যেভাবে গল্পের শুরু (ছোট গল্প -১)

১৯৪৭ সাল অর্থাৎ দেশ বিভাগের আগেই নিলয়ের নানার পরিবার পাবনায় এসে বসত গড়েন। পাথরতলায় প্রমোধ মিত্রের তিনবিঘার উপর বাগানবাড়িটা সেসময়েই কেনা হয়েছিল। বাগানবাড়ির বাগান এখন আর নেই। শুধু পুরো সীমানাজুরে নারকেল গাছের সারি যেন বাড়িটাকে পাহারা দিচ্ছে। তবে উত্তর পশ্চিমকোনে মোগলস্থাপত্যের অনুকরনে বিংশ শতাব্দির প্রারম্ভে তৈরী হওয়া দ্বিতল বাড়িটা এখনও সমহিমায় মাথা তুলে এর পূর্ব আভিজাত্য সম্পর্কে জানান দিয়ে যাচ্ছে। মাটি থেকে তিনফুট উঁচুতে বাড়ির ভিত্তি। সিড়ির দুপাশটাতে সিংহের হাতল। সিড়ি বেয়ে উঠলেই দাবার ছকের মতো সাদা আর কালো পাথরের মেঝে। বড় বড় জানালা, ঝুলন্ত বারান্দা, উঁচু সিলিং, ফুল লতা পাতায় কারুকাজময় লোহার পাত শক্ত পোক্ত পিলারগুলোকে ছুয়ে গেছে – সবমিলিয়ে বাড়িটা দেখলে খুব অহংকারী বলে মনে হয়। বাউন্ডারীর মধ্যেই বড় বাড়িটার পাশে ছোট্ট একতলা বাড়ি। আগে বোধহয় গোমস্তাদের থাকার জন্য তৈরী হয়েছিল। এখন একটা পরিবারকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তারাই বলতে গেলে এখন পুরো বাগানবাড়িটা দেখে রেখেছে। নিলয়ের মামা খালারা সবাই অনেক আগে থেকেই আমেরিকা প্রবাসী। মাঝে মধ্যে কেউ দেশে এলে এখানে এসে থাকে। তাই বাড়িটার ভেতরে পুরোপুরিই পশ্চিমা সংস্কার করা হয়েছে। লেক টাহো বা সান ডিয়াগোর কোন রিসর্ট থেকে এখানে থাকবার সুবিধা কোন অংশেই কম না। বিশাল জায়গার পুরোটাতেই সব ডোবানালা পরিষ্কার বলে ঢাকার তুলনায় এখানে মশার প্রকোপ একদম নেই বললেই চলে। যা একটু আছে সন্ধ্যেবেলায় একটু ধূপ পুড়োলেই সুর সুর করে সব সরে পরে।

নিলয় এবার দুমাসের প্রকল্প হাতে নিয়ে আমেরিকা থেকে দেশে এসে গত দেড় মাস ধরে পাথরতলার এই বাড়িটাতে থাকছে। মা মারা যাবার আগ পর্যন্ত প্রায় প্রতিবছরই দেশে আসা হতো বলে বাংলাটা সে অনর্গল বলতে পারে। পেশায় সে লেখক। এই পর্যন্ত বেশ কয়েকটা বই বের হয়েছে। শেষ বইটা বাজারে বেশ কাটতি হওয়াতে প্রকাশকের চাপটাও বেড়ে গেছে। আমেরিকার মানুষজন এখন খুব ভিন্ন সংস্কৃতির গল্প শুনতে চায়, বিশেষ করে ভারতীয়দের গল্প। ওখানে তো এখন ‘ব্যাক টু বেসিক‘ এই মূল্যবোধটাকে খুব জোড়েশোরে চালু করবার প্রচেষ্ঠা চলছে। সেখানে এখন এই ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষেরা খুব করে উঠে পরে লেগেছে পশ্চিমা রীতিনীতিগুলো আয়ত্ত করবার জন্য।
গত জন্মদিনে নিলয় ক্যাথেরিনের কাছ থেকে ’নীল দর্পন‘ বইটা পেয়েছিলো। মূল লেখক দীনবন্ধু মিত্র আর অনুবাদক মাইকেল মধুসূদন দত্ত। পৃথিবীর যে কোন দেশের যে কোন সময়ে সংগঠিত হওয়া বিপ্লব সম্পর্কে ক্যাথেরিনের আগ্রহ এবং জ্ঞান দুটোই অপরিসীম। বইটা দিয়ে ক্যাথেরিন বলেছিল, এই বিপ্লবটার সাথে কিন্তু তোমার নানার বাড়ি পাবনার মানুষজনের সক্রিয় অংশগ্রহন ছিল। সে সময়টাতে নিলয় তার পরবর্তী উপন্যাসের বিষয়বস্তু কি হবে এই নিয়ে এক ধরনের শুন্যতায় ভূগছিলো। বইটা যেন তাকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করলো। পেছনে নীল বিদ্রোহের ঘনঘটা আর সামনে এক ব্রিটিশ লর্ডের ছেলের সাথে এক গ্রাম্য তরুনীর প্রেম – ঘটনাটা ভালোই জমে উঠবে। মূলত দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে এবার তার এখানে আসা। এক নীল বিদ্রোহের উপর আরো কিছু তথ্য সংগ্রহ করা, দুই নিরিবিলিতে লেখাটা শেষ করা।

উপন্যাসটা সে ঠিক সময়মতোই শুরু করেছিলো এবং ভালোই এগুচ্ছিলো। কিন্তু সব কিছু তো আর নিজের নিয়ন্ত্রনে থাকে না। এখন মনে হচ্ছে কিভাবে জানি সব কিছুই তার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে। গত তিন চারদিন ধরে ঠিক মতো ঘুমাতে পারছে না। একটু কিছুক্ষন পর পর পানির পিপাসা। আজও মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে খুব সকালে উঠে। কিছুক্ষন ব্যায়াম করে তারপর লিখতে বসে। এসময় ঘুম ভাঙ্গলে তার সারাদিনের পরিকল্পনামাফিক চলার ছন্দপতন হয়। এখন আর সহজে ঘুমও আসবে না। লেখার টেবিলে এসে বসলো। হাতে কাগজ কলম টেনে নিল।

প্রিয় ক্যাথেরিন,

সব রকমের প্রযুক্তিবিহীন হয়ে ছিলাম লেখাতে পুরো মনঃসংযোগ করার জন্য। কিন্তু এর একটা খারাপ দিকও আছে। যেমন এই কয়দিনে অনেকবার তোমার সাথে কথা বলতে চেয়েছি কিন্তু বলার কোন উপায় নেই। ঢাকা থেকে মাত্র ষাট মাইল দূরে অথচ এই শহরটা যেন এখনো আটকে আছে কম্পিউটারবিহীন যুগে। আসাদের সাহায্যে একটা ছোট সাইবার ক্যাফের খোঁজ পাওয়া গেল। সেখানে গিয়ে তোমাকে ই-মেল করার মাঝপথে ইলেকট্রিসিটি চলে গেল। তাই এই কলম ধরা। ভাবছি ফেড-এক্সে পাঠবো। ওহো আসাদের পরিচয় তো দেওয়া হয়নি। ও এখানে আমার সাথে রয়েছে সার্বক্ষনিকভাবে যে কোন কাজে সাহায্য জন্য। বলতে পার আমার কেয়ারটাকার। গত সপ্তাহে ফুপু এসেছিলো। বললো সেখানে তুমি নাকি ফোন করেছিলে। এই বোহেমিয়ান জীবনে নিজেকে একদম বন্ধনহীন ভাবতে পারিনা কারণ এখনো তুমি আছ বলো। তবে আমার চিঠি লেখার কারণ তোমার অস্থিরতা থেকেও আমার নিজের ভেতরের অস্থিরতা দূর করা যেটা তোমাকে বলা না পর্যন্ত আমাকে বোধহয় খাঁদে আটকে পরা অবস্থায় থাকতে হবে। কিছুটা স্বার্থপরের মতো শোনাচ্ছে? কিন্তু আমি জানি আর কেউ না দিক, শেষ পর্যন্ত তুমিই আমাকে নিঃস্বার্থ মানুষের খেতাব দিবে।

আমার লেখার অগ্রগতি সম্পর্কে তোমার নিশ্চয় খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে। সেটার উত্তর আসলে আমার কাছেও নেই। যা জানতে চেয়েছিলাম তা তেমন ভাবে জানা হয়নি আর অন্যদিকে এমন কিছু জানলাম যাতে মনে হলো সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো খুব ধীরে ধীরে আরেকটা বিদ্রোহের বারুদ জমছে। ঢাকায় থাকতে লাামিয়ারা খুব করে বলেছিল যে আমি ইন্টারনেটে যতটুকু তথ্য সংগ্রহ করতে পারবো পাবনায় এসে তার থেকে বেশি কিছু তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব না। সত্যি বলতে কি ওরা খুব একটা ভুল বলেনি। এখানে নীল বিদ্রোহের কথা অনেকেই শোনেনি। অথচ চিন্তা করে দেখ কি রকম একটা প্রতিকুল প্রেক্ষাপটে এই পাবনা জেলার চাষীরা এই বিদ্রোহের স্ফুলিঙ্গ জ্বেলে দিয়েছিলো! অবাক হয়ে দেখলাম এই জেলার কৃতি সন্তানদের তালিকায় নীল বিদ্রোহের অন্যতম উদ্যোক্তা কাদের মোল্লার নাম নেই। অথচ সে সময়টার কথা ভাবলে এখনো আমি শিউরে উঠি, রোমাঞ্চ বোধ করি। মাত্র দুবছর আগে ১৮৫৭ সালে একটা ব্যর্থ সিপাহী বিদ্রোহের ফলে এই উপমহাদেশের কত হাজার তরুন প্রাণকে ঝরে যেতে হয়েছিলো। বিদ্রোহ দমনের নামে সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে এসেছিলো শাষকের চাবুকের আঘাত। সেই ক্ষত শুকোতে না শুকোতেই দেয়ালে পীঠ ঠেকে যাওয়া দরিদ্র চাষীরা গর্জে উঠে বলে উঠলো, ‘দরকার হলে ভিক্ষা বৃত্তি করবো, তবুও নীল চাষ করবো না‘। সিপাহীদের হাতে তো তাও অস্ত্র ছিল, কিন্তু এদের কি ছিল? শুধু একতাকে সম্বল করে পাবনাসহ আরো কয়েকটা অংশের হিন্দু মুসলিম চাষীরা নিরস্ত্র হাতে তাদের প্রতিবাদ জানিয়েছিল। অবশেষে তারা সফলও হয়েছিল। একদম অস্ত্রহীন সফল বিপ্লব। এটাই ছিল অহিংস আন্দোলনের প্রথম সূচনা। পরে গান্ধিজী এই ধারাটি অনুসরন করে তাঁর স্বদেশী আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিলেন। শুধু কি বিদেশী বনিকেরা, দেশীয় জমিদাররাই কি এদেরকে কম অত্যাচার করেছিল? নীল চাষের জন্য গরীব চাষীকে দিয়েছে চক্রাবৃদ্ধি হারের ঋণ যাকে ওরা দাদন বলতো। দাদনের জালে সারাজীবনের জন্য ওদেরকে বন্দী করে রাখেনি? এমন কি মরে গিয়েও নিস্তার ছিল না। আপনা আপনিই পরের প্রজন্মের ঘারে এই ঋণ চেপে বসতো।

আমি জানি যে এর সবই তুমি জান। তারপরও এসব প্রসঙ্গ মাথায় চলে আসলে এতো উত্তেজিত হয়ে পরি যে মনে হয় ভেতরে একটা নেকড়ে দাবিয়ে বেড়াচ্ছে। শুনে তুমি অবাক হচ্ছো? তোমার শান্ত নিলয়ের এই পরিবর্তন কেন? আসলে আমার রাগের কারণ এখানকার এবং এখনকার কৃষকদের অবস্থা দেখে। নীল বিদ্রোহের সেই আড়াইশ বছর পরও এইসব হতভাগ্য চাষীদের জীবন যেন একই চক্রাকারে ঘুরছে। সেই জমিদার নেই, বিলেতী সাহেবরা নেই – সেই জায়গা দখল নিয়েছে মহাজন, মধ্যসত্বভোগী, চাঁদাবাজ, সুবিধাবাদী এনজিও সেই সাথে এদের জন্মপাপ – গরীব হয়ে জন্মানোর দুর্ভাগ্য। ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকতে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ঋণের সফলতা নিয়ে তুমি আমার থেকেও বেশি উচ্ছ্বসিত ছিলে। কিন্তু কাছ থেকে এর আরেক রূপ দেখলাম।
সেদিন আসাদ আমাকে ওর গ্রাম মধুপুরে নিয়ে গিয়েছিলো। সেখানে পরিচয় হল রাবেয়ার সাথে। আসাদের বড় বোন। মহিলা চার বাচ্চা নিয়ে অল্প বয়সে বিধবা হয়েছিলো। নিজের বাবার বাড়িতেই আবার ফিরে এসেছে। থাকার তো একটা ব্যবস্থা হলো। কিন্তু বাচ্চাদের লেখাপড়া বা জীবন ধারণের জন্য আর সব মৌলিক অধিকারগুলোর কি হবে? এক্ষেত্রে ক্ষুদ্রঋণ সরবরাহকারী এনজিওগুলো বাতি ঘরের মতো আলোর দিশা দেয়। আর রাবেয়ারা যেন বিশাল সমুদ্রে পথহারানো এক একেকটা জাহাজ। ঋণ নিয়ে পাচঁটা মুরগী কিনেছিলো। সেখান থেকে তিন বছর পর ত্রিশটা মুরগী হয়। ডিম আর মুরগী বেচে ওদের ভালোই চলছিলো। কখনও ঋণের কিস্তি শোধ করতে বেগ পেতে হয়নি। ব্রাকের কথা তো শুনেছো। এরা ঘরে ঘরে গিয়ে গ্রামের বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে আসছে। রাবেয়ার বাচ্চারা ব্রাকের স্কুলে বিনে পয়সায় লেখাপড়া শিখতে পারছে। এভাবে চারটা বাচ্চা নিয়ে রাবেয়ার ভালোই চলছিলো। কিন্তু বিধি বাম। গত বছর এক মড়কে রাবেয়ার সব মুরগীগুলো মারা গেল। কিন্তু এনজিওর ঋণ আদায়কারী কর্মীতো আর তার এ বিপদে কোন ছাড় দেবে না। তখন তাদের কথা, আমরা ব্যবসা করছি। এভাবে ছাড় দিলে তো আর ব্যবসা করা যায় না। অথচ অন্য সময় এরা জনসেবার কথা বলে। ঋণ আদায়ের জন্য এরা এতো নির্দয় হতে পারে যে তার সাথে আমি সেই আঠারো শতকের জমিদারদের লাঠিয়ালদের কোন তফাৎ দেখি না। আর দাদনের মতোই এই ঋণের সুদের হার এতো বেশি যে একবার নিলে তা জোকের মতো লেগে থাকে। সহজে আর ঋণ শোধ হয়না। রাবেয়া তো অনেকবার পালিয়ে থেকেছে এই নব্য লাঠিয়ালদের হাত থেকে বাঁচার জন্য। শেষে যখন এরা রাবেয়ার ঘরের সব জিনিষপত্র নিয়ে যাচ্ছিলো তখন সে মহাজনের কাছ থেকে আরো অনেক উচ্চসুদের হারে টাকা এনে এদের কিস্তি শুরু করলো। এ ছাড়া এ গ্রামে থাকতে হলে রাবেয়ার আর কোন উপায় ছিল না। একেবারে শুন্যহস্তের কাউকে কিন্তু এরা ঋণ দেয়না। সেখানে রাবেয়া তো ঋণ খেলাপী। এই এনজিওর কাছ থেকে তার আর ঋণ পাবার সম্ভাবনা নেই। চার বছর আগে রাবেয়ার জীবনটা যেখানে ছিল, এখন সেটা তার থেকেও নীচে নেমে গেল। এখন এই অবস্থাকে তুমি নি বলবে? রাবেয়ার ভাগ্য খারাপ নাকি ক্ষুদ্র ঋণের অন্ধকার দিক? প্রতিটা ভালো জিনিষেরই কিছু খারাপ দিক থাকতে পারে এই যুক্তি দিয়ে রাবেয়ার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে আরো অনেক সফল কাহিনীর দিকে চোখ ফেরানো যায়। তবে আমার কি মনে হয় জান, এখনও ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহারিক প্রয়োগটা পরিপক্ক অবস্থায় এসে পৌছেনি। এখনও এটা নিয়ে বিস্তর গবেষনার প্রয়োজন আছে। কোনকিছু অধিকমাত্রায় জয়প্রিয় হয়ে গেলে এর উত্তরনটা থেমে যায়। আর তার ফল ভোগ করে রাবেয়াদের মতো ভাগ্যহীনারা। ইতিমধ্যেই ক্ষুদ্র ঋণের সফলতা নিয়ে যে আন্তর্জাতিক প্রচার হয়েছে তা আসলে অনেকটাই পুজিপতিদের কলকাঠি নাড়ানোর জন্য। এই পদ্ধতিটা মানুষকে একেবারে হীনদরিদ্র থেকে একটা প্রান্িতক অবস্থার মধ্যে ধরে রাখছে। তার মানে পুঁজিপতিরা অনেকটাই নিরাপদ। ফরাসী বিপ্লবের মতো কোন দুঃস্বপ্ন সহসা আর তাদের তাড়িয়ে বেড়াবে না।
ক্যালিফোর্নিয়াতে আমি যেদিন এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্চিলাম, সেদিন সিসকো সিস্টেমের পাশে দেখলাম বেশ কয়েকজন সুইপার প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান ধর্মঘট করছে। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘সিসকোর প্রধান এক্সিকিউটিভ অফিসার বছরে তের মিলিয়ন ডলার বেতন নেয়। তার চাকুরী থাকে আর বছরে মাত্র চল্লিশ হাজার ডলার বেতন নেওয়া ষাটজন সুইপারের চাকুরী চলে যায়।‘ এটা কিরকম গণতন্ত্র যেখানে রাজার কথাই সব, প্রজারা ক্রিয়নক মাত্র? এই গণতন্ত্রেরতো আরো বিকাশ হতে পারতো। সব রোগের সমাধান যেমন এক ঔষুধ দিয়ে হয় না ঠিক তেমনি ধনী-গরীব, আকার-আয়তন, শিক্ষা-অশিক্ষা এ সব কিছু বিচার না করে একই রকম গণতন্ত্র কি সব দেশে খাটে? বর্তমানের এই গণতন্ত্রের লেবাসে আসলে প্রসার ঘটছে পুঁজিবাদের, কিছু ধনিকশ্রেনীর। তারাই নিয়ন্ত্রন করছে মিডিয়া, আর এই মিডিয়া কড়া শিক্ষকের মতো শিখিয়ে দিচ্ছে কোনটাকে ঠিক বলতে হবে আর কোনটাকে ভুল বলতে হবে। আমরা মধ্যবিত্তরা সুবোধ ছাত্রের মতো এক হাতে মুখে আঙ্গুল দিয়ে আরেক হাত দিয়ে ললিপপ খাচ্ছি। আর দরিদ্র প্রান্িতক মানুষেরা যারা এই মিডিয়ার শ্রেনীকক্ষের ছাত্র না – তারা মরলো কি বাঁচলো কে সেই খবর রাখে?

তোমার জন্য দুটো সংবাদ আছে। একটা ভালো আরেকটা খারাপ। খারাপটাই আগে বলি।

আমার প্রকাশক বারবারা আমার উপন্যাসের এবারের প্লটটা শুনে খুবই উত্তেজিত ছিল। ওর ধারণা আরেকটা ওয়ার এন্ড লাভ এর মতো উপন্যাস হতে যাচ্ছে। কিন্তু না বারবারাকে আশাভঙ্গ হতে হবে। অর্ধেক এগুনোর পর নিজের বিবেকের সাথে যুদ্ধ করে থেমে যেতে হলো। তার প্রধান কারণ সে যেভাবে চাইবে সেভাবে আমি লিখতে পারবো না। বারবারাকেও তো বই বেঁচে খেতে হয়। নির্জনে বসে নতুন উপলদ্ধি থেকে এখন এই পুঁজিবাদ, ধনিকশ্রেনী নিয়ে যেসব কথা আমি লিখব তা আমেরিকার বাজারে চলবে না। অর্থাৎ গত চারমাস ধরে যে খাটা খাটুনীটা করলাম তা আপাতত ডীপ ফ্রিজে তুলে রাখতে হচ্ছে। এটাই ছিল দুঃসংবাদ।
আর সুসংবাদ হলো নতুন একটা উপন্যাসে হাত দিয়েছি। কোন ইন্টারনেটা ছাড়া, লাইব্রেরীতে না গিয়ে, শুধু নিজের চোখ, মাথা,হাতের উপর নির্ভর করে। বিষয় বস্তু হচ্ছে প্রেম। একজন দ্বিতীয় প্রজন্মের আমেরিকান ছেলে, যার বলতে গেলে পুরোটাই আমেরিকান তার সাথে বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত মফস্বল শহরে বেড়ে উঠা এক মেয়ের সাথে সম্পর্ক নিয়ে উপন্যাসটা এগুচ্ছে। জানতে চাচ্ছ অনুপ্রেরনাটা কোথেকে আসলো? সেটা লেখার জন্যই তো এই চিঠির অবতারনা।

৪,১১৫ বার দেখা হয়েছে

২৭ টি মন্তব্য : “যেভাবে গল্পের শুরু (ছোট গল্প -১)”

  1. দিহান আহসান

    আপি খুব সুন্দর হয়েছে।
    গল্পের মধ্যে বাড়িটার বর্ণনা, ক্যাথেরিনকে লেখা চিঠি সব মিলিয়ে চমৎকার লাগলো। :hatsoff: :hatsoff:
    ৫ তারা দিয়ে গেলাম,
    পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। 🙂

    জবাব দিন
  2. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    কিছু টাইপো আছে আপু। জুড়ে আর আর অবতারণা তে র,ড় এর উলটা পালটা হয়ে গেছে আর

    মাত্র দুবছর আগে ১৮৫৭ সালে একটা ব্যর্থ সিপাহী বিদ্রোহের ফলে

    এটা মনে হয় দুশ বছর হবে

    জবাব দিন
  3. রকিব (০১-০৭)

    অসাধারন সূচনা। :boss: :boss:

    জানতে চাচ্ছ অনুপ্রেরনাটা কোথেকে আসলো? সেটা লেখার জন্যই তো এই চিঠির অবতাড়না।

    এবারে বোধহয় গল্প মূল অংশে মোড় নিচ্ছে।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  4. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    ওরে খাইছে, ইন্টারন্যাশনাল প্রেম কাহিনী শুরু হইবো দেখি :awesome:

    তবে আপা একটা জিনিস জানতে চাচ্ছি, আপনি কি গল্প লিখছেন, নাকি উপন্যাস? সুরটা কিন্তু প্রলম্বিত করেছেন, উপন্যাসে যেরকম থাকে আরকি।

    এর আগেও লক্ষ্য করেছি আপনি গল্পের শুরুতে আলাদা হেডিং দেন, আপনার নাম সহ। এটা রিপিট হয়ে যাচ্ছে, দরকার নেই মনে হয়। কারন লেখাটা আপনার নামেই আসছে, অতিথি ব্লগার (নামহীন ব্লগার) নামে নয়।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  5. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছিলো, তার থেকে কিছু ভাবনা এসেছিলো। সেই ভাবনাগুলো যাতে হারিয়ে না যায় তাই গল্পাকারে ধরে রাখার চেষ্টা করেছি।
    একজন পাঠক হিসেবে বুঝি সবকিছু পড়তে অতো আরাম হয় না।তারপরও পড়ার জন্য ধন্যবাদ সবাইকে।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  6. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    কাহিনী ঝুলতেসে ঝুলুক । সূচনাটা অনেক জীবনের সত্য গল্প । কিছু অংশে ভীষণ চমকে উঠেছি । কেন উঠেছি সে কথা পরে বলব । আপাতত ভালো লাগা প্রারম্ভিকাটুকু সংগ্রহে থাকুক । পুনশ্চঃ মোবাইল থেকে কমেন্ট করলাম বলে রেটিং দিতে পারলাম না । পরে কখনো এসে পাঁচতারা দাগিয়ে যাব ।

    জবাব দিন
  7. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    শান্তা কথা রেখেছো। ধন্যবাদ। :hatsoff:

    ভিন্নরকম প্লট। ইতিহাস আশ্রিত। গল্প আমাকে দিয়ে হয়না, এর ভালো কোনো সমালোচকও নই। তবে পাঠক হিসাবে অনুগত। তোমার লেখাটা ভালো হয়েছে। নিজের ভালোলাগাটা প্রকাশ করতে এতো ভনিতা। ভালো লাগার কোনো কিছুতে এক লাইনে মন্তব্য সারতে মন চায় না। মনে হয় লেখকের প্রতি অন্যায় করছি।

    এটা কি ছোট গল্প হিসাবেই রাখছো? নাকি ধারাবাহিক? বড় গল্প অথবা উপন্যাস? অথবা কিছুই ঠিক করোনি? শুধু ছোট গল্প হলে আপত্তি নেই। তবে বড় গল্প বা উপন্যাসে রূপ দিলে আরো ভালো লাগবে।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
    • ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

      ধন্যবাদ সানা ভাই।আমি গল্পটা শেষ করে পোস্টে দিয়েছি। এর আগে আমি ছেলেদের দৃষ্টিকোন থেকে কিছু লিখিনি। তাই প্রথমবার বেশিদূর এগুইনি। তবে গত এক বছর ধরে একটা উপন্যাস লিখছি, তা তিন মাস ধরে বন্ধ কারন তথ্যের অভাবে এগুতে পারছি না।


      “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
      ― Mahatma Gandhi

      জবাব দিন
  8. হাসনাইন (৯৯-০৫)

    নিলয় কিংবা তার নায়ক বিপ্লবের ইংগিত দিচ্ছে। আগ্রহ প্লাস অপেক্ষা উপরে স্কয়ার নিয়ে বসে আছে।

    গল্পের মাধ্যমে ইতিহাস সাথে ব্যাখা; আমার ভাল লাগছে আপু। 🙂

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ওয়াহিদা নূর আফজা (১৯৮৫-১৯৯১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।