স্বপ্ন বনাম বাস্তবতা – ১

প্যাশন বনাম প্রফেশনের সুন্দর বাংলা কী হতে পারে? হাতের কাছে অভিধানটা নেই। তাই আপাতত স্বপ্ন বনাম বাস্তবতা দিয়েই শুরু করি। এটা একটা সিরিজ হতেও পারে নাও হতে পারে। নির্ভর করছে পোস্ট পরবর্তী আলোচনার উপর – যদি আদৌ তা হয়। তবে কম বেশি আমরা সবাই যেহেতু এই দ্বন্ধের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছি তাই মনে হয় বিষয়টা নিয়ে সবারই কিছু না কিছু ভাবনা রয়েছে – হয়তো তা এখনও ভাসা ভাসা যা ভাষা খুঁজে বেরাচ্ছে। বলা বাহুল্য ইফতেখারের এক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এই আলোচনার সূত্রপাত।

ভাবলাম নিজে কিছু লেখার আগে এই বিষয়টা নিয়ে এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের বই নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করে নেই। প্রথম যেই বইটা হাতে নিলাম তার নাম “WHAT I WISH I KNEW WHEN I WAS 20″। লেখক টিনা সীলিগ। মহিলা স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে নিউরোবায়লজীতে পি এইচ ডি করে সেখানকার টেকনোলজি ভেঞ্চার ডিপার্টমেন্টের পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। এই ডিপার্টমেন্টের কাজ ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করা যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের কোম্পানি খুলতে পারে। বলা হয়ে থাকে স্ট্যানফোর্ড আর বার্কলী থেকে ছাত্রছাত্রী বের হবার সময় এদের বলে দেওয়া হয় তোমরা চাকুরী খুঁজবে না, তৈরী করবে। তার ভিত্তিতেই নাকি সিলিকন ভ্যালী গড়ে উঠেছিলো।
যাই হোক প্রথম বইটা পড়তে শুরু করেই খুব ভালো লেগে যায়। ভাবলাম একটু ডজার হই। নিজে থেকে কলম না চালিয়ে বইটার কিছু অংশের সরাসরি অনুবাদ করে দেই।

অনুবাদঃ
বলা হয় সফলতার কারণ হচ্ছে প্যাশনকে অনুসরন করা। কেউ তার জীবন নিয়ে কী করবে এটা ব্যাপারটা নিয়ে যখন কেউ খুব চিন্িতত তখন তাকে এই উপদেশটি দেওয়া খুব সহজ। আসল সত্য হলো এই উপদেশটি একই সাথে খুব সরল এবং গরলও। কারণ তা ভুল দিকনির্দেশনা দিতে পারে। আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমিও প্যাশনের খুব বড় সমঝদার এবং মনে করি এটা যে আমাকে কোন জিনিষটা চালনা করছে তা জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটাই সব নয়।

প্যাশন কিন্তু শুধুমাত্রই আমাদের শুরুটার প্রথম বিন্দু। আমাদের যেই জিনিষটাও সাথে জানতে হবে তা হলো আমাদের আসল প্রতিভা কোথায় এবং পৃথিবী এটাকে কেমন মূল্য দেয়। যদি তুমি কোন একটা বিষয়ে খুব প্যাশনেট কিন্তু বিষয়টাতে তেমন দক্ষ নও তাহলে সেই বিষয়টাতে পেশাজীবন/ক্যারিয়ার শুরু করাটা খুব হতাশজনক হবে। যেমন ধর তুমি বাক্সকেট বল খেলতে পছন্দ করো কিন্তু তেমন লম্বা নও, অথবা জাজ শুনে মু© হচ্ছো কিন্তু সুরটা ভেতর থেকে আসছে না। এই দুইক্ষেত্রেই তুমি একনিষ্ট ভক্ত হতে পারো, প্রতিটা খেলা কিম্বা কনসার্টে গেলে, শুধুমাত্র উপভোগ করার জন্য। কোন দায়বদ্ধতা ছাড়া।

এখন আরো এক ধাপ এগোই, এখন কোন একটা বিষয়ে তুমি খুব প্যাশনেট এবং প্রতিভাবানও, কিন্তু সে বিষয়টির কোন বাজার নেই। যেমন ধরো তুমি খুব ভালো ছবি আঁক, অথবা খুব ভালো সার্ফার – কোন ঢেউ তোমাকে ভয় দেখাতে পারে না। কিন্তু আমরা সবাই জানি যে এই দুটো বিষয়ে বাজার খুব সংকুচিত। এই বিষয়ে ক্যারিয়ার করতে চাইলে শেষে হতাশ হওয়ার সম্ভবনাই বেশি। এক্ষেত্রে বিষয়দুটোকে আমরা শখ হিসেবে দেখতে পারি।
অন্যদিকে প্রতিভাও আছে আবার বাজারও বড়, সেক্ষেত্রে সেটা হবে চাকুরী খোঁজার জন্য ভালো ক্ষেত্র। উদাহরনস্বরূপ কেউ যদি খুব ভালো হিসাবরক্ষক হয়, সবসময়ই ব্যালেন্সসীট তৈরী করার জন্য একজন হিসাব রক্ষকের দরকার পড়ে। পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের জীবনই এর আওতায় পড়ে। তাদের একটা চাকুরী আছে যেখানে তারা তাদের দক্ষতা ব্যবহার করতে পারছে, কিন্তু বাসায় আসার জন্য তারা উদগ্রীব – কখন তারা তাদের শখের পিছনে সময় দেবে। তারা দিন গুনে কখন সপ্তাহান্েতর ছুটি আসবে, কখন বার্ষিক ছুটি পাবে, কখন অবসরে যাবে।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হলো তুমি এমন একটা চাকুরী করছো যেখানে তোমার কোন প্যাশন নেই, কোন দক্ষতা নেই সেই ক্ষেত্রটিতে, এবং যা করছো তার কোন বাজারও নেই। এটা শুনতে সেই কৌতুকের মতো শোনাবে যে এস্কিমোদের কাছে বরফ বিক্রি করার মতো অবস্থা। এখন চিন্তা করে দেখো তুমি ঠান্ডা খুব অপছন্দ করো আবার বিক্রিবাটা করার ব্যাপারেও তোমার বেশ দুর্নাম রয়েছে এমন অবস্থায় তুমি এস্কিমোদের কাছে বরফ বিক্রি করার চাকুরী পেলে। এর থেকে আর খারাপ কী হতে পারে?

তোমার দক্ষতা আর বাজারের চাহিদার সাথে যদি প্যাশনের সমন্নয় ঘটে তাহলে তো সোনায় সোহাগা। এরকম সমন্নয় খুঁজে পেলে বলতে হয় তুমি খুব ভালো অবস্থানে আছো যেখানে চাকুরীটা শুধু তোমাকে অর্থনৈতিক সহায়তা দিচ্ছে না জীবনটাকে সার্বক্ষনিক উপভোগ্য করে তুলছে। লক্ষ্য হওয়া উচিত এমন ক্যারিয়ারের যে তুমি নিজেও বিশ্বাস করতে পারছো না যে অন্যলোকে তোমাকে পয়সা দিচ্ছে তুমি যা করছো তার জন্য।
চায়নীজ দার্শনিক লাও-জুর একটা উক্তি আছে,
’একটা উৎকর্ষময় জীবনে কাজ আর খেলা, ব্যস্ততা আর অবসর, দেহ আর মন, শিক্ষা আর বিনোদন, ভালবাসা আর ধর্ম মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। সে এখন নিপুনভাবে ভালবেসে প্রতিটা কাজ করে যে বাকীরা সবাই দ্বিধায় পড়ে যায় যে সে আসলে কাজ করছে না খেলছে। তার কাছে সে দুটোই করছে।’

কষ্ঠসহিষু-তা সফলতার প্রধান চাবিকাঠি। আবার আমরা প্যাশনেট হলেই কষ্ঠ করতে রাজী থাকি। বাচ্চাদের দিকে তাকাই দেখবো যে তারা যে কাজটা করতে ভালবাসে তাই ঘন্টার পর ঘন্টা করতে থাকে। অফুরন্তভাবে কেউ বিলডিং বানাতে ভালোবাসে, কেউ ছবি আঁকতে ভালবাসে। প্যাশন আনন্দের সাথে চালকের কাজ করে। এটা থাকলে আমরা কষ্ঠ করতে রাজি থাকি। আর এতে কাজের দক্ষতা এমনি এমনিই বেড়ে যায়।

আজকের মতো অনবাদ এখানেই শেষ।

২,৬৪১ বার দেখা হয়েছে

৩৫ টি মন্তব্য : “স্বপ্ন বনাম বাস্তবতা – ১”

  1. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    অনবদ্য অনুবাদ।
    এ বিষয়টা আমাকে বেশ ভাবায়, কি করতে এসে কি করছি তা নিয়ে কুলকিনারা করতে পারিনা। যা করছি তার বাজারদর ভালো হলেও যার বাজার একেবারেই নেই তার জন্যে মন কেমন করে কেন কে জানে।

    জবাব দিন
  2. হায়দার (৯২-৯৮)

    প্রায় ২ বছর ঘাপটি মারার পর প্রথম বারের মত প্রথম হলাম।
    Anyway, thank you apa for this nice topic.
    নিজে যা পছন্দ করি সেটাই নিজের দক্ষতা কিনা তা নিয়ে একটু সন্দিহান। বছরখানেক ধরে আমি seriously confused, আমার দক্ষতা কি? আর সেটা কিভাবে বাজারের চাহিদার সাথে match করব।
    পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

    জবাব দিন
  3. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে বিভ্রান্তিকর। আইএসএসবি পরীক্ষায় যে গাইডটা সবচেয়ে বেশী বিক্রী হয়, তিনি আইএসএসবিতে গাব্বা মেরেছেন। শেয়ার ব্যবসায় সফল হয়েছেন এরা কেউ শেয়ার ব্যবসার ট্রিক্স নিয়ে বই লিখেছেন বলে আমার জানা নেই। বই তিনিই লিখেছেন যিনি শেয়ার ব্যবসায় ভালো করতে পারেন নি। ডেল কার্নেগীর বই খুব পড়তাম একসময়, ডেল কার্নেগী, তিনি তার সব উপদেশ ব্যক্তিগত জীবনে মেনে চলতেন কিনা, জানতে ইচ্ছে হয়।

    আমি নৈরাশ্যবাদী নই। বরং ব্যক্তিগত সফলতার উদাহরনে দেখা যায়, হুট করে সফলতার সংখ্যা কিন্তু মোটেই কম নয়। আমি বরং "লেগে থাকায়" বিশ্বাসী। ক্ষেত্রটা গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই, কিন্তু তালিকার প্রথমে তা নেই।

    আপনার অনুবাদ বলছে, পছন্দের জিনিসের সংগে লেগে থাকার একটা সম্পর্ক আছে, সেখানে লেগে থাকার মধ্যেও আনন্দ। আমি এটা মেনে নিয়েই বলছি, পছন্দের জিনিস কিন্তু বদলে যায়। আজকে আমার যা ভালো লাগছে, কাল তা ভালো নাও লাগতে পারে।

    তবে লেগে থাকাটি মূল। যাই কর, লেগে থাক। Just hung one minute longer. এটাই সফলতার একমাত্র চাবিকাঠি মনে হয় আমার কাছে।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      ব্যর্থতাও জীবনের বড় উপকারী উপাদান। এর পরের পর্ব ব্যর্থতা উপযোগীতা নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে। ডেল কার্নেগী সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে যে উনি নাকি আত্মহত্যা করেছিলেন। দুবার ডিভোর্স। সবাইকে ভালো থাকতে বলে শেষ পর্যন্ত নিজেই ভালো থাকতে পারলেন না। কার্ল মা্র্ক্স পুঁজিবাদের নিন্দে করে নিজেই শেয়ারে বিনিয়োগ করে লস করেছিলেন। এরকম ভূড়ি ভূড়ি উদাহরণ আছে।
      প্যাশন এমন একটা জিনিষ যা সময়ের সাথে সাথে বদলাবে না। তবে জীবন বদলাবে। তবে এমন লক্ষ্য হলে ভালো হয় যে সে বদলানোর নিয়ন্ত্রনটা যাতে আমার হাতে থাকতে পারে।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
  4. তানভীর (৯৪-০০)

    আমার ক্ষেত্রে দেখেছি স্বপ্ন আর বাস্তবতার মধ্যে অনেক বড় ব্যবধান। অবশ্য স্বপ্নের কাজ চিরস্থায়ী কোন ব্যাপার বলেও মনে হয় না আমার। সময়ের সাথে সাথে আমাদের স্বপ্ন, চাহিদা সবকিছুতেই পরিবর্তন আসে।
    চাকুরীতে প্রথম এক-দেড় বছর আমি আমার কাজ বেশ উপভোগ করতাম, এটাকে স্বপ্নের কাজ না মনে হলেও বেশ উৎসাহের সাথেই কাজ করতাম। এখন কাজে একঘেয়েমিতা চলে এসেছে, সাথে চলে এসেছে কাজের প্রতি বিরক্তিও। খুঁজে পাইনা কি করলে এটা থেকে মুক্তি পাব।
    অনেক ইন্টারেস্টিং একটা বিষয় নিয়ে লিখছেন আপু। পরের পর্ব এবং সাথে আপনার মতামত জানার ব্যাপারে উৎসুক হয়ে আছি।

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      কর্পোরেট জবটাই এমন। তবে আশেপাশে তাকিয়ে দেখি অধিকাংশ মানুষই বিরক্ত হচ্ছে না। তারা এর বাইরে কিছু ভাবতে পারছে না। তখন নিজে দ্বিধানিত হয়ে পড়ি যে আমার কেন এমন মনে হচ্ছে। আসলে প্রতিটা মানুষই আলাদা। সবার ইচ্ছে-অনিচ্ছেগুলো এক ছাঁচে মাপা নয়। আমাকে আমার ভাললাগা খুঁজতে গিয়ে আরো জীবন সংগ্রামী হতে হচ্ছে। ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। ব্যর্থতা সফলতা আমার কাছে পরিমাপক নয়, অন্তত্ব আমি চেষ্টা করেছিলাম নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রক হতে - অনেকে হয়তো এভাবে চিন্তা করে দেখতে ভালবাসে।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
  5. শাহরিন (২০০২-২০০৮)

    অনেক দামী আর উপকারি একটা বিষয়ে লিখেসেন আপু।আপনি আগে একটা কমেন্টে বলেছিলেন যে এই বিষয়ে লিখবেন তখন থেকেই অপেক্ষায় আছি।
    নিজের প্রতিভা যে কোন দিকে সেটা ঠিক সময় মত বুঝতে পারাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ,আবার প্রতিভা আবিষ্কার করলেও হয়তো দেখা যায় ঝোক বা প্যাশন অন্য দিকে।কি যে করা উচিত বুঝে উঠতেই পারিনা।

    অনুবাদ ভালো হয়েছে আপু 🙂

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      শখ, দক্ষতা আর বাজার বা বাস্তবতা - জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে এই তিনটা বেশিষ্ঠের মাপে একটা ছক কাটা যেতে পারে। নিজেকে বুঝতে অনেকটা সময় লেগে যায় তার আগে বোধহয় রোড নট টেকেন-এর পথে যাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ন।
      বইটা আমার খুব বেশ লাগছে। ভাবছি আমার উপন্যাসটা শেষ হলে এই বইটার অনুবাদ করা শুরু করবো। অবশ্য তার আগে কপিরাইটের নিয়মগুলো জানতে হবে।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
  6. আছিব (২০০০-২০০৬)

    স্বপ্ন দেখি অনেক,বাস্তবায়ন করতে গেলে আলসেমি পেয়ে বসে। এখনও ছাত্র আছি,দেড় দুই বছর পরেই চাকরী খুঁজতে হবে। চাকরী আমাকে খুঁজবে না 😛
    আপাতত স্বপ্ন একটা নিশ্চিত চাকরী,সেটা অবশ্যই নিজের ফিল্ডে হতে হবে। কিন্তু দেশে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের যে দুর্নাম,তা কিভাবে ঘুচবে? সিনিয়র ভাইরা বের হয়ে দু তিন বছর চাকরী করার পর উপদেশ দেন, বিদেশ চলে যাও,এদেশে ফিউচার নাই! মেধাবী,হ্যান্ডসাম ভাই গুলার মুখে হতাশা দেখে আমার মত সাধারণ ছেলেপেলের ভয় লাগে! কি আছে জীবনে?

    তার উপর যদি একটা কমিটমেন্ট থাকে,যে তাড়াতাড়ি সেটল্ড হয়ে একজনের হাত সারাজীবনের জন্য পাকড়াতে হবে,তখন এই ভাবনা আরো বেড়ে যায়।

    মাঝে মাঝে মনে হয়,মেধাবী ছাত্র কি দরকার ছিল,খেলোয়াড় হতাম!খারাপ তো ছিলাম না! আবার মনে হয়,টাকাই কি জীবনের সব??

    মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের যে মাথা খাটাতে হয়,তার বিন্দুমাত্র মূল্য যদি দেশের চাকরীর বাজারে থাকত,তাহলে নিশ্চয়ই ভাইরা বিদেশ পালাতেন না!
    অবশ্য কেউ কেউ দেশেই মানিয়ে নিতে পেরেছেন,টাকার কাছে নীতিকে বলি দিয়ে। হয়ত আমিও একদিন টাকার পিছে ছুটব। সড়ক ও জনপথে যাওয়ার ইচ্ছা আছে আমার,যদি বিসিএস এ হয়ে যায়। নইলে বাইরে চলে যাব যে কোন মূল্যে।আপাতত এটাই স্বপ্ন 🙁

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      তোমার কথাগুলো একজন সুখী মানুষের মতো শোনায়। তুমি মোটামুটি নিশ্চিত যে ভবিষতে তুমি কী করতে যাচ্ছ।
      বিদেশে গেলে পালানো হয় এই কথাটার সাথে আমি একমত নই। বিশেষ করে এই ইন্টারনেটের যুগে ভার্চুয়ালি সবার মধ্যেই যোগসূত্রতা আছে। আমি তো আমার আর আবশ্যিক কাজের ্পর যে সময়টা পাই তা আমি যেভাবে ব্যবহার করছি, দেশে থাকলেও সেভাবেই ব্যবহার করতাম। দেশে থাকলে অবশ্য সুবিধা আরো বেশি থাকতো। আমার সংসারের কাজগুলো কেউ এসে করে দিতো, আমারও অনেক সময় বাঁচতো 🙂 🙂
      তবে আমি দেশে ফিরে যেতে চাই - দেশের জন্য উপযোগী কোন দক্ষতা সাথে করে।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
      • আছিব (২০০০-২০০৬)

        আপু যে সুখে থাকে সে-ই তো সুখী মানুশH,তাই না? সুখে থাকার চেশHটা করি সবসময়। কখনও কখনও অনেকেই ভুল বুঝে,তখন খারাপ লাগে। কখনও চাকরীর অবস্থা শুনলে হতাশ লাগে,এই আর কি! দোয়া করবেন
        ইয়ে মানে আপু,পালানো বলতে আমি বুঝিয়েছি, বিদেশেই স্থায়ী হওয়া। দেশে ফিরে এসে আবারও সেই দুর্বৃত্তায়নে পড়তে হয় সেই ভয়েই তো তারা বিদেশে থেকে যান,তাই না?

        বাইরে তো সবাই নিজের কাজ নিজে করে জানি। দেশে মা-খালারা তো কাজের লোক রাখে। কিন্তু আপু,আজকালকার কাজের লোকদের মাসিক আয় সদ্য চাকরীপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারের চাইতেও বেশি :)) পারলে আমার মা-খালারাও ছুটা বুয়া রাখতেন না 😛

        জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      পিন্টু তুইও বিছিঃএস দিবি? 😀 শুইনা খুশি হইলাম 🙂 যা লাত্থি খা,২০০৮ এর জানুয়ারির প্রসেস ২০১০ এর শেষেও নিয়োগ শেষ হইতেছেনা-আমারে দেইখা শিক্ষা হয়না? x-(

      জবাব দিন
  7. সামিয়া (৯৯-০৫)

    জীবনের হাইয়ারআর্কি খুজে বের করতে হয়, আমি কোন জিনিসকে ফোকাস করতে চাই। বোধহয় তাহলেই সুখী থাকা যায়, সাথে অপরকে সার্ভও করা যায়।
    নিজের দক্ষতা জানতে বড় দেরী হয়ে গেছি। রঙ ম্যান ইন রঙ প্লেস। 🙁

    এত বছর পরে খুজে পেলাম, নিজের দক্ষতা আসলে কেবল ঘুমে। এর কি কোন বাজার পাওয়া যাবে? :-B

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      তোমার দক্ষতা জানতে দেরি হয়ে গেছে বললে আমরা কি করবো যারা এখনও তা জানতে পারেনি।

      তুমি এক কাজ করো। ঘুমের সেচ প্রকল্প নক্সা করো। তোমার যতোটুকু লাগে তা রেখে বাকীটুকু বাজারজাত করতে পারলে এমন বাজার পাবে যে এরপর আরামসে নিজের জন্য আহসানমঞ্জিল, তাজমহলের নক্সা করতে পারবে।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
  8. রাব্বী (৯২-৯৮)

    আমি সবসময় খুব সাধারণ জীবনের কথা চিন্তা করে এসেছি এবং ভেবেছি সেই জীবনকে উপভোগ করার কথা। এখন মনে হয় জীবন সহজ করাটা আসলে সবচেয়ে কঠিন কাজ। জীবন আসলে তার নিজের গতিতেই ডিকটেট করে আমাদের। পেশা আর নেশা তো পরের কথা, যে বাস্তবতায় সত্যিকারে থাকি সেখান থেকে পালিয়ে বেড়াই। মনে হয়, জোড়াতালি দিয়ে জীবনের একটা কাহিনী পূর্ণ করে চলছি যার মূল চরিত্র নিজেই। আবার পরে অন্যরকম মনে হয়, ধরেন শৈশবে যে আসলে ইনোসেন্ট ছিলাম, তা যেমন বুঝতে পারলাম যখন সেটা চুরি হয়ে গেলো তারপর। কিন্তু যখন ছোট ছিলাম তখন বুঝতে পারিনি।

    লিসা স্টেভেনসনের একটা কথা সেদিন খুব মনে ধরলো, জীবন আসলে বরং ঘটে যায় এবং চলতে থাকে, যখন আমরা উদ্বিগ্নভাবে জীবনকে মঞ্চায়নের পরিকল্পনায় ব্যস্ত ...


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
  9. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    আপু,
    একটি আকর্ষনীয় বিষয় নিয়ে লিখেছেন।
    আপনার লেখনী আর অনুবাদ দুটোই সমান ভাবে পাঠকের মনোযোগ টানে। ট্যাগে এটি আলোচনা বিভাগে দেখে নিজের ভাবনাটুকু এখানে জুড়ে দিতে চাই।

    সময়ের আবর্তে অনেক প্রিয় বিষয়ের হাতছানি উপেক্ষা করেছি। ছোট বেলায় বাবা মা’র সাথে নিউমার্কেটে গেলে রঙীন খেলনা গুলোর দিকে চোখ পড়তেই আমি মুখ ঘুরিয়ে ফেলতাম। পরিবারে মাসের খরচে টান পড়বার ভয়ে আমি বড় ভাই হয়ে ছোট’টার সামনে সেসব আবদার করার বিন্দু মাত্র জোর পেতাম না মনে।
    প্রিয় মানুষগুলি ছেড়ে নীরব অভিমানে ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার সময় এক প্রকার সমঝোতা করে নিয়েছিলাম যে এরপর বাবার স্বপ্নের সাথে একাত্ম হয়ে বিএমএ তে যেতে হবে।
    তারপর ক্যালেন্ডারের পাতায় পথ পেরিয়েছি ষোলটি বছর। জীবন যতটুকু দেয় – যেভাবে দেয়- তার ষোল আনা কাজে না লাগাতে পারলেও একান্ত নিজের জন্য যতটুকু বারাদ্দ তা উপভোগ করতে কার্পণ্য করিনা কখনো। করা উচিৎও না। টেকনোলজির সুবাদে ইন্টারনেট স্বপ্ন বনাম বাস্তবতার মধ্যকার আপাত দূরত্বকে নিমিষেই হটিয়ে দেয় প্রতি ক্লিক এ। ভার্চুয়াল জগতে পুষিয়ে নিই না পাওয়া ইচ্ছেগুলো ...লেখালেখি - বা সিনেমা বানানোর স্বপ্নটুকু। এরপর হয়তো একদিন শিক্ষকতা'কে বেছে নিতে পারবো জীবিকা হিসেবে ইনশাআল্লাহ...।

    বর্তমানে জীবন প্রবাহে জীবিকার ছোবলে আক্রান্ত হতে হয় প্রায়ঃশই।
    কখনো হোঁচট খাই – কখনো বা পিছলে যাই – কখনো বা আমাদের স্রেফ বসে পড়তে হয়।
    তারপর আবার হামাগুড়ি দিয়ে নড়তে শুরু করি।
    ধীরে ধীরে এরপর হেঁটে চলা আর একসময় দৌড়ে চলা। এ
    হেন জীবন যাপনে আমরা অনেক সময়ই বাস্তবতার সাথে সমঝোতা করে নিই।
    "আহ !
    ক্ষণিকের জীবনে চলে স্বার্থান্বেষী প্রচেষ্ঠা।
    সমাজবদ্ধ জীব হয়ে এই যে ধেয়ে চলা-
    আদতেই খুব খেলো হয়ে ঠেকে।
    ভালবাসার মায়াজালে নিয়ত দেখি-
    শত বোঝার সাথে বিরামহীন সমঝোতা! "


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      ধন্যবাদ তোমার সুন্দর অনুভূতিগুলোর জন্য। তুমি ছোট থাকতেই এতো বুঝতে?
      তুমি আলকেমিস্ট বইটা পড়েছো? সেই যে ছেলেটা পিরামিড দেখতে চেয়েছিলো। কিন্তু এই স্বপ্নটুকু পূরনের আগে তার জীবনে আর যা বাধ্যবাধকতা এসেছিলো তা সব সুচারুভাবে পালন করেছিলো।
      আমাদের সবারই এরকম একটা লক্ষ্য থাকে। কিন্তু অনেক চেকপোস্ট পেড়িয়ে সেখানে পৌছাতে হয়।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
  10. জিনাত (২০০২-২০০৮)

    শান্তা আপা ,এই বিষয়টা নিয়ে অনেক ভাবতাম এবং এখনো ভেবে চলেছি ... প্যাশনের সাথে বাস্তবতাকে মিলিয়ে চলা অনেক কঠিন বোধহয় ।এরকম একটা টপিক শুরু করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট করবো না ,শুধু একটাই অনুরোধ এ বিষয়ে আরো অনেক অনেক আলোচনা করে জীবনের ভিন্ন ভিন্ন দিকগুলো চিনতে সাহায্য করবেন । পরের পর্বের অপেক্ষায় ...

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      ধন্যবাদ জিনাত আপু। এটা নিয়ে ভাবতে গিয়ে এখন আমারও অনেক ভাবনার পথ খুলে যাচ্ছে। আস্তে ধীরে সেসব নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা আছে। এই লেখাটা শুরু করেছি শেষটা কি হবে তা না জেনে। নিজের স্বপ্ন অন্যের স্বপ্নবোধগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে এগুতে চাই।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
  11. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    আমি খুব বেশি ভাবনা চিন্তা করে জীবনযাপন করি না।
    জীবনকে তার নিজের মত চলতে দেওয়ার মধ্যেও এক ধরণের আনন্দ আছে। 😀


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      তুমি হইলা পুরা বোহেমিয়ান টাইপ। তোমার পক্ষে এমনটাই ভাবার কথা। আমি হইলাম সংসারে থেকে যতোরকম ভাবে নিজের বোহেমিয়ান টাইপ বেঁধে সংসারের সুবিধাটুকুও পাওয়া যায় সেই টাইপ। আর অনেকেই আছে পুরা সংসারী। চারদিকে এতো বিভিন্নতা বলেই তো পৃথিবী এতো সুন্দর।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
  12. হুমায়রা(২০০২-২০০৮)

    আপু, যাদের প্যাশন আছে, দক্ষতা আছে, কিন্তু উপায় নেই, তাদের কি হবে??? মনে ইয় উত্তরটা নিজেকেই খুঁজে নিতে হবে । 🙂 🙂 🙂
    আমার নিজের ক্ষেত্রে "যাই কর, লেগে থাক। Just hung one minute longer. এটাই সফলতার একমাত্র চাবিকাঠি মনে হয় আমার কাছে"
    পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম 🙂

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।