ধারাবাহিক উপন্যাস – ১৮

আগের পর্ব

আঠার

একদিন আম্মা হোসনা আপার বাসা থেকে ঘুরে আসলেন। বাসায় এসে জানালেন হোসনা আপা আসলে অনেক দুঃখ নিয়ে লন্ডন থেকে ফিরে এসেছেন। কিরণ ভাই আমেরিকায় পড়তে গিয়ে একজন আমেরিকান মেয়ে
বিয়ে করে ফেলেছে। হোসনা আপার আশা ছিল লেখাপড়া শেষ করে কিরণ ভাই দেশে ফিরবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলতে নিজের মেধা আর শ্রম দিবে। উনি ভুলেও কখনও ভাবেননি যে আমেরিকা গিয়ে এতো
সহজে কিরণ ভাই দেশকে ভুলে যাবে। দেশে ফেরার সমস্ত পিছুটান ছিন্ন করে ফেলবে। অথচ এই ছেলে একটা সময় নিজের জীবন বিপন্ন করে দেশের মুক্তির জন্য অস্ত্র হাতে শত্রুর মুখোমুখি যুদ্ধ করেছিল। এই
জন্য হোসনা আপার এখন আর হিরণ ভাইয়ের জন্য বিদেশে লেখাপড়ার পক্ষে অতো মত নেই। গেলে আরেকটু বয়সে যাবে। আসলে বিদেশে গিয়েই হোসনা আপা প্রথম উপলব্ধি করতে পারলেন যে দেশটাকে উনি কত
ভালবাসেন। উনার জন্য প্রবাস-জীবন নয়। শুধু নিজের আর পরিবারের সুখের কথা ভেবে একটা জীবন পার করে দেওয়ার কথা উনি ভাবতে পারেন না। তাই এবার বাংলাদেশে ফেরার আগেই ঠিক করে ফেলেছেন ঢাকায় থাকবেন না। ঢাকা শহরের দিকে মনোযোগ দেওয়ার মতো অনেক মানুষ আছে। উনার পক্ষে একেবারে গ্রামে গিয়ে থাকা সম্ভব নয়। তাই দেশে এসে থাকার জন্য কুমিল্লা শহরকে বেছে নিয়েছেন। এই শহরকে বেঁছে নেওয়ার আরেকটা কারণ আছে। এখানে খান মঞ্জিলের লোকজন আগে থেকেই অনেক অনেক দাতব্য কাজের সাথে জড়িত। হোসনা আপাকে একদম গোরা থেকে শুরু করতে হবে না। উনার প্রথম লক্ষ্য দুঃস্থ মহিলাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। স্বাধীনতার আগে গোবিন্দ গোয়ালা উনাদের বাসাতেও গরুর দুধ দিতে আসত। তার বৌকে উনি চিনতেন। কাজলের আম্মার সাথেও উনার পরিচয় ছিল। স্বামী না থাকলে এই সমাজে যে মহিলাদের কি দুঃসহ জীবনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তা হোসনা আপা খুব ভালভাবেই জানেন। এখন আম্মাও ঠিক করেছেন সংসারের ফাঁকে সময় করে উনার সাথে সমাজসেবা করবেন। রাতে খাবার সময় কথাটা আব্বাকে বলেও ফেললেন। আব্বা মজা করে বলল,’ভাবির টাকাপয়সার চিন্তা নাই তো। তাই মনের আনন্দে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতে পারবেন। তুমি সাথে থাকতে চাইলে থাক। মানুষের জন্য করা তো খুব ভাল কাজ।’
‘টাকা পয়সার চিন্তা না থাকলেই বুঝি সবাই মহামানব হয়ে যায়? তোমার বড় ভাইয়ের বৌকে দেখ না? তাদের তো টাকার অভাব নেই। দেশের জন্য কিছু করা তো দূরের কথা, তোমাদের নিজেদের
গ্রাম শাহপুরের কোন লোকের জন্য কিছু করেছে? আবুল ভাই যখন ঢাকায় গিয়ে গুলশানে উনাদের বাসায় গিয়েছিলেন, তোমার বড় ভাবি উনাকে বাসার মধ্যে পর্যন্ত ঢুকতে দেয়নি। অথচ মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা
সময় আবুল ভাইরা উনাদের কত যত্ন করেছিলেন। আর এখন তো উনারা দেশ থেকে টাকা মেরে বিদেশে ছেলেদের কাছে পাঠাচ্ছে।’
কথাগুলো আম্মা এক নাগারে বলে গেলেন। আব্বা কোন উত্তর দিলেন না। গম্ভীর মুখে চুপচাপ খেতে লাগলেন। এই মুহূর্তে আম্মার এইভাবে কথা বলাটা আমারও পছন্দ হল না। আম্মা এমনিতে ভাল
মানুষ। কিন্তু এটা খুব বুঝতে পারি জেঠি আর আম্মার সম্পর্কটা বেশ রেষারেষির পর্যায়ে আছে। মুখে মুখে দুজন দুজনের সাথে ভাল ব্যবহার করলেও ভেতরে ভেতরে আসলে কেউ কাউকে দেখতে পারে না।
রোজিনা বলে শ্বশুর বাড়ির মহিলাদের সাথে নাকি সম্পর্কটা এমনই হয়। হয়তবা। কিন্তু নিজের আম্মাকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে দেখতে ইচ্ছা করে। আবার এটাও ঠিক আম্মা জেঠি সম্পর্কে যে অভিযোগগুলো করলেন তা
অস্বীকার করা যাবে না। চিকিৎসার জন্য আবুল চাচাকে ঢাকায় যেতে হয়েছিল। ভেবেছিলেন জেঠার বাসায় উঠবেন। অথচ দারোয়ান উনাকে গেইট থেকে বিদায় করে দেন। সাথে ও বাড়ির জন্য মুড়ি নিয়ে
গিয়েছিলেন। জেঠি অবশ্য মুড়িটা রেখে দিয়েছিল। কথাগুলো আবুল চাচার মুখ থেকেই শোনা। তারপরও ভাবতে ইচ্ছা করে হয়ত তা সত্য নয়। জেঠি আমাকে তো খুব ভালবাসেন। একই মানুষের এতো ভিন্ন রূপ
হয় কি করে? তবে এরকম হওয়াটা অসম্ভব নয়। অন্তত: হিরিম্বা খালাকে দেখে তা বুঝতে পারি। কিছু কিছু উন্নাসিক মহিলা থাকে যারা ভাল ব্যবহার করার ব্যাপারে বড্ড বেশি কঞ্জুস। হোসনা আপাদের মতো মহিলারা সম্পূর্ণভাবে এদের বিপরীত। হিরিম্বা খালা আর গোবিন্দ গোয়ালার বৌয়ের সাথে উনি একই রকম ভাল ব্যবহার করবেন।
আব্বাকে চুপ দেখে আম্মা আরও কিছুক্ষণ গজ গজ করতে লাগলেন।, ‘মানুষের জন্য করতে চাইলে প্রথমেই দরকার মন। টাকা থাকলেই সব হয়না। অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই টাকা টাকার নেশা বাড়ায়।’
কথাটা যে একদম ঠিক সেটা তো খালেক মজুমদারকে দেখেই বুঝি। এই লোকের তো অনেক টাকা। তারপরও আরও টাকা বানানোর জন্য মাদকদ্রব্যের চোরাকারবারি করে কেন? নিজের চোখের সামনে দেখতে
পারছে না যে কত তরতাজা তরুণ প্রাণ মাদকের নেশায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে? পরবর্তী সময়ে ভেবে দেখেছি হোসনা আপা হয়তো তার আত্ম-উপলদ্ধি স্তরে পৌছাতে পেরেছিলেন। মানুষ যখন সেই স্তরে পৌছায়
তখন আর সে নিজের মধ্যে থাকে না। কিম্বা চারপাশের পুরো সমাজটাকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে শুরু করে। এই স্তর পিরামিডের উঁচুর দিককার ধাপ। পিরামিডের সবচেয়ে নীচের ধাপ হল তার ভিত্তি। উঁচু
ধাপে পৌছাতে সবচেয়ে বেশি দরকার মূল্যবোধ। যেটা খালেক মজুমদারের নেই। বেচারা নিজেও হয়তো জানে না এতো খাই খাই করে সে আনুভূমিকভাবে শুধু পিরামিডের ভিত্তিই বাড়িয়ে চলছে। এভাবে শুধু পাটাতনই
নির্মাণ করা সম্ভব। সেটা কোনদিনই পিরামিডের আকার ধারণ করবে না। আত্মোপলদ্ধি জীবনের জন্য একটা বড় আশীর্বাদ। নিজস্ব কিছু মূল্যবোধ না থাকলে জীবন বঞ্চিত হয় এই আশীর্বাদ থেকে।
হোসনা আপা এখন পুরোপুরিই খান মঞ্জিলের বাসিন্দা। কুমিল্লা মহিলা মহাবিদ্যালয়ের ইংরেজির প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। সেদিনের পর আমার আর খান মঞ্জিলে যাওয়া হয়নি। সামনে মেট্রিক পরীক্ষার ফল
বেরুবে। এজন্য টেনশনে আছি। টেনশন করার ভাল দিক হচ্ছে যে তা আমার মনের ক্ষতকে কিছুটা স্তিমিত রেখেছে। আসলেও কি আমার হৃদয় পুরোপুরিই ভেঙ্গে গেছে? তা বোধহয় নয়। ‘গন উইথ দ্য
উইন্ড’এর স্কারলেটের মত এখনও আশায় আশায় আছি। মজার ব্যাপার হল এই উপন্যাসটা আমি হিরণ ভাইয়ের কাছ থেকেই পেয়েছিলাম। লন্ডনে যাওয়ার আগে ফেলুদার বইগুলোর সাথে এই বইটাও উনি আমার
জন্য রেখে গিয়েছিল। এতদিন উপন্যাসটা পড়িনি। এই কিছুদিন আগে পড়লাম। এখন মনে হচ্ছে এটা তো আমারই কাহিনী। ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’এর এ্যশলের সাথে হিরণ ভাইকে আর মেলেনির সাথে মেলিতা
আপাকে মিলিয়ে দেওয়া যায়। স্কারলেট এতো সহজে আশা ছাড়তে পারে না। না লড়ে সে পরাজয় স্বীকার করার মেয়ে নয়। আমিও সেরকম হব। কিন্তু কিভাবে তা তো জানি না। স্কারলেটের মতো করব?
এখনই খান মঞ্জিলে গিয়ে হিরণ ভাইকে সব কিছু বলে আসি? কি আর ক্ষতি হবে এমনটা করলে। হিরণ ভাই নিশ্চয় খুব অপমান করে বসবে না। বড়জোর ভদ্র ভাষায় আমাকে ফিরিয়ে দেবে। যা হারাবার তা
তো হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু এভাবে বিনা যুদ্ধে হার মানব? রাতের বেলা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম এবার হিরণ ভাই ঢাকায় চলে যাবার আগেই একবার খান মঞ্জিল যাব।
কাকতালীয়-ভাবে পরের দিন দাদামনু এসে বলল, ‘চল তো আমার সাথে একটু, খান মঞ্জিলে যাব। খান দাদা আজকে উনার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিজ্ঞতার কথা বলবেন। উনি তোকে যেতে বলেছেন।’, আমার তো আপত্তি করার কোন কারণই নেই। সঙ্গে সঙ্গে ওর প্রস্তাবটা লুফে নিলাম। খুব আগ্রহের সাথেই সেজে-গুজে খান মঞ্জিলের দিকে রওনা দিলাম।

খান মঞ্জিলে এসে শুনলাম আজকে এখানে একটা পাঠচক্র বসবে। সবাই মিলে কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা নিয়ে আলোচনা করবে। মানিকদা একটা প্রবন্ধ পাঠ করবেন। বিষয়বস্তু ‘নজরুলের জীবনে প্রেম’।
আমার এমনিতে প্রবন্ধ শব্দটা শুনলেই মাথা ঝিম ঝিম করতে শুরু করে। তবে এই প্রবন্ধের বিষয়বস্তু প্রেম হওয়াতে আজকে আর মাথা ঝিম ঝিম করল না। বরং মনে হল সুযোগ পেলে খুব সহজেই হিরণ
ভাইয়ের সাথে প্রেম নিয়ে কথাবার্তা শুরু করে দিতে পারব। কিন্তু হায় মানুষ ভাবে এক। আর হয় আরেক। এ বাড়ির দোতালার লাইব্রেরি রুমে ঢুকেই এতদিন ধরে মনে মনে যত পরিকল্পনা করেছিলাম তার সবই
ভেস্তে গেল। সেই সাথে ভাঙ্গল হৃদয়। আবারও। এবার আগের থেকেও বেশি জোরে। সেখানে গিয়ে দেখি লাইব্রেরি ঘরে শুধু হিরণ ভাই আর মেলিতা আপা বসে আছে। দুজনেই খুব একান্তে বসে কি যেন কথা বলছে।
সেই মেলিতা আপা – আমার সব দুঃখের কারণ। হিরণ ভাইয়ের সাথে গল্প করতে করতে কারণে-অকারণে হেসে উঠছে। প্রয়োজনের থেকে বেশি হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলছে। আমাকে দেখা মাত্রই উনার
সপ্রতিভটা কেমন জানি একটু চুপসে গেল। একটু লাজুক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো, ’দেয়া কেমন আছিস? ভেবেছিলাম এই দুদিন তুই এখানে আসবি।’ আমি জানি মেয়েরা কখন এরকম করে কথা বলে।
আমার অনেক বান্ধবীদের দেখে বুঝেছি। মেয়েরা নতুন নতুন প্রেম শুরু করলে খুব ন্যাকা ধরনের হয়ে যায়। তখন তারা নিজেরাও জানে না যে তাদেরকে দেখতে কতটা বিরক্তিকর লাগে। মেলিতা আপাকে দেখে
এখন ঠিক সেরকম বিরক্তিকর লাগছে। উনাকে কে বলেছে আমাকে তুই করে ডাকতে? উনার মধ্যে একটু বেশি বেশি লোক দেখানো স্বভাব আছে। নিজে যতনা না ভাল তার থেকে বেশি ভাল সাজতে চায়।
‘আমার গানের রিহার্সাল ছিল। সামনেই বিটিভিতে যাব একটা প্রোগ্রাম করতে।’ তীরটা ছুড়লাম নিজের দাম বাড়ানোর জন্য। আমাকে নিরাশ করে দিয়ে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হল না। হিরণ ভাই জিজ্ঞাস করলো,
‘তোমার গানের খ্যাতির কথা খুব শুনেছি। সেদিন তো গান গাইলে না। আজকে গলা ঠিক আছে?’
ধক করে ডাহুকটা জেগে উঠল। এখন বুকের মধ্যে দাপাদাপি করে বেড়াচ্ছে। নিজের উত্তেজনা সামলে নিঃস্পৃহ গলায় বললাম, ‘চেষ্টা করে দেখতে পারি। কোন গান শুনতে চান?’
‘আমার অনেকদিন বাংলা গান শোনা হয়নি। এখন এখানে কিরকম গান হচ্ছে? আজম খান কি এখনও গান গাচ্ছে?’
‘তা গাইছে। তবে এখন আরও অনেক পপ শিল্পী বিখ্যাত হয়েছে। ফেরদৌস ওয়াহিদের নাম শুনেছেন?’
‘ফেরদৌস ওয়াহিদ তো আমি থাকতেই বিখ্যাত ছিল।’
‘আমি অবশ্য পপ গান গাই না। নীলিমাদি বলেছে গানের একটা শাখা বেছে নিয়ে সেটাই ভালভাবে চর্চা করতে। আমি এখন শুধু নজরুলগীতি গাই।’
‘ও তাই! নজরুলগীতিও আমার খুব পছন্দের।’
কথাটা বিশ্বাস হল না। উনাকে কিছুটা প্যাঁচে ফেলবার জন্য জিজ্ঞেস করলাম, ‘নজরুলের কোন গানটা আপনার খুব ভাল লাগে?’
‘”আমার যাবার সময় হল দাও বিদায়” আম্মার রুম থেকে লংপ্লেয়ারে প্রায়ই এই গানটার সুর ভেসে আসতো। আজকে এই গানটা গাইলে কিন্তু বেশ হয়?’
‘গানটা একটু বেশি বিরহের।’
‘নজরুলের বিরহের গানগুলোই তো শুনতে বেশি ভাল লাগে। হয়ত জীবন কবিকে বিরহ চিনিয়েছিল খুব ভাল করে।’
হিরণ ভাইকে প্যাচে ফেলতে গিয়ে আমি নিজেই প্যাচে পড়ে যাচ্ছি। কি করে ভুলে গেলাম উনি হচ্ছে সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান – সর্বেসর্বা। উনার না জানা বিষয়েও আমার জ্ঞানের পরিমাণ হবে হয়ত উনার
থেকে খুব কম। আচ্ছা মেলিতা আপা গেল কোথায়? এই লাইব্রেরী ঘরে তো নেই। হটাৎ ভেতরে একটা কাঁপুনি দিয়ে শিহরণ খেলে গেল। এই মুহূর্তে এ ঘরটায় শুধু হিরণ ভাই আর আমি। আমি তো এমন
সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলাম। এখন বলে ফেলি? কিন্তু কি বলব? কিভাবে বলব? আমার হাত এত ঘামছে কেন? গলাটা খুব শুকিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আর দেরি করা যাবে না। যে কোন মুহূর্তে যে কেউ
এখানে এসে পরতে পারে। যা বলার এখনই বলতে হবে।
‘ঐ দিন আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলার পর কি কি ঘটেছিল?’কথাটা হুট করে বলে ফেলে মনে হল এই মুহূর্তে আমি এই কথাটা বললাম কেন? হ্যাঁ আমার অবচেতন মনে প্রায়ই এই প্রশ্নটা ঘুরেফিরে আসে।
আম্মাকেও কোনদিন এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। উত্তরটা হিরণ ভাই ছাড়া আর কেউ জানবে না। কিন্তু এ মুহূর্তে এ প্রশ্নটা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। হিরণ ভাই তো এর আগা-মাথা কিছুই বুঝবে না।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সেই গোছলখানায় আটকে থাকার সময়টা আমার স্মৃতিতে গভীর দাগ কেটে বসে গেছে। মাঝে মধ্যে সেই স্মৃতিটা ভুস করে ভেসে উঠে আমার চারপাশ অন্ধকার করে তোলে। বোধহয় ঐ ঘটনার পর
থেকেই পানির ড্রাম, অন্ধকার বদ্ধ কোন জায়গা সহ্য করতে পারিনা। হিরণ ভাই হয়ত সে ঘটনা ভুলেই গেছে।
‘দেয়া তুমি ঘটনাটা ভুলতে পার না, তাই না? আমিও পারি না। ঐ দিন অনুভব করেছিলাম মৃত্যুভয় কাকে বলে। জান ঐ ঘটনার পর থেকে এই জীবনের পুরোটাকেই বোনাস বলে মনে করি।’
‘আমার বোধহয় এই প্রসঙ্গ তোলা ঠিক হয়নি।’
‘তা বলছ কেন? আমার কিন্তু প্রায়ই মনে হয় আমাদের দুজনের একসাথে বসে খুব খোলাখুলি-ভাবে ঐদিনের ঘটনাটা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। তাহলে হয়ত আমরা ক্ষমা করে দিতে পারব।’
‘ক্ষমা! কি বলছেন আপনি? কাদের মোল্লাকে? কক্ষনই না।’
‘তুমি ভুল বুঝছ। একজন অপরাধী যদি শাস্তি না পেয়ে পার পেয়ে যায় তাহলে রাষ্ট্র,আইন এইসবের কি দরকার? আর এদের কাছে ক্ষমা মানে দুর্বলতা। এতদিন পর লন্ডন থেকে দেশে এসে আমার কাছে অনেক কিছুই অচেনা ঠেকছে। মাত্র এই কয়েকটা বছরে ভেতরে ভেতরে এরা এতো সংগঠিত হয়ে উঠবে তা ভাবাই যায় না। জিয়াউর
রহমান নিজে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। অথচ তার প্রধানমন্ত্রী একজন রাজাকার।’
‘মোল্লা হাবেলি দেখে চিনতে পেরেছিলেন? চারতলা হয়ে গেছে। কাদের মোল্লা এখন এই শহরের সবচেয়ে বড় আদম ব্যবসায়ী। অথচ এই লোকের জেলে থাকার কথা ছিল।’
‘সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে কাদের মোল্লা তো তার অপরাধটাই বুঝতে পারছে না। বাইরে গিয়ে দেখ খান মঞ্জিলের দেয়ালে কাদের মোল্লার কথা লেখা আছে। দাদাভাই একবার চুনকালি করে লেখাটা মুছে
দিয়েছিলেন। তারপর কয়েকজন ষণ্ডা মতন লোক এসে বাড়ির দারোয়ানকে শাসিয়ে গিয়েছিল। তারা কি বলেছিল জান? এ বাড়িতে নাকি বেলেল্লাপনা চলে। এসব শুনে আমার তো মনে হচ্ছে আমরা বোধহয়
এখনও সেই একাত্তরেই আটকে আছি। কবে না জানি আবার আমাদের পালাতে হয়।’
‘তাহলে কিসের ক্ষমার কথা বলছেন?’
‘এ ক্ষমার মানে আমাদের নিজেদের মুক্ত করা। সেই ঘটনাটা আমাকে ক্লস্টোফোবিক করে দিয়েছে। এই ক্লস্টোফোবিয়া থেকে নিজেকে মুক্ত করতে চাই।’
‘ক্লস্টোফোবিয়া কি জিনিশ?’
‘কোন বদ্ধ, অন্ধকার জায়গা আমি আর সহ্য করতে পারি না।’
‘আমিও।’
‘হ্যাঁ। আমাদের দুজনের অভিজ্ঞতাই তো একই রকম। শুধু ক্লস্টোফোবিয়াই নয়,আমার জীবনে ঐ ঘটনাটার আরও অনেক সাইড ইফেক্ট আছে। আচ্ছা মাঝে মধ্যে নিশ্চয় সেটা তোমারও সেটা মনে পড়ে। না
চাইলেও। কেমন লাগে তখন?’
‘নিজেকে খুব অসহায় লাগে। দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। আসলে আমি সব ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’
‘তোমার কি মনে হয় একটা কিছু তোমাকে পেছনের দিকে টেনে ধরে রাখছে?’
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ। একদম ঠিক বলেছেন। খালি মনে হয়ে ঐ দমবন্ধ করা স্মৃতিটা যদি আমি মাথা থেকে মুছে ফেলতে পারতাম!’
‘এই ক্ষমা হচ্ছে নিজেদের বোঝানো যে সেই ঘটনার জন্য আসলে আমরা দায়ী নই। আমাদের মাথায়, আমাদের মনে সেই স্মৃতিটাকে আর প্রভাব বিস্তার করতে দিব না। পানিতে দাগ কাটার মত আমরা মুছে
ফেলব সেই স্মৃতিটাকে। আমাদের আর সেই মেন্টাল ব্লক থাকবে না।’
কি অদ্ভুত কথা! কি সুন্দর কথা! আমার চোখ ভিজে যাচ্ছে। হিরণ ভাইয়ের সামনে কাঁদতে আমার খুব লজ্জা লাগবে। তড়িঘড়ি করে বললাম,’আমি একটু আসছি।’। বুঝতে পারছি এই মুহূর্তে আমার
এই কথাটা খুব বেমানান শোনাল। কিন্তু আমার যে এখন একটা খুব আড়াল দরকার।
‘মানিকদা মনে হয় অনুষ্ঠান শুরু করে দেবেন। আমি বরং এখন নীচে যাই। তুমিও সেখানে চলে এসো।’
আমি এক দৌড়ে লাইব্রেরী ঘরের বাথরুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে আমি ঝর ঝর করে কাঁদতে থাকলাম। জানি না কেন এই কান্না। মনে হচ্ছে এতদিন অক্টোপাসের
মত কিছু একটা আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। হয়ত সেই দুঃসহ স্মৃতিটা। আমার কান্নার সাথে সাথে সেটা এখন আমাকে ছেড়ে ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে।

নীচে কমনরুমে এসে দেখি মানিকদা তার প্রবন্ধ পড়তে শুরু করে দিয়েছেন। সবাই হাঁটু মুড়ে কার্পেটের উপর বসেছে। বৃত্তাকারে। আমাকে বসলে এখন একরামের পাশে বসতে হয়। অনেকদিন পর একরামকে
দেখলাম। ছেলেটার উপর আমার অনেক ক্ষোভ জমে ছিল। এখন মনে হচ্ছে সে ক্ষোভ আর নেই। না বুঝে অল্পবয়সে আমরা অনেক কিছুই করি ফেলি। আস্তে করে একরামের পাশে বসে পড়লাম। প্রবন্ধ পাঠ বললেও
মানিকদা আসলে কোন কিছু দেখে পড়ছেন না। নিজের স্মৃতি থেকেই বলে যাচ্ছেন। মনোযোগী শ্রোতা হয়ে উনার বক্তৃতা শুনতে লাগলাম।
“কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৪শে মে এবং মৃত্যু ১৯৭৬ সালের ২৯শে আগস্ট। তিনি প্রায় ৭৬ বৎসর জীবিত ছিলেন। তার মধ্যে প্রায় ৩৪ বৎসর জীবন্মত ছিলেন। সক্রিয় সাহিত্যচর্চা মাত্র ২৩
বৎসর অর্থাৎ ১৯১৯ সাল থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে অর্থাৎ ১৯২১ সাল থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত নজরুল পাঁচবার কুমিল্লা এসেছিলেন। কুমিল্লায় নজরুলের অবস্থানকাল প্রায় ১১ মাস। নজরুলের
রয়েছে অজস্র প্রেমের কবিতা ও গান। এসব রচনার উৎস মোটেও বায়বীয় নয়, রক্ত মাংসের মানবীই। আর এ মানবীরা কুমিল্লারই মেয়ে। তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ দু’টি ঘটনা তথা বিয়ে এই কুমিল্লার দু’নারীর
সাথে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
কলকাতার কলেজ স্ট্রীটে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির অফিসে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরের দৌলতপুর গ্রামের আলী আকবর খানের সাথে প্রথম নজরুলের পরিচয় হয়। তার সাথেই কবির প্রথম কুমিল্লায় আসা।
প্রথমে তারা কান্দিরপাড়ের ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের বাসায় উঠেন। ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের ছেলে বীরেন্দ্র কুমার সেনগুপ্ত আলী আকবরের সহপাঠী ছিলেন। বীরেন্দ্রর বিধবা জেঠিমা গিরিবালা দেবী ও তার একমাত্র সন্তান
প্রমীলা এ বাড়িতে থাকতেন। কবি স্বভাবে উচ্ছল, মুখর, ভাবে আবেগপ্রবণ, গানে গানে ভরিয়ে দিতে পারেন পৃথিবী, কবিতা লিখে জাগাতে পারেন তুফান। অল্পসময়ে আপন করে নিলেন সবাইকে।
বিরজাসুন্দরী দেবী হলেন মা, গিরিবালা মাসিমা, বীরেন সেনগুপ্ত হলেন রাঙ্গাদা, এবং নিজে হলেন পরিবারের কাজীদা। এ বাড়িতে সাংস্কৃতিক পরিবেশ ছিল। ইতিমধ্যে কবিরও কবি খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল।
তিন-চার দিন রইলেন সেন পরিবারে, জাগিয়ে গেলেন সবাইকে।
এরপর আলী আকবর কবিকে দৌলতপুর নিয়ে গিয়েছিলেন। দুমাস ছিলেন এখানে। কবির জীবনের স্বপ্ন, স্বপ্নের বাস্তব রূপায়ন এবং স্বপ্ন-ভগ্নের ইতিহাস চিরদিনের প্রশ্ন রেখে নার্গিস অধ্যায়ের শুরু এবং শেষও।
তাদের যেদিন বিয়ে পড়ানো হয়েছিল সে রাতেই নজরুল সে এলাকা ত্যাগ করে আবার কুমিল্লায় সেন পরিবারে এসে বাড়িতে উঠেন। সেন পরিবার বরযাত্রী হয়ে দৌলতপুর গিয়েছিল। তারাও সাথে সাথে ফিরে আসে।
ধারণা করা হয় আলী আকবর কিছু শর্ত দিয়েছিলেন যা কবির কাছে অপমানজনক মনে হয়েছিল। তারপরও এ এক রহস্য কেন এ বিয়ে ভেঙ্গে গেল? নার্গিস দীর্ঘ ষোল বছর একাকী জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন।
শেষ চেষ্টা হিসেবে কলকাতায় গিয়ে একবার কবির সাথেও দেখা করেছিলেন। কিন্তু দুজনের সেই শেষ দেখা। পরবর্তীতে যখন নার্গিস আজিজুল হাকিমকে বিয়ে করেন তখন বিয়ে উপলক্ষে কবি একটি গান
পাঠিয়েছিলেন।”

মাঝে মধ্যেই আমার মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটছে। মনের মধ্যে খালি কিছুক্ষণ আগে শোনা হিরণ ভাইয়ের কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। হিরণ ভাই আর মেলিতা আপা পাশাপাশি বসে আছে। দুজনেই এক মনে মানিকদার
কথা শুনছে। আমি হাঁটু তুলে তার মধ্যে মুখ গুজে দিলাম। আজকে আমি স্কারলেট হতে চেয়েছিলাম। কথাটা মনে হতেই বেশ হাসি পেল। কেউ আসলে কারও মত হতে পারে না। স্কারলেট আর আমার মধ্যে তো
যোজন যোজন তথাৎ। স্কারলেট হচ্ছে শক্ত মাটির দেশের মেয়ে। আর এই দেশের মাটির মতো আমার মনও নরম। তারপর সেই নরম মনের চারপাশে লজ্জা, দ্বিধা, সংকোচের কয়েকটা বলয় থাকে। সেসব
পেড়িয়ে আমরা খুব একটা সাহসী আর অকপট হয়ে উঠতে পারি না। আমাদের এই সমাজে যে যতটুকু নিজেকে আড়াল করে রাখতে পারবে সে ততটুকুই ভাল মেয়ে।

‘দেয়া “পথ চলিতে যদি চকিতে কভু দেখা হয়” এই নজরুলগীতিটা তোমার তোলা আছে?’ মানিকদার ডাকে আমি সচকিত হয়ে উঠলাম।
‘হ্যাঁ। তোলা আছে।’
‘বিয়ের উপহার হিসেবে কবি এই গানটা নার্গিসকে পাঠিয়েছিলেন। আমার প্রবন্ধটা আরেকটু বাকী আছে। তারপর আমরা দেয়ার থেকে এই গানটা শুনব।’
মানিকদা আবার তার প্রবন্ধ পাঠ করতে শুরু করলেন। এবার মনোযোগী শ্রোতা হওয়ার চেষ্টা করলাম।

“নার্গিস পর্বের যবনিকা হওয়ার প্রায় সাথে সাথেই আশালতা অর্থাৎ প্রমীলা পর্বের শুরু। সেদিন দৌলতপুর থেকে কবি ফিরে এসেছিলেন অসুস্থ হয়ে। আশালতা সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েছিলেন। কবিকে দিয়েছিলেন
সেবা। আর কবিও আশালতার মধ্যে মানসিক শানিত খুঁজে পেলেন। হয়তো তখনই তাদের মধ্যে ভালবাসার বীজ বপন হয়েছিল। কারণ ১৯২২ সালের ফেব্রয়ারী মাসে নজরুল আবারও কুমিল্লায় আসলেন। এবার তিনি প্রায় চার মাস অবস্থান করেছিলেন। তৃতীয় ও চতুর্থবার কুমিল্লায় অবস্থানকালে আশালতার সঙ্গে নজরুলের হৃদয়ের সম্পর্ক স্থাপিত হয়। অসহযোগ আন্দোলনের শুরুতেই প্রমীলা স্কুল ছেড়ে দিলেন। প্রমীলার
প্রাণময়তা, স্বাদেশিক মনোভাব, ব্যক্তিত্ব, সংগীত প্রীতি প্রভৃতি নজরুলকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করেছিল। এই সময়ের রচনাবলীতে প্রেমের প্রাধান্য দেখা যায়। দোলনচাঁপা কাব্যগ্রন্থের আশান্বিতা কবিতাটিতে
আছে,
’এবার আমায় সঁপে দিলাম তোমার চরণ তলে,
তুমি শুধু মুখ তুলে চাও বলুক যে যা বলে।’
সেন পরিবার যতই অসাম্প্রদায়িক হোক নজরুল আর আশালতার প্রেমের ব্যাপারটি তারা মেনে নিতে পারেননি। উদারপন্থী হয়েও পুরোপুরি ধর্ম ও সংস্কারের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি। বাড়ির মেয়েকে মুসলমানের সাথে বিয়ে দিতে তারা প্রস্তুত ছিলেন না। তাই তারা প্রেমের নিরবচ্ছিন্ন স্বাভাবিক প্রবাহও হতে দেয়নি। একমাত্র আশালতার মা গিরিবালা দেবীর আন্তরিক ইচ্ছায়, মনের অসাধারণ দৃঢ়তার কারণে
নজরুল-আশালতার জীবন-বন্ধন এক সুষ্ঠু পরিণতিতে পৌঁছে। মেয়ের সুখ-শান্তিকে তিনি সবার উপরে স্থান দিয়েছিলেন। নিজ পরিবার আত্মীয়-স্বজন ব্রাক্ষ সমাজের বাধা বিপত্তিকে অগ্রাহ্য করে তিনি কন্যাকে
নিয়ে কলকাতায় চলে আসেন। তাঁর দ্বিধাহীন সিদ্ধান্ত ও দৃঢ়তার জন্যই পরিবার ও সমাজের বিশেষত ব্রাক্ষ্ম সমাজের শত বাধা সত্ত্বেও নজরুল-প্রমীলার বিয়ে হতে পেরেছিল।”

মানিকদার আলোচনা শেষে সবাই হাততালি বাজাল। আমি গান শুরু করলাম। গান যখন গাইতে শুরু করি তখন আমি আর নিজের মধ্যে থাকি না। মনে হয় এক সুর ছাড়া আমার আর কোন অস্তিত্ব নেই।
জানিনা কোন গভীর উৎস থেকে এই সুরের উৎপত্তি। চারপাশের সবকিছু ভুলে আমি গান গাইতে লাগলাম। গান শেষে তালির শব্দ শুনে সচকিত হয়ে দেখি আমার একদম পাশেই খান দাদা বসে আছেন। উনি
বললেন, ‘জোয়ান অব আর্ক তুমি যত বড়ই শিল্পী হও না কেন এই বুড়োকে কিন্তু প্রায়ই তোমার গান শুনিয়ে যেতে হবে।’
‘যখনই আপনার গান শুনতে ইচ্ছা করবে তখনই খবর পাঠাবেন। চলে আসব।’ কথাটা বলেই এক ঝলক হিরণ ভাইকে দেখে নিলাম। উনার চোখের মুগ্ধতা আমার বুকের ভেতরের ডাহুকটাকে নাচিয়ে দিল।
অনুষ্ঠান সব পরিকল্পনা মতোই এগুতে লাগল। এরপর খান দাদা তার গল্প শুরু করলেন।
’আমরা তখন বার্মায়। যে ব্যারাকে থাকি তার কাছেই একদিন জাপানীরা বোম ফেললো। বোমরা পড়লো এলাকার সবচেয়ে বড় বাজারের উপর। সাথে সাথে সেখানকার সব দোকানপাট ভেঙ্গেচুরে পুড়ে গিয়ে মাটির
সাথে মিশে গেল। দোকানের মালিকেরা মুহূর্তের মধ্যে কপর্দকশূন্য হয়ে পড়লো। তাদের আহাজারি এখনও চোখে ভাসে। যুদ্ধ যে কতরকমভাবে মানুষকে নিঃস্ব করে দেয়।’
দাদামনু জিজ্ঞেস করলো, ’দাদা আপনি কোনদিন সামনা সামনি যুদ্ধ করেছেন?’
’তা করেছি। তবে রণাঙ্গন ছাড়াও কিন্তু যুদ্ধ করা হয়। দাদু তোমার মনে আছে সেদিন রাতের কথা,’ খান দাদা বললেন, ’যেদিন আমাদের পাকিস্তানী মিলিটারি ধরতে এসেছিল? এই যে আমাদের
সুকণ্ঠী জোয়ান অব আর্ক সেদিন দরজা খুলে দিয়েছিল, তোমার আব্বা-আম্মা আমাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন, এইসব ঝুঁকি নেওয়াটাও কিন্তু যুদ্ধ করার মত।’
অবশেষে আসর ভাঙ্গল। একই সাথে কষ্ট আর আনন্দের অনুভূতি নিয়ে বাসায় ফিরলাম। হিসেবের খাতা মিলিয়ে দেখলে সেখানে দেখা যাবে আজকের দিনে আমার পাওয়া অনেক। মোল্লা হাবেলির গোছলখানার সেই
বিভীষিকাময় স্মৃতির অনেকটাই মিলিয়ে গেছে। গানের জন্য নতুন কিন্তু কাঙ্ক্ষিত কিছু মানুষের প্রশংসা পেলাম। তারপরও না পাওয়ার বেদনাটাই বার বার মনে হতে থাকে। চোখ বন্ধ করলেই মনের আয়নায় হিরণ
ভাইয়ের চেহারাটা ভেসে উঠে। আর সেই সাথে শুরু হয়ে যায় বুকের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম চিন চিন ব্যথা। উনাকে আজকে যা বলতে চেয়েছিলাম তা আর বলা হল না। ঐ বাসায় গিয়ে কেন জানি আমার সব সাহস
উবে গেল। বোকার মত নিজেকে বোঝালাম স্কারলেটের মতো সাহসী হওয়া আমাকে মানায় না। অথচ বাসায় এসে এখন স্কারলেটের মতোই ভাবছি, ‘আফটার অল টুমরো ইজ এ্যনাদ্যার ডে।’
আশা এখনও ছাড়িনি। মনের কথাগুলো আজকে অব্যক্ত থেকে গেলেও আগামী কাল তা আর থাকবে না। কালকেই খান মঞ্জিলে যাব। তারপর হিরণ ভাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলব, ‘দেখ অনেকদিন ধরে আমি
খুব যত্ন করে একটা ভালবাসার বাগান সাজিয়েছি। তুমি কি সেটা দেখতে একদিনও আসবে না?’
পরেরদিনের জন্য আরও অনেক আকাশ-কুসুম ভাবতে লাগলাম। একসময় গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। বোধহয় ঘুমের মধ্যেই সেই একাত্তরের গোছলখানায় আটকে পড়ার স্মৃতিটা স্বপ্ন হয়ে ভেসে উঠল। এবার আর
একটুও ভয় করল না। শুধু মনে হল আমার আর জানা হল না সেদিন জ্ঞান হারিয়ে ফেলার পর কি কি ঘটেছিল?

পরেরদিন এক অসম্ভব ভাল লাগা নিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম। কেন জানি মনে হচ্ছে আজকের দিনটা আমার খুব ভাল কাটবে। কোন অপ্রত্যাশিত কিছু পেয়ে যাব। বার বার ঘড়ির কাটার দিয়ে তাকাচ্ছিলাম।
বেয়ারা ঘণ্টার কাঁটাটা একদম যেন গেড়ে বসে আছে। সহজে জায়গা থেকে সরছে না। আমি অস্থির হয়ে আছি। একটু বেলা বাড়লেই খান মঞ্জিলে যাব। দাদামনুকে না জানিয়ে একা একাই যাব। সকাল এগারটার
দিকে রেডি হতে শুরু করলাম। ঠিক করেছি আজকে শাড়ি পড়ব। তখনই দাদামনু এসে খবরটা জানিয়ে গেল। আজ নাকি মেট্রিক পরীক্ষার ফল বেড় হবে। আমার হাত পা একদম ঠাণ্ডা হয়ে যেতে শুরু করল।
মনে হচ্ছে ভূগোল খাতার উপর আমার রোল নাম্বারটা ঠিক মতো লিখি নাই। ইংরেজির খাতায় প্রশ্নোত্তরের জায়গায় উল্টা-পাল্টা নাম্বার বসিয়েছি। দাদামনু গেছে বোর্ড অফিসে। ফল আনতে। আর আমি বসে আছি জায়-নামাজের উপর। ফরজ নামাজ শেষে ক্রমাগত নফল নামাজ পড়ছি। দাদামনু আসতে এত দেরি করছে কেন?
এক সময় দাদামনু আসল। দেরি হবার কারণ সে আমার ফল বিশ্বাস করতে পারেনি বলে আবার স্কুলে গিয়ে প্রধান-শিক্ষক মেহেরুন্নেসার সাথে কথা বলে নিশ্চিন্ত হয়েছে। বাসায় হুলস্থূল পড়ে গেল। ফল শোনার পর
পরই সব আশংকা আর ভয় দূর হয়ে আমি আবার ঝরঝরা। আমি জানতাম আমার ফল এরকমই হবে। অংক পরীক্ষা আশাতীত রকমের ভালো হয়েছিলো। সন্ধ্যের দিকে আসতে লাগলো সাংবাদিকরা। পরদিন
প্রায় সব দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় অনেকটা জুড়ে ছবিসহ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে আমার খবর বেরুল। আমি দৈনিক কত ঘণ্টা পড়াশোনা করতাম, ভবিষ্যতে কি হতে চাই, অবসরে কি কি করি – এরকম আরও কত কি। জানিনা কতদিন লেগেছিল আত্মীয়স্বজন, স্কুলের শিক্ষক, পাড়াপ্রতেবেশী, বন্ধুবান্ধবদের আমাকে নিয়ে উচ্ছ্বাস শেষ হতে। মেলিতা আপা এমনকি হোসনা আপাও বাসায় এসে আমাকে অভিনন্দন বার্তা জানিয়ে গিয়েছিলো। না হিরণ ভাই আসেনি। এতো ডামাডোলের মধ্যে কিছুদিন আমি ভুলে ছিলাম হিরণ ভাইয়ের কথা। একটা সময় সবকিছু থিতিয়ে আসে। জলসা শেষ হয়ে গেলে মঞ্চে নেমে আসে নিস্তব্ধতা। সেই নিস্তব্ধতার মধ্যে দাঁড়িয়ে মাঝে মধ্যে বুকের ডাহুকটা করুন সুরে জানিয়ে দেয়, হিরণ ভাই একবারও আমার খোঁজ করল না। কথাটা মনে হলে এখন আর দুঃখ হয়না। যা হয় তা হল অপমান। এবং অদ্ভুত ভাবে খেয়াল করলাম দুঃখবোধের সময় বুকে একধরনের চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করি। কিন্তু অপমানিত বোধ করলে সারা শরীর জ্বলতে থাকে।

নীলের সাথে কিছু হলুদ মিশিয়ে দিলে তা সবুজ হয়ে যায়। ঠিক তেমনি দুঃখের সাথে কিছু অহংকার মিশিয়ে দিলে তা হয়ে যায় অপমান। সারা কুমিল্লা বোর্ডের মধ্যে মেট্রিক পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে প্রথম স্থান
দখল করে অজান্তেই আমার মধ্যে এখন অহংকারের মাত্রাটা খুব বেশি বেড়ে গেছে। তাই হিরণ ভাইয়ের কথা মনে হলেই এখন খুব অপমানিত বোধ করি। দুঃখ ভুলতে কষ্ট হয়। কিন্তু অপমানবোধকে অপমান বা অবজ্ঞা দিয়েই বিনাশ করতে হয়। তাই এখন বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তুড়ি বাজিয়ে খুব অবলীলায় বলে উঠি, ‘হিরণ ভাইকে আমি থোড়াই কেয়ার করি।’

(চলবে)

১,৯৬৪ বার দেখা হয়েছে

২৫ টি মন্তব্য : “ধারাবাহিক উপন্যাস – ১৮”

  1. শরিফ (০৩-০৯)

    আপু এখন পর্যন্ত আপনার একটা উপন্যাস ও পড়িনি ।এটাও পড়িনি ।তবে আপনার সব গুলো উপন্যাস পড়ার ইচ্ছা আছে ।সামনে সেমিস্টার ফাইনাল ।সেমিস্টার ফাইনাল শেষ হোক । সব গুলো উপন্যাস পড়ব ।আমার জন্য দোয়া করবেন ।ভাল থাকবেন ।

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      হা হা হা
      কি পড়ছ তুমি? অল্প কয়েকদিনে বেশ একটিভ ব্লগার হয়ে গেছ। তোমার পোস্টগুলো পড়েছি কিন্তু কমেন্ট করা হয়ে উঠেনি।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
      • শরিফ (০৩-০৯)

        আপু আমি রুয়েট এ ।মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট এ ।হ্যাঁ মোটামুটি একটিভ ব্লগার হয়েছি কিন্তু পরবর্তী দেড় মাস আর একটিভ থাকতে পারব না ।আমার প্রথম ব্লগ এ কিন্তু আপনার কমেন্ট ছিল যেটা ছিল বিতর্কিত । 😛 😛 মনে কি আছে আপু ? 😀

        জবাব দিন
        • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

          তোমার প্রথম ব্লগে একটা না দুটো অনেক বড় বড় কমেন্ট করেছিলাম - ভালই মনে আছে। সেসব বিতর্কিত হয়ে গেছে - বল কি? পরে আর সেখানে যাইনি। কি আর করা। আমি আমার মতটা দিয়ে এসেছি। সেখানে অনেকেরই দ্বিমত থাকতে পারে। এখন না পরে দেখব দ্বিমতের কারণগুলো।


          “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
          ― Mahatma Gandhi

          জবাব দিন
          • শরিফ (০৩-০৯)

            আপু হয় আপনি আমার কথা বুঝতে ভুল করেছেন আর না হয় আমি আপনাকে বুঝাতে ভুল করেছি । আসলে আমি বুঝাতে চেয়েছি যে আমার ওই ব্লগ টা ছিল বিতর্কিত ,আপনার কমেন্ট নয় ।আর আপনার একটি কমেন্ট ছিল ছোট আর একটি ছিল বড় 😀 😀 (সম্পাদিত)

            জবাব দিন
  2. নাজমুল (০২-০৮)

    আহ শেষ!!!!!!!!!!
    এত বড় বুঝিনাই, একজনের সাথে ল্যান এ ফিফা খেলার কথা, আসতেসেনা দেখে পড়া শুরু করলাম, পড়া শেষে দেখি গালিগালাজ করে চলে গেসে 🙁
    খুব ভালো লাগসে আপা 🙂

    জবাব দিন
  3. আজিজুল (১৯৭২-১৯৭৮)

    "মানুষ যখন আত্ম-উপলদ্ধি স্তরে পৌছায় তখন আর সে নিজের মধ্যে থাকে না। কিম্বা চারপাশের পুরো সমাজটাকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে শুরু করে। এই স্তর পিরামিডের উঁচুর দিককার ধাপ। পিরামিডের সবচেয়ে নীচের ধাপ হল তার ভিত্তি। উঁচু ধাপে পৌছাতে সবচেয়ে বেশি দরকার মূল্যবোধ।" - গভীর জ্ঞান থেকে উৎসারিত কথা গুলি খুবই ভাল লাগল । Quote করার অনুমতি প্রার্থনা করছি!


    Smile n live, help let others do!

    জবাব দিন
  4. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    উপ্স, নায়ক-নায়িকা দুইজনেই দেখি ধরাছোয়ার বাইরের লোক, একজন সেইরাম বড়লোক, সবুজ চোখ, আরেকজনের চেহারা সুন্দর, ভালো গান গায়, স্ট্যান্ড করে।

    আমাদের মত আম পাবলিকের আর নায়ক-নায়িকা হওয়া হইলো না :((


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
    • সামিয়া (৯৯-০৫)

      আসলে প্রতিটা মানুষই কিন্তু নিজের কাছে খুব সাধারণ, আবার খুব অসাধারণ। প্রতিটা আম পাবলিকই কিন্তু কারও না কারও কাছে অত্যন্ত অসাধারণ। আমার বাবা কিংবা মা'র কথাই ধরুন, আপনি তাঁদের নামও জানেন না, কিন্তু আমার কাছে কত অসাধারণ তারা। আমি যদি আমার বাবা কিংবা মা'কে চরিত্র বানিয়ে কোন গল্প লিখি, তাহলে সেই গল্পের নায়ক নায়িকাই হয়ে যাবে সিরাম অসাধারণ! অথচ তারা দুজন খুবই সাধারণ মানুষ।
      মজার ব্যাপার হলো, আপনার ফেইসবুকের প্রোফাইল ছবিটা দেখে এই কথাটা মাথায় আসলো। আপনার ছবিটা কি অসাধারণ! অথচ আমার রুমমেট আপনার নামও জানে না। আশ্চর্য না?
      এই আর কি 😛

      জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      ফয়েজ এই জন্যই বলি বিজ্ঞাপনের পরও সাথে থাকেন।

      এই গল্পটা আমি সিসিবির একজনকে পড়তে দিয়েছিলাম। ্প্রথম দিকে সেও একই কথা বলছে।

      অফ টপিকঃ তোমার এই কমেন্ট লেখার সময় আমার বোন পাশে বসে ছিল। সে তোমার প্রোফাইল ছবি দেখে বলে 'তুমি আমাদের কোন সন্ত্রাসীকে কি লিখ।' বোন কিঞ্ছিৎ আগের জমানার মানুষ কিনা।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
    • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

      ফয়েজ ভাই, আপনার কমেন্টে লাইক। চলেন আমরা একটা ফুটবল ম্যাচ দেই দাড়িওয়ালা বনাম বাড়িওয়ালা।দাড়িওয়ালা টিমে আমি আপ্নের ডেপুটি (কাম্রুল ভাই শেভ কইরা ফেল্লে আর কি) ...

      শান্তাপু,
      আপনাকে মেইল করেছি।

      জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      উত্তর দিয়েছি।

      কিন্তু আমাকে সানা ভাই আর নূপুরদা বলছিল একটি রিভিউ করে দেবে। সেসবের উপর ভিত্তি করে তো আমি আবার একটু রি-রাইট করতে চাচ্ছিলাম।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
      • সামিয়া (৯৯-০৫)

        আপা মেইল এখনো আসেনি 🙁 । তাই এখানেই উত্তর দেই। আমারও তাই মনে হয়। সিসিবির পোস্টগুলো মূল পান্ডুলিপি থেকে বোধহয় একটু বেশি ম্যাচিউরড। যদি সম্ভব হয়, তাহলে আপনি আমাকে এই লেখাগুলো আজকেই পাঠিয়ে দেন। আমি ভদ্রলোককে কালকে এই প্রিন্টটাই দিয়ে আসি আর বলি যে উনি এর পরেও আরও এডিট করেছেন। আপনি পুরোটাই রিরাইট করেন, ভদ্রলোকের সাথে কথা বলে একটা ডেট ফিক্স করেন। তারপর আমি আবার দিয়ে আসবো। নাইলে দেখা যাবে উনি এবছর ছাপতেই চাচ্ছেন না।

        জবাব দিন
      • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

        উপ্‌স.... এদিকে আমি এমন দৌড়ের উপর আছি!
        আর কয়েকটা দিন চেয়ে নিচ্ছি।
        লং উইকেন্ডের মধ্যেই লিখবো তোমাকে। মেইল আইডি টা দিও।
        আর ইতমধ্যে ছাপার ব্যাপারে এগিয়ে যাও, :thumbup:

        জবাব দিন
        • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

          নূপুরদা চিন্তা করেন না। আপাতত উপন্যাসটার পোস্ট এইখানেই সমাপ্ত। এর পরের অংশে তেমন রাজনী্তি নাই। প্রথম অংশে কিছু ছিল বলে আমি জানতে চাচ্ছিলাম সেখানে কোন তথ্য বিভ্রাট আছে কিনা। এর পরের অংশের তথ্য বিভ্রাট নিয়ে আমার তেমন একটা সন্দেহ নাই তাই আর ব্লগে পোস্ট করছি না। প্রজেক্টএর আপাতত এখানেই ইস্তফা করছি।

          আপনাকে তেমন বিশদ আলচনা করতে হবে না। তবে সময় হলে একটা পোস্ট ্দিতে পারেন 'কে্মন উপন্যাস পড়তে চাই' এ বিষয়ে। এতে তাহলে উপন্যাসের ফরমেটের ব্যাপারে অন্য সবার মতামত জানা যাবে।


          “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
          ― Mahatma Gandhi

          জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শরিফ (০৩-০৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।