ফিটাসের কান্না

ফিটাসের কান্না – অর্থহীনের অসমাপ্ত এলবামের একটা গান। ভাগ্যক্রমে এই গানের গীতিকারের সাথে আমার বেশ ভালো পরিচয় আছে। আমার চেয়ে বছর চার/পাঁচের বড় হবেন। প্রথম বাবা হতে যাচ্ছিলেন, সেই আবেগ থেকেই গানটা লিখেছিলেন। অর্থহীনের সুমনের সাথে পরিচয় থাকার সুবাদে সেই গানটার সুর করে সুমন, গায়ও সে। গানটার মূল উপজীব্য হলো ভ্রূণ হত্যা। আমাদের দেশে এটা খুব বেশি নেই, সুযোগ নেই বলেই হয়তো। কিন্তু নর্থ আমেরিকায় এটা একটা বড় ইস্যু। খ্রিস্টান কনজারভেটিভরা এটা নিয়ে চিল্লা পাল্লা করে খুব। আমার ইউনিভার্সিটির নোটিশ বোর্ডগুলোতেও মাঝে মাঝে প্রতিবাদমূলক পোস্টার দেখা যায়।

গত বছরের সিনেমা জুনো তে এই ব্যাপারটা কিছুটা তুলে আনা হয়েছে। এক কিশোরী মা বাচ্চা জন্মের আগেই খুঁজে বের করে পালক পিতা-মাতা। বাচ্চা জন্মানোর পর একবার বুকে চেপে ধরেই তুলে দেয় তাকে নতুন বাবা-মা-এর হাতে। এ তো গেল সিনেমার কথা। বাস্তবে কি হচ্ছে সেটাও দেখা যাক। ওবামা সমালোচিত হচ্ছেন ভ্রূণ হত্যার বিষয়ে তার নমনীয় অবস্থানের জন্য। ক্যানসাসে এক ডাক্তারকে চার্চের ভেতর হত্যা করেছেন এক নারী। ডাক্তারের অপরাধ ছিল তিনি এমন একটা ক্লিনিক চালাচ্ছিলেন যেখানে কিশোরী মায়েদের এবরশনের সেবা দেয়া হতো। হত্যাকারী মহিলার কোন পূর্বতন ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই। ভ্রূণ হত্যা করা ভুল এই বিশ্বাস থেকে তিনি খুনটা করেছেন।

এই ব্যাপারটা আমাকেও ভাবাচ্ছে কয়েকদিন ধরে। যেসব হলেও হতে পারতেন মা’রা আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রের বদৌলতে মুহূর্তের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেন, তারা অধিকাংশই হাইস্কুলের গন্ডি পার হননি(*)। একটা বাচ্চা লালন পালন করার যোগ্যতা বা ক্ষমতা কোনটাই তাদের নেই, আইনি সংজ্ঞামতে তারা নিজেরাই বাচ্চা। যারা ভ্রূণ হত্যা সমর্থন করেন তাদের যুক্তিগুলো এই স্ট্রাকচারের উপরেই থাকে। মুদ্রার অন্যপাশটা দেখা যাক। যে ভ্রূণগুলো হত্যা করা হয়, সেই ভ্রূণগুলোর ছোট ছোট হৃদপিন্ড থাকে। সেই ভ্রূণগুলো রক্তমাংসের দলা নয়, বরং পরিপূর্ণ মানুষ। মানুষ হত্যা যেমন পাপ, ভ্রূণ হত্যাও তেমনি পাপ- এটাই হলো বিরুদ্ধবাদীদের যুক্তির মূলসুর।

আমি নিজে কোনদিকে যাব এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। দুইদিকের যুক্তিগুলোই শক্ত, ভাববার মতো। সমাধান হয়তো কিছু একটা বের করবেন রাষ্ট্রনায়করা। তাদের সিদ্ধান্তের সমীকরণে মানুষ যেন বড় একটা চলক থাকে- শুধু এই আশাটাই করতে পারি।

ফিটাসের কান্নাঃ

*এই তথ্যটুকু নির্ভরযোগ্য না, অনলাইনে বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ে আমার এই ধারণা হয়েছে।

জেনারেল ডিসক্লেইমারঃ কিছু আউলা চিন্তার ফসল এই ব্লগ। এখানের তথ্য বা মতামত – বিভিন্ন সংবাদ ও অনলাইন আর্টিকেল পড়ে আমার ধারণাপ্রসূত।

৩,৪২৯ বার দেখা হয়েছে

২৭ টি মন্তব্য : “ফিটাসের কান্না”

  1. মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

    আমি ভ্রুন হত্যার বিপক্ষে আছি......।।

    একটা বাচ্চা লালন পালন করার যোগ্যতা বা ক্ষমতা কোনটাই তাদের নেই, আইনি সংজ্ঞামতে তারা নিজেরাই বাচ্চা।

    লালন পালন করার যোগ্যতা বা ক্ষমতা যদি নাই থাকে তবে আরো সতর্ক হতে হবে। প্রয়োজনে একটা বিশেষ বয়সের ছেলেমেয়েদেরকে যৌনশিক্ষা বিষায়ক জ্ঞান প্রদানের ব্যাবস্থা করা উচিৎ।

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    উভয় পক্ষের যুক্তিই জোরালো মনে হয় আমার কাছে... কনফিউসড...


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. তানভীর (৯৪-০০)

    তৌফিক নাকি? কেমন আছ? পড়ালেখা কেমন চলতেছে?
    তোমাদের আশিক তো দেখি খুব ফুরফুরা মুডে আছে, ফেইসবুকে কি সব স্ট্যাটাস দেয়!!

    ভ্রূণ হত্যার ব্যাপারটা বেশ অমানবিক। কিন্তু বাবা-মার যদি ঐ সন্তানকে পালন করার মত সামর্থ্য না থাকে, তাহলে এটা করা যেতে পারে বলেই আমার মতামত। এতে অবশ্য ঐ ছেলে-মেয়ের অসাবধানতাটাই বেশী দায়ী। মিডিয়াতে প্রচার এবং জনসংযোগ এইসব অপ্রীতিকর ঘটনার মাত্রা অনেক কমিয়ে আনতে পারে।

    গানটা ভালো লাগল। :thumbup: :thumbup:

    জবাব দিন
    • সামিয়া (৯৯-০৫)
      বাবা-মার যদি ঐ সন্তানকে পালন করার মত সামর্থ্য না থাকে, তাহলে এটা করা যেতে পারে বলেই আমার মতামত

      সামর্থ্য যদি নাই থাকে, সেটা আগে থেকে ভেবে চিন্তে রাখা উচিৎ না?

      জবাব দিন
      • রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

        রোড একসিডেন্ট করলে মানুষ মারা যায়। সেটা রোড একসিডেন্টের আগে ভেবে রাখলেই তো ল্যাঠা চুকে যেতো তাই না?

        ভ্রূন হত্যা করবো এই উদ্দেশ্যে কেউ কাজটা করেনা। ১০০% সময়ই এটা দূর্ঘটনা।

        জবাব দিন
        • সামিয়া (৯৯-০৫)

          এই অদ্ভূত হিসাব তুই কই পাইলি? আর রোড একসিডেন্ট আমাদের হাতে নাই, কিন্তু ভ্রূণ হত্যা মানুষ নিজে করে। জটিলতা বাদ দিয়ে, বাকি ঘটনাগুলোকে একসিডেন্ট বলা যায় না।

          জবাব দিন
        • রকিব (০১-০৭)

          তা মানছি ভাইয়া, কিন্তু যারা কাজটা করে তারা সবাই তো কমবেশি এটা জানে যে এর পরিণতিতে কি হতে পারে। সেক্ষেত্রে কি প্রয়োজনীয় প্রতিরোধক ব্যবস্থা বা খোলস ব্যবহার করা যেত না।


          আমি তবু বলি:
          এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

          জবাব দিন
          • রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

            আরে পোলা ... দূর্ঘটনা শব্দটা কেন ব্যবহার করলাম তাও বুঝছ না?

            আর স্যাম, আমি ব্যক্তিগতভাবে ভ্রূণ হত্যার বিপক্ষে অবশ্যই। ভ্রূণ হত্যা মানে মানুষ হত্যা। কিন্তু কথা হলো তারপরও এবরশন বন্ধ করতে পারবি না। কারণ কী জানিস? সবাই জুনো না। সবার বাবা জুনোর বাবার মতোও না। বাচ্চাকে জন্মদিয়ে তারপর নিজে পালন করতে না পারলে অন্যকে দিয়ে দেওয়া এইসব ভেজালে কতজন মেয়ে যাবে সেইটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। তারচেয়ে সবাই দুঃখজনক কিন্তু এবরশনের পথটাই বেছে নিবে। একটা মেয়ে নিশ্চয়ই ভ্রূন হোক তাও নিজের সন্তানকে বিনাদুঃখে হত্যা করবে না।

            তাই রাষ্ট্রপ্রধানদের উচিত এবরশন হালাল করা। কারণ অবৈধ করলে নিন্মমানের জায়গায় মা' কে অপারেশন করতে হবে। যেটা তার মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আলটিমেটলে প্রি-ম্যারিজ সেক্স বল আর অনাকাংখিত প্রেকন্যান্সি বল কোনটাই তুই বন্ধ করতে পারবি না। তুই আশা করতে পারবি- লাভ নাই।

            জবাব দিন
              • তৌফিক (৯৬-০২)

                ভ্রূণ হত্যার ব্যাপারটা আমার কাছে অমানবিক মনে হয়। কিন্তু যেসব মায়েরা এই প্রক্রিয়াটার ভেতর দিয়ে যান, তাদের বয়েস বেশি না। দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তাদের উপর দোষ আমি চাপাতে পারি না। দায়-দায়িত্ব প্যারেন্টসকেই নিতে হবে। ক্যালিফোর্নিয়ায় মনে হয় মা'ই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

                আমি তাই কোনদিকেই যেতে পারি না।

                জবাব দিন
                  • তানভীর (৯৪-০০)

                    আমি মনে হয় পরিষ্কার করে বুঝাতে পারিনি। ভ্রূণ হত্যা খুব খুব খারাপ- এইটাতে আমার কোন দ্বিমত নাই। কিন্তু, অনাকাঙ্খিত সন্তান (যাকে মানুষ করার সামর্থ্য বাবা-মার নাই এবং একটা দূর্ঘটনার কারণে যার জন্ম) কে পৃথিবীতে বিরূপ পরিস্থিতিতে নিয়ে এসে তাকে কি ঠিকভাবে বড় করা যাবে? তার জীবনটাকে কি একটা ধীর মৃত্যুর দিকে (অথবা মানসিক বৈকল্যের দিকে) ঠেলে দেয়া হয় না??
                    এই ব্যাপারে খুব ব্যাপকহারে জনসংযোগ করা দরকার। আমাদের সচেতনতা ছাড়া এ ধরণের দূর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব না।

                    জবাব দিন
  4. সামিয়া (৯৯-০৫)

    তৌফিক ভাই, আছেন কেমন?
    কেবল নিজেদের ক্ষণিক আনন্দের জন্য আরেকটা প্রাণ বলি দেয়ার কোনো মানে আছে? ভ্রূণ হলেও তা পরিপূর্ণ একটা প্রাণ তো?

    এ ব্যাপারটার পুরোপুরি বিপক্ষে যেতে এই একটা যুক্তিই যথেষ্ট বলে মনে হয় আমার কাছে। কিছু কিছু সময় জটিলতা থাকে, তাকে এর মাঝে ফেলা যায় না।

    জবাব দিন
  5. তারেক (৯৪ - ০০)

    এই টপিকটা নিয়া অনেক দিন ধরে অনেক অনেক বিতর্ক দেখে আসতেছি, আমি সম্ভবত এটার বিপক্ষে।
    আবার এটাও ভাবি ভ্রুণ হত্যা অমানবিক, কিন্তু যারা এই সিদ্ধান্ত নেয়, তারা সবাই যে খুশী মনে নেয় তাও তো না।
    *
    তৌফিকরে অনেকদিন পরে দেখলাম। কিমুনাছু ভাইডি?


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহসান আকাশ (৯৬ - ০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।