আচার০০৭ : অবিবাহিতের অভিজাত পেটপূজা

২০০৬ সালের অক্টোবরের শেষ অথবা নভেম্বরের শুরু। বাংলাদেশে তখন ক্ষমতার মসনদ নিয়ে দুই দলের শকুন শেয়ালের টানাটানি চলছে। কোরবানী ঈদের পরপরই আমার বিশেষ প্রয়োজনে ঢাকা আসতে হলো। ঢাকায় তখন থাকি নিকুঞ্জে, ব্যাচেলারদের মেস বাসায়। বুয়া এসে রান্না করে দিয়ে যান, আমরা খাই। ঈদের ছুটিতে সবাই যে বাড়ি গিয়েছিল, ফেরেনি তখনো কেউ, বুয়াও ফেরেননি। আমি একলাই ফিরে আসলাম এবং মাইঙ্কা চিপায় ধরা খেলাম। ঢাকার ভেতরের দিকে তখন চরম গন্ডগোল, প্রতিদিনই একজন দুজন মরে যাচ্ছেন অর্থহীনভাবে। এদিকে আমি বুয়া না থাকায় এবং বাজার বন্ধ থাকায় খাওয়ার কষ্টে পড়ে গেলাম। রাঁধতে পারি না তখনো। ফোনে আম্মার কাছ থেকে নির্দেশনা নিলাম কিভাবে ভাত রাঁধতে হয়। পাড়ার মুদি দোকান থেকে কিনে আনলাম চাল, তারপর বেশি করে ভাত রাধঁলাম। প্রায় দুদিন পর ভাত খাচ্ছি, এতোদিন চালিয়েছি মুড়ি, চানাচুর আর বিস্কুটের উপর। ভাতের সাথে খাওয়ার জন্য ডিম ভাজলাম। একটা পেয়াঁজ আর কাঁচামরিচ ছিলে আয়েশ করে প্রায় এক গামলা ভাত নিয়ে বসলাম। একটু ডিম ভাজা ছিঁড়ে ভাতের লোকমায় ঢুকাই, পেঁয়াজ আর কাঁচামরিচে কামড় দেই একটা, তারপর একটু একটু করে চিবানো শুরু করি। ভাবটা এমন যেন পৃথিবীর শ্রেষ্ট খাবার খাচ্ছি। খাওয়া শেষ করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললাম বড় করে একটা। বেঁচে যাওয়া ভাতে পানি দিয়ে ঘুমাতে গেলাম, সকাল বেলা পান্তা খাব বলে।

তখন একটু একটু শীত পড়েছে, একেবারে যাকে বলে জাঁকিয়ে শীত পড়া তা হয়নি। কাঁথা গায়ে দিতে হয় রাতে একটা, এই পর্যন্তই। ঘুম থেকে উঠে পান্তা খেতে গিয়ে দেখি, পান্তা ভাতের তাপমাত্রা একেবারে সাব জিরো হয়ে আছে। প্লেটে পান্তা নিলাম, লবণ ছিটিয়ে দিলাম একটু। পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ কেটে নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। কিন্তু পান্তা এতই ঠান্ডা ছিল যে, আমার হাতের আঙ্গুল কুঁকড়ে আসা শুরু করল। ঠান্ডায় হিহি করে খাওয়া শেষ করে একটা বিড়ি ধরালাম। আমার আবার বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দিলে সৃষ্টিশীলতা বেড়ে যায়। মনে হলো, ঠান্ডা হয়েছে তো কি হয়েছে, ব্রেকফাস্টটা তো আর খারাপ হয়নি। একটা ভালো নাম দেয়া যাক এই ব্রেকফাস্টের, যাতে বনেদীয়ানাটা চলে আসে। পান্তা নামটা কেমন যেন খ্যাত খ্যাত লাগে। অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলো যেমন সাদা ভাতকে স্টিমড রাইস বলে ডেকে ১০ টাকার খাওয়া ১০০ টাকায় বিক্রি করে সেই রকম একটা ব্যাপার আরকি। সাথেই সাথেই নাম পেয়ে গেলাম একটা, নিজেকেই বাহবা দিলাম এত সুন্দর, বনেদী এবং একই সাথে বর্ণনামূলক একটা নাম দেয়ার জন্য। নামটা ছিল,

এক্সট্রা চিলড একোয়া রাইস উইথ গ্রিন চিলি এন্ড চপড অনিয়ন।

গুলশানে যদি একটা রেস্টুরেন্ট খুলে এই নামে পান্তা বিক্রি করা শুরু করতাম, কোটিপতি হওয়া মনে হয় বেশি দূরের ব্যাপার ছিল না। আপনারা কি বলেন?

২,৪৮৮ বার দেখা হয়েছে

২৬ টি মন্তব্য : “আচার০০৭ : অবিবাহিতের অভিজাত পেটপূজা”

  1. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    আমি ইনভেস্ট করপও। (কপিরাইট মাস্ফু :khekz: )
    অফটপিক: ব্লগীয় কমরেডস দৌড়ের উপর থাকায় ইচ্ছা থাকলেও কমেন্ট করা হচ্ছেনা । আমি 20 ডিসেম্বর দেশে আসছি সবার সাথে দেখা করার ইচ্ছা থাকল । সবাইকে :salute:

    জবাব দিন
  2. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)
    এক্সট্রা চিলড একোয়া রাইস উইথ গ্রিন চিলি এন্ড চপড অনিয়ন।

    এই না হইল ক্যাডেট :clap: :clap: :clap:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  3. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
    এক্সট্রা চিলড একোয়া রাইস উইথ গ্রিন চিলি এন্ড চপড অনিয়ন।

    জটিল জটিল।
    একোয়া রাইস কথাডা হেব্বি মনে ধরছে। সাব্বাস ব্যাটা তৌফিক, জটিল নামকরণ :clap:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  4. হাসনাইন (৯৯-০৫)
    এক্সট্রা চিলড একোয়া রাইস উইথ গ্রিন চিলি এন্ড চপড অনিয়ন।

    হেভভী নাম দিছেন ভাইজান 😀 , কলেজের একোয়া রাইসের কথা মনে করায় দিলেন। 😛
    মনে পড়ে নববর্ষের দিন গরম ভাতে পানি ঢাইলা দিত, তাই-ই চেটেপুটে খাইতাম... আহা। 😀
    তাইলে কলেজ ভার্সন হইব...

    হট একোয়া রাইস উইথ গ্রিন চিলি এন্ড চপড অনিয়ন
    যান কপিরাইট আপনার। 😛

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : নাজমুল (০২-০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।