রং বদল – ১

(পোস্টের সংখ্যা ৫৯ এ আটকে আছে দেখে তা ৬০ করতে ইচ্ছে হলো। অন্য কোথাও প্রকাশিত অনেক আগে লেখা একটি গল্প পোস্ট করলাম।)
-তোমাকে না ফাইলটা নতুন করে এডিট করতে বলেছিলাম?
-করেছি তো। এটা তো নতুন ভার্সন।
-তাহলে যে গতকাল আমি নতুন কয়েকটা পয়েন্ট দিলাম সেগুলো কোথায়?
-আপনি তো সেগুলো এখানে ঢুকোতে বলেননি।
-তাহলে কোথায় ঢুকোতে বলেছিলাম?
-বলেছেন পরে যখন আপগ্রেড ভার্সন হবে তখন নতুন এইসব পয়েন্ট সেখানে যোগ করতে।
-তোমার সমস্যা কি জান তুমি একটু বেশি বুঝ। না বুঝলে তো জিজ্ঞেস করবে। সেটা না করে নিজের মনমতো কাজ করবে।
-আপনি তো ফাইল এডিট করতে বলেছিলেন আপগ্রেড করতে তো বলেননি?
-আর কোন কথা না বলে যাও এক্ষুনি নতুন ফাইল নিয়ে এসো।
কাকন আর দাড়াল না। এই মূহুর্তে বসের সামনে থেকে সরে যাওয়াই উত্তম। নতুন ফাইলের সংজ্ঞাটা একটু পরিষ্কার করে নিলে ভালো হতো। নইলে পরেরবার আবার অন্যকিছু নিয়ে রাগারাগি করবেন। বসের ব্যবহার অফিস শিষ্ঠাচারের বহির্ভূত। কিন্তু কিছু করার নেই। এখানে চাকুরী করতে হলে এসব হজম করেই চলতে হবে। আর তার জীবনে এই চাকুরীটা ছাড়া এখন আর তো কোন গতিও নেই।
অফিস থেকে বেরুতে বেরুতে প্রায় রাত আটটা বাজলো। নীচে সবুজ অপেক্ষা করছে। এখন ওর সাথে কোথাও একটু খোলা জায়গায়, টাটকা বাতাসের মধ্যে বসতে পারলে সারাদিনের যতো জড়তা, ক্লান্িত আর অপমান সব ধুয়ে মুছে যাবে।
সবুজ আজকে সবুজ শার্ট পরে এসেছে। নতুন শার্ট, কাকন আগে কখনও দেখেনি।
-এই শার্টটা কোথ্নেকে পেলে আগে তো কখনও দেখিনি।
-বড়লোকের মেয়ে দিয়েছে।
-কে বাবলী? কবে দিল?
-আমার এবারের জন্মদিনে। তুমি আবার জেলাস হয়ো না।
কাকন মনে মনে ভাবল বাংলা সিনেমার মতো ‘বড়লোকের মেয়ে আর গরীবের ছেলে‘র সেই লটারীর টিকেট জিতে যাবার মতো স্বপ্নিল দিনগুলো আর নেই। এখন সবাইই অতি মাত্রায় তাদের ক্লাস সচেতন। বাবলী যে তার বন্ধু সার্কেলের মধ্যে সবুজকে স্থান দিয়েছে, এটাতে বরং সে খুশীই হয়েছে। বহুদিন সে সবুজের মুখ থেকে এই ‘বড়লোকের মেয়ের‘ গল্প শুনেছে। বাবলী ইউনিভার্সিটিতে গাড়িতে করে আসে, তাকে এক জামা দুবার পরতে দেখা যায় না, জন্মদিনে গ্রান্ড পার্টি দেয়, বন্ধুদের জন্মদিনে ভালো ভালো উপহার দেয়। এসব মেয়েরা গঁফরগাও থেকে আসা চালচুলোহীন সবুজদের সবুজ শার্ট দিলে জেলাস হতে চাইলেও তা হওয়া যায় না। তবে এই মূহুর্তে কাকনের মনে হলো সবুজ একটু খুশীই হবে যদি সে একটু জেলাস হয়।
-ওই মেয়ের দেওয়া শার্ট পরে তুমি আমার সাথে দেখা করতে আসলে? তাও আবার সাতদিন পরে।
-ভুল হয়ে গেছে। চল এখুনি বঙ্গবাজারে গিয়ে নতুন টিশার্ট কিনে নিয়ে আসি।
-নতুন কিনতে হবে কেন? তোমার কি আর কোন শার্ট ছিল না? যাই হোক এই মূহুর্তে আমাকে খুশি করে দিতে পারলে তোমার সব অপরাধ মাফ।
-কি আজ্ঞা মহারানি?
-চল টি এস সির দিকে যাই।
-আমি তো ভাবলাম কোথাও খেতে যাব। রাতে তো এখনও খাইনি।
কাকন মনে মনে এই ভয়টাই পাচ্ছিল। সে এখন হলে গেলে ফ্রী খেতে পারে। আর তাছাড়া আজ অফিসে নিলা আপা ওর জন্য ওনার মায়ের বানানো পিঠা নিয়ে এসেছিলো। কিছুক্ষন আগে সেটা খেয়ে এসেছে। এখন একদমই ক্ষিদে নেই। অনর্থক বাইরে খেয়ে পয়সা নষ্ঠ করার কোন মানে হয় না। বিলটা তো তাকেই মিটাতে হবে। আবার সবুজ রাতে কিছু খায়নি এটাও বিবেচ্য বিষয়। কাকন বলল,
-পথে তুমি কিছু কিনে নাও। খোলা প্রান্তরে বসে তুমি খাবে আর আমি দেখবো।

রাতের বেলার এই রিক্সাভ্রমন কাকনের মনপ্রাণ জুড়িয়ে দেয়। ভুলে যায় সব ক্লান্িত, সারাদিনের অবসাদ। সবুজ পাশে থাকলে সে ভালো লাগা আরো কয়েকগুন বেড়ে যায়। এই সংগ্রামী জীবন বয়ে চলবার জন্য মাঝে মধ্যে কারো কাঁধে মাথা রাখাটা নতুন করে এক অনবদ্য শক্তি যোগায়। কাকন অনর্গল বলে যায়,
-বুঝলে আমার বসটা হচ্ছে এক নম্বরের স্বৈরাচার। নিজে যা বুঝবে তাই ঠিক। অন্যের কথার দাম দেওয়া তো দূরের কথা শুনবেই না। আর মাঝে মধ্যে এমন ব্যবহার করে যে মনে হয় কেŒ বাসার কাজের বুয়ার সাথেও এমন ব্যবহার করে না।
-প্রাইভেট চাকরীর এই এক সমস্যা।
-এর জন্য তোমাকে বলি বি সি এস পরীক্ষা দিয়ে একবারে সরকারী চাকরীতে ঢুকার চেষ্টা করো। একবার চাকরীতে ঢুকে গেলে আর অন্য কিছু করার সময় পাওয়া যায় না। দেখলে তো কাজের চাপে এ বছরটা পরীক্ষাটা ড্রপ দিতে হচ্ছে।
-পরীক্ষা দিয়ে তো সেই চাকরীই করতে হতো। তুমি তো সেটা এখনই করছো।
-তারপরও মাস্টার্স ডিগ্রিটা হয়ে গেলে লেখাপড়ার ঝামেলা মিটে যেত। ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় আসা তো এই কারণেই।
কাকনের এখনও ভাবতে অবাক লাগে যে কোন সাহসের জোড়ে সে একা একা ঢাকায় চলে আসলো!
বি এ পাশ করার পর সে চরপাড়ার কিশোরমেলা স্কুলে দুবছর পড়িয়েছিল। তারপর ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে সমাজবিজ্ঞানে পাসকোর্সে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর এ শহরে চলে আসে। সে সময়টা তার বড় কষ্ঠে গেছে। হলে সীট পাওয়া যায়নি। টাকা পয়সার টানাটানি। নিজের সঞ্চয় ভেঙ্গে চলতে হচ্ছিল। বাঁচোয়া এই যে তখন সংসারে কোন পয়সা দিতে হতো না। কাঁটাবনের এক মহিলা হোস্টেলে রেহানা আপার সাথে ভাগাভাগি করে থাকা। বলতে গেলে রেহানা আপার ভরসাতেই ঢাকা শহরে আসা। ময়মনসিংহে দু জনে একই পাড়ার বাসিন্দা ছিল। সে সময়টা উনি তিনচারটা টিউশনি যোগাড় করে দিয়েছিলেন বলে কোন রকম ভাবে চলতে পেরেছিল। তখন ঢাকা শহরের আসল হালহলিকত সম্পর্কে কাকন কিছুই জানতো না। এখন পেছন ফিরে তাকালে আঁতকে উঠতে হয়। বাসা থেকে পড়ার খরচের কোন সরবরাহ থাকবে না, এমনকি কোন একজন আত্মীয় পর্যন্ত নেই এ শহরে, তারপরও কি মনে করে এখানে আসার হুট করে একটা সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল!
আসলে স্কুলের চাকরীটা করতে আর ভাল লাগছিল না। ভাবতে পারছিলো না যে এ চাকরী দিয়েই সে তার জীবন পার দিবে। খুব ইচ্ছে করতো শহরের মধ্যে ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজে কোন একটা চাকরী যোগার করার। কিন্তু ডিগ্রি বা জ্যাকের অপ্রতুলতার জন্য সে আশাও গুড়েবালি। শেষ ভরসা যদি একটা পছন্দমতো বিয়ে হতো তাহলেও না হয় জীবনে থিতু হওয়া যেত। বাবার অবস্থান, চেহারাসুরত বা লেখাপড়া কোনখানেই ভাগ্যদেবী তার প্রতি সুপ্রসন্ন দৃষ্টি দেননি তাই তার আর বিয়েটাও করা হলো না। বিয়ের সবচেয়ে যে ভালো সমন্ধ এসেছিল সেখানে পাত্র ব্যবসা করে। ব্যবসা বলতে শহরের মধ্যে একটা স্টেশনারীর দোকান আছে। আর লেখাপড়া মেট্রিক পাশ তাও আবার প্রশ্নবিদ্ধ। ছেলের সবচেয়ে বড় যোগ্যতা সে হিন্দি সিনেমার হূত্বিক রোশনের মতো দেখতে। সুন্দরী মেয়ের চাইতে এই ছেলে শিক্ষিত মেয়ে বিয়ে করার ব্যাপারে আগ্রহী। কিন্তু বিএ পাশ স্কুলের শিক্ষিকা কাকনের সেখানে বিয়ে করতে মন বসলো না। তাই আরো কিছু ভালোর আশায় অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় আসা।
অতীতে ডুবে যাওয়া কাকন এই মূহুর্তে সবুজের কণ্ঠস্বরে আবার বর্তমানে ভেসে উঠলো। সবুজ বলে উঠল,
-চিন্তা করো না। দেখবে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। তখন আমাদের এই সংগ্রামের দিনগুলোকে যখন পেছন ফিরে দেখবো তখন এই সময়গুলোকে সোনার ফ্রেমে বাঁধাই করা ছবির মতো মনে হবে।
ওর এই কথাটা কাকনের জন্য টনিকের মতো কাজ করে। নিজের ভেতরে আত্মবিশ্বাসের ব্যাটারীটা আবার পুরোপুরি শক্তি ফিরে পায়। এই মূহুর্তে তার এই টুকুই যথেষ্ট। কোন সমাধান পাবার উদ্দেশ্যে না, ভেতরের সব কথা কাউকে বলতে পারলে নিজেকে হাèা বোধ হয়। এক্ষেত্রে সবুজ তার নির্ভরতা। সে একজন ভালো শ্রোতা। তাদের পরিচয়ের প্রথম পর্বে অবস্থা ছিল উলটো। তখন সবুজ কথা বলত আর কাকন শুনতো। প্রসঙ্গ পালটানোর জন্য কাকন বলল,
-মনে আছে আমাদের পরিচয়ের প্রথম দিককার কথা?
-আনন্দমোহন কলেজে প্রথম আমাদের দেখা। নবীনবরন আর প্রবীন বিদায় অনুষ্ঠানে। ইন্টারমেডিয়েটে তোমরা বের হয়ে যাচ্ছিলে আর আমরা সবেমাত্র ঢুকলাম, তখনও ক্লাস শুরু হয়নি।
-তখন তো শুধু দেখা সাক্ষৎ হয়েছিল মাত্র, তেমন পরিচয় তো ছিল না। আমি এখানকার কথা বলতে চাচ্ছি। এখানে পড়তে এসে হঠাৎ করেই তোমাকে আবিষ্কার করলাম একই ডিপার্টমেন্টে, একই ক্লাসে।
কাকন ইচ্ছে করেই আনন্দমোহন কলেজের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে চাইল। কলেজে যে সে সবুজের চেয়ে দু ক্লাস উপরে পরতো এটা পারতপক্ষে প্রকাশ করতে চায় না। মাঝে দুবছর গ্যাপ দিয়ে আবার পড়া শুরু করাতে দুবছরের জুনিয়রদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠি হিসেবে পায়। সবুজের সাথে এখানেই আবার নতুন করে দেখা। একটু আকটু রাজনীতি করার ফলে ওর তখন কিছু ক্ষমতা ছিল। দুদিনের মাথায় কাকনকে রোকেয়া হলে সীট পাইয়ে দিল। পরবর্তীতে যখন চাচাতো বোন রাবেয়া টাঙ্গাইল থেকে এখানে পড়তে আসলো তখনও বোনের জন্য সীট পেতে সবুজের উপকার লেগেছিল।
তখন ছেলেটার মধ্যে একটু হামবড়া ভাব কাজ করতো। আর সুদর্শন হবার আত্মবিশ্বাসেই বোধহয় ক্লাসের সুন্দরী মেয়েদের প্রতি ওর একটা প্রেমে পড়ার রোগ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কোন প্রেমই শেষ পর্যন্ত আরেকজনের মনে প্রেমের ফুল ফুটিয়ে তুলতে পারছিলো না। বার বার ভগ্নহূদয় হওয়া সবুজের দরকার ছিল একটা কাঁধ। কাকন অনায়াসে সে কাঁধ এগিয়ে দেয়।
পুর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে অল্প সময়ের মধ্যেই তারা বন্ধু হয়ে যেতে পেরেছে। তবে তাদের সম্পর্ক প্রেম পর্যায় পর্যন্ত যেতে বুদ্ধিমান কাকনকে অনেক অপেক্ষা করতে হয়েছে। সে তাড়াহুড়ো করে কিছু পস্তাতে চাচ্ছিল না। ততদিনে সে নিজেও বুঝতে পেরেছিল মনের মতো কাউকে বিয়ে করতে চাইলে নিজের বর নিজেকেই খুঁজতে হবে। সেক্ষেত্রে সবুজ খারাপ হয় না। কিম্বা ঘুড়িয়ে বলতে গেলে তার পক্ষে এর থেকে আর ভালো কিছু পাওয়া সম্ভব না। তাই ধৈর্য্য ধরে সে সবুজের বার বার ছ্যাক খাওয়ার কাহিনী কিম্বা সে যে পরিবারে কত অবহেলা পাত্র এসব দুঃখের কথা চুপচাপ শুনে গেছে নিজে কোন কথা না বলে। তখন অবশ্য তার সমস্যাও খুব একটা বেশি ছিল না। তাদের মাঝে যে একটা বয়সের অসমতা রয়েছে যা কাকন ভুলেও মনে করার চেষ্ঠা করতো না।
সেসময়টা সবুজ প্রতিদিন ক্লাস শেষে কাকনকে রোকেয়া হলে নামিয়ে দিয়ে পরে নিজের জসিমুদ্দিন হলের দিকে রওনা হতো। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে তারা একসাথে সময় কাটাতে লাগছিলো। মধুর ক্যান্টিন, টি এস সি, রমনা এরকম অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়াতো। কাকন সব সময়ই টিউশনি করতো। তাই তখন সে সানন্দে এসব ঘোরাঘুরির খরচ মিটাতো, সবুজকে টুকটাক উপহার কিনে দিত। প্রথম দিকে হিসেবি ভাবনা থাকলেও পরে সে সত্যিই ছেলেটার প্রেমে পরে যায়। এমনকি সবুজ যাতে খুশি হয় এজন্য কাকন নিজের বুকে পাথর বেঁধে একটা মেয়ের কাছে সবুজের হয়ে প্রেম প্রস্তাবও নিয়ে গিয়েছিল। তখনও সবুজ সে অর্থে কাকনকে তার বিবেচনের মধ্যে আনেনি।
বেশ ভালো বেতনে কাকনের এ্যড ফার্মের চাকুরীটা পাবার পর পরই কি দ্রুত তাদের সম্পর্ক এক অন্যমাত্রায় উঠে যায়? তখন থেকেই কি সবুজ নতুন চোখে তাকে দেখতে শুরু করে?
চাকুরীটা পাবার পর তার নিজের মধ্যে এ আত্মবিশ্বাসটা জেগে উঠেছিলো যে এরপর তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হবে না। মফশ্বলের মেট্রিক ফেল মুদি দোকানদারের বৌ হবার ভয় আর নেই। ভবিষৎ অনিশ্চয়তার ভাবনাটা মন থেকে উড়ে যাবার পর পরই কি তার চেহারায় একটা আলাদা চমক লাগতে শুরু করেছিল? নইলে সে সময়টাতেই কেন সবুজ তার মধ্যে এক ধরনের অন্য রকম সৌন্দর্য আছে তা প্রথম বারের মতো বলবে? তখন কর্মক্ষেত্রে তার পরিচিতের বহর দিন দিন বাড়ছিল। আস্তে আস্তে বাইরের দুনিয়ার পরিধি বাড়ার সাথে সাথে নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে শিখলো। খুব মনযোগ দিয়ে কাজ করতো। সে সময়টা সবুজকে সময় দেওয়াও কমিয়ে দিল। সবুজের কাছ থেকে কিছু শোনার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ততদিনে কাকনেরও কিছুটা এক ঘেয়েমী এসে গিয়েছিল। তাছাড়া সুন্দর স্বভাবের দায়িত্বশীল, পরিপাটী আর কর্মজীবি কাকনের সাথে সহকর্মী বা ইউনিভার্সিটির অনেক ছেলেই ভাব জমাতে চাচ্ছিল। সেই সময়টাতেই কাকন প্রথম অনুভব করলো সবুজের জন্য তার ভালবাসাটা অকৃত্রিম। সে আর অন্যকোন প্রস্তাবে রাজী হয়নি। শুধু সবুজের জন্যই অপেক্ষা করেছে। মনে মনে ভেবেছে একমাত্র সবুজই পারে তার পৃথিবীটাকে সবুজ করে দিতে।
সবুজও সে সময়টা অনেক করেছিল। কাকন চাকরীর জন্য ক্লাস ঠিকমতো করতে পারতো না। সবুজ সব ক্লাসনোট যোগাড় করে দিত। কাকনের ব্যস্ততার কারণে রাবেয়ার বিভিন্ন কাজে সবুজকে সময় দিতে হয়েছিল।
এখন থেকে প্রায় এগারো মাস আগে গত বসন্েতর সময় অনেক প্রতীক্ষার পর অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষন আসলো।
সেদিনটাতেও অফিসের নীচে সবুজ দাড়িয়ে ছিল। দুজন চুপচাপ অনেকক্ষন হেঁটে যাওয়ার পর সবুজই প্রথম নিরবতা ভঙ্গ করলো,
-পরশুদিন পহেলা ফাগুনে বাসন্তী রঙ্গের শাড়ি পরে রমনার পাঁচ নম্বর গেটে ভোর পাচঁটায় অপেক্ষা করবে। খুব করে সেজ। শুধু কপালে টিপ পরবে না। সেখানে আমাদের দেখা হবে।
কাকন হুবুহু তাই করেছিল। খুব দুরু দুরু বক্ষে, অজানা শিহরনে। তখনও পুরোপুরি ভোরের আলো ফোটেনি। সবুজ আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিল। সে কাকনের দেওয়া বাসন্তী রংয়ের পাঞ্জাবী পরে এসেছিল। কোন কথা না বলে কাকনের হাত ধরে পার্কের ভিতর নিয়ে একটা গাছতলে বসেছিল। পকেট থেকে একটা সিঁদুরের কৌটা বের করে সেখান থেকে কাকনকে টিপ পড়িয়ে দেয় আর বলে,
-আমার বৌ হতে রাজী আছ তো?
অনেক প্রতীক্ষার পর অবশেষে এই বিশেষ মূহুর্ত আসলো। কাকনকে তখন কাজি অফিসে নিয়ে গিয়ে কাবিননামায় সই করতে বললেও সে এক কথায় সই করে দিত। কিছু না বলে কেবল নিজের মাথাটা সবুজের বুকে এলিয়ে দিয়েছিল। সেই দিন তারা একসাথে সূর্যোদয় দেখলো, সূর্যাস্ত দেখলো। আর্ট কলেজ, রমনায় ঘুরলো। বসন্েতর মেলায় ঘুরে ঘুরে কাচের চুড়ি কিনলো। নিরবে খেল। মধুমিতায় ছবি দেখলো। হাতে হাত ধরে হাটতে হাটতে বসন্েতর প্রথম দিনে নিজেদের ভবিষৎ সংসারের ছবি আঁকতে আঁকতে সেদিন কাকন অনেক রাত করে হলে ফিরল।
তখনও সে জানতো না ওরকম একটা সুন্দর দিনে তার জন্য কি সংবাদ অপেক্ষা করছিল।

(আর একটি পর্ব আছে)

২,০৭৪ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “রং বদল – ১”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    এমন জায়গায় এনে শেষ করে দিলেন... শিগগির পরের পর্ব দিয়ে দেন...


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : দিবস (২০০২-২০০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।