ছেড়া ছেড়া কথা

খুবই ইচ্ছা ছিলো একখানা পিরিত করার। যখন দেখতাম হাউস বেয়ারা ব্যাচমেটদেরকে গোপনে হলুদ খামের চিঠি দিয়ে চলে যাচ্ছে তখন মনে হতো আহা রে ওদের কত সুখ!!!!!!!!! তখন নিযেকে খুব দুর্ভাগ্যবান মনে হতো। তাই দুধের সাধ ঘোলে মিটানোর জন্য তখন সেই প্রেমিক বন্ধুদের গল্প শুনতাম। ওরাও গর্বিত পুরুষদের মত একটা ভাব নিয়ে বলতো ” আরে দোস্তো, এগুলা তো ওয়ান-টু এর ব্যাপার। কতজন এলো গেলো। সাহস করে একবার প্রোপোজ করেই দেখ না।” যা হোক সেই সাহস টুকু কেন জানি কখনো হয় নি। তবে এখন মনে হয় না হয়ে ভালই হয়েছে।

মুঠো ফোনের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আর চিঠি লিখতে দেখি না কাউকে। জানি না ক্যাডেট কলেজগুলোর কি অবস্থা? তবে যতটুকু মনে হয় বর্তমান সময়ের ক্যাডেটদের কাছে অবশ্যই মোবাইল ফোন থাকে। সবার কাছে না থাকলেও ২০% ক্যাডেটের কাছে তো থাকা উচিত। কলেজে চুরি করে চিঠি বের করে এনে চিঠি পড়ার সেই সব কথা মনে হলে একটা ঘটনা আজও মনে হয়। ঘটনাটা হলো, আমাদের জাহাঙ্গীর সেই ছোট্টবেলা থেকে যার প্রেম তার কাছে প্রায় প্রতিদিনই চিঠি আসতো। যাহোক আমরা তখন ১২ এ। একদিন দুপুর বেলা হাউস অফিস থেকে চিঠি আনতে গিয়ে দেখি জাহাঙ্গীর এর নামে একটা খয়েরী রঙ এর খাম এসেছে। দেখে ঠিক বুঝতে পারছিলাম না এটা কি। অনেক ভেবে বের করলাম সামনে যেহেতু প্রি টেষ্ট পরীক্ষা এটা মনে হয় কনো নোট হতে পারে। যা হোক জাহাঙ্গীর কে পৌছে দিলাম। বিকাল বেলা প্রেপে যাবার সময় জিজ্ঞাসা করলাম খামটার ব্যাপারে। ও তখন যে উত্তরটা দিলো তাতে আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। ও বলেছিলো ওটা নাকি ৫৬ পৃষ্ঠার এক প্রেম পত্র।!!!!!!!!!!!!!!!!!! আমি খুব অবাক হয়ে বললাম এটা কি করে সম্ভব? সে তখন বলেছিলো দোস্ত আমার কাছে ৭৫ পৃষ্ঠার চিঠিও আছে। তখন অনেক চিন্তা করেও মিলাতে পারি নি। কি থাকতে পারে এর ভিতর। ওকে একবার কৌতুহল বশত জিজ্ঞেস করেছিলাম দোস্ত কি লিখছে এত পাতা জুড়ে। ও তখন একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলেছিলো,” বুঝবা মামা একবার পিরিত হয়ে নিক, পরে বুঝবা”। যাই হোক ওর এমন উত্তর শুনে আবারও…………

যাই হোক কলেজ থেকে বের হবার পর বি এম এ তে গিয়ে বাসায় কিছু চিঠি লিখা হয়েছিলো। ততদিনে মোবাইল ফোনের প্রচলন শুরু হয়ে গেছে। তখন শুনতাম সেই চিথি লিখা বন্ধুরা নাকি আর চিথি লিখে না। ওরা এখন মোবাইলে কথা বলে। তা কতক্ষন কথা বলিশ? আরে দোস্ত সারা রাত তো বলিই, দিনের বিভিন্ন সময় তো কথা হয়ই। আবারও অবাক হবার পালা। সারা রাত কি কথা বলে? হঠাত ২/১ দিন হতে পারে। কিন্তু প্রতিরাতে কথা বলে সারা রাত কি ভাবে পার করা সম্ভব? আমার কলেজের ৩ বছরের রুমমেট যে কি না আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ, ওর প্রেম হলো কলেজ থেকে বের হবার পর। তখন ওকে জিজ্ঞাসা করলাম দোস্ত তুই আমাকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দে। সে বললো , আরে দোস্ত দেখবি এমনেই কত কথা বের হচ্ছে। আর ক্যাডেট কলেজের পোলাপাইনের আবার গল্প করতে আবার টপিক লাগে না কি? ও বললো আর কোনো কিছু না পাইলে কলেজের গপ্প শুরু কইরা দিবি। দেখবি তোর কথা শেষ আর হচ্ছে না। যাই হোক মোটামুটি একটা সন্তোষজনক উত্তর পেলাম।

এরপর এ ব্যাপারে আর তেমন ভাবা হয় নি। ২/৩ বছর পর যখন নিজেই এরকম একটা সম্পর্কের ভিতর জড়িয়ে পড়লাম তখন আমিও দেখলাম আমিও একই কাজ করছি। রাত্রি শেষ হয়ে যায় কিন্তু কথা তো শেষ হয় না। মাঝে মাঝে চিন্তা করি কি কথা বলি? নিজেও তখন অবাক হই । আমার সেই জন এক্স ক্যাডেট না বলে আমি ক্যাডেট কলেজের কথা কখনও বলি নি। কারন, কলেজে পড়া অবস্থায় যখন ছুটিতে আসতাম তখন কয়েকজন ক্যাডেট একসাথে হ্যে গেলে বাইরের বন্ধুরা আমাদের কথা শুনে চুপচাপ বসে থাকতো। একদিন তো একজন বলে ফেললো ক্যাডেট কলেজের পোলাপাইনের লগে গপ্প কইরা মজা নাই। ওরা খালি কলেজের গপ্প করে। একদিন ২/১ টা মজার ঘটনা বলেছিলাম কথা প্রসঙ্গে। ও মা, সে কি কান্ড!!!!!!!!! সে দেখি হাসতে হাসতে…… বলেছিলো তোমরা কলেজে খুব মজার সময় পার করেছো। আমাদের বাইরের কলেজগুলোতেও আমরা মজা করেছি কিন্তু ক্যাডেট কলেজের গুলো একটু অন্য রকম। এসব ঘটনা বাইরে কখনও শোনা যায় না। প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি, আগে সে ক্যাডেট কলেজ এবং সেনাবাহিনী ২ কেই বাকা চোখে দেখতো। কিন্তু এখন নাকি তার ক্যাডেট কলেজকে খুব ভালো এবং মজার জায়গা মনে হয়। আর সেনাবাহিনীকে নিয়ে কেউ কিছু বললে সে প্রতিবাদ করে না। তবে তার কাছে নাকি মনে হয় মানুষ না জেনে সেনাবাহিনীর ব্যাপারে মন্তব্য করে। সে ক্যাডেট কলেজে যেতে খুব আগ্রহী। আমি বুঝতে পারি ধীরে ধীরে সে হয়ত মনে মনে কিছুটা ক্যাডেট হয়ে উঠছে। ভালো লাগে তখন খুব ভালো লাগে।

২,৫০৭ বার দেখা হয়েছে

৩২ টি মন্তব্য : “ছেড়া ছেড়া কথা”

  1. রকিব (০১-০৭)
    যখন দেখতাম হাউস বেয়ারা ব্যাচমেটদেরকে গোপনে হলুদ খামের চিঠি দিয়ে চলে যাচ্ছে তখন মনে হতো আহা রে ওদের কত সুখ!!!

    আমার সব চিঠিই তো হলুদ খামে আসতো, একবার খালি সাদা এয়ার মেইল খামে আসছিল। 😀 😀

    যা হোক সেই সাহস টুকু কেন জানি কখনো হয় নি।

    কাপুরুষই রয়ে গেলাম। :bash: :bash: :bash: :((


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)
    ২/৩ বছর পর যখন নিজেই এরকম একটা সম্পর্কের ভিতর জড়িয়ে পড়লাম তখন আমিও দেখলাম আমিও একই কাজ করছি। রাত্রি শেষ হয়ে যায় কিন্তু কথা তো শেষ হয় না। মাঝে মাঝে চিন্তা করি কি কথা বলি? নিজেও তখন অবাক হই ।

    amaro janar khub shokh ....... ki niya golpo koro???

    সে ক্যাডেট কলেজে যেতে খুব আগ্রহী। আমি বুঝতে পারি ধীরে ধীরে সে হয়ত মনে মনে কিছুটা ক্যাডেট হয়ে উঠছে।

    hmmm .... sobai converted hoye jay ....

    vallaglo tomar lekha pore :clap: :clap: :clap:

    জবাব দিন
  3. আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)
    সে ক্যাডেট কলেজে যেতে খুব আগ্রহী।

    তার মানে এখন ৫/৬ ক্লাসে মাত্র ? এ ত বাচ্চা মেয়ে ! কিন্তু পেকেছে ভালই।
    নাকি টিচার হয়ে যেতে চায়? না প্যারেন্টস ডেতে প্যারেন্টস হিসেবে/না কি এমনি বেড়াতে।না ভাবী হিসেবে রিইউনিয়নে?
    ঠিক বুঝলাম না। ~x( ~x( :no: :-/

    জবাব দিন
  4. জাবীর রিজভী (৯৯-০৫)

    :)) :)) :))

    মুহিব ভাই, বাঁইচ্যা গেছেন, আমার মত অবস্থায় পড়লে তো...... 😕 😕

    আমি আমার কলেজের কথা কইলে সে কয় তার কলেজের কথা।একসময় কারো কথাই শুনা হয় না :)) .....কারণ ততক্ষণে মারামারি লাইগা যায় :grr:

    আসলেই কলেজের কথা একবার শুরু হইলে......... =)) =))

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : টিটো রহমান (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।