অক্সিডেন্ট আর ছায়াশ্রমিক- মধ্যিখানে ব্রেনার পাস

রোমে আসার আগে শুনতাম এই শহরে নাকি ৩০,০০০ বাঙালি আছে, আসার আগে বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু আসার পর মনে হচ্ছে সংখ্যাটা এরও বেশি হতে পারে। আমি থাকি মূল শহরের বাইরে গ্রামমত একটা জায়গায়, আশেপাশে অনেক খোলা জায়গা, পাশেই ইউনিভার্সিটি। শহরকেন্দ্রে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘণ্টা, বাসে ২০ মিনিট আর মেট্রোতে ৪০ মিনিট। প্রধান বাস এবং ট্রেন স্টেশনের কারণে কেন্দ্রটির নাম তেরমিনি (Termini)। এখান থেকেই শুরু অভিবাসীস্থানের। তেরমিনির ঠিক আগের মেট্রো স্টেশনের নাম ভিত্তোরিও এমানুয়েল্লে (ছোট্ট করে আমরা ভিত্তোরিও ডাকি)। একীভূত ইতালির প্রথম রাজা ভিত্তোরিও এমানুয়েল্লে ২ এর নাম অনুসারে এর নাম। তেরমিনি থেকে হাঁটা ধরলে, যতোই ভিত্তোরিওর কাছাকাছি যাবেন ততোই মনে হবে বুঝি বাংলাদেশের দিকে এগোচ্ছেন, এমনকি দোকানগুলোর নামও বাংলাতে লেখা, যেন কোন বড়সড় চায়নাটাউন। হাঁটতে হাঁটতে যদি বহু বছর আগের কোন বাঙালি বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যায় তাও অবাক হবেন না।

ভিত্তোরিও বাজার মূলত বাঙালিদেরই। কয়েক শত দোকানের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগই বাঙালিদের। এখানে দেশী প্রায় সবকিছুই পাওয়া যায়, বাজারের বাইরে সেলুন, কনফেকশনারি, মিষ্টি বা মোবাইলের দোকান সব জায়গাতেই বাংলা লেখা, বাংলা পোস্টার এবং এমনকি স্থানীয় বাংলা পত্রিকারও দেখা মেলে। প্রথম রোম এসেছেন, ইতালিয়ানো জানেন না, হারিয়ে ফেলেছেন রাস্তা? ইতালিয়ানরা অস্ট্রিয়ানদের মত হেল্পিং না হওয়ায় জিজ্ঞাস করেও লাভ হচ্ছে না? কয়েক কদম হাঁটলেই পেয়ে যাবেন কোন বাঙালি, জিজ্ঞাস করলেই সব দেখিয়ে দেবে।

এত রং দেখেও একটা বিষয় ভুলে গেলে চলবে না, এসবের কিছুই তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত বা অভিজাত বাঙালির হাতে তৈরি নয়। তেরমিনি, ভিত্তোরিও বা তোরপিনিয়াত্তারা-র রাস্তা দিয়ে হাঁটলে গুলশান-বনানীর কথা মনে পড়ে না। রোমের বাঙালিদের শতকরা ১০০ ভাগই ওয়ার্কার, তিনটা বড় বড় ইউনিভার্সিটি ঘুরেও কয়েকজনের বেশি বাঙালি ছাত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে এই অভিবাসীদের অনেকেই অবৈধ, বৈধ ভিসা নিয়েই এসেছিলেন কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে গেছেন। শুধু রোম কিন্তু নয় ইতালির মিলানো (মিলান), ভেনেৎজিয়া (ভেনিস), বোলৎজানো সব জায়গাতেই বাঙালি আছে। কিন্তু রোমীয় বাঙালিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি (আমার অনুমান মতে)। অনুমানটা কিভাবে করলাম বলি:

একটা কাজে অস্ট্রিয়া যাচ্ছিলাম। টাকা বাঁচানোর জন্য ডাইরেক্ট ট্রেনে না গিয়ে লোকাল ট্রেনে ভেঙে ভেঙে যাওয়ার প্ল্যান করলাম। রোম থেকে বোলৎজানো পর্যন্ত চলে গেলাম মাত্র ৩৫ ইউরোতে (এখন থেকে ইউরো না বলে টাকা বলব, তবে এ কিন্তু বাংলাদেশী টাকা না, এখানকার সবাই ইউরোকে টাকাই বলে, দোকানে গিয়ে কিছু নেয়ার পর আপনি “কত টাকা” জিজ্ঞাস করবেন, “কত ইউরো” নয়…)। বোলৎজানো ইতালি-অস্ট্রিয়া সীমান্তের খুব কাছে। এখানে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছি এমন সময় এক লোক এসে জিজ্ঞাস করল, “ভাই কি বাঙালি নাকি?” এখানে কোন বাঙালির সাথে দেখা হলে অবাক হওয়ার সুযোগ নেই খুব, দেখা হলেই ধরে নেয়া যায় সে বাঙালি ওয়ার্কার (শ্রমিক না বলে ওয়ার্কার বলব, কারণ এখানে কাওকে শ্রমিক বললে মাইন্ড করবে কিন্তু ওয়ার্কার বললে মাইন্ড করবে না।) আমাকে দেখে অবশ্য তিনি ওয়ার্কার বলে ধরে নিলেন না, কেন জানি না জিজ্ঞাস করলেন, “ভাই কি ছাত্র না ওয়ার্কার”। ছাত্র পরিচয় দেয়ার পর হতাশ হলেন তিনি, সাথে আরও একজন বাঙালি ছিলেন।

দুজনের চরিত্র বেশ ভিন্ন, তাদের নাম মনে নেই, ক এবং খ বলি। ক অনেকদিন ধরে ইতালিতে আছেন কথা শুনলেই বোঝা যায়, আশপাশে কি ঘটছে বেশ ভালই জানেন এবং বোঝেন। রোম থেকে আসছি জানার পর খ সরাসরিই জিজ্ঞাস করলেন, “ভাই রোমে বেকার কেমন?” সাথে সাথেই ক, খ-কে বেশ ধমকের সাথে বললেন, আরে উনি এইটা কেমনে জানবে, উনি কি ওয়ার্কার নাকি। খ যতই বলে আরে আইডিয়া তো থাকতে পারে, ক প্রত্যুত্তরে ততোই বলে, যত যাই বল ওয়ার্কার এবং ছাত্রদের মধ্যে কোন সম্পর্ক কোথাও তৈরি হয় না। আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অস্বাভাবিকও ছিল না, সত্যিই আমি জানতাম না রোমে বেকারত্বের হার কেমন। কাহিনী হচ্ছে, ক-খ কমবেশি ১০ বছর ধরে ইতালিতে অবৈধভাবে আছে, যথারীতি এই ১০ বছরে দেশে যাওয়ার প্রশ্নই উঠেনি। সম্প্রতি তারা চাকরি হারিয়েছে। অবশ্য কোন চাকরিই স্থায়ী নয়, প্রাপ্তি আর হারানোর চক্রই এখানকার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ওদের হাতে টাকা নেই খুব বেশি, থাকেন ভেরোনাতে। ভেরোনায় চাকরির আশা নেই দেখে আশপাশের কয়েকটা শহর ঘুরে দেখছেন চাকরি মেলে কিনা। এখন যাচ্ছেন মেরানো শহরে, বোলৎজানো থেকে খুব কাছেই। মেরানোর ট্রেনও খুঁজে পাচ্ছিলেন না, ওয়ালের সাইন পড়েটড়ে আমরা খুঁজে বের করলাম ট্রেনটা। পাশাপাশি প্লাটফর্ম, ৪ নম্বরের ট্রেন যাবে মেরানোতে আর ৩ নম্বরের ট্রেনে আমি যাব ব্রেনারো। ট্রেন আসার আগে ১৫ মিনিট তাই আরও কিছু কথা হল।

আমি ছাত্র শুনে ওদের হতাশার কারণ, স্বভাবতই রোমের বেকারত্ব নিয়ে আমি কোন ইনসাইট দিতে পারব না। অস্ট্রিয়া যাচ্ছি শুনে তাদের চোখের এক্সপ্রেশনও লক্ষ্য করার মত, চোখেমুখে অপ্রাপ্তির ঝিলিক, সীমান্ত পাড়ি দিলেই স্বপ্নের দেশ অস্ট্রিয়া, আর সেই সীমান্তটা হচ্ছে সীমানাবিহীন। শেংগেন জোন হওয়ায় অস্ট্রিয়া-ইতালির মধ্যে কোন সীমানা নেই, অবাধ যাওয়া-আসা, তারপরেও তারা অবধারিতভাবে জানেন অস্ট্রিয়া গিয়ে কোন লাভ নেই, সেখানে কেউ তাদের চাকরি দেবে না, উল্টো ইমিগ্রেশনে ধরা খেতে হবে। এখন সকাল, মেরানো গিয়ে তারা সারাদিন পথেঘাটে চাকরি খুঁজবেন, যদিও পুরো শহরে পরিচিত কেউ নেই, সন্ধ্যা অব্দি চাকরি না পেলে আবার ফিরে যাবেন নিজের শহরে।

ট্রেনে যাওয়ার সময় ভাবছিলাম, “ডার্টি প্রিটি থিংস” সিনেমার রজার ইবার্টকৃত রিভিউয়ে যে “শ্যাডো ওয়ার্কার” বা ছায়াশ্রমিকদের কথা পড়েছিলাম এরাই তার প্রমিত উদাহরণ। এটি ছিল আমার প্রথম ভৌতিক ট্রেন ভ্রমণ। আমার ট্রেন আগে এসেছিল, আমাদের বিদায়টা আবেগঘন ছিল না, কেউ হাতও নাড়িনি, কিন্তু মনের ভেতর কিছু একটা নাড়া দিয়ে যাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল আমি ভূতের গাড়িতে চড়ে পেরিয়ে যাচ্ছি লৌকিক শহর।

ব্রেনার নামার পর অবস্থার আমূল পরিবর্তন। তীব্র ঠাণ্ডা সেই সাথে বৃষ্টি। পুরো স্টেশন খালি, কয়েকটা প্লাটফর্মে ইতালির পুরনো লক্করঝক্কর ট্রেন, একটি প্লাটফর্মে চেপে আছে কেবল লাল রঙের একটি বুলেট ট্রেন, আমার ইতালি ত্যাগের বাহন। যেতে হবে ব্রেনার থেকে অস্ট্রিয়ার প্রথম বড় শহর ইন্সব্রুকে। এর আগে একবার এই পথ দেখেছিলাম, ইন্সব্রুক ছেড়ে রোম আসার সময়। কিন্তু এবারের যাত্রা ভুলব না কোনদিন। মনে হচ্ছিল, পেছনে ফেলে এসেছি কিছু ছায়াশ্রমিকদের যাদের অস্তিত্ব স্বীকার করে না ইতালি, যারা পথে পথে ঘুরে এখন চাকরি খুঁজছে, যারা আমাকে দেখে হতাশ হয়েছিল, আর সামনে অপেক্ষা করছে পৃথিবীর অন্যতম সুসংগঠিত দেশ অস্ট্রিয়া যেখানে আমার জন্য একটা সুসজ্জিত হোটেল রুম রিজার্ভড হয়ে আছে। একদিকে পুরনো ঐতিহ্য আার গৌরবের স্মৃতিতে ক্রন্দনরত ইতালি, অন্যদিকে সমৃদ্ধি ও শান্তির বিচারে প্রায় স্যাচুরেটেড একটি আদর্শ অক্সিডেন্টাল দেশ অস্ট্রিয়া, মধ্যিখানে যে কি আছে সে আমি পৌঁছানোর আগে কল্পনাও করতে পারিনি।

মাঝখানে আছে ব্রেনার পাস, একটি অ্যালপাইন (আল্পস পর্বতমালা) গিরিপথ, যে পথ ছিল অনেক দিগ্বিজয়ী বিশ্বভিলেনদের (রাষ্ট্রনায়ক নয় কিন্তু) আশার খনি, যেখানে আছে ইউরোপের উচ্চতম সেতু, যে আমাকে কখনোই যাত্রাপথে ঘুমাতে দেয় না। দুই পাশে পাহাড়, মাঝখানে ভাটি কিন্তু সমতল উপত্যকা নেই, তাই রাস্তা করতে হয়েছে পাহাড়েরই গাঁ ঘেষে, একপাশে উঁচু পর্বতচূড়া, আরেকপাশে বিশাল নিচু ভাটি তারপরেই আবার পাহাড়। একপাশের পাহাড়ের গাঁ ঘেষে রেললাইন তো অন্য পাশের পাহাড় ছুঁয়ে সড়কপথ। পাহাড় ঘেষে মেঘের দল, মাঝে মাঝে অপ্রত্যাশিতভাবে কোন পাহাড় উঁকি দিয়ে যায় মেঘ কেটে।

আচ্ছা, চলচ্চিত্র কি জিনিস? অনেকগুলো স্থিরচিত্রের সুচতুর বিন্যাসই তো, তাই না? যাত্রাপথে ব্রেনার পাস ছিল আমার কাছে সিনেমা দেখার মত। জীবনের মূল চাবিকাঠি যেমন পরিবর্তন, সিনেমারও মূলমন্ত্র তেমন পরিবর্তন, কোন একটি দৃশ্য আগেরটির মত নয়, যে পরিবর্তন আমাদেরকে করে তোলে পারভার্ট শিল্পখাদক। ব্রেনার ধরে যত এগোই সবকিছুই তত পরিবর্তিত হতে থাকে। ইতালির ধ্বংসস্তূপ ধিরে ধিরে মুছে যায়, মুছে যায় দারিদ্র্যের চিহ্ন আর ঐতিহ্যের ভূত, বর্তমান এসে ধরা দেয়। প্রকৃতির প্রতি বিশ্বস্ত থেকেও একবিংশ শতক কিভাবে অর্ঘ্য হয়ে উঠতে পারে তার প্রমাণ অস্ট্রিয়া। কিন্তু মনের গভীরে আমি জানি ফিরে আসতে হবে আবার ইতালিতেই, ছায়াশ্রমিক আর বেকার ছায়ামানবদের মাঝে। সেদিক দিয়ে ব্রেনার পাস অতিক্রম কেবল প্রামাণ্য চিত্রই নয় বরং মেলোড্রামা। মেলোড্রামা কিভাবে হল সে আমি ফিরে আসার আগে বুঝতে পারব না।

আমার গন্তব্য অস্ট্রিয়ার আল্পবাখ, আল্পসেরই কিছু পর্বতের চূড়ায়। ইন্সব্রুক পাড় হয়ে চলে গেলাম ব্রিক্সলেগ যেখান থেকে আল্পবাখের বাস ধরতে হবে। স্টেশন খুঁজে না পাওয়া একজনকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল, “are you by any chance going to Alpbach too?” তখন থেকেই নতুন অধ্যায়ের সূচনা, ইউরোপের প্রায় ২০টি দেশের ৬০ জন ছাত্রের সাথে ১০ দিন থাকলাম আল্পবাখে, যথারীতি দেখেছি কেবল ইউরোপ। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (এসা) আনুষ্ঠানিক সামার স্কুল এটা। এসা-র বিজ্ঞান পরিচালকের মুখে এবার ইউরোপের স্তূতি, আমেরিকার নাগাল ধরার প্রতিজ্ঞা, মহাশূন্যে ইউরোপ চায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগাল ধরতে, আমরা তবে কি চাইব, বাঙালিরা কোথায় কার নাগাল ধরতে চাইবে ভেবে কোন কূল কিনারা পাই না। আল্পবাখে এরভিন শ্রোডিঙ্গারের কবর। কবর দেখে ফেরার পথে এক আইরিশ তরুণী বলল, “you can understand the height of a society by observing how they respect their deads.” হয়ত তাই, আরও পরখ করে দেখতে হবে সত্যি কিনা।

১০ দিন পর এবার রোম ফেরার পালা। আবার সেই ব্রেনার পাস। এবারও ব্রেনার যাওয়ার আগে মধ্যবিরতি দিলাম ইন্সব্রুকে, কারণ এই শহরই ইউরোপে আমার প্রথম বাসস্থান, এখানে আসলে কেন জানি মনে হয় বাড়ি এসেছি। ব্রেনার পাস অতিক্রমের সময় একেবারে উল্টো চিত্র এবার। সৌম্য-সুন্দর দালান কোঠা আর সুসজ্জিত গ্রামগুলো পেরিয়ে আবার ধ্বংসস্তূপের দিকে। পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী সিনেমা এটা, কারণ কোন সিনেমাই সামনে-পিছে দুইদিক থেকে দেখা যায় না। ইউরোপে সিনেমা দেখতে হলে গড়ে ৭ ইউরোর টিকেট লাগে। ইন্সব্রুক থেকে ব্রেনারের ভাড়াও প্রায় ৭ ইউরো।

আমার ফিরতি রুট একই। ব্রেনার থেকে আবার পৌঁছলাম বোলৎজানোতে। দুপুড় দেড় টায় পৌঁছে দেখি রোমের প্রথম সস্তা ট্রেন রাত সাড়ে ৯ টায়। উপায়ান্তর না দেখে বেরিয়ে পড়লাম বোলৎজানোতে। এটা জার্মান-ইতালির মিতালি শহর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে হিটলারের দখলেই ছিল, শহরের অধিকাংশ মানুষও জার্মান, ইতালিয়ানোর চেয়ে জার্মান ভাষাই বেশি চলে। স্টেশন থেকে বেরোলেই একটি ঝর্ণা এবং তার পরে বড় একটি পার্ক। পার্কে বসে কতক্ষণ সময় কাটানো যাবে হিসাব করছি এমন সময় মনে পড়ল বিফোর সানরাইজ সিনেমাটার কথা। নায়ক-নায়িকা ভিয়েনা দেখতে বেরোনর আগে লাগেজ রেখে গিয়েছিল বক্সে, ট্রেন স্টেশনে তো চাবিসহ বক্স থাকার কথা যেখানে লাগেজ রাখা যাবে, কিন্তু বোলৎজানোতে পেলাম না। পার্কের আশেপাশেই থাকতে হল। পুরো শহরটাই পাহাড় ঘেরা অনেকটা ইন্সব্রুকের মত।

পার্কে ঘুরতে ঘুরতে দূরের এক বেঞ্চিতে দুজনকে দেখে বাঙালি বলে সন্দেহ হল। কাছে গিয়ে দেখি মোবাইলে বাংলায়ই কথা বলছে। আমি আরেকটি বেঞ্চে বসলাম, অনেকক্ষণ তারা কথাই বললেন। কথা শুনে বুঝলাম, একজন গ্রামের চেয়ারম্যান ছিলেন, বোলৎজানোতে এসেও তিনি বাঙালি কম্যুনিটির মুরব্বি হয়েছেন। আরেকজন তার চ্যালা সেটাও বুঝে নিলাম। তাদের অবস্থা মোটেও আগের দুজন ওয়ার্কারের মত নয়, তারা খুবই সচ্ছল এবং বেশ ভাল টাকা-পয়সা কামিয়ে নিয়েছেন অলরেডি। ১ ঘণ্টা ধরে তাদের আলাপ-আলোচনায় টাকা-পয়সা ছাড়া অন্য কোন বিষয় আসেনি। দুজনেই বেশ বয়স্ক বলে একটু গুরু-গম্ভীরই ছিলেন। তাদের কাছেই আমি রোমের কাহিনী শুনলাম, বললেন, বোলৎজানোতে অত বাঙালি নেই, আজকে বাঙালি পেয়ে গেছি কারণ ছুটির দিন; এমন দিনে সবাই পার্কে হাওয়া খেতে আসে। সব মিলিয়ে হাজার খানেক বাঙালি আছে এই শহরে, তবে সবারই স্থায়ী চাকরি আছে এবং প্রায় কেউই অবৈধ নয়। রোমে হচ্ছে উল্টো, বাঙালির সংখ্যা অনেক বেশি হলেও মুরব্বির কথা অনুসারে রোমের শতকরা ৯৯ ভাগ বাঙালি রাস্তায় ফেরি করে, তাদের কোন স্থায়ী চাকরি নেই। পরিসংখ্যানটা বিশ্বাস না করলেও তার পরিস্থিতির ব্যাখ্যাটা আমার বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে।

কথাগুলো শুনে আনমনা হয়ে গিয়েছিলাম। মনে হয়েছিল যদি ব্রেনার পাস সিনেমাটা আরেকটা থিয়েটারে আবার দেখতে পারতাম। মানে যদি আবার গিয়ে দাঁড়াতাম ৪ নম্বর প্লাটফর্মে, ব্রেনারের বাস ধরার জন্য, দেখা হতো সেই ক-খ এর সাথে, তাদের দেখিয়ে দিতাম মেরানো যাওয়ার ট্রেন আর জানিয়ে দিতাম রোম আর বোলৎজানোর অবস্থা। বলতাম, আমার পরিচিত এক বাঙালি মুরব্বি আছে এই বোলৎজানোতেই। রোমে গিয়ে কোন লাভ নেই, ৩৫ টাকা খরচ করে গিয়ে দেখবেন কোন চাকরি নাই, সবাই রাস্তায় ফেরি করে, কোনদিন কত আয় হবে তার কোন ধারণা নাই। বরং বোলৎজানো জার্মানমুখী শহর, ভাবসাবই অন্যরকম, এটা ঐতিহ্যপ্রেমী ইতালি নয় বরং প্রযুক্তিপ্রেমী অক্সিডেন্টালদের শহর। এখানে একটা না একটা ব্যবস্থা হয়েই যাবে। জীবনে কত ঘটনা অসময়ে ঘটে, পুরো জীবনটাই আসলে অসময়ে ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনার সমষ্টি।

আল্পবাখ ভ্রমণ নিয়ে আমার কোনদিন কিছু লেখার ইচ্ছা হতো কিনা জানি না। আজকে লিখতে বসে গেছি স্টিফেন ফ্রিয়ার্স এর “ডার্টি প্রিটি থিংস” সিনেমাটা দেখে। অভিবাসীদের নিয়ে এর চেয়ে ভাল সিনেমা হয়েছি কিনা জানি না। এর পটভূমি লন্ডনে, নাইজেরিয়ার একজন অভিবাসীকে দিয়ে কাহিনীর শুরু, নাম ওকুয়ে, সে সারাদিন ট্যাক্সি চালায়, সারারাত হোটেল রিসেপশনে কাজ করে আর নিজের শরীরকে ২৪ ঘণ্টা জাগিয়ে রাখার জন্য অবৈধ হারবাল লতা-পাতা খায়। এক তুর্কী মেয়ের (সেনাই) এপার্টমেন্টের সোফায় থাকে ভাড়া দিয়ে। ওয়ার্ক পারমিট নেই বলে সেনাইয়ের কাজ করা নিষেধ, বেঁচে থাকার জন্য তাও তাকে লুকিয়ে কাজ করতে হয়, আর ভ্যাম্পায়াররূপী ইমিগ্রেশন অফিসাররা তাকে সর্বক্ষণ চোখে চোখে রাখার চেষ্টা করে। থ্রিলের শুরু হয় যখন ওকুয়ে হোটেলের একটি রুমের টয়লেট কমোডে একটি মানব হৃৎপিণ্ড আবিষ্কার করে। একসময় জানতে পারে অবৈধ অভিবাসীরা এই হোটেলে আসে কিডনির বিনিময়ে পাসপোর্ট নিতে। অদক্ষ ডাক্তার দিয়ে নষ্ট পরিবেশে অপারেশন করানোয় অনেকেই মারা যায়, তেমনই একজনের হৃৎপিণ্ড এসেছিল তার হাতে।

অবৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের প্রকৃত সামাজিক পরিস্থিতি সিনেমার একটি ঘটনায় ফুটে ওঠে। সেনাই একটি কাপড়ের ফ্যাক্টরিতে সেলাইয়ের কাজ করে, এই ফ্যাক্টরির সবাই অবৈধ, পুলিশ দেখলে ঘণ্টা বাজানো হয় এবং সবাই লুকিয়ে পরে। এ দিয়ে বোঝানো হয় অবৈধ অভিবাসীদের ছাড়া ইউরোপের শিল্প-কারখানা কতোটা অচল। পুলিশ এসে বৈধ নিয়োগদাতাকে সেনাইয়ের কথা জিজ্ঞাস করে, উত্তরে সে বলে দেখতে পাচ্ছ না ফ্যাক্টরি পুরো খালি, এখানে কেউ কাজ করে বলে মনে হয় তোমাদের? আশ্বস্ত হয়ে ইমিগ্রেশন অফিসাররা চলে যায়। নির্মম ডার্ক কমেডি এটা। অফিসাররা কিন্তু জানে ফ্যাক্টরি চলছে এবং এখানের সবাই অবৈধ বলেই ওরা আসার পর সবাই পালিয়েছে। কিন্তু তারা উচ্চবাচ্চ করবে না, কারণ তাহলে পুরো লন্ডনই খালি করে ফেলতে হবে। ওদের টার্গেট শুধু ওয়ার্ক পারমিটবিহীন সেনাইকে ধরা, নিজেদের ক্যারিয়ার ধরে রাখার জন্য একজনই যথেষ্ট। রোমের অবস্থাও এমন, হাজার হাজার অবৈধ শ্রমিক আছে এটি ওপেন সিক্রেট, কিন্তু কেউ এটা নিয়ে কথা বলে না, কারণ অবৈধ শ্রমিকদের মতো নামমাত্র মূল্যের মানুষ আর কোথায় পাওয়া যাবে? পরের দৃশ্যেই সেনাই ছায়াশ্রমিকদের আদর্শ প্রতিনিধিতে পরিণত হয়। ফ্যাক্টরির নিয়োগদাতা বলে পুলিশ তার খোঁজ করছিল। সে ধরিয়ে দিতে চায় না, কিন্তু বিনিময়ে তার শিশ্ন চেটে দিতে হবে। এই নিয়োগদাতাই পাশ্চাত্যের ককসাকিং প্রজন্মের প্রডাক্ট।

প্রকৃত অবস্থাই এটা। পুলিশ অবৈধদের নিয়ে মাথা ঘামায় না, মাঝেমধ্যে কিছু ধরপাকড় হয়তো করে, রোমে একেবারে করে না বললেই চলে। কারণ শিল্পমালিকদের স্বার্থ জড়িত আছে এতে। এই শ্রমিকদের অক্সিডেন্টের আসলেই দরকার, কিন্তু শুধু শুধু এদের বৈধ করে তো লাভ নেই, কারণ অবৈধদের ক্ষেত্রে কোন কর্মনীতি বা আইন খাটে না, তাদের ইচ্ছামতো খাটিয়ে নেয়া যায় নামমাত্র মূল্যে। রজার ইবার্টের রিভিউয়ে এরই প্রতিধ্বনি শোনা যায়,

How they live in constant fear of immigration officials, who want to deport them, even though a modern Western economy could not function without these shadow workers.

কিডনি খুইয়ে আর হৃৎপিণ্ড বাজি রেখে কিসের আশায় মানুষ এতদূর আসে সে প্রশ্ন করা বৃথা। সে প্রশ্ন কেবল পাগলেরাই করে। এক স্প্যানিশ পাগল আমাকে এমন একটা প্রশ্নই করেছিল। ফিরে যাই বোলৎজানোর পার্কে। ৪জন লোক আমাদের বেঞ্চির দিকে আসছিল, আমি এক কোণায় সরে এসে ওদের জায়গা দিলে বলল গ্রাসিয়াস। কথা শুনে বুঝলাম স্প্যানিশ। একজন পুরো পাগল, বাকিরাও ভাবের পাগল, তবে সবারই দৈন্য দশা। অর্থকড়ি কিছু আছে বলে মনে হয় না। পাগল লোকটা সেই শুরু থেকেই আমাকে খোঁচাচ্ছে। কারণ তার নাকি পুরো বেঞ্চটা লাগবে, আমি যেন অন্য কোথাও চলে যাই। বাঙালি দুজন যাওয়ার সময় ইতালিয়ান ভাষায় ওকে বুঝিয়ে বলল আমি ছাত্র, টাকা-পয়সা নাই। প্রথম কথা পাগল কিছুতেই মানতে রাজি না যে আমি পড়াশোনা করতে এখানে এসেছি, তার কথা পড়াশোনা করার কি দরকার, সে তো কোনদিন পড়াশোনা করেনি। উচ্চশিক্ষার তাৎপর্য বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে আমি মেনেই নিলাম আচ্ছা আমি ভাই কাজ করতেই এসেছি। উঠে যাচ্ছিলাম না শেষটা দেখতে। তারপরই বাঙালিদের নিয়ে তার হা-হুতাশ শুরু, সে বলে কিসের কারণে এই দেশে আসে অন্যের পা চাটতে যদিও সে নিজে সর্বদাই এই কাজ করে যাচ্ছে। তারপরও কথা শুনে মজা পেলাম। সে আমার কাছে টাকা ধার চায়, আবার কোনদিন দেখা হলে দিয়ে দেবে, সে যে কপর্দকশূন্য না তা বোঝানোর জন্য পকেট থেকে কয়েক পয়সার ক্রোনার বের করে দেখালো আর আমাকে খুব বুঝিয়ে বলল এগুলোর একেকটার টাম কয়েক শ ইউরো। আমার যদ্দূর মনে হয় এরা এখানে আটকে গেছে, ভাড়া নেই বলে কোথাও যেতে পারছে না, যদিও সত্যটা জানা হবে না কোনদিন। কয়েক পয়সা দিয়ে কেটে পড়লাম ওখান থেকে, কারও বিশ্বাস নেই, নিরিবিলি হওয়ার আগেই কেটে পড়া উত্তম।

ট্রেনে ওঠার আগে আরও দুই বাঙালির সাথে দেখা। একজনের পরিবারও এখানে আছে। স্বামী-স্ত্রী আর তাদের দুই ছেলে, পার্কে ঘুরতেই এসেছিল, এখন বাড়ি ফিরছে। মুরব্বির কথা যে মিথ্যা নয় তা বুঝে গেলাম মোটামুটি। বোলৎজানোর বাঙালিরা বেশ বিত্তশালী এবং সংগঠিত। কারণ মুরব্বির কথা বলতে তারা খুব ভালই চিনতে পারল। অবশেষে আমি সব গুছিয়ে নিয়ে রাত সাড়ে নয়টায় ট্রেনে উঠলাম। রোমে ফিরে দেখি মেট্রো মেরামতের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। এ বাস ও বাস করে বহু কষ্টে ৩ ঘণ্টা লাগিয়ে বাসায় ফেরার পর কিছু মনে ছিল না, একটি সামান্য যাত্রার সাধারণ ঘটনাগুলো কারই বা মনে থাকে, ভুলে যেতে কতোই বা সময় লাগে। আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেও কিছু একটা লিখে স্মৃতিটা মাথা থেকে নামিয়ে ফেলাই উত্তম।

মাথাচাড়া দেয়ার কারণ ৩টি। প্রথমত, ডার্টি প্রিটি থিংস সিনেমাটা। দ্বিতীয়ত, বোলৎজানোতে ট্রেনে ওঠার আগে পুলিশ আমার পাসপোর্ট চেয়েছিল। ইউরোপে আসার পর এই প্রথম রাস্তায় কারও আমার পাসপোর্ট দেখতে চাওয়া। অস্ট্রিয়া আমি পাসপোর্ঠ ছাড়াই চলে যেতে নিয়েছিলাম, কারণ কোথাও তো পাসপোর্ট দেখাতে হয় না। কত বড় ভুল সিদ্ধান্ত হতো ভাবছিলাম তখন। আর মনে হচ্ছিল অবৈধ কারও কাছে কি এভাবে পাসপোর্ট চাওয়া হয় না? আমার কেন জানি একটা হরর অনুভূতি এটা নিয়ে, সব সময়, জানি না আর কতদিন এক দেশের নাগরিক আরেক দেশে গিয়ে হরর সিনেমার অনুভূতি পাবে, আর কত দিন পর পৃথিবী এক হবে, জন্ম হবে ইউনাইটেড আর্থ স্পেস এজেন্সির। তৃতীয়ত, বর্তমানে আমিও ইতালিতে অবৈধ। জার্মান এম্বেসি কেন এটা করল তা আমার মাথায় নেই। আর ইতালীয় প্রশাসন ফেস করার মত দুর্বুদ্ধি আমার কখনোই ছিল না। আমার ইতালির ভিসার মেয়াদ শেষ হল আজকে, কিন্তু জার্মান ভিসা শুরু হচ্ছে সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখ থেকে। ২৩ দিনের জন্য কোন ভিসা নেই। ভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন অফিসকে জানিয়ে লাভ হয়নি কোন, সবাই দায়িত্ব এড়াতে চায়। জার্মান এম্বেসিকে অনেক বলেও লাভ হয়নি। রাষ্ট্র, পররাষ্ট্র আর মন্ত্রণালয়-সচিবালয়ের এসব ধাক্কা থেকে যে মানুষ কবে মুক্তি পাবে সেই অর্থহীন ও গুরুত্বহীন চিন্তাও আমি করে যাই সবসময়।

অবৈধ অভিবাসীদের জন্য তাও ইতালি কিছুটা সুবিধাজনক। প্রশাসনিক অবস্থার বেহাল দশা এবং নিজেদের প্রয়োজনে এখানে কেউই কিছুতে মাথা ঘামায় না। অনেককে দেখেছি ফ্রান্সে যাওয়ার জন্য প্রথমে ইতালিতে আসে। জানি না কেন, প্রথমে ইতালির ভিসা নিয়ে ইতালিতে আসে কারণ বোধহয় এই ভিসা পাওয়া সহজ। ইতালির ভিসা থাকলে যেহেতু ইউরোপের সব দেশেই যাওয়া যায় তাই সেই তেরমিনি থেকে ট্রেনে সোজা চলে যায় প্যারিসে। ফ্রান্সে আবার রাজনৈতিক আশ্রয়ের সুযোগ অবারিত, তাই প্যারিস গিয়ে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে। প্যারিসের রাজনৈতিক আশ্রয় বলি আর রোমের অবৈধ আশ্রয়ই বলি সবই যে অক্সিডেন্টাল অর্থনীতির ফাঁক এবং এই ফাঁক সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা তো দূরের কথা এটা নিয়ে যে তারা মানবিকভাবে ভাবতেও চায় না সে নিশ্চিত।

আমিও যতই চেঁচাই ইউরোপিয়ান অর্থনীতির এই ককসাকিং প্রজন্ম কি বিলুপ্ত হবে? আমি সবসময়ই কেবল সিনেমার গোবেচারা দর্শকের মত স্টিফেন ফ্রিয়ার্সের সাথে একমত পোষণ করব: প্রতিটি অর্থনীতির যে ফাটল থাকে সেই ফাটলের মধ্য দিয়ে উঁকি দিলে পরে মানবতার প্রকৃত রূপ বেরিয়ে আসে। মডার্ন আর্কিটেকচারের মিনিমালিস্ট ভবনেও এই মানবতার ঠাঁই হয়নি এখনও, প্রকৃত মানবতা মহাশূন্যের মহা অনর্থের মাঝে যেখানে দালান-কোঠা নেই কোন।

২,৩৩২ বার দেখা হয়েছে

১৫ টি মন্তব্য : “অক্সিডেন্ট আর ছায়াশ্রমিক- মধ্যিখানে ব্রেনার পাস”

  1. রাব্বী (৯২-৯৮)

    মুহম্মদ, অনেক দিন পর তোমার লেখা পড়লাম।

    অভিবাসনের এই অবস্থার উপর একটু ধারণা আছে এবং ডার্টি প্রিটি থিংস দেখা তাই লেখাটা ধরতে পারলাম সহজে। একটা জার্নির গল্পের ভিতর কত সাংঘাতিক সত্য পরিস্থিতির কথা বললে। উইলিয়াম র্যাডিচির একটা লেকচার শুনেছিলাম ঢাকাতে "ফিউচার অফ বাংলা... গ্লোবালাইজেশন," সেখানে ইটালিতে বাঙালিদের কথা উনি উল্লেখ করেছিলেন তোমার মতো একইভাবে। র্যাডিচি আরো বলেছিলেন যে ইউরোপে বাংলা+বাঙালি সংস্কৃতি টিকে থাকবে এই অবৈধ শ্রমিকদের জন্যই।

    অক্সিডেন্ট শব্দটি ইচ্ছে করে ব্যবহার করেছো কিনা জানি না। অক্সিডেন্টের বাংলা ব্যবহৃত হয় প্রতীচ্য। অরিয়েন্ট যেমন প্রাচ্য।


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
    • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

      আমি আসলে বেশ ভয়ে ভয়েই লিখছি লেখাটা, জানি না কতোটা সত্য। সব দেখে নিজের যা মনে হয়েছে তাই লিখে ফেলছি। এখন আপনার কথা শুনে বুঝলাম খুব একটা ভুল ভাবিনি। অক্সিডেন্ট এর বাংলা প্রতীচ্য মাথায় ছিল না, মাথায় থাকলে হয়তো ব্যবহার করতাম, শিরোনামে না হয়তো তবে লেখার মাঝে প্রতীচ্যই বেশি মানাতো।

      জবাব দিন
  2. মুরাদ (৯০-৯৬)
    আমি সবসময়ই কেবল সিনেমার গোবেচারা দর্শকের মত স্টিফেন ফ্রিয়ার্সের সাথে একমত পোষণ করব: প্রতিটি অর্থনীতির যে ফাটল থাকে সেই ফাটলের মধ্য দিয়ে উঁকি দিলে পরে মানবতার প্রকৃত রূপ বেরিয়ে আসে। মডার্ন আর্কিটেকচারের মিনিমালিস্ট ভবনেও এই মানবতার ঠাঁই হয়নি এখনও, প্রকৃত মানবতা মহাশূন্যের মহা অনর্থের মাঝে যেখানে দালান-কোঠা নেই কোন।

    মুহম্মদ, তুমি আসাধারন লেখ! ফ্যান লিস্টে নাম জমা দিলাম।


    শামীম মুরাদ

    জবাব দিন
  3. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    মুহাম্মদ তুমি, আমি ভেবেছিলাম কে না কে 😛

    অক্সিডেন্টাল মানে কি যেন? 😕 সহজ করে বল, রাব্বী মত করে না।

    তোমার দিনকাল কেমন যায়, একা একা লাগে না ।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
    • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

      অতো মানেটানে জানি না 😀
      একা থাকতে আমার অভ্যাস আছে। তাই অতোটা লাগে না। একা থাকলে মুভি দেখা যায় বেশি, তবে কাজের কাজ হয় না। এখন ভার্সিটি বন্ধ, তাই শত চেষ্টা করেও আমি থিসিসের কাজ শুরু আগাতে পারতেছি না। কিন্তু ভার্সিটি খোলা ছিল যখন তখন কাজের কাজ সবই হতো।

      জবাব দিন
  4. এহসান (৮৯-৯৫)

    এতো কম লিখো কেনো? এখন তো ইউনি বন্ধ... অনেক সিনেমাও দেখছো... তাই আরো কয়েকটা লেখা নামিয়ে ফেলো। বোলোনিয়া, বোলৎজানো আর BOLOGNA কি একই জায়গা নাকি? আমি বোলোনিয়া গেসিলাম...ঐখানে শুধু বাংগালী দেখি নাই... বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বোলনিয়া শাখার অফিস দেখলাম।

    জবাব দিন
  5. সাব্বির (৯৫-০১)

    প্রথম কয়েক প্যরা পড়ে কনফিউসড হইয়া গেছিলাম এইটা কোন মুহাম্মদ।
    পরে সিনেমা, পরিচালকের নাম আসার সাথে সাথে বুঝে ফেলছি, এইটা মুভি মুহাম্মদ।
    কেমন লাগছে বিদেশ? প্রথম প্রথম আমার যে প্রবলেম হয়েছে তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে খাওয়ার সমস্যা। এখন আর সমস্যা নাই, ডিম ভাজি থেকে শুরু করে বিরিয়ানী সবই পারি।

    জবাব দিন
  6. অসাধারণ লেখা। অনেকদিন পর কোনো লেখা এতটা মগ্ন হয়ে পড়লাম। এর বেশি আসলে বলার মতো কিছু নাই আর। সিনেমাটা দেখা হয় নি। দেখার ইচ্ছা জাগলো। ভালো থেকো। সময়-সুযোগ করে নিয়মিত লিখো।

    জবাব দিন
  7. মনজুর (৮৯-৯৫)

    খুব সময়মত লেখাটা দেখলাম এবং পড়লাম। এখন ডার্টি প্রিটি থিংস মুভিটা দেখবো। আর ২০ দিনের মধ্যে আমাকে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে একটা মাস্টার্সের থিসিস জমা দিতে হবে। কয়েকটা লাইনতো মনে গেথে গেছে, শুধু ইংরেজিতে অনুবাদ করে বসায়ে দিবো।
    অসাধারণ লেখা। ধন্যবাদ এমন লেখা পড়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মনজুর (৮৯-৯৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।