বদসুরত

ক্লাসে ঢুকল সোহানা । ও একবার আমার দিকে তাকাল ।তারপর ফারিয়ার পাশে গিয়ে বসে পড়ল ।সোহানা যে আহামরি সুন্দরী টাইপের কিছু তা কিন্তু না ।ও খুব ভালো মেয়ে ।আমাদের ক্লাসের ছেলেরাও আমার সাথে কথা বলে না ,মেয়েরা তো দূরের কথা ।কারণ কাছে এর । ছোটবেলায় মার হাত থেকে গরম দুধ ছলকে পড়ে আমার মুখে । পুড়ে গিয়েছিল বেশীর ভাগ অংশ । সেই পোড়া দাগ আমার মুখটাকে করে দিয়েছে ভয়ংকর ।সবার কাছে আমি বদসুরত । আমাকে দেখলে ছোট বাচ্চারাও কেঁদে উঠে ।এই কারণে নিজের ছোট ভাইবোনগুলোকেও আজ পর্যন্ত কোলে নেয়া হয় নি । তবে আমি একটা কথা বিশ্বাস করি যদি পৃথিবীতে সত্য ভালোবাসা বলে  কিছু থাকে তাহলে একদিন আমাকে ভালোবাসবে এমন মানুষের দেখা আমি পাবই ।আমার বাহ্যিক এই কদাকার রূপটার বদলে আমার ভেতরটা তার চোখে পড়বে । আমি আজ পর্যন্ত কোন অন্যায় করি নি ।আমি জানি আমার নিঃসঙ্গ এ জীবনে একদিন এমন একজন আসবে যে আমাকে সত্যি ভালোবাসবে , আমার হাত ধরে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজবে , আমার চোখে অপার ভালোবাসা নিয়ে তাকাবে ।সোহানা আমার সেই একজন । ওকে আমি ভালোবাসি । ভীষণ ভালোবাসি ।


টনি ও রনি ।দুই ভাই ।জমজ । টনি রনির চেয়ে ২ মিনিটের বড় ।ওদের বর্তমান বয়স ৭ বছর ।টনিকে দেখলে আমার একটা কথাই মনে হয়

“দুষ্টের শিরোমণি লঙ্কার রাজা
চুপি চুপি খাও তুমি চানাচুর ভাজা”

রনি এর উল্টা । একেবারে চুপচাপ ।দরকার ছাড়া কোন কথা বলে না । কারো সাথে খেলেও না । সময় মত হোম ওয়ার্ক করে , নিজের হাতে খায় , গোসল করে আয়না চিরুনি নিয়ে বসে পড়ে ।চুল আচড়াবে বলে । এই ছেলেটার এই একটাই শখ ।হেয়ার স্টাইল ।
ওদের সাথে আমার দেখা হয়েছে কয়েকদিন আগে । ওদের বাসার কাছেই একটা পার্ক । বিকালে ওদের ছোট দুইটা সাইকেল নিয়ে চলে আসে এখানে ।টনি পার্কের সামনের একটা গাছ উঠে পড়েছিল সেদিন ।তারপর আর নামতে পারছিল না ।টনি গাছে বসে কাঁদতে থাকে , রনি নিচে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে । আমি প্রতি বিকালে এখানে আসি ।ওদের কাঁদতে দেখে আমি এগিয়ে গেলাম ।টনিকে গাছ থেকে নামালাম ।টনি আর রনি এর পর থেকে আমার ভক্ত । সারা দুনিয়াতে এ দুটা ছেলেই মনে হয় ভয় পায় না আমাকে । আমি পার্কে এলেই রনি এসে আমার কোলের উপর বসে থাকে । টনি দুষ্টামি করে ক্লান্ত হয়ে গেলে আমার কাঁধে চেপে বসে ।

সোহানার সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল একটু অন্যরকম ভাবে ।আমি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি রাতে ।সে রাতেও ঘুমিয়েছিলাম ।হঠাত্ ফোন বাজার শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় । রিসিভ করতেই শুনি ওপাশে কেউ কাঁদছে ।

হ্যালো

কে

আমি জানি না তুমি আমাকে চিনবা কিনা । আমি তোমার সাথেই পড়ি । ম্যাথে ।

তোমার নাম কি ?

সোহানা ।চিনছো ?

হুম ।কেন ফোন দিছো ?

আমি বিপদে পড়ে তোমার হেল্প চাচ্ছি । আমার বাবা হাসপাতালে ।তাকে ব্লাড দিতে হবে । তার ব্লাড গ্রুপ O নেগেটিভ ।কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না ।তুমি এখনি মডার্ণ হসপিটালে চলে আসো ।ব্লাড দিতে হবে

আমি সে রাতে ওর বাবাকে ব্লাড দিলাম ।সারারাত হাসপাতালেই ছিলাম । সকালে চলে আসি ।এরপর ও মাঝে মাঝে ফোন দিতো ।কথা হতো আমাদের ।মাঝে মাঝে বাইরে খেতে যেতাম আমরা ।তবে ক্লাসে আমরা কেউ কারো সাথে কথা বলতাম । ও নিষেধ করেছিল । কেন করেছে আমি জানি না ।সারা দুনিয়াতে ও আমার একটা মাত্র ফ্রেন্ড ।না, এখন আর শুধু ফ্রেন্ড না । আমার ভালোবাসা । তবে কথাটা ওকে বলা হয় নি ।তবে খুব দ্রুত ওকে বলব ।

সোহানা

বলো

তোমাকে একটা কথা বলার ছিল
বলো

আমি তোমাকে ভালোবাসি

সোহানা চুপ করে আছে ।একসময় বলল

আজ আর এটা নিয়ে কথা বলব না ।আমি ফোন রাখতেছি ।

এটাই ছিল ওর সাথে আমার শেষ কথা । আমি ওকে প্রপোজ করেছিলাম আমাদের অনার্সের রেজাল্টের পর ।প্রপোজ করার পর থেকেই ওর ফোন বন্ধ । ওর বাসার ঠিকানা জানতাম না ।অনেক কষ্টে ওর বাসার ঠিকানা জোগাড় করে গিয়ে দেখি বড় একটা তালা ঝুলছে ।আমার সারা দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল ।আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করব । মাসখানেক পর একটা পার্সেল আসে
আমি পার্সেলটা খুললাম ।অনেক কাগজ মোড়ানো ।কাগজগুলো খুলতেই পেলাম একটা আয়না ।খুব সস্তা আয়না ।সাথে একটা চিরকুট । আমি চিরকুট টা পড়তে লাগলাম

মুহিন ,
প্রেম ভালোবাসা সবার জন্য না । তুমি বোধ হয় অনেকদিন আয়নায় নিজের চেহারা দেখোনি । তাই আয়নাটা পাঠালাম । ইন্ডিয়া যাচ্ছি হানিমুনে ।নিজের মতো কাউকে খুঁজে নিও ।আর নিজের ভাগ্যের জন্য নিজের মাকে দুষতে পারো । she is the real bitch

আমি স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলাম ।

টনি আর রনি আমাকে মামা ডাকে ।আমার সব কথা শুনত ওরা। টনি আর রনিকে আমার এক বন্ধুর ডাকবাংলোতে নিয়ে গেলাম ।খাবারের সাথে অল্প ব্রোমাজিপাম মিশিয়ে দিলাম । ওরা দুজন ই ঘুমিয়ে গেল ।
ওদের বাবা দেশের বাইরে । এ সময়টাই খুঁজছিলাম ।ফোন করলাম ওদের মাকে ।পুলিশ কে জানালে বাচ্চা দুটাকে মেরে ফেলব । ওদের মাকেও জানিয়ে দিলাম কথাটা ।চলে আসতে বললাম বাংলোয় এবং একা ।
অনেকদিন পর আবার দেখা টনি রনির মার সাথে । আমাকে দেখে যেন ও ভুত দেখল । আমি একটু হাসলাম ।

কেমন আছো সোহানা ?

আমার ছেলেরা কোথায় ?

ওরা ভালো আছে ।ওদের কথা পরে হবে । এখন ভালো করে একটু দেখোতো এই আয়না টা চিনতে পারো কি না ? তুমি পাঠিয়েছিলে । আর এই চিরকুট টা ।অপেক্ষার পালা শেষ আজ। আজ বদলা নেবার সময় । আসো আমার সাথে ।

টনি রনির ঘুম ভেঙেছে ।ওরা বসে আছে । আমি সোহানাকে ওদের রুমে নিয়ে বেঁধে ফেললাম । ও চিত্কার করতে লাগল । টনি খুব মজা পাচ্ছে ।খুব হাসছে । রনি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ।

সোহানা , প্রেম ভালোবাসা আমার মত বদ সুরতদের জন্য নয় । তুমিইতো বলেছিলে ।তোমার এক ছেলেকে আজ আমি আমার মত ডিসফিগার করব । বল কাকে করব ? না বললে দুটাকেই মেরে ফেলব । চাইলে দুজনকেই বাঁচাতে পার । তবে একজন হয়ে যাবে ডিসফিগারড । দেখি তখন নিজের ছেলেকে ভালোবাসতে পারো কিনা ।নাকি বদসুরত বলে নিজের ছেলেকেও দূরে ঠেলে দাও।

আমি এবার টনি রনিকেও বেঁধে ফেললাম ।ওরা তিন জন ই চিত্কার করছে ।আমি ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে দিলাম

“উলালা উলালা তুহি মেরি ফ্যান্টাসি”

আয়নাটা সোহানার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমি বাইরে চলে এলাম । একটা সিগারেট ধরালাম ।দেখি টনি আর রনি কাকে বেছে নেবে সোহানা ? একজন কে যে বাছতেই হবে ওর!!!!!


 

৪,৪৫৫ বার দেখা হয়েছে

৭ টি মন্তব্য : “বদসুরত”

  1. অরূপ (৮১-৮৭)

    প্রথমেই বলি ভালো লেগছে গল্পটা।
    আমি এই নিয়ে এটা তৃতীয় বার পড়লাম। এর আগে ১১৭ বার দেখা হয়েছে। কোন মন্তব্য আসেনি কেন সেটা ভাবছিলাম।
    ভেতরের অন্ধকারকে পাঠকের চোখের সামনে নিয়ে আসতে পারাটা একটা দুর্লভগুন। প্রতিবার পড়া শেষে খচখচ করা একটা অস্বস্তি নিয়ে অন্য লেখায় যাই।
    :thumbup: :thumbup: :thumbup: (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)


    নিজে কানা পথ চেনে না
    পরকে ডাকে বার বার

    জবাব দিন
  2. অরূপ (৮১-৮৭)

    প্রথমেই বলি ভালো লেগছে গল্পটা।
    আমি এই নিয়ে এটা তৃতীয় বার পড়লাম। এর আগে ১১৭ বার দেখা হয়েছে। কোন মন্তব্য আসেনি কেন সেটা ভাবছিলাম।
    ভেতরের অন্ধকারকে পাঠকের চোখের সামনে নিয়ে আসতে পারাটা একটা দুর্লভগুন। প্রতিবার পড়া শেষে খচখচ করা একটা অস্বস্তি নিয়ে অন্য লেখায় যাই।
    :thumbup: :thumbup: :thumbup:


    নিজে কানা পথ চেনে না
    পরকে ডাকে বার বার

    জবাব দিন
  3. আল্লা..... (omg) আপনি এতোখারাপ!
    নিজের চেহারা টা এমন বদ সুরত বলে জোর
    করে অন্নের চেহারাও এমন করতে চাইছেন
    ইচ্ছে কিরে!! তাও আবার কি ভালো ২টা ছোট
    বাচ্চার জারা আপনাকে পছন্দ করত! তাও আবার
    ওদের মার হাতে!!!
    আপনি একটা.........
    নাহ আমি আর ভাবতে পারছিনা.... 🙁

    আরে ধুর, এটাতো গল্প আমি এত সিরিয়াস হচ্ছি
    কেন!! 🙂

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : নূর (২০০২-২০০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।