আচার ০১৮: পরবাসীর রোজনামচা

১।
গত তিন চার দিন ধরে বাসা থেকে বের হই না। থিসিসের “কে কি করছে” পার্ট শেষ, সুতরাং ইউনিভার্সিটিতে থেকে কাজ করার বাধ্যবাধকতা নাই। এখন লিখতেছি “আমি কি করছি” পার্ট, যেটা আছে মাথার ভেতরে আর ল্যাপির মধ্যে। সুতরাং বাসা থেকেই কাজ করি। বাসা থেকে কাজ করার সুবিধা হলো ক্ষিদা লাগলেই কিচেনে গিয়ে কিছু একটা বানিয়ে নেয়া যায়। দিন কাল ভালোই যাচ্ছে, ক্ষিদা লাগলে কিচেনে যাই। আর বাকি সময় বিছানায় উবু হয়ে শুয়ে ল্যাপটপের কিবোর্ডের সাথে ভাব ভালোবাসা করি। এর মধ্যে আবার দিনের হিসাব হারিয়ে ফেলেছিলাম। সামনের সোমবার সুপারের সাথে দেখা করবো, মিটিং আছে। সেই মিটিং-এর জন্য কিছু জিনিসপাতি তৈরী করা দরকার। ওইটাই করতেছিলাম। দিনের হিসাব হারিয়ে ভালোই হয়েছে, একদিন আগেই নিজের জন্য ঠিক করে রাখা লক্ষ্য অর্জিত করে ফেলছি। তাই আজকে ভাবলাম একটু ব্রেক নেই। জাহিদ ভাইয়ের কাছে দেওয়া কথা অনুসারে একটা পোস্ট দিলাম, ফাকিঁবাজি করে। এখন নিজের কথা লিখি।

২।
আমি যেখানে থাকি ওইটা আটলান্টিকের পাড়ে। যদিও নাম সেন্ট জনস সিটি, আসলে একটা শহর। পাহাড়ের গায়ে গড়ে ওঠা শহর। মানুষজনের সংখ্যা ঢাকা শহরের ১০০ ভাগের এক ভাগ। মজার ব্যাপার হলো, ঢাকা শহরের থেকে সাইজে বড় এই শহর। এতোদিন ছিল শীতকাল। আটলান্টিকের পাড়ে থাকার জন্য এখানের আবহাওয়া কানাডার অন্য জায়গার সাথে মিল খায় না। শীত আসে দেরিতে, যায়ও দেরিতে। সেপ্টেম্বরের শেষে পুরো কানাডা ছিল বরফে সাদা, সেন্ট জনস ছাড়া। আর এখন, পুরো কানাডায় বসন্ত আর এখানে কালকেও হালকা বরফ পড়েছে। কই যে যাই!
সেন্ট জনসে থেকে আবহাওয়া বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত স্ট্যান্ডার্ড অধঃপাতে গেছে। ওইদিন সকালে ড্রাইভিং শিখতে যাব, বাইরে বেরিয়ে দেখি কি সুন্দর রোদ উঠেছে। মনটাই ভালো হয়ে গেল। হালকা হাওয়া বইছে, তবে শীতে কামড় নেই কোন। আল্লাহর কাছে সুন্দর একটা দিনের জন্য শুকরিয়া আদায় করলাম। কাজ শেষ করে বাসায় এসে ইন্টারনেটে চেক করে দেখি তাপমাত্রা ছিল -২। সূর্য, রোদ আর গরম আবহাওয়ার দেশের একটা ছেলে আর কত নিচে নামতে পারে?
৩।
সিসিবি গেট টুগেদার হলো গত ১৭ তারিখ। ছবি দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হলো। মনে অনেক বদদোয়া এসেছিল। কিন্তু অনেক কষ্টে থামায়া রাখছি। আমি পোলা ভালো কিনা। সামনের অগাস্ট সেপ্টেম্বরে আবার একটা হলে মন্দ হয় না। তপু যাবে দেশে, মাহমুদ ভাই যাবে, ইনশাল্লাহ আমিও যাব। তখন আমরা গেট টুগেদার করবো। তারপর দাঁত কেলাইতে কেলাইতে ছবি তুলবো। আইসক্রিম খাবো, পাটিসাপটা খাবো। নিচে গিয়ে সিগারেট খাব। আমাদের কেউ দমায়া রাখতে পারবে না। তবে মরতুজা ভাইয়ের মনে হয় তখন দেশে যাওয়া হবে না, হাজার হইলেও তিনি ক্ষুদ্র এবং নরম , তার এতো সময় কোথায়। আমাদের পোস্টে তিনি শকুন টাইপ দোয়া করবেন, এবং অবধারিতভাবে গরুরুপী আমরা মরিব না। চিন্তা করলেই মন হইতেছে লম্ফ দিয়া আটলান্টিক পাড়ি দেই……
৪।
এন বি এর প্লে অফ শুরু হইছে। কালকে দেখলাম শিকাগো বুলস আর বস্টন সেল্টিক্সের খেলা। বস্টন গতবারের লিগ চ্যাম্পিয়ান। এইবার একটু ইনজুরি প্রোবলেমে আছে। তাদের তারকা খেলোয়াড় কেভিন গার্নেট হাঁটুর ইনজুরিতে পড়ছে (লম্বা লোকের আসলেই সব সমস্যা হয় হাঁটুতে)। তাই তাদের শক্তি কিছুটা কম। তবু পল পিয়ার্স, রে এলেন এবং ফাটাফাটি কিছু বেঞ্চিগরম প্লেয়ার তাদের আছে। অন্যদিকে, বুলস খুব সাধারণ একটা টিম। অনেক কষ্ট করে প্লে অফে উঠছে। মাইকেল জর্ডান বুলস ছাড়ার পর তাদের সেই জৌলুশ আর নাই। স্টার্টার পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের বয়স খুব কম। তাদের প্রফেশনাল বাস্কেটবল খেলার অভিজ্ঞতা যথাক্রমে এক, দুই এবং তিন বছর। সুতরাং আমি খুব একটা লড়াই আশা করি নাই এই দুই টিমের মধ্যে। তবু কাজ করার পাশাপাশি মাঝে মধ্যে স্কোর কার্ডে গিয়ে ঢুঁ মারছিলাম। থার্ড কোয়ার্টার শেষ হওয়ার পরও যখন দেখি দুই টিমের মধ্যে পয়েন্ট ব্যবধান এক, তখন মনে হইল খেলাটা দেখতেই হয়। খেলা দেইখা আমি বুলসের ডেরিক রোজ-এর ভক্ত হয়ে গেলাম। বুলসের স্টার্টারদের মধ্যে তার বয়স সবচেয়ে কম। তবু রেগুলার সিজনে তার খেলাই বুলসকে প্লে অফে তুলেছে। জীবনের প্রথম প্লে অফ গেমে তার পয়েন্ট ৩৬ এবং এসিস্ট ১১ টা। এই রেকর্ড আর একজনের কেবল আছে, তিনি হলেন বাস্কেটবলের লিজেন্ড করিম আব্দুল জব্বারের। খেলা শেষে ডেরিক রোজের সাক্ষাৎকার নিল এক মহিলা রিপোর্টার। ব্যাটা বিনয়ী অনেক, কথা বলে এতো আস্তে যে শোনা যায় না। আর রিপোর্টারকে সে “ম্যাম, ম্যাম” বইলা অস্থির। মনে হইতাছিল, সেই রিপোর্টার আর মহিলা হইতাছেন গিয়া হিলারি ক্লিনটন। আজকে খেলা আছে আমার প্রিয় লেকারস এবং ইউটাহ জ্যাজ-এর। আর তিন ঘন্টা পরেই। থিসিস লেখা বাদ দিয়া ব্লগ লিখতেছি এবং তারপর খেলা দেখবো। আমার যে কি হবে……………………

২,৫২২ বার দেখা হয়েছে

৩৮ টি মন্তব্য : “আচার ০১৮: পরবাসীর রোজনামচা”

  1. সামি হক (৯০-৯৬)

    মিয়া থিসিস হয়ে যাবে এত্তো চিন্তা করো ক্যান। আর কানাডার আবহাওয়া আর বলো না, আমার আসার পর থেকে মনে হচ্ছে এখানে শুধু মাত্র পোলার বিয়াররা থাকতে পারে। তোমার দিনলিপি পড়ে খুব ভালো লাগলো।

    শুভ কামনা তোমার থিসিসের জন্য।

    জবাব দিন
  2. ভালো লাগলো লেখাটা ...

    আমার মনে একটা দূরবর্তী আশা ছিল যে সেপ্টেম্বরে দেশে একটা ঢু দিয়া আসবো আপাতত সেই আশা অটোয়া রিভারে জলাঞ্জলী দিয়াসছি ... দেখা যাক কবে কি করা যায় :-s

    তবে দোস্ত তোর আইডিয়াটা আমার ভাল্লাগসে ... আমারো এখন মাথায় ঘুরতেসে যদি কোনদিন পয়সা হয় তাইলে নোভা স্কশিয়ার কান্ট্রিসাইডে একটা ছোটখাট বাড়ি বানায়া থাইকা যামু ... নোভা আর তোদের নিউফাউন্ডল্যাণ্ডের স্প্রিং আর ফলের আসলেই কোন তুলনা নাই 😀

    জবাব দিন
  3. তানভীর (৯৪-০০)

    অনেক দিন পর তৌফিকের আচার। বেশ টক-ঝাল-মিষ্টি। 🙂
    এনবিএ আগে নিয়মিত দেখতাম। এখন শুধু খবর দেখে স্কোরটা জেনে নেই। মাইকেল জর্ডানের শিকাগো বুলস এর সাথে ইউটাহ জ্যাজ এর সেই ফাইনালগুলোর কথা এখনও ভুলতে পারিনা। তখন থেকেই ইউটাহ জ্যাজকে পছন্দ করিনা। কাল দেখলাম লেব্রন জেমস এর ক্লিভল্যান্ড হেরে গেছে। অবশ্য কোবি ব্রায়ান্ট এর লেকার্স তো ভালো খেলতেছে। ওদের স্টার প্লেয়ারও আছে কয়েকটা। দেখা যাক এবার চ্যাম্পিয়ন কে হয়!
    দেশে আইসা হারাইয়া যাইওনা। যোগাযোগ রাইখ। 🙂

    জবাব দিন
    • তৌফিক (৯৬-০২)

      আপনে তাইলে বাস্কেটবল দেখেন 😮 🙂

      আমি ভাবছিলাম আর কেউ দেখে না। ইউটাহ জ্যাজের কোন চান্স নাই লেকার্সের বিরুদ্ধে। ৭ গেম সিরিজে ৪ টার মধ্যেই হারবে দেখবেন। জ্যাজের পয়েন্ট গার্ড ডেরন উইলিয়ামসের খেলা যদি ৪ গেমের মধ্যে ৫ গেম করতে পারে তাইলে ভালোই। কিন্তু বেচারা একা আর কত পারবে? ওদের সেন্টার মুহাম্মদ ওকুর ইনজুরড। না হইলে সে একটু পেইন দিতে পারত, ৭ ফুট লম্বা হইলেও তার রেঞ্জ ভালো। লেকার্সের পাওয়ার ফরোয়ার্ড পাও গেসল আর সেন্টার বাইনামকে বের করে নিয়ে আসতে পারত পেরিমিটারের কাছে, জ্যাজের পাওয়ার ফরোয়ার্ড কার্লোস বুজার তখন রিবাউন্ডগুলা ধরতে পারত। মোদ্দা কথা, মুহাম্মদ ওকুর থাকলে লেকার্স একটু স্ট্র্যাটিজিক্যালি বিপদে পড়তো। আর কালকে সেকন্ড ম্যাচ দেখলাম বুলস আর সেল্টিক্সের। কি ম্যাচ হইলো আরেকটা। বুলস হারছে অবশ্য। ডেরিক রোজরে সেল্টিক্স একেবারে অফ করে রেখেছিল। তারপরও, ম্যাচের ২ সেকেন্ড বাকি থাকতে রে এলেনের একটা থ্রি পয়েন্টারই খেলার ফলাফল ঠিক করে দিছিল। অভিজ্ঞতার কাছে মার খাইছে বুলস। ওদের খেলা দেখলে অবশ্য স্পিরিট আপ হইয়া যায়, কি এফোর্ট দেয়!!!
      ক্লিভল্যান্ড হারে নাই তো। ডেট্রয়েট পিস্টনের সাথে জিতছে সিরিজের প্রথম ম্যাচে।

      ভালো আছেন তানভীর ভাই? আপনারে কয়দিন দেখা যায় নাই।

      জবাব দিন
  4. ফয়েজ (৮৭-৯৩)
    একটা বাংলাদেশে আর একটা সেইন্ট জনসে।

    এই পেটেন্টের বেইল নাই বুঝছ, বিদেশের মাটি খুব উর্বর, শিকড় গজাই যায় তাড়াতাড়ি, তখন দেশের বাড়িতে ইদুর-তোলাপোকার ঘরবসতি।

    আমার বাবা বিদেশ যাইতে ডর করে।

    তোমার লেখা দুদিন আগেই পড়ছি, কমেন্টাইতে পারি নাই।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রেজওয়ান (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।