চুম্বনঃ ব্রোকব্যাক মাউন্টেনের আইডিয়া যেভাবে নাজিল হইছিল

ক্যাডেট কলেজ থেকে পাস কইরা আমি মমুসিং-এর পোলা চইলা আসলাম ঢাকা, “নেকাপড়া” করতে। ঢাকায় আসার পর রাস্তায়, অলিতে-গলিতে বহুসংখ্যক এবং বহুধরনের চুম্বন দৃশ্য দেখছি (দেশ আগায়া যাইতাছে, আমাদের বাবাদের আমলে ঢাকা ভার্সিটিতে মেয়েদের সাথে কথা বলতে নাকি ডিপার্টমেন্টের পারমিশান লাগতো, সত্য মিথ্যা জানি না, শোনা কথা।) এইসব চুম্বনকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা যায়- ছোবল চুম্বন আর খাইছি তোরে চুম্বন। ছোবল চুম্বন করে ভীতু জুটিরা, ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াইয়াই সরায়ে নেয়, সাপ যেমনে ছোবল দেয় আরকি। আর খাইছি তোরে চুম্বন হইল গিয়া আগ্র্যেসিভ জুটিদের জন্য। আশপাশ, লোকজন কাউকেই এরা আমলে নেয় না, যখন চুম্বন করে তখন মনে হয় একজন আরেকজনরে খায়া ফেলতে চাইতাছে। অবশ্য জীবনের প্রথম চুম্বন দৃশ্য দেখছিলাম কলেজে, তাও আরো ২০ টা পোলার সামনে, পোলায় পোলায় মোটামুটি ঘোষনা দিয়া। সেই চুম্বনকে আমি উপোরক্ত দুইভাগের একভাগেও ফেলতে পারি নাই, খুব ইউনিক একটা ব্যাপার ছিল সেইটা। কোথাও দেখি নাই এই রকম চুম্বন, আর যাতে দেখতে না হয় সেইজন্য আমি ব্রোকব্যাক মাঊন্টেন ছবিটাও দেখি নাই (আঁতেল মার্কা ছবির প্রতি আমার দুর্বলতা সবাই জানে, অস্কার পাওয়া কোন ছবিই বাদ দিই না।) আপাতত দেশে নাই, তবে দেশে ফিইরা গেলে যাতে খুন হয়া না যাইতে হয় এই কারণে ঘটনার পাত্র-পাত্রী, থুক্কু পাত্র-পাত্র-র নাম গোপন করা হইল। ধরা যাক, তাদের নাম রাম এবং শ্যাম।

(কাহিনীর সূত্রপাত কিভাবে হইছিল বিশদ মনে নাই। প্রত্যক্ষদর্শীরা শোধরাইয়া দিস।)

রাম আর শ্যাম দুই হাউসের হইলেও দুই ফর্মের না। রামের পছনে শ্যাম সবসময়ই লাইগা থাকত, রামরে কেমতে পচানো যায় এই ধান্দায় সে প্রেপগুলান কাটায়া দিত। এক্ষণে কয়া দেই, রাম আর শ্যাম এই রাইভালরী এখনো ঘুচে নাই, বন্ধুদের জমায়েতে তারা এখনো একজন আরেকজনের পিছে লাইগা থাকে। আমরা তাদের এই লাগালাগিতে (অন্যকিছু মনে কইরেন না আবার, ইহা কথার লাগালাগি) কলেজে যেমন বিনোদিত হইতাম, সেই বিনোদন আজো থামে নাই।

আমাদের তখন নতুন প্রিন্সিপাল আসছে, সে আইসা মেস মেনুতে বিপ্লব ঘটানোর ইরাদা কইরা টি-ব্রেকে বার্গারের সাথে চাকা চাকা কইরা কাটা শসা দেওন শুরু করল। রাম আবার টির খাওনটা হাউসে নিয়া আসত রাতে খাইব বইলা। দুর্জনেরা এইসময় গুজব রটাইল যে, রাম হাউসে বার্গার আর শসা নিয়া গিয়া শসা চোখের উপর রাইখা বইসা বইসা বার্গার খায়। এতে নাকি ত্বক বড়ই রমণীমোহন হয়, জেল্লা বাড়ে। শ্যাম এই সু্যোগ ছাড়ে কেমনে? সে দৌড়ের উপর কিছু সাঙ্গপাঙ্গ যোগাড় কইরা সকলে একসাথে শসা না খাইয়া ফর্মে নিয়া আসল ইভিনিং প্রেপে। রামের ডেস্কের পাশে সবাই রেডি, রাম কখন আসে। রাম আসা মাত্র তারা তার চারপাশের ডেস্ক দখল কইরা নিয়া আসা শসা চোখের উপর দিয়া বইসা থাকল। ৪-৫ টা জোয়ান মর্দ পোলা চোখের উপর শসা দিয়া বইসা আছে চুপচাপ- এই দৃশ্য মনে হয় ক্যাডেট কলেজেই দেখা সম্ভব। রাম প্রথম প্রথম ঠান্ডা থাকার চেষ্টা করল বটে, মাগার সেও তো মানুষ, তারও তো সহ্যসীমা আছে। এতগুলান পোলাপাইনের সাথে ঝগড়া কইরা যে লাভ হইব না, এই বুদ্ধি রামের আছে। তাই সে নাটের গুরু শ্যামকে ধইরা বসল। শ্যামকে সে গালিগালাজ দিতাছে এই সময় শ্যাম রামকে ঠান্ডা করতে দুনিয়ার তাবৎ ভালোবাসা গলায় ঢাইলা বইলা বসল,

– রাম, তোরে আমি আমার জীবনের থেকেও ভালোবাসি। চোখে শসা দেওনে লজ্জার কিছু নাই, এইটা প্রচারণা করতে আর তোরে সাপোর্ট দিতে আজকে আমরা এই কাজ করছি। তুই ব্যাপারটাতে খেইপা যাবি ভাবি নাই, আমারে মাফ কইরা দে।

ঘটনার এই পর্যায়ে যদুর আগমন। পাঠকদের জন্য যদুর ব্যাকগ্রাউন্ড ইনফর্মেশন এইখানে দিয়া দিলাম। যদুর চাপার জোর সেইরকম, প্রেপে আমরা যখন সবাই পড়া ফালাইয়া যদুকে পঁচানোর চেষ্টা করতাম, সে এক চাপায় বাকি ১৯ জনের মোকাবেলা করত। আমদের এই কাপুরুষোচিত একতাবদ্ধ আক্রমণের সামনে সে লিয়োনাইডাসের (মুভি ৩০০ -এ স্পার্টানদের রাজা) স্পিরিট নিয়া দাড়াইত, অধিকাংশ সময় সেই জিতত। যদুর ডেস্ক রাম আর শ্যামের পাশেই হওয়াতে রাম শ্যাম যদুরে আরো বেশি পঁচানোর চেষ্টা করত। তাদের এই চেষ্টা আবার ছিল যৌথ চেষ্টা, নিজেদের মধ্যে যতই শত্রুতা থাকুক, যদুর প্রশ্নে তাদের গলায় গলায় দোস্তি। রাম আর শ্যামের মাঝখানে এই রকম একটা প্যাঁচ লাইগা গেছে দেইখা যদু কাঁটা দিয়া কাঁটা তোলার প্ল্যান করল। শ্যামের “রাম, তোরে আমি আমার জীবনের থেকেও ভালোবাসি।” কথা শুইনা সে মুখ বাঁকায়া দিল।

– হুদাই, রাম! তোরে শ্যাম ব্লাফ দেয়ার চেষ্টা করতাছে। ওরে তুই ছাড়িস না।

শ্যাম আবার নিজের খোঁড়া যুক্তিটারে রক্ষা করার চেষ্টা করল।

– তুই ভালোবাসার কি বুঝবি? নিজে তো একটা… …, ভালোবাসা মাইনষের কাম।

যদুও ছাইড়া দেয়ার পাত্র না। তার বাঁকা মুখ আরো বাঁইকা গেল।

– হ, বুঝছি। আমার ভালোবাসারে…পারবি রামরে কিস করতে?

শ্যামের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁইড়া দিল যদু। শ্যামও পিছায়া যায় কেমনে এখন, যদুর কাছে হাইরা যাইব এইটা সে হইতে দিতে পারে না। তাই সে বুদ্ধি খাটানোর চেষ্টা করল।

– কি দিবি আমারে যদি কিস করি?

শ্যাম যদুরে একটু নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করল। যদুও কম যায় না।

– একশ টাকা দিমু।

যদুর সাধ্যে যতোটা কুলায় আরকি, অর্থ পুরস্কার দিয়া সে শ্যামরে দিয়া রামের উপর ঝাল মিটাইতে চায়। রাম যদুর মনের ইচ্ছা ঠিকই বুঝতে পারতেছিল, ওরে ছাইড়া দেয়ার ইচ্ছা রামেরও নাই। রামের মাথায় যদুরে শিক্ষা দেয়ার একটা বুদ্ধি খেইলা যায় তৎক্ষনাৎ, যদুর ১০০ টাকা খসাইতেই হইব, চোখ মুখে তার ১০০ পাওয়ার বিজলি বাত্তির আভা। শ্যামের দিকে তাকায় রাম। “চল, তুই আর আমি এখনি কিস করুম। তুই পঞ্চাশ আর আমি পঞ্চাশ-” রাম ততোক্ষণে যদুর বিরুদ্ধে নিজেদের একটা টিম হিসাবে দাঁড় করায়া ফেলছে। শ্যামের তো এখন পোয়াবারো, এমন একটা কান্ড ঘটায়া রামের ঝাড়ির বদলে পঞ্চাশ টাকা পাওন যাইব, এই সু্যোগ কে ছাড়ে? শ্যামের দৃষ্টি চলে যায় রামের চোখে। দু’তিন সেকেন্ড দেরি করে সে, তারপর হাসি এক কান থাইকা আরেক কানে ছড়ায়া বলে, “ঠিক আছে।” আমরা আশেপাশের লোকজন তখন হতবুদ্ধি, কি হইতে যাইতেছে তা তখনো ঠাওর করতে পারি নাই।

(উৎকৃষ্ট সাহিত্য রচনার জন্য পরের প্যারার ভাষা পরিবর্তন করা হইল।)

শ্যাম দুই হাতের আঁজলায় ধরে রামের মুখটাকে। কোমল চোখে চায় ওর চোখে। কি যেন খোঁজ করে, আমন্ত্রণ কি? রামের হাতও শ্যামের মাথার পেছনের চুলগুলোকে আসন্ন অবশ্যম্ভাবীকে স্বাগত জানাতে আঁকড়ে ধরে। অমোঘ নিয়তির মতোই দুজনের মুখ চলে আসে আরো কাছাকাছি। প্রচন্ড গ্রীষ্মের পর যেমন তৃষ্ণার্ত মাটি আকুলতায় গ্রহন করে আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টিকে, তেমনি ওদের দুজনের মুখ এক হয়ে যায়। মহাকাশে ধ্বনিত হয় ওংকার, দূরের কোন অরণ্যে একটা ফুল তার পাপড়ি থেকে একবিন্দু শিশির ফেলে নিচের পাতাটার ওপর, জানান দেয় এখনো পোড়া পৃথিবীতে হয় ভালোবাসাবাসি। শ্যামের ঠোঁট রামের ঠোঁটকে ফিসফিসিয়ে কি যেন বলে। পৃথিবীতে স্বর্গ নামানো দূ’একটা মুহূর্ত কেটে যায়। সম্বিত ফেরে ওদের। আশপাশে ড্যাব ড্যাব করে তাকানো মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে লজ্জা পায় ওরা।

(বহুত সাহিত্য হইছে, এইবার খ্যামা দিলাম।)

একি হেরিলাম!!! আমরা তখন বাজ পড়া মানুষের মতো তব্দা লাইগা গেছি। ফিছেল শ্যামের ফিছলামি তখনো শেষ হয় নাই। মুখে একটা ভিলেনি হাসি নিয়া আমাদের সবার দিকে তাকায় ঘাড় ঘুরায়া ঘুরায়া, সবার শেষে তাকায় রামের দিকে। মূখের হাসিটাকে আরো একটু বিস্তৃত কইরা বলে- “তোর ঠোঁট তো খুব মিষ্টি, রাম।” এরপর ১৮০ ডিগ্রি ঘুইরা তাকায় যদুর দিকে, হাত বাড়ায়া বলে- “একশ টাকা দে এখন।”

পুনশ্চঃ ইহা একটি কাল্পনিক ঘটনা। বাস্তবের সাথে পাঠক, বিশেষ করে মির্জাপুরের ৩৪তম ব্যাচের ছেলেপেলে যদি কোন মিল পায়, তাহলে তা নিছক কাকতাল মাত্র।

৬,০২৫ বার দেখা হয়েছে

৮৩ টি মন্তব্য : “চুম্বনঃ ব্রোকব্যাক মাউন্টেনের আইডিয়া যেভাবে নাজিল হইছিল”

  1. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    তৌফিক ভাই, কিস-এর বর্ণনাটা শকুন্তলা উপাখ্যান ক্রস করছে। দুষ্ক হইতাছে, ব্রোকব্যাক মাউন্টেন বানানোর আগে ডিরেক্টরের এইটা পড়ার সৌভাগ্য হইল না। পড়তে পারলে শিল্পমান আরও বাড়ত, সন্দেহ নাই।

    জবাব দিন
  2. আমার আর ১৫ মিন পরে মডেল টেসট সেইটা সাইরা আমি এই ব্লগ পরতেসি আর হাসতেসি।হাসতে হাসতে যা শিখসিলাম ভুইলা গেসি।আইজকা যুদি পরীক্ষা খারাপ হয় সব দোষ তৌফিক ভাই এর।
    =)) =)) =)) =)) =)) =))

    জবাব দিন
  3. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    তৌফিক ভাই এইটা এই ব্লগে আমার পড়া সবচেয়ে হাসির ব্লগ গুলার মধ্যে অন্যতম।ভাই আপনেরে দেখলে ত বুঝা যায় না পেটে এত জিলাপির প্যাঁচ!আল্লাহই জানেন কানাডায় কি না কি করতেছেন মামা...ভাবির নাম্বারটা দিয়েন জানাইতে হইবো...(ভাবির ছুডু ভইন থাকলে তার টাও)

    কেডা কইছে লম্বা মানুষের রসবোধ কম???পুলাপাইন দেইখা শিখ...... 😀

    জবাব দিন
  4. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    আইহাই এইটা কি কস ফুয়াদ!!এমনিতেই বাইরের পুলাপাইন ক্যাডেটগোরে হিংসা কইরা "হো*" কইয়া ক্ষ্যাপাইতে চেষ্টা করে...তারপরে তোর এই বুদ্ধি...মান ইজ্জত আর রাখা গেলো না কিসু...

    জবাব দিন
  5. সাজিদ (১৯৯৩-৯৯)

    শ্যাম দুই হাতের আঁজলায় ধরে রামের মুখটাকে। কোমল চোখে চায় ওর চোখে। কি যেন খোঁজ করে, আমন্ত্রণ কি? রামের হাতও শ্যামের মাথার পেছনের চুলগুলোকে আসন্ন অবশ্যম্ভাবীকে স্বাগত জানাতে আঁকড়ে ধরে। অমোঘ নিয়তির মতোই দুজনের মুখ চলে আসে আরো কাছাকাছি। প্রচন্ড গ্রীষ্মের পর যেমন তৃষ্ণার্ত মাটি আকুলতায় গ্রহন করে আষাঢ়ের প্রথম বৃষ্টিকে, তেমনি ওদের দুজনের মুখ এক হয়ে যায়। মহাকাশে ধ্বনিত হয় ওংকার, দূরের কোন অরণ্যে একটা ফুল তার পাপড়ি থেকে একবিন্দু শিশির ফেলে নিচের পাতাটার ওপর, জানান দেয় এখনো পোড়া পৃথিবীতে হয় ভালোবাসাবাসি। শ্যামের ঠোঁট রামের ঠোঁটকে ফিসফিসিয়ে কি যেন বলে। পৃথিবীতে স্বর্গ নামানো দূ’একটা মুহূর্ত কেটে যায়। সম্বিত ফেরে ওদের। আশপাশে ড্যাব ড্যাব করে তাকানো মানুষগুলোর দিকে তাকিয়ে লজ্জা পায় ওরা।

    :clap: :boss: :hatsoff:

    উহহ্‌... সিরাম কয়ডা লাইন হয়ছে রে ভাইডি... মারাত্তক সিরিকাস।


    অভিলাষী মন চন্দ্রে না পাক,
    জ্যোস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই,
    কিছুটাতো চাই, কিছুটাতো চাই।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আশিক (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।