চিঠি সমাচার

বহুদিন পর ইদানিং ব্লগে ঢুকা হচ্ছে। ব্লগে ঢুকে কিছু নবীন লেখকের লেখা পড়ে খুব মজা পাচ্ছি। মনে পড়ছে ১/২ বছর আগের কথা। তখন সারাদিন ব্লগেই পড়ে থাকতাম। এ যেন এক নিত্য updated গল্পের বই। যাই হোক তখন সকলকে দেখে মনে হয় আমিও ২/১ টা ব্লগ লিখেছিলাম। আজকে মনে হচ্ছে কিছু একটা লিখি। কিন্তু কি লিখব তাই নিয়ে ভাবছিলাম অনেক্ষন ধরে। হঠাত মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে কেন জানি না হলুদ রঙের খামের কথা মনে পড়ে গেল। কোথায় মোবাইল আর কোথায় খাম তাই না? কিন্তু এদের একটা লিংক আছে। এই যন্ত্রটির কারণে আজকাল হলুদ রঙের খামটা একেবারে অকেজোই হয়ে পড়েছে। আর এই ছোট্ট একটা লিংক মনে করিয়ে দিলো অনেক অনেক স্মৃতি।

কলেজে প্রতি সপ্তাহেই বাসায় চিঠি লিখতে হত। ৭,৮ এ খুব বাধ্য ছেলের মতই চিঠি লিখতাম। বাবা মার সাথে যোগাযোগ করার এই এক মাধ্যম। আম্মু প্রতি বৃহস্পতিবার জানালায় দাঁড়িয়ে থাকত চিঠির অপেক্ষায়। এই দুখী মহিলাকে একটু আনন্দ দেয়ার জন্য হলেও আমাকে চিঠি লিখতে হত। এক সপ্তাহে চিঠি না লিখলে বাসায় নেমে আসত এক আসীম নীরবতা। আমি অবশ্য এসব খবর পেতাম আমার পিচ্চি বোনের কাছে। ৯৮ সালে সবকিছু ওলট পালট করে আমার ছোট বোনটাও চলে গেল ক্যাডেট কলেজে। এইবার আম্মুর শুরু হল রবিবারেও অপেক্ষার পালা। যাইহোক পরের দিকে অবশ্য আমি একই চিঠি ১০/১৫ কপি করে রাখতাম। চিঠির ভাষা হুবুহু একই। কোন নতুন কিছু থাকলে সেখানে সেটা জুড়ে দিতাম। তবে ৯৮ সালের পর থেকে MGCC তে আমার বোনের কাছেও অনেক আগ্রহ নিয়ে চিঠি লিখতাম। সেখানের চিঠীর কাগজ এবং হাতের লিখার প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হত। কারণটা যে কি সেটা আসলে……

MGCC র চিঠির ব্যাপারে প্রথম দিকে প্রায়ই হাউস অফিসে যেতে হত কৈফিয়ত দিতে। আমি অবশ্য এতে বিরক্ত হতাম না। মজাই লাগত স্যারদের ফালতু প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে। নিজেদেরকে কেন জানি শার্লক হোমস ভাবা শুরু করত। কি জানি একটা পাইছে। ” কি ব্যাপার তুমি MGCC তে কার কাছে চিঠি লিখ? সে কি আসলেই তোমার বোন/ কি রকম বোন? তোমার আব্বু আম্মুকে কিন্তু Parents’ Day তে জিজ্ঞাস করব?……………” যাই হোক একসময় স্যাররা মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে গেল। শার্লকীয় চাহনিটা অন্তত বন্ধ হল।

বিপত্তিটা ঘটল আমি যখন ১০ম শ্রেণিতে পড়ি। আসলে ব্যাপারটা বিপত্তি না। আমাদের কলেজ প্রিফেক্ট আখতার ভাই একদিন নাইট প্রেপের পর আমাকে কমন রুমের সামনে অন্ধকারে ডাকলেন। আমি একটু অবাক হইলাম। আমাকে ……… কি ব্যাপার? যাই হোক আখতার ভাই খুব মজার মানুষ এবং খুব পরোপকারী টাইপ। তাই ভয় পাচ্ছিলাম না আর কি। অন্ধকারের মধ্যে আখতার ভাই অত্যন্ত নীচু গলায় বলল ” কি রে তুই এই বয়সেই প্রেম করিস !!!! তাও আবার MGCC র সাথে।” আমি তো ভাবলাম এতদিনে মনে হয় প্রেম দেবতা আমার দিকে চোখ তুলে তাকাইছে। আমি একটু লজ্জা পেয়ে বললাম কি যে বলেন ভাই। আমাকে দেখলে কি সেরকম মনে হয়??????? উনি দেখি তখন সেই শার্লকীয় হাসিটা দেচ্ছেন। আর আমার ঘোর কাটল। মনে পড়ল আমার বোনের কথা। হঠাত করে শুনলাম উনি আবার নীচু গলায় বলছেন ” ক্যাডেট শারমিন, ১০৭১ এটা কে?”। আমি তখন স্বপ্নের পৃথিবী থেকে ফিরে এস বললাম ” ভাই এটা তো আমার ছোট বোন।” উনি যারপরনাই হতাশ হয়ে বললেন “কি বল? আমি আরও কত কসরত করে তোমার জন্য চিঠিটা পাচার করলাম হাউস মাষ্টারের সামনে থেকে !!!! যাই হোক কোন সহায়তা লাগলে উনাকে জানাতে বললেন এইসব ব্যাপারে। কিন্তু ভাইয়ের কাছে যাওয়া হয়নাই কোনদিন।

এবার একটু অন্যরকম চিঠীয় ব্যাপার নিয়ে বলি। আপনারা একজন প্রেমিক-প্রেমিকার প্রতি সপ্তাহে চিঠি চালাচালি কি দেখেছেন? দেখেই যদি থাকেন সেটা কত পৃষ্ঠার চিঠি হতে পারে বলুন তো? এরকম আমিও ১২ এ টেষ্ট পরীক্ষার আগে হাউস অফিসে গেলাম লাঞ্চের পর। হাউস বেয়ারা ১২ এর বিশেষ চিঠিগুলো আলাদা করে আগেই দিয়ে দিত। সেদিন চিঠির মালিক না থাকায় আমাকে দিল পৌছে দেবার জন্য। আমি মোটামুতী এক বিশাল মোটা খামে বন্দী জমির দলিল টাইপ জিনিস নিয়ে প্রাপক এর কাছে গেলাম। ভাবলাম হয়ত কোন বিষয়ের নোট হবে, সামনে টেষ্ট পরীক্ষা। কোনভাবেই ভাবিনি এটা যে একটা চিঠী হতে পারে। বিকালে নামাযের আগে প্রাপককে জিগাইলাম দোস্ত ঐটা কিসের নোট? ও একটু মিশ্র হাসি দিয়ে বলল এটা নোট হবে কেন? এটাতো চিঠি। আমি কোনভাবেই বিশ্বাস করলাম না। ইভিনিং প্রেপে যাবার আগে সে আমাকে দেখাল চিঠিটা। খুব সুন্দর হাতের লিখায় ৫২ পৃষ্ঠার একটা সুন্দর চিঠি। আমি সেদিন খুব অবাক হয়েছিলাম সেই বড় চিঠিটা দেখে। আরও অবাক হয়েছিলাম এই শুনে যে এটা নাকি খুব বড় কোন চিঠি না। এটা মাঝারী আকারের একটা চিঠি। তবে আর জিজ্ঞেস করার সাহস হয়নি বড় চিঠিগুলো কত পৃষ্ঠার।

বর্তমানে মোবাইল থাকলেও আমি বিয়ে ঠিক হবার পর আমার বঊকে শখ করে বিয়ের আগে একটা চিঠি লিখেছিলাম। অবশ্য বউ তার আগে আমাকে একটা লিখেছিল। সেটা আমার কাছে লিখা আমার বউ এর এ পর্যন্ত প্রথম এবং শেষ চিঠি। জানি না আবার কোনদিন লিখা হবে কি না একে অপরকে। তবে সেই চিঠিটা আজও আমি যত্ন করে রেখে দিয়েছি। কারণ এতে শুধু একটা কথাই ৭৩ বার লিখা আছে। ধারণা করুনতো কি সেটা………

অনেকেই হয়ত অনেক কিছু ভেবেছেন। আসলে কথাটা ছিলঃ I HATE YOU.

১,৫৪৫ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “চিঠি সমাচার”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ৭৩ বার 😮 ভাবীকে আমার সালাম পৌছায় দিস, ওনার ধৈর্য্য আছে।

    চিঠি লেখা কখনোই আমার জন্য আনন্দদায়ক ছিল না, কলেজে বাধ্য হয়ে লিখতে গিয়ে এক লাইনের চিঠিও লিখেছি। তবে চিঠি পেতে খারাপ লাগে নি কখনোই। বউ এর কাছ থেকে দারুন এক সারপ্রাইজ পেয়েছিলাম একবার চিঠি পেয়ে, তাও প্রায় দুবছর আগে, কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই চিঠির কোন উত্তর দেয়া হয়নি আর এটা আমি কতটা আনরোমান্টিক তার প্রমান হিসেবে প্রায়ই আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয় 🙁


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।