সর্বকালের সেরা বাস্কেটবল টিম ০১

আমি বাস্কেটবলের একজন ভক্ত। প্রমীলা বাস্কেটবলের কয়েকটা ভিডিও নিয়া একটা আজাইরা পোস্ট দিছিলাম এর আগে, কিন্তু সিরিয়াস পোস্ট দেয়া হয় নাই। সর্বকালের সেরাদের নিয়ে আমার এই পোস্ট। মোটমাট ৬ জন প্লেয়ার নির্বাচন করব, পাঁচজন স্টার্টার, একজন সুপার সাব। কাজটা মোটেও সহজ না, ইচ্ছা করলে গড়গড় করে ছয়টা নাম বলে দিতে পারতাম। কিন্তু একজন চিন্তাশীল “কোচ” এই কাজ কখনোই করবে না। বাস্কেটবল টিমকে সফল বানাইতে হলে তাদের হতে হবে ব্যলেন্সড। বেশি সাইজ নেওয়া যাবে না, স্পিডে গোলমাল হয়ে যাবে। বেশি অফেন্সিভ ফায়ারপাওয়ার নেওয়া যাবে না, কারণ মিউনিশন (এভেইলএবল শটস পার গেইম) স্বল্প। মিউনিশনের দক্ষ এবং কার্যকরী ব্যবহারের জন্য দরকার এমন কয়েকজন লোক যারা একজন আরেকজনকে কমপ্লিমেন্ট করবে। কেউ করবে প্লে মেকিং, কেউ করবে শার্প শুটিং আর কেউ নিখাদ শক্তির প্রদর্শনীতে “রিম রকিং।” কোন প্লেয়ার অফেন্সে দুর্দান্ত, কিন্তু ডিফেন্সে ক্যারাবেরা- এইরকম প্লেয়ারকেও নেয়া যাবে না। এতোক্ষনে নিশ্চয়ই সবাই কনভিন্সড হয়ে গেছেন সর্বকালের সেরা টিম বানানো চাট্টিখানি কথা না। আসেন তাইলে, দেরি না করে আসেন টিমটা কেমন হয় দেখে ফেলিঃ

১) সেন্টারঃ আমার টিমের সেন্টার কে হবে সেইটা নিয়ে একটূ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে গেছিলাম। এত এত ক্যান্ডিডেট! প্রথমেই বলা যায় বাস্কেটবলের প্রথম সত্যিকারের সেন্টার জর্জ মিকানের কথা। ভদ্রলোকের উচ্চতা ছিল ছয়ফুট দশ ইঞ্চি। বাস্কেটবলের রুলবুককে তিনি নতুন করে লিখতে বাধ্য করেছিলেন অসাধারণ শট ব্লকিং আর ডমিনেন্ট অফেন্সের জন্য।২৪ সেকেন্ডের শট ক্লক আর গোল টেন্ডিং-এর দুইটা নিয়ম তার খেলার ধরনের কারণেই সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি পায়োনিয়ার, সন্দেহ নাই। কিন্তু এর পরের নামগুলা আরো ভয়াবহ। উইল্ট চেম্বারলিন, সাতফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতা ছিল তার। এন বি এ-র ইতিহাসে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ পয়েন্টের তালিকার দিকে তাকালে শুধু তার নামই দেখা যাবে বেশ কয়েকবার। এক ম্যাচে ১০০ পয়েন্ট স্কোর করেছিলেন ১৯৬২ সালে। ৭০ বা তার আশেপাশে স্কোর করেছিলেন অনেকবার। আরেকটা চয়েজ আছে, হালের শাকিল ও’নীল। ভদ্রলোক তার প্রাইমে অনেক ডমিনেন্ট ছিলেন, এখনো খেলেন। কিন্তু ১৭ বছরের প্রফেশনাল লেভেল স্পোর্টসের পর এখন তিনি শুধুই অতীতের ছায়া। তবু যৌবনের শাকিল ও’নীল-এর খেলা দেখলে তাকে উপেক্ষা করাটা কঠিন, কিন্তু তিনি ডিফেন্সে লবডংকা এইটাও মনে রাখতে হবে। এতোসব নামের ভীড়ে তারপরও যে লোকটি আমার টিমের সেন্টার হিসাবে নির্বাচিত হলেন, তার নাম কারিম আব্দুল জাব্বার। উচ্চতা সাত ফুট দুই ইঞ্চি। ইউনিভার্সিটি লেভেলে খেলেছিলেন মাহমুদ(৯০-৯৬) ভাইয়ের ইউনিভার্সিটি ইউসিএলএ-তে। এরপর প্রফেশনাল লেভেলে যা করেছেন তা শুধুই ইতিহাস। তার এনবিএ ক্যারিয়ারের সর্বমোট পয়েন্ট ৩৮ হাজারের উপরে, এন বি এর সর্বোচ্চ। বিখ্যাত স্কাইহুক আর তীব্র ডিফেন্সিভ প্রেজেন্সের কারণে কারিম আব্দুল জাব্বারকেই আমার সেন্টার হিসাবে পছন্দ করলাম।

২) পাওয়ার ফরোয়ার্ডঃ হুমম, এইটা একটু টাফ। কারিম আব্দুল জাব্বারের মতো রান এওয়ে উইনার এই ক্যাটাগরিতে নাই, প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা তীব্র। প্রথমে দেখি নমিনি কারা কারা, কার্ল মেলোন, হাকিম ওলাজোয়ান, চার্লস বার্কলে, বিল রাসেল, টিম ডানকান। কার্ল মেলোনের সিভিটা অনেক অনেক ভারী, এনবিএ-এর ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পয়েন্ট তার। স্মৃতি বিশ্বাসঘাতকতা না করলে ৩৬ হাজারের উপর। পোস্ট গেইম অনেক উন্নত ছিল তার। হাকিম ওলাজোয়ানের কথা আর কি বলব, ১৯৮৪ সালে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও হিউস্টন রকেটস মাইকেল জর্ডানকে ফেলে তাকে ড্রাফট করেছিল। এইজন্য কোন ক্রীড়াবোদ্ধা আজ পর্যন্ত তৎকালীন হিউস্টন রকেটসের ফ্রন্ট অফিসকে দায়ী করে না। পাশবিক লোক ছিলেন, রমজানে রোজা রেখে বাস্কেটবল ম্যাচ এটেন্ড করতেন। (একবার রোজা রেখে রুমক্রিকেট খেলছিলাম, বেসিনের উপর নিস্ফল ওয়াক ওয়াক আজও ভুলি নাই 😛 )। চার্লস বার্কলে ভালো খেলোয়াড় ছিলেন, ২৫ হাজারের মতো পয়েন্ট স্কোর করেছেন ক্যারিয়ারে। কিন্তু তারে আমি দলে নিমু না, কারণ সিম্পল নো ডিফেন্স। বিল রাসেলের কথা আর কি বলব, এনবিএর সর্বোচ্চবার চ্যাম্পিয়ান তিনি। ভুল না হলে এগারোবার। খালি ডিফেন্স আর রিবাউন্ড দিয়ে অবশ্য সর্বকালের সেরা টিমে ঢুকা যাবে না। সেজন্য লাগবে ব্যলেন্সড O এবং D. সেইটা আমি টিম ডানকানের মধ্যে ভালোই দেখছি। আর তার আছে ক্ষুরধার একটা বাস্কেটবল মাইন্ড। পয়েন্ট গার্ডের দক্ষতায় এই লোক বল পাস দেয়, পোস্ট গেম অসাধারণ এবং একজন টেনাশিয়াস ডিফেন্ডার অব দ্য পেইন্ট এন্ড দ্য গ্লাস। আমার পছন্দ তাই…… টিইইইইইম ডানকান…কান……কান………কান।
৩) সুটিং গার্ডঃ মাইকেল জর্ডান, ‘নাফ সেইড।

এমনিতেই লোকজন বাস্কেটবল খায় কিনা জানি না। তাই পোস্টটা আরো বোরিং বানানোর ঝুঁকি না নিয়ে……আগামী পর্বে সমাপ্য।

১,৬৫২ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “সর্বকালের সেরা বাস্কেটবল টিম ০১”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)
    এমনিতেই লোকজন বাস্কেটবল খায় কিনা জানি না।

    এইটা কি কইলি, তুই বাস্কেটবল খাস নাকি 😮 😮 😮 তোর লম্বুত্তের রহস্য তাইলে এই, আগে জানলে আমিও খেয়ে দেখতাম 😛

    বাস্কেটবল দেখা হয় না বললেই চলে, তাই তোর অনেক 'টার্ম' মাথার উপর দিয়ে গেছে, তবে দুই তিনটা নাম কমন পড়ছে, তাতেই আমি খুশী, লেখতে থাক, আরো কিছু জ্ঞান অর্জন করি।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. ভাই টার্মগুলার বর্ণনা দিলে ভাল হইত। স্যান এন্টনিওতে থাকার কারনে টিম ডানকান এর খেলা সামনাসামনি দেখতে পারলাম। কিন্তু ওর চেয়ে এখন মানু জিনোবলি ভালো খেলে।

    জবাব দিন
  3. তানভীর (৯৪-০০)

    তৌফিক, তোমার বিশ্লেষণ ভালো লাগছে। বোঝাই যাচ্ছে ডিফেন্সের ব্যাপারটাকে তুমি খুব গুরুত্ব দিচ্ছ।

    উইল্ট চেম্বারলিন আর কারিম আব্দুল জাব্বার- এদের পার-গেইম পয়েন্টস, এসিস্ট, ডিফেন্সিভ রিবাউন্ড, অফেন্সিভ রিবাউন্ড, ব্লক, স্টিল এগুলা নিয়ে যদি একটা চার্ট দিতা তাইলে মনে হয় তুলনা করতে সুবিধা হইত। এই কথা বাকি পজিশনগুলার জন্যও প্রযোজ্য।

    মাইকেল জর্ডানকে নিয়া কিছু বলব না। আমার মত অলস মানুষও সকালে উঠতে বাধ্য হইত তার খেলা দেখার জন্য। 🙂

    অফটপিকঃ এখন ধুমায়ে NBA 2K10 খেলতেছি। 😀

    জবাব দিন
  4. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    মাঝে মাঝে দেখতাম আমার ইউনিভার্সিটির ষ্টেডিয়ামে খেলা হতো আর খেলা শেষে আশেপাশে সব রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম লেগে যেতো! এতো মানুষ যে কোত্থেকে আসে এই খেলাটা দেখতে!! লেকারসরা গতবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর লস এঙ্গেলসে, বিশেষ করে ইষ্ট-সাইডে ব্যাপক 'পানাহার' আর উচ্ছ্বলতা (খানে খানে মাত্রাতিরিক্ত) দেখেছিলাম।

    তৌফিক, তোমার বিশ্লেষন ভালো লেগেছে । (অনেক টার্ম না-বুঝেও ভাব নিলাম)।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  5. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    বাস্কেট বল নিয়ে আগ্রহ কম...
    তবে লেকার্স এ যখন কোবে ব্রায়ান্ট আর শাকিল ও'নিল জুটি ছিল, তখন ভোরে উঠে খেলা দেখতাম... 😀


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।