কালি-কলম কাহিনী/এই সময়

বা দিক থেকে Croco Rome Dile, Jinhao x250, Jinhao x750, Jinhao 992, Mini Pen without brand name (blue color), Traditional pen F002, KAIDULI এবং BAOER 516

আমার কালি কলমের “এই সময়” শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে। কি মনে করে KAIDULI নামক ব্র্যান্ডের একটা কলম কিনলাম যাতে Piston টাইপের ইংক কনভার্টার আছে কিনা তা নিশ্চিত হয়েই। কারন রাবারের Bladder যুক্ত Squeeze টাইপ ইংক কনভার্টার আমার কাছে একেবারেই সেকেলে মনে হত। তারপর কিনলাম BAOER 516 ঐ বছরই একই জায়গা সেই নিউমার্কেট থেকে। লিখে যা আরাম…। সেকেলে ইংক কনভার্টার থাকা সত্ত্বেও এরপর কিনলাম এক নাম না জানা (কলমের গায়ে কোন Brand Name খোদাই করা নেই) গাঢ়হ‌্ নীল রং এর ছোট একটা কলম। আসলে একেবারে অপ্রচলিত ছোট আক‌ৃতির জন্যই তা কেনা। বেশ smoothly লেখা যেত এই কলমে। তবে কিছুদিন পর ওটার ইংক কনভার্টার Bladder দিয়ে কালি leak করা শুরু করল। সে কারনে ওটা আর ব্যবহার না করলেও রেখে দিয়েছি। কারন ঐ কলমটা ছিল অনেক অনেক সুন্দর। সবশেষ যে কলমটা কিনলাম তা ছিল একেবারেই Traditional. মানে “সেই সময়কার” কলম “এই সময়কার” নয়। সেই সময় যত বিভিন্ন রকম ব্র্যান্ডের যেমন Hero, Youth অথবা Wing Sung ব্যবহার করতাম না কেন, আমার ব্যবহার করা ঐ সব কলমের আকৃতি-প্রকৃতি ছিল মোটামুটি একই রকম। সব আধুনিক আকৃতির কলমের মিছিলে একটা সেকেলে আকৃতির থাকুক, সে চিন্তা থেকেই কলমটা কেনা। তুলনামূলক কম দামে আর কোন কালি না পাওয়ায় পাকিস্তানী Dollar নামক ব্র্যান্ডের কালি ব্যবহার করতাম। রং ছিলো কালো, নীল, লাল ও সবুজ। লাল রংটা ব্যবহার না করলেও আমার সবচেয়ে পছন্দের সবুজ কালিটা করেছি। আমার ডায়রীর পাতা আর গাছের সবুজ পাতার মধ্যে বিস্তর কোন তফাৎ ছিলো না, কেননা লেখালেখিতে ঠাসা ডায়রীটা ছিল সবুজে ভরপুর। সব কলম গুলো ভালোই ব্যবহার করেছিলাম। দৈনন্দিন যে কোন লেখালেখি অর্থাৎ বাজারে ফর্দ থেকে শুরু করে লেকচার নোট নেয়া, এমনকি পরীক্ষা দেয়া পর্যন্ত সবই হত কালি কলমের ব্যবহার করে। এক কথায় “সর্বস্তরে কালি/ঝর্না কলমের সর্বোচ্চ প্রচলন/প্রয়োগ” করেই ছাড়লাম কোন প্রকার ছাড় না দিয়েই। তারপর…. তারপর আর কি, দিন শেষে আমি বাঙ্গালী। আর সেই বাঙ্গালী হুজুগে হবে না, তা তো হতেই পারে না। খুব স্বাভাবিকভাবেই এবং নিশ্চিতভাবেই কালি কলমের হুজুগ এক সময় বেলা শেষের সূর্যালোকের মতই মিইয়ে আসে। আসে নিকষ কালো আধাঁরের নিস্তব্ধতা। গুনে গুনে পাচঁটি বছর… এই পাচঁটি বছর কলমগুলো পড়ে রইল কোন এক ড্রয়ারে কোণে। মনেই রইল না যে কালি কলম বলে কোন বস্তু আমার আছে।

এরপর আসিল ২০১৭ সাল। বছরের মাঝামাঝি Youtube এ ঘটনাচক্রে দেখিলাম Brian Goulet১ এর কালি কলম বিষয়ক একখানা video। অতঃপর হুজুগে বাঙ্গালীর হুজুগের দ্বিতীয় পর্ব আরম্ভ হইল (নাকি কোন এক খলনায়কের লাঠির সজোড় বাড়ি মস্তকে পড়িয়া অতীত স্মৃতি ফিড়িয়া আসিল)। পুনরায় বলি ইহা ২০১৭ সাল, ২০১২ সাল নহে। কম্পিউটার নামক যন্ত্রের বোতাম চাপিলেই কলমের দাম পরিশোধ হইয়া যায়। তাহাতে কলমে পাখা গজায়। তাহা উড়িয়া উড়িয়া সুদূর যুক্তরাষ্ট্র হইতে আমার অধিকারে আসে। আহা কি সৌভাগ্য আমার। কলমের পশ্চাতে আর দৌড়-ঝাঁপ করিতে হয় না। উপরন্তু কলমই আমার নিকটে আসিয়া পড়ে। একে একে আসিল Jinhao x750, x250, 992 আর সর্বশেষে Croco Rome Dile.

এইমাত্র যে কালি কলমগুলোর কথা বললাম এগুলো সবই Chinese ব্র্যান্ড। তারপরও আমার কাছে বেশ ভালই লাগছে লিখতে। Jinhao x750 টার প্রায় পুরো অংশই Stainless Steel এর তৈরি। ভারি। ধরলে মনে হয় কিছু একটা জিনিষ হাতে নিয়ে রেখেছি। কলমের নিবটা পরিবর্তনযোগ্য। কলমটার ক্যাপে brand name আর model name যেভাবে খোদাই করে লেখা তা আমার ভাল লেগেছে এবং Overall কলমের ডিজাইন বাড়াবাড়ি গোছের মনে হয়নি। কলমের ক্যাপটা পেছনে ঠিকঠাক মত লাগলেও শতভাগ যুতশইভাবে লাগে না। হাত যাদের বড় বলে কলমের ক্যাপটা কলমের পেছনে লাগিয়ে ব্যবহার করবেন, তাদের জন্য বিষয়টা বিরক্তিকর মনে হতে পারে।

Jinhao 992 পুরোটাই শক্ত প্লাস্টিকের তৈরি। বর্নহীন স্বচ্ছ এবং স্বাভাবিকভাবেই হালকা। কলমের ভেতরের ইংক কনভার্টার, পুরো নিব আর ইবোনাইটের২ Feed System৩ এর কিছু অংশ বাইরে থেকে দৃশ্যমান। আর একটা বিশেষত্ব হল এর Eye Dropper সুবিধা। কলমের পেছনের অংশটা (যেটা খুললে ইংক কনভার্টারটারের নাগাল পাওয়া যায়) সামনের যে অংশে শেষ হয়েছে সেখানে আছে রাবারের নমনীয় একটা ও রিং। ও রিং এর কারনে কলমের ইংক কনভার্টার leak করলেও কালি বেরোবে না। তার ওপর যদি মনে হয় বারবার কালি ভরতে পারব না, একবারে অনেকটুকু কালি কলমে ভরব, সেক্ষেত্রে ইংক কনভার্টার বের করে নিয়ে কলমের পেছনের পুরো অংশটাই বা Chamber টাই কালি দিয়ে ভরে ফেলতে পারি। এটাই হল কালি কলমের Eye Dropper স্টাইল ব্যবহার।

এরপর Jinhao x250 ব্যবহার করতে গিয়ে মনে হল Chinese কালি কলমের পিছনে একটু বেশি ঝুকে পরেছি যা দরকার ছিল না। দেখি আমার Pelikan 4001 Royal blue এই কলমটায় চলছে না। চলছে না মানে, আমার স্বাধের কলমে কালি/ঝর্না কলমের ঝর্না ধারা বইছে না। অথচ কলম তো কালি নামক রসে টইটুম্বুর। প্রথমে মনে হল কালিতে সমস্যা। কিন্তু অচিরেই ধারনা ভুল প্রমানিত হল। কারন ইতোমধ্যে উল্লেখিত অন্য সব Chinese কালি কলমগুলোতে এই কালি ভরার পর দেখলাম কলমগুলো ভালই চলল। ধরেই নিলাম যে আমার x250 তে সমস্যা। আবার যখন Dollar এর কালো কালি এই কলমে ভরলাম, তখন দেখি x250 কে কোন সমস্যাই নেই। শেষমেষ বুঝলাম যে x250 Pelikan নামক ঘি হজম করতে পারে না ঠিকই কিন্তু Dollar নামক পোড়া মবিল চেটেপুটে খেয়ে নেয়। x250 র আরেকটা কমজোড়ি হল এর Grip. মেটালের তৈরি grip টা এতোটাই পিচ্ছিল যে ঐ অংশটা আমি কালো রং এর electric tape দিয়ে মুড়ে দিয়েছি একটু সাচ্ছন্দে কলমটা ধরার জন্য। এতে অবশ্য কলমটার সৌন্দর্যহানি হয়েছে। আবার এটাও ঠিক যে, কলমের কার্যকারিতাই যদি না থাকে তবে তার সৌন্দর্য দিয়ে আমি কি করব?

Croco Rome Dile কলমটাতে কালি ভরে লিখতে গিয়ে দেখলাম দুই তিন শব্দ লেখার পর আর কালি বেরোয় না। অথচ কলমটা পুরোপুরি কালিতে ভরা। কালি ফেলে দিয়ে অন্য রংএর কালি ভরলাম। ফলাফল একই। সিদ্ধান্ত তো নিয়েই ফেলতে যাচ্ছিলাম যে no more Chinese fountain pen…. আসলে কিসে সমস্যা, নিবে নাকি ফিডে নাকি ইংক কনভার্টারে? তো স্বাভাবিকভাবেই নিব আর ফিডের যুগলবন্দি খুলতে গিয়ে দেখলাম ওগুলো স্হায়ীভাবে কলমের মূল শরীরে লাগান। এমনকি ইংক কনভার্টারও। আমার আপাদমস্তক রীতিমত জ্বলতে লাগল। কারন এই কলমের নিবে বা ফিডে যখন সমস্যা হবে (মানে হাতে পড়ে নিব নস্ট হতে পারে, এমনকি ইবোনাইটের ফিডটাও ফেটে যেতে পারে) অথবা ইংক কনভার্টার থেকে কালি leak করবে তখন পুরো কালি কলমটাই litter bin এ ফেলে দিতে হবে। এই কালি কলমটা একটা One time কলম, বল পয়েন্টের মত, literally. আপাতত: এটার স্হান এখন ড্রয়ারের (আগেও বলেছিলাম একবার) এক কোনে।

এবারকার মত গালগপ্পোর এখানেই ইতি। রাত ১১:০০ টার বেশি বাজে। আমি আবার রাত জাগতে পারি না। যদিও একজনকে বলেছিলাম রাতে ৪ ঘন্টা ঘুমই আমার যথেষ্ট এবং সে আমার এই বাণী টের পেয়েছিল, হাড়ে হাড়ে। পরবর্তীতে কালি কলম বিষয়ক কিছু “এসো নিজে করি” জাতীয় গালগপ্পো করব। আশা করি এই ডিজিটাল যুগেও যারা কালি কলম ব্যবহার করছেন তাদের তা কাজে আসবে।

পূর্ববর্তী গপ্পো: কালি-কলম কাহিনী

১. Goulet, B. (2014, August 05). Brian’s Top 5 Favorite Fountain Pens for Newbies. Retrieved June 27, 2017, from https://www.youtube.com/watch?v=Hf4CcluJH00

২. Binder, R. (1915, January 2). Feeds: Revolution, Evolution, and Devolution. Retrieved June 27, 2017, from http://www.richardspens.com/?page=ref/feeds/evolution.htm

৩. Ebonite. (2017, June 25). In Wikipedia. Retrieved June 27, 2017, from https://en.wikipedia.org/wiki/Ebonite

২ টি মন্তব্য : “কালি-কলম কাহিনী/এই সময়”

  1. মাহমুদুল (২০০০-০৬)

    কলম নিয়ে আগ্রহ আছে। তবে আপনার মত 'প্যাশনেট' নই। 😛 ভালো লেগেছে। আশা করছি পরবর্তীতে নতুন কোন কলমের খুঁটিনাটি শুনবো।


    মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাহমুদুল (২০০০-০৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।