পশু-পাখি, পোকা-মাকড়ের ব্যাপারে আমার সব সময় একটা আগ্রহ ছিল সেই ছোট বেলা থেকেই। কিন্তু ছোটবেলাতে আগ্রহটা ছিল একটু সাইকো টাইপ। বাসায় একটা প্রজাপতি উড়ছে, খপ করে ধরে ফেললাম আর বারান্দায় গিয়ে কেঁচি, ছুড়ি এসব দিয়ে তার উপর অপারেশান চালাতাম। এবং ব্যাপারটা নিয়ে বাসার কেউ কখনো ঝামেলা করেনাই যদিনা কার্পেট কিংবা অন্যকিছু নষ্ট না করি। হয়তোবা আম্মা ভাবতো ছেলে বড় হয়ে বিশাল ডাক্তার হবে। কিন্তু এখন আগ্রহটা সম্পূর্ণ উল্টো, এখন আমি তাদের কষ্ট দেইনা, কাটিনা এমনকি ধরিওনা। সব আগ্রহ ইউটিউব, নেটফ্লিক্স কিংবা বিবিসি প্লেয়ারেই আবদ্ধ। তবে কখনো সুযোগ হলে আফ্রিকায় যাওয়ার শখ। ইচ্ছা আছে কাছ থেকে “বার্ডস অফ প্যারাডাইজ” এর কোনো পাখি অথবা মাউন্টেইন গরিলা দেখার।
যাই হোক আজকের ব্লগ কোনো ভ্রমণ কাহিনী নিয়ে নয় বরং ইন্টারনেট, বিশেষ করে ইউটিউব সেলিব্রেটি “স্লো লরিসকে” নিয়ে।
উপরের ছবিটা একটা ভিডিও থেকে নেয়া। এই ভিডিওতে স্লো লরিসকে কাতুকুতু দেয়া হচ্ছে এবং বড় বড় চোখে স্লো লরিস তাকিয়ে আছে হাত পা ছড়িয়ে। দেখলেই মনে হয় এই পুতুলটাকে একটু আদর করি। এই ভিডিও কয়েক মিলিয়ন হিট পায় ইউটিউবে এবং মানুষের মাঝে এই অচেনা প্রাণীর চাহিদা বেড়ে যায় পোষার জন্য। স্লো লরিস বিক্রী করা কিংবা পোষা অবৈধ কিন্তু ব্ল্যাক মার্কেটে এর মাধ্যমে স্লো লরিস বিক্রীর ধুম পরে যায়। অবৈধ হিসেবে বাজার মূল্যও বেশি থাকে।
কিন্তু মানুষ ইউটিউবের কিউট লরিস এর প্রেমে পড়ে গেলেও তার সম্পর্কে আর কিছু জানার আগ্রহ প্রকাশ করেনাই। সবাই ধরে নিয়েছে বড় চোখের এই ম্যামাল অবশ্যই বিপজ্জনক কোনো প্রাণি না। কিন্তু ব্যাপারটা ছিল ভুল, স্লো লরিস কামড় দেয়। এবং এই কামড়ের কারণে অনেকের আঙ্গুল ফেলে দিতে হয়, অনেকের হাত ফেলে দিতে হয়, অনেকে মরতে মরতে বেঁচে যায় এবং অনেকেই স্লো লরিসের কামড়ে মরে যায়। অনেক টাকা খরচ করে কিনলেও অনেকেই জানেনা যে স্লো লরিস একমাত্র “venomous primate”. প্রাইমেটদের মাঝে আর কারো এই গুণাবলি নাই, একমাত্র স্লো লরিসের পক্ষেই সম্ভব কামড় দিয়ে বিষ ইনজেক্ট করা। অনেকটা সাপের মত।
স্লো লরিস নিশাচর প্রাণী এবং তার এই কিউটনেসের সাথে খাপ খায়না এমন আরেকটা ব্যাপার হল সে যেভাবে শিকার করে। লরিস ছোট ফড়িং থেকে শুরু করে মাঝারি সাইজের পাখিও খেয়ে ফেলে। এবং ভয়ংকর ব্যাপার হলো, শিকার ধরেই তার প্রধাণ কাজ হলো শিকারের শরির থেকে মাথা আলাদা করে ফেলা। এত সুন্দর একটা প্রাণিকে দেখলেই মনে হয় না এর দ্বারা কোনো ক্ষতি হওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভুল। স্লো লরিস কুকুর কিংবা বিড়ালের মত প্রভুভক্ত নয়, নিজেদের কথা চিন্তা করে তারা যেকোনো সময়ে বসিয়ে দিতে পারে বিষাক্ত কামড়/ছোবল।
জেনেশুনে মানুষ তারপরো যদি স্লো লরিসের কামড়ে মারা যায় তাতে আমাদের কিছু যায় আসেনা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, স্লো লরিসরা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। ইউটিউবে স্লো লরিসের ভিডিও যত হিট হয় তত এর চাহিদা বাড়ে পোষা প্রাণী হিসেবে। এবং তাদের বিক্রীর জন্য ধুম পড়ে যায় শিকারিদের। আরেকটা ঝামেলা হল এদের পাওয়া যায় বাংলাদেশ সহ ভারত এবং ফিলিপাইনে। যেসব দেশে ঠিক করে মানুষের বাঁচার অধিকার নড়বরে সেখানে পশু-পাখির অবস্থা খুব সহজেই চিন্তা করা যায়।
ছোটকালে বনরুই এর কতা পড়তাম, একটা প্রাণীর উপরে মাছের মত আঁশ। খুব দেখার ইচ্ছা থাকলেও কখনো দেখার সুযোগ হয়নাই একবার ছাড়া। তাও দেখেছি মরা কিংবা আধমরা বন রুই জোঁকের তেল যারা বিক্রী করে তাদের কাছে।
তখন জানতাম বনরুই বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী এখন হয়তোবা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে বা হওয়ার পথে।
কিন্তু পশু-পাখি নিয়ে কথা কথা কি বলবে, মানুষের বাঁচার ঠিক নাই। দিনে দুপুরে ককটেল বোম, পেট্রোল বোমে পুড়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। তাদেরকে কিভাবে বুঝাবেন প্রতিটা প্রাণী এই পৃথিবীর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
স্লো লরিসের সাথে অনেক রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের কেমন যেন মিল আছে ... দেখতে কি কিউট কিন্তু ...
নাজমুল :clap: :clap: :clap:
নিজে কানা পথ চেনে না
পরকে ডাকে বার বার
জ্বী ভাই, দেখলে মনে হয় চিকি কিন্তু আসলে খাইশটা 😛
ভাল লাগলো নাজমুল :clap:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ধন্যবাদ আকাশদা
একটা অজানা বিষয়ে জানতে পারলাম, খুব ভালো লাগলো। স্লো লরিস এর ছবিটাও দারুণ!
"তাদেরকে কিভাবে বুঝাবেন প্রতিটা প্রাণী এই পৃথিবীর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।" - চমৎকার কথা বলেছো।
ধন্যবাদ খাইরুল ভাই 🙂
🙂 🙂 🙂 🙂
চমৎকার লেখা, নাজমুল!
অরূপ দাদার সাথে আমি একমত। কিউটনেস ওভারলোডেড স্লো লরিসের... আমার তো প্রায় প্রেমে পরবার দশা!
:)) :)) :)) :))
আমাদের এই ছবিটা সত্যি সবাই পছন্দ করে, জানো! আপলোড করবার জন্য অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।
:)) :)) :)) :))
আমাদের এই ছবিটা সত্যি সবাই পছন্দ করে, জানো! আপলোড করবার জন্য অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।
ধন্যবাদ নাজমুল।
অনেকদিন পর।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
নাজমুল নেক্সট টাইম বাসায় আসলে আমাকে কমেন্টা ছবি আপলোড করা শিখাবি।
অনেকভাবে ট্রাই করেছি, পারি নাই।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ছবিটা অন্য কোথাও আপলোডেড থাকতে হয়। এরপরে ছবি বাটন টিপে সেই লিঙ্ক দিয়ে দিলে কমেন্টে ছবি আকারে চলে আসে।
একটা ছবির লিঙ্ক এটা "http://en.wikipedia.org/wiki/File:Nycticebus_coucang_002.jpg"
এটা "ছবি" বাটন টিপে পেস্ট করলে এখানে ছবি আকারে তা ইম্পোর্টেড হয়ে যাবে।
না হলো না।
আবার ট্রাই করছি... (সম্পাদিত)
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
আবার বলি। ছবিটা মিডিয়ায় আপলোড দিতে হবে।
লিঙ্ক কালেক্ট কতে "ছবি" বাটন প্রেস করে পেস্ট করতে হবে
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
তথ্য ও বার্তার এমন সমন্ময় প্রশংসনীয়।
ভাল লেগেছে।
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
ভাল লাগলো নাজমুল 🙂
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
অর্ধশতক পূরণ করায় অভিনন্দন 😀
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল