চিকিৎসা-১

oil_city
(গল্পটি পুরানো এবং আগে একটি ব্লগে ছাপানো হয়েছিলো।)
এক
ইন্দিরা রোডের একেবারে মাঝামাঝি দাড়ালে কামাল সাহেবের সুদৃশ্য সিরামিক ইটের চারতলা বাড়িটা নজর কাড়ে। নাগরিক জীবনের শর্ত মেনে বিলডিংএর ভাড়াটিয়া মোট সাতটা পরিবার দৈর্ঘ্যের বিচারে যতটা না নৈকট্যে, নিজেদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্কে ঠিক ততটাই দূরত্বে। একেকটা ফçাট যেন একেকটা দ্বীপ। প্রায় প্রতিদিনই দোতলার বাসিন্দা হিয়ার সাথে তারই সমবয়সী চারতলার বাসিন্দা লাবনীর সাথে সিড়িতে উঠানামার পথে দেখা হয়। কিন্তু কোনদিন আলাপ হয়ে উঠেনি। হিয়ার সন্দেহ হয় যে লাবনী তাকে আদৌ খেয়াল করে দেখেছে কিনা। নিজে কিছুটা খাট আর শ্যামলা বর্ণের হওয়াতে ছিপছিপে গড়নের লম্বা আর দুধে আলতা বর্ণের একেবারে পারস্য উপন্যাসে বর্ণিত রাজকন্যাদের মতো দেখতে লাবনীর ব্যাপারে সে এক রকম কৌতুহল বোধ করে। মেয়েটার জীবন যাপন তার কাছে মনে হয়েছে এক ধরনের রহস্যময়তায় ঘেরা।
লাবনী বিবাহিত। সুদর্শন স্বামী হাসান একটা বহুজাতিক কোম্পানীতে উঁচু পদে মোটা বেতনে কাজ করে। প্রায়ই সন্ধ্যাবেলা স্বামী স্ত্রী দুজন মিলে নিজেদের প্রাইভেট গাড়িতে হাওয়া খেতে বাইরে যায়। একটা সময় লাবনী মডেলিংয়েও বেশ নাম করেছিল। এখন আর তেমন টিভিতে দেখা যায় না। কিছুদিন আগে হাই ফাই ভাব করা এক দঙ্গল বন্ধু বান্ধুব নিয়ে হৈ চৈ করে বেড়াতো। এখন সে সব বন্ধ। সিড়ি দিয়ে উঠা নামার পথেই হিয়া খেয়াল করে দেখেছে যে বেশ কিছুদিন ধরে দিনের বেলা বেশ হ্যান্ডশাম একটা ছেলে চুপি চুপি ওর ফçাটে ঢুকে পরে। হিয়া নিশ্চিত যে মেয়েটা পরকীয়া করে বেড়াচ্ছে। এ নিয়ে অবশ্য হিয়ার আর কোন আগ্রহ বা মাথা ব্যথা নেই। অনর্থক লাবনীর পিছনে গোয়েন্দাগিরি করে বেড়ানোর জন্য আর অতো বাজে সময় কোথায়? সে ঢাকা মেডিকেলে পড়া মেয়ে। তবে একদম বইয়ের মাঝে মুখ গুজে বসে থাকে না। আশেপাশে একটু চোখ বুলিয়ে চলে, এই এতোটুকুই। এতেই তার গ্রাহক যন্ত্রে অনেক কিছু ধরা পরে যায়। এখন মেডিকেলের ক্লাসে যাবার পথে হিয়াও লাবনীকে সিড়ি দিয়ে নামতে দেখলো। হিয়া যেখানে গেটের বাইরে চলে আসলো, লাবনী সেখানে একটু অস্থিরভাবে গেটের বাইরে উকি ঝুকি দিয়ে আবার উপরে চলে গেল। হিয়া মনে মনে ভাবলো মেয়েটা আসলেও রহস্যোময়। তবে একটু বোকাও। সুন্দরী মেয়েরা চাইলেও কোন কাজ খুব একটা চুপিসারে করতে পারে না। দৃষ্টি সীমার মধ্যে আসার সাথে সাথেই নীচতলার দাড়োয়ান, কেয়ার টেকার সবাই লাবনীর দিকে তাকিয়ে ছিল। অথচ কোন ফাকে হিয়া বাইরে চলে আসলো তা কেউ খেয়াল করেছে কিনা সন্দেহ। তবে ইদানিং হবু ডাক্তার হিসেবে এদের কাছে একটু একটু দাম পাচ্ছে। প্রায়ই এর চোখ জ্বালা, ওর বুক ব্যথা, উনার মাথা ঘুরার ওষুধ পথ্য বাতলে দিতে হচ্ছে। এতে অবশ্য হিয়ার কোন অসুবিধা নেই। শুধু একটাই ভয় কখন না জানি এদের কেউ আবার মূত্রথলীর সমস্যা নিয়ে আসে।
(চলবে)

৩,৫৮৮ বার দেখা হয়েছে

৫৩ টি মন্তব্য : “চিকিৎসা-১”

  1. মেহবুবা (৯৯-০৫)

    আপু,
    লেখাটা যে ভাল লেগে গেলো। 😀
    এখন কি হবে ? 😛
    এখন যে আপনা কে লিখতে হবে......।আজ অনেকদিন পর সিসি বি তে এসে আপনার লেখাটা পড়লাম...

    পরের পর্বের অপেক্ষাতে থাকলাম।
    জবাব দিন
  2. তানভীর (৯৪-০০)

    আপনার গল্পগুলোয় খুঁটিনাটি বিষয়গুলো বেশ সুন্দর করে উঠে আসে। বুঝাই যায় আপনি চারপাশ খুঁটিয়ে দেখতে পছন্দ করেন। এই পর্বটা বেশ ভালো লেগেছে।

    শান্তাপু, পরের পর্ব তাড়াতাড়ি চাই কিন্তু। 🙂

    জবাব দিন
  3. তৌফিক (৯৬-০২)

    পড়ি নাই এখনো... তবে পড়ার আগে আপা আপনাকে একটা কথা বলে যেতে চাই। কি ব্লগ লিখে ছুটিতে চলে গেলেন, তারপর থেকে কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়ার ইচ্ছা হইতেছে। :no:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কুচ্ছিত হাঁসের ছানা (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।