নিরাপদ অণুব্লগ


আমি মানুষটা সবসময়ই একটা এ্যডভেন্চারাস টাইপের। একটু ঝুঁকিপ্রবণ। আমার কাছের মানুষ, বন্ধুবান্ধবকে জিজ্ঞেস করলে সবাই এক বাক্য তা স্বীকার করবে। ধ্যাৎ লেখাটার শুরুতেই কেমন জানি আমি আমি টাইপ হয়ে যাচ্ছে। আসলে যে কথাটা বলতে চাচ্ছিলাম তা হলো এই চ্ল্লিশোর্ধ বয়সে এসেও আমার স্বভাবটা বদলে যায়নি। জীবনের ব্যাপারে আমি একইভাবে প্যাশনেট, উচ্ছ্ব্সিত এবং স্বাপ্নিক। সেদিন বসে বসে ভাবছিলাম গত দশকে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন কী আর আগামী দশকে অগ্রাধীকারের ভিত্তিতে সবচেয়ে প্রধান লক্ষ্যমাত্রা কী। চিন্তা করে দেখলাম দুটোই আমার সন্তান বিষয়ক। গত দশকে (+১) আমি দুটো সন্তানের মা হই। তারা সুস্থ এবং সুন্দরভাবে বড় হচ্ছে। আগামী দশকে ঘর ছেড়ে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার কথা। তাদের সুস্থতা, সুশিক্ষা এটাই প্রধান লক্ষ্যমাত্রা। আর বাদবাকীগুলোর কথা এখন না হয় নাই বলি। প্যাশনেট মানুষের লক্ষ্যমাত্রা তো কম থাকার কথা নয়।


আমার ভেতরে এক স্রষ্ঠা বাস করে। মূলত সেই স্রষ্ঠাই আমার বেস্ট ফ্রেণ্ড দিনের বিভিন্ন সময়ে সে বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে আমার সংলাপ চলতে থাকে। এই যেমন দিনের শুরুতে গাড়ি নিয়ে বের হবার আগে স্রষ্ঠাকে বলি, আমাদেরকে সব বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করো। তা শুনে পাশ থেকে ছেলে বলে উঠে, ‘বিপদ-আপদ মানে তো ক্রাইম। আমি ইন্টারনেট থেকে দেখেছি এই এলাকায় ক্রাইম রেট খুব কম। তোমার এই কথা বলার এখন আর প্রয়োজন নেই।’ আমি অনেকভাবেই ছেলের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতাম। গাড়ি এক্সিডেন্ট তো হতে পারে – এরকম নানান কিছু। কিন্তু তা আর করলাম না। অভিজ্ঞতা বলে বার বছরের ছেলের সাথে তর্কে লিপ্ত হতে নেই। যাই বলব তার সব কিছুতেই সে কোন প্রেডিক্টেবল পরিসংখ্যাণের আওয়াত নিয়ে এসে বলবৎ করে দিবে। তাই শুধু অনেকক্ষণ ধরে ভাবলাম সভ্যতা কিভাবে আমাদের চিন্তার ধারাকে প্রবাহিত করে। এই ছেলে জন্মাতো যদি আদিম সমাজে তাহলে সেই আনপ্রেডিক্টেবল পরিবেশে সে কিভাবে তার দিনকাল নিয়ে এতো নিশ্চিত থাকতো তা খুব দেখা যেতো!


মাঝে মাঝে মনে হয় সেই যে মা লুসি (ইথিওপিয়ায় পাওয়া প্রথম হোমিনিড যারা সোজা হয়ে হাঁটতে শিখেছিল) থেকে আমরা যে ক্রমশ চলছি তো চলছি তার শেষ কোথায়? কেন এই ছুটে চলা? ছেলের উত্তর শুনে মনে হয় আসলে মানুষ ছুটে চলে নিরাপত্তার সন্ধানে। সভ্যতা মানে আর কিছুই নয় প্রেডিক্টেবিলিটি। বিত্তশালী বা প্রভাবশালী হওয়ার মানে এই নয় যে আপনি দামী বাড়িতে থাকবেন, দামী গাড়িতে চড়বেন কিম্বা হাতে মস্ট বড় এক হিরার আংটি শোভা পারে – একজন প্রভাবশালী পরিবারের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার নিরাপত্তা। যে কোন বিপদ সংকেত পেলে প্রভাবশালীরা সবচেয়ে আগে নিরাপদ জায়গায় চলে যায়। কিম্বা অন্য কোনভাবে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এই দেশ যখন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ছারখার ত্খন সবচেয়ে প্রভাবশালী পরিবার শক্রর জিম্মায় নিরাপদ থাকে। মারা যায় আমার আপনার ভাই, বাবা কিম্বা চাচা। আবার ষোড়শ শতাব্দীতে লেখা আপনি যদি ম্যাকিয়াভালির দ্য প্রিন্স উপন্যাসটি পড়েন তাহলে বুঝবেন কিভাবে নিজেদের নির্বুদ্ধিতার জন্য এই প্রভাবশালী পরিবারগুলো নিজেদের নিরাপত্তা বিঘ্ন করে। গতকাল যে রাজা আজ সে অপঘাতে মৃতদেহ, গতকাল যে প্রিন্স আজ তার ফেরারী জীবন। চোখের সামনে আমরা তো সাদ্দাম-গাদ্দাফী উপাখ্যান দেখলাম। অতীতেও হয়েছে ফ্রেন্চ বিপ্লব, রাশিয়ান বিপ্লব।


না, কোন কাসুদ্দী নিয়ে ঘাটাঘাটি করার ইচ্ছা নিয়ে এই অনুব্লগ নিয়ে বসিনি, আমার সংলাপ শুধু আপনার সাথে। আপনি যদি নিজের নিরাপত্তা চান তাহলে নৈতিকতা বজায় রেখে ধূর্ত হন, স্বার্থপর হন, ধান্ধাবাজ হন। আপনি শুধু আপনাকে নিয়ে ভাবুন, আপনাকে সুখী করুন, নিজের চারপাশে নিরাপদ বলয় তৈরি করুন। তারপর যখন নিজের নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিত হবেন তখন আস্তে আস্তে এই নিরাপত্তার বলয়টা বৃদ্ধি করবেন অন্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। তবে শর্ত একটাই কখনই, কোন অবস্থাতেই নিজের নৈতিকতা বিসর্জন দেওয়া যাবে না। যখনই তা দিবেন তখনই আপনি অনিরাপদ হতে শুরু করবেন।


প্রিয় সিসিবিয়ান, ৪ নম্বর প্যারার কথাগুলো আমি আসলে আমার সন্তানদের বলি। কাউকে উপদেশ দেওয়ার ধৃষ্টতা আমি এখানে দেখাব না। আমি শুধু আমার কথা বলতে পারি। জগতের প্রতিটি মানুষ নিরাপদে থাকুক এই শুভকামনা করে বিদায় নিচ্ছি।

১,৭০১ বার দেখা হয়েছে

১৫ টি মন্তব্য : “নিরাপদ অণুব্লগ”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    শান্তাপা, একটু তাড়াহুড়া করে লেখা মনে হল... :-B
    মনটা একটু বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে কি?? :dreamy:
    ভাল থাকবেন। 😀


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  2. দিবস (২০০২-২০০৮)

    শান্তাপু, ১৯৭১ সালের সেই প্রভাবশালী পরিবার মানে কি শেখ পরিবার বুঝিয়েছেন? তারা তখন কি নিরাপত্তায় ছিল নাকি বন্দী ছিল? মানে আমি বোঝাতে চাচ্ছি যে কোন শব্দটা এখানে বেশী এপ্রোপ্রিয়েট? আবার যখন ৭৫ এ এই একই পরিবার স্বপরিবারে নিহত হয় তখন প্রভাবশালীর নিরাপত্তার বিষয়টা কিভাবে দেখা যেতে পারে কিংবা প্রভাবশালীর নির্বুদ্ধিতাটা এখানে কি? আর নির্বুদ্ধিতার থেকে কি এখানে খুনীদের অপরাধটাই কি আলোচ্য বা প্রাধান্য পাবে কিনা জানতে চাইছি।

    আমার এত কিছু প্রশ্ন ইনভ্যালিড হবে যদি আপনি ১৯৭১ এর প্রভাবশালী পরিবার বলতে শেখ পরিবারকে না বুঝিয়ে থাকেন।


    হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোস্তাফিজ (১৯৮৩-১৯৮৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।