যেভাবে গল্পের শুরু (ছোট গল্প -শেষ অংশ)

তুমি জান আমার ভেতর একধরনের বৈপরিত্ব কাজ করে। এদিকে হাইকিং, সারফিং, আর স্কিইং করতে ভালবাসি আবার ওদিকে বাঙ্গালি খাবার না হলে চলে না। তোমার কথাই আসলে ঠিক। আহçাদ দিয়ে মা আমাকে একদম নষ্ট করে গেছেন। তুমি সব সময়ই খুব কৌতুহলী ছিলে এই ব্যাপারটা জানতে যে মা মারা যাবার পর পরই, আমার জীবনের সবচেয়ে দুঃসময়ে আমার সাথে কেন ক্রিস্টিনের পাঁচ বছরের সম্পর্কটা ভেঙ্গে গেল। আসলে মা থাকতে বুঝিনি যে আমার উপর উনার এতোটা প্রভাব ছিল। যতদূরেই যাই না কেন ঘরে আসলে মাকে দেখাতে পাব, তার হাতের রান্না খেতে পারবো – এটা আমার এক অন্তর্নিহিত বোধ। ক্রিস্টিনের আর্কিওলজিস্টের চাকুরীটা আমাকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল। দুমাস পর পরই ওকে এখানে ওখানে ছুটতে হতো। ও বিয়েটা যতোটা হালকাভাবে নিয়েছিল আমি ঠিক ততটাই গভীরভাবে নিয়েছিলাম। আমার দ্বিধা ছিল। তাই পিছিয়ে গিয়েছিলাম।

এরপর তো তোমার জিম্মায়। তোমার পালোয়ালটোর বাড়ির পেছনের বাগানটায় বসে পাইন, চেরী আর ম্যাপল গাছের পাতাদের রংবেরংএর খেলা দেখতে দেখতে এ্যনথ্রপলোজী, সাহিত্য, ধর্ম, বিজ্ঞান, রাজনীতি যে কোন বিষয় নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অনবরত কথা বলাটা এখানে খুব মিস করছি। আর ওয়ালনাট দিয়ে তৈরী করা তোমার ফ্রেন্ডশীপ কেকের তো কোন তুলনাই হয় না। আবার খাবার কথা যখন চলে আসলো তখন বাংলাদেশী একটা প্রবাদের কথা বলি, এদেশের ছেলেদের মন জয় করতে হয় পেট জয় করে। আমার জন্ম, বেড়ে উঠা আমেরিকাতে হলেও কেন জানি এই প্রবাদটা শুনতে আমার খুব একটা খারাপ লাগে না। ক্রিস্টিনের সাথে আমার বিয়েটা হয়ে যাওয়ার পর কোনদিন সে যদি এই সত্যিটা জেনে ফেলতো তাহলে মেল শভেনিস্ট পিগ ঠাউড়ে পরেরদিনই সে আমাকে ছেড়ে চলে যেত। ও একদমই রাঁধতে পছন্দ করতো না। সবচেয়ে মজার ব্যাপার কি জান বিয়ের ব্যাপারে ক্রিস্টিনের আলটিমেটামের মুখে আমার মনে হচ্ছিল আচ্ছা ও কি কখনো মুরগীর কোরমা কিম্বা বিড়িয়ানী রাঁধতে পারবে?

আশ্চর্যজনকভাবে এখানকার খাবারের মেনুতে পেয়ে যাচ্ছিলাম আমার সব প্রিয় খাবার যার স্বাদ একদম মায়ের হাতের রান্নার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। আসাদের কাছ থেকে জানলাম পাশের একতলা বাড়ির বড় মেয়ে আমার সব রান্নার দায়িত্ব পালন করছে। নানী যখন এ বাড়িটাতে থাকতেন মেয়েটা নাকি তখন নানীর কাছ থেকে সব রান্না শিখে নিয়েছিল। মেয়েটার ব্যাপারে তখন একটু আধটু আগ্রহ হয়েছিলো বটে কিন্তু সে সময়টা নীল বিদ্রোহের উপর উপন্যাসটা নিয়ে এতো ঘোরের মধ্যে ছিলাম যে অন্য কোনদিকে তাকাবার ফুরসত ছিল না। ঘোর যখন ভাঙ্গলো, তখন আমি হতাশ, ভগ্নপ্রায় – ঠিক সে সময়টাতেই মেয়েটি আসলো আমার জীবনে। আমি পেলাম বাতিঘরের সন্ধান। জন্ম নিল আরেকটি উপন্যাস। তবে আমাদের পরিচয় অতো সহজে হচ্ছিল না। মেয়েটি কখনও নিজে থেকে আমার সাথে আলাপ করতে আসেনি। এমনকি জানতেও চায়নি তার রান্না আমার কেমন লাগছে। হয়তোবা সে অতি মাত্রায় আত্মবিশ্বাসী ছিল কিম্বা এ ব্যাপারে তার কোন মাথা ব্যথাই ছিল না। জানি না ঠিক কোন কারণে মেয়েটা আমাকে খুব আকর্ষন করতে শুরু করলো। আমার দোতলা ঘরের জানালা থেকে ওদের বাড়ির পুরোটাই দেখা যায়। ভদ্রতার মাত্রা ছাড়িয়ে আমি বলতে গেলে পুরোটা সময়ই সে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। ও বাড়ির মানুষজন আর তাদের জীবনযাত্রা আমার কাছে ছিল একটা অপঠিত উপন্যাসের মতো।

ওর নামটা তোমাকে বলা হয়নি। আকাশলীনা। ওর বাবার এক প্রিয় কবি জীবনানন্দের একটা কবিতার নামে রাখা। ওরা চারভাইবোন। বড়ভাইটা একটা এনজিওতে কাজ করতো। এখন আপাতত বেকার। ছোটবোন স্কুল ফাইনাল দিয়ে কলেজে যাবে। আকাশলীনা ইংলিশে গ্রাজুয়েশন শেষ করে হাইস্কুলে পড়ানোর চাকুরী করছিলো। হঠাৎ করেই ওদের মা মারা যাওয়াতে আর তার পর পরই বাবার প্যারালাইসিস হয়ে চলৎক্ষমহীন হয়ে পরাতে এখন বাসায় থেকে সবার দেখাশোনা আর ইংলিশে টিউটরিংএর কাজ করে। এ পরিবারের সবচেয়ে বেশি দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটেছে দশ বছরের ছোট ছেলে আবীরের ভাগ্যে। ছেলেটা খুব দুরন্ত আর বুদ্ধিমান ছিল। সবসময়ই ছুটে বেড়াতো। একটাদিন ওদের কেরোসিনের স্টোভ থেকে আগুন লেগে দেহের অনেকটাই পুড়ে যায়। এখন যে কি দুর্দশাপূর্ণ জীবনযাপন করছে সেটা চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। দুহাত নাড়াতে পারে না। গলার কাছটাতে পুড়ে চামড়া শক্ত হয়ে গেছে। থুতনী থেকে শুরু করে মুখমন্ডলের পুরোটাই চামড়া টেনে স্থির করে রেখেছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা একটা পর্যায়ে গিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। ছেলেটার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে এ পরিবারটার জন্য অন্তত একটা কিছু করতে চাই। আমি জানি যে ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডের শিশু হাসপাতালের বার্ন ইউনিট খুব জটিলভাবে পুড়ে যাওয়া শিশুদের বিনে পয়সায় চিকিৎসা দেয়, তা সে যে দেশেরই হোক না কেন। শুধু একমাত্র শর্ত হলো এই যে রোগীকে হাসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে আসতে হবে। অবশ্য ভিসার জন্য ওরা ডাক্তারের সম্মতিপত্র পাঠায়। এখন ছেলেটাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারলে হয়। আমি ইতিমধ্যে ওর পাসপোর্ট করতে দিয়েছি। তুমি একবার বলেছিলে তোমার এক আত্মীয় ওখানকার বার্ন ইউনিটের মেডিক্যাল ডিরেক্টর। দেখ না এখানে কোন সাহায্য করতে পার কিনা। তোমাকে এই চিঠির সাথে ওর যতো ডাক্তারের কাগজপত্র আর ছবি পাঠাচ্ছি।

বেশ কয়েকদিন আমি শুধু দূর থেকে আকাশলীনাকে দেখে গিয়েছিলাম। কখনো বাবা কখনোবা ছোটভাইকে সেবা করছে। সংসারের পুরো কাজ নিজ হাতে সামলাচ্ছে। দুপুরের পর যখন পাখীর (এদেশের পাখীদের এখনও চেনা হয়ে উঠেনি) হঠাৎ হঠাৎ ডাক ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না তখন সে নির্জন সময়টাতে ছাত্র ছাত্রীদের ইংরেজী পড়াতে বসে। দিন দিন মেয়েটার প্রতি শুধু আকর্ষনবোধই না, শ্রদ্ধাবোধও বাড়ছিলো। নতুন উপন্যাসটা শুরু করতে একদম বেগ পেতে হয়নি। একদিন সন্ধ্যাবেলায় নীচ তলার বারান্দার সিড়িতে বসে ছিলাম, দেখি আমার সামনে দিয়ে সে বাইরে কোথাও যাচ্ছিল, পড়নে ছিল সাদা শাড়ি, মাথায় সাদাফুল বোধহয় জেসমিন। আমার উপন্যাসে তাকে অপরূপ সুন্দর হিসেবে উপস্থাপন করেছি। কিন্তু প্রথম সেবার খুব কাছ থেকে ওকে দেখার পর মনে হলো অপরূপ শব্দটা ওর জন্য যথেষ্ট না। ওর সৌন্দর্যের মধ্যে এক ধরনের সম্মোহনী শক্তি আছে যা কিছুক্ষনের জন্য আমাকে স্থবির করে দিল। এগিয়ে গিয়ে বললাম,
-আমাদের মনে হয় পরিচয় হয়নি?
-হ্যাঁ। আপনাকে আসলে বিরক্ত করতে চাইনি। শুনেছি একটা উপন্যাস শেষ করবার জন্য পৃথিবী বিচ্ছিন্ন হবার জন্য এখানে এসেছেন।
– ঠিক একটা ভুল শোনেননি। তবে আবার আপনার সাথে মানে আপনাদের সাথে যদি পরিচয় না হয় তাহলে নিজেকে যে আরেকটা উপন্যাসের প্লট থেকে যে বঞ্চিত করা হয়।
-আমি শুনেছি আপনি বাংলা খুব ভালো বলেন। আগে বিশ্বাস হয়নি তবে এখন হলো।
-কোথায় যাচ্ছেন?
-আমার এক বান্ধবীর বাসার উঠোনে আজকে বাউল গানের আসর বসবে। যাবেন সেখানে?
এতো নিঃশংকোচে আমাকে সাথে নেওয়ার কথা বললো যে আমি ওর সপ্রতিভতায় মু© না হয়ে পারলাম না। অবশেষে গেলাম সেখানে। গানের কথা ঠিক বুঝলাম না তবে পূর্ণিমার আলোয় আবেগী সুরের আধ্যাত্মিকতার ভাবটা একেবারে মন ছুয়ে গেল। জানিনা ঠিক সে রাতেই আমি প্রথম আকাশলীনার প্রেমে পরেছিলাম কিনা।

এরপর আমাদের প্রায়ই বিকেলে দেখা হতো, কথা হতো। যে কোন বিষয়েই সে অনেক জ্ঞান রাখে। সাহিত্যের ছাত্রী হিসেবে বিখ্যাত সব লেখকদের বিখ্যাত সব বই সে পড়েছে। আকাশলীনার সময় বড়ই বাঁধা নইলে ওর সাথে কথা বলা শেষ করতে ইচ্ছে করে না। হয়তো ওর প্রেমে পরার কারণেই হু হু করে লেখার গতি এগিয়ে চলছিলো। তবে ওকে কখনও আমার প্রেমের কথা বলিনি। আসলে তো আমি পুরোদস্তুর আমেরিকান ভাবধারাই বহন করি। জানি যে এখানে থেকে চলে গেলে এ প্রেম ভুলতে আমার সময় লাগবে না। আকাশলীনার জীবনে এমনিতেই অনেক দুঃখ। শুধু শুধু একটা অবাস্তব স্বপ্ন দেখিয়ে মেয়েটার দুঃখ আর বাড়াতে চাইনি।
ঢাকা থেকে একদিন ফুপু এসেছিলো। সাথে লামিয়া আর ওর প্রিয় বান্ধবী রমা। আড়ালে নিয়ে ফুপু আর লামিয়া দুজনেই আমাকে রমার সাথে একটু ভালো করে আলাপ জমাতে বললো। আমার সম্ভাব্য পাত্রী হিসেবে সে নাকি খুব ভালো মানিয়ে যায়। বিদেশ থেকে লেখাপড়া করে এসেছে। এখনও প্রতিবছর কয়েকমাসের জন্য আমেরিকায় যায়। আপাতত কিছু করছে না কারণ দরকার নেই বলে। কথা বলে বুঝলাম হালকা, অগভীর কিছু বিষয় নিয়ে মেতে থাকা ছাড়া জীবনে আর তেমন কোন লক্ষ্য নেই। এ তো দেখছি ক্রিস্টিনের থেকেও বিপদজ্জনক। ক্রিস্টিনের তো তাও নিজস্ব কিছু বিষয় আছে যা নিয়ে সে আরো অনুসন্ধান আর গবেষনা করছে, এর তো সেসব কিছুই নেই। তবে ঘাবড়ে গেলাম যখন আমাদের আধঘন্টার আলাপে তিনবার জিজ্ঞেস করলো ক্যাথেরিন কে? খারাপ লাগলো আকাশলীনার সাথে ওর আচরন দেখে। শ্রেনীবৈষম্য সব দেশেই আছে। কিন্তু এদেশে সেটা খুব প্রকটভাবে বোঝা যায়। আমেরিকাতেও আমাদের মালি আছে, পরিচ্ছন্নকর্মী আছে। সবাইই তার নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন এবং সময়মতো চুপিসারে নিজ নিজ কাজটা করে চলে যায়। কিন্তু এদেশে একটা মালিক ভৃত্য সম্পর্কটা খুব বেশি করে দৃশ্যমান। আকাশলীনা এখানে কারও কর্মচারী নয় তারপরও এতোগুলো মানুষের আপ্যায়নের দায়িত্ব নিয়েছিলো নিজস্ব স্বভাবগুনে। অথচ রমা আমার সাথে ভালোভাবেই কথা বলছিল যখন আকাশলীনা আসলো তখন খুব রুক্ষ্ম ভাষায় চাতে বেশি চিনি দেওয়ার জন্য ভৎসনা করলো। একটা প্রবাদ আছে – যে তোমার সাথে ভাল ব্যবহার করে কিন্তু ওয়েটারের সাথে করে না তাকে কখনো একজন ভালো মানুষ বলা যায় না। মানুষ চেনার ক্ষেত্রে আমি এই নীতিটা পরখ করে দেখি। সে ঘটনার পর রমার সাথে কথা চালিয়ে গেলাম বটে তবে সেখানে আমার আর তেমন কোন অংশগ্রহন ছিল না। যাওয়ার সময় ফুপু আর লামিয়া দুজনেই জিজ্ঞেস করলো আমাদের আরোপিত ব্লাইন্ড ডেইটের ব্যাপারে এবং যথারীতি আমাকে তাদের নিরাশ করতে হলো।

কিছুদিন আগ পর্যন্তও সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিলো। শুধু উপন্যাসের শেষ কয়েক অধ্যায় লেখা হয়ে উঠেনি। মনে হচ্ছে বারবারা ভালোই খুশী হবে। ভালবাসার মাঝে শ্রেনী বেষম্য থাকলে গল্পটা জমে উঠে। তার উপর এখানে যোগ হয়েছে সাংস্কৃতিক বিভেদ। একদিকে সেকেন্ড জেনেরেশন আমেরিকান আর অন্যদিকে একজন মফস্বলের মেয়ে। পরিস্থিতি তাদেরকে এক জায়গায় নিয়ে আসে আর নিজেদের একাকীত্ব দুজনকে এক করে দেয়। কিন্তু তারপর? এর শেষ পরিনতি কোথায়?

এর আগে আমার লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে আকাশলীনা তেমন আগ্রহ দেখায়নি। কিন্তু দুদিন আগে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো,
-আপনার উপন্যাসটা কিভাবে শেষ করবেন ভেবেছেন?
-তুমি জান কি নিয়ে লিখছি?
-উপসংহার যে সব সময় বাস্তব সম্মত হতে হবে এর কোন মানে নেই। কি আসলে হওয়াটা যুক্তিযুক্ত তার থেকে আপনি কি দেখতে চান উপন্যাসের শেষে সেই ভাবনাটা জুড়ে দিতে পারেন। সিন্ডারেলার কাহিনী হয়তো বাস্তবে ঘটে না কিন্তু এই রূপকথা বাস্তবের অনেক মেয়েকে বেঁচে থাকার জন্য স্বপ্ন দেখায়।
এরপর আমার প্রশ্নবোধক চোখের সামনে দিয়ে বাবাকে ঔষুধ খাওয়ানোর সময় হয়েছে বলে ওকে চলে যেতে হলো। আমার আর জানা হলো না আকাশলীনা কিভাবে আমার উপন্যাসের বিষয়বস্তু জানলো। আমার বোধহয় আর তা জানাও হবে না। কারন সেই মূহুর্তে বুঝলাম আমি আসলে এক ভয়ংকর অপরাধ করে ফেলেছি। আকাশলীনার সামনে দাড়াবার সাহস বোধহয় আর আমার হবে না। এতোদিন নির্বিঘ্নে বিকেলে তার সাথে সময় কাটিয়েছি আর ভোরে উপন্যাস এগিয়ে নিয়েছি। সেও যে ভেতরে ভেতরে আমার প্রেমে পরে যেতে পারে আমি সেই দিকটা কখনও ভেবে দেখিনি। আকাশলীনার জীবনে এমনিতেই অনেক সমস্যা আমি বোধহয় আরেকটা সমস্যা তৈরী করলাম। এরকম একটা মেয়েকে কষ্ট দেওয়ার জন্য নিজেকে খুব নিকৃষ্ট কীটের মতো মনে হচ্ছে। অথচ ক্রিস্টিনের সময় এরকমটা হয়নি।
সেদিনের পর থেকে আআকাশলীনা আর আসেনি। আর আমিতো পালিয়ে বেড়াচ্ছি যতোটা না ওর কাছ থেকে তার থেকেও বেশি আমার নিজের কাছ থেকে। গত দুরাত ধরে একদম ঘুমাতে পারছি না।

তুমি তো জান আমি সেল ফোন ব্যবহার করিনা। শুধু তোমার কথা চিন্তা করেই একটা সেলফোন নিলাম। নাম্বারটা ০১১৭৯১৯৭৭১। আমি কয়েকবার চেষ্টা করেছিলাম। পাইনি। কিন্তু তুমি যখনই পার আমাকে ফোন করো।

ভালো থেক আর নিজের ব্যাপারে আরেকটু যত্নশীল হয়ো।

-নিলয়

এক নাগারে চিঠিটা লেখা শেষ করে নিলয় তার চেয়ার থেকে উঠে দাড়াল। ততক্ষনে ভোরের আলো ফুটে গেছে। চারদিকে নাম না জানা পাখীদের কলকাকলী। তার দোতলার ঘরের জানালার মোটা রডের বড় বড় গ্রীল। নিজের অজান্েতই সামনের একতলাটার দিকে চোখ পরে গেল। না আকাশলীনাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। বুকের মধ্যে বিউগলের সুর বেজে উঠলো।

-ভাইজান আপনার দুপুরের খাবার রেডি।
-আসাদ তুমি এখানকার ফেড এক্সের অফিসটা চেন?
– রাস্তার ঐপাড়ে।
-চিঠিটা খুব তাড়াতাড়ি পোস্ট করে আস।
-ভাইজান আপনি নাকি চলে যাবেন?
নিলয় খুব অবাক হলো। কারণ সে যে যাবে এবং আজকেই এটা এখন পর্যন্ত কাউকে সে বলেনি।
-কোনখান থেকে জানলে?
-আকাশলীনা আপা বলছে।
নিলয় এতোদিন আকাশলীলার সাথে কথা বলে মনে করেছিলো সে মেয়েটার অনেকখানিই আবিষ্কার করে ফেলেছে। এখন সে বুঝতে পারছে আসলে মেয়েটাকে একদমই চিনতে পারেনি বরং মেয়েটিই তাকে খুব ভলোভাবে চিনতে পেরেছে। হয়তোবা তার নিজের থেকেও বেশি। নিলয় ভেবেছিল চুপিসারেই চলে যাবে। কিন্তু যেই বিবেক থেকে সে পালাতে চাইছে সেই বিবেক তাকে পালাতে দিচ্ছে না। একবারের জন্য হলেও সে আকাশলীনাকে শেষবাবের মতো দেখে যেতে চায়। কিন্তু চলে যাওয়ার আগে ওর মুখোমুখি হয়ে কি বলবো?

ঢাকায় এসে নিলয়ের বেশ কিছুদিন ধরে ব্যস্ততা ছিল। তার উপর ছিল আত্মীয় স্বজনদের সামাজিকতা। পর পর দু দুটো বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হলো। নিলয়ের মনে হচ্ছিল বাংলাদেশে বিয়ের অনুষ্ঠান ম্যারাথন দৌড়ের থেকেও লম্বা। একেকটা অনুষ্ঠানে চারদিন ধরে উৎসব চলে। এর কোন মানে খুঁজে পেল না তবে নিজেকে ব্যস্ত রাখার, ভুলে থাকার একটা সুযোগ খুঁজে পেল। তারপর হঠাৎ করেই নিলয় খুব অসুস্থ হয়ে পরলো। এতোদিন পাবনাতে থেকে যা হলো না ঢাকায় এসে তাই হলো। ঢাকার অভিজাত এলাকার ড্রয়িং রুমের টবে বেড়ে উঠা অভিজাত মশা কখন জানি নিলয়কে কামড়ে দিল। সে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলো। রক্তের বিলুরুবিন খুব কমে আসলো। স্কয়ার হাসপাতেলে প্রায় বিশ দিনের মতো থাকতে হলো।
নিলয় তখন আচ্ছন্ন অবস্থায় প্রায়ই স্বপ্ন দেখতো। সেসব স্বপ্নে আকাশলীনা ঘুরে ফিরে আসতো -সেখানে তাদের না বলা অনেক কথা বলা হয়ে যেত। অনেক সময় নিলয়ের বিভ্রম হতো। সে মনে করতে পারতো না যে এসব ভেসে ভেসে আসা দৃশ্যগুলো তার কল্পনা নাকি বাস্তব?
আচ্ছন্ন নিলয় কখনও দেখে আকাশলীনা নীল শাড়ি পরে এই হাসপাতালে এসেছে। তার মাথার পাশে বসে কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর আস্তে করে বলছে,
-আমার নিজের ভেতরে অনেক কষ্ঠ ধারণ করবার ক্ষমতা আছে। আপনি এতো কষ্ঠ পাচ্ছেন কেন?
-তাইতো আমি এতো কষ্ঠ পাচ্ছি কেন?
স্বপ্ন, হ্যালুসিনেশন না কি এরকম কথাবার্তা আসলেও বাস্তবে হয়েছিল? আসার আগে সে কি শেষ পর্যন্ত আকাশলীনার সাথে দেখা করে এসেছিলো? সেটা মনে করতে চাইলে চোখের সামনে কেমন জানি ধোঁয়াসে দৃশ্য ভেসে উঠে। আবার নিলয় কখনওবা দেখে তারা নীল সাগরের পাড়ে দাড়িয়ে আছে। চারপাশটা দেখে মনে হচ্ছে এটা সান ফ্র্যান্সিসকোর সলসলিটো বীচ। আকাশলীনা সাগরে নেমে যাচ্ছে। পানি একটু স্পর্শ করেই বলে উঠলো,
-এতো ঠান্ডা পানি! তার থেকে কক্সবাজারের বীচ কতো সুন্দর। ওখানে গেলে হতো।
-তুমি গিয়েছিলে?
-না আমি কিভাবে যাব? আমি তো কোনদিন পাবনা ছেড়ে বের হইনি।
-আচ্ছা এবার দেশে গেলে যাব।
নিলয় গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠে আর আকাশলীনাও টুপ করে ডুবে যায়। কে জানি তার ঘরে রজনীগন্ধা রেখে গেছে। স্বপ্নের আবেশে আর ফুলের গন্ধে স্যালাইনের সূচ ফোটানো অসার হাতটার যন্ত্রণা ভুলে যায়। বিভোর হয়ে ভাবতে থাকে আকাশলীনা তার অবচেতন মনের মাঝেও স্থান করে নিয়েছে। নিলয় এরপর সুস্থ হওয়ার তীব্র বাসনায় বাকী রাতটুকু জেগে জেগে রক্তের ভেতরে নেচে বেড়ানো ডেঙ্গুর এক একটা জীবানুকে ধ্বংস করতে থাকে। অন্তত একটা বারের জন্য হলেও সে আকাশলীনার সাথে দেখা করতে চায়। এখন তার আর কোন দ্বিধা নেই।
সংস্কৃতি, পরিবেশ – মানুষের অভ্যাস, বাহ্যিক চালচলনকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে, কিন্তু ভেতরের অনুভূতি, মানসিকতার উপর কিছুর নিয়ন্ত্রন চলে না। এর প্রবাহ আদি, অকৃত্রিম এবং নিরন্তন । ভালবাসা, ভালবাসাই – যা কোন সীমানা মানে না। আকাশলীনা কষ্ঠ পাবে বলে যে কষ্ঠটা সে নিজে পাচ্ছিল আসলে সেটা তার নিজেরই কষ্ঠ ছিল। সাংস্কৃতিক বৈষম্যের দোহাই দিয়ে আকাশলীনাকে হারাবার কষ্ট।

প্রায় এক মাস পর সুস্থ হয়ে নিলয় পাবনায় আসলো। এই একমাসে অনেককিছুই বদলে গেছে। আকাশলীনার বাবা মারা গেছে। ছোটবোন নার্সিং স্কুলে পড়তে হোস্টেলে চলে গেছে। ভাইয়ের অন্যত্র চাকুরী হয়ে গেছে। সারা বাসায় শুধু ছোটভাই আর আকাশলীনা।
আকাশলীনা শান্ত মুখে দরজা খুলে দিল। সে মুখে কোন বিস্ময়বোধ ছিল না। নিলয় বললো,
-আমি যে আসবো সেটা তুমি জানতে?
-মনে হচ্ছিল আসবেন।
-তুমি কেমন করে সব কিছু বুঝে যাও?
-গত দুবছর ধরে আমি দুটো এমন মানুষের সাথে রাতদিন থেকেছি যারা কোন কথা বলতে পারতো না। তাদেরকে বুঝে নিতে হতো। আর আপনিতো কথা বলতে জানেন। আপনাকে বোঝা কি এতোই দুঃসাধ্য?
-তাহলে তুমি জান আমি কেন এসেছি?
– মনে হয়।
-জিজ্ঞেস করবে না ক্যাথেরিন কে?
-তাও জানি।
-কিভাবে?
-ফোনটা রেখে গিয়েছিলেন। ক্যাথেরীন ফোন করেছিল। বার বার আপনাকে উনার পালিত ছেলে হিসেবে সম্মোধন করছিলেন।
-ক্যাথেরিন আমার থিসিসের সুপারভাইজার ছিলেন। নিজের কোন সন্তান নেই, স্বামীও অনেক আগে মারা গেছেন। সব øেহ এখন আমার উপর গিয়ে পরছে। বলতে গেলে মা মারা যাবার পর সেই এখন আমার মা। এই ৭৮ বছর বয়সেও এখনও অনেক দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ায়।
-আরো জানালেন আবীরের ব্যাপারে খুব শীঘ্রই ডাক্তারে চিঠি পাঠিয়ে দেবেন। হাসপাতাল সব স্পনসর করবে।
-এটা তো খুবই সুসংবাদ। আবীর যাবে সেই সাথে … এখন বলো কেন এসেছি?
-আপনার উপন্যাস শেষ হয়েছে?
-না ওটা শেষ করার জন্য আমার জীবনে তোমাকে দরকার। আমি জানি তুমি অনেক দ্বিধাদ্বন্ধে ভূগবে, তোমার মধ্যে অনেক সংশয়, ভয় কাজ করবে – কিন্তু আমি তোমাকে এতটুকু নিশ্চয়তা দিতে চাই …।
-আপনি আমাকে বিশ্লেবন করার চেষ্ঠা করেছেন, তা নিয়ে উপন্যাস লিখেছেন কিন্তু এখন তো দেখছি আমাকে একদমই বুঝতে পারেননি। আপনাকে হারাবার ভয় করবো কেন আমার কি ধরে রাখার ক্ষমতা নেই?
এই রহস্যোময়ী মানবী আবারো নিলয়কে খুব অবাক করে দিলো। আসলেও আকাশলীনাকে সে ঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারেনি। নিলয় ভাবছিলো তার উপন্যাসের কয়েকটা অংশ বদলাতে হবে। কিন্তু তার আগে এই মূহুর্তেই সে জরুরী কাজটা শেষ করে ফেলতে চায়।
নিলয় হাটু ভেঙ্গে পায়ের নীচের অর্ধেক অংশের উপর ভর দিয়ে আকাশলীনার দিকে মুখ করে বসলো। সে এখন পকেট হাতরে আংটিটা খুঁজছে, আসার আগে ক্যাথেরিন দিয়ে দিয়েছিল আর বলেছিলো,
-তুমি আসলে এমন একজন বাউন্ডলে যার খুব বেশি করে একটা ঘরের প্রয়োজন। আমার মনে হয় তুমি এবার বাংলাদেশে গিয়ে শীত, গ্রীষ্ম, হেমন্ত, বসন্েত যে সব সময়ই তোমার ঘর আগলে রাখতে পারবে এমন একজন রাজকন্যার খোঁজ পাবে।

২,৮০৫ বার দেখা হয়েছে

৩৭ টি মন্তব্য : “যেভাবে গল্পের শুরু (ছোট গল্প -শেষ অংশ)”

    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      তোমার আগের মন্তব্যও অসম্পুর্ন ছিল। বিস্ময়টা কেন? একটা ব্লগে (রাশেদ হবে) তুমি একটা লিংক দিয়েছিলে লেখক কামালের। মনে হয় সাহিত্য সম্পর্কে বেশ খবর রাখ। আমি গত দশ বছরের বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। এখন সাহিত্যে কাদের লেখা পড়তে হবে জানালে উপকার হয়।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
      • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

        সত্যিকার অর্থে বিস্ময়ের কারণটা হলো আপনার গল্পটার গঠন এবং ধরণে সেই সাথে ডেভেলাপমেন্টে। যেকোন গল্প পড়তে শুরু করলে আমার মনে গল্প নিয়ে একটা কাঠামো কল্পনায় তৈরি হয়। সেই কাঠামোর বাইরে লেখা গুলো গেলে সেটাকে পরিপূর্ণ মনে হয়। খুব সাধারণ জীবনের গল্পগুলো এগিয়ে যাই নিজস্ব গতিতে-- এই গল্পে যেটা হয়েছে অনেকগুলো জীবন উঠে এসেছে অনেক গুলো ডাইমেনশনে এগিয়েছে - এই স্টাইলটা আমাকে অভিভূত করেছে। এককথায় চমৎকার - পড়তে পড়তে মনে হয় স্নিগ্ধ আকাশনীলা , স্বাপ্নিক নিলয়, যুবতী (!) ক্যাথরিন কিংবা মেকি লামিয়া অথবা রুক্ষ্ম রমা সবাই এসে যায় মনের মাঝে। সুরঞ্জনার আকাশলীনা কবিতাটি আমার অনেক ভালো লাগে। আমার নিজের গল্প লিখার ইচ্ছা ছিল আকাশলীনা নামের একজন মায়াবতীকে নিয়ে। এখানে আমার কল্পনার চেয়ে সুন্দর হয়ে সে এসেছে- এটা হলো বিস্ময়ের (!!) কারণ। গত পর্বের আলাদা ভালো লাগার কথা যেটা বলেছিলাম সেটা হচ্ছে শ্রেনী বৈষম্য ও ক্ষুদ্র ঋণের বিষয়টা আম্রিকায় বসেও এত সুন্দর করে উপলব্দ্ধি আর প্রকাশে আপনার দক্ষতা দেখে।

        লেখক কামাল স্যারের সাথে পরিচয় সামু ব্লগ ঘুরে। আর সাহিত্য নিয়ে আমার আগ্রহ থাকলেও পেশাগত জীবনে আমি প্রথমে প্রকৌশলী। অফিসের গুতায় অনেক পুরাতন বই ই পড়া হয়নি ভালো করে। গত দশ বছরের খবর খুব বেশি আমারও তেমন জানা নেই ব্ল সূত্রে আর বন্ধু আন্দালিবের (এই ব্লগেরই) লেজ ধরে কিছু লেখকের লেখা পড়া হয়। কিন্তু তেমনভাবে রেফার করতে পারছি না।

        পরিশেষে এই চমৎকার লেখাটায় টাইপো আছে কিছু। সেটা ঠিক করার বিনীত অনুরোধ রইলো। আর "বাঙ্গালী" বানানটা আমি বাঙালি হিসাবে দেখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

        সবশেষে এমন চমৎকার লেখার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

        জবাব দিন
        • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

          নানাবিধ কারনে কিছুটা বিষন্ন ছিলাম। তোমার বিশ্লেষন পড়ে সেটা কেটে গেল। লেখাটা শেষ করার পর তার আয়তন দেখে ভড়কে গিয়েছিলাম - যে আদৌ কেউ ভালোভাবে পড়ে কিনা। তুমি শুধু পড়ইনি ঠিক সেই অনুভূতি ধারন করেছে যা আমার লেখার সময় ছিল। এরকম পাঠক লেখার উৎসাহ বাড়িয়ে দেয়।

          আমি এখন পর্যন্ত পুজিবাদের সব সুবিধাপ্রাপ্ত একজন - তারপরও এতো প্রকট শ্রেনী বৈষম্য কষ্ট দেয়।

          যখন দেখি আমার আশেপাশের মানুষেরা বানান করে বাংলা পড়ছে তখন নিজের অন্তত কিছু লিখতে পারাটা নিয়ে আত্মতৃপ্তি হতো। এখন বুঝছি এসব ঝেড়ে ফেলে একেবারে পারফেক্ট হতে হবে - নইলে ক্ষমা নেই।
          নিচে লেখার কিছু লিংক দিলাম - কখন ইচ্ছা এবং সময় হলে পড়ে একটু সমালোচনা করে দিও।


          “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
          ― Mahatma Gandhi

          জবাব দিন
  1. বন্য (৯৯-০৫)

    অসাধারণ !!
    পিসিতে বড় গল্প আমি কখনই পড়তে পারিনা,সেই জন্য গল্পের সাইজ দেখে প্রথমে পড়িনি..কিন্তু অদ্ভূত ব্যাপার শুরু করার পর থেকে এই গল্পটা পড়তে কোনো কষ্টই হলনা.. :boss: :boss: :boss:

    আবারও বলি...অসাধারণ এবং ৫ তারা ।

    আপনার কাছ থেকে নিয়মিত গল্প দাবী করছি... :hatsoff:

    জবাব দিন
  2. তানভীর (৯৪-০০)

    একদম মুগ্ধ করে দিলেন শান্তাপু।

    যেই লেখাগুলো পড়ার পরও মাথায় একটা ঘোর লাগানো ভাব থেকে যায় সেই লেখাগুলো আমার খুব প্রিয়। আপনার গল্পটা ঠিক সেরকম হয়েছে। :boss:

    আপনার কাছে অনেক অনেক লেখা চাই আপু। 🙂

    জবাব দিন
  3. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    দূর্দান্ত শান্তা। অদ্ভূত মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন করে ফেললে। গল্প লেখার ধরণটায় নতুনত্ব নেই। আছে প্লটে, বিষয়বস্তুতে আর শব্দ ব্যবহারে। আবার মাঝে-মধ্যে রহস্যময়তা। চরিত্র দুটো। আমি কেন জানি সবসময় একটা সংগ্রামী, লড়াকু নারী চরিত্রের ভীষণ ভক্ত। আকাশলীনাকে তুমি সে রকম করেই তৈরি করেছ। সব কিছুর মিশেলে দারুণ লাগলো। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই সম্ভবত এই রকম একটা প্রচণ্ড স্বাপ্নিক ভালোবাসা বাস করে। তুমি সেই হারিয়ে ফেলা স্বপ্নটা আবার মনে করিয়ে দিলে।

    লিখতে থাকো। এরকম করে আরো। :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      সবচেয়ে মজার ব্যাপার কি আমি এর আগে খুব রুক্ষ্ম ধরনের গল্প লিখতাম। এই ব্লগে আসার পর স্মৃতিচারন করতে গিয়ে ফিরে গেলাম জীবনের ফেলে আসা সময়টাতে যেখানে কখনও স্বাপ্নিক ভালোবাসার অস্তিত্ব ছিল। ধন্যবাদ ব্লগকে সেই সাথে আপনাকেও।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
  4. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    বিকেলে বাসায় ফিরে সিসিবি খুলেই আপনার লেখাটা দেখেছি। একটু বড় দেখে রেখে দিয়েছিলাম, পরে পড়বো বলে।

    এইমাত্র পড়া শেষ করলাম।
    চমৎকার, শান্তাপু।
    আপনি খুব ভালো লিখেন।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  5. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    কামরুল, মেহেদী লম্বা লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
    সামী তোমাকেও। তুমি তো আমার স্বপ্নকে অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছ।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  6. সামিয়া (৯৯-০৫)

    আপু আপনার সাথে আমার পরিচয় হয় নাই। :salute: আমি সামিয়া, আপনার তুলনায় বহুত বহুত বহুত জুনিয়র, ২১তম ব্যাচ। আমি আইসক্রীম খেতে পছন্দ করি, ধন্যবাদ :salute: ।

    জবাব দিন
  7. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    অসাধারন লাগলো।

    গল্পের প্লট সাধারন হলেও আপনি যেভাবে তাকে গুছিয়ে তুলেছেন তা এক কথায় দূর্দান্ত। আর ভাষার ব্যবহারে একটা আলাদা নতুনত্ব পেলাম, সবই সাধারন সাধারন শব্দ নিয়েছেন, কিন্তু সবমিলে কোথায় যেন অসাধারন। বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারে আপনার অবাধ যাতায়াত মনে হল।

    ভালো থাকবেন, হারিয়ে যাবেন না আশাকরি সিসিবি থেকে।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  8. টিটো রহমান (৯৪-০০)
    এমনকি জানতেও চায়নি তার রান্না আমার কেমন লাগছে। হয়তোবা সে অতি মাত্রায় আত্মবিশ্বাসী ছিল কিম্বা এ ব্যাপারে তার কোন মাথা ব্যথাই ছিল না।..............দুপুরের পর যখন পাখীর (এদেশের পাখীদের এখনও চেনা হয়ে উঠেনি) হঠাৎ হঠাৎ ডাক...........

    এরকম অনেক লাইনই তলে দেয়া যায..যা দারুণ হয়েছে :hatsoff:

    প্রায় এক মাস পর সুস্থ হয়ে নিলয় পাবনায় আসলো।

    আমাদের এখানে তো পাবনা থেকে উেল্টা সুস্থ্য হয়ে আসে ;)) ;))


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  9. tomar golpo ta shesh porjunto porlam....commitment chhilo setao ekta karon...`নিলয় গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠে আর আকাশলীনাও টুপ করে ডুবে যায়। কে জানি তার ঘরে রজনীগন্ধা রেখে গেছে। স্বপ্নের আবেশে আর ফুলের গন্ধে স্যালাইনের সূচ ফোটানো অসার হাতটার যন্ত্রণা ভুলে যায়।'
    ei linegulo darun....tomake sobai valo bolese...tai critic ta ami korte chai:
    1. tumi shobdo babohare socheton nao.
    2. tumi tana lekho, bakker dike tomar amonojog.
    3. kahini bolar somoy tumi nijei jeno character..golper character-ke khujte takhon ektu trouble lage.
    4. bangla shobder aro somarthok shobdo koratto koro..
    5. notun shobdo na peye ami borong hotas.
    6. ke tomake tara mare lekhar somoy....lekhar somoy kono tara-huro korata bokami.
    7. nijer lekha bar bar poro, nijei vul-ta dhorte parbe.
    8. lekhok hisabe `jodi' bisoy ta mante parlam na..lekhoker chokh sob dekhbe...konta beli ful naki jesmin, sob nikhut-vabe dekhbe....ar niloy jehetu akashlina-r preme porese..seto aro besi khutie dekhbe...
    9. golper bunote aro jotnoban hao meye...
    10. makorsar jaler moto bunte hobe golpo...

    na thak onek kharap bollam....ebar shono...amar ek bondhu sudur america theke snow ball pathiechhe...jobabe ami bolechhi, thandi lagte pare...protuttore o janiechhe, garom jama pore naki khela jabe.....amar ki kora uchit!!!
    thx.....lekha ta chalie jeo....ok?

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।