ধানসিঁড়িটির তীরে


সিসিবি আসলে আমার জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছে – এখানে আমি ঢুঁ মারি। চেনাজানা মানুষদের দেখে ভাল লাগে। সুন্দর সুন্দর লেখা পড়ি। কেউ আমাকে বলেনি, তারপরও নিজের কাছেই এক ধরণের দায়বদ্ধতা বোধ করি। মনে হয় গত এক বছর ধরে কিছু লিখি না। কেন লিখি না তার অনেক ব্যাখ্যা আছে। আমার জীবন সরলরৈখিক নয়। এখানে অনেক আকঁ-বাঁক আছে। তাই কখনো কোথাও থামতে হয়, কখনো দৌড়াতে – এইতো জীবন। লেখাটা আমার কাছে মেডিটেশনের মতো। যত লিখি তত নিজের আত্মশুদ্ধি হয়। অনেকটা গির্জা স্টাইলের কনফেশান। এই বিষয়টি অনুধাবন করার পর থেকে জীবনের না-লেখা অধ্যায়টা অনেকটা বায়ুদূষণে আটকে পরার মতো। তারপরও জীবনকে মেনে নিয়ে বাধ্য হয়েই মাঝে মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড গিলতে হয়। কল্পনা করতে থাকি অনেকদিন বাঁচার – এই জীবনের আকঁ-বাঁক নিয়ে অনর্গল কনফেশান করে চলছি। হয়তো একা একাই। বৃদ্ধ মানুষের কথা কে আর শোনে? অথচ এই ভাবনাটি আমার বৃদ্ধ হবার ধারণাটিকে রোমান্টিক করে তোলে। কানে কানে একটি গোপন কথা বলে যাই -অবয়বের বয়স বাড়লেও, মনের বয়স আসলে বেশি বাড়ে না। আমরা আসলে আটকে পড়ে থাকি সেই বিশ, পঁচিশ কিম্বা পঁয়ত্রিশে। সমাজ আমাদের যে বয়সে যে রকম সাজতে বলে – অবলীলায় আমরা সেরকম সেজে যাই। জীবনটা আসলে বয়স-ভিত্তিক পোষাক পরিবর্তনের কয়েক পর্বের একটি ধারাবাহিক নাটক। চরিত্রগুলো একই থাকে। শুধু মানুষগুলো বদলে যায়।

সেদিন টীন-এজদের জন্য লেখা একটি পড়লাম। নিজের টীন-এজ সন্তান আছে তো তাই। আসলে সন্তানের জন্য পড়লে শিখছি আসলে নিজেই। মনে হল এসব অনেক কথা আমার টিন-এজে শুনলে ভালো হতো। সেখান থেকে একটি লেখা ভাল লেগে গেলো। ভাবলাম সিসিবি সেটাই অনুবাদ করে দেই।

যখন ছোট ছিলাম, ছিল না কোন দায়িত্ব
কল্পনাগুলোও ছিল লাগাম ছাড়া
তখন আমি সত্যি সত্যিই ভাবতাম
একদিন এই পৃথিবীটাকে বদলে দেব;

যখন বোধবুদ্ধি হল, বুঝলাম
এই পৃথিবী বদলাবার নয়।

এবং একসময় চারপাশে তাকিয়ে ভাবলাম
আচ্ছা, শুধু আমার দেশটাকে বদলে ফেলি।
কিন্তু এটিও ছিল প্রায় একটি অসাড় স্বপ্ন।

এক সময় পৌড় হলাম, শেষ বারের মতো
প্রায় মরিয়া হয়ে ভাবলাম, আসলে বদলে
ফেলতে হবে আমার চারপাশের মানুষগুলোকে
আমার পরিবারকে, কিন্তু হায় কিছুই হল না।

এখন মৃত্যুশয্যায় অনুধাবন করলাম
(হয়তো জীবনে প্রথমবারের মতো)
যদি আমি প্রথমে নিজেকে বদলে ফেলতাম,
আমার পারিবারে সেটি হতো একটি উদাহরণ
হয়তো তাদেরকে আমি তখন প্রভাবিত করতে পারতাম,
তারাও তখন দেশের ভালো করতে আমাকে অনুপ্রাণিত করতো,
কে জানে একদিন হয়তো আমি পৃথিবীটাকেও বদলে ফেলতে পারতাম।


সবার জন্য রইলো শুভকামনা।

২,৮৯৬ বার দেখা হয়েছে

১৮ টি মন্তব্য : “ধানসিঁড়িটির তীরে”

  1. রাব্বী (৯২-৯৮)

    অনেকদিন পর লিখলেন বা আমি আপনার আগের লেখা পড়িনি।

    জীবনটা আসলে বয়স-ভিত্তিক পোষাক পরিবর্তনের কয়েক পর্বের একটি ধারাবাহিক নাটক। চরিত্রগুলো একই থাকে। শুধু মানুষগুলো বদলে যায়।

    কথাটা ঠিক। মিলে গেল। এখনো বাস্তবিকই ২৫শে আটকে আছি!


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
  2. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    অবশেষে তোমার দর্শণ মিলল। দিনটাই শুভ। তা ধানসিঁড়িতে জিরোতে আসছ কখন?
    কথা ঠিক এই জীবন হল বয়স ভিত্তিক অভিনয় করে যাওয়া। আমিও আটকে আছি কখনো পঁচিশ, কখনোবা পঁয়ত্রিশে।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  3. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    সোশ্যাল মিডিয়াতে আমি মৃতপ্রায় মানুষ বলতে গেলে, শান্তা। নিত্যদিনের সেলফি জোয়ারে অথবা ইনবক্সে আলাপচারিতায় সবার সাথে ঠিক পেরে উঠিনা। তাছাড়া এটি আমার কাছে খুব টাইম কনজিউমিং ও মনে হয়। যারা আমার সতি্যকারের বন্ধু অথবা কাছের মানুষ তারা ঠিক রয়ে গেছেন বাকীরা ভোরের বকুল ফুলের মত ঝরে গেছেন, যদিত্ত কিছুটা সুরভি তো রয়েই গেছে।

    আমার বন্ধু লুবনা সিসিবিতে আমাকে গছিয়ে দিয়ে গেছে। সেই থেকে সিসিবিই আমার সেকেন্ড হোম হয়ে আছে। শুরুতে একটি মানুষকেও চিনতাম না অথচ এখন মনেহয় সিসিবিয়ানরা আমার আত্মার স্বজন! কী যে মায়া এক একজন মানুষের প্রতি যদি জানতে! লেখার কিছু না থাকলেও আড্ডা দিতে আসি সিসিবিতে। দু' চারদিন এখানে না এলে ডিংডং মেইল আসে, অবনী বাড়ি আছো?

    জবাব দিন
  4. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)
    লেখাটা আমার কাছে মেডিটেশনের মতো। যত লিখি তত নিজের আত্মশুদ্ধি হয়। অনেকটা গির্জা স্টাইলের কনফেশান।

    কথাটা আপনার বিরুদ্ধে গেল কিন্তু, শান্তাপা। কেননা, সেক্ষেত্রে জীবন যতই আকাঁ-বাঁকা হোক না কেন- আপনার আরও অনেক বেশি লেখা উচিত ছিল।
    অন্তত দিন-লিপি তো লিখতেই পারতেন...
    নিজেকে এবং পাঠকদের বঞ্চিত করলেন।

    আশা করি, জোর করে হলেও লেখালিখির জন্য আরও বেশি করে সময় বের করবেন।


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
      • জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

        শান্তাপা, সে এক বিরাট ইতিহাস! করুণ ইতিহাস!
        সিরিজ হলে আমি সাধারণত লেখা অনেকখানি এগিয়ে গিয়ে ব্লগে দেয়া শুরু করি...এতে করে ব্লগের চেয়ে লেখা এগিয়ে থাকে বলে পাঠকদের অপেক্ষায় রাখার ব্যাপারটি থাকে না। তো, ওয়েস্টার্নটা আগেই শেষ করে ফেলেছিলাম বলে সেটা 'সেবা প্রকাশনী' তে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কয়েকদিন পর একজন ফোন করে জানালেন-লেখা কিছুই হয় নি...প্রচুর ভুল...অত্যন্ত নিম্নমানের...ইত্যাদি ইত্যাদি। মানে যে কোন মানুষের ক্ষেত্রে লেখা ছেড়ে বনবাসে যাবার জন্য যথেষ্ট! নেহায়েত বাংলাদেশে তেমন বন নেই- থাকলেও সেখানে ইন্টারনেট বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নেই...থাকলে আমি আজ কোন এক গহীন বন থেকে এই রিপ্লাই দিতাম!

        যাই হোক, ঐদিনের পর থেকে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম- আর কোনদিন ওয়েস্টার্ন লিখব না।
        সিরিজের মৃত্যুও হয়েছে একই কারণে! 🙁

        এই হল আপা ঘটনা!


        ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

        জবাব দিন
  5. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    সেদিন অনলাইনে আপনার নাম দেখেই খুশি লাগলো। চেনা-পরিচিত পুরোনো নাম অনেকদিন ওর লগ-ইন দেখলেই ভাল লাগে। ট্রিট পাবার মত। আর সাথে যদি লেখা থাকে তো কথাই নেই। নিজেই জীবনের ধাক্কা খেয়ে হাঁটু মুড়ে মাটিতে বসে পড়েছি। চেষ্টা করছি উঠে দাঁড়াতে।

    লেখাটা আমার কাছে মেডিটেশনের মতো। যত লিখি তত নিজের আত্মশুদ্ধি হয়। অনেকটা গির্জা স্টাইলের কনফেশান।

    এখানের লেখকদের সবাই মনে হয় কমবেশী এই ভাবনায় পরিচালিত হয়ে লগ-ইন করে। তারপর + নতুন প্রকাশনা।

    জীবনের বাঁকগুলোতে গতি কমাতে হবে। কেন জানি মনে হচ্ছে খুব দ্রুতগতিতে মোড় নিচ্ছি।


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  6. মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

    শিরোনাম দেখে যা ভেবেছিলাম লেখাটি সে ধাঁচের নয়। যাক তবু প্রথম স্তবক ভিন্নতর এক বোধের জন্ম দিল। দ্বিতীয় স্তবকের কবিতাটি টিন-এজারদের জন্য? বার কয়েক ভাবলাম, কিন্তু কিছুতেই মেলাতে পারলাম না। যাক হয়তো 'মেলাবেন তিনি মেলাবেন'।


    দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

    জবাব দিন
  7. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    "আমার জীবন সরলরৈখিক নয়" - কারটাই বা?
    "লেখাটা আমার কাছে মেডিটেশনের মতো। যত লিখি তত নিজের আত্মশুদ্ধি হয়। অনেকটা গির্জা স্টাইলের কনফেশান" - চমৎকার বলেছো এ কথাগুলো! বেশ সহজেই অনুভূত হয়।
    "অবয়বের বয়স বাড়লেও, মনের বয়স আসলে বেশি বাড়ে না" - সেটা বেশ বুঝি।
    লেখাটা চমৎকার হয়েছে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।