শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রতিজ্ঞা

int১৯৭১ সালের ২৭শে ডিসেম্বর “দৈনিক আজাদ”-এর একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল এরকম:

“আর একটা সপ্তাহ গেলেই ওরা বাঙালী বুদ্ধিজীবীদের সবাইকেই মেরে ফেলত- আল বদর বাহিনীর মাস্টার প্ল্যান”

সেই আল বদর, যাদের জন্মই হয়েছিল সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক হত্যার মাধ্যমে মুক্তকামী বাঙালিদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য। সেই বদর বাহিনী, যারা আজও আমার প্রিয় দেশকে কলঙ্কিত করে চলেছে, যাদের আস্ফালনে আজ আমি নিজের বাঙালি পরিচয় নিয়ে গর্ব করতে পারি না। সেই আল বদরের কথা বলতে আসার আগে অনেক ভেবেছি। “আল-বদর” শব্দ দুটি লিখতে গিয়ে বারবার ঘৃণায় কুঁকড়ে উঠেছি, বারবার হাত আটকে গেছে। কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম, এই ঘৃণা নিয়ে দূরে সরে থাকার কারণেই আজ তারা বাংলার বুকে বসতবাড়ি গড়ে তুলতে পেরেছে, তখন আর হাত আটকালো না। লিখে যেতে থাকলাম, তাদের সে ভিটেমাটি ভেঙে ফেলার স্বপ্ন নিয়ে। মনকে প্রবোধ দিলাম, আল-বদর, রাজাকার, আল-শাম্‌স সহ পাকিস্তানী হানাদারদের সব দোসরের পদচারণায় কলঙ্কিত স্বদেশকে পবিত্র করতেই আমি কলম ধরেছি। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পুনর্জন্ম হবে। তারা যখন স্বাধীন বাংলার মাটিতে পা রাখবে তখন যেন সে মাটি পবিত্র থাকে। কোন অপবিত্র মাটিকে আমি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পা স্পর্শ করতে দেব না। তাই লিখছি-

১৯৭১ সালের ২৭শে ডিসেম্বর দৈনিক আজাদের একটা সংবাদ শিরোনাম দিয়েই আমার লেখা শুরু করেছি। এই শিরোনামের লেখাতেই আল-বদরদের পরিচয় ফুটে উঠেছে। সেখানে লেখা হয়েছিল:

পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গণহত্যার সাহায্যকারী দলগুলির মধ্যে জামাতে ইসলামীর ভূমিকা ছিল সবচেয়ে ঘৃণ্য ও জঘন্য। মওদুদী-গোলাম আযম-আবদুর রহীমের নেতৃত্বে পরিচালিত জামাতে ইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার শুধু ঘোর বিরোধিতাই করেনি- লক্ষ লক্ষ বাঙালীকে পাইকারীভাবে হত্যা করার কাজে সক্রিয় সহযোগিতাও করেছে।

আমি জানি, পাকিস্তানের দোসরদের মধ্যে জামাতে ইসলামী ছাড়াও অনেকে ছিল। কিন্তু এদের দাপটই আজ সবচেয়ে বেশী। এখান থেকেই তাই আমার সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার সূচনা। আমার জন্ম হয়েছে এক জামাতপন্থী পরিবারে। আমি যখন নিজের বাবাকে জামাতের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করেছি তখন তিনি বলেছেন, “জামাত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোর বিরোধী ছিল। এজন্য তারা কেবল মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়নি। কিন্তু তাদের হাতে কোন নিরীহ বাঙালি নিহত হয়নি, অর্থাৎ তারা কোন অনৈতিক ও মানবতাবিরোধী কাজ করেনি।” ছোট বেলায় আমি এই ব্যাখ্যাই মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু বড় হয়ে যখন নিজে সবকিছু পড়তে লাগলাম তখনই আমার চোখ খুলে গেল। আমার সামনে জামাতসহ সব স্বাধীনতাবিরোধীদের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে গেল। আমি তাদের পলিসি বুঝতে পারলাম। আমি তাদের পলিসির ব্যাপারে যে সিদ্ধান্তে এসেছি তা হল:

একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধীরা শুরু থেকেই খুব সুবিধাবাদী ছিল। প্রথমে তারা নিছক সেফ সাইডে থাকার জন্য পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে। কিন্তু যখন তাদের শীর্ষ নেতারা শান্তি কমিটি গঠন করলো, দেশে রাজাকার-আল বদর-আল শাম্‌স গঠিত হল তখন তারা এক মধ্যযুগীয় পৈশাচিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হলো। একাত্তরের জামাতপন্থী পত্রিকা (দৈনিক সংগ্রাম) পড়লেই তা বোঝা যায়। তাদের নষ্ট চেতনায় একীভূত পাকিস্তানের ভূত চেপে বসলো। দেশের ভেতরে থাকায় তারা জানতো, কোন গুটি চাললে কি ফলাফল হবে। সুতরাং এটা ধারণা করে নিতে কোন কষ্টই হয় না যে, ২৫শে মার্চ থেকেই দেশের শীর্ষ বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদদের ধরিয়ে দেয়ার কাজটা তারাই করেছে। এই কাজটা একেবারে পরিকল্পিত ছিল। প্রথম দিকে তাদের লক্ষ্য ছিল যুদ্ধে জয়ী হওয়া। কিন্তু ১৪ই ডিসেম্বর ও তারপরের নিধনযজ্ঞের উদ্দেশ্যটা অন্যরকম। এই সময় তারা অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেছে। এ সময় তাদের লক্ষ্য ছিল নিজেদের ক্ষেত্র রচনা করা। ব্যাপারটা এরকম-

তারা জানতো বিশ্বাসঘাতকদের পাকিস্তান সরকার নেবে না। সুতরাং তাদের বাংলাদেশেই থাকতে হবে। কিন্তু এদেশে আগের প্রতিপত্তি নিয়ে থাকতে হলে তো রাস্তা পরিষ্কার হবে। এই রাস্তা পরিষ্কারের সর্বোত্তম পন্থা ছিল দেশের বিবেকগুলোকে সরিয়ে দেয়া। এই ভেবেই তারা বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা করেছে। আর পাকিস্তান সরকারের এতে সাহায্য না করার কোন কারণই ছিল না। ১৯৪৭ থেকে পাকিস্তান সরকার যা করে এসেছে তা বিবেচনায় রেখে বলাই যায়, সেদেশের সরকারের মানবতা বলতে কিছু ছিল না। তারা শুরু থেকেই বাংলাদেশের ব্যাপারে সহিংস নীতি অবলম্বন করে এসেছে। তাই যাওয়ার আগে দেশটাকে পঙ্গু করে দেয়ার লোভ সামলানোর প্রশ্নই উঠেনা।

বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীর যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার সাথে একমাত্র হিটলারের সহিংসতারই তুলনা চলে। এর জন্য সবচেয়ে বেশী দায়ী অবশ্যই পাক-বাহিনীর এদেশীয় দোসরেরা। কিন্তু পাকিস্তান সরকারেরও একটা পূর্বপরিকল্পনা ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর “বুদ্ধিজীবী তদন্ত কমিটি” গঠিত হয়। এই কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাও ফরমান আলী এদেশের ২০,০০০ বুদ্ধিজীবীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা মতো হত্যাযজ্ঞ চলেনি। কারণ ফরমান আলীর টার্গেট ছিল শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদেরকে গভর্নর হাউজে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলা। সুযোগের অভাবে তিনি এটা করতে পারেননি। সেই আফসোসটাই মেটালেন আল-বদরের মাস্টার প্ল্যানে রসদ জুগিয়ে। দুয়ে মিলে পরিকল্পনাটা একেবারে কনক্রিট ছিল।, আরেকটু সময়ে পেলে তারা কাউকেই ছাড়তো না। বুদ্ধিজীবী তদন্ত কমিটির প্রধান জহির রায়হান বলেছিলেন,

এরা নির্ভুলভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা বুদ্ধিজীবীদেরকে বাছাই করে আঘাত গেনেছে।

এই ছিল পরিকল্পনা। ২৫শে মার্চ থেকেই শিক্ষিত সমাজের উপর আক্রমণের সূচনা ঘটে। ২৫শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে সবচেয়ে পরিকল্পিত হামলাটি চালানো হয়। প্রাথমিক টার্গেট ছিল হিন্দু শিক্ষক-ছাত্র এবং আওয়ামী পন্থীরা। এদিনই (২৬শে মার্চ) নৃশংসতার শিকার হন দার্শনিক গোবিন্দচন্দ্র দেব।

rabbiএরপর গণহত্যার অংশ হিসেবে বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষক নিধন চলেছে। সেটা পাকিস্তান সরকারের স্বাভাবিক যুদ্ধ পরিকল্পনারই অংশ ছিল। কিন্তু ডিসেম্বরে যৌথ বাহিনীর আক্রমণ শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। নিজেদের রাস্তা পরিষ্কারের জন্য এদেশীয় দোসরেরা সোচ্চার হয়ে উঠে। ১১ই ডিসেম্বর থেকে আল-বদর বাহিনী ব্যাপকভাবে বুদ্ধিজীবী নিধন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু করে। আজ জামাত বলে এ নিধনযজ্ঞে তাদের কোন অংশগ্রহণ ছিল না, পরবর্তীতে এগুলোর সাথে তাদের নাম লাগানো হয়েছে। কিন্তু সে সময়ের পত্রিকাগুলো ভিন্ন কথা বলে। বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষকদের অনেককেই যে “ইসলামী ছাত্র সংঘ”-এর পুরানা পল্টন (১৫ পুরানা পল্টন) অফিসে এবং জামাতের মোহাম্মদপুর অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেকথা আমরা ডিসেম্বরের পত্রিকা থেকেই জানতে পারি।

বুদ্ধিজীবী হত্যার ক্ষত কোনদিন শুকোবে না। কারণ, তারা থাকলে আজ আমার দেশের এ অবস্থা থাকতো না। ঢাকার মানুষ সেই দিনের কথা কোনদিনই ভুলতে পারবে না। কারণ তারা সচক্ষে রায়েরবাজারের বধ্যভূমি দেখেছে। নিজ দেশের সেরা সন্তানদের ছিন্নভিন্ন দেহগুলো দেখে তাদের কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল সেটা বোধকরি কেউ বলতে পারবে না। বধ্যভূমিতে গিয়ে কেউ কথা বলার ভাষা খুঁজে পায়নি। ব্রিটিশ সাংবাদিক নিকোলাস টোমালিন বাঙালিদের বধ্যভূমি পরিদর্শন নিয়ে লিখেছিলেন। তার লেখার শিরোনাম ছিল, “বাংলার বুদ্ধিজীবীরা এক খাদে মরে পড়ে আছেন।” এই শিরোনামে তিনি লিখেছিলেন:

বাঙালি জনতা এই ডোবাগুলোতে এক অদ্ভুত শান্ত ভঙ্গিমায় চলাচল করছে। এখানে তাদেরকে ক্রোধান্বিত মনে হয় না। অন্যত্র তারা ক্রোধান্মত্ত। কিন্তু এখানে তারা হাঁটছে, মৃদু ফিসফিস করে কথা বলছে; তারা যেন গীর্জা পরিদর্শনরত পর্যটক।

বধ্যভূমিই কি আমাদের স্তব্ধ করে দিয়েছিল? আমরা কেন আগেই আল-বদর নিধনে সোচ্চার হলাম না? “বুদ্ধিজীবী তদন্ত কমিটি” কেন কাজ করতে পারল না? তাদের পূর্ণ রিপোর্ট কেন প্রকাশিত হল না? আজ ৩৭ বছর পরেও কের বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার হল না? তার মানে কি ধরে নেব, আল-বদরদের পরিকল্পনা সফল হয়েছিল? আমরা কি হেরে গেছি? এই প্রশ্নগুলোর কোন সদুত্তর আমার জানা নেই। আমার মাথায় ঢোকে না, বধ্যভূমির প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ পড়েও কিভাবে আমরা নিশ্চল হয়ে বসে আছি। রায়েরবাজারে “কাটাসুরের বধ্যভূমি” সম্পর্কে অধ্যাপিকা হামিদা রহমান লিখেছেন,

আর একটু যেতেই দেখতে পেলাম, একটি কঙ্কাল, শুধু পা দুটো আর বুকের পাঁজরটিতে তখনও অল্প মাংস আছে। বোধহয় চিল শকুন খেয়ে গেছে। কিন্তু মাথার খুলিটিতে লম্বা লম্বা চুল। চুলগুলো ধুলো কাঁদায় মিলে যেয়ে নারীদেহের সাক্ষ্য বহন করছে।… আরেকটু এগিয়ে যেতেই একটা উঁচু স্থানে বেশ কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে ঝুঁকে পড়ে কি যেন দেখছে। আমি উপরে উঠতেই একজন ভদ্রলোক হাত বাড়িয়ে আমাকে উপরে উঠিয়ে নিলেন। সামনে চেয়ে দেখি নিচু জলাভূমির ভেতর এক ভয়াবহ বীভৎস দৃশ্য। সেখানে একজন নয়, দুই নয়, একেবারে বারো তেরজন সুস্থ সবল মানুষ। একের পর এক শুয়ে আছে। পাশে দুটো লাশ। তার একটির হৃৎপিণ্ড কে যেন ছিঁড়ে নিয়েছে। সেই হৃৎপিণ্ড ছেঁড়া মানুষটি হল ডাঃ রাব্বী।… মাঠের পর মাঠ চলে গিয়েছে প্রতিটি জলার পাশে পাশে হাজার হাজার মাটির ঢিবির মধ্যে মৃত কঙ্কাল সাক্ষ্য দিচ্ছে কত লোককে যে এই মাঠে হত্যা করা হয়েছে।

এই বীভৎসার বর্ণনা দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। দেশের অন্যতম সেরা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ফজলে রাব্বীর হৃৎপিণ্ডটিই কেন ছিঁড়ে নেয়া হল? তিনি হৃৎপিণ্ড সারানোর কাজ করতেন বলেই কি? হয়তো বা। ওহ্‌, আবারও সেই বীভৎসতার বিবরণ দিতে শুরু করেছি। শুরু করলে তো আর শেষ হয় না। বিবরণ যত পড়ি, মনের মধ্যে ততই প্রশ্ন জাগতে থাকে। কোন প্রশ্নেরই উত্তর পাই না।

ভুল বলা হল, আসলে আমি এখন সবগুলো প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি। উত্তর পেয়ে গেছি আল-বদরের চিঠি পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যত বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষকদের হত্যা করা হয়েছে তাদের সবাই এই চিঠি পেয়েছিলেন। তারা চিঠি পেয়ে মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। আমিও সেই চিঠি পড়ে মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়েছি; শপথ করেছি, জীবন দিয়ে হলেও একাত্তরে শহীদ সব বুদ্ধিজীবীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবো। নরপিশাচদের বিচার করবো, জনতার মঞ্চে। তাই আর প্রশ্নের উত্তর খুঁজি না। সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি বলেই বোধহয়। বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মৃত্যু পরোয়ানা পড়ার পর, আমার বিশ্বাস, যে কেউ তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। আর যখন শুনবেন, এই মৃত্যু পরোয়ানা দিয়েছে আল-বদরের মত কীটেরা তখন নিজের জীবনটাও বাজি রাখার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবেন:

শয়তান নির্মূল অভিযান
ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুদের যেসব পাচাটা কুকুর আর ভারতীয় ইন্দিরাবাদের দালাল নানা ছুতানাতায় মুসলমানদের বৃহত্তম আবাসভূমি পাকিস্তানকে ধ্বংস করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে তুমি তাদের অন্যতম। তোমার মনোভাব, চালচলন ও কাজকর্ম কোনটাই আমাদের অজানা নেই। অবিলম্বে হুশিয়ার হও এবং ভারতের পদলেহন থেকে বিরত হও, নাহয় তোমার নিস্তার নেই। এই চিঠি পাওয়ার সাথে সাথে নির্মূল হওয়ার জন্য প্রস্তুত হও।
– শনি

পাঠক, এই চিঠি যারা পড়েছেন তাদের সবাইকে বলছি: আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আসুন প্রতিজ্ঞা করি, স্বদেশের মাটিকে আবার পবিত্র করে তুলবো, আল-বদরদের আর এই মাটিতে সদর্প ঘুরে বেড়াতে দেব না। শহীদ বুদ্ধিজীবীরা আজ মাটির অনেক নিচে। কিন্তু তারা সেখানে থাকবেন না, এদেশের মাটিতে তাদের পুনর্জন্ম হবে, যদি আমরা দেশকে পাকী দালালদের হাত থেকে মুক্ত করতে পারি। তারা আবার আসবেনই, কোন সন্দেহ নেই। কারণ মুনীর চৌধুরী প্রতিজ্ঞা করে গেছেন,

বৃষ্টিতে ভেঁজা নরম ঘাসের উপর দিয়ে আমি আরও হাঁটব। ঠাণ্ডা রূপোর মত পানি চিড়ে হাত পা ছুঁড়ে সাঁতার কাটব। আমি বার বার আসব। তুমি যদি আমার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়, দরজায় এসে টোকা দেব। চৌমাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে হাতছানি দিয়ে তোমায় ইশারা করব। (-কবর)

১৪ই ডিসেম্বরের এই দিনে হে মহামানবেরা, তোমাদের স্মরণ করছি। তোমরা আবার আস। সত্যি বলছি, আমরা তোমাদের কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তোমরা এসে দরজায় টোকা দিয়েছ, আমাদের ঘুম ভেঙেছে। এবার তোমাদের হাতছানি দেয়ার পালা। সেই হাতছানিতে সাড়া দিতে আমরা প্রস্তুত…

*****

বাংলা একাডেমী “শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ” নামে একটি বই বের করেছে। এই বইয়ে ২৩২ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম ও বিস্তারিত পরিচয় সন্নিবেশিত আছে। এছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একটি অসম্পূর্ণ তালিকা এখানে পাওয়া যেতে পারে:
Martyred Intellectuals: Bangladesh Genocide Archive

৩০ টি মন্তব্য : “শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রতিজ্ঞা”

  1. তাইফুর (৯২-৯৮)

    মুহাম্মদ, তোর প্রতিটা লেখাই তোর বয়সের সাথে খুব বেশি পরিমানে 'কনফ্লিক্ট' করে। এমন বয়সে এত পরিপক্ক, এত ভাল লিখতে নেই।
    প্রিয়তে নিয়ে নিলাম।


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  2. সহল (৯৪-০০)

    তোমার লেখাটা পড়ে খুব ভাল লাগল কিন্তু একটা কথা কি জান জাতি হিসাবে আমরা কলংকিত একটা জাতি তা না হলে আমরা কেন ৭১ এর রাজাকার দের কেই কেন নিবার্চিত করি, এদেরকে মন্ত্রী, এমপি বানাই, প্রেসিডেন্ট বানাই .........
    মাঝে মাঝে মনে হয় আমি যদি SUPERMAN হতাম ......
    তাইলে হয়ত জাতি কে একটা নতুন ১৪ ডিসেম্বর উপহার দিতাম আর এর নাম হত “রাজাকার নিধন দিবস

    জবাব দিন
  3. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)
    তাইলে হয়ত জাতি কে একটা নতুন ১৪ ডিসেম্বর উপহার দিতাম আর এর নাম হত “রাজাকার নিধন দিবস

    আশায় রইলাম :boss: :boss: :boss: :boss:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  4. রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

    প্রিয়তে নিলাম। আরেকটা অসাধারণ লেখা।

    মুহাম্মদ মেকানিক্যালের মোহোর আলীর স্যারের কাহিনি শুনলাম কালকে। বুদ্ধিজীবি হত্যার যে লিস্ট করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের সহায়তায়- সেই শিক্ষকদের মধ্যে মোহর আলী একজন।

    জবাব দিন
        • এইখানে তোমাদের কোন ভুল হচ্ছে না তো?

          তৌফিক মোহর আলী স্যারের রাজাকার হওয়া নিয়ে একটু দুঃখ করছিল, এত ভালো একটা মানুষ রাজাকার হইতে পারে সে ভাবতে পারতেছে না [আমি উনার ক্লাস পাই নাই, কম্পু সায়েন্সের ছাত্র, পাওয়ার কারণও নাই] ... একই রকম মনোভাব দেখলাম বুয়েটের দুই একটা ফ্রেন্ডের, তাই ভাবলাম একটু খোঁজ নেই ...

          নেটে "মোহর আলী" লিখে সার্চ দিয়ে বেশ কিছু সাইট পাওয়া গেল, তার মধ্যে একটা জেনোসাইড বাংলাদেশের, সেইখানে ডঃ মোহর আলী নামে একজনের নাম আছেঃ

          শান্তি কমিটির সমর্থক ও থিঙ্ক ট্যাংক

          বিচারপতি জনাব এ কে এম বাকের, মওলানা সাইয়েদ মুস্তফা মাহমুদ আল মাদানী, মওলানা মুহম্মদ আবদুর রহীম, পীর মোহসেন উদ্দীন, অধ্যাপক গোলাম আযম, জনাব এ কিউ এম শফিকুল ইসলাম, ড. হাসান জামান, ড: কাজী দীন মুহাম্মদ, ড. মফিজুল্লাহ কবীর, ড. মোহর আলী, ড. হাবিবুল্লাহ, অধ্য জালালুদ্দিন, ড. মুস্তাফিজুর রহমান, ব্যারিষ্টার আখতার উদ্দীন, ব্যারিষ্টার কোরবান আলী, অধ্যাপক আবদুল গফুর, মওলানা ওবায়দুল্লাহ, মওলানা মোস্তাসির আহমদ রহমানী, অধ্য এ আর ফাতমী, অধ্য ইব্রাহিম খান, এডভোকেট এ. টি. সাদী, মেজর আফসার উদ্দীন, মওলানা সাইয়েদ মুহাম্মদ মাসুদ এবং ডা. গোলাম মোয়াজ্জেম।

          কিন্তু একই সাইটের এই পেইজে যেখানে রাজাকারদের বর্তমান পরিচয় দেয়া সেখানে উনার পরিচয় উল্লেখ করা হইছে এইভাবেঃ

          ড. মোহর আলী, রীডার, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

          উইকিপিডিয়া বলতেছে, ১৯৭৩ সালের ১ অক্টো ডঃ মোহর আলী সহ তিনজনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় ...

          স্পষ্টতই, ইতিহাসের প্রফেসর মোহর আলী আর মেটালার্জির মোহর আলী আলাদা মানুষ ... আমি এটুকুই বুঝলাম, পোলাপান আরও আপডেট দিতে পারলে ভালো হয় ...

          জবাব দিন
          • উইকি থেকেঃ

            দের সহায়তা করেন ড. হাসান জামান, ড. মোহর আলী, ড. এ কে এম আবদুর রহমান,ড. আবদুল বারি(রাবি), ড. মকবুল হোসেন (রাবি), ড. সাইফুদ্দিন জোয়ারদার (রাবি)। এরা সকলেই টিক্কা খানের বিশ্ববিদ্যালয় “পুনবিন্যাস কমিটির সদস্য” ছিলেন। বিদেশী পত্রিকায় প্রকাশিত “পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালিদের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই” এই সংবাদের প্রতিবাদ করে বাঙালি শিক্ষাবিদ ড. সাজ্জাদ হোসায়েন এবং ড. মেহের আলীর একটি পত্র ১৯৭১ সালের ৮ জুলাই লন্ডন টাইমস্‌ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়[১৯]। উপাচার্য ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন তার সহযোগী ড. মোহর আলী ও ড. হাসান জামান সহ স্বাধীনতার পর গ্রেফতার হন এবং আটক থাকেন। ১৯৭৩ সালের ১ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের তিনজকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়[২০]।

            জবাব দিন
  5. টিটো রহমান (৯৪-০০)
    প্রিয়তে নিলান। আরেকটা অসাধারণ লেখা।

    মুহাম্মদ
    আমার পরিচিত এক বড় ভাই( আরেফিন) সম্প্রতি আল বদর নামে এক ঘন্টার একটা ডক্যু ফিক বানিয়েছেন । পারলে দেখ।

    ১৪ই ডিসেম্বরের এই দিনে হে মহামানবেরা, তোমাদের স্মরণ করছি। তোমরা আবার আস। সত্যি বলছি, আমরা তোমাদের কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তোমরা এসে দরজায় টোকা দিয়েছ, আমাদের ঘুম ভেঙেছে। এবার তোমাদের হাতছানি দেয়ার পালা। সেই হাতছানিতে সাড়া দিতে আমরা প্রস্তুত…

    মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  6. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    সিসিবির সকলকে কি বলে ধন্যবাদ দেবো তার ভাষা খুজে পাই না। আমি ভাষার অপরিপক্কতার কারনে যা যা লিখতে পারি না তার প্রায় সবটাই এইখানে কেউ না কেউ লিখে দেয়।

    মুহাম্মদ তোকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ এই লেখাটার জন্য। :clap: :clap:

    জবাব দিন
  7. জুবায়ের (১৯৯৯-২০০৫)

    ঠিক এ ব্যাপারটি নিয়েই আমি কয়েকদিন যাবত ভাবছিলাম।যারা আমাদের দেশের এত বড় ক্ষতি করলো, আমদের দেশকে ৫০ বছর পিছিয়ে দিল, তারাই এখন আবার বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা করে।
    এসব দেখে সত্যি খুব খারাপ লাগে।নিজেকে অপরাধী মনে হয়।ঘৃণা হয় নিজের উপর।
    আমরা কি জাতি হিসেবে এতই অক্ষম, আমাদের পূর্বপূরুষদের ঋণ শোধ না করতে পারি,উপযুকত মর্যাদা তো দিতে পারতাম।
    আমরা তাও পারিনি।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তাইফুর (৯২-৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।