আমার ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট এডভাইজিং অফিস ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে একটা প্রোগ্রাম আয়োজন করে প্রতিবছর। প্রোগ্রামটা বেশ মজার। ক্রিসমাসের ছুটি শুরু হওয়ার আগে প্রত্যেক ফ্যাকাল্টিতে তারা নোটিশ পাঠায় ফ্যাকাল্টি মেম্বার আর স্টাফদের কাছে। খোঁজ করে কারা তাদের ফ্যামিলির ক্রিসমাস ডিনারে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের অতিথি হিসাবে পেতে চায়। আর ইমেইল করে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের, কারা ক্রিসমাসের ডিনারে যেতে চায়। উভয়পক্ষের তালিকা পেলে তারা দৈবচয়নের মাধ্যমে আগ্রহী ফ্যামিলিগুলোতে এক, দুই বা তিনজন ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট পাঠানোর ব্যবস্থা করে। পাঠানোর ব্যবস্থা মানে দুই পক্ষকে যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে তারা ক্ষ্যামা দেয়। আগ্রহী ফ্যামিলিরা ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের সাথে যোগাযোগ করে ক্রিসমাস ডিনারের জন্য তাদেরকে গাড়ি দিয়ে বাসায় নিয়ে যায়। ২০০৭ এর ক্রিসমাসে এই প্রোগ্রামটায় যাইনি। সংকোচ আর দ্বিধা কাজ করছিল মনে। ২০০৮ এ এসে ভাবলাম চলেই যাই, দেখে আসি নিউফিরা কিভাবে ক্রিসমাস উদযাপন করে। যথাসময়ে আমি আমার হোস্ট ফ্যামিলির ইমেইল পেলাম। তাদেরকে জানালাম আমার বাসার ঠিকানা। তারাও জানিয়ে দিল আমাকে কখন পিক করতে আসবে। আমার হোস্ট ফ্যামিলির কর্তা এবং কর্ত্রী দুইজনেই ফ্যাকাল্টি মেম্বার। কর্তা ডঃ ব্রুস ওয়াটসন, গণিতের অধ্যাপক। কর্ত্রী ডঃ মওরীন ভক- সংগীতের অধ্যাপক। বিশ্বখ্যাত মিউজিক স্কুল জুলিয়ার্ডের গ্র্যাজুয়েট। (জুলিয়ার্ড এবং মিউজিক নিয়ে একটা মুভি আছে- অগাস্ট রাশ। হিন্দি আর বাংলা ছবি এর কাছে পানিভাত।)
ক্রিসমাস ডিনারে যাচ্ছি, নিউফি কালচার কি বলে জানি না। বাংগালি কালচারে মিষ্টি নিয়ে যাওয়াই কাম্য। এই বিদেশ বিভূঁইয়ে মিষ্টি কই পাই এখন! বদলি হিসাবে তাই ভাবলাম চকলেট নিয়া যাই। ক্রিসমাসের দিন সকালে বের হয়ে দেখি সব দোকান বন্ধ। একমাত্র খোলা শপারস ড্রাগ মার্ট, কানাডিয়ান ফার্মেসি আরকি। সেইখানে কিছু শুকনো খাবার সবসময়ই বিক্রি হয়। মনে আশা নিয়ে তাই সেখানেই গেলাম। গিয়ে দেখি ভালো জিনিস সব হাপুস হয়ে গেছে আগেই, কিছু চকলেট সেইল দিয়ে ফেলে রাখছে। নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো নাকি দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল- এই বিতর্ক মনের মধ্যে চলল কিছুক্ষন। নতুন মামা হইছি, অপরিচিত লোকজনদেরও মামা বইলাই ডাকি। অতএব, কানা মামাই জয়যুক্ত হল। সাড়ে তিন ডলার দিয়ে এক বাক্স সেইলের চকলেট কিনলাম। বাসায় গিয়ে গোসল করে, ক্ষৌরকর্ম করে চেহারা ঝকঝকা বানায়ে রেডি হইয়া গেলাম। যথাসময়ে ব্রুস আমাকে এসে তুলে নিয়ে গেল তার বাসায়।
ওয়াটসন ফ্যামিলির বাচ্চা দুইটা। পোলাটার নাম মাইক ওয়াটসন আর মাইয়াটার নাম ভুইলা গেছি। যাইহোক, সবার সাথে পরিচিত হইলাম। আমি আমার গিফট বাইর কইরা দিলাম। তারাও আমারে গিফট দিল একটা চকলেটের বাক্স, তাতে নানা রকম চকলেট। সেইটা অবশ্য সেইলের সস্তা চকলেট না, দামি কিছুই বলে আমার মনে হইল। নাহলে তো আর বাক্সটা এমন ঝকমকা হইত না। প্রত্যেক চকলেটের নিচে আবার একটা লিফলেটে সেই চকলেটের ইতিহাস লেখা। মানুযের নাকি যেটার অভাব সেইটার পিছেই বেশি ছোটে। আমি বিদ্বান মানুষ, চকলেটের ইতিহাস সম্পর্কিত বিদ্যা আমার না হইলেও চলপে। কিন্তু চকলেট না খাইলে চলপে না। তাই বাসায় ফিরেই লিফলেটগুলো ছুঁড়ে ফেলে গপাগপ কিছু চকলেট সেঁটে বুঝলুম আসলেই বেড়ে জিনিস! যা হোক, খাদ্যালাপ এখানে মুলতুবি করিয়া ফেরত যাই ওয়াটসনদের বাসায়।
কথাপ্রসঙ্গগে জানলাম ব্রুসের মাইয়াটা ম্যাকগিলে মিউজিকে মাস্টার্স করে, বেহালা বাজায়। আমার বেহালা সম্পর্কিত জ্ঞান ভেনেসা মে পর্যন্ত, তাই “oh really” বইলা ভদ্রতাসূচক ইম্প্রেসড হইলাম। পোলা মাইক টরন্টো ইউনিতে ম্যাথে মাস্টার্স করত, ছাইড়া দিছে। এখন নাকি পোকার খেইলা বেড়ায়। মনে মনে ভাবলাম, শালা লাফাংগা, উড়নচন্ডি। এই ফ্যামিলির একটা ছেলে পেশাদার জুয়াড়ী হইছে, ছ্যাঁ ছ্যাঁ।
যথাসময়ে খাওয়া দেওয়া হইল। সিদ্ধ তরকারি আর টার্কি। আরো কি কি জানি ছিল, নাম ভুইলা গেছি। নিউফি খাওয়াদাওয়া আমার মসলাভোগী বাংগালি রসনা তৃপ্ত করতে পারল না। ডেজার্টের সময় ব্রুস খাওয়াইল শেরি আর ময়দা দিয়ে বানানো খামির কেক। ব্রুস অবশ্য বলছিল বেক করার সময় সমস্ত এলকোহল বাষ্প হয়ে উড়ে গেছে, মাতাল হবার সম্ভাবনা নাই। সম্ভবনা থাকলেও যে আমার কোন উনিশ বিশ হইত না। খাওয়া দাওয়া শেষ হইলে ওদের লিভিং রুমে বইসা বিরাট স্ক্রিনের টিভিতে লেকারস-সেল্টিক খেলা দেখলাম। আমার লেকারস গত বছরের ফাইনালের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিল, ভালোই লাগল। মওরিন পিয়ানো বাজাইয়া শুনাইল। আমি সমঝধারের মত মাথা নাইড়া গেলাম। একটা গান শুনায় আর আমি গানের মেজাজ বোঝার চেষ্টা করতে করতে বলি, “that was so profound!” “that was so powerful!” এই করতে করতে রাত গভীর হইল। ব্রুস মিয়া আমারে বাড়ি পৌঁছাইয়া দিল।
আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন এই ঘটনা নিয়া ব্লগ লেখার কি হইল, ইন্টারেস্টিং কিছুই তো ঘটে নাই। একটু অপেক্ষা করেন, বলতেছি। ক্রিসমাসের কিছুদিন পর লেকারসের খেলা দেখতেছিলাম নেটে। টাইম আউটের সময় টিভিতে লাস ভেগাসে অনুষ্টিতব্য একটা পোকার টুর্নামেন্টের এড দেখাইতেছিল। হঠাৎ মনে হইল চেনা কাউরে দেখলাম। পরের টাইম আউটে একই এড আবার দেখানোর সময় চিনতে পারলাম লোকটা আসলে মাইক ওয়াটসন। গুগলাইলাম ব্যাটারে। আরে…যারে ভাবছিলাম লাফাংগা, সেই লোক মাল্টি মিলিয়োনিয়ার, হোক না বয়েস আমারই সমান!!!
এই গল্প থেকে আমরা কি শিক্ষা পাইলাম? আমরা এই গল্প থাইকা এই শিক্ষা পাইলাম যে…
Money is a stupid measure of success. Unfortunately this is only measure we have.
– Dr. Zohrul Kabir
মাইকের অর্জনকে খাটো কইরা দেখতেছি না। বিখ্যাত পোকার প্লেয়ার হওয়াটা সবাই পারে না। তবে যারে প্রথম বিচারে উড়নচন্ডী ভাবছিলাম, সেই লোকের আয় করা বিত্তের পরিমাণটা দেখে আমার সেই লোক সম্পর্কে ধারণা পরিবর্তন হয়ে যাওয়াটাই বুঝায় টাকা দিয়াই আসলে আমরা সফলতা মাপি।
😀
আজকে দেখি আমার দিন, আবারো অনেকদিন পর। 🙂
ভাবী ভালো আছেন নি? 🙂
হ, ভাই। আছি একরকম। 🙂
তৌফিক মিয়া অনেকদিন পর, দেশে গিয়া ভুইলা গেলা দেখি একদম।
তা আসো কেমন? 🙂
লিখা সেরম হইসে, তো এবার ক্রিষ্টমাসে করলা কি?
আমার অবশ্য এদের টার্কি, গ্রেভি, স্টাফিং, সিদ্ধ তরকারি খারাপ লাগেনা। 😛
ভাবীপ্পু, আমি তোমার রান্না করা টার্কি আর স্টাফিং খাপো :((
চইল্ল্যা আয় 😛
শুধুই খাপো আর খাপো x-(
এইটা পড়ে আমার ক্রিসমাস আর থ্যাংসগিভিং এর পার্টির কথা মনে পড়ে গেলো ... সময় পেলে লিখে ফেলবো নে।
ভালো লিখেছো 🙂
মাঝে মাঝে জি-স্পোর্টস এ পোকার খেলা দেখি... B-)
ভালোই লাগে...
তয় প্রাইজমানি বড্ড বেশি...
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
এখনো দেশে নাকি?? লম্বা ছুটিতে আছো দেখি । বেশির ভাগ সফল মানুষের কাছেই টাকা থাকে । তাই টাকা দিয়ে তো সফলতা হিসাব হবেই 😀
:shy: ইয়ে তৌফিকদা, মাইকের ভইন ও আপু দেখতে শুনতে কেমন? :shy:
ছিঃ ছিঃ দাদা একি বললেন 😛 😛 😛
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
x-( দাদা মানে?তুই কি আমার নাতি নাকি?আমি বয়স্ক বাট তোর দাদার বয়েসি মোট্টেও না x-(
আপনের আচারগুলা পড়তে সেইরাম মজা লাগে
তৌফিক ভাই সিরাম হইছে :clap: :clap:
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
সেটাই। :no:
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
🙂 :clap:
টাকা দিয়ে সফল না হয় হওয়া যায়, সুখী হওয়া যায় কি??
সাধাসিধা আচার, কিন্তু স্বাদ বেশ ভালো! 🙂
:thumbup: এই জন্যই তানভীর ভাই আপনারে এত্ত ভাল পাই 😀 কি সুন্দর করে বলে দেন।
সমস্যা হইলো টাকা নাই যাদের তাদেরও তো সুখী দেখি না। 😕
:thumbup: :thumbup:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
আচ্ছা পোকার কি জিনিষ? খায় না মাথায় দেয়?
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
শান্তাপু, এটা কার্ডের খেলা। অনেকটা জুয়ার মত।
;))
সহমত :thumbup:
লেখা ভাল হইছে, পোকার খেলতে মঞ্ছায় 🙁
মিষ্টি খেতে ইচ্ছা করতেসে 🙁
তৌফিক ভাই, আপনে কি পরিমাণ ফাকিবাজ, আমারে কবে আইসক্রীম খাওয়াবেন?? সুন্দরবনে আর কত ঘুরবেন? এইবার একটু এন্ডারসনে আসেন 🙁
গত বছর এমন একটা ঘটনাই শুনেছিলাম আরেক প্রবাসির কাছে, সে অবশ্য থ্যাঙ্কস গিভিংয়ে প্রফেসরের বাসায় দাওয়াতে গিয়েছিলো। সেখানেও অনেকটা এমন অভিজ্ঞতা, খাবার আর পরিবারের লোকজনের সাথে।
পোকার খেলাটা এখনও বুঝতে পারলাম না, শেখা তো দূরের কথা! 🙁
অনেক দিন পর আবার আচার এর দেখা পেলাম।এবং যথারীতি মজা পাইলাম 😀 😀
কেমন আছেন ভাইয়া??
গল্পের মোরাল অনু্যায়ী আমি একজন খ্রাপ লুক কারণ আমার পকেটে আপাতত মাত্র বিশ টাকা আছে 🙁
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
টাকা পয়সা কি :just: ফ্রেন্ডের আচলে বাইন্ধা রাখস নাকি?? 😮 😮 :grr: :grr:
টাকা পয়সা কি :just: ফ্রেন্ডের আচলে বাইন্ধা রাখস নাকি?? 😮 😮 :grr: :grr:
🙁 নাহ,মানিব্যাগটা হ্যার কাছেই থাকে-মাঝে মইধ্যে দয়া কইরা সেইখান থিকা হাতখরচের টাকা বাইর কইরা দেয় 🙁
মনে মনে ভাবলাম, শালা লাফাংগা, উড়নচন্ডি। এই ফ্যামিলির একটা ছেলে পেশাদার জুয়াড়ী হইছে, ছ্যাঁ ছ্যাঁ।
=)) =)) =)) =)) =))
একটা ক্রিস্টমাস লন্ডনে করার সৌভাগ্য হয়েছিল, একটা ইনভাইটেশন ছিল, এটেন্ড করি নাই... কি ভূলটাই না করেছি... 🙁
আসলেই টাকাই সফলতার মাপকাঠী...
মোবাইলে মাঝে মাঝে পোকার খেলি এবং জিততে জিততে মিলিয়োনিয়ার হয়ে যায়... ইস!!! বাস্তবে যদি হইতো...???
🙁
অফটপিক :একটা সত্যি কথা কই তৌফিক ভাই...আপনার আচারের স্বাদ দিনকে দিন বাড়তেসে... :guitar: :thumbup: :thumbup: খুব মজা পাই আচারগুলা পইড়া... :boss: :boss: পাঁচ তারা । পরবর্তী আচারের অপেক্ষায় রইলাম।
অনটপিক:বিদ্যাশ থেকে আমরার জইন্য চকলেট আনেন্নাই?? x-( x-( 😡 সেইলের হইলেও চলপে 🙁 🙁
আচারের টেস্ট দারুন ছিল...
ইন্টারনেটে পোকার খেলে তো লাখ লাখ টাকা জিতছি... তাহলে তো মনে হয় আমিও সফল মানুষ B-)
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
জটিল জটিল।
অনেকদিন পর তৌফিক আর তার দুর্দান্ত আচার!!
ওয়াটসন ফ্যামিলির মেয়েটার নামতো খুব সুন্দর 😀
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
কাইয়ুম ভাই,আপনি কি এখুনো সিঙ্গেল? 😉
তোর লেখার প্রথম অংশ পড়ে ছোটবেলার একটা গল্পের কথা মনে পড়তেছিল। কার লেখা কিছু মনে নাই ওই যে এক লেখক রেস্টুরেন্টে কাজ করে একটা ছেলের বাসায় বেড়াতে যায় সস্তা খাবার গিফট নিয়ে গরীব ভেবে পরে গিয়ে দেখে বড়লোক...
কেমন আছিস রে? কবে ব্যাক করলি?
তপু, তুই যে গল্পটার কথা বললি সেটা হলো "ছুটির অবসরে" জসীমউদদীনের।
যথারীতি আমিন বস।
দোস্ত তুই কি লিঙ্কটা পাইছস বাংলাদেশের সব ক্লাসের বই পিডিএফ আকারে নেটে দিয়ে দিছে। অবশ্য তোর লাগবে না। আমি ক্লাস ২ আর ৩ এর টা পড়লাম গতকালকে। বড় ভাল লাগল।
তারপরেও লিংকটা দিস আমারে। 😀
ওয়ান থেকে নাইন পর্যন্ত সব 😀
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!