সৌন্দর্য বিষয়ক কিছু টিপস

দেশে যাওয়ার আগে কিছুটা ভয়ে ভয়ে থাকি। আমার পরিবারের নারীকুল আবার খুব সৌন্দর্য সচেতন। তবে সেরকম পার্লার গামী নয়। নিজেরাই এক একেকজন সৌন্দর্য-বোদ্ধা। সবার নিজস্ব কিছু টিপস আছে। চারপাশের এই সব নারীকুলের চাপে আমার পক্ষে কোনদিনই আদর্শ নারীবাদী হয়ে উঠা গেল না। বরং আমি নিজেই অনেক টিপসের আবিষ্কারকর্তা (কিম্বা কর্ত্রী)। এগুলো সব প্যাটেন্ট করার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু দরদী মন। দেশের দুর্দিনে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সৌন্দর্য-পিয়াসী জনগণের উদ্দেশ্য আজকে কিছু টিপস উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা ভাবছি। দুর্দিন বলছি এজন্য যে এবার দেশে গিয়ে পার্লারগুলোর রাজকীয় অবস্থা দেখে আমার চক্ষু ছানাবড়া। আমার সব সময়ই দেশে চলে যেতে ইচ্ছা করে। এইবার অলিতে গলিতে মোড়ে মোড়ে এইরকম সব রাজকীয় পার্লার দেখে ইচ্ছাটা আরও বেড়ে গেল। আমেরিকাতে আমরা চুল কাটাই, বড় জোর ভ্রু সাইজ করতে যাই একরুমের ছোটখাটো দোকানে। তা আমাদের দেশের মোড়ে মোড়ে থাকা নাপিতের দোকানের মতো। জানি না কি মন্ত্রবলে বাংলাদেশে সব আলি-শান জায়গায়, আলি-শান বহুতল ভবন বিশিষ্ট পার্লারগুলোর ব্যাম্পার ফলন ঘটে গেছে। শাইখ সিরাজ কি আজকাল ‘মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানে মাশরুম বাদ দিয়ে পার্লারের চাষ শিখাচ্ছে কিনা কে জানে। হঠাৎ নাকি দেশের সৌন্দর্যপিয়াসী মানুষগুলো সেই রাজকীয় পার্লারগুলোর দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। আমি নিতান্তই আদার ব্যাপারী। এইসব অভিযোগ বা অভিযুক্ত আইনের ব্যাপার-স্যাপার বলে মানি। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে এবং ঘটনার তদন্ত করবে। কিন্তু তাই বলে তো সৌন্দর্য চর্চা থেমে থাকতে পারে না।

যাইহোক কথা না বাড়িয়ে আমার টিপসগুলো দিচ্ছি:

সুন্দর ত্বকের সৌন্দর্য:
সব সময় পেঁপে খাবেন। সকালে পেঁপের জুস, দুপুরে পেঁপের ভর্তা, রাতে পেঁপের স্যুপ। এতে আপনার ত্বকে এতই উজ্জ্বলতা আসবে যে আপনি চাকুরীজীবী হলে এক লাফে কয়েকটা প্রমোশন হয়ে যাবে। সংসারজীবি হলে রাজনীতি শুরু করে দিতে পারেন। ভোট নিশ্চিত। না আপনাকে নতুন করে দেশের রাষ্ট্রনীতি নিয়ে পড়তে হবে না। বুকশেলফে শুধু পেঁপের উপর বই থাকলেই চলবে। বাকী কাজ আপনার স্তাবকরা করে যাবে। আপনি শুধু মনের আনন্দে পেঁপে খেয়ে যান।
উৎস: খালেদা জিয়া

আত্মবিশ্বাসী সৌন্দর্য:
এই টিপস অবশ্য সবার জন্য কাজ করবে না। এই সৌন্দর্যের প্রধান শর্ত আপনাকে একজন খুব ক্ষমতাবান লোকের সন্তান হতে হবে। নইলে চেহারায় তেমন ড্যাম কেয়ার ভাবের আত্মবিশ্বাসী রোশনাই ফুটবে না। প্রথম শর্ত যদি পূরণ হয় তবে এই টিপসের দ্বিতীয় পদক্ষেপ হচ্ছে বাসার কাজের বুয়ার সাথে ঝগড়া করা। তবে ঠিকা বুয়া হলে হবে না। সাত চড়ে রা করে না, নরম-শরম, কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই এমন ধরনের বাঁধা বুয়া হতে হবে। বুয়াকে আপনি ইচ্ছা মতন গালি-গালাজ করবেন। যত গালি, যত ঝগড়া তত আপনার ড্যামকেয়ার আত্মবিশ্বাসী সৌন্দর্যের প্রভা বিচ্ছুরিত হতে থাকবে।
উৎস: শেখ হাসিনা

চির-যৌবন ধরে রাখার সৌন্দর্য:
এই সৌন্দর্য সবার জন্য। বাচ্চা-বুড়া, নারী-পুরুষ সবাই এই টিপস কাজে লাগিয়ে উপকার পেতে পারেন। এর জন্য আপনাকে বেশি কষ্ট করতেও হবে না। শুধু অবদমিত মনকে উন্মুক্ত করে দেবেন। ভেতরে ভেতরে যার প্রেমে পড়ে গোমরাচ্ছেন তাকে এক তোড়া লাল-গোলাপ পাঠিয়ে দেবেন। ঘন ঘন প্রেমে পড়বেন আর প্রেম করবেন। বয়সকে কোন বাঁধা মনে করবেন না। চক্ষু-লজ্জার কথা ভেবে আশি বছর বয়সেও ষোড়শীর প্রেমে পড়তে দ্বিধা বোধ করে পিছিয়ে যাবেন না। এই প্রেমই আপনার জীবনকে চির-যৌবনময় করে তুলবে। আপনি আবার হারানো মসনদ ফিরে পাবার শক্তি অর্জন করবেন।
উৎস: এরশাদ

ঐশী সৌন্দর্য:
এই সৌন্দর্যের জন্য আপনাকে সবসময় প্যাকেটের মধ্যে থাকতে হবে। আর বেশি কিছু করতে হবে না। চিন্তা করে দেখুন পৃথিবীর সব ভাল কিছু প্যাকেটে করে আসছে। যেমন আম, কলা, কমলা। আরও আছে, আঙ্গুর, হিরা, জহরত – ওহ থুক্কু, এইসব প্যাকেটে আসে নাই। তাহলে এইসব দামী না।
উৎস: দেলোয়ার হোসেন সাঈদী (উনি এতই মূল্যবান যে মায়ের পেট থেকে পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়েছেন প্যাকেট করে।)

ফুলন দেবী সৌন্দর্য:
এই সৌন্দর্যের অধিকারী হতে হলে আপনাকে দেশের সব চোর-ডাকাত, খুনিদের আপন ভাবতে হবে। তাদেরকে অনর্থক জেলে আটকে রাখলে চলবে না। তবে ব্যাল্যান্স করার জন্য যদি কিছু নিরপরাধীদেরকে পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে ফেলেন কিম্বা ইচ্ছা মতন গন পিটুনি দিয়ে মেরে ফেলতে পারেন তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি কোন বিশ্ব সুন্দরী আপনার প্রতিদন্ধি হওয়ার সাহস পাবে না। বিফলে মূল্য ফেরত।
উৎস: সাহারা খাতুন

কেয়ার-লেস সৌন্দর্য:
এই সৌন্দর্য আদর্শ নারীবাদীদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। লোকে ভাববে আপনি সৌন্দর্যের ব্যাপারে খুবই উদাসীন। থোড়াই কেয়ার করেন যতসব ফালতু ফেমিনিন লুক-টুক। তাহলে আপনাকে সপ্তাহে একবার পার্সোনা আসতে হবে। (সূত্রঃ কানিজ আলমাস, বিডি২৪নিউজ)
উৎস: দিপুমনি

আরও আছে হাসি-হাসি সৌন্দর্য (সূত্রঃ আবুল হোসেন), রাগী-রাগী সৌন্দর্য (সূত্রঃ —), ভণ্ড সৌন্দর্য (সূত্রঃ —), মোসাহেবি সৌন্দর্য (সূত্রঃ —), সুশীল সৌন্দর্য (সূত্রঃ —), বুদ্ধিজীবী সৌন্দর্য (সূত্রঃ —), ইত্যাদি ইত্যাদি। আপাতত আজকে এই পর্যন্তই।

৩,৪৭০ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “সৌন্দর্য বিষয়ক কিছু টিপস”

  1. সাইফুল (৯২-৯৮)

    আপা,

    ব্যাপক মজা পাইলাম। এত টাইম পান কই? একটা জার্নালে পাবলিশ করলে মনে হয় এই রিসার্চ পেপার অনেক বার সাইটেড হত। ক্লাসিফিকেশন গুলো ওয়েল থটেড... :thumbup:

    আশা করি। যেগুলো এক্সপ্লেইন করা হয়নি সেগুলো নিয়ে আরেকটা লেখা পাব।

    জবাব দিন
  2. সামিয়া (৯৯-০৫)

    পুরা লেখা পড়ে মজা পেলাম, কিন্তু এই লাইনটা মন খারাপ করায় দিলো...

    সাত চড়ে রা করে না, নরম-শরম, কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই এমন ধরনের বাঁধা বুয়া হতে হবে।

    আমরা এমনই এক জাতি...নিজেদের কোন মেরুদন্ড নাই...একসময় হয়ত ছিল, এখন তার কিছুই অবশিষ্ট নাই।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।