এবস্ট্রাক্ট আর্ট

সুরঙ্গের শেষে আলো দেখতে পাচ্ছি কয়দিন ধরে। এটাই কাল হয়েছে, একরাশ অবসাদ আমাকে আষ্টেপিষ্টে বেঁধে দিয়েছে। মাথার মাঝে ভোটকা সুমন (এখনকার স্লিম সুমন না) বেজ গিটার ঝুলায়ে গান গায়ঃ

“আর পারি না আর পারি না, আমার ভীষন ক্লান্ত লাগে”

মানুষ বড়ই আজিব প্রাণী। সত্যিকারের দুঃখ না এইগুলা, তারপরও দুঃখ দুঃখ ভাব। দুঃখবিলাস, স্বপ্নবিলাস আরো কত কি। রাস্তার ধারে যে শিশুটা এইবেলার খাওয়াটা ফেলে দেওয়া বিরিয়ানির প্যাকেট খুঁটে চালিয়ে নিল, তার দিকে তাকিয়ে আমাদের কুকঁড়ে যাওয়া উচিত। তবু, আজিব প্রাণী মানুষ খালি চিল্লায়। হেন নাই, তেন নাই, হেন ভালো লাগে না, তেন ভালো লাগে না। কেন বাপু, তিনবেলা খাইতে পারতেছো, মাথার উপর ছাদ আছে, ঠান্ডা লাগলে গায়ে টেনে নেওয়ার মত কম্বল আছে, তবু মন ভরে না? টাকা চুরি করতে হবে, বিদেশের একাউন্ট ফুলাইতে ফাঁপাইতে হবে। চোরের মা হিসাবে বড় গলায় চিল্লাইতে হবে। হল দখল করতে হবে, টেন্ডারবাজি করতে হবে। তারপর অকারণেই কাউকে মরে যেতে হবে। চারিদিকে খালি চাই, চাই, চাই। সংসদ সদস্য হিসাবে ক্ষমতায় হয় না, স্থানীয় সরকারে ভাগ বসাইতে হবে। আইন বানানো বাদ দিয়া ব্রিজ বানাইতে হবে। আইন বানায়া কবে কে টাকা পাইছে? ব্রিজ বানাইলে বরং লাভ, ইধারকা মাল উধার, উধারকা মাল ইধার। মাঝখানে কিছু নীতিবাগীশ স্বপ্নবিলাসী যুবকের মাথায় মাল উঠে, বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে। লাভ নাই রে পঞ্চা।

আমার এইখানে এক ছোটভাই আছে। অর্থনীতি পড়ে। তাঁর মামা ছিলেন ঢাকার আর্বান গেরিলাদের একজন, রুমির গ্রুপের। ১৪ই ডিসেম্বর ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলছে। উনি ঢাকা ভার্সিটি থেকে পাস করছিলেন। বাইরে এসে পড়ার চিন্তা বাদ দিয়ে দেশের জন্য যুদ্ধে গেলেন এবং মরে গেলেন। রুমিও নাকি এইরকম ছিল। আমেরিকায় তার জন্য সুন্দর ভবিষ্যত অপেক্ষা করছিল। বাদ দিয়ে গেলেন যুদ্ধে। কয়দিন ধরে মাথায় ঘুরতেছে, আমি তাঁদের জায়গায় হইলে কি করতাম? আমার ভিতরের ক্ষোভ তখন অর্থহীন হয়ে যায়। বুঝে যাই, আমার মাথায় মাল উঠবে কয়দিন পর পর, তড়পাতড়পি করবো। তারপর আমিও আর সবার মতো হয়ে যাব। বিরাট হাঁ করে দুনিয়া গিলতে আসবো।

(ডিসক্লেইমারঃ লিখতে চাইছিলাম রান্না বিষয়ক একটা লেখা। আবোল তাবোল কি সব মনে আসল, সব তুইলা দিলাম। ভালো না লাগলে ক্ষমা ঘেন্না কইরা দিয়েন। এই লেখার মানে খুঁজতে যায়েন না। ইহা একটি এবস্ট্রাক্ট আর্ট। )

১,৯৭৮ বার দেখা হয়েছে

৩২ টি মন্তব্য : “এবস্ট্রাক্ট আর্ট”

  1. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    এবস্ট্র্যাক্ট আর্টের মানে নাই এইটা কেডায় কইলো 😛
    হুহু, একজন বিদগ্ধ আর্ট ক্রিটিক হিসেবে পুরা মানেই তো বুঝে গেলুম 😀

    মাথায় যে রেগুলার ইন্টারভ্যালে গুডস উইঠা যাইতাছে এইটাই বা কয়জনের হয় এখন :thumbup: :thumbup: আমরা সবাইই হয়তো একটা রেজিমেন্টাল সাইকোলজিতে দুনিয়া গিলতে যাবো সুযোগ পেলেই, কিন্তু অই কন্ডিশনাল তড়পানিটাও যে সাথে করে নিয়ে যাবো তার কথাইতো বলছে এই লেখাটা, (ওরে কি দিলুমরে :hatsoff: )
    তৌফিক, জটিল বাডি :thumbup:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    হুমম... মাথা অনেকদিন সুইচ অফ করে রেখেছিলাম... কিন্তু এই মুহুর্তে এটিএন বাংলায় বিডিআর এর শহীদ পরিবারদের সাক্ষাতকার নিয়ে অনুষ্ঠান 'কেমনে ভুলিব' দেখে অনেকগুলো সুইচ আবার এক সাথে অন হয়ে গিয়েছে।
    বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার...


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. রকিব (০১-০৭)
    মাঝখানে কিছু নীতিবাগীশ স্বপ্নবিলাসী যুবকের মাথায় মাল উঠে, বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে। লাভ নাই রে পঞ্চা।

    গুরু তাও তো কিছু স্বপ্ন দেখে, হয়তো ঐটুকুই আত্মসন্তুষ্টি।
    ভালো লাগছে ভাইয়া।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  4. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    ঐ মিয়া, তুমি না সায়েন্সের পোলা? তাইলে আর্টসে ক্যামনে? :grr:

    মাঝখানে কিছু নীতিবাগীশ স্বপ্নবিলাসী যুবকের মাথায় মাল উঠে, বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে। লাভ নাই রে পঞ্চা।

    -বুঝলাম। 😀


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
    • তৌফিক (৯৬-০২)

      জ্বি, আমি রুমার ছোট ভাই। আপনাদের ব্যাচের অনেককে চিনলেও আপনার নামের সাথে চেহারা মিলাইতে পারছি না। আপা তো মা হয়ে গেছে, এমন মা হইছে যে ছেলে পাত্তা দেয় না। 😀 ছেলে নানী আর খালা বলতে অজ্ঞান।

      আমার বেড়ানোর জায়গা বাড়লো, অটোয়াতে গেলে আপনার ঐখানে গিয়া একবেলা কবজি ডুবায়া ইনশাল্লাহ... 😀

      জবাব দিন
  5. কামরুলতপু (৯৬-০২)
    আর পারি না আর পারি না, আমার ভীষন ক্লান্ত লাগে

    আমিও আর পারিনারে দোস্ত। ভী----ষণ ক্লান্তি লাগে।

    তোর লেখাটা ভাল লাগল। আমারো মাথায় উঠে মাঝে মাঝেই।

    জবাব দিন
  6. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    সমস্যা কী ভাই??
    সুড়ঙ্গের শেষে আলো দেইখ্যা ফেললা নাকি।কাম সারছে আমি তো কিছুই দেখি না। শুধুই গ্রে আলো - আলো আঁধারের ধোয়াশা দেখি।
    খবর কী তোমার? নেট দুনিয়া থেকে দুই সপ্তাহের স্বেচ্ছা নির্বাসন নিছিলাম। তাই ব্লগে আইসা আবার নতুন নতুন লাগতেসে।
    অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট বইল্যা মানে বুঝার চেষ্টা করলাম না। অবশ্যি আমি এমনিতেও এক ধরণের বিষণ্ণ নিরর্থকতায় ভুগি। তয় এই লেখা পইড়া মনে হয় আজব প্রাণী মানুষের চেয়ে আমি আড়ো বেশি আজব কারন আমার চিন্তাগুলো কেন যানি এমন না। আমার কিছুই করতে ইচ্ছা করে না কিছুই হইতে ইচ্ছা করে না শুধুই যাপিত জীবনকে একঘেয়ে ভাবে যাপন করে যাই কোন অদৃশ্যের অজানা উদ্দেশ্য পূরণে।
    কমেন্ট কি বেশি আঁতলামিপূর্ণ হয়া যায়তাসে নাকি।
    এইবেলা থামি।

    জবাব দিন
  7. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    তৌফিক,

    একটা মজা করি তোমার পোষ্টে, মাইন্ড কইরো না কিন্তু। নিচের উক্তিটা ব্যবচ্ছেদ করি, দেখা যাক কি পাওয়া যায়।-

    মাঝখানে কিছু নীতিবাগীশ স্বপ্নবিলাসী যুবকের মাথায় মাল উঠে, বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে। লাভ নাই রে পঞ্চা।

    এক, নীতিবাগীশ কথাটা বিপ্লবীদের বেলায় প্রয়োগ করা কঠিন। কারণ, তারা প্রচলিত সমাজের বিরুদ্ধে লড়ে। তারমানে, প্রচলিত সমাজের নিয়মনীতির বিরুদ্ধেই। তাইলে, নীতিবাগীশ হইলো ক্যামনে? তবে স্বপ্নবিলাসীদের নীতিবাগীশ হওয়ার সুযোগ আছে। কারণ, শুয়ে-বসে স্বপ্ন দেখতে নিয়মনীতি ভাঙ্গা লাগে না।

    দুই, বিপ্লবের জন্য স্বপ্ন দেখতেই হয়, কিন্তু বিপ্লবীরা কি 'স্বপ্নবিলাসী'? স্বপ্নবিলাস বলতে আমরা কি বুঝি?- আমার ধারনা, কাঁথামুড়ি দিয়ে শুয়ে-বসে (অথবা এই রকম আর কিছু) স্বপ্ন দেখা হচ্ছে স্বপ্নবিলাস। বিল্পবীকে কিন্তু কাঁথা-বিছানা-আরামকেদারা'র সেই অলস জীবনের ঠিক উল্টো জীবন বরন করতে হয়।

    তিন, বিপ্লব কি শুধু 'যুবকেরাই' করে, যুবতীরা করে না? তাদের কি কোথায় ওঠে?- ইলা মিত্র'র নাম খিয়াল কইরা।

    চার, 'রে পঞ্চা' সম্বোধনটা দুই ধরনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে হতে পারে, হয় খুবই নিকট বন্ধু, না হয় কাজের লোক। প্রথমক্ষেত্রে সমস্যা তেমন না থাকলেও দ্বিতীয়টায় সমস্যা আছে। কাজের লোকেরা কখনোই 'স্বপ্নবিলাস' করার মত অবসর পায় না, সারা জীবনেও।

    -তাইলে, শেষ পর্যন্ত কি দেখা গেলো?

    একারণেই বলি, বিপ্লব নীতিবাগীশ-স্বপ্নবিলাসী-যুবকের কাজ নয়। - কাজেই, তাদেরকে দিয়ে সেটা হওয়ারও কথা নয়, হয়ও না।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
    • তৌফিক (৯৬-০২)

      মাহমুদ ভাই, এইকারণেই আপনি বস। আমি তো আফসোস করলাম যে আমাদের দিয়ে হবে না।

      বিপ্লব কি শুধু ‘যুবকেরাই’ করে, যুবতীরা করে না? তাদের কি কোথায় ওঠে?- ইলা মিত্র’র নাম খিয়াল কইরা।

      ইলা মিত্রকে আমি খুব ভালো পাই। কতটুকু বিশ্বাস থাকলে এরকম করা যায়। আমার বউ এই লেখা পড়লে একই প্রশ্ন করতো। নারীবাদী বউ, খুব বুইঝা কথা কইতে হয়। 😐 আসলে মাথায় কিছু আউলা চিন্তা আসছিল, লিখে ফেললাম। লিখতে চাইছিলাম নিজের রান্না করার অভিজ্ঞতা নিয়ে, রান্নায় কেমন করে ইঞ্জিনিয়ারিং ইকোনমিক্সের কস্ট বেনিফিট এনালাইসিস চালানো যায় এই বিষয়ে বিতলামি মার্কা লেখা। ফার্স্ট দুইটা লাইন লেখার পরই যে কি হইল কইতে পারুম না। তেমন কিছু চিন্তা করে লিখি নাই। কিন্তু আপনার এনালাইসিস দেখে মনে হইতেছে এই কথাগুলার মাঝে যে মানে লুকায়া আছে আমি নিজেই তা জানতাম না।

      অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, সময় নিয়ে মন্তব্য করার জন্য। আপনি খুব ভালো টিচার হওয়ার কথা, তেল দিতাছি না। আমি দেখছি আপনি সবসময় অন্যের মাঝে (আমার মাঝে তো বটেই) চিন্তার সূত্র ধরিয়ে দেন, শিখানোর জন্য সবচেয়ে ভালো টেকনিক। আমি আমার টিউটোরিয়াল ক্লাসগুলাতে এইটা করার চেষ্টা করছি, কিন্তু লাভ হয় না। পোলাপাইন খালি উচ্চ নম্বরের সিঁড়ি খোঁজে, সলুশ্যন পাইলে আর কিছু লাগে না।

      জবাব দিন
      • তৌফিক (৯৬-০২)

        সরি, আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছিলাম। পঞ্চা নামটা নেয়া হয়েছে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় (খুব সম্ভবত)-এর টেনিদার কোন লেখা থেকে। ওইখানে একটা ডায়লগ ছিলঃ চালিয়ে যা পঞ্চা। আমার মাথায় ঢুকে গেছিল ওই লাইনটা। এখনো ঢুকে বসে আছে। 🙂

        জবাব দিন
        • মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

          যাক বাবা, তুমি ধরতে পারছো আমি কি কইতে চাইছিলাম।

          চালিয়ে যা পঞ্চা।

          -হুম, আমি তাইলে ঠিকই ধরেছিলাম যে 'পঞ্চা' একজনের আজ্ঞাবাহী। হুকুমদাতা বিপ্লবের 'স্বপ্ন দেখার' কাজটা নিজে নিছে, আর বিপ্লব 'করার' কাজটা তার আজ্ঞাবাহীদের (অনুচর, অনুসারী) জন্য রেখেছে। -সাধু, সাধু। এক্কেবারে বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির সভাপতি 'মঞ্জুরুল খানের' মত (উনি আমাদের গিরামের প্রতিবেশী কি না B-) )।


          There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

          জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।