নক্ষত্রের রাত

মাইমোসিস শহরে মির্জাপুরের প্রায় ৩০ জনের মত ক্যাডেট আছে। ছুটি শেষে গাড়ি ভাড়া করে সবাই একসাথে কলেজে যাই। যাত্রার পুরোটা সময় সেভেন-এইটের পোলাপান বিমর্ষ বদনে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। নাইন-টেন টুকটাক কথা বলে। কিন্তু ইলেভেন-টুয়েলভ রীতিমত গোলমাল বাঁধিয়ে দেয়। ছুটিতে কে কি করল এ নিয়েই তাদের চিৎকার-চেঁচামেচি। আমি বিমর্ষ বদনে বসে থাকি না, কারণ ইলেভেনে উঠে গেছি। কিন্তু হৈ-হল্লা কখনই ভাল লাগে না। তাই এক কোণায় বসে প্রকৃতির রূপ দেখি। এবারও তাই করছিলাম।

কিন্তু বেশিক্ষণ এভাবে থাকতে পারলাম না। কারণ, গাড়িতে এখন ছুটি নিয়ে কথা হচ্ছে না। আলোচনা হচ্ছে পুরো বিশ্বের জীবন-মরণের প্রশ্ন নিয়ে। গাড়ির সবাই বিশিষ্ট আঁতেল অনিকের কথা শুনে বিস্মিত। সে বলছে, আর কয়েকদিনের মধ্যে বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাবে।
আমারও আঁতেল হিসেবে খানিকটা দুর্নাম আছে, তাই এসব আলোচনা এড়িয়ে যেতে চাই। কিন্তু এহেন মিথ্যাচার সহ্য করতে পারলাম না। খানিকটা তাচ্ছিল্যের সুরেই অনিককে বললাম,
– শোন, এইসব কথা ডুম্‌সডে তাত্ত্বিকরা হরহামেশাই বলে। আর ধার্মিকরা তো হাজার বছর ধরে বলে আসছে, একদিন ঈশ্বর আকাশে অসংখ্য আলোকবিন্দু তৈরী করেবন। তাই দেখে কালগাশের সব মানুষ মরে যাবে।
অনিক এতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হলো না। আগের মতই দৃঢ়তার সাথে বলল,
– আমি ডুম্‌সডে তাত্ত্বিকও না, ধার্মিকও না। আর এক সপ্তার মধ্যে সব শেষ, আমার কাছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে।

অনিকের বাবা “কালগাশ একাডেমি”-র বিজ্ঞানী। বাপের কাছ থেকে সে মাঝেমধ্যেই আজব সব কাহিনী শুনে আসে। বিজ্ঞানী মহলের একেবারে ভেতরের কাহিনী। তাই তার কথা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিতে পারলাম না,
– আচ্ছা তাহলে বল, তোর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা শুনি।
– আধুনিক বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার কোনটা বল দেখি।
একটু সময় নিয়ে অনিক প্রশ্নটা করল। সবাই আমাদের দিকে ঘন হয়ে এল, এখন পর্যন্ত বিষয়টা অবশ্য হালকাভাবেই নিচ্ছে। আমি বললাম,
– কোনটা আবার, নিউটনের “মহাকর্ষ তত্ত্ব”।
– এর মানে কি?
– জগতের প্রত্যেক বস্তু একে অপরকে আকর্ষণ করে! কিন্তু এর ব্যবহারিক রূপ নিয়ে তো এখনও মতবিরোধ আছে।
– মতবিরোধ বাদ দে। এই তত্ত্ব দিয়ে যে গ্রহ-নক্ষত্রের আবর্তন ব্যাখ্যা করা যায় সেটা জানিস?

সবাই তাজ্জব বনে গেল, কারণ গ্রহ-নক্ষত্রের আবর্তনের বিষয়টা একেবারে সাম্প্রতিক আবিষ্কার। স্কুল পর্যায়ের পোলাপানের না জানারই কথা। আমি অবশ্য কিছুটা জানি। তাই বললাম,
– হ্যা, তাই তো শুনছি।
– এখান থেকেই কাহিনীর শুরু।
– রহস্য না করে তোর ব্যাখ্যাটা বল।
অনিক বলতে শুরু করল,
– ব্যাখ্যা আমার না। বাবার গোপন ডায়রি পড়ে জেনেছি। শীর্ষ বিজ্ঞানীদের সবাই এটা জানে। কিন্তু ধর্ম পরিষদ আর সরকারের চাপের কারণে বিজ্ঞানীরা মুখ খুলতে পারছে না। ডায়রিতে লেখা ছিল,
আমাদের এই কালগাশ গ্রহে মোট ছয়টা তারা আছে। কালগাশ সবচেয়ে বড় তারা “ওনোস”-কে কেন্দ্র করে ঘুরে। কিন্তু ওনোসের আশেপাশে আরও পাঁচটি তারা আছে। ডোভরিন ওনোসের চেয়ে একটু ছোট এবং একা একা ওনোসের চারপাশে ঘুরোঘুরি করে। ট্রে আর পাট্রু একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘুরে। টানো আর সিথা-ও একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘুরে। এই ছয় তারার কারণে, লাগাশ সবসময় আলোকিত থাকে। কিন্তু এরা না থাকলে আমাদের গ্রহে যে অবস্থা থাকত, তাকে অন্ধকার বলে।

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
– এসব তো জানা কথা।
– আরে বলতে দে। সবে তো শুরু,
এই অন্ধকারই সব নষ্টের মূলে। মহাকর্ষ তত্ত্ব থেকে তারার চারপাশে গ্রহের আবর্তন বিষয়ে আমরা একটা নতুন তত্ত্ব আবিষ্কার করতে পেরেছি। এই তত্ত্বের গাণিতিক হিসাব বলছে, আমাদের গ্রহকে কেন্দ্র করে আরেকটা বস্তু ঘরোঘুরি করছে, আকাশ সব সময় আলোকিত থাকার কারণে আমরা একে দেখতে পাই না। এর নাম উপগ্রহ। এটা আমাদের খুব কাছে অবস্থিত। প্রতি ২০৪৯ বছর পরপর একটা বিশেষ ঘটনা ঘটে, কালগাশের আকাশে একমাত্র ওনোস ছাড়া বাকি সব তারা অস্ত যায়, একই সাথে এই অদ্ভুত উপগ্রহ ওনোসের সামনে দিয়ে অতিক্রম করে। কালগাশ থেকে দেখলে উপগ্রহটিকে ওনোসের চেয়ে অনেক অনেক বড় দেখায়।
সবাই হা করে শুনছে। বিষয়টা আন্দাজ করতে পেরে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। আমি বললাম,
– কিন্তু, উপগ্রহটা সামনে এসে পড়লে তো ওনোস থেকে আমাদের কাছে আলো আসতে পারবে না।
অনিক যেন মজা পেয়েছে এমনভাবে বলল,
– ঠিক তাই। বিজ্ঞানীরা এই ঘটনার নাম দিয়েছেন গ্রহণ। গ্রহণ হবে প্রায় ১০ ঘণ্টা ব্যাপী। কারণ, ওনোসের তুলনায় উপগ্রহ অনেক বড়, পুরো গ্রহণ কাটতে অনেক সময় লাগবে। এই ১০ ঘণ্টা লাগাশে কোন আলো থাকবে না। আর ধর্মগ্রন্থে যেরকম লেখা আছে অনেকটা সেরকম ঘটনা ঘটবে। অর্থাৎ, আকাশে অসংখ্য আলোকবিন্দু দেখা যাবে, সব মানুষ মারা যাবে। ধার্মিকদের কথা মতে এটাই কেয়ামত। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এটা মানে না। তারা মনে করেন, কিছু মানুষ বেঁচে থাকবে। এরাই নতুন করে সভ্যতা শুরু করবে। তারা বলেন, উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে অনেক মানুষকে বাঁচানো সম্ভব।

জটলার একেবারে সামনের দিকে বসে ডেফিন ভাই সব শুনছিলেন। উনি নাস্তিক, ধার্মিকদের কাজকর্মকে ঘৃণা করেন। তিনি বলে উঠলেন,
– তোমার কথা যদি সত্যি হয়, তারপরও ধর্মের জয় হবে না। কারণ, আলো না থাকার সাথে মানুষের মারা যাওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। আমরা বেঁচে থাকবোই। আর আলোকবিন্দুগুলোই বা কোত্থেকে আসবে?
জটলার পিছনে দাড়িয়ে থাকা ধার্মিকদের দল একথা শুনে চরম বিরক্তি প্রকাশ করল। কিন্তু অনিক যেন তাদের আস্বস্ত করার জন্য বলে উঠল,
– না, মনোবিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন আলো ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারবে না। এক পরীক্ষায় দেখা গেছে মানুষ সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা আলো ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে। আর আলোকবিন্দুর ব্যাপারটা বললেন না, সেটারও ব্যাখ্যা আছে।
এবারে আমি আগ্রহী হয়ে উঠলাম,
– এটা জানতে খুব ইচ্ছা করছে। আলোকবিন্দু মানে কি?
অনিক বলে চলল,
– এই আলোকবিন্দুগুলো আসলে ওনোস আর ডোভরিনের মতই এক ধরণের তারা। আমরা আগে কালগাশকেই জগৎ মনে করতাম। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে, কালগাশ একটি তারাকে কেন্দ্র করে আবর্তনশীল ছোট্ট এক গ্রহ। মহাবিশ্বে এরকম অসংখ্য তারা আছে। সবসময় আলো থাকায় আমরা সেসব তারা দেখতে পারি না। অন্ধকারে সেগুলো জ্বলজ্বল করে জ্বলবে।

সেভেন-এইট আগের মতই বিমর্ষ বদনে বাইরের দিকে চেয়ে আছে। কেউ কেউ আড়ি পেতে আমাদের কথা শোনার চেষ্টা করছে। বাকি চার ক্লাসের সবার অবস্থা অস্বাভাবিক। অধিকাংশই ব্যাপারটাকে প্র্যাক্টিকেল জোক্স হিসেবে নিয়েছে। কিন্তু তাদের চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ সুস্পষ্ট। সেটা কেউ লুকিয়ে রাখতে পারছে না, হয়ত চাইছেও না।
ঘোড়াগুলো খুব দ্রুত দৌড়িয়েছে। আমরা প্রায় চলে এসেছি। কলেজে পৌঁছুতে আর মাত্র ২০ মিনিট লাগবে। জটলার একেবারে সামনে বসে ছিলেন কট্টর ধার্মিক সেবিন ভাই। তার চোখে-মুখে ভয়ের সাথে আরও একটা জিনিসের ছাপ পড়েছে। সেটা হল ক্রোধ। এবারে তিনিই নীরবতা ভাঙলেন,
– তোমার আব্বা এখন কোথায়?
প্রশ্নটা অনিককে উদ্দেশ্য করে করা। একটু দ্বিধার সাথে সে উত্তর করল,
– আমি ছুটিতে বাবাকে পাইনি। মা বলেছেন, সরকারী কাজে এক মাসের জন্য আটকা পড়েছেন। আসতে পারবেন না। কোন যোগাযোগও নেই। তার রুম খুঁজে ডায়রিটা পেয়েছি।
সেবিন ভাই আশ্বস্ত ভঙ্গিতে বললেন,
– শোন, এখানে ভয় পাওয়ার কিছু নাই। তুমি এতক্ষণ যা বললে, তার সবই ধর্মগ্রন্থে লেখা আছে। শেষ দিন আসবেই। তখন সবাই মারা যাবে, ভালরা পুরস্কৃত হবে আর মন্দরা দুর্ভোগ পোহাবে। কিন্তু সেই দিন কবে আসবে তা কেউ বলতে পারে না। এটা নিয়ে যারা গবেষণা করে তারা ধর্মবিরোধী কাজ করে। তাদের নাম মন্দ লোকের খাতায়ই উঠবে।
এরপর তিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
– সবাই ঈশ্বরকে স্মরণ কর। এমন মুহূর্তেই তার নাম বেশী বেশী স্মরণ করতে হয়। আর ধর্মদ্রোহীদের কথা কেউ কানে তুলবে না।
কিন্তু ডেফিন ভাই বেঁকে বসলেন,
– আমি সেটা মনে করি না। আমি মনে করি আমাদের দায়িত্ব বেড়ে গেছে। এই কথা বিশ্ববাসীকে জানানো আমাদের দায়িত্ব।

কথায় কথায় মনোমালিন্য হল, একসময় তা ঝগড়ার রূপ ধারণ করল। একটু হলেই মারামারি বেঁধে যেত। কিন্তু অনিকের কথায় আবার পুরো গাড়িতে পিনপতন নীরবতা নেমে এল। অনিক বলল,
– ঝগড়া বাদ দিয়ে সবাই বাইরের দিকে তাকান।
কিছুক্ষণ নীরবতা। তারপরই সবাই জানালার কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। আকাশের দৃশ্য দেখে সবার সব ঘোর কেটে গেল। আমি মনে মনে সেই দৃশ্য বর্ণনা করলাম,
আকাশে ওনোস ছাড়া আর কোন তারা নেই। ট্রে আর পাট্রু দিগন্তের কাছাকাছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই অস্ত যাবে। ওনোসে গ্রহণ লেগেছে। আর ঘণ্টা খানেকের মধ্যে তার সব আলো মুছে যাবে।
কয়েক মিনিট এভাবেই কেটে গেল। আমাদের গাড়ি কলেজ গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল। কলেজ শিক্ষা ভবনের বিশাল মিনারের উপর ওনোসকে দেখলাম, তার অর্ধেক ঢেকে গেছে। কালগাশের সেই উজ্জ্বল আলোর ছটা আর নেই। চারদিকে কেমন যেন আলো-আঁধারির খেলা। বাসের পরিবেশটা অশরীরি হয়ে উঠেছে।
মনে হচ্ছে, একটু পরেই বাস্তব হরর শো শুরু হয়ে যাবে।

আমরা সবচেয়ে দেরি করে এসেছি। গাড়ি থেকে নেমে দেখলাম কলেজের সবাই ফলিন হয়ে আছে। কাউকে হাউজে যেতে দেয়া হয়নি। আমরাও যার যার ফলিনে শরীক হলাম। সবার মুখেই ক্লান্তি ও বিরক্তির ছাপ, সাথে খানিকটা বিস্ময়। কিন্তু আমাদের ৩০ জনের মুখে কোন ক্লান্তি নেই, নেই কোন বিরক্তি। এই মুখগুলোতে কেবলই ভয়ের ছাপ। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, তেরাব স্টাফ ধমক দিলেন। এখানে কারও আকাশের দিকে তাকানো নিষেধ।
প্যারেড স্টেট শেষে প্রিন্সিপাল সবার উদ্দেশ্যে বললেন, কলেজের স্বাভাবিক রুটিনে পরিবর্তন করতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ আকাশে আলো থাকবে না। সে সময়টা আমাদের হাউজে কাটাতে হবে। কেউ রুম থেকে বেরোতে পারবে না। সব ঠিক হয়ে গেলে পরবর্তী নোটিশ জানানো হবে।
আমি আনমনে বললাম, পরবর্তী নোটিশ আর কখনই জানানো হবে না। আমি অনিকের কথা বিশ্বাস করেছি, তার বাবার ডায়রিকে বিশ্বাস করেছি। আমি মৃত্যু থেকে বাঁচার উপায় খুঁজছি। অনিক বলল,
– বিজ্ঞানীদের হিসাব বলছে, কালগাশ গোলাকার। অভিকর্ষের কারণেই আমরা এর থেকে পরে যাই না। তার মানে সমুদ্রের ওপারেও কোন জগৎ থাকতে পারে। সেখানে ডোভরিন বা অন্য যুগল তারাগুলোর আলোও থাকতে পারে। বাঁচতে হলে সেখানে যেতে হবে।
আমি বলি,
– তুই কি এখন সেখানে যেতে চাস?
হতাশার সুরে অনিক বলল,
– না যেতে চাই না, সেখানে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে চাই। এটা আলোর স্বপ্ন।
– একবার চিন্তা কর, আমরা যদি বিজ্ঞানীদের কথায় গুরুত্ব দিয়ে কৃত্রিমভাবে কোন নিরাপদ আলোক উৎস তৈরীর ব্যবস্থা করতাম তবে কতই না ভাল হতো।
স্বপ্ন থেকে অনিকও বাস্তবতায় ফিরে এলো,
– হ্যা, মাঝখানে চল বিদ্যুৎ নিয়ে কথা উঠেছিল। বাবার ডায়রিতে লেখা, চল বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হলে কৃত্রিমভাবে আলো তৈরী সম্ভব হতো।
কথা বলতে বলতে আমরা ডাইনিং হলের দিকে হেটে চললাম। কিছু খেতে পারিনি। কেউই পারেনি। অন্ধকার সবাইকে অধিকার করে নিয়েছে।

ডাইনিং হল থেকে সবাই বের হল। ততক্ষণে অন্ধকার নেমে এসেছে। ধার্মিকদের প্রতিশ্রুত সেইসব আলোকবিন্দু দেখা দিয়েছে। সেবিন ভাই মাটিতে পড়ে গেছেন। শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। সেইসব আলোকবিন্দুর উপাসনা করছেন যেন।
এই প্রথম কলেজের সবাই একযোগে প্রিন্সিপালের আদেশ অমান্য করল। কেউ হাউজে গেল না। কেউ সুস্থির থাকল না। সবাই পাগলের মত ছুটোছুটি করতে লাগল। এক মুঠো আলোর আশায়। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগুনের ফুলকি উঠতে লাগল। এতে কিছু বলার নেই, কারণ আগুন ছাড়া আমাদের কৃত্রিম আলোর আর কোন উৎস নেই।

আমি আর অনিক বুঝে গেলাম, কিভাবে আলোপাগল মানুষের মৃত্যু হবে। কিভাবে তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনবে। কিভাবে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেবে সমগ্র কালগাশ। আমরা জানি, কিছুক্ষণ পর আমরাও পাগল হয়ে যাব। নিজেদের ধ্বংস করে ফেলার নেশায় মত্ত হবে। তার আগে একবার ঐ বিস্ময়কর আলোর বিন্দুগুলো দেখে নিতে চাই। সেবিন ভাইয়ের মত আমরাও ঐ নক্ষত্রের পানে চেয়ে রইলাম, শ্রদ্ধা নয়, বিস্ময়ের দৃষ্টিতে।
নক্ষত্রের রাত আমাদের অধিকার করে নিল।

*****

আইজাক আসিমভ রচিত “নাইটফল” গল্প থেকে অনুপ্রাণিত

১৯ টি মন্তব্য : “নক্ষত্রের রাত”

  1. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির সাথে ক্যাডেট জীবনের সুনিপুন মিশ্রণ।দুর্দান্ত!!এই মুহম্মদ পোলাটার লিখা পড়ি আর নিজে লজ্জা পাই জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা কইরা...

    মুহম্মদ,সিনিয়রকে লজ্জা দেওয়ার অপরাধে তোর নামে আরো ২ টা ব্লগ ইস্যু করা হইল।

    জবাব দিন
    • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

      ভাই, লজ্জায় পড়লাম তো আমি। লজ্জায় লজ্জায় কই,
      আসিমভের নাইটফল পড়লে যে কেউ এরকম কিছু লিখে ফেলতে পারবে। সেইরকম গল্প। অ্যামেরিকার কল্পবিজ্ঞান লেখক সমিতি এই "নাইটফল"-কে সর্বকালের সেরা বিজ্ঞান কল্পকাহিনীমূলক গল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি। আসল গল্পটা অনেক বড়। এটা থেকে পরে উপন্যাসও লেখা হয়েছে।
      এই লেখাটা সচলায়তনেও দিছি। ডুয়াল পোস্টিং হয়ে গেল। তারপরও দিলাম। অনেক চেষ্টা চরিত্তির কইরা লিখছি তো, তাই লোভ সামলাতে পারি নাই।
      আপনে কিন্তু ব্লগ ইস্যু করতে পারবেন না। ব্লগ অ্যাডজুটেন্টরে কন ব্লগ খাটার ডেট দিতে। 😀

      জবাব দিন
  2. জিহাদ (৯৯-০৫)

    এই গল্পটা নিয়ে আমি ঠিক কি বলবো বুঝতেসিনা।কাজেই কিছু বলতেসিওনা।

    আসিমভের মুল গল্পটা পড়া নাই। কিন্তু আমার তাতে আফসোস হচ্ছেনা। কলেজ লাইফের সাথে যেভাবে ঘটনাটার সম্পর্ক টানসো এককথায় আমার কাছে চরম লাগসে। :boss:


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
    • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

      হে হে.. দুইজনের কাছেই দেখি ভাল্লাগছে। আমার তো আনন্দে নাচতে ইচ্ছা করতাছে। ভয়ে ভয়ে ছিলাম, না জানি কেমন রেসপন্স পাই।

      আসিমভের কথা যখন আসল তখন, আমার এই গল্পের সাথে নাইটফলের পার্থক্যগুলো লিখে দিচ্ছি:
      - আমি নাইটফলের যে ঘটনাটুকু অবলম্বন করেছি সেই কাহিনীটুকু ঘটেছিল বিজ্ঞান পরিষদের অফিসে। এখানে আমি কলেজগামী বাসে ঘটিয়েছি।
      - আসিমভের চরিত্রে বিজ্ঞান পরিষদের যে প্রধান, এখানে সে হল অনিক
      - আসিমভের ওখানে যে সাংবাদিক এখানে আমিই সেই চরিত্র
      - ওখানে এক ধার্মিক ছিল যাকে সেবিন ভাই বানিয়েছি
      - এক ধর্মবিরোধীও ছিল যাকে ডেফিন ভাই বানিয়েছি।
      - চরিত্রের নামগুলো সব নিজের দেয়া
      - আসিমভের পুরো গল্পের কাহিনী অনুকরণ করিনি। কেবল প্রথম অংশ আর শেষের ইঙ্গিতটা।
      - আসিমভ বিদ্যুৎ নিয়ে কিছু লিখেননি। বোঝাই যাচ্ছিল, তারা বিদ্যুৎ আবিষ্কার করতে পারেনি।

      এবার সম্পর্কগুলো লিখি:
      - গ্রহ এবং তারাগুলোর নাম হুবহু একই। তবে আসিমভের গল্পে গ্রহের নাম ছিল "লাগাশ" আর গল্প থেকে হওয়া উপন্যাসে গ্রহটির নাম ছিল "কালগাশ"
      - গল্পের বৈজ্ঞানিক থিমটা সম্পূর্ণই আসিমভের।
      - ধর্ম এবং দর্শনের বিষয়গুলোও আসিমভকে অনুকরণ করে লেখা।

      মোটকথা আসিমভের গল্পটিকে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করেছি। গ্রহ কিন্তু ঐটাই। ধরা যায়, আসিমভ কালগাশের এক জায়গা নিয়ে লিখেছেন, আর আমি ঐ গ্রহেরই আরেক জায়গা নিয়ে লিখেছি।

      জবাব দিন
  3. আমরা যদি কোনদিন সিসিবি থেকে ই-বুক বের করি আমি এই গল্পটা সবার আগে সেখানে রাখতে বলবো। দারুন।

    আমাদের মত দেশে এখনও ঈশ্বর-বিরোধীদের শারীরিক ও মানসিক আক্রমণের শিকার হতে হয়।

    খাটি কথা। মনের কথা।

    জবাব দিন
  4. তৌফিক (৯৬-০২)

    ধন্যবাদ মুহাম্মদ। আমি সায়েন্স ফিকশন জীবনে লিখি নাই। তোমার এই লেখা থাইকা সায়েন্স ফিকশন লেখার একটা টেকনিক শিখলাম।

    তুমিই যদি শিক্ষানবিশ হইয়া থাক, তাইলে বলি, তুমি খুব যত্ন কইরা লেখ, একেবারে রিসার্চ কইরা। লেখার প্রতি তোমার কমিটমেন্টটা প্রশংসা করার মত। তোমার শিক্ষানবিশি লেখা সবগুলাই যে ভালো লাগে তা না, কিন্তু লেখাগুলা যে সাহিত্যমানের দিক দিয়া ধনী সে আমার মতো আমজনতাও বুঝতে পারে।

    চালায়া যাও।

    :clap:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জিহাদ

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।