ফ্যাকাল্টিতে মেশিন শপ দুইটা। একটা স্টুডেন্টদের জন্য। দুইটা মিল, কিছু লেদ, একটা গ্রাইন্ডিং হুইল, একটা শিট মেটাল বেন্ডিং মেশিন, গোটা দুয়েক পাওয়ার ড্রিল- স্টুডেন্টদের জন্য বরাদ্দ এইগুলাই। ইদানীং অবশ্য একটা সি এন সি লেদ ইনভেনটরিতে যুক্ত হইছে। আরেকটা মেশিন শপ হইলো টেকনিক্যাল সার্ভিসেস। মোটামুটি বেশ ভালো এদের যন্ত্রপাতি, অনেক কিছু আছে। এরা ইউনিভার্সিটির বাইরের ফরামায়েশি কাজ কর্ম বেশি করে। এবং এই কাজ করার জন্য অনেক টাকা চার্জ করে। স্টুডেন্টদের স্পেশাল যদি কিছু দরকার হয় তবে তাদের আবেদন পত্র অনেক লাল ফিতার পুলসেরাত পার হয়ে কখনো এপ্রুভড হয়, কখনো হয় না। আমি স্টুডেন্ট হইলেও রিসার্চ করি এক কোম্পানীর জন্য। তাই আমার জন্য লাল ফিতা নাই, সরাসরি কাজের অর্ডার, সরাসরি পেমেন্ট। ফেলো কড়ি মাখো তেল। কিন্তু মুশকিল হইল, এরা বুঝে বেশি। যেমন করে বলব আমার জিনিস মেশিনিং করে দিতে, এরা কখনোই করবে না সেইরকম করে। ফলাফল, নিজের ডিজাইন করা জিনিস বাজে ম্যানুফেকচারিং করার কারণে মনমতো হয় না। টাকা দেওয়ার পরও কথা না শুনার কারণে আমি নিজেই সাধারণত স্টুডেন্ট শপে নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা করার চেষ্টা করতাম। কিন্তু এইখানে মুশকিলটা হইল গিয়া, মেশিনিস্ট হিসাবে আমি মোটামুটি নিম্নশ্রেণীর। মেশিনিস্টদের লাইসেন্স পরীক্ষা দিলে কখনো পাস করতাম বলে মনে হয় না। আমার এই দুরবস্থায় উদ্ধার করতে খোদা প্রেরিত দেবদূতের মতো হাজির হইলেন ডন টেইলর। স্টুডেন্ট শপের ফোরম্যান। ইংরেজিতে যারে বলে ড্যাম ফাইন মেশিনিস্ট, ইনি ঠিক তাইই। বিপদে পড়লে তারে গিয়া একটু মিষ্টি করে অনুরোধ করলেই সে আমার কাজ করে দেয়। মেশিন শপ আর আমার ল্যাব কাছাকাছি হওয়াতে তার সাথে গিয়ে আড্ডাবাজিও করি মাঝে মাঝে। বিভিন্ন জিনিস নিয়া আমাদের গপ্পোবাজি ভূগোল আর বয়েস ভেদ করে ঠিকই কিভাবে যেন এক সমতলে হাজির হয়। তো একদিন সে বলল বিভিন্ন ধরনের মিউজিকের প্রতি তার আগ্রহ, আমি যেন তারে কিছু বাংলাদেশি মিউজিক সাপ্লাই দেই। আমি কইলাম অবশ্যই। আমি বাংলা ছাড়া ইংরেজি শুনি, তবে কম। বাংলাও শুনি হাতে গোনা কয়েকজনের। তাই বিচিত্রতার অভাবে একটু বিপদে পড়লাম। তবু আতিঁপাতিঁ করে খুঁজে দিলাম কিছু গান। নিজের পছন্দ অবশ্য। ডন রে গান সাপ্লাই দিয়া কইলাম, দেখ, এই গানগুলা আমার রুচিকে রিপ্রেজেন্ট করে, আমার সংস্কৃতিকে না। সুতরাং ভালো না লাগলে, আমার রুচিকে খারাপ ভাইবো, আমার সংস্কৃতি সম্পর্কে কোন আইডিয়া পাইবা না এই গানগুলা থাইকা। ডন তার স্বভাবসুলভ ইজি ভংগিতে কইল, নো ওয়ারিজ।
এই ঘটনার পর সপ্তাহখানেক পার হইল, স্টুডেন্ট শপের সামনে দিয়ে যাইতেছি, হঠাৎ শুনি কৃষ্ণকলি সোনারও পালংকের ঘরে কারে যেন লিখে রাখার কথা বলতেছে। আকাশ থেকে পড়লাম, কিছু বুঝে উঠতে না পেরে ঢুকলাম মেশিন শপে। দেখি শপের কোণায় কোণায় স্পিকার বসানো, তাতে বাজতেছে বাংলা গান। ডনের অফিসে গেলাম ব্যাপার অনুসন্ধান করার জন্য। গিয়ে দেখি ডন আর তার এসিস্ট্যান্ট ক্যারোলাইন আমার দিকে তাকায়ে মুচকি মুচকি হাসতেছে। ওরা যা বলল, তার সারমর্ম এই- মেশিন শপের ভারী আবহাওয়াটাকে সহজ করার জন্য তারা স্পিকারগুলা বসাইছে। আর বৈচিত্র্য আনার জন্য বাংলা গানের ব্যবস্থা। আমি কৃতজ্ঞচিত্তে ধন্যবাদ দিলাম ওদের। ওরা কয়, উলটা তোমারে ধন্যবাদ এই নতুন ধরনের মিউজিকের সাথে পরিচয় করায়ে দেওয়ার জন্য।
মেশিন শপে গেলেই এখন আমি কান উচুঁ করে থাকি কখন একটা বাংলা গান শোনা যাবে। কম্পিউটারের র্যানডম নাম্বার জেনারেটার প্রোগামটার দয়া হলে কখনো শুনতে পারি, কখনো পারি না। তবে আই প্রটেক্টিভ গ্লাসের নিচে আমার চোখ দুইটা যে বাড়ির চিন্তায় কোমল হয়ে যায়, এটা বেশ বুঝতে পারি। ধন্যবাদ ডন টেইলর, লোহা লক্কড়ের ভেতর আমার জন্য একটুকরো বাংলাদেশের ব্যবস্থা করে দিয়েছো বলে।
দারুণ!! অনেকদিন পর তোমার আচার।
ইসসস...তোমাদের মত করে বাংলাদেশের জন্য টান কখনও অনুভব করা হইল না......অবশ্য এরকম অবস্থার মধ্য দিয়ে টান অনুভব না করাই ভাল।
লেখাটার শেষ দিকে এসে কেন জানি মন খারাপ হয়ে গেল।
ধন্যবাদ তানভীর ভাই। দোয়া করবেন। 🙂
:thumbup:
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
:thumbup:
🙂
কামস ভাইয়া শুধু ইমো না দিয়ে কিছু সুন্দর সুন্দর মন্তব্য দাও ... 😛
ভালো লেগেছে!! অসাধারণ লাগলো শেষ লাইনটা। :hatsoff: টু টেইলর মামু।
অফটপিকঃ আগেরবার কি একই পোষ্ট আচার ০২১ নামে প্রকাশ করেছিলেন?
পিকনিকের ঘটনা কই গেলো :(( ?
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
আসিতেছে, ওইটা ঠিক জুইত কইরা লিখতে পারতেছি না। ছবি দিয়া কাভার দিমু, সেই উপায়ও নাই। কারণ আমার কাছে ছবি নাই। 🙁
ঐ লম্বু, তুমি নাংগু বাবা হয়ে পানিতে নামছো ক্যান? লজ্জা শরম নাই তোমার? ;))
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
শর্টস পরা আছে, দেখেন না?? 🙁 :(( 🙁
নাহ, প্রোফাইল পিক চেঞ্জ করুম এখনি।
:boss: :boss: :boss:
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
🙂 🙂 🙂
:thumbup: তৌফিক।
কিন্তু ইমোটা হঠাৎ সাদাকালা হইলো ক্যান......... 😡
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
অনেক ধন্যবাদ লাবলু ভাই। 🙂
দারুন লাগলো লেখাটা।
www.tareqnurulhasan.com
ধন্যবাদ তারেক ভাই। 🙂
অসাধারণ । বিদেশে আসলেই বাংলাদেশের প্রতি টানটা বোঝা যায় । :boss:
অনেক ধন্যবাদ হোসেন ভাই। আপনার প্রোফাইল পিকটা তো জটিল হইছে। 🙂
:hatsoff: দোস্ত...
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
:hatsoff:
কষ্ট করে পড়লি দেখে... 🙂
আমার বাংলাদেশ......... ইনশাল্লাহ আর ২ দিন পরেই বাংলাদেশে চলে আসব। লেখাটা হৃদয় ছুঁয়ে গেল।
:hatsoff: :hatsoff:
আমিও আসতেছি, কিন্তু কবে জানি না... 🙁
ধন্যবাদ দোস্ত।
সকালে একটা কমেন্ট করছিলাম, কম্পু হ্যাঙ খেয়ে ওটা যায়নি দেখি!
===
সাবাশ! তোরে আর টেইলর আঙ্কেলরে! :clap:
আমার দুই বোন আমেরিকাতে থাকে, ওখানেই বড় হয়েছে। ২০০৪ সালে প্রথম দেশে আসলে কথায় কথায় আমি কিছু রক্ বাংলা ব্যাণ্ডের অ্যালবাম ওদের কিনে দিয়েছিলাম। শুনে তারা বেশ অবাক হয়েছিল। এবার দেশে আসার পরে দিলাম কৃষ্ণকলি আর অর্ণব। এবারে তারা রীতিমত তব্ধা। এমন মিউজিক বাংলাদেশে হচ্ছে যার কোয়ালিটি পাশ্চাত্যের মত এবং একই সাথে এখানকার সুরের প্রকৃতি বা চরিত্র ধরে রাখছে। এটা আমাদের জন্য আসলেই খুব আশার কথা।
আমাদের এই অসম্ভব সুন্দর সুর ছড়িয়ে যাক সারা পৃথিবীতে! :thumbup:
আমাদের মিউজিক আসলেই অনেক অনেক সমৃদ্ধ। মুজতবা আলীর একটা গল্পে এই নিয়া কথা আছে, পৃথিবীর সব সংস্কৃতির ফোক সংগুলা হয় সিম্পল, সাদামাটা। আমাদের ভাওয়াইয়াতে সুরের যে কারুকাজ আছে সেটা শুনে এক জার্মান এটাকে ধ্রুপদী সংগীত ভাবছিলেন।
তৌফিক ভাই, আহ 😀
এইরকম কাহিনি গুলো শুনলে কেন যানি দারুন আনন্দ হয় :hatsoff:
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
😀
দারুন তৌফিক ভাই ... :thumbup:
অফটপিকঃ এখনও কি ল্যাবে থাকেন নাকি বাসায়?
থিসিস শেষ ভাবি, এখন বাসায়। আপনি কি এখন ফ্রি নাকি? থাকলে ফোন দেই।
অভিনন্দন তৌফিক ভাই। মিষ্টি পাওনা রইল। :clap:
অবশ্যি, অবশ্যি ভাবী। 🙂
দারুন অনুভূতি...। পরবাসীর রোজনামচা...। :thumbup:
দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম কেউ বুঝে না... 🙁
জাফর ভাই ধন্যবাদ। 🙂
যোশ ঘটনাতো । বাংলা গান অনেক রক করে :thumbup:
আদনান ভাই, আপনেও লেখা শুরু করেন না দিনলিপি। আমি জানি বিদেশে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যেগুলা অনেকের কাছেই ইন্টারেস্টিং মনে হবে।
আমি ইদানিং অনেক বোরিং টাইম পাস করি । আগের মত অনেক রক করা হয় না । তভে মজার কিছু হলে অবশ্যই লিখব । গাড়ি চালানো কতদূর ?
রোজনামচাটা বেশি ভাল লাগে।
রোজনামচা রোজ না লেখলে কেমনে কি।
রোজ রোজনামচা দেওন যায় না?
কিরে তুই টাইটানিকের জ্যাকের মত খালি রোজ রোজ করতাছোস ক্যান?
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আহা রোজ...
The Reader দেখার পর আর রোজ রোজ কইতে মঞ্চায় না 🙁
কি থিকা কি হইছে 😮
তাই নাকি মুভি খুবই কম দেখা হয় টাইটানিক কেমনে কেমনে দেখা হইছিল। মুভি দেখা শুরু করব ভাবছিলাম ইংরেজি লিসেনিং এর জন্য। দেখি মুহম্মদের প্রিভিউর জন্য ওয়েট করছি।
তোর পোস্ট কই। এখন শরীর কেমন? 🙂
এক মাস সব কিছু থেকে দূরে থেকে এখন চোখে কিছু দেখি না। শরীর ভাল রে এখন।
ভাল্লাগে না ভাই 🙁
তোমার এখন কি খবর ভাইয়া? ভাল আছ তো।
আমার কমেন্ট গেল কই 😮
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আমার্কমেন্টেরুপ্রে :thumbup:
পুরা রকাইতেচেন্দেখি
বাংলা গান দিয়ে তৈরি আপনার একটুকরো বাংলাদেশটা দেখতে মঞ্চায়