জ্ঞান দিতে পয়সা লাগে না

কিছু মানুষ আছেন যাঁরা সুযোগ পেলেই উদার হস্তে জ্ঞানদান করতে মেতে ওঠেন, তা সে ব্যাপারে তাঁর জ্ঞানের দৌড় যত সীমিতই হোক না কেন। জ্ঞান দিতে তো পয়সা লাগে না, জ্ঞান থাকাও লাগে না! আমি এঁদেরকে খুব যত্ন সহকারে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। তারপরেও মাঝে মাঝে এঁদের খপ্পরে পরতে হয়। যেমন সেদিন, সন্ধ্যায় ব্যাডমিন্টন খেলার পরে আড্ডার মাঝে কথায় কথায় সাঁতার কাটার প্রসঙ্গ এল। আমি বললাম যে, আমি ওলভারটন পুলের মেম্বার, প্রায় প্রতিদিনই অফিসের পরে সেখানে যাই সাঁতার কাটতে। কথা শেষ না হতেই পাশ থেকে একজন বলে বসলেন, ব্লেচলীর পুলটা তো বেশীভালো, ওখানে যান না?

আমিঃ না ভাই, ওলভারটনের পুলটা আমার অফিস থেকে একেবারে কাছে, সাড়ে তিন মিনিটের ড্রাইভিং … সে তুলনায় ব্লেচলী একটু দূরে হয়ে যায় –

তিনিঃ না না ব্লেচলীর পুলটা ভালো তো, … নতুন পুল। ওলভারটনেরটা তো অনেক পুরানো …

আমিঃ না ভাই, ওলভারটনের পুরো কমপ্লেক্সটা সম্পূর্ণ রেনোভেট করে নতুন বিল্ডিংএ পুলটা করেছে, এই তো গতবছরই নতুন করে চালু করল। তাছাড়া ওটা আমার অফিসের খুবই কাছে –

তিনিঃ ওহ, তাই নাকি, আচ্ছা … কিন্তু ব্লেচলীর পুলটা তো অনেক বড় …

আমিঃ হতে পারে, আমি দেখিনি তো, তাই বলতে পারছিনা – আপনি কি দুটা পুলই দেখেছেন?

তিনিঃ না না, দেখিনি। কিন্তু ব্লেচলীর পুলটাই বড় – অনেক বড়। ওখানে সাঁতার কাটা বেশী ভালো …

আমিঃ হুমম, হতে পারে, কিন্তু পুল বড় না ছোট সেটা তো খুব গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যাপার না। আসল ব্যাপার হল আমি কতক্ষন কিংবা কত মিটার সাঁতার কাটছি সেটা।

তিনিঃ না না, ব্লেচলীর পুলটা বড়না! ওখানে সাঁতার কাটা বেশী ভালো …

আমিঃ ওফফ্‌ … আপনার সেরকম মনে হয় বুঝি? তা আপনি প্রতি দফায় মোট কত মিটার করে সাঁতার কাটেন?

তিনিঃ না না, … ইয়ে … মানে আমি তো যাইনা … মানে আমি তো সাঁতারই জানিনা …

আমি বাক্‌রুদ্ধ (বা ক্রুদ্ধ) …

১,৭২৮ বার দেখা হয়েছে

১৯ টি মন্তব্য : “জ্ঞান দিতে পয়সা লাগে না”

    • মুজিব (১৯৮৬-৯২)

      যদি আপনার (সিনিয়র না জুনিয়র বুঝতে পারছি না, সেফ সাইডে থাকাই উত্তম পন্থা) মাঝে এটা থেকেও থাকে তবুও আপনি ঠিক লাইনেই আছেন। সমস্যাকে অনুধাবন করতে পারা মানেই সমাধানের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু আমার এই ভদ্রলোক সেটা মোটেও অনুধাবন করেন না এবং সমানে এরকমটি চালিয়ে যাচ্ছেন!


      গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

      জবাব দিন
  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    বাঙালদের এই জ্ঞান দেবার বা জাহির করার বিষয়টা আমার খুব ভালো লাগে।

    ধরেন আপনি বললেন, আমার মেয়েটা ১২ মাস থেকে হাটে।
    সাথে সাথে কেউ বলবে, আমার ভাইএর ছেলেটা তো ১০ মাস থেকে হাটে।
    আরেকজন বলবে, আমার ছোট বোনের মেয়ে নয় মাস থেকে।

    আমি এইটা খুব ইনজয় করি।
    কতোটা মানসিক ভাবে দীন হইলে মানুষ এইসব করতে পারে ভাবি আর হাসি।
    অবশ্য সত্যি এই যে এদের কারণে জীবন আনন্দময়। (সম্পাদিত)


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • মুজিব (১৯৮৬-৯২)

      হাহ হাহ হা আ আ ... জ্ঞানী চিনতে বিশেষ গুঢ় জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। 😉
      আমার অনেক আছে, কিন্তু সেই জ্ঞানের ভাগ তোমাকে দেবোনা, পাছে যদি আমার জ্ঞান ফুরিয়ে যায়!


      গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।

      জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    এইসব জ্ঞানীদের অত্যাচারে অতিষ্ট, আপনার কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন থেকে এদের উপভোগ করার চেষ্টা করবো 😛


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    চারিদিকে শুধু মহাজ্ঞানী মহাজন! আপনার মত উপভোগ করতে পারলে কত সুখে থাকতাম! 😕


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মুজিব (১৯৮৬-৯২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।