আচার ০২০: পরবাসীর রোজনামচা

১।
মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক। এস এস সি-র আগে অথবা ক্যাডেট কলেজে ইনটেক পরীক্ষার সময় এই বাক্যের ট্রান্সলেশান শিখছিলাম। Man proposes, God disposes. গত কয়েকমাস ধইরা আমার সাথে গড এই কামই করতাছে খালি। আমি প্রোপোজ করি, তিনি ডিসপোজ করেন। যা করতে চাই তার কোনকিছুই ঠিকমত হয় না। থিসিস শেষ করার ডেডলাইন মিস করতে করতে এখন ডেডলাইন সেট করাই বাদ দিছি। দাঁত খিচাঁইয়া, কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীর মত মুখ কইরা পইড়া থাকুম ঠিক করছি, বাকি তাঁর ইচ্ছা। ডিসপোজ করলে করতে পারেন, ইচ্ছা হইলে এক্সেপ্ট করবেন। আমার কাম আমি কইরা যাই।

গড অবশ্য আমার বিশ্বাসীদের মতো মনোভাবে খুশি হইছেন কিনা জানা নাই, মনে হয় হন নাই। লেটেস্ট ঘটনা হইলো আমার এক্সপেরিমেন্টাল রিগের সাথে হুকড আপ কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক গন। সাথে আরো গন ২০ গিগার মতো মাথার ঘাম পায়ে ফেলা ডেটা। ভাগ্য ভালো যে অন্যান্য জিনিসের ব্যাক আপ ল্যাপিতে আছে। যে ডেটা গেছে, ওইটার জন্য ৩০ ঘন্টা রিগ চালাইতে হবে, ১৫ ঘন্টা প্রসেসিং। ভাবতেই জলে চোখ ভিজে যায়…… আ হা হা……এতো কষ্ট, এত ক-ও-ষ্ট…কেন? কেন?? কেন???

অধিক শোকে মানুষ নাকি পাথর হইয়া যায়, সত্যযুগে মানুষেরা হইতেনও বোধহয়। এখন আর সেই দিন নাই, ঘোর কলিকাল। এখন নিয়ম হইলো অধিক শোকে ব্লগ লিখা, আমি তাই করতেছি।

২।
কানাডায় আসার পর ইউনিভার্সিটি থেকে একটা আইডি দিছিল। ওইটাতে আবার বয়স উল্লেখ নাই। যেসব জায়গায় বয়স লাগে, ওইসব জায়গায় ওই আইডির বেইল নাই। পাসপোর্ট নিয়া যাইতে হয়। তো বিড়ি কিনতে গেলাম একদিন, তার আগেই শেভ কইরা চুল কাটাইয়া চেহারাটা মাশাল্লাহ ভদ্র বানায়া গেছিলাম। দোকানের ক্যশিয়ার আমারে বিড়ি বেচব না। মেজাজ সপ্তমে উইঠা গেল, কইলাম নিয়মিত কাস্টমার আমি, আমারে চেনে না? কিন্তু ক্যাশিয়ারের এক কথা, আই আন্ডারস্ট্যান্ড দ্যাট স্যার। বাট ইট ইজ রিকোয়ার্ড বাই ল দ্যাট আই সি ইউর আই ডি। অন্য কোন উপায় না থাকায় পাসপোর্ট নিয়া বিড়ি কিনা আনলাম। এরপর ভাবলাম একটা আইডি নেওয়া দরকার যাতে এই ঝামেলায় আর না পড়তে হয়। এক্ষেত্রে বেস্ট অপশন হইলো ড্রাইভারস লাইসেন্স। কিন্তু আমি জিন্দেগিতে গাড়ি চালাই নাই, তাই ভর্তি হইলাম ড্রাইভিং স্কুলে। টাকা একটু বেশি লাগল বটে, কিন্তু কিছু করার ছিল না। নভিস ড্রাইভার গাড়ি চালাইতে গেলে একজন অভিজ্ঞ লাইসেন্সধারী ড্রাইভারকে ফ্রন্টসিটে থাকতে হবে- আইনে বলা আছে। এইখানে পরিচিত অনেক অভিজ্ঞ লাইসেন্সধারী ড্রাইভার আছেন, কিন্তু কার এতো টাইম আছে যে কাজ-কাম বাদ দিয়া আমার সাথে গাড়িতে বইসা থাকবেন। অগত্যা টাকার শ্রাদ্ধ কইরা ড্রাইভিং স্কুলেই ভর্তি হইতে হইল। কিন্তু স্কুলে বেশি টাইম দেয় না। সুতরং স্কুলের কোর্স শেষ করার পরও যে লাইসেন্স পরীক্ষায় পাস করুম- কনফিডেন্স ছিল না। আমার ভাগ্য ভালো, মানুষরুপী ফেরেশতা তালুকদার ভাই ঘটনা শুইনা বললেন গাড়ি ভাড়া করো, আমি তোমারে শিখামু। আমিও বগল বাজাইতে বাজাইতে রেন্ট-এ-কার কোম্পানির ওয়েবসাইটে গিয়া গাড়ি বুকিং দিলাম।

এরপর গত উইকএন্ডে আমি আর তালুকদার ভাই গেলাম গাড়ি আনতে। দেখি আমারে দুই দরজার একটা লাল রঙের কুপ দিছে, পন্টিয়াক। দামী গাড়ি না, কিন্তু একটা টম ক্রুজ টম ক্রুজ ভাব আছে গাড়িটার মধ্যে। খুশিতে দাঁত মাড়ি সব সবাইরে প্রদর্শন করতে করতে গাড়ি নিলাম। পার্কিং লট থাইকা বাইর হমু বড় রাস্তায়, এমন সময় ব্রেক চাপতে গিয়া চাপলাম এক্সিলারেটর। বড় রাস্তায় দুরন্তবেগে চলা গাড়িগুলারে ঢুশা দেওয়ার আগেই তালুকদার ভাই হ্যান্ডব্রেক চাইপা সামলাইলেন। গাড়ি ভাড়া করার ২ মিনিটের মধ্যে বড় অঘটন ঘটানোর খুব কাছে চইলা গেলাম। তালুকদার ভাই ভালো মানুষ, আমারে কিছু কইলেন না। খালি বললেন গাড়ি চালায়ে বাসায় যাইতে পারব কিনা। আমিও রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানিস সাগীরা (যাত্রার দোয়া তো এইটাই, তাই না?) পইড়া রওয়ানা দিলাম। পরের দুই দিন কোন অঘটন ঘটানো ছাড়াই হাত মশকো করলাম, ভালোই লাগে। সোমবার বিকালে গাড়ি জমা, সকাল আর দুপুরে ট্যুর দিতে বাইর হইলাম তালুকদার ভাইরে নিয়া, গন্থব্য একশত পঞ্চাশ কিলো দূরের ফেরিল্যান্ড।

হাইওয়েতে উইঠা স্পিড লিমিটের ১০ কিলো নিচে গাড়ি চালানো শুরু করলাম। পেছনে ট্রাফিকের কনভয় লাইগা গেল। এক লেনের হাইওয়ে, পাসিং লেন নাই। এই দেশে আবার হুটহাট ক্রস করে না। তালুকদার ভাই কইল গাড়ি সাইড কইরা ওদের যাইতে দেও। আমি ডাইনে চাপার রিংকার দিয়া স্পিড না কমাইয়া গাড়ি চাপায়া দিলাম ডাইনে। ফলাফল, রাস্তার ধারের লুজ গ্র্যাভেল আমারে প্রয়োজনীয় ট্র্যাকশান দিতে পারল না। গাড়ি ডানসাইডে কাত হইয়া একটা নালার উপর ঝুলতে লাগল। ধামার ধাম সব গাড়ি থাইমা গেল, সবাই সাহায্য করতে আগায়া আসল। আমাদের + গাড়ির কিছু হয় নাই, কিন্তু গাড়ি আটকায়ে গেছে, টো ট্রাক ছাড়া তোলা যাবে না। এক ভদ্রলোক+ভদ্রমহিলার সহায়তায় খবর দিলাম টো ট্রাক কোম্পানিরে। তার ২০ মিনিটের মধ্যে হাজির। গাড়ি টান দিয়া তুইলা দিল। আমরাও ঘুরাঘুরির মায়েরে বাপ বইলা ফেরত চইলা আসলাম। একটা ফাড়া কাটল। আরো বুঝলাম ড্রাইভার হিসাবে স্পিড পারসেপ্সন ঠিক করতে হবে।

৩।
ফাড়ার পর ফাড়া যাইতেছে। নিজেরে এই বইলা সান্ত্বনা দিতেছি যে, মইরা তো আর যাই নাই। আল্লাহ অল্পের উপর দিয়া বাঁচাইছেন। যাউজ্ঞা, আরো কি কি কথা মনে কইরা কি বোর্ড টিপা শুরু করছিলাম ভুইলা গেছি। আজকের মতো বিদায়। ভালো থাকবেন সবাই।

৬,৯৪৮ বার দেখা হয়েছে

১২২ টি মন্তব্য : “আচার ০২০: পরবাসীর রোজনামচা”

  1. দিহান আহসান

    ভাইয়ার নিউফাউন্ডল্যান্ডের কোথায় থাকা হয়? চলে আসেন, বসের (মঈণ) সাথে আমরা দুইজনেই গাড়ী চালানো শিখে নেব। আমাদের ভাবীসাব কি দেশে? তাহলেতো আপনার খুবি খারাপ অবস্থা। সামারে চইলা আসেন, একসাথে বিরিয়ানি খাওয়া হবে। 😀

    জবাব দিন
  2. রকিব (০১-০৭)
    কিন্তু ক্যাশিয়ারের এক কথা, আই আন্ডারস্ট্যান্ড দ্যাট স্যার। বাট ইট ইজ রিকোয়ার্ড বাই ল দ্যাট আই সি ইউর আই ডি।

    :khekz: :khekz: :khekz:
    আপনেরে তাইলে পুলাপাইনের মতো লাগে 😛 😛


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  3. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    এতো ভেবো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
    শুভ কামনা রইলো।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  4. ইউনিভার্সিটি আইডিতে বার্থডেইট থাকলেও কাজ হয় না ... ঐটা গভর্নমেন্ট ইস্যুড না, কাজেই ইউনিভার্সিটির বাইরে ঐটার দেড় পয়সাও দাম নাই ... আমার ইউনি আইডিতে ডেইত অভ বার্থ আছে, কিন্তু তাও আমারে একবার বারে ঢুকতে দেয় নাই, সাথের বালিকারে দিছে, বেইজ্জতির একশেষ 🙁

    ড্রাইভার্স লাইসেন্স পাইতে ভালো পয়সা লাগে, প্লাস টেস্ট দিতে হয় ... একাট সহজ বিকল্প হচ্ছে পাস্পোর্ট, ইউনি আইডি আর ব্যাংক কার্ড নিয়ে একসেস কানাডার কোন অফিসে চলে যাওয়া [সব মাঝারি সাইজ টাউনেও এই অফিস থাকে, গুগোল করলেই পাওয়া যায়] ... গিয়া এই তিনটা কার্ড আর পনের ডলার দিলে সাথে সাথে একটা গভার্নমেন্ট ইস্যুড ফটো আইডি দেয়া যেটা কানাডার মধ্যে যে কোন জায়গায় এক্সেপ্টেড, এয়ারপোর্ট শুদ্ধ ...

    লেখা ভালৈছে 😀

    জবাব দিন
  5. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    কিরে, আছিস কেমন? সব ফাড়া কেটে যাবে আশা করি...

    রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানিস সাগীরা (যাত্রার দোয়া তো এইটাই, তাই না?)

    মনে তো হয় না... এইটা হলো পিতা মাতার জন্য দোয়া ( তাইতো, না কি ? )


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  6. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    তৌফিক ভাই মানুষ ভালো না। কয়েকদিন পর পর কই যান আপনি? এত ভালো লেখেন অথচ আপনি অনিয়মিত। এটা ঠিক না। নিয়মিত না হইলে চিন্তা করছি আপনার লেখার প্রশংসা করুম না।

    জবাব দিন
  7. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    ঐ তোর ফোন নাম্বার দিছস কোন সময়ে ফ্রি থাকস একটু জানাইস দেখি একদিন ফোন দিব নে।
    তোর রোজনামচা বড়ই ভাল লাগেরে। কিন্তু তোর খালি ডাটা হারায় কেন? রেইড ড্রাইভ ইউজ কর।

    জবাব দিন
  8. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    আরে ব্যাপার না, লাইনে যখন আসবো তখন দেখবা ফাটাফাট সব কাজ হই যাইতেছে।

    যাত্রার দোয়াটা হয় নাই। ভজঘট লাগায় ফেলছো। এইটা হইতেছে বাবা মায়ের জন্য করা সন্তানের দোয়া। 😀


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  9. তারেক (৯৪ - ০০)

    এই ভুলটা একদম সবাই করে, শুরুর দু একদিনের মধ্যেই। আমিও ব্রেকের বদলে এক্সিলেটরে চাপ দিয়ে দিসলাম, বেশি কিছু হয় নাই, রোড ডিভাইডারের ওপরে উঠে বসে ছিলাম কিছুক্ষণ। 😀
    যাকগে, ভয় পাইওনা, হ্যাপি ড্রাইভিং।


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন
  10. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    তোরে ধরে থাবড়া দিতে হবে । এমনে ভুলভাল চালাস । কিছু হয়নাই বাবা মা এর দোআ ছিল । হাত ক্লিয়ার না করে আর হাইওয়ে তে উঠবিনা । আগে সাবার্বে চালিয়ে হাত ক্লিয়ার কর, আর পা সবসময় ব্রেক এর কাছে, কনফিউজ হলেই ব্রেক করবি । সাবধানে থাকিস ভাই, চারিদিকে খালি দূর্ঘটনা ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আন্দালিব (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।