অপেক্ষা-আহসান কবীর(১/১৭)

বেক্সকা নাইট এ আমাদের যে সুভিনিয়রটা বের হয়েছিল সেখানে নিয়মিত লেখক সিসিবির সায়েদ ভাই এর মতো ১ম ব্যাচের আহসান কবীর ভাই ও আছেন।
এবারে ওনার লেখাটা পড়ে অন্যবারের মতোই ভাল লাগলো তাই চিন্তা করলাম সিসিবিতে শেয়ার করি
আশাকরি ভালো লাগবে।

অপেক্ষা-আহসান কবীর(১/১৭)

বিবাহ :
জেনারেল নলেজে এ আমরা সংক্ষিপ্ত শব্দের পূর্নরূপ শিখতাম। যেমন বিএ ডিসি- বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট কপোরেশান। তেমনি বিবাহ শব্দের পূর্নরূপ আমরা তৈরি করে ছিলাম এ ভাবে- বিশেষ বাসরে হরন। তিন জন পাওয়া গেল প্রথম ব্যাচের, যারা এক জীবনে বিয়ে করবে না বলে প্রতিজ্ঞা করে বসলো। এই তিন জনের নাম দেয়া হয়েছিল “ককসা”। মানে কাশেম কবির সালাম। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “দত্তা” উপন্যাসের তিন বন্ধুর মতো আমাদের তিন জন ও বিয়ে না করার অগ্নিশপথ করেছিলাম। কঠিন প্রতিজ্ঞার পর নিজেদের তেমন ভাবেই প্রস্তুত করছিলাম।
কিন্তু ১৯৮৪ সালে কলেজ থেকে বের হবার তিন বছর যেতে না যেতেই আবুল কাশেম সুমন, যে কিনা এখন একটি বেসরকারি ব্যাংকের বড় চাকুরে, সে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে বসলো। মন খারাপ করা এক চিঠিতে সে আমাকে জানালো শ্রীর ও পিতা মাতার অনুরোধের ব্যাপারটা ফেলতে না পেরে তাকে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে হলো। ক্ষমা চেয়ে নিয়ে সে বসলো বিয়ের পিড়িতে। শরীর থেকে তখনো কলেজের গন্ধ ঠিক মতো মুছে যায়নি। অবশ্য কাশেম একটা রেকর্ড ও করে বসলো। আমাদের মধ্যে প্রথম বিয়ে ও প্রথম বাবা হবার রেকর্ড। তার ছেলে এখন ইউনিভার্সিটি তে পড়ে।
৯৪-৯৫ সালে এসে পতন হলো সালামেরও। সেও ফল ইন লাভ। অর্থ্যাৎ প্রেমে পতিত হইলো। ফলাফল বিয়ে। বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে সে এখন কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের বাসিন্দা। আর আমি অর্থ্যাৎ আহসান কবির??
“নিছক স্বপ্ন” শিরোনামে গায়ক খালিদ ও গায়িকা ফাহমিদা নবীর একটি গানের অ্যালবাম বেরিয়ে ছিল ২০০৮ এর নভেম্বরে। সেখানে আমার লেখা দুটি গান ছিল। ঐ অ্যালবাম এ আমার পরিচয় দেয়া হয়েছে এভাবে “হ্যাপী ব্যাচেলার”।
আমি না হয় হ্যাপি ব্যাচেলার। একা একা সুখেই আছি ভব ঘুরে বা উদ্বাস্তু হয়ে! কিন্তু ফাস্ট ব্যাচের তারিক???অনেক টাকা স্যালারি পাওয়া এই ছেলেটা তাহলে কোন দুঃখে বিবাহ করছেনা, তার একটা সুষ্ঠ তদন্ত হওয়া দরকার। প্রয়োজনে মেডিকেল টেস্ট।
অ্যালোন:কপাল পোড়া বলে একটা টার্ম প্রচলিত ছিল আমাদের সময়ে। প্যারেন্টস ডেতে যাদের বাবা-মা বা গার্জিয়ান আসতো না তারা নাম পেতো “কপাল পোড়া”। আর যাদের আসতো তাদের জন্য নিয়ে আসা খাবার দাবারগুলো ছিল পেরেন্টস ডে-তে অনেকের আরাধ্য ব্যাপার।
ব্যাতিক্রম ছিল কে.বি নাসিরুল্লাহ। আমাদের কেউ বলতো কাজের বেটি নাসিরুল্লাহ। ঘুমাতো সে হাফ প্যান্ট পরে। গিটার নিয়ে শুধু ইংরেজী গান গাইতো। হ্যাভ বিন ওয়েটিং, ফর আ গার্ল লাইক ইউ, সো লং, হ্যাভ বিন লুকিং..।…।। মাঝ রাতে কানতো। বাবা মা এসেও সে কান্না থামাতে পারেনি। এলেভেনে চলে গেল সে। এরপর একবার দুবার দেখা হয়েছিল ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে। সে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে পড়তো। বলতো ধর্ম কর্ম আর সমাজতন্ত্রেই মুক্তি মিলবে। কথা শেষে একবার অনুরোধ করলেই গান ধরতো, দেয়ার ইজ নো কমফোর্ট ইন দা ট্রুথ, পেইন ইন দা হার্ট ইউ ফাইন্ড.।।.।।…। সো নেভার গনা ড্যান্স এগেইন, কেয়ারলেস হুইসপার.।।…।
তারপর একদিন কে বি বিদেশ চলে গেছে। কোথায় গেছে জানা যায়নি আজো। হয়তো আজো সে গীটার বাজিয়ে গান গায়-নো উওম্যান নো ক্রাই…।।
একবার নারকেল চুরি করতে গিয়ে নারিকেল নিয়ে আমি সহিসালামতে ফিরে আসলাম। ধরাপরে গেল দস্তগীর। অ্যাডজুটেন্ট মেজর(এখন ব্রিগেডিয়ার)হুমায়ুন কবির স্যার তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, দস্তগীর তোমার সাথে আর কে ছিল, বলো। দস্তগীর দিব্বি বলে দিয়েছিল স্যার আমি ছাড়া আর কেউ ছিলনা।
দস্তগীর তুই এখন কোথায়? কলেজ থেকে বের হয়ে একদিন ও তোকে দেখিনি, টেলিফোনে বা মোবাইলেও কথা বলিনি। তুই কোথায় দস্তগীর? জীবনের সব আয়োজন আর পূণ্য তোকে দিয়ে দিব, সেই দিনগুলি ফিরিয়ে দিতে পারবি??? তাহলে তোকে নিয়ে একদিন সেইসব দিনগুলি চুরি করতে যাব। আমি জানি ধরা পড়লে তুই বলবি, স্যার আমার সাথে কেউ ছিলনা। আই ওয়াজ অ্যালোন।
দস্তগীর সালাম ও তোর মতো দূরদেশে আছে। ভালোই আছে। মাঝে মাঝে মাঝে ফোন করে। বেক্সকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফখরুল আলম আর সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুস সালাম আরিফদের মতো সালাম খুব করে জানতে চায় ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করি কিনা। বুকের ব্যাথাটা বেরেছে কিনা। আর শেষে বলে ষ্টিল ইউ আর অ্যালোন??হাউ ফানি! ইজ় ইট পসিবল?? আমি বলি হ্যারে সালাম আই অ্যাম ষ্টিল অ্যালোন।
২০০৯ সালের বই মেলাতে জাগৃতি প্রকাশনী থেকে একটা বই বের হবার কথা পাকাপাকি হয়েছে। সেই বই এর নাম মানুষের চেয়ে চেয়ার বড়। সেই বই এর উৎসর্গ পত্রটা এমন-
“আব্দুস সালাম ও তাসনিয়া তানজিনা শাহ। এই দুইজন মানুষ হাত দেখতে পারেননা। কিন্তু আহসান কবির সম্পর্কে তাদের ভবিষ্যৎ বানী এমন-যতোদিন যাবে আহসান কবির ততো বেশি ভবঘুরে ও উড়নচন্ডি হবে। আর অন্তরের গভর ক্ষত নিয়ে একদিন যেতে হবে পরপারে। এই দুইজন মানুষের প্রথম ভবিষ্যৎ বাণী সঠিক হয়েছে। এখন দ্বিতিয়টির জন্য অপেক্ষা…….।..।।…”

৫,১৩৯ বার দেখা হয়েছে

৩৮ টি মন্তব্য : “অপেক্ষা-আহসান কবীর(১/১৭)”

  1. তানভীর (৯৪-০০)

    খুব চমৎকার একটা লেখা। শেষে মনটা একটু খারাপও হয়ে গেল।
    লেখাটা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ নাজমুল।
    ভাইয়াকে সিসিবিতে নিয়ে আসলে আমরা মনে হয় আরো কিছু চমৎকার লেখা পেতাম।

    জবাব দিন
  2. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    কবীর ভাই অসাধারণ। উনার একটা কবিতা আমার সবসময়ই মাথায় ঘোরে:

    "স্মৃতি না স্বপ্ন, কোনদিকে যাব?
    দুটোই সমান দূর
    মাঝখান থেকে হাতছানি দেয় মুগ্ধ "অচিনপুর"।

    এই অচিনপুরের টানেই না আমরা এইখানে একত্রে নিজেদের জগতে বিলীন হতে ভালোবাসি।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  3. শওকত (৭৯-৮৫)

    কবির ভাই ছিল বিবিসির প্রথম কলেজ কালচারাল প্রিফেক্ট। (আমি ছিলাম দ্বিতীয়)। আইসিএলএম-এ সে উপস্থিত বক্তৃতায় প্রথম হইছিল। বিষয়বস্তু ছিল ক্যাডেট কলেজের ডাইল।
    কলেজ থেকে বের হওয়ার পর এখন পর্যন্ত কি কি করেছে সে এক লম্বা ইতিহাস। ঢাকা ভার্সিটি, নেভী, বুয়েট ঘুইরা অবশেষে সাংবাদিক। এখানেও সে থিতু হইতে পারলো না। বড় বেশি চাকরি বদল করছে কবির ভাই।
    কবির ভাইয়োর সাথে দেখা হয় কম। কিন্তু টানটা ঠিকই টের পাই।

    জবাব দিন
  4. মঞ্জুর (১৯৯৯-২০০৫)

    আমার মন যখন খারাপ থাকে তখন কোনো এক অজানা কারনে চারপাশে এমন্ কিছু ঘটে বা এমন কিছু পড়ি যাতে মন আরো খারাপ হয়ে যায়।পুরা লেখাটা মজাই পাচ্ছিলাম কিন্তু শেষের দিকে পড়ে মন আরো খারাপ হয়ে গেলো।
    অসাধারণ লেখা।

    জবাব দিন
  5. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)
    ১। যতোদিন যাবে আহসান কবির ততো বেশি ভবঘুরে ও উড়নচন্ডি হবে।
    ২। আর অন্তরের গভর ক্ষত নিয়ে একদিন যেতে হবে পরপারে।

    বাহ্‌!
    আমি বড় হয়ে আহসান কবীর ভাই এর মতন হতে চাই... :dreamy:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আদনান (১৯৯৪-২০০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।