ভিজ্যুয়াল কম্পিউটিং: প্রযুক্তির আগামী মাইল ফলক

পনেরশ শতাব্দী থেকেই মূলত সম্পদ আহরনের উদ্দেশ্যে নতুন ভূখন্ডের আশায় অভিযাত্রীরা এক একেকটা জাহাজ নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর দাপরে বেড়াতে শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় মানব সভ্যতা প্রবেশ করে ঔপনিবেশিকতার যুগে। এরপর ইতিহাসটা আর আগের মতো থাকেনি। আর সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে পৃথিবী চ্যাÌটা না, গোল। মূল কান্ডের সাথে যোগ হয় অনেক শাখা-প্রশাখার। এক সময় সেই শাখা-প্রশাখার সতেজতা ছাড়িয়ে যায় মূল কান্ডকেও।

বিংশ শতাব্দীতে যখন এই একই মানব সম্প্রদায় সিলিকন সাগরে ইলেক্ট্রন, প্রোটনের ভেলা ভাসাতে শিখে গেল তখন আবার সেই গোলাকার পৃথিবীই হয়ে পরলো চ্যাÌটা। শুরু হলো কম্পিউটার যুগের। মুহূর্তের মধ্যেই পৃথিবীর দু প্রান্তের দুজনের মধ্যেকার বার হাজার মাইল উবে গিয়ে একে অপরের বাড়ির পশের আরশিনগরের বাসিন্দা হয়ে যেতে পারে যদি দুজনের সামনে দুটো কম্পিউটার থাকে। ইমেইল, ব্লগ, ফেইসবুক, আইপি ফোন, গুগল, ইউ টিউব – প্রাত্যহিক জীবনে এর অবদান আর বলে শেষ করা যাবে না। সামনে আর কি আসছে বা আসতে পারে সেটা নিয়ে খানিক আলোচনা করাই এই লেখার মূল উদ্দেশ্য।

মনিটরকে এখন অধিক মাত্রায় পড়ার থেকে দেখার উপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে যেটার প্রচলিত টেকি নাম ভিজ্যুয়াল কম্পিউটিং। সেই সাথে নিরন্তন প্রচেষ্ঠা তো লেগেই আছে যে একজন ব্যবহারকারী কিভাবে আরো সহজে ভিডিও দেখতে পারবে। মোট কথা আমরা চাই কম্পিউটার খুব সহজে আমাদের কথা শুনবে এবং সেই অনুযায়ী কাজটা করে দিবে। একশটা বাটন টেপার বদলে একটুখানি স্পর্শে আমরা কম্পিউটারকে আমাদের মনের কথা বোঝাতে চাই। আর সিপিইউ আমাদেরকে মনিটরের দিকে চোখ লাগিয়ে গুটি গুটি অক্ষর পড়ার ঝামেলা থেকে বাঁচিয়ে দিয়ে ছবি বা দৃশ্যের মাধ্যমে তথ্যের উপস্থাপন করবে।

যেসব ক্ষেত্র এই প্রযুক্তি খুব কার্যকরী হতে পারে তার কয়েকটি নীচে উল্লেখ করা হলো।

১। চিকিৎসা শাস্ত্রঃ
human_body
শুধু মাত্র রোগ নির্নয়ের জন্যই শৈল্য চিকিৎসায় রোগীকে বড় ধরনের কাঁটাছেড়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। বায়োমেডিক্যাল ইমেজিং রিসোর্স বা অন্য কথায় বলতে গেলে একটা ক্যাপসুল ভিডিও ক্যামেরা কোন কাঁটাছেড়া ছাড়াই রোগীর দেহের ভিতরের দৃশ্য বাইরের মনিটরে ফুটিয়ে তুলতে পারে।

২। দূরশিক্ষনঃ
on_edu
যা পড়তে চাই কিম্বা জানতে চাই তার জন্য আর ক্লাসরুমে সশরীরে হাজির দেবার দরকার পরবে না। অবশ্য এটা তাদের জন্যই প্রযোজ্য যাদের ক্লাসে যাবার সীমাবদ্ধতা আছে। স্কুলিং এর মূল উদ্দেশ্য তো শুধু জ্ঞানার্জনই নয়, এখানে মানুষ সামাজিক জীব হয়ে গড়ে উঠার দীক্ষাও পায়। অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকে একেবারে ঘরের মধ্যে কম্পিউটারের সামনে পৌছে দিচ্ছে। শুধু তাই না এখন চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে একটা ৩-ডি গগলস চোখে লাগিয়েই টেকনিশিয়ানরা তাদের কাজ চালিয়ে নিতে পারে। এতে আর বড় বড় ম্যানুয়াল পড়ার দরকার হবে না। যেমন ধরুন একটা গাড়ি নষ্ট হলো, সেটা সারানোর জন্য একটা ৩-ডি গগলস চোখে লাগালেই সেখানে গাড়ির বনেট খোলা থেকে পরবর্তী প্রতিটি ধাপের নির্দশনা একটার পর একটা চোখের সামনে ভেসে উঠবে। আর ব্যবহারকারী সেই নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করবে।

৩। কম্পিউটারের সাহায্যে নক্সা (কম্পিউটার এইডেড ডিজাইন)ঃ
garment
এই ক্ষেত্রটি এখন শুধুমাত্র আর ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে সীমিত নেই। গয়না বা গার্মেন্টস যে কোন কিছুই কম্পিউটারের মাধ্যমে নক্সা করা যায় এবং প্রোটোটাইপ বা নক্সা করা প্রথম উপাদানটিকে একেবারে বাস্তবসম্মত ভাবে মনিটরের মধ্যে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। যেমন এক কম্পিউটারের সামনে বসেই এই শীতের জন্য একটা জ্যাকেট নকসা করে তার ৩-ডি সিমুলেশন একজন ভ্যারচুয়্যাল মডেলের গায়ে চাপিয়ে ক্রেতাকে আগেভাগেই মুগ্ধ করে রাখা যায়। এখন এই প্রতিযোগিতার বাজারে পুঁজিবাদী সমাজে সময় আর টাকা তো প্রায় সমার্থক শব্দ হয়ে দাড়িয়েছে।

৪। অ্যানিমেশনঃ
srek
ড্রীমওয়ার্ক অ্যানিমেশনের ’শ্রেক’স ল‘ নামে একটা নীতি রয়েছে। এই নীতি অনুযায়ী প্রতিটি শ্রেক ছবি আগেরটার চেয়ে দ্বিগুন সংখ্যক রেন্ডার সময় নিবে। প্রতিটি ফ্রেমকে সে পদ্ধতিতে রঙ্গিন করে তোলা হয় সেই পদ্ধতিটাকে রেন্ডারিং বলে। পাশাপাশি দুটো শ্রেক মুভি দেখলে এর ফলটা বোঝা যাবে। খেয়াল করলে দেখা যাবে নতুন মুভিটির দৃশ্যগুলো আগেরটির তুলনায় অনেক বেশি সূক্ষ্ম এবং বাস্তবতার কাছাকাছি।

৫। ব্যবসায়িক সির্দ্ধান্েত সহায়তাঃ
graph
এ ক্ষেত্রটিতে ভিজ্যুয়াল কম্পিউটিং এর সবে মাত্র যাত্রা শুরু হলো, এখনও অনেকদূর যাওয়ার আছে। মানুষের ব্রেন এমনভাবে গঠিত হয়েছে যে এটি ছবির মাধ্যমে উপস্থাপিত তথ্যকে সহজে গ্রহন করতে পারে। সংখ্যা না গ্রাফ কোনটি খুব দ্রুত বোঝা যায়? ছবির মাধ্যমে উপস্থাপিত তথ্য উপাত্ত অন্য কথায় বলতে গেলে ভিজ্যুয়াল কম্পিউটিং দ্রুত এবং কার্যকরী সির্দ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থাপকদের অনেক সহায়তা দিতে পারে।

লেখাটা একটু টেকি হয়ে যাচ্ছে। আজ এ পর্যন্তই।

৪,৮২৭ বার দেখা হয়েছে

৩৮ টি মন্তব্য : “ভিজ্যুয়াল কম্পিউটিং: প্রযুক্তির আগামী মাইল ফলক”

  1. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    আপু ,অনেক দিন আগে বাতাসের জলীয় বাষ্পকে ঘনীভুত করে সেটা দিয়ে মনিটরের স্ক্রীনের কাজ চালানোর সম্ভাবনা নিয়ে ছোট একটা টেকি সংবাদ পড়েছিলাম-এ সম্পর্কে কিছু জানা থাকলে বলবেন কি?

    জবাব দিন
  2. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    আপু, কিছু টাইপিং মিস্টেক আছে, একটু ঠিক করে দিতে পারেন।
    লেখা ভাল লাগছে। আমি গতকাল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে মিচিও কাকু-র একটা লেকচার শুনছিলাম। খুব মজা পেয়েছি। ইউইটিউব লিংকটা দিলাম:
    http://www.youtube.com/watch?v=PW8rgKLPHMg

    জবাব দিন
  3. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    আপু প্রত্যেকটা বিষয় নিয়ে আলাদাভাবে লিখলে মনে হয় ভাল হতো । আমার কাজের ক্ষেত্র কিছুটা ব্যবসায়িক ষিদ্ধান্তের মাঝে পরে । আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি আগামীতে কি নিয়ে লিখবেন ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।