[হোওয়াইট চ্যাপেল এবং ব্রীক লেন আরেক বাংলাদেশ]
[সেন্ট পিটারস কলেজ,লন্ডন]
[৭৫,জেটল্যান্ড স্ট্রীট]
দেশের বাইরে আসলে প্রথমে যেটা করতে হয়, সেটা হলো চাকরি খোঁজা। ৯৮% এর বেশি ছাত্র জব করে বলে আমার ধারণা। কারণটা খুব সোজা, এখানকার ব্যয়বহুল জীবন যাত্রা।
আমি একজন ছাত্রের মাসিক খরচের একটা তালিকা দিলে বুঝতে সুবিধা হবেঃ
বাড়িভাড়াঃ একটা ছোট রুম দুই জন শেয়ার করে থাকলে প্রত্যেক সপ্তাহে জন প্রতি ৪০ পাউন্ড সর্বনিম্ন। সাথে গ্যাস বিল, পানির বিল, কারেন্ট বিল আছে। ধরা যায় মাসে ১৮০ পাউন্ড।
খাওয়াঃ খাওয়া খরচটা আমার কাছে খুব একটা বেশি মনে হয়নাই অন্য জিনিস এর তুলনায়। ধরা যায় মাসে ৫০ পাউন্ড খুব বেশি হলে খরচ হবে।
যাতায়তঃ লন্ডনে বেশির ভাগ মানুষ যাতায়ত করে আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেনে। এর প্রধাণ কারণ, খুব দ্রুত যাওয়া যায়। ট্রেন গুলোকে ৬টি জোন এ ভাগ করা হয়। জোন টু জোন ভাড়া আলাদা। এর মধ্যে জোন ওয়ান এ বেশির ভাগ ষ্টেশণ।
আর আছে বাস, বাসে উঠে আপনি যেখানেই নামুন না কেন ওয়েষ্টার কার্ড টাচ করে গেলে ১.২০ পাউন্ড এবং নগদ টাকা দিলে ২ পাউন্ড।
আমরা যা করি সেটা হলো সাপ্তাহিক ট্রাভেল কার্ড করে ফেলি। যে কোনো টিউব পাস করলে বাস পাস অটো হয়ে যায়। এবং স্টুডেন্টদের জন্য ৩০% কম।
তো মাসে ৮০ টাকা ধরা যায় ট্রাভেল কস্ট হিসেবে।
মোবাইলঃ এখানে দুই ভাবে মোবাইল নেয়া যায় একটা হলো পে এস ইউ গো এবং পে মান্থলি।
পে এস ইউ গো তে আমাদের মোবাইলে টাকা ভরে কথা বলতে হয়। এবং পে মান্থলি তে কিছু ভালো অফার থাকে।
যেমন আমি পে মান্থলি ব্যাবহার করি। আমাকে মাসে ১৭ পাউন্ড দিতে হয়। এর কারণে আমি একটা নকিয়া ই-৭১ পেলাম এবং মাসে ৩০০ মিনিট ফ্রি, আন লিমিটেড স্কাইপি কল(আমাকে স্কাইপ এ কল করলে মোবাইল এ কল আসে), ফ্রি এম এস এন এবং টুইটার।
টাকা বাড়ালে আরো সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়।
তো মাসে হিসাব করলে দেখা যায় আমাদের ৩৫০-৪০০ পাউন্ড খরচ হয় যা বাংলাদেশি টাকায় ৪৫০০০ হাজার টাকার সমান।
প্রত্যেক মাসে এটা দেশ থেকে আনা কয়জনের পক্ষে সম্ভর আমি জানিনা, কিন্তু আমার জন্য অকল্পনীয়।
তো লন্ডনে এসে প্রথমেই জব খোজা শুরু করলাম। প্রথমে পেলাম একটা কাজ,
একটা মোবাইল কোম্পানীর সীম বিক্রী করা। কিন্তু সমস্যা আমাকে প্রত্যেকদিন ১০ টা সিম বিক্রী করতে হবে তাহলে ৩০ পাউন্ড দেয়া হবে(অন্যদের কাছে শুনলাম এরা টাকা পয়সা ঠিক করে দেয়না,পাকিস্তানী কোম্পানী)। তো কয়েকদিন ওদের অফিসে গেলাম কিন্তু এই কাজটা আর করলামনা।
তারপর অনেক দিন খুজলাম জব পাইনা, অনলাইনে এপ্লাই করি কোনো লাভ হয়না। একদিন এক ভাইয়ার রেফারেন্সে একটা পেপার কোম্পানীতে ইন্টারভিউ এর জন্য কল পেলাম। গেলাম তারা আমাকে একটা ষ্টেশণে ট্রায়াল দিতে বললো, আমার কাছে জানতে চাইলো পেপার দেয়ার অভিজ্ঞতা আছে কিনা?? আমি বললাম আছে, দেশে পেপার দিতাম।
দুই মাস হয়ে গেল এখনো বেতন পেলামনা।
কি আর করা পরে সেখানে চার দিন কি পাচ দিন পেপার দিলাম। খুব লজ্জা লাগতো প্রথমে কিন্তু এখানে এটা কোনো ব্যাপার না নিজেকে তাই বলে স্বান্তনা দিতাম।
এর মাঝে একটা রেসকোর্স এর রেষ্ট্রুরেন্ট এ কাজ করতে গেলাম, লন্ডন এর বাইরে।
আমাদের বাসে করে নিয়ে যাওয়া হবে সকাল ৬টায়। তো যেখান থেকে বাস ছাড়বে সেখান থেকে আমাদের বাসা অনেক দূরে। তো আমি, ফরহাদ(সিসিআর) এবং মাহমুদ ভাই(বিসিসি), ৪ টায় বাসা থেকে বের হতাম এবং ওইখানে ৬টার আগে যেতাম। কাজের ওখানে বাসে যেতে সময় লাগতো ২-৩ ঘন্টা। কাজ শেষ হতো ৭/৮ টার সময় আবার লন্ডনে বেক করতাম। বাসায় যেতাম ১ টার দিকে। বাসায় গিয়ে সমস্যা ছিলনা রাজিব ভাই(বিসিসি) এবং ভাবি থাকায় রান্না করা থাকতো। ঘুমাতে ঘুমাতে ২টা বাজতো, আবার ৪ টায় উঠে ওইখানে যাওয়া।
এভাবে তিন দিন গেল। একদিন কাজের সময় ফোন পেলাম প্রাইভেট নাম্বার থেকে। রিসিভ করলাম, ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকা হলো প্রাইমার্ক থেকে।
ইন্টারভিউ তে চাকরি হয়ে গেল(সম্পূর্ণ অবদান রাজীব ভাই এবং ভাবির)।
আমার ইন্ডাকসান যেদিন ছিল, সেদিন আমি ৩০ মিনিট লেট করে ফেললাম। আমাকে বলা হলো আমার চাকরি হবেনা, আবার এপ্লাই করতে হবে। তারপর অনেক ফোন করে তাদের বুঝালাম, আমার কোনো দোষ নাই ট্রেন এ সমস্যা আরো কত কি।
পরে আবার ডাকা হলো, চাকরি করা শুরু করলাম। দুই মাস হলো প্রাইমার্কে চাকরি করতেসি। কিছুদিন পর ঠিক করা হবে আমাকে কি পার্মানেন্ট করা হবে নাকি হবেনা…।
চলবে……………।
তোর এই সিরিজ এর লেখা আমি অনেক ভালা পাই
এই পর্বটা মনে হইল ছোট হয়ে গেছে। ব্যস্ত ছিলা নাকি। আগের পর্বের মত হয় নাই। আগের গুলা বেশি ভাল লেগেছিল। এটা মনে হল তাড়াহুড়ো করে লেখা। ভাল থেক সবসময় , সব একসময় ঠিক হয়ে যাবে তখন এইগুলা অনেক স্মৃতি হয়ে থাকবে।
তোর হাতের কি অবস্থা ?
চালায়া যাও ..................... 😀 😀 😀
তাড়াতাড়ি পরের পর্ব দিস । B-)
ভাই , আগে বিদেশ জীবন সোজা মনে করতাম......আপনের কথা পইড়া ব্যাপক কষ্ট পাইলাম, ......চালায়ে যান :thumbup:
প্রাইমার্ক জিনিস টা কি ?
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
আর কোনোদিকে না তাকায়া সরাসরি ৫ তারা দাগায়া দিলাম। তোর এই সিরিজটা জটিল লাগতাছে।চালায়া যা। :clap: :clap: :clap:
ভালই চলতেছে সিরিজটা, কষ্ট থেকে এখন আনন্দের দিকে যাচ্ছে। সত্যি এই দিনগুলা লাইফের খুব বড় স্মৃতি হয়ে থাকবে। চালায়ে যা। :clap:
হুম, দিনগুলো একসময় সত্যিই তোকে অনেক অনেক আনন্দ দিবে। ধৈর্য হারাস না। চালায়ে যা। :thumbup:
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
হুমম।।।।।
তোমার লেখাটা পড়ে নিজের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেলো। আমার একসময় প্রাইমার্ক এ ইন্টার্ভিউ দিয়েও কাজ হয়নাই। রাজীব ভাই কে আমার সালাম দিয়ো।
হোসেন (৯৫-০১)
ফ ক ক