প্রশ্নবোধক এক জিয়াউর রহমান

আমাদের কাউন্সিলের নাম টাওয়ার হ্যাম্লেট। এই কাউন্সিলের আন্ডারে একটা ফ্রী লাইব্রেরী আছে যার অনেকগুলো ব্রাঞ্চ। প্রচুর বাংলা বই থাকার কারণে আমি এখানে প্রায়ই যাই। তো সেদিন রাজিব ভাই(বিসিসি-১৯৯০-১৯৯৬) একটা বই ইস্যু করলেন “হিটলার থেকে জিয়া” লেখক মিনা ফারাহ। ভাইয়ার পড়া শেষ হওয়ার পর আজকে আমি পড়ার জন্য নিলাম ভুমিকা পড়ে তো অবাক এইসব কি লিখা আগেতো কখনও শুনিনাই। তাই চিন্তা করলাম সবার সাথে বইটার ভুমিকাটা শেয়ার করি দেখি এটার সত্যতা কটটুকু।

“জিয়া থেকে হিটলার”

২৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ, ইয়াহিয়া,মুজিবের জন্য কবর খুড়েও বন্ধ করে দিল। ৬ জানুয়ারি ১৯৭২ ভুট্টো বলল, শেখ! ফাহি নয়! আজ তুমি একজন মুক্তো মানুষ। ২০শে মার্চ ১৯৭৫ এ খুনি রশিদ ও ফারুক যখন জিয়াকে জানালো বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রস্থাব, জিয়ার উত্তর,’তোমরা কর। আমার সমর্থন থাকবে।‘ ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এ খুনের সংবাদ শুনে জিয়ার উত্তর,’তাতে কি?’ এই হচ্ছে আসল জিয়ার চেহারা। যে কাজ ভুট্টো ইয়াহিয়া সাহস করে নি, জিয়া তা সম্পন্ন করেছে। সুতরাং আজ ইয়াহিয়ার পর আরেকটি পশু হত্যা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

বাংলার মানুষ আজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। কিন্তু কেন চায়? কেন কেউ বলছে না, যুদ্ধাপরাধীরা মুক্ত হলো কি করে?? এই প্রথম প্রশ্নটিই কেউ করছেনা। ১৯৭৫ এর ৩১ ডিসেম্বরে জিয়াউর রহমানের নির্দেশে যদি গেজেট জারি করে যুদ্ধাপরাধীদেরকে মুক্তি দেয়া না হতো, বাংলার মাটিতে কি আজ এই বিচারের প্রশ্ন উঠত? যুধাপরাধীরা কেউ জেলের তালা ভেঙ্গে আসেনি। সুতরাং রাজনৈতিক উচ্চাভিলাসে যুদ্ধাপরাধিদেরকে মুক্তি দিয়ে জিয়াউর রহমান যে ক্ষমাহীন অপরাধ করেছে, তা যুধাপরাধের চেয়ে বড় অপরাধ। তার অপরাধ, পলাশির উদাহরণ উৎরে গেছে।
আজ ঢাকার সবচেয়ে মূল্যবান জায়গা জিয়া উদ্যানে যে কবরটি রয়েছে বিএনপি আমলে তার নির্মাণ ব্যয় ২৫০ কোটি টাকা। আমার প্রশ্ন, জিয়ার নির্দেশে খুন হয়ে যাওয়া অন্যান্য সেক্টর কমান্ডারদের কবর কোথায়?? দেশের জনগণের ২৫০ কোটি টাকার কবরে শোয়া, প্রশ্নবোধক এক জিয়াউর রহমান কি একাই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন?? আজ দেশের সেনাবাহিনীর কাছে আমার প্রশ্ন , মহান মুক্তিযুদ্ধের ৪ সেক্টর কমান্ডারদের মৃতদেহ যে অবমাননার সঙ্গে জিয়াউর রহমান জাতির দৃষ্টি থেকে গায়েব করে দিল, এটা কি সেনাকোড?? জিয়া তো মুক্তিযোদ্ধাই ছিলনা। আর সত্যিকারের ৪ সেক্টর কমান্ডারকে শুধু খুনই নয় , খালেদ মোশাররফ, হুদা এবং হায়দারের দেহ ৪৮ ঘন্টা মর্গে পচিয়ে পোকামাকড় দিয়ে খাইয়ে, কুকুর বেড়ালের মতো মাটি চাপা দেয়া হলো যে কবরের কোনো হদিস নেই। অথচ জিয়ার কবরের বিশালত্বে, সমগ্র দেশটাকে ম্লান করে দেয়। নিশ্চই তারা সেক্টর কমান্ডার নয় বরং চোর ডাকাত ছিল। না হলে সেনাবাহিনী কেন চুপ? একি তাদেরও জিজ্ঞাসা নয়? মুক্তিযুদ্ধের প্রতি জিয়ার চরম অবমাননার দৃষ্টান্ত-খুন শেষে সেক্টর কমান্ডারদের লাশের লাঞ্ছনা।

যুদ্ধাপরাধীদের নিঃশর্ত ক্ষমা, বঙ্গবন্ধু এবং জেলহত্যাকান্ড, ৪ সেকটর কমান্ডারসহ সশস্ত্রবাহিনীতে জিয়া, তার অপরাধের দীর্ঘ তালিকা দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। যে লোক মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের খুন করে কি তার পরিচয়?? যে লোক খেতাব প্রাপ্তদের লাশের উপযুক্ত সম্মানের সঙ্গে কবর না দিয়ে পচিয়ে গলিয়ে পোকামাকড় দিয়ে খাওয়ায়-কি তার পরিচয়? সে কি ‘৭১ এর আইএসআই নয়?
২৫ মার্চ রাতে সে কি জানেনা সোয়াত জাহাজ ওগুলো কমলা না কামান? ম্লটা না মেশিনগান? আমি কি মুর্খ?
আমি এই আই এস আই জিয়ার নাম দেশের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে উঠিয়ে নেয়ার আকুল আবেদন জানাচ্ছি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে। সশস্ত্রবাহিনীতে ‘৭৭ এর গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির অপরাধে তার মৃত্যু পরবর্তি বিচার দাবি করছি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মনোযোগ আকর্ষণ করে জানাচ্ছি যে, তদন্ত করে দেখুন, আইএসআই এই জিয়াউর রহমান কখন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কিনা?? সাধারণ ডক শ্রমিকরা যখন বুঝতে পেরে অস্ত্র খালাস না করে বিদ্রোহ ঘোষণা করলো, জিয়াউর রহমান গেল গণহত্যার জন্য আনা অস্ত্র খালাসের অভিসন্ধিতে।

জিয়ার মৃতদেহটি পাকিস্তানে তার পারিবারিক গোরস্থানে পাঠিয়ে দিয়ে এখানে বীরমুক্তিযোদ্ধাদের পুনঃকবর দিয়ে ওয়ার মেমোরিয়াল এবং মিউজিয়াম গড়ে প্রজন্মের কাছে দায়মুক্ত হক আমাদের সেনাবাহিনী। একাজ অন্য কার পক্ষেই সম্ভব নয়। সেক্টর কমান্ডারের লাশ অবমাননা? সেনাবাহিনীকে অবমাননা? লাঞ্ছিত লাশগুলো-তাহের,খালেদ,হুদা,হায়দার এরা আপনাদের ভাই। আপনাদের ভাইয়ের খুনি জিয়ার নাম দেশের সকল প্রতিষ্ঠান, সড়ক, দেয়াল থেকে ইতুলে নেয়ার আহবান জানাই। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ব্যার্থতা জিয়া। যুদ্ধাপরাধীর চেয়ে বড় অপরাধ যারা অপরাধিকে মুক্ত দেয়। জিয়া ৩৪,০০০ যুদ্ধাপরাধীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে‘৭১ কে পতিত করেছে। কলংকিত করেছে পুরো সেনাবাহিনীকে।

এই বইটির তিনটি অংশ। প্রথম অংশটি-“জিয়া কেন মুক্তিযোদ্ধা নয়-১৭৮টি কারণ”। দ্বিতীয় অংশটি-“সংবিধান সন্ত্রাসী জিয়া”। তৃ্তীয় অংশটি-“বইয়ের কাঠগোড়ায় জিয়া”

৫,৮১৫ বার দেখা হয়েছে

৩১ টি মন্তব্য : “প্রশ্নবোধক এক জিয়াউর রহমান”

  1. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    জেনারেল জিয়াকে আমার বরাবরই ওভাররেটেড বলে মনে হয়েছে।আর এটা তো সত্যি যে তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনীদের শুধু প্রশ্রয়ই দেননি,তাদেরকে বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূতের চাকরি দিয়ে পাঠিয়েছিলেনও-যে কোন স্ট্যান্ডার্ড বইয়ে এবং ইন্টারনেটে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ৭৫-পরবর্তী অবস্থান সম্পর্কে পড়লেই তা জানা যায়।বর্তমানে সার্ভিসে আছেন এরকম একজন কর্নেলের কাছে শুনেছি(নাম সঙ্গত কারণেই উল্লেখ করলাম না) , যে সময়টাতে সমস্ত বাঙ্গালি অফিসারদের ডিজআর্ম করা হয়েছিল,জিয়া পাকিস্তানিদের এতটাই বিশ্বস্ত ছিলেন যে তখন তাকে স্বপদে শুধু বহালই রাখা হয়নি বরং সোয়াত জাহাজে অস্ত্র খালাসের দায়িত্ব দিয়েও পাঠানো হয়েছিল।কর্নেল ভদ্রলোকের এই কথাটার শেষাংশ কতটা সত্যি জানিনা কিন্তু অন্যান্য বাঙ্গালি অফিসারদের মত জিয়াকে যে ডিজআর্ম করা হয়নি এটা কিন্তু বেশ সন্দেহজনক-আশা করি অভিজ্ঞ কেউ এই সন্দেহ দুরিভুত করতে সহায়তা করবেন।আর আনোয়ার কবির উবাচের "সশস্ত্র বাহিনীতে গণহত্যা" ডকুমেন্টারিটা অনেক প্রশ্নেরই উত্তর দেবে বলে আমার ধারণা।

    জবাব দিন
  2. রশিদ (৯৪-০০)

    মিনা ফারাহ যেভাবে প্রশ্নগুলো করেছেন, তা অতিমাত্রায় পক্ষপাতদুষ্ট........
    ১) জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না---এই টাইপ কথা বলা হাস্যকর......
    ২) উনি পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন (হ্যাঁ, সেখানে পৌঁছতে অনেক বিতর্ক আর রক্ত লেগেছে তার গায়ে/হাতে), কিন্তু উনার একটা প্রভাব/ইমেজ যেভাবেই হোক তৈরি হয়েছে.....যেটা অনস্বীকার্য এবং অন্যান্য সেক্টর কমান্ডারদের চেয়ে এখানে স্বাধীন দেশে তার অধিকতর ভূমিকা রাখার সুযোগ হয়েছে/পেয়েছেন.......
    ৩) আর অনেক অপরাধিই বঙ্গবন্ধু সরকারের সময়ও বেরিয়ে এসেছেন......যেমনঃ খান-এ-সবুর প্রমুখ

    তাই এক্ষেত্রে আমাদের উচিত নৈবর্ক্তিক হওয়া......ঢালাও সমালোচনা সুস্থ সমাজে গড়ে তোলার জন্য ভালো কিছু নয় আর সহায়ক তো নয়ই

    জবাব দিন
  3. আশহাব (২০০২-০৮)

    প্রথম অংশটি-“জিয়া কেন মুক্তিযোদ্ধা নয়-১৭৮টি কারণ” :khekz: :khekz: :khekz:

    অন টপিকঃ সহমত রশিদ ভাই 🙂


    "Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
    - A Concerto Is a Conversation

    জবাব দিন
  4. শাহরিন (২০০২-২০০৮)

    আমাদের ইতিহাস নিয়ে এত মতামত ,এটা খুব দুঃখজনক। াসল ইতিহাস্ সবার জানা উচিত,আমাদের রাজনিতিবিদ রা যদি শুধু নিজেদের ধান্ধায় না থেকে সবার কথা চিন্তা করত তাহলে আর হয়ত এমন হত না :no:

    জবাব দিন
  5. "যুদ্ধাপরাধীর চেয়ে বড় অপরাধ যারা অপরাধিকে মুক্ত দেয়। জিয়া ৩৪,০০০ যুদ্ধাপরাধীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে‘৭১ কে পতিত করেছে। "

    এর বিশদ ব্যাখার প্রয়োজ়ণ আছে। আমার জানামতে বঙ্গবন্ধু নিজেই এটা শুরু করছিলেন। শুত্র পরে পোস্ট করে দিব।

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      বঙ্গবন্ধু খুনী,ধর্ষণকারী ও অগ্নিসংযোগকারী রাজাকারদের মুক্তি দেন নি।মিনা ফারাহের লেখা সম্ভবত অতিরঞ্জিত,কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দেয়া থেকে শুরু করে তাদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে জেনারেল জিয়ার ভূমিকা অপরিসীম(!)। হুমায়ুন আজাদ স্যার জেনারেল জিয়াকে বাংলাদেশে রাজাকারতন্ত্রের জনক বলে অভিহিত করেছেন 🙂 সময় করে প্রতিটা লাইনের পিছনে লিঙ্ক দেব,পরীক্ষাটা শেষ হোক।

      জবাব দিন
  6. জিয়া তো মুক্তিযোদ্ধাই ছিলনা।
    দেখলাম পরলাম শুনলাম ..... কিন্তু অপরাধীর দোষকে ৫ গুন বারায়া লিখার স্বভাব যে বাঙালির যায় নাই তার আবার প্রমান পাইলাম

    জবাব দিন
  7. আরো পড়েন, যাষ্ট একটা বইয়ের উপর ডিপেন্ড করে ইতিহাস জানার চেষ্টা করলে প্রতারিত হবেন।
    >যুদ্ধপরাধীদের মুক্তি দেয়া শুরু করেছিলেন বংগবন্ধু
    >খালেদ-হায়দার-হুদার হত্যার ক্ষেত্রে জিয়ার চেয়ে তাহেরের অবদান বেশি, এরা সবাই বিপ্লবের বলি......। কারন ৭ই নভেম্বরের বিপ্লব তাহের এবং জাসদের, জিয়া স্রেফ নিজের ক্লিন ভাবমুরতির আর জনপ্রিয়তার কারনে সামনে চলে এসেছিলেন, কারন তাহেরের এমন একজনের প্রয়োজন ছিলো।

    ইতিহাসটা খোলা মনেই জানুন, অন্ধ আবেগ বা রাগ থেকে জানতে গেলে ভুল মেসেজটাই পাবেন। বলে না "যারে দেখতে নারি, তার চলন বাকা..."

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।