কলেজ পালানো- লাভ ক্যান্ডি

কলেজ পালানো অন্যান্য ক্যাডেট কলেজ এর মত বরিশাল ক্যাডেট কলেজেও অনেক পুরনো একটা রীতি। তবে সমস্যা হল বরিশাল ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হয়ে আপনি কি করবেন এটা কলেজ থেকে বের হওয়ার আগে আপনার একটু ভাবা দরকার।
কলেজ থেকে বের হলেই আপনি দেখতে পাবেন হাই-রোড। রোডটা ক্রস করলেই সাত মেইল(একটা ছোট বাজারের নাম), আমার জানা মতে সাত মাইলের কাস্টমার সাধারণত ক্যাডেট কলেজে যারা চাকরি করে তারা এবং তাদের পরিবারই সাধারণত সেখানে টুকিটাকি বাজার করে।
তো ওখানে যাওয়া মানে, নিজের পায়ে হেটে খাঁচায় ঢুকে যাওয়া।
ওখানে গেলে হয় দেখতে পাবেন আপনার ফর্ম মাষ্টারকে, না হলে ডাইনিং হলের বাটলার। আর ভাগ্য যদি আরও খারাপ হয় তাহলে ট্যামা হুজুরের সাথে।
ট্যামা হুজুরের নাম যেহেতু চলেই এলো তাহলে কলেজ পালানোকে ঘিরে হুজুরের একটা কাহিনী শুনে ফেলি,

” বাইরে হালকা ঠাণ্ডা, বরিশাল ক্যাডেট কলেজের ইতিহাসে অন্যতম দুষ্ট ছেলে, যে কিনা আবার আমার রুমমেট প্ল্যান করে বসলো কলেজের বাইরে সে যাবে। কিছুদিন আগেই সে একবার সাত মেইল থেকে লাভ ক্যান্ডি এনে ফর্মের সবাইকে মিষ্টি মুখ করিয়েছে। ছেলেটা বাইরে যাওয়ার সময় তার হাতে গুজে দিলাম ১০ টাকার একটা নোট, বললাম আসার সময় আমার জন্য মধুবন চানাচুর নিয়ে এসো, রুমমেট কথা দিয়েছিল সে আনবে।
যাই হোক, সেদিনের কাহিনীটা ছিল অনেকটা এমন। আমার রুমমেট এর সাথে ছিল আমাদের আরেক ব্যাচ-মেট। তো তারা তাদের প্ল্যান অনুযায়ী সুন্দর করে ল্যান্ড করলো কলেজের বাইরে। হালকা ঘোরাঘুরি, এবং লাভ ক্যান্ডি কিনে তারা কলেজের দিকে রওনা হল। রাস্তা পার হতে যাবে এমন সময় তাদের সামনে এসে থামলও বরিশাল সদর থেকে আসা ট্যাম্পু। ট্যাম্পু থেকে অন্যান্য যাত্রীদের সাথে নামলেন ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক জনাব শফিকুর রহমান স্যার। নেমেই তার চোখ পড়লো মুস্তোর উপর। ওর মত চিকন ছেলে তখন কলেজে আর কেউ ছিল কিনা জানিনা তবে অন্য অনেক কারণের সাথে তার এই শারীরিক গঠন এর কারণে সে ছিল কলেজ বিখ্যাত। শোফিক স্যার মুস্তোকে দেখে অবাক হলেন আর মুস্তো যেন আজরাইল এর সামনে পরলেন, তারপর ছাত্র শিক্ষক এর মাঝে যেই কথোপকথন হয়েছে তার অনেক গুলা ভার্শণ আছে। সহীহ কথপোকথন নিম্নরূপঃ

এই ছেলে তুমি ক্যাডেট না???!!
-নাহ স্যার।
-তাইলে বুঝলা ক্যামনে আমি স্যার??
-নাহ আপনাকে দেখে বোঝা যায় আপনি ক্যাডেট স্কুল এর টিচার।

এমন সময় পর্দায় হাজির হলেন, ট্যামা হুজুর(হুজুরের আসল নাম কেউ জানে কিনা শিউর না, কেউ বলে ট্যামা হুজুর কেউ বলে আল্লার ইচ্ছা।

হুজুর এর চোখ পড়লো মুস্তোর উপর,
-এই মুস্তো তুমি এখানে কি করো আয়??
শফিক স্যারঃ আপনি ওরে চিনেন??
হুজুরঃ জী চিনি, দুষ্ট পোলা।

কি আর করার, বাকি কাহিনী সব কলেজের ভিতরে। ভাগ্য আরও খারাপ ডিউটি মাষ্টার মুরতাহান বিল্লাহ স্যার। মুস্তোকে দেখেই তার প্রশ্ন:
এতটুকু ছেলে তুমি, শরীরে নাই কোনও গোস্ত। আর তুমি এই দেয়াল টপকে কলেজের বাইরে চকলেট কিনতে গিয়েছও!!

কাহিনী এখনো শেষ হয়নাই, পরের দিন সকালে শফিক স্যার ফর্মে আসলেন। আমাদের বললেন মুস্তোর সাথে বাইরে কে ছিল সেটা স্বীকার করতে। কেউ যখন স্বীকার করলোনা, স্যা্র আমাদের মসিকে ধরলেন,
-এই ছেলে তুই ছিলি মুস্তোর সাথে,
-না স্যার আমি ফর্মে ছিলাম, সবাইকে জিজ্ঞাস করতে পারেন।
-এদের জিজ্ঞাস করলেতো এরা বলবে মুস্তোও বাইরে যায়নাই, সারারাত ফর্মে ছিল।
-স্বীকার করে ফেল তাইলে শাস্তি কম হবে।
-না স্যার আমি যাইনাই।

স্যার তখন বললেন উনি এই ব্যাপারে “কক শিউর” যে মুস্তোর সাথে ওইটা মশিউর ছিলো। কক শিউর ব্যাপারটা কেউ বুঝেনাই বলে স্যার বুঝিয়ে দিলেন কক শিউর জিনিসটা কি।
সকালে মোরগ ডাকবেই, এটা চিরন্তন সত্য। তাই কক শিউর হল এমন ধরণের শিউরিটি যেখানে কোনও ডাউট নাই, এবং ওই মুহূর্তে যদি স্বয়ং খোদা নেমে তাকে বলে ওইটা মশী ছিলনা সেটা উনি বিশ্বাস করবেনা।
কিন্তু পরে স্যারের কথা ভুল প্রমাণিত হইলো, আসল অপরাধী ধরা খেল,
এবং কম শাস্তির মাঝ দিয়ে আবার কলেজে টিকে রইলো মুস্তো।

৯৩৬ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “কলেজ পালানো- লাভ ক্যান্ডি”

মওন্তব্য করুন : সামিউল(২০০৪-১০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।