সালসা, আমের আচার আর একজন শুভ্রদা

১।

শিকাগো ট্রিবিউনের স্পোর্টস কলামিস্ট রিক মরিসে কেমন ক্রীড়া সাহিত্যিক তা আমার জানা নাই। কারণ, উনার একটা কলামও আমি পড়ি নাই। কিন্তু লোকটা যে খুবই প্যাশনেট সেটা বুঝেছিলাম গত বছরের নভেম্বরে, একটা খবর পড়ে। শিকাগো বুলসের ফার্স্ট রাউন্ড ড্রাফট পিক, পাওয়ার ফরোয়ার্ড আর সেন্টার পজিশনের খেলোয়াড় জোয়াকিম নোয়াহ যে জিন্দেগিতেও একজন ভালো প্রোডাক্টিভ প্লেয়ার হইতে পারবেন না, সেইটা তিনি ২০০৭ ই বলে দিয়েছিলেন। তিনি তার ভবিষ্যতবাণীতে এতোটাই নিশ্চিন্ত ছিলেন যে বলেছিলেন, তিনি ভুল হলে ইংরেজি প্রবচনের “eat (one’s) words”-কে আক্ষরিক অর্থেই ফলিয়ে দিবেন। নিজের কলামটাকে সালসা দিয়ে চিবিয়ে ভক্ষণ করবেন।

দুই বছর পরে যখন জোয়াকিম নোয়াহ একজন এভারেজ ডাবল-ডাবল প্লেয়ার (যার এভারেজ গেমপ্রতি অন্তত ১০ পয়েন্ট এবং কমপক্ষে ১০ রিবাউন্ড। যে কোন স্ট্যান্ডার্ডে একজন প্রোডাক্টিভ প্লেয়ার।) তখন জনাব মরিসে তার কথা রেখেছিলেন। জোয়াকিম নোয়াহর সামনে সালসা সহযোগে তার কলামটিকে ভক্ষণ করেছিলেন। লোকটা ভালো ক্রীড়া লেখক হোক বা না হোক, সে যে একজন man of words সেটা প্রমাণ করেছেন eating his words-এর মাধ্যমে। জনাব মরিসে, লাল সালাম গ্রহণ করুন।

২।

উপরে যে ঘটনাটা বললাম, তার উল্টোটা হলে কেমন হয়? ক্রিকেটার বিরচিত মহাকাব্যগুলোর নিষ্ঠাবান লিপিকার ক্রীড়া সাংবাদিক জনাব উৎপল শুভ্রের কথাই ধরি। ২০০১ সালে (যতোদূর মনে পড়ে) তিনি বিশাল একটা ফিচার করেছিলেন প্রথম আলোতে- “আশার ফুল আশরাফুল।” আশরাফুল যে কতটা ভালো ব্যাটসম্যান হতে যাচ্ছেন সে ব্যাপারে বিশাল কথা-বার্তা। ঠিক কি কি বলেছিলেন, ডিটেইল লেভেলে মনে নাই। তবে তার কথা ভুল হলে মরিসে সাহেবের মত কিছু করবেন বলে অংগীকার করেননি। তবে সেই ২০০১ থেকেই তার আশরাফুলপ্রীতি সর্বজনবিদিত। আমি ভাবছি, এতোদিনেও তার মোহভংগ যেহেতু হয় নাই, সেটা করার দায়িত্ব কাউকে না কাউকে তো নিতে হবে। আমাদের দেশে সালসা তেমন প্রচলিত না, তবে আমার আচার প্রচলিত। এক বয়াম আমের আচার, তার করা ফিচারটা আর মরিসে সাহেবের খবরটা নিয়ে তার সামনে হাজির হলে কেমন হয় বলুনতো? 😀

৩।

এতো বড় একটা কথা বলে ফেললাম, এইটার ব্যাক আপও দেয়া দরকার। শুভ্রদাকে আমের আচার সহযোগে ফিচার খাওয়ার প্রছন্ন একটা পরামর্শ দিলাম, আর নিজে কিছু করব না? অবশ্যই করা উচিত। আমিও অংগীকার করলাম, আশরাফুল তার ক্যারিয়ার যদি সম্মানজনকভাবে শেষ করতে পারে, এবং তার ব্যাটিং এভারেজ যদি ৩০-এর বেশি থাকে, আমি নিজে ওই ফিচার বা সমপরিমাণ প্রথম আলো আমের আচার সহযোগে ভক্ষণ করিব। আমিন।

৪,০৪২ বার দেখা হয়েছে

৪৭ টি মন্তব্য : “সালসা, আমের আচার আর একজন শুভ্রদা”

  1. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    আশরাফুলের কোন খেলা দেখিনি কিন্তু দুটো সাক্ষাতকার দেখেছিলাম। মনে হয়েছে হয়তো ছেলেটার প্রতিভা ছিল কিন্তু সেই প্রতিভা প্রস্ফূটন করার মতো ব্যক্তিত্ব ছিল না। বিকাশের জন্য দুটোরই প্রয়োজন।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
    • সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

      শান্তা, না দেখে কিভাবে এতোটা সঠিক পর্যবেক্ষণ করলে? মাঝখানে একবার আশরাফুল নিজের খেলার ধরণটা বদলিয়েছিল। কিছুটা ফলও পাচ্ছিল। কিন্তু মিডিয়া তাতেও ওকে সমালোচনা করতে ছাড়েনি। আসলে বয়স বাড়লেও ওর ম্যাচিউরিটি আসেনি।

      তৌফিক, আশরাফুল প্রীতি বাংলাদেশের কার নাই? আমার মনে হয়, তুমিও একই অবস্থায় আছো। নইলে ওকে নিয়ে লিখতে? ওর সমালোচকরাও একই রোগে আক্রান্ত। আমরা ওর কাছে আশা করি, বারবার হতাশ হই। ওকে ভালোবাসি আবার ওকে দেখতেও পারি না!!


      "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

      জবাব দিন
  2. শিরীন (৯৬-০২)

    কেউ আমার ঘাড় ভাঙতে আইসেন না। এদিক ওদিক তাকায়ে একটা সত্যি কথা বলি, আশার ফুল আশরাফুলরে আমার কোনকালেই পছন্দ হয় নাই। পার্সোনাল অপিনিয়ন, ডোন্ট মাইন্ড।

    জবাব দিন
  3. তানভীর (৯৪-০০)

    আশরাফুলের কাছে আমাদের অতিরিক্ত প্রত্যাশাই তার প্রতি আমাদের এত ঘৃণার কারণ!!
    আমরা যে সবসময় ত্রাণকর্তা/বীরপুরুষ খুঁজে বেড়াই!!

    ড্রাফট পিক জিনিসটা খুব ইন্টারেস্টিং। 🙂

    জবাব দিন
  4. মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

    ৩০ একটু বেশি হয়ে গেল না...?? এত সেফ সাইডে চলে গেলি আগে থেকেই... অনেকটা ৫ম দিনের টি টাইমে ডিক্লেয়ার করার মত...।।

    তবে আমি সানা ভাই ও তানভীর ভাই এর সাথে একমত। আমরা অনেক বেশি আশা করি বলেই ওকে অনেক বেশি ঘৃণা করি...

    জবাব দিন
  5. সাব্বির (৯৫-০১)

    ক্যারীয়ারে উত্থান-পতন থাকবে, তাই বলে ধারাবাহিক পতন গ্রহনযোগ্য নয়।
    এক সময় খুব পছন্দ করতাম আশার ফুলকে, এখন যে ঘৃণা করি তা না, কিন্তু আগের মত পছন্দ টা ধরে রাখতে পারছিনা। দর্শক হিসাবে আমাদেরও কিছু চাহিদা থাকতে পারে।

    জবাব দিন
  6. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আশরাফুলের জীবন তো ধন্য হয়ে গেল... তুই ওরে নিয়ে পোস্ট নামায়া দিলি একটা। আমি ওরে পুরা খরচের খাতায় রেখে দিছি, কাউন্ট ই করিনা।

    সোনারগা ক্রিকেটার্সে খেলার সময় খারাপ পারফর্মেন্সের জন্য ওকে প্রিমিয়ার লীগে সেরা একাদশ থেকে বাদ দিছিল, কিন্তু আমাদের জাতীয় দলের নির্বাচকরা এখন পর্যন্ত সেই সৎ সাহস দেখাতে পারল না।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  7. আন্দালিব (৯৬-০২)

    আমার মনে হয় ছোটবেলা থেকেই আমাদেরকে নিজের কথা ও কাজের দায়ভার নিতে শেখানো হয় না। অতিরিক্ত স্নেহ বাৎসল্য আর আত্মীয়স্বজনের মাসির মায়ের আদর এই জন্যে দায়ী। "আহা, ছোট মানুষ, করে ফেলেছে একটা ভুল। বড়ো হলে ঠিক হয়ে যাবে"- এই উক্তিটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বুড়ো হওয়া পর্যন্ত আমরা (কু)ব্যবহার করি।

    এই কারণে মন্ত্রিগণের কাজের খেলাপে পদত্যাগের ঘটনা আশেপাশের দেশে ঘটলেও আমাদের দেশে সেটা কখনই ঘটে না। দিনের পর দিন খারাপ খেলার পরেও ন্যূনতম দায়িত্ববোধ বা নিজের কাজের প্রতি পেশাদারি-মনোভাব জন্মায় না।

    আশরাফুলের দোষ আছে, তবে সেইসাথে বাকি আমরা বাকিরাও একই ঘরানায় চিন্তা করি।

    আর এখন "উৎপাত শুভ্র" নামটিকে বাগাড়ম্বর অর্থে বাংলা প্রবাদ হিসেবে ব্যবহার করা যায় মনে হয়! কি বলিস? 🙂

    জবাব দিন
  8. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    বাংলাদেশের একটা ব্যাটসম্যানের নাম বল যার মধ্যে আশরাফুলের যে দোষগুলো আছে সেগুলো নাই।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  9. আশরাফুলের ডিফেন্সে "সাপ্লাই এন্ড ডিমান্ড" জাতীয় পুরানা তর্ক আবার শুরু করমু ভাবসিলাম, কিন্তু "এই পোস্টের ফোকাস উৎপল শুভ্র, আশরাফুল না" দেখে অফ গেলাম 😀

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তৌফিক (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।