চিকিৎসা – (শেষ পর্ব)

dig1
[১] [২-৩] [৪] [৫-৬][৭-৮]
নয়
পরের মাসেই হিয়া, লাবনী, হাসান এই তিনজন কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। হাসান গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেল। ওরা উঠলো ওয়াপদার রেস্টুরেন্টে। হিয়ার বাবাই ঠিক করে দিলেন।
হাসানকে একাই রেখে সেদিন সন্ধ্যায় ওরা দুবান্ধবী সাগরতীরে ঘুরে বেড়ালো। একটা রেস্টুরেন্টে খেল এবং সেখানকার খোলা বারান্দায় সমুদ্রের শব্দ শুনতে শুনতে মাঝ রাত অব্দি গল্প করলো। হিয়া কয়েকবারই হাসানের কথা উল্লেখ করেছে। লাবনী তাতে সায় দেয়নি। আর ওদিকে হাসানও আপন মনে অরবিন্দ আদিগার দ্যা হোয়াইট টাইগার বইটা নিয়ে আপন মনে পড়ছিল। ওদের দু বান্ধবীর ব্যাপারে কোন মাথা ব্যথা নেই। হিয়া এই বইটার খুব নাম শুনেছে। পড়ার ইচ্ছেও ছিল। কিন্তু কোথায় পাবে বুঝে উঠতে পারেনি।
পরদিন সকালে কলকল কথা আর খিলখিল হাসির শব্দে লাবনীর ঘুম ভেঙ্গে গেল। বাইরে এসে দেখলো হাসান আর হিয়া দুজনে মিলে খুব উচ্ছসিত হয়ে গল্প করছে। লাবনী এর আগে হাসানকে কখনও কোন মেয়ের সাথে এতোটা সপ্রতিভ হয়ে কথা বলতে দেখেনি।
সে হাসান কণ্ঠস্বর শুনতে পেল,
-এই বইটাতে বলরাম চরিত্রটার মধ্যে দিয়ে ইন্ডিয়ার ধনী গরীবের মূল্যবোধের একটা সামঞ্জস্য ছবি তুলে ধরেছে।
-বলরামকে কি খুব আদর্শ বানাবার চেষ্ঠা করেছে?
-না। বইটা বলরামের চোখ দিয়ে দেখা। যতরকম খারাপ কাজ আছে তার কোনকিছু করতেই সে বাকী রাখেনি। আবার সে খুব ধূর্ত বুদ্ধিমান এবং সাম্প্রদায়িক। বুদ্ধি খাটিয়ে শেষ পর্যন্ত সমাজের উঁচু তলায় পৌছুতে পারেছিলো। এ ধরনের চরিত্র আমাদের দেশেও ভূঁরি ভূঁরি আছে।
হিয়া লাবনীকে দেখতে পেল। বলল,
-হিয়া তুই কখন উঠলি?
হিয়া খুব আয়েসী ভংগীতে বললো,
-এর মধ্যে তো আমাদের এক প্রস্ত চা খাওয়া হয়ে গেছে।
লাবনী ওদের মাঝে এসে বসলো। তারপর হাসানের দিকে তাকিয়ে বললো,
-তোমরা কি নিয়ে এতো গল্প করছিলে?
পাশ থেকে হিয়া উত্তর দিল,
-হাসান ভাই একটা বই পড়ছে। বইটা এবার বুকার প্রাইজ পেয়েছে। সেটা নিয়েই কথা বলছিলাম।
-ডাক্তার না হতেই তুই ব্যবসা বানিজ্য নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করেছিস?
-না বইটা তো বানিজ্যের উপর না। বুকার প্রাইজ তো সাহিত্যের উপর দেয়।
-হাসান তো সব সময় ব্যবসা বানিজ্যের উপর বই পড়ে। তাই না হাসান?
হাসান উঠে দাড়িয়ে বলল,
-সাগর পাড়ের খোলা বাতাসে ক্ষিদেটা বেড়ে গেছে। চল সবাই মিলে এখন ব্রেকফাস্ট করে ফেলি।

নাস্তা করে সব দুলাহাজরা সাফারী পার্কের দিকে রওনা দিল। ওখানে একটা অভয়ারন্যের ধারনায় গড়ে তোলা একটা প্রাকৃতিক চিড়িয়াখানা আছে যেখানে খোলা প্রান্তরে পশুপাখী সাপখোপ অবাধে বিচরন করছে। চিড়িয়াখানার ভেতর ওরা একটা বাস ট্যুর নিল। বাসের ড্রাইভার গাড়ি চালাতে চালাতে কোথায় কি কি আছে তা সুন্দর করে বলে যাচ্ছে। বাস এসে একটা ওয়াচ টাওয়ারের নীচে থামলো। টাওয়ারটা প্রায় দশতলার সমান। প্যাঁচানো সিড়ি উপরে উঠে গেছে। লাবনী কখনই এই দশতলা সিড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠবে না। শুধুমাত্র খোলা আকাশের নীচে দাড়িয়ে চারপাশের বনজংগল আর সাগর দেখার জন্য এতো কষ্ঠ তার পোষায় না। হাসান মাঝেমধ্যে ছবি তুলে। তাই হাসান উঠবে তা সে জানে। তবে যেটা সে জানতো না সেটা হচ্ছে তাকে অবাক করে দিয়ে হিয়াও হাসানের সাথে টাওয়ারের মাথায় উঠলো। প্রায় পৌনে এক ঘন্টা পর ওরা দুজন যখন নেমে আসছিলো তখন মনে হচ্ছিল দুজনেই প্রয়োজনের থেকে বেশি হাসি ঠাট্টা কথাবার্তা বলছে। লাবনী অবাক থেকে অবাকতর হচ্ছে। তার আট বছরের সংসার জীবনে সে তো কখনও হাসানের এই চেহারা দেখেনি।
এরপর হিয়ার পরামর্শে ইনানী বিচে যাওয়া হলো। লাবনী বললো,
-এতো কষ্ট করে এখানে আসার কি দরকার ছিল? হোটেলের কাছেই তো বিচ ছিল।
হিয়া বলে উঠলো,
-এই বিচের একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। এখানে বড় বড় কোরালের পাথর আছে। আচ্ছা হাসান ভাই সেন্ট মার্টিনের মতো এটাও কি প্রবালের তৈরী?
– সেন্ট মার্টিন পুরোপুরিই কোরাল দ্বীপ। সেখানে কোটি কোটি বছর ধরে প্রথমে চারপাশে কোরালের রিং তৈরী হয়েছে তারপর মধ্যে বালি মাটির পলেস্তরা পরতে পরতে দ্বীপটা তৈরী হয়েছে। সেটার মতো করে এটা গড়ে উঠেনি। ইনানী বীচ মূল ভুখন্ডের একটা অংশ। এই বিচের কিনার ঘেষে বড় বড় কোরালের বোলডার দেখা যায়। এই কোরালের গভীরতার উপর নির্ভর করে বলা যেতে পারে পুরো উখিয়া থানা বা শুধু ইনানি বিচ কোরালের উপর জেগে উঠেছিল কিনা।
-কোরাল দ্বীপের উপর তো চার্লস ডারউইনের একটা মতবাদ আছে। তাই না? কোন কোন মৃত আগ্নেয়গিরির চারপাশে কোরালের আস্তরন জমতে শুরু করেছিল। পরে বরফ যুগের পরে তা সমুদ্র পৃষ্টের নীচে চলে যায়। সূর্যের আলো পাবার জন্য সেই আস্তরন দের্ঘ্যে বাড়তে থাকে।
-সমসাময়িক আরেক বিজ্ঞানী কার্ল সেরেগালের আবার বিপরীত মতবাদ আছে। সেটা হলো একেবারে সমুদ্রের তলদেশ থেকেই এই কোরালের জন্ম। তবে সব কিছুই মতবাদ পর্যায়ে। এখনকার বিজ্ঞানীদের মতে কোন কোরাল রীফকে সাত আটশ ফিট গর্ত করলেই এর জন্মের আসল তথ্য বের করা সম্ভব।
হিয়ার পরামের্শ এই বীচে এসে এমনিতেই লাবনীর মেজাজ টং হয়ে ছিল। তার উপর এখন গায়ে পরে পরে হাসানের কাছে হিয়া নিজের আতলামী জাহির করছে। মেয়েটার এই ন্যাকামী একেবারে অসহ্য পর্যায়ে চলে যাচ্চে। লাবনী ওদের কথা মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে বললো,
-আমার মাথা ঘুরছে। আমি গাড়িতে গিয়ে বসলাম।
হিয়া আর হাসানও লাবনীকে অনুসরন করে গাড়িতে গিয়ে উঠলো। কক্সবাজারে এসে ওরা একজন ড্রাইভার নিয়েছিল। সবাই এসে বসার পর ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করলেন।
দুপুরে ওরা খাওয়ার জন্য ধানসিড়ি রেস্টুরেন্টে পৌছালো। লাবনী হাসানকে সব সময় চুপচাপ মাথা নিচু করে খেতে দেখেছে। কিন্তু এখন হাসানকে বেশ প্রগলভ লাগছে। খেতে বসেও হিয়া আর হাসানের আতলামী মার্কা কথাবার্তা বন্ধ হলো না। ওরা যেন লাবনীর অস্তিত্ব পুরোপুরিই ভুলে গেল। এর আগে লাবনী কেয়ার কাছে এই রেস্টুরেন্টের খাওয়ার খুব সুনাম শুনেছিল। অতুল আর কেয়া পালিয়ে বিয়ে করার পর একমাস কক্সবাজারে এসে ছিল। কিন্তু লাবনী এখন এখানে খাওয়ার কোন স্বাদই পাচ্ছিল না।
খাওয়া শেষে ওরা দু বান্ধবী রেস্টুরেন্টের বাইরে দাড়িয়ে ড্রাইভারের জন্য অপেক্ষা করছিলো। বিল মিটিয়ে হাসান ওদের পাশে এসে দাড়াল। লাবনী হিয়ার পায়ের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করেই বলে উঠলো,
-তুমি হিল জুতো পরে এতোক্ষন ঘোরাঘুরি করলে? তাইতো বলি আজকে তোমাকে একটু লম্বা লাগছে কেন? এমনিতে তো তুমি আমার কান পর্যন্তও পৌছাও না।
কথাটা বলে আড় চোখে একটু হাসানের দিকে তাকিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিল যে তার স্বামী সেটা শুনেছে কিনা। আরো একটু নিশ্চিত হবার জন্য সে এবার বলে উঠলো,
-তুমি ফাউন্ডেশন এতো কড়া করে লাগিয়েছো কেন? তোমার মুখটা প্লাস্টিকের মতো নিস্প্রাণ লাগছে।
কথাটা বলে লাবনী খুব আত্মতৃপ্তি বোধ করলো। হিয়ার কথার তোড়ে হাসান বোধহয় তার বৌয়ের চেহারাটাই ভুলে গেছে। এখন দুজনের দিকে তাকিয়ে একটু তুলনা করে নিক। যেই হিয়াকে দেখে হাসান অতি বিগলিত হয়ে গদগদ করছে, সে একটু দেখুক তার বৌয়ের পাশে হিয়ার দাড়ানোর যোগ্য আছে কিনা? এক তার বর ছাড়া আশেপাশের কেউ তো হিয়ার দিকে একবার তাকিয়েও দেখছে না। সবাই লাবনীর দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে যেন সে একজন বড় সড় কোন তারকা।
বাংলোর দিকে যাবার পথে লাবনীর মনে হলো সে খুব মোক্ষম বাণই মারতে পেরেছে। কারণ কেউ কোন কথা বলছে না। গাড়িতে শুনশান নিরবতা। সে পাশে তাকিয়ে দেখলো হিয়া প্রায় আধো ঘুমে ধরাশায়ী। সামনের সীটে ড্রাইভারের পাশে হাসান তো পুরোপুরিই ঘুমন্ত। লাবনীর মনে একটু সন্দেহ জাগলো ওরা আসলে দুজন পরাক্রান্ত নাকি পরিস্রান্ত?

বাংলোতে ফিরে আসার পর পড়ন্ত বিকেলের দিকে লাবনীর চোখ যখন প্রায় ঘুমে আচ্ছন্ন তখন সে দেখতে পেল হাসান একটা রং চংএ টি শার্ট আর জিনসের প্যান্ট পরে বাইরে যাবার জন্য প্রস্তুত। কেয়ারা সবাই হাসানকে বুড়ো বলাতে সে সময়টাতে লাবনী দোকানে গিয়ে নিজের হাতে কিছু রং চং এ পোষাক কিনেছিল যেগুলো পরলে হাসানকে অল্পবয়সী লাগবে। কিন্তু কখনও সে হাসানকে এসব পরাতে পারেনি। এখানে আসার আগে হাসানকে পরানোর শেষ চেষ্ঠা হিসেবে ব্যাগে কিছু পোষাক ঢুকিয়েছিল। অথচ এখন কিছুই বলতে হলো না নিজে নিজেই কাপরগুলো পরে বাইরে যাবার জন্য প্রস্তুত। লাবনী ঘুম জড়ানো স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
-তোমরা তো গাড়িতে সব কুম্ভকর্ন হয়ে ঘুমালে, আমার ঘুম পাচ্ছে। এখন বাইরে বেড়োতে পারব না।
-কি বলো কক্সবাজার এসে সূর্যাস্ত না দেখলে হয়? অসুবিধা নেই তুমি ঘুমোও। আমি একটু বেড়িয়ে আসি।
এই কথা শুনে লাবনীর চোখের ঘুম বুদবুদের মতো উরে গেল। হাসান বলে কি? গতকালও তো হাসান এসময়টা কি এক বাঘ ভাল্লুকের বই নিয়ে বিভোর ছিল, আজ হঠাৎ করে তার হলো কি?
লাবনী এক লাফে বিছানা থেকে উঠে দাড়াল। বলল,
-আমিও যাচ্ছি।
ওরা রুম থেকে বেড়িয়ে বারান্দায় এসে দেখতে পেল হিয়া যাওয়ার জন্য একেবারে প্রস্তুত হয়ে সেখানে বসে আছে। লাবনীর মাথায় হঠাৎ খেলে গেল ও যদি এখন বাইরে না বেরুতো তাহলে কি হাসান একা একাই হিয়ার সাথে বেড়িয়ে পরতো? এরপর সে আর সূযার্স্ত, পড়ন্ত আলোর সমুদ্র সৈকত, বালির উপর নকসাকারে পরে থাকা শামুক ঝিনুক, টুরিস্টদের কোলাহল, পায়ের কাছে ভেঙ্গে পরা ঢেউদের ফেনিল পরিনতি এসব কিছুই আর খেয়াল করলো না। তবে হিয়া যে ঝিনুক মার্কেট থেকে শামুকের খোলসের উপর ‘এইচ‘ আদ্রোক্ষর লিখিয়ে নিল তা চোখ এড়িয়ে গেল না।
হাস্যোজ্জ্বল হাসান আর হিয়ার পাশে পাশে গোমরা মুখো লাবনী বাংলোর দিকে ফিরতে ফিরতে ভাবছিলো তার রবোট স্বামী যথারীতি সাড়ে নয়টার মধ্যে ঘুমিয়ে গেলে সে আজকে রাতে হিয়াকে কিছু কড়া কথা শুনাবে। মনে মনে কথাগুলো গুছিয়ে নিচ্ছিল।
রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করতে করতে সোয়া নয়টা বেজে গেল। এক কাপ কফি হাতে লাবনী বারান্দায় এসে একটা বেতের চেয়ার টেনে নিয়ে সেখানটায় বসে পরলো। হিয়া আগে থেকেই সেখানে বসে ছিল। কিছুক্ষন পর হাসানও ওদের সাথে যোগ দিল। লাবনী বলে উঠলো,
-কি ব্যাপার রোবটা মানুষ এখন না তোমার ঘুমের সময়?
হিয়া হাসতে হাসতে বলল,
-ওনার সিপিইউতে ভাইরাস ধরেছে।
হাসান বারান্দার রেলিংএর কাছে গিয়ে মাথা বাড়িয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
-আজকে আকাশটা খুব পরিস্কার। চাঁদও তার কৃষ-পক্ষে আছে। এই হেমন্েতর সময়ে ওরিয়নকে সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে।
লাবনী অবাক হয়ে বলল,
-ওরিয়ন কে?
হিয়া উত্তর দিল,
-এটা উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে পরিচিত কনস্টেলেশন মানে নক্ষত্রপুঞ্জ।
হাসান বিভোর হয়ে আকাশের তারা দেখছিলো। ও সবাইকে বেশ উত্তেজিত হয়ে ডাকলো,
-এদিকে আস তোমরা। ওই যে দেখ ওরিয়ন। পর পর তিনটা উজ্জ্বল তারা। কাঁধ, হাটু আর বেলট। এই তিনটা তারা একটা রেখা কল্পনা করো। তারপর আর বাকী তারা মিলিয়ে ভাবার চেষ্টা করো যে শিকারী ওরিয়ন বেলটের নীচে তরোয়াল ঝুলিয়ে দাড়িয়ে আছে। দেখতে পারছো তোমরা?
লাবনী মাথামুন্ড কিছুই বুঝলো না। এর কাছে সাব তারাই আকাশে গায়ে সমানভাবে ছড়ানো ছিটানো মনে হলো। কি না কি বলে আবার হাসির খোরাক তৈরী করে ফেলে তাই এখন চুপ করে থাকাই শ্রেয় মনে করলো। তবে হিয়াকেও হাসানের মতো উত্তেজিত মনে হলো।
-হ্যা হ্যা এখন স্পষ্ঠ বুঝা যাচ্ছে। তরোয়ালের মাঝের তারাটাকে সবচেয়ে উজ্জ্বল মনে হচ্ছে।
-ওটা কিন্তু তারা না। ওটার নাম হচ্ছে ওরিয়ন নেবুলা। ওখানে নতুন তারা জন্মে।
-আরেক কথাও বলা যায় ডেলিভারী রুম।
-ডাক্তার তো ডাক্তারের মতো ভাববে। ওরিয়নের পেছনে স্করপিয়াস থাকার কথা। পৃথিবীর আহি¡ক গতির কারণে মনে হয় যে স্করপিয়াস ওরিয়নকে ধাওয়া করছে এবং প্রবাদ আছে যে এক সময় তাকে মেরেও ফেলে।
-আচ্ছা মিল্কিওয়ের অর্ধবৃত্তটা এখন বোঝা যাবে না?
-সেটা বুঝতে হলে অনেক খোলা জায়গা থেকে বিস্তীর্ন আকাশ দেখা চাই। তবে খালি চোখে যত নক্ষত্র দেখা যায় বা যত গ্যালাক্সি আছে তার সবই একটা স্পেয়ারের উপর।
-ওটার নাম বোধহয় সেলেসটিয়াল স্পেয়ার বলে। তাই না?
হাসান আর হিয়া তারা নক্ষত্র নিয়ে কথা চালিয়েই যেতে থাকলো। একটা সময়ের পরে লাবনীর আর ধৈর্য্যে কুলালো না। সে এটা বেশ বুঝতে পারলো পরিস্থিতি আর তার নিয়ন্ত্রনে নেই। আজকে দুপুরের মতো আর বোকামীও সে করবে না। তখন হিয়াকে ছোট করতে গিয়ে আসলে সে নিজেকেই ছোট করেছে। ঘুমানোর কথা বলে বারান্দা থেকে সরে গিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো। দরজা বন্ধ করে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকালো। তার নিজেকে এর আগে কখনও এতো অসুন্দর, অপাংত্বেয় আর এতো অবাঞ্চিত মনে হয়নি। অপরুপ সৌন্দর্য আর রুচিশীল মননের কারণে তার নিজের ভেতরে যে দর্প ছিল, যে দর্পের উত্তাপে কখনই যে হাসানকে সে তার উপযুক্ত মনে করেনি, আজ সেই হাসানকেই তার ধরাছোয়ার বাইরে মনে হচ্ছে। সে নিজেই আসলে হাসানের উপযুক্ত না। মানুষের বাইরের রুপটার থেকে ভেতরের রুপটা যে কতটা শক্তিশালী তা হিয়াকে নিয়ে এখানে না আসলে সেটা ও বুঝতে পারতো না। নতুনভাবে হাসানকে আবিস্কারের পর লাবনীর মনে তার প্রতি এখন এক অসম্ভব ভালবাসার জোয়ার তৈরী হচ্ছে। তবে সেইসাথে এতোদিনকার সুখ দুঃখের সঙ্গী হিয়ার প্রতি এক ধরনের ক্ষোভ তৈরী হচ্ছে। আসলে ক্ষোভ না জেদ। লাবনী মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো আগামী বছরের মধ্যে যে করেই হোক সে ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষাটা দিয়ে দিবে। সে কোন অংশেই হিয়ার থেকে কম থাকবে না।
কক্সবাজারে ওদের সাতদিন ঘোরার পরিকল্পনা ছিল। কাপুনি দিয়ে লাবনীর প্রচন্ড জ্বর আসাতে একদিন পরেই ওরা ঢাকায় চলে আসলো।

দশ
মেডিকেলের ক্লাস শুরু হওয়ার পর হিয়া আবার ব্যস্ত হয়ে পরলো। লাবনীর সাথে যোগাযোগটা একেবারেই কমে গেল। অবশ্য এর কারণটা লাবনী নিজেই। আগে যেখানে প্রায় প্রতিদিনই লাবনী হিয়ার জন্য অপেক্ষা করে থাকতো, এখন সিড়িতে দেখা হলেও এড়িয়ে যায়। এই তো সেদিনই হিয়া ঘরে ঢুকছিল আর লাবনী চারতলায় উঠছিল। হাসি মুখে হিয়া লাবনীর কুশলবার্তা জিজ্ঞেস করলো। কিছুটা দায়সারা গোছের উত্তর দিয়ে লাবনী তড়িঘরি করে চারতলায় উঠে গেল। তারই আধঘন্টা পরে আবার যখন হিয়া ছাদে যাচ্ছিল তখন হাসান আর লাবনী কোথাও যাবার প্রস্তুতি নিয়ে নিচে নামছিল। হাসান হিয়াকে দেখে বলল,
-ও তুমি এসে গেছ। লাবনী তো কিছুক্ষন আগে তোমার খোঁজ করেছিলো তখন বোধহয় কলেজে ছিলে।
-কেন হাসান ভাই কোন বিশেষ কারণ?
-না আমরা আইõিম খেতে যাচ্ছিলাম। লাবনীকে বললাম তোমাকেও সাথে নিতে। এই আর কি?
হিয়া আড়চোখে লাবনীর দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর মুখটা একদম চুপসে আছে। মনে মনে ভাবলো যথেষ্ঠ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, আর না।
-হ্যা কিছুক্ষন আগেই আসলাম। তবে হাসান ভাই এখন যেতে পারবো না। কালকে একটা পরীক্ষা আছে।

বেশ কয়েকমাস পর লাবনী হিয়াদের বাসায় আসলো। হাস্যোজল মুখ, হাতে মিষ্টি। ও ইন্টারমেডিয়েট পরীক্ষায় প্রথম ডিভিশনে পাশ করেছে। হাসান বলে দিয়েছে হিয়াদের বাসায় এক প্যাকেট মিস্টি পাঠাতে। তারও ছয় মাস পর ওরা ধানমন্ডিতে নিজেদের এ্যপার্টমেন্টে উঠে গেল।

হিয়া সুজনের সাথে নিজের বিয়ের কার্ড হাতে নিয়ে লাবনীর মেয়ের এক বছরের জন্মদিনের দাওয়াত খেতে গেল। একটা ক্লাব সেন্টারে ওরা বিশাল আয়োজন করেছে। ছোট্ট পুতলী মেয়েটাকে লাবনী একেবারে রাজকন্যার মতো সাজিয়েছে। মেয়েটাও মায়ের মতো ফ্যাশন সচেতন হয়েছে। এক বছরের জন্মদিনে সাধারণত বাচ্চারা খুব বিরক্ত থাকে। মেয়েটার চেহারায় বিরক্তর কোন চিহ¡তো নেইই বরং সারা ক্লাব জুড়ে এখানে সেখানে ছোটাছুটি করছে। কেক কাটার সময় হিয়া ওর ডিজিটাল ক্যামেরায় মাঝখানে মেয়ে আর দুপাশে গর্বিত বাবা মার ছবি ফ্রেম বদ্ধ করলো। একটা সুখী পরিবারের ছবি। অথচ প্রায় তিন বছর আগে লাবনীদের সাথে কক্সবাজারে যাওয়ার আগে হিয়া নিজেও এতোটা নিশ্চিত ছিল না যে শেষ পর্যন্ত সব কিছুই তার পরিকল্পনা মাফিক হবে। লাবনী নিশ্চয় নিজেও সেটা বুঝেছিল। নইলে হিয়াকে সে এতোটা উৎসাহ নিয়ে জানাতো না যে সে মেয়ের নাম রেখেছে টিয়া।

পাদটীকাঃ (ঈসপকে অনুসরন করার চেষ্ঠা করছি) …আশেপাশের মানুষদের বদল করতে চাইলে আসলে নিজেকেই প্রথমে বদলানো দরকার। কি নেই তার থেকে কি আছে এভাবে যদি দেখার চেষ্ঠা করি তাহলে নিজেদের সমস্যা অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব।

২,১৯০ বার দেখা হয়েছে

৭১ টি মন্তব্য : “চিকিৎসা – (শেষ পর্ব)”

  1. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    নাহ আমার পছন্দ হইলনা শেষটা।লাবনী চিটেড হার গুড-গাই হাসবেন্ড।তার উপযুক্ত শাস্তি আশা করছিলাম।হ্যাপি এন্ডিং হইলেও হাসানকে আমার এখনো ভেড়া বলেই মনে হচ্ছে।লাবনী হ্যাড অল হার ফান এন্ড গট আওয়ে উইথ দ্যাট-শেষে তো জিতল সে-ই!যাই হোক,সব কিছু যে আমার পছন্দ মত হবে এইটাও তো ঠিক না।

    লেখা দুর্দান্ত হয়েছে আপু,বিশেষ করে কক্সবাজারের বর্ণনা।চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম সবকিছু।

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      ভাইয়া তোমার বয়স কম তাই এখনও রক্ত গরম - which is really good and I hope that you will be the same in rest of your life.
      কিন্তু এটা একটা রিয়েলিটি যে মাঝে মধ্যে একটু আধটু ছাড় দিতে হয়। কম্প্রোমাইজ না করলে সমস্যা আরো বাড়ে।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
      • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

        তা কি আর জানিনা আপু!কত বড় বড় ছাড় দিতে হয় মানুষকে পরিস্থিতির চাপে পড়ে...আমার নিজের কপালে কি আছে তা-ই কি জানি! এই রকম ছাড় দেওয়ার ঘটনা দুই একটা চোখেও পড়ছে।পরিস্থিতি কাকে কি করতে বাধ্য করে তা তো জানি না কিন্তু এটুকু জানি যে অন্যায় করে,কাউকে ঠকিয়ে পার পেয়ে যাওয়াটা ঠিক না।হাসানের এই ক্ষমা করে দেওয়াটা তাই আমার কাছে শুধু অন্যায়-ই না,একই সাথে দুনিয়ার সব ভাল মেয়েদের(যারা লাবনীর মত চরিত্রহীন না) প্রতি অবিচার আর খারাপদের "অন্যায় করেও পার পাওয়া যায়" মনোভাবের প্রতি উস্কানি।

        আবারো বলি আপু,লেখাটা মনে অনেক দাগ কেটেছে বলেই মাথামুন্ডু এত্তকিছু বললাম।রাগ করবেন না প্লিজ।

        জবাব দিন
          • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

            মাসরুফ, হিলারী কেন ক্লিনটনকে ছাড় দিয়েছিলো? মানুষ বোধহয় ছাড় দিলে আর না দিলে কি পেতে পারে সে হিসেবটা করে দেখে - তারপর লাভের দিকেই যায়।

            তবে এই কাহিনীটার যেহেতু একটা বাস্তব ভিত্তি আছে - আমারও প্রশ্ন হতো কেন হাসান ছাড় দিচ্ছে? একেক সময় মনে হতো হাসান লাবনীকে আসলেও খুব ভালবাসে কিম্বা লাবনীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করাতে নিজেকে কিছুটা অপঅরাধী বলে মনে করতো।


            “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
            ― Mahatma Gandhi

            জবাব দিন
            • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

              আপু আমেরিকার মত ফ্রি মিক্সিং এর দেশে ক্লিন্টনের অপরাধ রাস্তায় গাড়ি চালানোর সময় ট্রাফিক আইন ভংগ করার মতই সাধারণ-এইটা আমার কথা না ক্লিন্টনের পক্ষের আইনজীবীর কথা।আর আমি এখনো মনে করি ক্লিনটনের এই রকম অপকর্মকে ছাড় দেয়ার মাধ্যমে হিলারী সারা পৃথিবীর বিশ্বস্ত নারীদের অপমান করেছে।হ্যাঁ,লাভের কথা যদি বলেন তাহলে পার্থিব লাভ খারাপ হয়নাই,স্বামীর পলিটিকাল প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে(সেই সাথে নিজের যোগ্যতা তো আছেই) হিলারী আপা এখন সেক্রেটারি অফ স্টেটস।পরে কি হবে জানি না কিন্তু অন্তত এই মুহূর্তে আমার পক্ষে হিলারী যেইটা করছে সেইটা করা সম্ভব না-আমার স্ত্রী ওই কাজ করলে পার্থিব লাভের খ্যাতা পুড়ি,আই উইল নট বি এবল টু লিভ উইথ হার।

              জবাব দিন
  2. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    শান্তা : হেপি অ্যান্ডিং। লাবনী শেষ পর্যন্ত তার স্বামীর কাছেই ফিরলো। এটাই বোধ হয় তোমার গল্পের নামেরও স্বার্থকতা। ভালো লেগেছে। তবে মুগ্ধ করেনি। এর আগেও বোধহয় একটা পর্বে এরকম বলেছিলাম। হিয়া চরিত্রটা কেন জানি আমার কাছে আরোপিত মনে হচ্ছে। শিরোনামের কারণেই কিনা! শুরু থকেই একটা মেডিক্যাল ছাত্রীর চরিত্র গল্পে থেকেছে বলেই হয়তো। হিয়া যদি অন্যভাবে গল্পে ঢুকতো, বা কক্সবাজারেই একটা মোড় নিয়ে; কেমন হতো? নিজের মত চাপিয়ে দিচ্ছি না। তবে গল্পের ভেতরের গল্পগুলো আকর্ষনীয় লেগেছে।

    আমার মনে হয়, তুমি লিখতে থাকলে ভালো করবে। আর লিখে সেটাকে ঘষামাজা করলে আরো ভালো।

    ভালো থাকো, লিখতে থাকো।

    অফটপিক : মাস্ফ্যুর ম্যানহুড আর গেল না! সুন্দরী বউকে বগলদাবা করে রাখতেই হবে? ;;; ;;; ;;;


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  3. তানভীর (৯৪-০০)

    হ্যাপি এন্ডিং সবসময়ই আমার ভালো লেগেছে।

    হয়ত চরিত্রগুলো ন্যায়বিচার পায়নি, তারপরও সবাই শেষে সুখে আছে ভাবতে ভালো লাগে।

    আপু, আপনার নতুন লেখাগুলো এখন থেকে এখানেই শেয়ার করবেন, আগে অন্য কোথাও প্রকাশ করলে একটু কষ্ট পাব। কিছুটা অধিকারবোধ নিয়ে হয়তো বলে ফেললাম, কিন্তু বোনদের কাছে তো সবকিছুই বলা যায়। 🙂

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      তানভীর, তোমার দাবীটা আমার কাছে শুনতে ভালো লাগলো। এই ব্লগের নাম জানার আগে আমি অন্য ব্লগে এই লেখাটা দিয়েছিলাম। তোমাদেরকে এখন শুধু বেশ কাছের মানুষই মনে হয় না সেই সাথে বেশ বোদ্ধা পাঠক লাগে।
      বেশ কিছুদিন আমার বেশ শূন্যতার মধ্যে গেছে - বন্ধু শুন্যতা। আমার আশেপাশের সমবয়সীরা (দূরের কারো সাথে যোগাযোগ তেমন নেই) সংসারের বেড়াজালে আটকে আস্তে আস্তে নিজেদের স্বপ্ন হারিয়ে ফেলেছে। সেখানে আমি যখন স্বপ্নের কথা বলি তখন তা শুনতে বড় বেমানান লাগে। বেগম রোকেয়ার রচনাবলী পড়ে মনে হতো কি করে সে যুগ আর এ যুগের মেয়েদের অবস্তা একেবারে একই রকম হয়!
      যাক বাবা এই ব্লগ কালচারটা আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। এখানে আমি যা ইচ্ছা বলতে পারি, লিখতে পারি। ভাগ্যগুনে তোমার মতো দু-চারজন দাবীওয়ালা পেয়ে যাই যারা আমার স্বপ্নকে আরো বাড়িয়ে দেয়।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
  4. আমি লাস্টের টাশকিটা একটু ধরতে পারি নাই। শেষ হবার পরেই চিকিৎসা নামটা কেন হয়েছে ধরতে পারলাম।

    ভাল লাগছে আপু। গল্প বলেই। তবে বাস্তব হইলে হাসান লোকটার জন্য দুঃখ প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই বলার থাকত না।

    জবাব দিন
  5. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    আপু আবারো বলতেছি-এই লেখাটা দাগ বেশি কাটছে বইলাই এত ভ্যাজর ভ্যাজর করতেছি-মেজাজ খারাপ হইলে ঠাডাইয়া একটা থাবড়া দিয়া থামায় দিয়েন।

    ন্যায় অন্যায় বোধ একেক জনের কাছে একেক রকম-তাই আমার সাথে হাসানের মিলে যাবে এইটা ধরে নেয়াটা ঠিক না-আমি ঠিক এই প্রেজুডিসের শিকার।আসল কথা হইল,মিয়া বিবির যদি সমস্যা না থাকে তাইলে আমারো সমস্যা থাকা ঠিক না।

    তাড়াতাড়ি আরেকটা গল্প দ্যান যাতে ঐটাতেও আপনেকে এইভাবে জ্বালাইতে পারি।

    জবাব দিন
  6. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    হিয়াকে :salute:
    চাইলে আপ্নেও সেটা নিতে পারেন 😛

    একটু পাকামি করি আপু। আপনার এই গল্পটায একজন গল্পকারের উঠে আসা আছে। প্রথম পর্ব মোটামুিট ভােব শুরু করছেন..মাঝখানে কাঁচা লেখাই মনে হয়েছিল কিন্তু শেষে এসে অসাধারণ লিখছেন। ৫ না দিযে থাকতে পারলাম না।

    এসব হাল্কা গল্প উপন্যাস বাদ দিয়ে যাও গিয়ে রায়হানের “এলাম আমরা কিভাবে” পড়ো গিয়ে

    আপু এই বান্দাও হালকা গল্প উপন্যাস ই লিখে ;)) ;))


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  7. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    শান্তাপু

    এক বসায় পুরোটা শেষ করলাম।

    শেষটা পূর্বানুমেয় ছিল।
    হিয়া চরিত্রটা যে এরকমই হবে এটা পড়তে পড়তে আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। সেই হিসেবে খুব বেশি নতুনত্ব নেই গল্পে।

    তবে আপনার বর্ণণা চমৎকার। গল্পের ডিটেইলসগুলি খুব সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন।

    লাবনী চরিত্রহী্না কিনা, হাসানকে সমবেদনা জানানো উচিত কিনা সেসব বিতর্কে যাবো না। এটা নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে দেখছি। শুধু এইটুকুই বলি, আমার কাছে কিন্তু দুজনের কেউই দোষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর মতো না। ওইরকম পরস্থিতিতে এই দু'টো চরিত্রের অমন আচরণ খুব অস্বাভাবিক লাগেনি। এ সব কিছু মিলিয়েই তো জীবন।

    সব মিলিয়ে লেখা ভালো লেগেছে। বেশ ভালো।
    কিছু সমালোচনা করলাম সত্যি, কিন্তু আমি জানি আমাকে লিখতে বললে আমি আপনার মতো কখনোই লিখতে পারবো না।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  8. রবিন (৯৪-০০/ককক)

    আপু,

    আমি খুব ডজার প্রজাতির (কাইয়ূম ভাই মনে হয় ভালো বলতে পারবে এই ব্যাপারে, উনি আরো বড় ডজার :grr: )। আমি সাধারনত যেকোনো লেখায় খুব শর্ট কাটে কমেন্ট করি। বা ইমো দিয়ে সেরে ফেলি। কিন্তু এতে আবার মোটামুটি সব লেখাতেই কমেন্ট করা হয়। আপনার এই লেখাটায় প্রথম থেকেই কেনো জানি মনে হচ্ছিলো পুরোটা শেষ করে তারপর করবো। তাই এতোদিন কিছুই বলা হয় নাই।

    জানি না, কমেন্ট করাটা কেমন হবে, নিজে একদমই ভালো লিখি না। তাই কমেন্ট করা উচিত কি না জানি না। আপনার গল্পের মাঝখানে খুবই জোস ছিলো। কিন্তু ফিনিশিংটা জানি কেমন লাগলো। একটু মনে হয় অন্যরকম হতে পারতো। হিয়া চরিত্রটা মনে হয় আরো কিছু কন্ট্রিবিউট করতে পারতো গল্পে। তবে লাবনীর পরিস্তিতি খুবই বাস্তব এবং সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে গল্পে। হাসানের চিন্তাধারা তেমন প্রকাশ পায় নাই গল্পে।ঊনার স্ট্যান্ড টা জানলে মনে হয় পাঠকের আরো ক্লিয়ার হতো।

    মাস্ফু, কিছু কিছু জিনিষ মনে হয় কম্প্রোমাইজ করতে হয়। হয়তো এখন না বুঝলেও কিছুদিন পরে বুঝতে পারবি।
    অনেক কিছু লিখে ফেললাম। মাফ কইরা দিয়েন। তবে আপনার লেখার স্টাইল কঠিন।

    জবাব দিন
  9. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    মাস্ফুর কথায় একমত নই।
    লাবনি হয়ত ভুল করেছে তবে তার পিছনে হাসানের ও দোষ আছে। বিয়ে করে কিছুদিন চলে গেলেই বৌ এর প্রতি ছেলেদের যে অবহেলা চলে আসে তার হয়ত একটা বাস্তব সমস্যা এটি। ভালবাসা অনেক সময় হয়ত এমনি চলে আসে তবে এমনি এমনি সবসময় একই রকম থাকে না। ভালবাসা যতটা না স্বর্গীয় তারচেয়ে বেশি প্র্যাকটিস এর ব্যাপার। তাই কিছুদিন পর পরই প্রিয়জনকে ভালবাসি এই বোধ দেওয়া অনেক বেশি জরুরী বলে আমি মনে করি। মানুষ মাত্রই ইম্পর্ট্যান্স চায় ।
    আপু গল্প হিসেবে নয় বরং আমাদের চারপাশের লোক হিসেবেই হাসান,লাবনী কে ধরে নিয়ে এবং তাদের শেষের পরিণতিতে খুশি।

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      আমারও মন্তব্যগুলো খুব ভালো লেগেছে। গত কয়েকবছর দেশে গিয়ে তোমাদের জেনারেশনের যাদের দেখেছিলাম তাদের দেখে ধারনা হয়েছিল এরা বোধহয় খালি চ্যাট করে আর হেড ফোন কানে দিয়ে রাখে। কিন্তু এখানে এসে বুঝলাম সবসময়ই সবরকমের মানুষের আনাগোনা থাকে।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
  10. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    মন্তব্য করতে একটু দেরি হয়ে গেলো।
    পুরো লেখাটা পড়লাম।
    লেখনী অসাধারণ , গল্পের বিল্ড আপ দারুণ। তবে কিছু কিছু জায়গায় পড়তে গিয়ে বাঁধায় পড়েছি। যেমন হাসানের চরিত্রটা যখন পড়ছিলাম গল্পের প্রথমভাগে তারমাঝে "আন্নাকারেনিনা"র কারেনিন এর ছোয়া কিছুটা ছিলো। পরবর্তীতে তার রূপান্তর অদ্ভুত ঠেকলো। অবশ্য এটা যদি লাবনীর চোখে দেখা হাসানের চেহারা হয় তাহলে ভুল নেই তবে সেক্ষেত্রে গল্পের কথককে লাবনীর সাথে নেমে গিয়ে দেখলে জিনিসটা আরো সুন্দরভাবে বুঝা যেত- যেহেতু গল্পটি তৃতীয় কারো কথনে বলা হয়েছে, সেই তৃতীয় ব্যাক্তির অবস্থানগত বিচ্যুতিগুলো পরিস্কার করাটা ভালো হতো মনে হয়। গল্পের কাহিনী নিয়ে আরো কিছু বলতাম কিন্তু বাস্তব শুনে কিছুটা থমকে গেলাম। আমার নিজের বিশ্বাস হলো, ভালোবাসা নামক জিনিসটা মনে হয় বৈবাহিক জীবনের শুরুতে একসাথে থাকার বড় টনিক হিসাবে কাজ করে কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সে ভালোবাসা ছড়িয়ে যায় কিংবা হ্রাস পায় কিন্তু জগতের অন্য সব বন্ধনের টানে মানব মানবীরা চিরকাল পাশাপাশি থেকে যায়। আপনার গল্পে মানব মানবীর মাঝেকার চিন্তাভাবনার বৈপরীত্যের যে দিকটা উঠে এসেছে সেটা অত্যন্ত বাস্তব এবং আমার মনে হয় এই সমসয়ার বীজ অনেক গভীরে প্রথিত। কিন্তু তারপরেও তারা থেকে যায় একসাথে -- সেটা নানা কারণে। যে বিশেষ ঘটনা দিয়ে এটাকে আনা হয়েছে সেটা চমৎকার। কলারন মানুষ তখনই তার প্রাপ্তিকে মূল্যায়ন করতে পারে যখন তাকে হারাবার সম্ভাবনা জাগে আর কিছু সময় সেই প্রাপ্তিগুলোকে খুব কাছে থেকে দেখিয়ে দেয় যেমনটি গল্পের কক্সবাজারের ঘটনা গুলোতে এসেছে। তবে তারপরেও তীব্র বেরসিক হাসানের হঠাৎ রসিক হয়ে ঠেকাটা একটু সমস্যা করলো। সুমন - লাবনীর ব্যাপারটাকে লাবনীর দিক থেকে আমার কাছে খুব বেশি অপরাধপ্রবন কিছু মনে হয়নি। তবে হাসান যদি বুঝতে পারে তবে তার এতটা নির্বিকার থাকাটা অস্বাভাবিক ঠেকে যদি সে কারেনিনের মত না হয় ( সেটা গল্পের শেষে দেখে গেল)।
    হিয়ার চরিত্রের ডেভেলাপমেন্টের দিকগুলোও আরো ভালো করা যেত। হিয়া পুরো গল্পের কাহিনীর সাথে মিশিয়ে দেয়া যেত। শুরুতে তার উপস্থিতির পর তার দীর্ঘ অনুপস্থিতি তারপরে আবার হঠাৎ করেই একেবারে দেবদূতের মাঝে আবির্ভাব - এটাকে আরো বাস্তব করে তোলা যেত কি?? ব্যাক্তিগত ভাবে আ,মি ফ্যাক্ট আর ফিকশনের মিশেল গল্পে দেখতে চাই বলেই বললাম। হিয়ার চরিত্রটা আপনার মানস চরিত্র জানার পর মনে হয়েছে হিয়ার দিক থেকে গল্পে আপনি ফিকশনের চেয়ে ফ্যাক্ট দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয়েছেন।
    আপনার গল্পের সবচেয়ে মজার দিক হলো গল্পের মাঝে চমৎকার কিছু শাখা প্রশাখা তৈরি এবং বর্ণনাশৈলীর অসাধারণত্ব।
    আপনার গল্পটা ভালো লেগেছে। আরো গল্পের প্রত্যাশায় রইলাম। শুভেচ্ছা রইলো আপু।

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      ধন্যবাদ এতো সুন্দর বিশ্লেষনের জন্য। আসলে এটাকে আমি গল্পের খড়সা বলবো। আরো বিস্তারিতভাবে লেখার ইচ্ছে আছে।
      আমাদের সমাজে অনেককেই হয়তো বিয়ে ইন্সটিটিউশনের আওতায় সারাজীবন শুধু পাশাপাশি থেকে যেতে হয়। তবে নিজেদের প্যারাডাইমের কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে নিরস সম্পর্ককে সরস করা সম্ভব। লাবনীদের মতো ভালন্যারেবল চরিত্রগুলো সমাজে একা চলতে গেলে আরো বিপদে পরে। এক্ষেত্রে নিজস্ব ভূবন তৈরী করে নেওয়াটাই উত্তম। আর সবকিছুতে আমাদের সুখ দুঃখের জন্য পার্টনারের উপর নির্ভর করতে হবে কেন? প্রতিটা মানুষেরই জীবন আলাদা - কিছু জায়গায় তারা এক হয়। পরে গল্পটা বড় করলে এই দিকটা তুলে ধরবো।
      সামনে কিছু পরিকল্পনা আছে। সেটা নিয়ে কিছুদিন ব্যস্ত থাকতে হবে। তবে ব্লগে ঢু মারা হবে নিয়মিত - না লিখলেও কারন কাজের সূত্রে আমাকে তো প্রায়ই অনলাইন থাকতে হয়।
      ভালো থেকো।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
  11. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    প্রথমটার মত এত ভালো লাগেনি। মোটামুটি মার্কা ভালো লেগেছে।

    লাবনীর চিন্তার ডাইমেনশন এর উপরে জোর বেশি দিয়েছেন। এটা ভারসাম্য নস্ট করেছে মনে হয়েছে। হাসান কতখানি গভীর ভাবে ভালবাসে লাবনীকে তা ফুটে ঊঠেনি। মাঝখানে সুমন চরিত্রটাও হঠাৎ সরে গেল।

    হিয়াকে আরোপিত মনে হয়েছে। গল্পটা ডালপালা মেলতে পারতো, মেললোনা।

    হিয়া লাবনীকে প্রায়ই সময় তুই এবং মাঝে মাঝে তুমি আপনি বলে সম্বোধন করেছে, তারা কি সমবয়সী নাকি বয়সে বড় ছোট বুঝিনি।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  12. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    আপু,
    সেদিন আপনার ঐ পর্বটি পড়ে মন্তব্য করেছিলাম।
    আর আজ আপনার সব পর্ব গুলোই পড়লাম আর সাথে অনেকের মন্তব্য এবং বিশ্লেষন গুলো।

    সব কিছু মিলিয়েই একটি প্যাকেজ।

    কিছু লেখার ধরন থাকে - পড়তে সহজ লাগে। সে ধরনের লেখনী আপনার। সাধুবাদ নিন।

    অনেক ভাল থাকুন আপু।

    সামনে আশা করি আপনার এই খসড়াটি আরো বড় পরিসরে পরিস্ফুটিত হবে - এই কামনা করি।


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন
  13. মেলিতা

    আপু অনেক পরে কমেন্ট দিচ্ছি।কিন্তু পড়েছি মনে হয় সবার আগে
    আমি তো আপনার গল্প পড়েছি আর আমার বর কে যন্ত্রনা করেছি এই বলে যে আমি কমেন্ট দিবো। সে আমাকে তার লগইন ইনফো দিলো না। 🙁 তাই একটা আকাউন্ট বানায়ে ফেললাম B-)
    আপনি এই গল্প টাকে ঊপন্যাস বানিয়ে ফেলেন প্লিজ।
    আপনি লাবনী খুব যত্ন করে বানিয়েছেন।তার ১/২ যত্ন নিয়ে বাকি চরিত্র ঘসামাজা দিলেই সুপারহিট ঊপন্যাস হয়ে যাবে।

    জবাব দিন
  14. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    বেশ কিছুদিন যাবৎ আমি এই কাজটাই করে যাচ্ছি। হাসানের দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাপারটা দেখতে গিয়ে দেখলাম কিছু অংশ পরিবর্তন করতে হয়। হিয়া প্রথম থেকেই থাকবে । তাকে দেখা যাবে অন্য অনেকের সমস্যার সমাধান করছে কিন্তু নিজের সমস্যার কাছে অসহায়। সুমনও থাকবে বর্ধিত আকারে, কিছুটা চমক নিয়ে। প্রতিটা চরিত্রই যাতে সঠিক বিচার পায় এদিকটা দেখার চেষ্টা করছি।
    আপু ধন্যবাদ তোমার সুন্দর পরামর্শের জন্য। আমার লেখা আরো দুটো অসমাপ্ত উপন্যাস আছে। ওগুলো তাড়াতারি শেষ না করে সময় নিয়ে সুন্দর করে শেষ করতে চাচ্ছি। এর মধ্যে একটা ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস। অনেক গবেষনা দরকার। দেশ থেকে কিছু বই আনতে দিয়েছি। ওগুলোর অপেক্ষায় আছি।
    ভালো থেকো। যোগাযোগ রেখ।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  15. ইন্টারনেট এর গলি ঘুপচিতে ঘুরাঘুরি করতে করতে মাঝে মাঝে সত্যিই পেয়ে যাই কিছু অসাধারন লেখা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটানে শেষ করে মনে হল, এমন লেখার জন্য ধন্যবাদ না দিলে হয়তো অকৃতজ্ঞতা হবে। ভাল থাকবেন আপু।

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      🙂 🙂
      ব্লগের এই এক মজা। অনেক আগের লেখাও কখন না কখনও কারও চোখে পড়ে এবং পাঠক তার ভাললাগাটুকু জানিয়ে যায়। এই গল্পটাকে পরবর্তীতে আমি একটি উপন্যাসে রূপ দিয়েছিলাম। নাম কিন্নরকন্ঠী নদী। এইখানে দেখতে পারঃ https://www.smashwords.com/books/view/267551
      ধন্যবাদ তোমার ভাললাগাটুকু জানাবার জন্য।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।