একটি অসমাপ্ত তালিকা

ক্যাডেট কলেজের কিছু জায়গা প্রায়ই মিস করি। শুধু আমি না, আমার ধারণা আরো অনেকেই হয়তো এই জায়গা গুলো কে এখনো ফিল করে। একটা ইনকমপ্লিট লিস্ট বানানোর চেষ্টা করলাম। লিস্টে শুধু আনকনভেনশনাল জায়গা গুলো রাখার চেষ্টা করেছি।

১) টিভি রুম: নতুন করে কিছু বলার নেই। অনেক স্মৃতি এর সাথে জড়িত। বৃহস্পতিবারের মুভি শো , হিন্দি গানের চ্যানেল, ইউরোপিয়ান ফুটবল লিগ .. কত স্মৃতি। জুনিয়র লাইফে নিচে বসে অনেক কষ্ট করে মাথা উচু করে টিভি দেখা আর সিনিয়র লাইফে ২/৩ টা চেয়ার নিয়ে পুরো মহারাজা স্টাইলে টিভি দেখা কোনটাই ভুলবার নয়!

২) ডাইনিং হলের ছাদ : এই জায়গাটা আমাদের ব্যাচের খুব প্রিয় একটা জায়গা ছিল। প্রায় এখানে নৈশ সমাবেশ বসতো। রাত একটার পর। তিন হাউস থেকে ই দোতলার করিডোরের থাই গ্লাস দিয়ে  লাফিয়ে  শেডের উপর দিয়ে হেটে এখানে আসা  যেত। একটু এডভেন্চারাস। এখনো মনে পরে আমাদের ব্যাচ বার্থ ডে এর মুড়ি পার্টিটা রাত একটায় ডাইনিং হলের ছাদেই হয়েছিল। সে কি থ্রিলিং অভিজ্ঞতা ! পোলাপানের লাফালাফিতে পানির লাইন ভেঙ্গে গিয়েছিল। পরদিন সকালে গিয়ে দেখি ডাইনিং হলে পানির সাপ্লাই বন্ধ! খুব স্বাভাবিক ভাবেই মেস ওয়াইসির মাথা নষ্ট!

৩)হাউসের পোর্চের পাশের বাথরুম টা : একটু হাস্যকর লাগছে জানি ! কিন্তু এই বাথরুম টার একটা ইউনিক ফিচার ছিল। মোটামুটি বড়। পাশেই বড় একটা জানালা। জানালা দিয়ে লেকের খুব সুন্দর একটা ভিউ পাওয়া যেত। দমকা হওয়া বয়ে আসত  লেকের পার থেকে। শাওয়ার ছেড়ে দিলে পানি বাতাসের দাপটে এদিক ওদিক চলে যেত। আমিও সরে যেতাম শাওয়ারের নিচ থেকে। সেই এলোমেলো পানির ঝাপটা লাগতো আমার গায়ে। মনে হতো আকাশ  ভেঙ্গে বৃস্টি নেমেছে। সেই বৃষ্টির ফোটা গুলো আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে একটু একটু স্পর্শ লাগছে। অপার্থিব একটা আনন্দ। এখনো মনে পরে যায়।

৪)পেপার স্ট্যান্ড: প্রতিদিন লাঞ্চের পর এসে আমার প্রথম কাজ টা ছিল নিউ এজ  আর ডেইলি স্টারের খেলার পাতা টা পেপার স্টান্ডে দাড়িয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে পড়া। ফুটবল পাগল ছিলাম। প্রায়ই রাতের ম্যাচগুলো মিস হতো। তখন পেপার স্ট্যান্ডে  দাড়িয়ে ম্যাচ রিপোর্ট  গুলো পরে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাতাম !

৫) ডাইনিং হলের সামনের মনুমেন্ট টা : যখন জুনিয়র ছিলাম , তখন দেখতাম সিনিয়র রা ওখানে বসে আড্ডা দেয়। তখন থেকেই ভাবতাম যে কবে সিনিয়র হবো আর ওখানে বসবো ! একদিন কিভাবে কিভাবে যেন সিনিয়র হয়ে গেলাম। তারপর ওই জায়গা টায় বসে আমাদের জম্পেশ কিছু আড্ডা বসতো। স্পেশালি যখন এস এস এসসি আর এইচ এস এসসি পরীক্ষার ক্যান্ডিডেট ছিলাম ওই টাইমে রাত জেগে পরার জন্য আমাদের স্পেশাল চা দেওয়া হতো। ওই চা নিয়ে ওখানে বসে যেতাম। তারপর চলত ননস্টপ আড্ডা।

৬) এথলেটিক্সের হাউস টেন্ট : অসাধারণ একটা জায়গা! সিনিয়র ক্লাসের দখলে থাকত সবসময়। ভিতরে ঘরোয়া  পরিবেশে আড্ডাবাজি হতো। মাঝে মাঝে ধুম্রতাশের আসর ও বসতো। ওই টাইমে সবারই হাউস ফিলিংস অত্যাধিক হারে বেড়ে যেতো। তখন তিন হাউসের মাঝে একটা প্রতিযোগিতা চলতো যে কোন হাউসের টেন্টে সবচেয়ে উচু হাউস পতাকা থাকবে! ঘন্টায় ঘন্টায় পতাকার উচ্চতা বাড়তো ! এই টেন্ট গুলোর নির্মম মৃত্যু ও হতো ক্যাডেট দের হাতেই। এথলেটিক্সের ফাইনাল ডে এর ভিক্টরি ল্যাপের সময়।

 

( এ লিস্ট শেষ হওয়ার নয়)  :no:

১,১৩১ বার দেখা হয়েছে

১০ টি মন্তব্য : “একটি অসমাপ্ত তালিকা”

  1. মাহমুদ (১৯৯৮-২০০৪)

    থ্যাঙ্কস নাফিস, :thumbup: :thumbup: :thumbup:
    SH rocks...
    ঐটা অনারারী কেন,আসলেই একটা লেক।অবশ্য বাইরে থেকে দেখা যায় না বলে হয়ত মির্জাপুরের আসল লেকটা সম্পর্কে অনেকেই জানে না।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : নাফিস (২০০৪-১০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।