একাদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব – ২

আজ আর সকালে যাওয়া হল না। ১ টার আগে তো যেতেই হতো, জাক দেমি-র সিনেমা দেখার জন্য। যে সময়ে রওনা দিয়েছিলাম তাতে জাম আরেকটু জেঁকে বসলেই মুভির অর্ধেকটা মিস হয়ে যেতো। তেমন কিছু হয় নি, ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম শাহবাগ, মুভির প্রথম ৩ মিনিট মিস করলাম। আজ অবশ্য একা ছিলাম না, গিয়ে দেখি আন্দালিব ভাই ও লিংকন অলরেডি এসে পড়েছে, আমি আর তাওসিফ মিলে হল ৪ জন। এক দৌড়ে টিকেট কেটে বসে পড়লাম।

যা বুঝলাম উৎসবের সকাল পর্বটায় মানুষ খুব কম থাকে। দুপুড় থেকেই ভিড় বাড়তে শুরু করে। যেমন আজকের জাক দেমি দেখতে ২০-৩০ জন বসেছিল। তাও দুপুড় বলে কিছুটা কম হওয়া স্বাভাবিক। ৫:৩০ এবং ৭:৩০ এর শোতে মানুষ হয় সবচেয়ে বেশি, সামাজিক গণিতের সাথে অবশ্য এটা মিলেও যায়। অডিটোরিয়ামগুলোর মধ্যে জাতীয় জাদুঘরের শহীদ জিয়া অডিটোরিয়ামটাই সবচেয়ে ভাল, এরপরে আসবে পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তন, আর জাদুঘরের সুফিয়া কামাল অডিটোরিয়ামের অবস্থা খুব একটা ভাল না। আগের দিনের চেয়ে আজকে উৎসব যে বেশি জমে উঠেছে এটা না বোঝার কোন কারণ ছিল না। বুথের সামনে এতো ভিড় আগের দিন চোখে পড়ে নি। টিকেট কাটতে আগের দিন কোন ভিড়ের মুখোমুখি হতে হয় নি। সেন্সর বোর্ডের বদৌলতে অপ্রীতিকর অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে আজকেও, একবার না, বেশ কয়েকবার, সে কথায় পরে আসছি।

লে পারাপ্লুই দ্য শের্বুর (Les Parapluies de Cherbourg – The Umbrellas of Cherbourg) [জাক দেমি, ১৯৬৪]

opt_003029

জাক দেমি দ্বিতীয় দিনও মুগ্ধ করলো। এবার অবশ্য খালি হাতে যাই নি। প্রথম দিনের লক্ষ্য ছিল আগে থেকে তেমন কিছু না জেনেই একজন বিখ্যাত ফরাসি পরিচালকের সাথে পরিচিত হওয়া। এবার অন্তত এটুকু জানতাম যে, সিনেমাটা মিউজিক্যাল, সকল কথোপকথনই সুর এবং ছন্দের তালে তালে। এতে একটা সমস্যাও হয়েছে, ফরাসি না বোঝার কারণে সুর এবং ছন্দের সৌন্দর্য্যটা পুরোপুরি অনুভব করতে পারি নি। সাবটাইটেল দেখে ভাবটা বোঝা গেছে, তার সাথে ছবি এবং সুর মিলিয়ে নিতে হয়েছে।

জাক দেমি ফরাসি নবতরঙ্গ আন্দোলনের চলচ্চিত্রকার হলেও সে যুগের অন্যান্য পরিচালকদের থেকে একটু ভিন্ন। অন্যান্যরা যেখানে হলিউডের পতনে মর্মাহত হয়ে নিজেরা সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে সিনেমাকে জাগিয়ে তোলার কাজ শুরু করেছে, সেখানে জাক দেমি হলিউডের স্বর্ণযুগের স্টাইলকেই পুঁজি করেছে। এই মিউজিক্যালটার সাথে হলিউডের মিউজিক্যালগুলোর মিল দেখার পরই কেবল দেমির হলিউডী প্রভাবের তাৎপর্য বুঝলাম। তবে অনেক দিক দিয়েই জাক দেমি স্বতন্ত্র। তার সিনেমা যাকে বলে নৈসর্গ্যিক সুন্দর, মিউজিক্যাল বলে সৌন্দর্য্যটা আরও পরিস্ফূটিত হয়েছে। সুরের পাশাপাশি মিজঁসেন তথা ব্যাকগ্রাউন্ড, ফোরগ্রাইন্ড ইত্যাদিও মুগ্ধ করেছে।

শের্বুর শহরে একটি ছাতার দোকানের মালিক এমেরি, তার মেয়ে জেনেভিয়েভ সিনেমার প্রধান চরিত্র। শের্বুরেরই একটি ছেলের প্রেমে পড়ে জেনেভিয়েভ, কিন্তু ছেলেটিকে চলে যেতে হয় আলজেরিয়ার যুদ্ধে। যুদ্ধের কারণেই সময়ের স্রোত অন্যদিকে বইতে শুরু করে, একেক জনকে একেক দিকে নিয়ে যায়। এই সরল সামাজিক স্রোতের কাহিনীই সুরে সুরে বলেছেন জাক দেমি। কাহিনীর চমক বা ভেল্কি দিয়ে দর্শকদের ওভারলোড করে দেয়ার কোন চেষ্টা নেই, অর্থাৎ যথারীতি আবার সেই ফরাসি পরিমিতিবোধ। সিনেমাটার সবচেয়ে ভাল সংজ্ঞা হতে পারে, আগাগোড়া ফরাসি, ফরাসি শৈল্পিক সংস্কৃতির পরিচায়ক।

যুদ্ধের আগে আগে শেষ বারের মত জেনেভিয়েভ তার প্রেমিকের সাথে মিলিত হয়, যে মিলন ভবিষ্যতে তাদের ভিন্ন সময়স্রোতকে একসাথে বেঁধে রাখার কাজ করে বা করার চেষ্টা করে। সেই মিলনের আগে রাস্তা ধরে হেটে যাচ্ছিল দুজন, কথা হচ্ছিল সুরে সুরে, ছেলেটির সাথে সাইকেল ছিল- দৃশ্যটা অসাধারণ। বাসায় ঢোকার ঠিক আগে তারা যখন কিস করে তখন অর্ধেক বাসা এবং অর্ধেক রাস্তা, বাসার নানা স্তর আর রাস্তার নানা রঙ মিলিয়ে একটা অভূতপর্ব দৃশ্য তৈরি হয়েছিল। এছাড়া ট্রেনে স্টেশনে প্রেমিককে বিদায় জানানোর সময়টা খুব নান্দনিক ছিল। সমাপ্তি টানার ক্ষেত্রে যে জাক দেমি অনবদ্য এটা বুঝতে আর বাকি নেই। সূচনা বলতে পারবো না, কারণ দুটো সিনেমারই প্রথম ৩-৫ মিনিট মিস করেছি। তবে শেষে ক্যামেরা ধরে দেমি যে টানটা দেয় সেটা ভুলে যাওয়া আক্ষরিক অর্থেই অসম্ভব।

তন্দুরী লাভ (Tandoori Love) [সুইৎজারল্যান্ড]

2

এই সিনেমাটা দেখা নিয়ে সন্দেহে ছিলাম। অপশন ছিল দুটো: মালয়েশিয়ার বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ইয়াসমিন আহমেদ এর Tale N Time নাকি সুইৎজারল্যান্ডের তন্দুরী লাভ? তার ওপর তন্দুরী থাকার অর্থই ধরে নিয়েছিলাম যে ভারতের সাথে কোন সংশ্লিষ্টতা আছে। ইয়াসমিন আহমেদ এই ২০০৯ সালেই মারা গেছেন। তার সাথে পরিচিত হওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু অডিটোরিয়ামটা ভাল না বিধায় কি মনে করে যেন তন্দুরী লাভ দেখতেই ঢুকে গেলাম এবং যথারীতি পস্তাতে হল। সিনেমাটা দেখে মন ভরে নাই, যদিও দর্শকদের কাছে এটার গ্রহণযোগ্যতাই ছিল সবচেয়ে বেশি। পস্তানোর মাত্রাটা আরও বেড়েছে যখন তন্দুরী প্রীতি শেষ হওয়ার পর দৌড়ে জাদুঘরের সুফিয়া কামাল অডিটোরিয়ামে গিয়ে ইয়াসমিন আহমেদ এর Tale N Time এর শেষ ৫ মিনিট দেখলাম। শেষ ৫ মিনিট দেখেই আমি মুগ্ধ- মনে হচ্ছিল উৎসবের একটা দিন পুরাই বৃথা গেল।

বাংলাদেশে চলচ্চিত্র উৎসবের সংস্কৃতি এখনও জমে উঠেনি। দর্শক খুব একটা থাকে না, আর থাকলেও সবার মনোযোগ থাকে না। সিনেমা শেষে হাতাতালি দেয়াটা যেখানে আন্তর্জাতিক সব চলচ্চিত্র উৎসবে একটা টার্নিং পয়েন্ট বাংলাদেশে সেখানে এটা কেবলই ফরমালিটি। কান এর মত স্ট্যান্ডিং ওভেশন বা সাধারণ হাতাতালি দিয়ে সিনেমা বিচার করলে ঢাকা উৎসবের অবমাননা হবে। তন্দুরী লাভ দেখেই তা বুঝলাম। এই সিনেমায় দর্শক বোধহয় ৫০-র মত ছিল। সিনেমা শেষে টানা হাতাতালি না হলেও দর্শকদের মুখের এক্সপ্রেশন দেখেই বুঝে গেলাম অধিকাংশের ভাল লেগেছে, সবাই সন্তুষ্ট, যদিও আমাকে বের হতে হয়েছে মলিন বদনে।

আরেকটা বড় সমস্যা ছিল সেই অপ্রীতিকর অবস্থা। সিনেমার মধ্যে কম করে হলেও ৫ টি সেক্স সিন ছিল এবং প্রত্যেকটাকেই সেই ফ্যাসিস্ট উপায়ে কর্তন করা হয়েছে। ব্যাপারটা দেখতে খুব বাজে লাগে। যেই না দুজনের ঠোটে ঠোট লাগল, চারটি হাতের নড়াচড়া এবং প্লেসমেন্ট বদলাতে শুরু করল, পা গুলো নিজেদের জায়গা করে নেয়ার চিন্তা শুরু করল সেই কিনা পর্দা হয়ে গেল কালো, তাও আবার সবাক অবস্থায়, শোনা যাচ্ছে সব, দেখা যাচ্ছে না কিছুই। কখন দৃশ্যগুলো শেষ হচ্ছে সে বিষয়েও কর্তৃপক্ষের জ্ঞান নেই। চেক করার জন্য পর্দা খুলে দেয়ামাত্রই দ্বিগুণ বিব্রতকর একটা পরিস্থিতি: পা গুলো ততোক্ষণে নিজেদের জায়গা খুঁজে পেয়েছিল মাত্র, তৎক্ষণাৎ আবার সব কালো। এই বিষয়টা নিয়ে উৎসব কর্তৃপক্ষ তথা রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের আগেই ভাবা উচিত ছিল। সেন্সর যেহেতু করতেই হবে তখন সেটা সঠিক উপায়েই কি করা উচিত ছিল না? অর্থাৎ ভিডিও এডিটিং এর মাধ্যমে। বাছাইকৃত অংশগুলো আগে কেটে রাখলেই হতো। সেক্ষেত্রে ঝামেলা একটু বাড়তো, আরো প্রফেশনাল হওয়া লাগতো। তাছাড়া ডিরেক্টর্স কাটে পরিবর্তন করার জন্য অনুমতি নেয়ার বিষয়ও ছিল। শুনেছি, দেশীয় সেন্সর বোর্ডের ভয়েই বিদেশী অনেক চলচ্চিত্রকার সিনেমা দিতে চান না। আশাকরি ভবিষ্যতে সেন্সর বোর্ড আরও চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেবে। সত্যজিৎ রায় একবার বলেছিলেন, বিদেশী চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে গেলে মনে হয় মানব-মানবীর যৌন সম্পর্কই সিনেমা করার একমাত্র বিষয়বস্তু, নেতিবাচক নয় ইতিবাচক অর্থেই বলেছিলেন। আশাকরি একদিন এদেশের রঙ্গালয় গুলোও দেয়াল ভেঙে রাস্তায় নেমে আসবে।

সিনেমা নিয়েই কিছু বলা হলো না। তন্দুরী লাভ এর কাহিনী হচ্ছে: বলিউডের সিনেমার শ্যুটিং করার জন্য ভারত থেকে একটা দল সুইৎজারল্যান্ডে গিয়েছে। নায়িকার ব্যক্তিগত বাবুর্চি সেদেশে গিয়ে হারিয়ে গেছে, তাই নায়িকা রেগেমেগে অস্থির। হিন্দি সিনেমার মতো এখানেও ৫ টা গান আছে, তবে কমার্শিয়াল উপায়ে না গিয়ে এখানে ডে-ড্রিম সিকোয়েন্স বা গানের শুটিং হচ্ছে এমন ভাব নিয়ে গানগুলো নিয়ে আসা হয়েছে। প্রধান চরিত্রে সুইস এক ওয়েট্রেস, বাবুর্চি যার প্রেমে পড়ে। সুইস ওয়েট্রেস আর ভারতীয় বাবুর্চির প্রেম নিয়েই সিনেমা। ম্যাজিক রিয়েলিটি এবং art of food সিনেমায় ফুটিয়ে তোলার খুব চেষ্টা করা হয়েছে যদিও আমি বলব, দ্বিতীয়টায় বেশ সফল হলেও প্রথমটাতে পরিচালক একেবারেই সফল হন নি। ক্লাসিক মেক্সিকান সিনেমা “লাইক ওয়াটার ফর চকলেট” এর সাথে থিমেটিক অনেক মিল আছে, কিছু ক্ষেত্রে সেগুলোর সফল প্রয়োগও ঘটেছে, তবে সার্বিকভাবে সন্তোষজনক না। অনেক কিছুই আধিক্য মনে হয়েছে। অবশ্য এই বাহুল্যের কারণেই সিনেমা শেষে সবার মুখে তৃপ্তির ছাপ হিসেবে হাসি ফুটে উঠেছিল।

মোহন জোশি হাজির হো! (সাঈদ আখতার মির্জা – ভারত, ১৯৮৪)

3

এই প্রথম আমি একটা হিন্দি সিনেমা দেখে এক্কেবারে মুগ্ধ হলাম, বিমোহিত হলাম। এতো চমৎকার সমাজ-রাজনৈতিক স্যাটায়ার জীবনে খুব বেশি দেখি নি। পরিচালক সাঈদ আখতার মির্জা এই চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন, বক্তৃতাও করেছেন। ভারতের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এসব নিবেদিত প্রাণ পরিচালকদের সিনেমা যেন জনপ্রিয়তা অর্জন না করতে পারে সেজন্য এগুলোকে কষা বা জনবিমুখ ধারার সিনেমা হিসেবে মূল ধারা থেকে সরিয়ে দিয়েছে। প্যারালাল সিনেমা নাম নিয়ে এরা কোনমতে বেঁচে বর্তে আছে। যদিও সময়ের বিচারে এরাই সফল হয়, হারিয়ে যায় সকল বানিজ্যিক সিনেমা। এই উৎসবে ১৪ তারিখ থেকেই প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭:৩০ এ জাতীয় জাদুঘরের শহীদ জিয়া অডিটোরিয়ামে সাঈদ আখতার মির্জার একটি করে সিনেমা দেখানো হচ্ছিল, আজকেই ছিল এই সিরিজের শেষ সিনেমা। গতকালের সিনেমা “নাসিম” এর বিষয়বস্তু ছিল ১৯৯২ সালের বাবরী মসজিদ ভাঙার ঘটনা।

আর আজকের সিনেমার বিষয়বস্তু ছিল মুম্বাই শহরের ঘিঞ্জি (পুরান ঢাকা টাইপের) এলাকায় মোহন জোশি নামের একজন মানুষের সংগ্রাম। সিনেমা শুরু হয় মুম্বাই শহরের চালচিত্র দিয়ে, অসংখ্য খণ্ড খণ্ড চলচ্চিত্র জোড়া লাগিয়ে মন্টাজ তৈরি করেন আখতার মির্জা, ব্যাকগ্রাউন্ডে চলে বোম্বে নিয়ে একটা গান। দেশাত্মবোধক থেকে হঠাৎই গানটা হয়ে ওঠে বিপ্লবী। বলে চলে, এই শহরে বহুতল ভবন আছে, দাবী করা হয় এখানে স্বর্গ এখানেই শান্তি, কিন্তু আসলে সবই ফক্কিকার। শহরে নাকি আবাসনের অভাব নেই, অথচ রাস্তায় পরে রয়েছে ছোট্ট শিশু, শহরে নাকি মানবেতর জীবনের ছাপ নেই, অথচ পঙ্গু হেটে হেটে ভিক্ষা করছে, বহুতল ভবনের পাশেই রাতভর খেটেও জীবিকা জোটাতে পারছে না মানুষ, কারখানা থেকে অবিরাম দূষিত বাতাস বেরোচ্ছে, বিষাক্ত হয়ে গেছে মানুষের অন্তর। তারপরও নাকি এই শহরে কমপ্লেইন করার মতো কিছু নেই, খাও দাও ফূর্তি কর আর শহরের ঈশ্বরের পূজা কর। কিন্তু মোহন জোশি এমন এক ব্যক্তি যে কেবলই কমপ্লেইন করে। গান শেষ হয়, ক্রেডিট দেখানো শেষ হয়, গানের শেষ লাইনগুলো মোহন জোশির সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়, তারপর জোশিই সিনেমা এগিয়ে নিয়ে যায়।

শুরু হয় তীক্ষ্ণ সামাজিক স্যাটায়ার। মোহন জোশি স্ত্রী, দুই ছেলে, বড় ছেলের স্ত্রী ও নাতি নিয়ে যে বাড়িতে থাকে সে বাড়ির অবস্থা বড়ই সঙীন, আশপাশের সবগুলো বাড়িই ভেঙে পড়ার উপক্রম করছে। কিন্তু কেউ মালিককে কিছু বলবে না, কোর্টেও যাবে না, শুধু শুধু ঝামেলা করার কি দরকার। মোহন জোশি স্ত্রীকে সাথে নিয়ে পথে নামে, মালিকের কাছে যায়। মালিকের দুই পাশে দুই কোট-টাই পরা টারান্টিনো স্টাইলের গ্যাংস্টার দেখা যায়। গ্যাংস্টার দ্বয় যেন মালিকের টলারেন্স লিমিট নিয়ন্ত্রণ করে। প্রত্যাখ্যাত হয়ে কোর্টে যায় তারা। পরিচয় হয় সবচেয়ে স্যাটায়ার ধর্মী চরিত্র তথা আইনজীবীটির সাথে। এই প্রথম নাসিরুদ্দীন শাহ-র অভিনয় দেখলাম। আইনজীবীর চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন। চতুর আইনজীবীর খপ্পরে পড়ে জোশি পরিবারের অর্থ-সম্পত্তি সব ফুরিয়ে যেতে থাকে, বছরের পর বছর পেরিয়ে যেতে থাকে, কিন্তু মামলার কোন নিষ্পত্তি হয় না। সিনেমাটা অনেকটা কোর্টরুম ড্রামা টাইপের। আদর্শ কোর্টরুম ড্রামার মতোই এখানে কোর্টরুম মানে কেবল আদালত না, পুরো বিশ্ব। এই বিশ্বে কেবল অর্থহীন আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক আর হাসি-কান্না চলে, কাজের কাজ কিছুই হয় না। বিপ্লবে যে নেতৃত্ব দিয়েছিল সে এক সময় হারিয়ে যায়, অধিকাংশ সময় বিপ্লব নিভে যায়, কখনো বা আবার জেগে ওঠে।

4

মোহন জোশি হাজির হো কথোপকথনভিত্তিক সিনেমা, অনেক চমৎকার চমৎকার ডায়লগ আছে। এটা দেখে যে বেদনাদায়ক মজা পাওয়া যায় সেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না…

[চলবে…]

১১ টি মন্তব্য : “একাদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব – ২”

  1. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    নাসিরুদ্দিন শাহের ফ্যান ছিলাম বহু আগে থেকেই-দুর্দান্ত এই অভিনেতার মূলধারার বানিজ্যিকধর্মী ছবি যেমন "এ ওয়েডনেসডে" বা "শুট অন সাইট" খুব ভাল লেগেছে।

    জবাব দিন
  2. আন্দালিব (৯৬-০২)

    মালয়েশিয়ানটা দেখলেই ভালো করতা। 😛

    সাঈদ আখতার মির্জার ছবিটা দেখতে পারলাম না বলে আফসোস হচ্ছে! আসলে একটা ছবি দেখে আফসোস অনেক বেড়ে গেছে। আগেরদিনের গুলো দেখতে পারি নাই। 🙁

    আজকে ৫:৩০ আর ৭:০০ টার ছবিগুলো দেখতে হবে! 😀

    জবাব দিন
  3. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    কালকেই তোর পোস্টে লম্বা কমেন্ট করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সময়ের অভাবে পারিনি। ঢাকায় আছি এবং একটা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব হচ্ছে আর সেখানে যেতে পারছি না এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে!
    ভাগ্যিস পোস্টটা দিছিস তাই.....স্বান্ত্বনা..

    এনিওয়ে, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের বেশ কয়েকটি ফেস্টিভ্যাল হয়। একটা জাহিদুর রহিম অঞ্জনদের শর্ট ফিল্ম ফোরাম করে (এটাই সবচেয়ে ভালো হয়), শোভন ভাইদের রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি,একটা করে ফিল্ম সোসাইটি ফেডারেশন(এরা সব ফিল্ম সোসাইটির সমন্বিত পরিষদ, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় সবচেয়ে বড় পরিসরে হয়, গোলাম রব্বানী বিপ্লব এটার হর্তাকর্তা এবং অসংখ্য হিন্দি বাণিজ্যিক ছবি এনে ভরপুর করে ফেলে সিনেমাহলগুলো..তাই পয়সা আর পয়সা), মোরশেদ ভাইর চিলড্রেন ফিল্ম সোসাইটি একটা করে এবং এটার ছবির মান ভালোই।

    যখনই এই চলচ্চিত্র উৎসবগুলো হয় তখনই সব ফিল্ম সোসাইটিজ একসাথে কাজ করে। বেশ ভালো একটা পরিবেশ। আমরাও করতাম। গেট ধরা, টিকিট, টর্চম্যান প্রকাশনা...মজাই মজা।
    আর কাজ ফাকি দিয়ে চামে ছবি দেখা। আমার এক :just: ফ্রেন্ড প্রেমও তো হলো.... 😛

    হ্যা, জাদুঘরেরে অডিটোরিয়ামটাই সবচেয়ে ভালো দেখতে এবং শব্দেও।

    আর ছবি সব যে ভালো আসে তা নয়, তবে দু একটা অনেক অনেক ভালো থাকে। আমন্ত্রণ জানানো হয় সব দেশকেই তবে বেশিরভাগই আসে না। আর যারাও আসে হয়ত তাদের রেট্রোস্পেকটিভ হবে সেই কারণে। কিংবা উঠতি পরিচালক।

    আমি জানি না ছবি এখন কিভাবে দেখাচ্ছে তবে আমরা কিন্তু ৩৫মিমি প্রজেক্টরেই দেখাতাম। এখনও নিশ্চই সে চর্চাই থাকবে। তবে বাংলাদেশে পোর্টেবল এই প্রজেক্টরের সংখ্যাও অবশ্য বেশি নাই। এর মধ্যে তা যত্নের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে কি না কে জানে?

    বাংলার কোনো প্রদশর্নী হচ্ছে না? যেমন আলমগীর কবির, জহির রায়হান কিংবা শেখ নিয়ামত আলী। বা কোলকাতার?
    মজার ব্যাপার হচ্ছে এত আয়োজন যে করছে সেই রেইনবো ফিল্ম সোসাইটির শোভন ভাইকে আমি কখনও ছবি দেখতে দেখি নি। হয়ত কোনো আলোচনায় কথা বলছে কিন্তু যেই ছবি শুরু করলাম অমনি সে হাওয়া।

    কয়েকটা পয়েন্টে পরে কথা বলব নে যেমন

    দর্শক খুব একটা থাকে না, আর থাকলেও সবার মনোযোগ থাকে না। সিনেমা শেষে হাতাতালি দেয়াটা যেখানে আন্তর্জাতিক সব চলচ্চিত্র উৎসবে একটা টার্নিং পয়েন্ট বাংলাদেশে সেখানে এটা কেবলই ফরমালিটি।

    শেষ দিনে ভরপুর দর্শক পাবি........ ছড়াতে সময় লাগে. আর

    সিনেমার মধ্যে কম করে হলেও ৫ টি সেক্স সিন ছিল এবং প্রত্যেকটাকেই সেই ফ্যাসিস্ট উপায়ে কর্তন করা হয়েছে।

    সেন্সরের ব্যাপারটা বুঝলাম না। এখন কি সেন্সরের লোক বসে থাকে?? আহা আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম...এতটা সরাসরি দেখছি যে মেয়েরা লজ্জায় চোখ ঢেকে ফেলত । কত প্রমিকাকে দেখেছি প্রেমিককে মতলবী ভাবতে..কারণ চামে পর্ন দেখাতে নিয়ে এসেছে এই অভিযোগ।
    আর একবার এক বান্ধবী লজ্জায় কেঁদে ফেলেছিলো। বেচারি ভালো সিনেমা দেখাতে বাপমারে নিয়া আসছিলো।
    যাই হোক ৩৫ মিমি তে দেখালে সিন কাটার তো কোনো সুযোগ দেখছি না। তাই বোধ হয় ঢেকে দিচ্ছে। তবে ব্যাপারটা আরো অশ্লিল হয়ে গেলো না!

    [চলবে...] 😛


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
    • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

      টিটো ভাই যে উৎসবগুলার কথা বললেন এখন মনে হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রেইনবো-র টাই সবচেয়ে ভাল। ফেডারেশন এর টা তে তো বললেনই কমার্শিয়াল ছবি এনে ভরে ফেলা হয়। তার মানে ঐটা আমার এমনিতেও বাদ দিতে হতো। রেইনবো-র এবারের উৎসবে আসলেই অনেক ভাল ছবি এসেছে। তবে ভালোর ব্যাপারে আরেকটা কথা বলে রাখা যায়: সাম্প্রতিক অর্থাৎ ২০০৭-২০০৯ সালের শধ্যকার যেসব সিনেমা এসেছে তার মধ্যে ভাল খুব বেশি নেই, হয়তোবা। কিন্তু পুরনো সবগুলোই খুব ভাল। যেমন রেট্রোস্পেক্টিভ এ জাক দেমি এবং ট্রিবিউট এ সাঈদ আখতার মির্জা। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের ভাল পরিচালকদের কিছু ভাল ছবি এসেছে। অনেক পরিচালক নিজেই চলে এসেছেন। এমনকি মজার ব্যাপার হচ্ছে যেসব ছবি হলে রিলিজ পেলে দর্শক আদৌ দেখতে যেতো না সেরকম ছবিও অনেক এসেছে। আমার আজকের অভিজ্ঞতাটা পড়লেই ভাল বুঝতে পারবেন। অর্থাৎ ৩ নম্বর পর্বে এ নিয়ে বিস্তারিত থাকছে। উঠতি পরিচালকই বেশি। ঢাকার পক্ষে অবশ্য এখন এরচেয়ে দূরে যাওয়া সম্ভবও না।

      এখন যে ৩৫ মিমি-তে দেখানো হয় না এটা নিশ্চিত। দেখানো হয় প্রজেক্টর দিয়ে। জাদুঘরের ছোট্ট অডিটোরিয়ামটাতে (সুফিয়া কামাল) একেবারে গতানুগতিক প্রজেক্টর, দর্শকদের সামনেই পিসি এবং প্রজেক্টর শোভা পাচ্ছে। কিন্তু ভাল অডিটোরিয়াম দুটোতে, অর্থাৎ যেগুলোতে টিকেট কেটে ঢুকতে হয় এবং ফিচার ফিল্ম দেখানো হয় সেগুলোতে প্রজেক্টর থাকে সিনেমা স্ক্রিনের পেছনে। স্ক্রিনের পেছন থেকে কিভাবে প্রজেক্টর দিয়ে কাজটা করা হয় সেটা আমি নিশ্চিত না, পর্দাও অনেক বড় থাকে। সেন্সরিং এর কাজটা প্রজেক্টরের মুখ ঢেকে দেয়ার মাধ্যমেই করা হয়। এজন্যই বাজে লাগে। বোঝাই যায় বাধ্য হয়ে এমন করতে হয়েছে। তবে আমি যে ৮-৯ টা সিনেমা দেখলাম তার মধ্যে কেবল দুইটাতে এমন করতে হয়েছে। তার মধ্যে তন্দুরী লাভ এর টাই সবচেয়ে চোখে পড়েছে। আফসোস নেই। কারণ সিনেমাটা আমার এমনিতেও খুব একটা ভাল লাগে নাই। সেক্স সিন গুলো নির্বিঘ্নে দেখতে পেলেও অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হতো না। 🙂

      জবাব দিন
      • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

        শেষদিন বোধহয় আসলেই অনেক মানুষ হবে। আজকেই তো দর্শক অনেক বেড়েছে। আর রাতের শোতে দর্শক বেশি থাকে। আজকে ৫:৩০ এর শোতে শতাধিক দর্শক ছিল, অথচ সিনেমাটা ছিল একটা ডকুমেন্টারি। খুব বেশি দর্শক উঠেও যায় নি। খুব বেশি হলে ৩-৪ জন মাঝ পথে উঠে গেছে। ভাল ছিল। এটা আমার দেখা প্রথম চলচ্চিত্র উৎসব। তাই তুলনা করতে পারছি না। তবে আমি আসলেই ইমপ্রেসড।

        জবাব দিন
  4. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    সাঈদ মির্জা কো গুস্যা কিউ আতি হ্যায়- মির্জার একটা ছবির নাম মনে হয় এরকম। অনেক আগে ওর ফিল্মের কথা শুনেছি। একটিও দেখা হয়নি। :(( :(( :((


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আন্দালিব (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।