কলেজ পালানো -১

এই ব্লগটি আমার ৪০তম ব্লগ এবং সব গুলাই সিসিবিতে পোষ্ট করা, অন্য কোথাও সাহস করে ব্লগ কখনো লিখিনাই। আমার নিজের মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগে, সব লেখা কেন ক্যাডেট কলেজ নিয়া লিখি। কিন্তু মনের শান্তির একটা ব্যাপারতো আছে, ‘যা করিয়া পাও শান্তি, চালাইয়া যাও তাহাই’ (লেখক এবং কবি হাসান শওকত)।
তাই আজকে আবার হাজির হলাম কলেজের একটা গল্প নিয়ে এবং ক্লাস নাইনের সময়ের একটা কাহিনী নিয়ে।

হয়তোবা বেশির ভাগ ক্যাডেট এর কাছে কলেজের শ্রেষ্ঠ সময় ছিল ক্লাস ১২ অথবা ক্লাস ১১।
তবে আমাদের ব্যাচের জন্য ছিল ক্লাস ৯, কত কিছুইনা ওই সময়ে আমরা করেছিলাম যা ক্লাস ১২ এও করতে সাহস হয়নাই। আজকে এত কিছু নিয়ে আলোচনা না করে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখবো আমাদের কলেজ পালানো প্রসঙ্গে।
বিসিসির একাডেমি ব্লকের জুনিয়র টয়লেট হল ক্যাডেটদের জন্য স্বর্গসম। তাল-কাঠাল লুকানো থেকে শুরু করে সিগেরেট খাওয়া কত কিছুর যে সাক্ষী এই ছোট টয়লেট টা কেউ জানেনা। তবে এই টয়লেট আরেকটি কাজে ব্যাবহার হত, কলেজের বাইরে যাওয়ার জন্য। আমিও দুইবার বাইরে যাওয়ার সুযোগ গ্রহণ করেছিলাম।
শীতকাল, চারেদিকে কুয়াশা। ১০ মিটার সামনে কিছু দেখা যায়না এই অবস্থা বরিশালের। আমি রেজা এবং লাইমুন প্ল্যান করলাম বাইরে যাব। এবং কালকে ইভিং প্রেপ টাইমেই যাব। হাউজে গিয়ে কয়েকটা সিভিল ড্রেস ম্যানেজ করলাম। রুমে বিভিন্ন ভাবে হেটে সাধারণ হওয়ার চেষ্টা করলাম।
সারাদিন আমরা উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। ফলিনে কেউ কথা বলেনা, চোখ মুখ শক্ত, মনে হচ্ছে যেন আমরা কোনো গোপন যুদ্ধে যাব আজরাতে।

আগে থেকেই জানতাম আজ ইভিনিং প্রেপে ফারুক স্যার, লাইব্রেরি থেকে একটা রিডার ডাইজেস্ট ম্যানেজ করা হয়েছে। প্রেপে এসেই প্রেপ গার্ডের সিটে রেখে দেয়া হলো রিডার ডাইজেস্ট, স্যার এসে সরাসরি ডাইজেস্ট নিয়ে চলে গেলেন করিডরে। বসে পড়লেন এবং খুব গভিরে চলে গেলেন রিডার ডাইজেস্টের। আর আমরা চলে গেলাম টয়লেটে। গিয়ে সাদা শার্ট চেঞ্জ করলাম। কালো প্যান্ট, একটা গেঞ্জী, উপরে নীল পুলওভার আর মাথায় মাংকী ক্যাপ।
টয়লেট এর জানালা দিয়ে নেমে গেলাম নিচে। ডানে তাকালাম, তাকালাম বামে। নাহ কেউ নাই, কিন্তু না সামনে কেউ যেন নড়ছে খাকি ড্রেসে। ওহ একনাম্বার গেট এর গার্ড। গার্ডদের জন্য পোস্ট অফিস এর পাশেই একটা ছোট টয়লেট, ওতার সাহায্য নিয়েই আমাদের পার হতে হবে কলেজের দেয়াল।
গার্ড চলে যাওয়ার পর আমরা অপেক্ষা করলাম দুই মিনিট। তারপর, খুব আস্তে আস্তে চলে গেলাম গার্ডের টয়লেট এ। টয়লেট এর উপরে উঠে ধরলাম বাউন্ডারির কাটা তার। খুব সাবধানে পার হয়ে গেলাম আমি, পার হলো রেজা, লাইমুনও প্রায় নেমে যাচ্ছে। আমরা সামনের দিকে তাকালাম, একটা শব্দে পেছনে তাকালাম, দেখলাম লাইমুন ঝুলে গেছে কাটাতারে। সাহায্য করলাম ওকে নামার জন্য, দেখলাম বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত চিহ্ন। তারপর সবাই বামে হাটা শুরু করলাম দুইজন ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের দেখলাম। আমরা খেয়াল করলাম আমরা আসলে তিন সারি তে হাটাহাটি করতেসি। কি করার ৩ বছরের অভ্যাস। প্রথমে গেলাম একটা ফার্মাসিতে, লাইমুনের জন্য টিটেনাসের ব্যাবস্থা ক্রুতে হবে। কিন্তু ভদ্রলোকের কাছে টিটেনাস নাই, কয়েকটা পেইনকিলার দিলেন। আময়াদের চিনে ফেললেন আমরা ক্যাডেট কলেজ থেকে আসছি। কথা দিলেন কাউকে বলবেননা বরং এরপর বাইরে আসলে সরাসরি তার এখানে এসে জামা কাপড় চেঞ্জ করা যাবে।

কিছুক্ষণ রাস্তায় হাটাহাটি করে এবং ফার্মাসি থেকে কয়েকটা ফোন করে আমরা কলেজের রওনা দিলাম। টয়েলেটে কয়েকজন আমাদের জন্য অপেক্ষা করতেসিলো আমরা আসার সাথে সাথে আমাদের টেনে উঠালো এবং কাহনো শূনতে চাইলো। তাদের কাহিনী বলে আমরা ফর্মে ঢুকে গেলাম। ফারুক স্যার তখনো ড়িডার ডাইজেস্ট শেষ করেনি। ডিনারে যাওয়ার পর এক ভাইয়া কাছে ডাকলেন, বললেন ”নাজমুল কই গেসিলা” বললাম বস কোথাও না। বললেন তার সাথে মিথ্যা কথা না বলতে। রেস্ট টাইমে আমরা যেই ড্রেস পড়ে রুমে প্র্যাক্টিস করতেসিলাম উনি সেই ড্রেস পড়া তিনজনকে সিনিয়র টয়লেট থেকে দেখসেন, এবং তারা ফলিন কইরা হাটতেসিলো।
পরেরবার থেকে সাবধান থাকতে বললেন, আমিও তাকে সাবধান থাকবো এই কথা দিয়ে নিজের টেবিলে চলে গেলাম 🙂

১,০৬২ বার দেখা হয়েছে

১২ টি মন্তব্য : “কলেজ পালানো -১”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    এভাবে মেরে দেয়া কি ঠিক হলো!

    কথা দিলেন কাউকে বলবেননা বরং এরপর বাইরে আসলে সরাসরি তার এখানে এসে জামা কাপড় চেঞ্জ করা যাবে।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  2. মাহমুদুল (২০০০-০৬)

    দেয়াল পার হবার কাহিনী শুনে এক কাহিনী মনে পড়ল। অবশ্য ঢাকা ভার্সিটির। আমাদের কলেজের অনেক জুনিয়র এক ভালো ছেলে সন্ধ্যার সময় কার্জন হলের গেট উপর দিয়ে পার হবার সময় প্যান্টের নিচের অংশ আটকে যায়। গেটে সে ঝুলে ছিল নাকি ৩-৪ মিনিট। লোকজনও নাকি ছিল না। তারপর অনেক ক্ষন চিল্লাচিল্লি করার পড় কোন রিকশাওয়ালা এসে ওরে গেট থেকে নামাইছে 😛


    মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    দুষ্টু ছেলে নাজমুল, দুশটুমির গল্প আরো লিখতে থাকো। :thumbup:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।