই অবশ্য এরকম নয়। এর মধ্যেও অনেক সুখী মানুষের গল্প আছে। তবে যা বুঝলাম সলিল সমাধি তা সে টাইটানিকেই হোক আর ডিঙি নৌকাতেই হোক – পরিনিতি একই।
দিন শেষে সুস্থ্যভাবে শ্বাস নিতে পারছি কিনা, বেঁচে আছি কিনা, চলতে পারছি কিনা – সেটাই মুখ্য।
ভালো থাকুন সবাই – একটি সুন্দর আগামি দিনের স্বপ্ন সবাইকে উজ্জ্বল করুক।

পাদটীকাঃ এই লেখাটা শুরু করে আর শেষ করিনি। আজকে ভাবলাম কিছু একটা পোষ্ট করব। জীবনটা কিছুটা তার ছেঁড়া অবস্থায় আছে। তাই লেখার অবস্থা সেরকম।

৩,৪২৭ বার দেখা হয়েছে

২৩ টি মন্তব্য : “দুঃসংবাদের জন্য দৈনিক পত্রিকা, সুসংবাদের জন্য ফেসবুক”

  1. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    "এই লেখাটা শুরু করে আর শেষ করিনি। আজকে ভাবলাম কিছু একটা পোষ্ট করব। জীবনটা কিছুটা তার ছেঁড়া অবস্থায় আছে।"
    তার ছেড়া অবস্থায়ও যে লিখা দিয়েছো, এক নিঃশ্বাসে শুধু পড়ে গেলাম বললে ভুল হবে, বুঝে নিলাম, ভাল লিখার অভাবে কি সব অখাদ্য-কুখাদ্য দিয়ে আসছিলাম এত দিন।
    এরকম লিখা আরও চাই এই জন্য যে তাতে করে আমাদের মত আম-লেখকদের বুঝতে সুবিধা হবে, কি দেয়া উচিৎ আর কি দেয়া উচিৎ না।

    অনেক দিন পড় তোমার লিখা পড়লাম ঠিকই কিন্তু মন ভরে গেল.........


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  2. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    ঈদ মোবারক পারভেজ ভাই। আপনি অখাদ্য-কুখাদ্যের কথা বলছেন! এখানে উপস্থিত থেকে সবাইকে যেভাবে উৎসাহিত করেন সেটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? একটা সময় সিসিবির সব লেখা, সব মন্তব্য পড়তাম। কোথায় সে দিনগুলো যে চলে গেল!
    অনেক ধন্যবাদ উৎসাহিত করার জন্য। আপাততঃ ভুনা মাংস আর পরোটা ...


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  3. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    তোমার লেখা পড়ে মনেহলো সংবাদপত্র বা ফেইসবুক নয় আমি যেন সাপ্তাহিক একটি ম্যাগাজিন পড়ছি। বিচিত্রা বা রোববার বোধকরি। এখানে টক মিষ্টি ঝাল সবই আছে।

    তোমার লেখা পড়তে ভাললাগে, আপু!

    জিহাদের জন্য কোন সান্ত্বনা নেই। পিতা হারানোর বেদনায় বলবার মত কোন কথা থাকেনা আমি জানি। মানুষের জীবনে সময়ের মত হিলার আর কিছু নেই। আগামীকাল ঈদের দিনটি ওদের কেমন যাবে তা অন্য কেউ না জানুক আমি জানি। অনেক ভালবাসা রইল, প্রিয় জিহাদ!

    জবাব দিন
  4. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    সালাম আপু।
    পোস্টের শিরোনাম দেখে আমিও ফেসবুকে চোখ বুলালাম। আমার হোমপেজে ঈদ মোবারকের রেশে ভরে গেছে।
    সো ঈদ মুবারক।

    এক//

    নাম নিয়ে কাটা ছেড়া ভালো লাগলো। কয়েকদিন আগে আমরা কয়েকজন বন্ধু নাম রাখার ওয়েস্টার্ন ধারা ইস্টার্ণ ধারা বিষয়ক আলোচনা করতেছিলাম। এখানে লাস্ট নেমে ফ্যামিলি নাম থাকার ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ ভালো লাগে কনসিসটেন্সির জন্য। তবে, আমার আরেক বন্ধু সেটার বাজে দিকটাও ধরিয়ে দিল। যেমন, আমাদের ডিন নাটারার সাহেবের ছেলে আমাদের ডিপার্টমেন্টেই পড়ে। সো তার নাম দেখে অন্য শিক্ষকদের মাঝে ফান্ডামেন্টাল বায়াস থাকতে পারে। সেই জন্যই আমার বন্ধুর কথা ছিল ফ্যামিলি নেম অলটারনেটিভলি চেঞ্জ হলে এই ধারা থেকে ব্যত্যয় ঘটে সমস্যারও সমাধান হয়। সে যে শুধু বলার জন্য বলেনি তার প্রমানও পেলাম, নিজের ছেলের লাস্ট নেম তার নামের সাথে কনসিসটেন্ট না করে তার বাবার (পিচ্চির দাদা) নামের লাস্ট নেমের সাথে মিল রেখে করেছে। তো সেই ধারার সাথে আপনার দাদীর সাথে আপনার নামের মিল দেখে মজা লাগলো। ঘটনাক্রমে আমার বউয়ের নামও তার দাদীর নামেের সাথে মিল রেখে করা (গুল নাহার>> গুলশান নাহার)।
    নাম নিয়ে মজার গল্প অবশ্য অনেকই আছে। তার মাঝে আমার এক মামা ছিলেন তার নাম হামিদউদ্দিন । নামটা একটু প্রাচীন ঘরণার হওয়ায় বন্ধুদের কাছে তিনি শাওন নাম ধারণ করেন। সেই পর্যন্ত ভালো ছিলো। বিপত্তি বাধলো যখন উনার এক ক্লাশমেট এসে উনার মার কাছে জানতে চান শাওন বাসায় আছে কিনা। উনার মায়ের বুঝতে কিছুক্ষণ সময় লাগে। বুঝার পরে প্রতিক্রিয়া ছিলো এপিক। ' বাবা মায় দিছে একনাম, এখন বন্ধুরা ডাকে এক নাম, কয়েকদিন পরে বউ আইসা দিব আরেক নাম।" অবশ্য উনার বউ উনার নতুন নাম দিয়েছিলেন কিনা জানা যায় নি।

    দুই//

    জাফর ইকবাল নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়িটা বেশি বিনোদনমূলক। আপনার মতের জায়গা গুলোতে দ্বিমত নেই। তবে উল্টো কাহিনীও আগই দেখেছি। আমার নিকটাত্মীয়, যার কিনা জাফর ইকবালের কর্মকান্ডে আগ্রহের চেয়ে বিরক্তিই বেশি ছিলো তাকে বেশ ক্ষোভ সহকারে বলতে শুনি, জাফর ইকবালের মত সর্বজন গ্রহনযোগ্য লোককেও অপদস্থ হতে হলো। এই দেশে আর কী হবে!!

    তার হতাশা ভ্যালিড হিসাবে নিতাম যদি না আমি আগে থেকেই জানতাম তার এই সিজনাল জাফর ইকবাল প্রীতির কারণ জাফর ইকবাল অপদস্থ হয়েছেন আওয়ামীলীগের দ্বারা। আসল ব্যাপার হলো এখন আমরা সব কিছুই মোটা দাগে প্যাটার্নের বাইরে ভাবতে পারি না। ফেসবুকের একটিভিটির হিস্টোরি দেখে যে কোন মানুষ একটা ইস্যুতে মোটামুটি কোনদিকে অবস্থান নিবে প্রেডিক্ট করা যায়। ব্যাপারটা খুব বেশি খুশি হবার নয়। কেননা, সবাই আসলে দিন শেষে কারো কাছে চোখ আর মস্তিস্ক বন্ধক রেখেই মতামত প্রডানের চর্চা শুরু করেছে।

    তিন//
    ফেসবুকে মেকি সুখী মানুষের ফিলিং অওসামনেস দেখতে দেখতে তিক্ত ছিলাম এক সময়। ইদানিং আড় কিছুই দেখতে পাই না। ফেসবুক কোন একটা আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স দিয়ে আমার আগ্রহকেও প্যাটর্ণে ফেলে দিছে। এখন আর কিছুই দেখি না তাই। আর না দেখার কারণে একটিভিটিও নেই। আর একটিভিটি না থাকায় আরও কম দেখি। অতঃপর চক্র চলতে থাকে।

    জ্ঞানীজনেরা বলেন, 'আমরা কী হতে চাই', বা 'কী হতে পারলে খুশী হতাম' তার প্রদর্শনী হলো ফেসবুক।

    কথায় কথায় অনেক কথা বলে ফেললাম।
    ঈদ মুবারক।

    জবাব দিন
  5. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    ফেইসবুকের এ যাবতকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফিচার হলো "Unfollow" বাটন! সংবাদপত্র পড়া বন্ধ করে দিয়েছি। আসলে ঠিক জানি না কোথায় সংবাদ খুঁজবো। কারণ সংবাদ মাধ্যমের যেই আইডিয়োলজিকাল রোল অর্থাৎ পাঠক-শ্রোতাদের চিন্তার খোরাক জোগান দেয়া, সেই রোলে আর নাই। সবাই কিছু না কিছু জারী করতে চায়।


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  6. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    ১। জিহাদের ব্যাপারটি জানতাম না।
    শুনে খারাপই লাগছে।
    আশা করি জিহাদ এবং ওদের পরিবারের সবাই দ্রুত শোক সামলে উঠতে পারবে।

    ২। সংবাদপত্রিকা পড়া বাদ দিয়েছি বহু বছর হল।
    মাঝে মাঝে খেলার খবরগুলো ঢুঁ মেরে দেখি।
    বাংলাদেশের যে কোন খবরকেই উদ্দেশ্য প্রণোদিত মনে হয়।
    অর্থাৎ যিনি/যে পত্রিকা খবর প্রকাশ করছেন, তিনি কোন স্বার্থে সেটি করছেন (বা করছেন না)।

    সামাজিক মাধ্যমও এক ধরনের মেকি জগত।
    নিজেকে দিয়েই সেটা অনেকখানি বুঝতে পারি...

    ৩। আপনার লেখা সবসময়ই সুখপাঠ্য হয়।
    আজকেও ব্যতিক্রম হল না।

    ঈদ মোবারক।
    ভাল থাকবেন।


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  7. রাব্বী আহমেদ (২০০৫-২০১১)

    ফেসবুক খুললেই মানুষের বিচিত্র কর্মকান্ডের ছবি। সেই ঘুরেফিরে একই। রেস্তোরায় চেক ইন, খাবারের ছবি, গেট টুগেদার, সেলফি..... দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে যাই। একদিকে সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা....অন্যদিকে ফেসবুকে ধর্ম প্রচার। মানুষ মনে হয় কোথাও খাওয়াটাকে খুব বড় করে দেখে।

    লেখাটা ভাবনার জগতে আঘাত করলো। ধন্যবাদ আপা। সিসবির হারানোর ঐতিহ্য ফিরে আসবে। এই প্রত্যাশা করি...........

    জবাব দিন
  8. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    আসল কথা হল প্রতিটি মানুষই নিজের জন্য একটি স্থান খুঁজে। ফেসবুকটি সে স্থানটি দিয়েছে। আবার এটি একটি আয়নার মতো। হয়তো আরও অনেক পরে আমরা আমরা অনেক কিছুই ছেঁটে ফেলতে পারবো।
    তোমার প্রত্যাশার শুভ কামনা ...


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  9. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    এক ক্যানভাসে অনেক কিছুই উঠে আসলো । শিরোনাম, ভালো খারাপের খবর আর তার ব্যবচ্ছেদ, বাড়ীর ও মানুষের ছায়া, দেশ বিভাজনের কায়া, শিক্ষক, বাতিঘর ... কথা হলো মনের আয়না - সেখানে কতো কিছুই না বিম্বিত হলো । ফেসবুকে এখনো সামাজিক ভান-ভনিতার ভাইরাস জনিত কারণে বেলজিয়ান সততায় বিম্বিত হবার বদলে আমাদের দাশী কায়দায় শঠতায় বিম্বিত হলো বেশ। আসলে মানুষ মাত্রেই ফ্যান্টাসীর এক রকম বশীভূত প্রাণী। সেই ফ্যান্টাসীর আপন স্বত্বাটাকে তুলে ধরতেই ব্যতিব্যাস্ত যেনো সবাই। কি দেশে, কি বিদেশে। (exceptions are ignored in the notion as set rule)
    ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে । এর ভেতরে লেখকের মনঃপীড়া আর তা পাঠকের বোধে সঞ্চারিত করবার প্রয়াসটাকে।

    জবাব দিন
    • খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

      "মানুষ মাত্রেই ফ্যান্টাসীর এক রকম বশীভূত প্রাণী। সেই ফ্যান্টাসীর আপন স্বত্বাটাকে তুলে ধরতেই ব্যতিব্যাস্ত যেনো সবাই। কি দেশে, কি বিদেশে"
      "এর ভেতরে লেখকের মনঃপীড়া আর তা পাঠকের বোধে সঞ্চারিত করবার প্রয়াসটাকে"
      - দুটোই খুব চমৎকার পর্যবেক্ষণ, লুৎফুল।

      জবাব দিন
  10. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    "সময় আমাকে বুঝিয়েছে প্রাচীনপন্থার সাথে পরিচয় থাকাটার প্রয়োজন রয়েছে। নিজের শেকড় চিনতে সাহায্য করে। এই জীবন চালাতে দুটোরই সমান প্রয়োজনীয়তা। অনেকটা গাড়ির এক্সেলেরেটর আর ব্রেকের মতো। এই জীবনকে যেমন এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, আবার ঠিক সময় মতো থামতে জানতে হয়।" - খুব সুন্দর করে বলেছো এ কথাগুলো। ভালো লেগেছে।
    "জীবনের দুঃসংবাদগুলো আসলে অনেকটা ব্রেকের মতো" - যথার্থ!
    "খবর কতো বীভৎস হতে পারে তার উদাহরণ আমাদের দেশের দৈনিক পত্রিকা" - তার সাথে বোধহয় যোগ করা যায় টিভি চ্যানেলগুলোকেও।
    জিহাদের পিতৃবিয়োগের কথাটা জানতে পেরে ব্যথিত হ'লাম। ঈদের আগে আগে এরকম বিষাদময় পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়াটা আরো বেশী দুঃখজনক। আশাকরি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যগণ শীঘ্রই এ বেদনা কাটিয়ে উঠবেন। মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করছি।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : পারভেজ (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।