পূর্বের পর্ব: প্রবাসে প্রাকৃতজন (পর্ব ০.৫)
আমার শহরের বেশিরভাগ ট্যাক্সি ড্রাইভারই পাকিস্তানি। কখনো কখনো ফোন করে ট্যাক্সি ডেকে আনলে ড্রাইভার এসে সালাম দিয়ে উর্দুতে কথা বলা শুরু করেন, সেলামালেকুম খাঁসাব, ক্যায়সি হেয় আব? কাঁহা যাইয়ে? ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি বলি আমি বাঙালী, তেমন একটা উর্দু জানিনা। তাঁরা তখন আকাশ থেকে পড়েন, বলেন, আমরা আর তোমরা তো প্রায় একই – ভাই বেরাদর, আর এখানে তো প্রায় সব “বঙ্গাল” ই আমাদের সাথে উর্দুতে বাতচিত করে… আমি প্রচন্ড রকমের বিরক্ত হই কিন্তু অস্বীকার করতে পারি না, তাই গন্তব্যের ঠিকানা জানিয়ে চুপ করে বসে থাকি।
নেটিভদের অবস্থা আরো এক প্রস্থ সরেস। নাম শুনলে তাঁরাও আমাকে মনে করেন পাকিদেশীয়, খান-মাফিয়া গোত্রের মানুষ। আমারও গা-গোলাতে থাকে, এবং প্রথম সুযোগেই জানিয়ে দেই যে, আমি ওই খান্নাস দেশের খান নই। তখন তারা কিছুটা আমুদে কন্ঠে বলেন, ও তাহলে তুমি ইন্ডিয়ান! বলিউড, হুমম, আই লাইক বলিউড ডান্স! – আমি তাড়াতাড়ি বলি, হুমম ইয়াহ, আই লাইক দেয়ার মিউজিক সো মাচ! – তাঁরা বলেন, “দেয়ার মিউজিক”! তুমি ইন্ডিয়ান নও? – না না আমি ওই সব নাচনেওয়ালা খানদের দেশেরও নই। তারপরে বলতে হয়, এফ আর খানকে চেন? লন্ডন অলিম্পিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কোরিওগ্রাফার আকরাম খান কিংবা খান একাডেমির সালমান খান? এঁদের সবার মতই আমিও বাঙালী, বাঙালীদের দেশ – বাংলাদেশ থেকে আমি এসেছি।
তো এই হল মোটামুটি একপ্রকার বিরক্তিকর অবস্থা। ইদানিং আবার যোগ হয়েছে নতুন উপদ্রব। গেল রমজান মাসের পুরোটা জুড়ে যখন-তখন দুপুরে-সন্ধ্যায় বাসার ল্যান্ডফোনে উইথহেল্ড নাম্বার থেকে কল আসে – সেলামালেকুম, খাঁ সাব ঘার মে হ্যায়? … প্রথম দিনে এটুকু শুনেই সাবরিনা লাইনটা কেটে দিয়েছিল। পরে সাবরিনার কাছে কাহিনী শুনে মনে মনে একটু কৌতুক বোধ করলাম, আমি ঘরে আছি কি নাই – সে খবরে পরপুরুষের কি কাজ? এরপরে আবার ফোন এলে কঠিন চোটপাট নেবার জন্য মনে মনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রাখলাম। কিন্তু পরের কয়েক দিন যখন আমি বাসায় থাকি তখন ফোন আসে না, আবার যখন ফোন আসে তখন আমি বাসায় থাকি না।
অবশেষে এক সন্ধ্যায় ধরলাম তাঁকে। জামার হাতা গুটিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে সুললিত নারী কণ্ঠে বলে উঠল, সেলামালেকুম, ক্যায়সে হ্যায় আব খাঁ সাব? – ক্যাডেট কলেজ প্রোডাক্ট বিধায় কোন কিছুতেই ঘাবড়ে যাবার নিয়ম নেই, গুল্লি আসলেও হিলতে পারবো না। তাই আস্তে করে গোটানো হাতা কে ‘যেমন ছিল’ পজিশনে নিয়ে নিরাসক্ত গলায় বললাম, I am fine, thanks – ওপাশের নারীকন্ঠ তড়বড় করে বেজে উঠলো, রামাদান মুবারাক খাঁ সাব, ম্যায় হিনা স্পিকিং ফ্রম ইন্টারন্যাশনাল ***, উই আর এ চ্যারিটি ***, উই ওয়ার্ক উইথ দ্যা স্ট্রিট চিলড্রেন ইন পাকিস্তান *** … শিশুদেরকে সাহায্য করতে আমার কোন আপত্তি নেই, তা সে পাকিস্তানের হোক আর ইসরাইলের হোক, হিন্দুই হোক আর জাপানিই হোক। কিন্তু শিশুরা তো এই চ্যারিটি গুলো চালায় না, ওগুলো চালায় পাকিস্তানের বড়রা। আর পাকিস্তানের লোকেরা চালায় এমন কোন চ্যারিটিতে পয়সা দেবার ন্যুনতম কোন ইচ্ছা আমার নেই। তাই কোন কথা না বলেই লাইনটা কেটে দিলাম। এবারের মত কোনপ্রকার চোটপাট ছাড়াই ছেড়ে দিলাম। হাজার হোক, আমি বাংলাদেশের মানুষ, আমি নিয়াজি-টিক্কাদের মত নারী-শিশুদের উপর দাপট দেখানোর মাঝে বীরত্ব খুঁজে পাই না।
এরপর তাঁদের কাছ থেকে আর কোন ফোন-টোন আসেনি। কিন্তু এই কুরবানীর ঈদের আগে সপ্তাহ দুয়েক ধরে আবার সময়ে-অসময়ে উইথহেল্ড নাম্বার থেকে ফোন আসা শুরু হয়েছে। আমরাও এরকম কোন ফোন কল রিসিভ করি না। দরকারি কেউ হলে বা চেনা-পরিচিত কেউ হলে ভয়েস মেইল রেখে দেন, আমরা কলব্যাক করি। যাহোক, আগামীকাল এদেশে ঈদ, আশা করছি কালকের পর থেকে উপদ্রবটা এ বছরের মত দূর হবে।
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। এবছর কুরবানীর ঈদ আর দুর্গাপূজা প্রায় একই সময়ে হচ্ছে। সবাইকে দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা।
পৃথিবীর সকল প্রাণী সুখী হোক, কেউ যেন দুঃখভোগ না করে।।
০৩/১০/২০১৪
এম কে
(অনেকদিন সিসিবি তে আসা হয়না। আর পেট থেকে কোন লেখালেখিও বের হচ্ছে না অনেকদিন। তাই আমার ফেসবুকের একটা পুরোনো স্ট্যাটাসকে একটু ঘষেমেজে এখানে দিয়ে দিলাম। )
এইখানে পাকিস্তানী নাই। গত সেমিস্টারে একজন এসেছে শুনলাম। ভরপুর ভারতীয় আছে। আই,এস,এ দ্বিতীয় বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন চায়নার পরে। ভারতীয়রা সবসময় এরকম বিরক্ত করে না। তবে সময় সুযোগ পেলে "আমরা আমরাই তো" বলে। ওদের নিজের দেশের দক্ষিণের মানুষের সাথে ইংরেজীতে কথা বলা লাগে। হাহাহাহাহা। তামিল, তেলেগু ভাষাভাষীরা হিন্দী পুছারও টাইম পায় না! 😛 প্রসাদ নামের এক মারাঠী ছেলে একবার বলেছিল, আমরা ভারতীয়রা যতক্ষণ দেশে আছি ততক্ষণ শক্তপোক্ত ভারতীয়। আমেরিকায় আসলেই আমরা হয়ে যাই মারাঠী, তেলেগু, তামিল, গুজরাটি। 🙂
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
:clap: :clap: :clap:
ভাল লাগলো
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
:clap: :clap: :clap:
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
দের মে আয়া তো দুরস্ত আয়া খাঁ সাহাব। 😀
তাই ভাবছিলাম, আগেও পড়েছি।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ