দোষ কার!!

পত্রিকা না পড়ার না কারণে দেশে-বিদেশে কি হচ্ছে কিছুই জানিনা, এতদিন তাও ফেসবুক থেকে অনেক আপডেট আসতো, এখন তাও বন্ধ একাউন্ট ডি-একটিভেট করে দেয়ার জন্য। ভাগ্য ভালো টুইটারে হালকা হালকা খোজ নেই, সেখান থেকেই জানতে পেরেছিলাম আরেকজন ব্লগারকে কুপিয়ে মারা হয়েছে। এবং নিউজ পড়তে পড়তে আচমকা বাবুর কোপ খাওয়া ছবিটা চোখে পড়লো। আমি সাইকো মুভির পাগল ছিলাম, ডেক্সটারের পাগল ছিলাম। টিভিতে অনেক ধরণের কাটা-ছেড়া মানুষ দেখেছি কিন্তু সেই দিনের ওই ছবিটা মাথা থেকে সরাতে পারিনা। কারণ আমি জানি এটা মেকআপ করা কোনও ছবি না।
একটা ছেলেকে এভাবে কুপিয়ে মারতে পারলো!! নিজের করা প্রশ্নে নিজেই অবাক হলাম। এটা-তো নতুন কোনও কাহিনী নয়। ঠিক এক মাস আগেই এরকম কাহিনী ঘটেছে এবং বেশিদূরে যেতে হবেনা শুধু এই বছরের কাহিনীগুলো খেয়াল করেন। প্রতি মাসে, প্রতি সপ্তাহে এমনকি প্রায় প্রতিদিন সারাবিশ্বে ধর্মের কারণে অমানুষিক কাহিনী ঘটে চলছে। এবং সেটা ইসলামের নামে। যখনই এধরণের কাহিনী ঘটছে আমরা চলে আসি ফেসবুকে, টিভিতে, সংবাদ পত্রে এটা প্রমাণ করার জন্য যে, যা ঘটেছে তা সহি ইসলাম নয়। ধরে নিলাম সেটা সহি ইসলাম নয় কিন্তু নিয়মিত এধরণের ঘটনা কেন ইসলামের নামেই হয়?
শার্লী হাব্দোর কাহিনী কিংবা কোপেনহেগেনের কাহিনী অথবা আইএস এর হত্যাও যদি আমরা ধরে নেই ইহুদি-নাসারাদের চক্রান্ত কিন্তু বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গত দুই ব্লগারকে হত্যা করা কাদের চক্রান্ত? কেন মাদ্রাসার ছেলেরা চাপাতি সহ ধরা খেল? কেন ধরা খাওয়ার পরও তাদের মাঝে কোনও অপরাধ বোধ নাই??
ধরে নিলাম এই ছাত্রগুলোর ভুল ইসলাম শিখেছে কিন্তু ইসলাম মতে যদি এটা বাজে কাজ হয়েই থাকে তাহলে ডানে-বামে, সামনে-পেছনে চারিদিকের মসজিদ গুলো এ ব্যাপারে কি ধরণের দায়িত্ব নিয়েছে কিংবা আমাদের জাতীয় মসজিদের খতিব কি এ ব্যাপারে কিছু বলেছেন?? জুম্মার নামাজের খুতবার সময় ইমাম সাহেবরা কি এ ব্যাপারে সাবধান করেছেন? সবাইকে ওয়াজের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে ইসলাম এ ধরণের হত্যা সমর্থন করেনা?? নাকি তারা নিশ্চুপ থেকে সম্মতি জানিয়ে গেলেন এই হত্যা গুলোকে??
বাংলাদেশে প্রতিদিন যত ওয়াজ হয় তার বেশীরভাগের টপিক থাকে বোধহয় হিন্দু-মুসলমানের ব্যাপারে। তারেক মনোয়ার টাইপ হাজার হাজার হুজুরে দেশ ভরা। তাদের ওয়াজে স্পষ্ট অন্য ধর্মাবলম্বীর প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। কই কখনো তো তাদের ওয়াজ নিষিদ্ধ করা হয়নাই। সব সমস্যা শুধু ব্লগ লিখলে আর বই লিখলে।
কি জন্য আমাদের দেশে এত মাদ্রাসা? কি দিচ্ছে এই মাদ্রাসার ছাত্ররা? প্রশ্ন আসতে পারে ক্যাডেট কলেজে পরে আমি কি দিয়েছি দেশকে। কিছু দিতে না পারি কিন্তু কখনো কারো জীবন নিব না এই নিশ্চয়তা দিতে পারি।
গ্রাম গুলাতে গিয়ে দেখেন চিকিৎসার কারণে মানুষ কত দূরে যাচ্ছে কিন্তু মসজিদ আছে ঐ গ্রামে ৩/৪টা। যার টাকা হয় সে মসজিদ দেয় মাদ্রাসা দেয় কিন্তু কয়জন স্কুল আর হাসপাতাল দেয়। দেয় না যে তানা কিন্তু এর সংখ্যা যদি মসজিদ-মাদ্রাসার সাথে তুলনা করেন তাহলে দেখবেন এর পার্থক্য।
আমাদের দেশে এখনো হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করে মাজার গুলো। সেটা শাহজালাল, শাহপরান থেকে শুরু করে ন্যাংটা বাবার মাজার পর্যন্ত। চোর বাটপারে ভরা এই মাজার গুলোতে। সরকার কি কখনো হিসেব নেয় কই যায় মাজারের দান করা টাকা গুলো? বোকা মানুষকে শাহজালালের নাম ভাঙ্গিয়ে কোটি কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে এরা আর সরকার তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে, নির্বাচনে দাঁড়ানোর আগে মাঝে মাঝে কিছু প্রার্থীকেও দেখা যায় এইসব মাজারে গিয়ে টাকা পয়সা ঢেলে আসতে।
সরকারের সমস্যা কে ইন্টারনেটে কি লিখলও, কিন্তু কোনও সমস্যা নাই যখন দিনে দুপুরে এই ভণ্ডামি হয়। এইসব গোঁড়ামি থেকেই ধর্মের বিষ ছড়াতে থাকে। যে বিশ্বাস করে হাই কোর্টের মাজারে গিয়ে টাকা দিলে তার ব্যবসায় উন্নতি হবে তাকে দিয়ে দিয়ে দুইদিন পর অনেক কিছুই করানো যেতে পারে।
ওয়াসিকুর বাবুর হত্যার কথাই চিন্তা করেন, মাদ্রাসার ছাত্রদের তাদের শিক্ষক জানালো এই ব্লগারকে হত্যা করা তাদের ঈমানি দায়িত্ব, তারা অস্ত্র নিয়ে আশ্রয় নিলো মসজিদে এমনকি পরিকল্পনাও করা হলও মসজিদে বসে। তারপরও কি আমরা বলবো এখানে ধর্মের কোনও দোষ নেই ? ধর্মীয় শিক্ষক তার ধর্মীয় ছাত্রদের মানুষ হত্যা করার কথা বললে এবং তারা পবিত্র মসজিদে আশ্রয় এবং সেখানেই বসে পরিকল্পনা করে দিনে দুপুরে একটা মানুষকে কুপিয়ে হত্যা করলো এবং ধরা পরার পরো তারা এটার জন্য অনুতপ্ত পর্যন্ত না সেখানে আসলেই ধর্মের কি দোষ!!
বিশ্বাসের কোনো সম্মান নাই, অধিকার নাই। অধিকার এবং সম্মান আছে মানুষের।

১,৬৭০ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “দোষ কার!!”

    • নাজমুল (০২-০৮)

      গুলশান ভাই পড়লাম, নতুন কিছু তথ্য পেলাম। আমিও একটু ইমোশোনাল হয়ে ব্লগটা লিখেছিলাম তাই আগের কাহিনী দিয়েই ব্লগটা লেখা।
      আমার মতে এক্ষেত্রে ব্লগ কিংবা ফেসবুক থেকে যত না সম্ভব কোনো পদক্ষেপ নেয়া। তার চাইতে অনেক সহজ এবং কার্যকর হবে যদি এলাকার মসজিদ গুলো পদক্ষেপ নেয়। হুজুররা যদি এই নামাজ শেষে মোনাজাতের সময়ে কিংবা খুতবার সময়ে সামনের কয়েক মাস এই ব্যাপার গুলোকে একটু বেশি প্রাধাণ্য দেয় তাহলেই আমার মনে হয় কাজে দিবে। আশেপাশে প্রায় সব মুসলমানরাই এই ধরণের হত্যাকাণ্ডের বিপক্ষে কিন্তু আমার কাজের কারণে আমি একটু কম শিক্ষিত লোকের সাথে পরিচয়, অবাক হবেন তারা সবাই এই ব্যাপার গুলোকে সমর্থন দেয় এমনকি আই এস এর কর্মকান্ডকেও। এবং এই অল্প শিক্ষিত লোকের সংখ্যাই বেশি।
      ভয়টক সেখানেই। সারা বিশ্বে এখন এসব নিয়ে কাহিনী হচ্ছে, ভয় হয় ভাই।

      জবাব দিন
  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    মাদ্রাসার বিকল্প ভাবার সময় এসেছে, কিংবা এদের পাঠদানরীতি পরিবর্তনের।

    মরলে শহীদ, বাচলে গাজি।
    সুতরাং অবস্থা পরিবর্তন খুব সহসা হচ্ছে না।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ভাল বলেছো নাজমুল :thumbup:

    যায় দিন ভাল, আসে দিন খারাপ


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : পারভেজ (৭৮-৮৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।