জাতিসঙ্ঘে ইন্ডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বাংলায় ভাষণ দেয়া উচিত

ইন্ডিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিঃ মোদী এবার জাতিসঙ্ঘে হিন্দিতে ভাষণ দিয়েছেন। উপমহাদেশের একটি অন্যতম ভাষাকে বিশ্বসমাজে তুলে ধরার জন্য আমি তাঁকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল হিন্দিতে কেন? বাংলায় কেন নয়?
ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার অনেকগুলি বৈশিষ্ট্য দিয়ে একটি রাষ্ট্রের নিজস্ব আইডেন্টিটি তৈরি হয়। রাষ্ট্রের সকল নাগরিকেরই উচিত যাঁর যাঁর অবস্থান থেকে তাঁদের সেই আইডেন্টিটি গুলোকে সমুন্নত করা। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি আছে ভাষা সম্পর্কিত, যেমন, রাষ্ট্রভাষা, দাপ্তরিক ভাষা ও লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা, জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় কবি, ইত্যাদি। এগুলো সবই রাষ্ট্র কর্তৃক আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষিত ও স্বীকৃত।
এখন এক একটি করে হিসাব করে দেখা যাক হিন্দি নাকি অন্য কোন ভাষা তাঁদের রাষ্ট্রীয় আইডেন্টিটি নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। প্রথমেই, রাষ্ট্রভাষাঃ হ্যাঁ, হিন্দি তাঁদের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা, কিন্তু বাংলা সহ তাঁদের আরও অনেকগুলি রাষ্ট্রভাষা আছে। এবং, আমার জানামতে, এদের কোনটিকেই অন্য কোনটার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়নি। অতএব এই রাউন্ড শেষে বাংলাঃ ১ – হিন্দিঃ ১।
আমি যতদূর জানি, ইংলিশ হল ইন্ডিয়ার দাপ্তরিক ভাষা । এর পাশাপাশি কোন কোন প্রদেশের নিজস্ব দাপ্তরিক ভাষাও রয়েছে কিন্তু সেগুলো ইন্ডিয়ার দাপ্তরিক ভাষা নয় । তাঁদের লোকসভার কার্যবিবরণী ইংলিশে লেখা হয়। আবার তাঁদের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ও ইংলিশ। তবে যে কোন দুটি প্রদেশ তাঁদের নিজেদের সম্মতিক্রমে অন্য কোন ভাষাতে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন। যেমন, আসাম ও পশ্চিমবাংলার প্রাদেশিক দপ্তরগুলির মাঝে ইংলিশের পাশাপাশি বাংলাতেও ফাইল পত্র আদান প্রদান করা হয় বলে আমি শুনেছি। অতএবঃ এই দুই রাউন্ডে বাংলা ও হিন্দি কোনটাকেই পয়েন্ট দিতে পারছি না, অর্থাৎ এখনও বাংলাঃ ১ – হিন্দিঃ ১।
এখন, তাঁদের জাতীয় সঙ্গীত একটি বাংলা গান আবার তাঁদের জাতীয় কবির কবিতার ভাষাও বাংলা। অতএব, বাড়তি কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই, এই দুই রাউন্ড শেষে বাংলাঃ ৩ – হিন্দিঃ ১।
অতএব, ইন্ডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে জাতিসঙ্ঘে ভাষণ দিতে হলে হয় ইংলিশ না হয় বাংলায় দেয়া উচিত। কিন্তু তিনি হিন্দিতে ভাষণ দিয়ে বলিউডের সুবাদে হাল আমলে বিশ্ব বাজারে পরিচিতি পাওয়া হিন্দিকেই প্রমোট করলেন। এর মাধ্যমে তিনি তাঁদের জাতীয় স্বকীয়তা তুলে ধরেছেন – একথা আমি কোন যুক্তিতেই মানতে পারছি না। জাতীয় স্বকীয়তার চেয়েও ব্যবসায়ীক লাভের আশাটাই এখানে বড় ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করেছে। There are many things between truth and fact!
বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু কিন্তু প্রায় চল্লিশ বছর আগেই জাতিসঙ্ঘে বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। শেখ হাসিনাও একাধিকবার সেখানে বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের তরফ থেকে বাংলাকে জাতিসঙ্ঘের দাপ্তরিক ভাষা বানানোর জন্যও আহ্বান জানানো হচ্ছে। ইন্ডিয়ার প্রধানমন্ত্রী যদি বাংলায় ভাষণ দিতেন তাহলে এই আহ্বানটা আরও জোরালো হত। আমি বিশ্বাস করতে চাই যে, পৃথিবীর সকল বাঙালীরা এই প্রশ্নে একই পক্ষে থাকবেন, এমন কি সুবিবেচনাবোধ সম্পন্ন অবাঙ্গালীরাও।
( পুনশ্চ: এই লেখা পড়ে কেউ কেউ হয়ত আমাকে পাবনায় একটি সিট বরাদ্দ নেবার জন্য মনে মনে উপদেশ দেবেন। সেক্ষেত্রে, আমি সানন্দে রাজি আছি, আপনারা কে কে আছেন? )

৩,১৩১ বার দেখা হয়েছে

৪৭ টি মন্তব্য : “জাতিসঙ্ঘে ইন্ডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বাংলায় ভাষণ দেয়া উচিত”

  1. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    পাবনা সীট +১ দিয়ে শুরু করি। মিশিগান টেকে পড়তে আসার পর যখন দেখলাম ভারতীয়রা নিজেদের মাঝে ইংরেজীতে বাতচিত করে (দক্ষিণের তেলেগু, তামিল ভাষাভাষীরা হিন্দী পুছে দেখার সময় পায় না! 😛 ) তখন মজা পেয়েছিলাম। গ্রহণযোগ্যতার দিক দিয়ে বাঙলা ইতমধ্যেই জাতিসংঘে অনেকটুকু এগিয়ে আছেঃ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটা ২১ ফেব্রুয়ারী। কিন্তু আমার মনে হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হিন্দী বাদে তেলেগু, তামিল, মারাঠী, বাঙলা যেই ভাষায় উনি ভাষণ দিতে যাবেন উনাকে শশার মত ছিলে ফেলবে! 😛


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
    • মুজিব (১৯৮৬-৯২)

      ইংলিশ হচ্ছে একমাত্র ভাষা যা ইন্ডিয়ার সব প্রদেশে চলে। হিন্দি/বাংলা/তামিল/তেলেগু এগুলোর কোনটাই সেখানে সার্বজনীন না। যুক্তির বিচারে বাংলা এগিয়ে থাকলেও হিন্দির গায়ের জোরকে কেউ উপেক্ষা করতে পারছে না।


      গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

      জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    মোদি ভারতীয় জাতীয়তাবোধকে নির্বাচনী প্রচারনা থেকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে, ক্ষমতায় এসেও করছে। হিন্দিতে ভাষন মনে হয় তারই একটা অংশ তবে ভারতের অন্যান্য ভাষাভাষী জনগন বিষয়টা কিভাবে নিয়েছে সেটা জানা নেই।

    বাংলাকে জাতিসঙ্ঘের দাপ্তরিক ভাষা করার বিষয়টা ঠিকমত লবিং করতে পারলে মনে হয় অর্জন করা সম্ভব।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
    • মুজিব (১৯৮৬-৯২)

      যুক্তির বিচারে বাংলা ভাষা সবচেয়ে এগিয়ে। তার পরেও সেদেশের বাংলাভাষী জনগণের এনিয়ে কোন মাথা ব্যাথা আছে বলে হয় না। আর সেখানে অন্য ভাষাভাষীদের তো এরকম কিছু চিন্তা করার মত মাইন্ড সেটআপ ই থাকার কথা না।

      জাতিসঙ্ঘে নতুন একটা দাপ্তরিক ভাষা চালু করা খুবই দুরূহ একটা ব্যাপার হবে। কিন্তু আমি আশাবাদী মানুষ। লেগে থাকলে হয়তো একদিন হয়েও যাবে...


      গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

      জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
    পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মরাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ
    বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা উচ্ছলজলধিতরঙ্গ
    তব শুভ নামে জাগে, তব শুভ আশিষ মাগে,
    গাহে তব জয়গাথা।
    জনগণমঙ্গলদায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
    জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।

    এই গানে কয় লাইন বাঙলা বলেন তো ভাই???


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    Jana-Gana-Mana-Adhinayaka, Jaya He
    Bharata-Bhagya-Vidhata
    Punjab-Sindh-Gujarat-Maratha
    Dravida-Utkala-vanga
    Vindhya-Himachala-Yamuna-Ganga
    Uchchhala-JaladthaTaranga
    Tava Subha Name Jage
    Tava Subha Ashisa Maghe
    Gahe Tava Jaya Gatha.
    Jana-Gana-Mangala Dayaka, Jaya He
    Bharata-Bhagya-Vidhata,
    Jaya He, Jaya He, Jaya He,
    Jaya, Jaya, Jaya, Jaya He


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  5. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    India
    Main articles: Languages with official status in India, Languages of India and Sanskrit
    Today, there are 22 official languages in India. Assamese, Bengali, Bodo, Dogri, Gujarati, Hindi, Kannada, Kashmiri, Konkani, Maithili, Malayalam, Manipuri, Marathi, Nepali, Oriya, Punjabi, Sanskrit, Santali, Sindhi, Tamil, Telugu, Urdu. Even though English language is not included in the Eighth Schedule to the Indian Constitution. as it is a foreign language, it is one of the official languages of Union of India.[8] However, a plurality of speakers in India speak Hindi or English. Till 1965, Articles 343 and 345 of the Constitution of India specified that the official language of India to be Hindi in Devanagari script, though states of India were free to adopt one or more local languages for all or any of the official purposes of that state.[9] Pursuant to agitations particularly in South India in the 60s, today all 22 languages carry official status and Government documents can be in any of the 22 recognized official languages. This has been clarified by court rulings as well, most recently in 2010 Gujarat High Court affirming equal role to all 22 languages.[10][11] India is a Common law country---therefore, unless overturned by the legislature or a higher court explicitly, the ruling in 2010 takes precedence and all 22 official languages are meant to be taken on equal footing. Currency notes in India typically carry the denomination in all languages as well.


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • মুজিব (১৯৮৬-৯২)

      তথ্য গুলো তূলে ধরার জন্য ধন্যবাদ। ইংলিশ হচ্ছে একমাত্র ভাষা যা ইন্ডিয়ার সব প্রদেশে চলে। হিন্দি/বাংলা/তামিল/তেলেগু এগুলোর কোনটাই সেখানে সার্বজনীন না। সেদেশে ইংলিশের কোন অফিসিয়াল স্ট্যাটাস যদি নাও থাকে তবুও সেটাই ওঁদের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা।
      আর সবচেয়ে বড় কথা হল, হিন্দিকে অন্য ২১ টা ভাষার মত একই মর্যাদা দেয়া হয়েছে, উপরে না। অর্থাৎ, আমার বক্তব্যকেই সমর্থন করছে। এখন অন্যান্য পয়েন্ট গুলো বিবেচনায় নিলে দেখতে পাচ্ছি যে, বাংলার মাধ্যমেই তাঁদের ভাষা সংশ্লিষ্ট আইডেন্টিটি প্রকাশ পায়। অন্য যে কোন ভাষা এক্ষেত্রে বাংলার চেয়ে অনেক অনেক পিছনে।


      গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

      জবাব দিন
      • জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)
        আর সবচেয়ে বড় কথা হল, হিন্দিকে অন্য ২১ টা ভাষার মত একই মর্যাদা দেয়া হয়েছে, উপরে না।

        মুজিব ভাই, বেয়াদবি নেবেন না, তবে আপনার কথার সাথে দ্বিমত প্রকাশ করছি। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী হিন্দিই ওদের প্রথম এবং প্রধান সরকারি ভাষা। ইংরেজি হল দ্বিতীয় সরকারি ভাষা। সুতরাং হিন্দিকে অবশ্যই অন্য ভাষার উপরে মর্যাদা দেয়া হয়েছে।

        PART XVII

        OFFICIAL LANGUAGE

        CHAPTER I.- LANGUAGE OF THE UNION

        343. Official language of the Union.
        (1) The official language of the Union shall be Hindi in Devanagari script. The form of numerals to be used for the official purposes of the Union shall be the international form of Indian numerals.

        অবশ্য রাজ্যগুলোকে পছন্দানুযায়ী সরকারি ভাষা নির্ধারনের স্বাধীনতাও দেয়া হয়েছে। ভারতে ২৯ টি রাজ্যের মধ্যে বিহার, ছত্রিশগড়, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, ঝাড়খন্ড, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরখণ্ডও উত্তর প্রদেশ অর্থাৎ ৯টির ই সরকারি ভাষা হিন্দি।

        অন্য দিকে মাত্র দু'টি প্রদেশের সরকারি ভাষা বাংলা - পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা (যৌথভাবে)। আসামেও বাংলা একটি রাজ্য পর্যায়ে স্বীকৃত ভাষা। অবশ্য শতকরা হিসেবে বাংলা অন্যান্য অনেক ভাষার চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে!

        মাত্র তিনটি প্রদেশের সরকারি ভাষা ইংরেজি - নাগাল্যান্ড, অরুনাচল প্রদেশ এবং মেঘালয়। তবে শতকরা হিসেবে ইংরেজি ভাষাভাষীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। (এখন মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০%)

        জনসংখ্যার দিক দিয়ে শতকরা ১৪.৫-২৪.৫ ভাগ আক্ষরিক অর্থেই হিন্দিতে কথা বলে। আর হিন্দি থেকে উদ্ভূত বা হিন্দি সমমনা অন্যান্য ভাষা হিসেব করলে সেটা হবে প্রায় ৪৫% এর কাছাকাছি। সুতরাং বড় ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠ্য না হলেও হিন্দি যে ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ভাষা- তাতে কোন সন্দেহ নেই।

        বিঃ দ্র; ১। সকল তথ্য উইকি থেকে প্রাপ্ত।
        ২। আলোচনার খাতিরে আলোচনা করছি- আশা করি কিছু মনে করবেন না... 😀 O:-)


        ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

        জবাব দিন
        • মুজিব (১৯৮৬-৯২)

          দ্বিমত পোষণ করলেই বেয়াদবী হবে - সব সময় এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। এটা এক ধরনের ঘরোয়া আলাপ আলোচনা। এখানে তথ্যের বিচ্যুতি থাকতে পারে, উপলদ্ধির সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, সংশয়ের অবকাশ থাকতে পারে। কাজেই অবধারিত ভাবে দ্বিমত ও আসবে। এটাই স্বাভাবিক। :clap:

          ভাষা গুলোর আপেক্ষিক মর্যাদার প্রশ্নে তুমি বোধ হয় অনেক আগেকার বিধি-বিধানের কথা বলছো। আমার অন্যান্য মন্তব্য গুলোতে হয়ত এর উত্তর পাবে।


          গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

          জবাব দিন
  6. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    মুজিব ভাই,
    ভারতের প্রথম সরকারি ভাষা হল হিন্দী এবং দ্বিতীয়টি হল ইংরেজি। ওদের সংবিধান অনুযায়ী 'জাতীয় ভাষা' ব্যবহারের নিয়ম নেই। রাজ্য পর্যায়ে ২২ টি ভাষার সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আছে। এদের মধ্যে একটি হল বাংলা! রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাংলার কোন খানা নেই! 🙁
    ভাষাভাষী'র হিসেব অনুযায়ী ওদের সিরিয়াল এরকম-
    ১। হিন্দী - ২৫৮-৪২২ মিলিয়ন
    ২। বাংলা - ৮৩ মিলিয়ন
    ৩। তেলেগু - ৭৪ মিলিয়ন
    ৪। মারাঠি - ৭২ মিলিয়ন
    ৫। উর্দু - ৭০ মিলিয়ন

    তাই, আবেগ অনুযায়ী আমরা বাংলার জন্য হাপিত্যেশ করলেও জনাব মোদি'র হিন্দীতে ভাষন দেয়াটা পুরোপুরিই যুক্তিযুক্ত!

    বাংলাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য (যেমন - জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি) যা করার আমাদেরই করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে একসময় হয়ত সমর্থন পাওয়া যাবে, তবে শুরুটা করতে হবে আমাদেরকেই।


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
    • মুজিব (১৯৮৬-৯২)

      "ভারতের প্রথম সরকারি ভাষা হল হিন্দী এবং দ্বিতীয়টি হল ইংরেজি। " - এই বক্তব্যের ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে। উপরে দেয়া রাজীবের ইংলিশে লেখা কমেন্টটা কিন্তু ভিন্ন কথা বলে।
      মাথা গুনে কি আর সব কিছু হয়? এত মানুষ হিন্দিতে কথা বলে অথচ সেই ভাষা থেকে জাতীয় সঙ্গীত বানানোর মত একটা গান পাওয়া গেলনা!
      আমি তো একেবারে সোজাসাপটা এবং ম্যাথম্যাটিকসের মতই কাঠখোট্টা কতগুলি যুক্তি তূলে ধরলাম। এর মধ্যে তুমি আবেগ কোথায় পেলে জুনায়েদ?
      জনাব মোদি'র হিন্দীতে ভাষন দেয়াটা আর্থ-রাজনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে হয়তো সঠিক, কিন্তু এটাকে কোনভাবেই যুক্তিযুক্ত বলতে পারছি না। What he did was probably "wise", but was not rational at all.

      বাংলাকে বিশ্বের দরবারে তূলে ধরার কাজ যতটুকু যা হয়েছে এখন পর্যন্ত তার প্রায় সবটুকুই আমাদের করা। হয়তো একদিন অন্যরাও যোগ দেবে।


      গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

      জবাব দিন
      • জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)
        "ভারতের প্রথম সরকারি ভাষা হল হিন্দী এবং দ্বিতীয়টি হল ইংরেজি। " - এই বক্তব্যের ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে। উপরে দেয়া রাজীবের ইংলিশে লেখা কমেন্টটা কিন্তু ভিন্ন কথা বলে।

        মুজিব ভাই, এতে সন্দেহের কিছু নেই। আপনার জন্য উইকির লিংক্টা দিলাম। আমার মনে হয়- এই আর্টিকেল এবং রেফারেন্স এর উপর একবার চোখ বুজালেই আপনার সন্দেহ দূর হবে।

        মাথা গুনে কি আর সব কিছু হয়? এত মানুষ হিন্দিতে কথা বলে অথচ সেই ভাষা থেকে জাতীয় সঙ্গীত বানানোর মত একটা গান পাওয়া গেলনা!

        রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ে ভাল কেউ জাতীয় সঙ্গীত লিখতে পারতেন না বলেই ওরা তাঁর লেখা কবিতাটা জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করেছে। তাছাড়া ওরা কিন্তু বাংলা ভার্শন নয়, বরং কবিতাটার হিন্দি ভার্শন নির্বাচন করেছে। সবচেয়ে বড় - কথা বাংলা তো ভারতের কাছে বিদেশি কোন ভাষা নয়, বরং ওদের কয়েকটি প্রদেশের সরকারি ভাষাও। সুতরাং বাংলা বা বাংলা হতে হিন্দিতে অনুবাদকৃত (ক্যাপ্টেন আবিদ আলী নামের একজন ভারতীয় সেনা অফিসার অনুবাদ করেছিলেন) কবিতা জাতীয় সঙ্গীত হতে বাঁধা কোথায়?


        ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

        জবাব দিন
        • মুজিব (১৯৮৬-৯২)

          আমি আমার পারসেপশান থেকে কথাগুলি লিখেছি, তাই চট করে অথেনটিক রেফারেন্স কিংবা সংবিধানের ধারা উল্লেখ করতে পারবো না। আর উইকিপেডিয়ার তথ্যকেও কোথাও অথেনটিক রেফারেন্স হিসাবে বিবেচনা করা হয় না, সেখানকার তথ্যগুলোও এক ধরনের পারসেপশান এর পর্যায়ে পরে।
          "today all 22 languages carry official status and Government documents can be in any of the 22 recognized official languages. This has been clarified by court rulings as well, most recently in 2010 Gujarat High Court affirming equal role to all 22 languages.[10][11] India is a Common law country---therefore, unless overturned by the legislature or a higher court explicitly, the ruling in 2010 takes precedence and all 22 official languages are meant to be taken on equal footing" - রাজীবের দেয়া এই তথ্য কে যদি সঠিক ধরে নেই তাহলে মানতে হবে যে, ৬০ এর দশকের এবং তার আগের পরিস্থিতি এখন আর নেই। আর যেখানে "all 22 official languages are meant to be taken on equal footing." সেখানে রবীন্দ্রনাথের বাংলা গানকে হিন্দিতে অনুবাদ করে সেটাকে জাতীয় সঙ্গীত বানানোটাও যুক্তি সঙ্গত নয়। যে সূত্র ধরে ডাক্কা থেকে ঢাকা, ক্যালকাটা থেকে কলিকাতা, বম্বে থেকে মুম্বাই হয়েছে সেই একই সূত্র ধরে তাঁদের জাতীয় সঙ্গীত হিন্দি ( টানে উচ্চারণ করা ) থেকে বাংলায় আসা উচিৎ।
          সে যাই হোক, একটা ভিন্ন দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে উপদেশ দেবার আমি কাউ নই। তাঁদের সংবিধান নিয়ে গবেষণাতেও আমার আগ্রহ নেই। এ নিয়ে টানতে থাকলে কখনওই শেষ হবে না, তাছাড়া মুল বক্তব্য থেকে অনেক দুরের প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি। তাই এখানেই থামতে চাচ্ছি।
          তোমার মতামতের জন্য ধন্যবাদ। 🙂


          গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

          জবাব দিন
  7. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    ভাষা নিয়ে যখন কথা হচ্ছে একটু ভাষা বিষয়ক সাইড লাইনে আসি।

    ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাঃ শব্দ (বাক্য নয় কিন্তু) চিন্তা করলে আমার কাছে মনে হয়েছে ভাষাগত সামঞ্জস্যে আমরা হিন্দীর চাইতে নেপালের কাছাকাছি বেশী। নেপাল বলতে উত্তর ও মধ্য নেপাল। দক্ষিণেররা আবার উলটপালট।

    সবচাইতে অবাক করেছে যেটা তেলেগু ভাষাভাষীরা বেশ কিছু শব্দ ব্যবহার করে (এই মূহুর্তে মনে পড়ছে না) যেগুলো হিন্দী স্কিপ করে সরাসরি বাঙলায়। উপমহাদেশের ভাষার বিবর্তনের ইতিহাস মনে হয় একটু পড়ে দেখা দরকার। কারো কোন রিডিং সাজেশান আছে?


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  8. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই।
    ভারত স্বাধীন হইছে ৪৭ এ।
    জাতীয় সঙ্গীত নির্ধারণ হইছে ৫০ এ।
    দেশ স্বাধীন হইছে মাগার মাউন্টব্যাটেন রে রাইখা দিছিলো প্রধান কইরা।

    পাকিস্থান স্বাধীন হৈছে ৪৭ এ।
    যতদূর জানি ৭১ এর মধ্যে পাকিস্থানের কোন সংবিধান ছিলো না।

    আর আমার বাঙলাদেশ।
    ঐদিন ও আমার এক পলিটিশিয়ান তালেবর আত্মীয় বলতেছিলো ৭০ এর ইলেকশনে আওয়ামীলীগের ম্যান্ডেটে ধর্ম নিরপেক্ষতা ছিলো না।
    কথা সত্য, ছিলো না।
    কিন্তু ঐ ধর্ম নিরপেক্ষতা অর্জিত হইছিলো নয় মাস যুদ্ধের মধ্য দিয়া।

    আমার বাঙলাদেশে আজ ইসলামের হাওয়া বয়।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।