লাল চা আর মুড়ি ভাজা

এখন নিয়মিত কার্ড খেলি। ২৯ এবং পোকার খেলা হয়। কিন্তু একটা না ভোলা খেলা আর খেলা হয়না। কল ব্রীজ। এটা নাকি বিগিনারদের খেলা। কি আর করা এখন এমেচার হইলেও প্রফেশনাল ভাব নিয়াতো থাকতে হবে। আজকে টাইম লাইনে ঘুরতেসিলাম। এটা আমার কিছুদিন পর পরই করা হয়। হামিমের কিছু স্ট্যটাস আর কমেন্টস পড়ে হাসতেসিলাম মনে মনে। বয়স কত ছিল সেটা হিসাব করলেই বের হবে, কিন্তু সেই ইচ্ছা নাই। আমি আমার জীবনটাকে দুই ভাগে ভাগ করি, একটা ক্যাডেট কলেজে ঢোকার আগে, আরেকটা ক্যাডেট কলেজে ঢোকার পরে। কিংবা এই ভাবেও বলা যায়, ক্যাডেট নাম্বার পাওয়ার আগে এবং পরে। অনেকটা খ্রীষ্টপূর্ব এবং খ্রীষ্টাব্দের মত। অনেকে আঁতেল ভাবতে পারেন, কিন্তু কিছু করার নাই। আমার জীবনে অভিজ্ঞতা খুব কম, তাই এই ছয় বছরের কথাই ঘুরে ফিরে বলি। আমার কাহিনী শুরু হয় সেই ২০০২ থেকে এবং শেষ হয় ২০০৮ এ এসে। আমার গল্পের টপিক কিন্তু ঘুরে ফিরে এই জায়গায় ফিরে যায়।

আমার মতে আমাদের ব্যাচের সবচাইতে স্বর্ণ যুগ ক্লাস নাইনের সময়। বিশেষ করে যখন আমাদের মেজর সাহেব তিন মাসের জন্য সি এম এইচ এ ভর্তি হন। আর অঙ্কে ৮-৫ =৩ পেয়ে যখন ফ্যাকাল্টির (আর্টস) মেম্বার হলাম, তখন বি ফর্মে ঢুকেই কেল্লা ফতে। টয়লেট এর পাশের ফর্ম। ফর্ম থেকে বের হয়ে এক স্টেপ হেঁটে ডানে মোড় নিলেই, বিশ্বের অন্যতম আড্ডার স্থান এ চলে যেতাম। সেখানে কি নিয়ে আলোচনা না হতো। এটা বোধহয় অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে কিন্তু হাসার কিছু নাই। এখানে অনেকে প্রথম আলো, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম , কালবেলা, কালপুরুষ, ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইল, পুতুল নাচের ইতিকথা, পাকসার জমিন সাদ বাদ, ফরাসি প্রেমিক, তিন গোয়েন্দা, মাসুদ রানা থেকে শুরু করে স্বর্ণালী, দ্বীপালী সব পড়েছে। ভবিষ্যত পরিকল্পনা করেছে, কাঁঠাল চুরি করা, কলেজের বাইরে যাওয়া, বিড়ি আনানো থেকে শুরু করে কত কি করেছে তা লিখে শেষ করা যাবেনা। তবে যেটা বলা যাবে তা হলো আমাদের কার্ড খেলার কথা গুলো।

কি উত্তেজনা ছিল তা এখন কোনো খেলাতেই নাই, হাই স্টেক পোকার খেলার থেকেও আমি উত্তেজিত ছিলাম হামিম-ইফতেখার জুটির সাথে আমার এবং মামুনের জুটির খেলায়, কিংবা চরম জুটি নিলয়-যাহীন জুটির সাথে খেলার সময়। আমি আর মামুন খুব চেষ্টা করতাম মিল্ক ব্রেকের পড়ে এসেই যেন আমি সাফল করতে পারি, তাহলে ইসকাপন এর টেক্কা, রাণী, রাজা এবং গোলাম পকেটে রেখে পরে নিজের কার্ড হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায়, বাকি কার্ড না দেখেই ৮ কল দিয়ে দিতাম ৫ পয়েন্ট বোনাস এর লোভে। আর ইফতেখার চোখ গরম করে তাকায় থাকতো আমাদের দিকে। মামুন ইফতে রে টিজ করতো , কারণ ইফতেখারকে টিজ করলে কেউ কখনো টিজ ব্যাক পায়নাই তার রেকর্ড আসে কিনা জানা নাই। ধরে নিলাম ওর টিজ নাম “”ক”” এবং আপনার কিংবা আমার টিজ নাম “”খ”” আপনি ওকে একবার ‘ক’ বললে ও আপনাকে একবার ‘খ’ বলবে, দুইবার ‘ক’ বললে দুইবার ‘খ,’ চারবার বললে চারবার ‘খ।’ সেই ইফতেখার তখন মামুনের দিকে তাকিয়ে টিজ করতোনা, কার্ড সাফল করা শেষ হলে ততবার মামুনকে ‘খ’ বলতো। যাই হোক জানিনা আবার কবে আমরা একসাথে কার্ড খেলতে বসবো, আমি থাকি ইংল্যান্ডে, আমার পার্টনারও থাকে একই দেশে কিন্তু অনেক দূরে দূরে, দেখা হয় তিন মাসে এক বার। হামিম থাকে রাশিয়াতে, আর ইফতে দেশে।

আবার দেশে চলে যেতে ইচ্ছা করে, এখানে একদম ভালো লাগেনা যে তানা। কিন্তু দেশের কাছে ফিরে যেতে সবাই চায়। আমিও চাই, যখন ফেসবুকে ষ্টার কাবাবে ব্যাচের পোলাপানের গ্রুপ ছবি থাকে আমার মনে হয় ওই ছবির একটা কর্ণারে যদি আমি থাকতাম!! যখন দেখি ক্যাডেটরা নিজেদের সাইকেলিং গ্রুপ বানিয়েছে তখন মনে হয় ইসিসির নতুন হুডিটা নিয়ে আমিও আমার পছন্দের অযত্নে পড়ে থাকা সাইকেল নিয়ে ঢাকার রাস্তায় ঘুড়ে বেড়াই। যখন দেখি, বাইরে ভীষণ ঠান্ডা বৃষ্টি হচ্ছে তখন মনে হয় কলেজের ছাদে গিয়ে ভিজি কিংবা রিকশার হুড ফেলে দিয়ে গম্ভীরভাবে ভিজি। বাসায় এসে, লাল চা আর মুড়ি ভাজা খেয়ে গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লাম। আহ, জীবনে আর কি চাই?

২,০৩৫ বার দেখা হয়েছে

২৩ টি মন্তব্য : “লাল চা আর মুড়ি ভাজা”

  1. নাফিস (২০০৪-১০)

    একটা সত্যি কথা বলি। আমি কার্ড খেলা পারি না। পোলাপান যখন কলেজে নতুন নতুন কার্ড খেলা শিখে খেলা শুরু করলো, তখন আমি ওই সময় টাই শিখতে বা খেলতে ব্যর্থ হই...
    এরপরে আর হলো না ! এটেম্প নিয়েছিলাম শেখার জন্য বেশ কয়েকবার। কিন্তু ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলি খুব সহজে। নতুন কিছু শেখার আগ্রহ আমার একটু কম 🙁

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    কার্ড খেলা হয় নিয়মিত, তবে ২৯ বহুদিন খেলা হয় না। কলেজে থাকলে একবার এডজুটেন্ট বলছিল ২৯ হলো রিকশাওয়ালাদের খেলা 😛 এখন মূলত খেলা হয় আইবি আর পোকার (চিপস দিয়ে, নো মানি ইনভলবড 🙁 ) আর স্বাদ বদলানোর জন্য মাঝে মাঝে ব্রে, নাইন কার্ড 🙂

    আহ বি ফর্ম :dreamy: আহ নাইন বি :dreamy:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. দিবস (২০০২-২০০৮)
    যখন দেখি, বাইরে ভীষণ ঠান্ডা বৃষ্টি হচ্ছে তখন মনে হয় কলেজের ছাদে গিয়ে ভিজি কিংবা রিকশার হুড ফেলে দিয়ে গম্ভীরভাবে ভিজি। বাসায় এসে, লাল চা আর মুড়ি ভাজা খেয়ে গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লাম। আহ, জীবনে আর কি চাই?

    🙁 🙁 🙁


    হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি

    জবাব দিন
  4. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
    আবার দেশে চলে যেতে ইচ্ছা করে, এখানে একদম ভালো লাগেনা যে তানা। কিন্তু দেশের কাছে ফিরে যেতে সবাই চায়।

    - একদম খাঁটি কথা, সব প্রবাসীই দেশে ফিরতে চায়, আমেরিকা- অস্ট্রেলিয়ার গ্রীনকার্ড/পাসপোর্টওয়ালাই হোক, আর জাপানের অস্থায়ী অভিবাসীই হোক। দেশের টান কেউ এড়াতে পারেনা- গত কয়েক বছর ধরে প্রবাসীদের মাঝে থেকে দেখে+শুনে এটাই জানতেছি।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  5. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    যখন দেখি ক্যাডেটরা নিজেদের সাইকেলিং গ্রুপ বানিয়েছে তখন মনে হয় ইসিসির নতুন হুডিটা নিয়ে আমিও আমার পছন্দের অযত্নে পড়ে থাকা সাইকেল নিয়ে ঢাকার রাস্তায় ঘুড়ে বেড়াই।

    B-)


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  6. সামিউল(২০০৪-১০)
    আমি আমার জীবনটাকে দুই ভাগে ভাগ করি, একটা ক্যাডেট কলেজে ঢোকার আগে, আরেকটা ক্যাডেট কলেজে ঢোকার পরে। কিংবা এই ভাবেও বলা যায়, ক্যাডেট নাম্বার পাওয়ার আগে এবং পরে।

    ভাই, আমিও এই কাজই করি।

    লেখা খুব ভাল লাগছে। :boss:


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শাহীন (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।