বৃহস্পতিবার ও স্পেশাল ডিনার নিয়ে কিছু কথা

” Q :- Gentlemen do you know what is the best recreation?

Ans:- Food”

– Maj Anwar (15 intake CCR)

উক্তিটা আর্টিলারী সেন্টার এ বেসিক কোর্স করার সময় শুনেছিলাম । পরে ভেবে দেখলাম স্যার মন্দ বলেন নি । কথাটা সামরিক জীবনের সাথে মিলে যায় । এবার ক্যাডেট জীবনের সাথে একটু মিলিয়ে দেখি । আমাদের ক্যাডেটদের ৬ বছরের জীবনের সেই ছোট গন্ডির ভিতরে আমাদের বিনোদনের জন্য অনেক ব্যাবস্হাই ছিল । যেমন : খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, পিকনিক …………. । কিন্তু ভোজন যে একটা বিনোদন তা কি আমরা ভেবে দেখেছি?

বি এম এ তে থাকার সময় দোয়া করতাম কখনও যেন বৃহস্পতিবার দিনটা না আসে । আর কলেজে অপেক্ষায় থাকতাম ঐ দিনটার জন্য । কারণ সেদিন ছিল ঈদের দিন । প্রথমত vcp show, আর দ্বিতীয়টি ছিল স্পেশাল ডিনার ।

আমার গাইড সিরাজী ভাই খুব ঠান্ডা মানুষ ছিলেন । সেজন্য গাইডের তরফ থেকে punishment একটু কমই খেয়েছিলাম । কিন্তু প্রতমবার যে কারণে খেয়েছিলাম তা হলো স্পেশাল ডিনার এ কম খাওয়া । এরপর আর কোনদিন আর এ কারণে punishment খেতে হয়নি । বরং আমি স্পেশাল ডিনারকে আবিষ্কার করেছি তার নতুন সৌন্দর্য, উপভোগ করেছি তার প্রতিটি অংশ । সেই রূপ (স্বাদ) আজও খুজে পাইনি কোথাও । তাকে নিয়ে কত স্মৃতি।

সবাই চাইত রইস স্যার যেন বৃহ : বার NDM না হয় । VCP Show এবং স্পেশাল ডিনার ২টাই তাহরে মাটি । স্পেশাল ডিনার এ ঢুকার আগেই ডিউটি ক্যাডেটকে তিনি বলে দিতেন ” আজকে যদি দেখি তুমি পুডিং নিয়ে ছুটাছুটি করছ, তাহলে খাকী পোষাক খুলে ওয়েটারের ড্রেস পড়িয়ে দিব । বুঝতে পেড়েছ ???? ” উনি আবার খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেখতেন কেউ পুডিং চালাচালি করছে কি না । সবাই উনাকে ভয় পেত । কারণ, তার হাতের যে থাবা । Oh my God!!!!!!!!!

১১ এ থাকতে একবার ডিউটি কাডেট হলাম বৃহ: বার । আমার খুশি কে দেখে ??? যথারীতি আগে আগে ডাইনিং হলে চলে গেলাম স্পেশাল ডিনার কে একান্ত নিজের মত করে নিভৃতে উপভোগ করার জন্য । ডাইনিং হলে গিয়ে দেখি আবুল ভাই । মনটাই খারাপ হয়ে গেল । কারণ উনি একটু কেমন জানি । তবুও গেলাম ॥ ও মা এ যে দেখি অন্য এক আবুল ভাই । বলে কি না ” ডিউটি ক্যাডেট ভাইয়া আসেন । এত দেরী করলেন যে ? বৃহ: বার তো আরও আগে আসে ডিউটি ক্যাডেটরা । যাই হোক বলেন কি খাবেন?” আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । এটা কি আবুল ভাই ? পরে বুঝতে পেরেছিলাম মানুষটা আসলে ভাল । উনার কাছে নরম গরায় কিছু চাইলে তিনি মেস ও আই সি-র সাথে যুদ্দ করে হলেও তা এনে দিবেন ।

১২ এ থাকার সময় ১ম হাই টেবিল এ পেলাম আয়তাল ভাইকে । মাটির মানুষ একটা ॥ তার কাছে চেয়ে কিছু পাইনি এ রকম কিছু মনে পড়ে না । একবার স্পেশাল ডিনার এ ৪র্থ বাটি খাসির মাংস চাইলাম একটু নৈরাশ্য এবং ভরসার দৃষ্টি নিয়ে ॥ তিনি এক অমায়িক হাসি উপহার দিয়ে বললেন ” ভাইয়া আজকে তো আর নাই” । আমি বললাম থাক তাহলে । যদিও মনটা একটু খারাপ হলো । কিন্তু তিনি ঠিকই ধরে ফেললেন । ২ মিনিট পর কোথা থেকে যেন ২ বাটি মাংস নিয়ে হাজির  । আর বললেন আপনারা (ক্যাডেটরা) চাইলে কি না করতে পারি? আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । উনি এটা দেখে বললেন তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলেন ও আই সি আসতাছে ।

কলেজে ক্যাডেটদের মধ্যে বাজি চলত । বাজির হার জয়ের ফলাফল থাকত পুডিং নয়ত খাসীর মাংস । তাই এদের জন্য বৃহ: বার টা একটা বিশেষ দিন ছিল ।

১২ এ থাকতে আমরা প্রায়ই টিফিন বক্স নিয়ে যেতাম । ডাইনিং হলে তো উদর পূর্তি হতোই তারপর আমরা আবার একটা লেইট নাইট ডিনার করতাম হাউসে । আর উপকরণ যোগাতেন আমাদের আয়তাল ভাইয়েরা । আর সেই লেইট নাইট ডিনার এরও কঠিন এক আয়োজন । মাটিতে পেপার বিছিয়ে যার যার সন্ঞিত সম্পদ সেখানে যোগ করে গড়ে তোলা হতো এক বিশার food hill. এর মাঝে আবার একদল থাকত nonখাসি । তারা আমাদের food hill এ মুরগী দিত । ফলে সেই মুরগি যেত খাসী পার্টির পেটৈ । কিছু না পেয়ে নন খাসী পার্টিকে সেই খাষী খেতেই হতো ।

আর এভাবেই লেইট নাইট ডিনার শেষে আমরা বৃহস্পতিবার কে বিদায় জানানোর জন্য স্বিয় বিছানায় নিদ্রা দেবীকে আলিঙ্গন করতাম । আর অপেক্ষায় থাকতাম আর একটি বৃহস্পতিবার/একটি বিনোদনমুখর দিন/একটি স্পেশাল ডিনার এর । খুব মনে পড়ে সেইসব দিনগুলো ও মানুষগুলোর কথা ।

৩,০০৫ বার দেখা হয়েছে

৩৭ টি মন্তব্য : “বৃহস্পতিবার ও স্পেশাল ডিনার নিয়ে কিছু কথা”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    বৃহঃস্পতিবারের এমনকি পিটি করতেও খারাপ লাগত না...
    DDP বা অন্য কোন স্টেজ প্রোগ্রাম থাকলে অবশ্য মেজাজটা একটু গরম হইত...
    তা পোশাইয়া দিতাম ধুমায়া গেমস কইরা...
    প্রেয়ারের পর টিভি রুম...তারপর ইমপ্রুভ ডিনার!!!!
    আহা!! :(( :((
    মাসে ৭০/৮০ টা বৃহঃস্পতিবার হইল না কেন :bash: ....


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    কবীর ভাই, নন-গাছ গুলা কেমন অলস আর ফাঁকিবাজ দেখসেন?এত দুর্দান্ত একটা লিখায় খালি আপনে বট গাছ আর আমি টাআল গাছ এই দুই জন মাত্র কমেন্ট দিছি... 😀

    জবাব দিন
  3. বাহলুল (৯৩-৯৯)

    কলেজে পানিশমেন্টে অনেক সিনিয়র ভাই বেশি করে খাওয়াইত। ক্লাস সেভেনে আমি একেবারেই খাইতে পারতাম না। তাই জোর করে বেশি পরাটা বা ব্রেড খাওয়ানোটা আমার অনেক বড় পানিশমেন্ট মনে হত।

    জবাব দিন
  4. তারেক (৯৪ - ০০)

    স্পেশাল ডিনারের বর্ণনা অতি সুস্বাদু হয়েছে, মনে হচ্ছে এখুনি ডাইনিং হলে ছুটে যাই! 😀
    *
    রইস স্যার মানে কি আবু মুহম্মদ রইস? তাহলে এনার হাতের থাবার মাপ "সৌভাগ্যবশত" আমারও জানা আছে! 😕 ভীতিকরই বটে! 😐


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন
  5. জিহাদ (৯৯-০৫)

    কলেজের কথা ভাবতে গেলে আমার সবার আগে বৃহস্পতিবারের কথা মনে হয়। আর বৃহস্পতিবারের কথা ভাবতে গেলে খালি স্পেশাল ডিনারের কথা মনে হয়। :((


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  6. আর কাবাব, ওইটার কথা বল্লা না, নাকি পড়ে আর মজা হইত না।

    আমরা তো ছুটিতে এসেও বাজি ধরতাম কাবাব, যে হারত, কলেজে পয়লা ডিনারে কাবাব দিতে হইত তারে।

    আয়তাল ভাই, আবুল ভাই এখনও আছে! আর বাচ্চু ভাই, আমাদের পোষ্ট মাষ্টার কাম পিওন?

    জবাব দিন
  7. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    আমাদের এক ক্লাসমেট একবার আইসক্রীম বক্সে করে পোলাও নিয়ে আসার চেষ্টা করলে সেটাকে ডাইনিং হল ওআইসি খাবার শর্ট ফেলানোর অপচেষ্টা হিসেবে রিপোর্ট করে দিয়েছিলেন। ঠিক তার পরপরই প্যারেন্টস ডে তে আঙ্কেল (তখন তিনি কোন এক জেলার এসপি) আসলে আমরা বলেছিলাম 'পোলাও চুরির জন্য অথোরিটি পুলিশ ডাকছে'।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  8. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    মুহিব,
    দিলা তো মেজাজটা গরম কইরা...। এই মেজাজ এখন পোলাও না খাওয়া পর্যন্ত ঠান্ডা হইবোনা...।
    আহারে...কই পাই সেই পোলাও, কাবাব, চিকেন, সালাদ, কাস্টার্ড/পুডিং... মুখটা পানি ভর্তি হইয়া গেল...

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মুহিব (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।