আমার সিনেমার দেখা শুরু হয়েছে ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হওয়ার পরে, একই সাথে বই পড়াও বন্ধ হয়েছে কলেজ থেকে বের হওয়ার পরে। কলেজে থাকতে অন্য সবার মত আমারও সবচেয়ে প্রিয় দিন ছিল বৃহস্পতিবার। কিন্তু আমি চরম দিনের একটা জিনিস সবসময়ে বাদ দিয়ে গেছি, সেটা হল ভিডিও শো। ঐ সময় হয় অন্য হাউজে আমার মত কাউকে খুঁজে গল্প করতাম কিংবা বেশিরভাগ সময়ে নিজের বেডে শুয়ে বই পড়তাম। এখন যেমন কিছু একটা না দেখলে কিংবা না দেখতে দেখতে আমার ঘুম আসেনা, সেটা সিনেমা হোক, নাটক হোক কিংবা ডকুমেন্টরই। আর তখন কিছু একটা না পড়লে ঘুম আসতোনা, হোক সেটা গল্পের বই কিংবা কম্পিউটার এর বিষয়ে লেখা কোনও ম্যাগাজিন।
আমার আম্মা একসময়ে খুব মন খারাপ করতো যে আমার চাচাতো বোনের বাসায় এতো এতো বই আর আমি কিনা বই পড়িনা। আস্তে আস্তে আমিও শুরু করলাম, শুরু হলও প্রাণের কমিকস দিয়ে। তবে আমি ফ্যান্টম কিংবা হি ম্যান টাইপ বই পছন্দ করতামনা। তারপর আসলো টিনটিন, বিশাল দামী বই, ৮০-৯০ টাকার মত। লাস্ট টিনটিন ছিল ”আশ্চর্য উল্কা”, যেটা আমার ১৮ তম টিনটিন। আম্মা চিন্তা করা শুরু করলো আগেই ভালো ছিল, এত টাকা বই এর পিছনে খরচ করলে সমস্যা। আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল স্কুলের আরও কিছু ছেলে মেয়ের সাথে। যাদের বাসা কাঁঠাল বাগানের আশেপাশে, এবং বই পড়ে। ঠিক হল আমি যেই বই কিনবো তারা সেই বই কিনবেনা এবং আমরা বই বিনিময় করবো।
কলেজে ঢোকার পর দেখি খালি বই আর বই। কলেজ লাইব্রেরি, হাউজ লাইব্রেরি, কলেজ মস্ক লাইব্রেরি, হাউজ মস্ক লাইব্রেরি এবং ক্যাডেটদের বালিশের নিচের লাইব্রেরি। ক্যাডেটদের ট্রেডমার্ক কি জিজ্ঞাসা করলে আমার উত্তর হবে,”বালিশের নিচে এক প্যাকেট চানাচুর এবং একটা বই। আরেকজনের বালিশের নিচে বই খুঁজতে গেলে একটু চানাচুর মুখে দিয়ে আসা যেতো। তবে ক্লাস সেভেন এইটে থাকতেই আমাদের এমন কিছু বই পড়া হয়েছে যেটা আসলে তখন পড়ার কোনও দরকার ছিলোনা, যেমন হুমায়ূন আজাদ এর ”পাক সার জমিন সাদ বাদ” এটা লাইব্রেরি থেকে ইস্যু করা বই। প্রচুর লাল কালির আন্ডার-লাইন। সত্য কথা আমি যখন ক্লাস নাইনে এই বইটা পড়ি আমার কাছে মনে হয়েছিল লেখক মানসিক রোগী, কিন্তু একই বই আমি যখন ক্লাস ১১ এ পড়ি। আমার কাছে অসাধারণ একটা বই মনে হয়েছে। একই সমস্যা হয়েছে খুশবন্ত সিং এর ”রমণী সংসর্গ”(company of women) পড়ে। সত্য কথা বলতে আমি অন্যদের ব্যাপারে কিছু বলবোনা কিন্তু আমি যখন এই বই ক্লাস নাইনে এ বই পড়ি তখন আমার কাছে এটা চটি ছাড়া কিছু মনে হয়নাই। ক্লাস ১২ এ আমাদের রবি কিংবা আজিম স্টেজ ফাংশনে ”A Train To Pakistan” বইটি উপহার পায়। এই বই পড়ার পর আমি ”রমিলা সংসর্গ” আবার পড়ি, এবং তখন আমার কাছে বইটা অসাধারণ মনে হয়েছিল। ”খুশবন্ত শিং” মারা গেলেন গত ২০ তারিখ(যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক), তারপর তার উইকি পেজে ঢু মেরে আসলাম, এবং Company Of Women এর সূচনা দেখে খুব মনে ধরল, ইচ্ছা হচ্ছিল আবার পড়ি। The octogenarian writer has declared “as a man gets older, his sex instincts travel from his middle to his head.”
কলেজে আমি সবাইকে টিজ করে কবিতা লিখতাম, গল্প লিখতাম। কিন্তু আমার কলম থেকে কখনো ভালো কোনও লেখা আসেনি, কখনো ”বিকাশ” কিংবা কলেজ ম্যাগাজিন এর জন্য লেখা জমা দেইনাই। দেয়াল পত্রিকায় পুরনো কলেজ ম্যাগাজিন এর থেকে কপি করা গল্পটাও কারো মনে ধরেনাই। কি আর করা, সবার জন্য সব কিছু না।
এই লেখাটা লেখার সময় আম্মার ফোন আসলো, রাতে ঘুমাতে পারিনাই। বাসায় আসছি সকাল ৫টায় ঘুম ভাঙল ৮ টায়, ঘুম আর আসতেসেনা তাই আবোল তাবোল কিছু একটা লেখার চেষ্টা। ওহ আম্মা, জিজ্ঞাস করলো কি করি, বললাম এমনে কিছু একটা লেখার চেষ্টা করতেসি। বলল কি লিখি, ইংলিশ না বাংলা। বললাম বাংলা, হাতের লেখা কি আগের থেকেও খারাপ কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে যাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। বললেন, প্রত্যেকদিন একটু সময় করে যেন বাংলা হাতের লেখা সুন্দর করি। আমি যদি আম্মাকে বোঝাতে পারতাম, কলেজে অখিল স্যারের কটু কথাতেও আমার পরিবর্তন হয়নাই, এখন কি আর সম্ভব। লেখা শেষ করার আগে অখিল স্যারের করা এবং আমার পাওয়া সবচেয়ে বড় প্রশংসা সবার সাথে ভাগ করতে চাই,
অখিল স্যার কোনও কারণে আমাদের মানবিক বিভাগের উপর খুশি ছিলেননা, বরং চিন্তিত ছিলেন যে আমাদের ছয় জন এর কয়জন ভূগোল এ ”এ+” পায়। এটা বলার পর যখন বাকি ৫ জন আমার দিকে তাকাল তখন স্যার বললেন, ” নাজমুলরে নিয়া আমার অত চিন্তা নাই, ওর যেই হাতের লেখা, যেই ভদ্রলোক খাতা দেখবে সে পড়তে না পাইরা এমনেই ‘এ+’ দিয়ে দিবে”
স্যারের কথা সত্য হয়েছিল, আমি এস এস সি এবং এইচ এস সি দুইটাতেই ভূগোল এ ”এ+” পাইসি, এর অবদান অখিল স্যারের এবং আমার হাতের লেখার 😀
:brick:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
অভিনন্দন ভাইয়া 😀
:thumbup:
ট্রেন টু পাকিস্থান আরো :boss:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
এটার বাংলা কি, ''প্রমিলা সংসর্গ''??
এই টা যুগ অনুযায়ী ডিপেন্ড করে।
সবসময় ততটা সত্য নয়।
আরেকটা ব্যাপার খুব সম্ভবত গ্রেডিং সিস্টেম চালু করার পর ক্যাডেটদের বই পড়া মানে আউট বই বাড়ছে।
আমাদের সময় অল্প কিছু ব্যাতিক্রম বাদে ভালো মানে রেজাল্ট ভালো করা পোলাপাইন গল্পের বই কমই পড়তো।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
গ্রেডিং সিস্টেমের সাথে বই পড়ার সম্পর্কটা মনে হয় পুরোপুরি ঠিক না। আমরা আগের সিস্টেমেই পড়েছি। তখনও বই পড়ার ক্রেজ ছিল। দু একজন রোবোটিক ভাল ছাত্র বাদে বাকিরা ভালই আউট বই পড়তো 🙂
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
পুরোপুরি অস্বীকার করছি না।
কিন্তু তুই নিজেই দেখ ছোটবেলা থেকে বই পড়তি, তাই অভ্যাসটা আছে।
ক্লাসমেট সবার কথা ভাব সেভেন টু টুয়েলভ পর্যন্ত কে কে অভ্যাসটা পড়েছিলো।
টার্মে একটা বই হয়তো সবাই পড়তো কিন্তু একাধিক/ কয়জন?
এখনো যদি হিসাব করি তবে হয়তো আমাদের ক্লাসের ৫ জন কে হার্ডলি পাওয়া যাবে যারা নিয়মিত বই পড়ে।
এখন তো আর পরীক্ষা নেই। সো তোর কথাটিই প্রায় সত্য।
বই পড়া আসলে অভ্যাসের ব্যাপার। জানার আগ্রহের ব্যাপার।
সেই মুজতবা আলীর বই কেনা>>>
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
কিন্তু ভাইয়া আমাদের সময় এরকম ৫/৬ জন পাওয়া যাবে যারা বই পড়তোনা, এবং বই নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতো প্রথম কাতারের ছাত্ররা
অখিল স্যার মানে অখিল চন্দ্র কুণ্ডু স্যার?
বই পড়ার একটা সময় ছিলো বটে অতীতে, এখন শুধু ঘর ভরে তোলার জন্যে বই কিনি।
কুন্ডু স্যার, ভূগোল এর। আপনাদের সময় এফসিসিতে ছিলেন মনে হয়। ওনার ছেলে অর্ণব কুন্ডুও সিসিসির এক্সক্যাডেট।
স্যারের মতই এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন।
😮
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ইটস আ কমপ্লিমেন্ট 😀 😀
আমারও ট্রেডমার্ক ছিল এটা। এখনো বালিশের পাশে বই থাকে; তবে চানাচুর থাকেনা। 😛
আর ভাই, আমার হাতের লেখাও মারাত্মক।
নমুনা- #৳ঁ&~&ঁ?>.{
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
হা হা হা,
ভাইরে এখন বই পড়তে পারিনা এটা খুব খারাপ একটা ব্যাপার, ইউকে তে প্রথম আসার পরও বই টই পড়সি। এখন আর পারিনা, ঠিক কইরা একটা ব্লগো শেষ করতে পারিনা, আলসামি লাগে 🙁
নাজমুল তোমার হাতের লেখার একটা স্ক্রীনশট দিয়ে দাও। আমরা চোখ দিয়ে দেখি একটু। 😛
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
😀
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
নাহ, এত খারাপ না 😛
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
বই পড়ার অভ্যাশ শুরু হয়েছে একদম ছোটবেলা থেকে, কলেজে যাওয়ার পর সেটা একদম চুড়ান্ত পর্যায় ধারন করে। ৫-৬ বছর আগ পর্যন্তও নিয়মিত পড়া হতো, কিন্তু তারপর পুরো বন্ধ। ইন্টারনেট বই পড়ার সময়টা নিয়ে নিয়েছে আস্তে আস্তে। তবে ইদানিং আবার শুরু করেছি।
লেখা ভাল হয়েছে, হাতের লেখা আরো ভাল হয়েছে 🙂
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ধন্যবাদ ভাইয়া, চিন্তা করতেসি ফুল টাইম ব্লগে সময় দিব এখন থেকে। ফেসবুকে খালি ঝগড়া এবং মারামারি। ব্লগ ভালো অনেক কিছু লেখা যাবে। নিজের ভুল থাকলে শুধরানো যাবে 😀
এক্সাটলি এইটাই চিন্তা করতেছিলাম। 🙂
মিথ্যাবাদী x-(
কাগজের বই মিস করি.. ই বুক পড়ে শান্তি পাই না কেন জানি।
আমার পড়া শেষ বই ছিল, সিলভার লাইনিং প্লেবুক। মুভী দেইখা খুব ভালো লাগসিলো। তাই পড়া শুরু করেছিলাম, খুব সহজ এবং বোধগম্য ইংরেজিতে লেখা। আমি এমনেই ইংরেজি বই পড়তে পারিনা, অনেক কিছু বুঝিনা। তবে এই বই পড়ে মজা পাইসি। মুভীর থেকেও ভালো লাগসে।
এই মুভিটা ভালো , কিন্তু একটু ওভাররেটেড মনে হয়েছে আমার কাছে। অবশ্য জেনিফার লরেন্স এর অস্কার টা ঠিক আছে.. ওই বছর আর তেমন কোন প্রতিদ্বন্দী ছিলো না। বই পড়ি নাই..
সেম কাহিনী ফাইট ক্লাবেও। ফাইট ক্লাব মুভি দেখে যে মজা পাইছিলাম তার চেয়ে বেশি মজা পাইছিলাম নভেল টা পড়ে..
আসলেই আমার কাছেও ওভাররেটেড মনে হইসে কিন্তু সমস্যা কি জান??
ইউরোপ আমেরিকায় এই ধরণের কাহিনী কিন্তু প্রচুর, যারা এর ভিকটিম না তারাও কি ছু লোকজনকে চিনে যাদের প্যাট এর মত সমস্যা থাকে।
তাই অনেকের বুকে আঁচড় দিয়েছে। সেই কারণে হয়তোবা রেটিং বেশি।
আর জেনিফার!! যাস্ট ওয়াও। অসাধারণ, অসাধারণ।
আর ব্রেডলি কুপারের চাইল্ডিশ একটিং টা খুব সুন্দর, কিন্তু বই এর প্যাট আরো অনেক চাইলডিশ ছিল 🙂
ফাইট ক্লাব এর ইংরেজি কি কঠিন ??
তেমন কঠিন না.. সমস্যা হবেনা। প্লাস বই ও সাইজে ছোট.. ভালো লাগবে।
সিলভার লাইনিং প্লে বুক আমার কিন্তু বেশ ভালই লাগছিল 🙂
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
যাক, একজন গ্রন্থকীট পেলাম :hatsoff: আসো হাত মিলাই 😡
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
:shy: আমি পারবোনা :shy: