সত্যজিৎ রায়ের সাক্ষাৎকার: সিনিঅ্যাস্ট

সিনিঅ্যাস্ট সাময়িকীর সাথে সত্যজিৎ রায়ের সাক্ষাৎকার, ১৯৮১

সিনিঅ্যাস্ট: “পথের পাঁচালী” আপনাকে কিভাবে পরিবর্তন করেছে। এটা কি বাংলা আবিষ্কারে আপনাকে সাহায্য করেছে?

সত্যজিৎ রায়: পথের পাঁচালী নির্মাণের সময়ই আমি গ্রামীণ জীবন আবিষ্কার করেছি। এতে কোন সন্দেহ নেই। আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা সবই শহরে, তাই গ্রাম সম্পর্কে সম্যক ধারণা এর আগে ছিল না। গ্রামে গ্রামে ঘুরে লোকেশন শিকার এবং খুঁজে পাওয়ার পর সেখানে কিছুদিন থাকা, এগুলোই আমাকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। মানুষের সাথে কথা বলা, ভাবগতি, প্রাকৃতিক পরিবেশ, দৃশ্য ও শব্দ সবকিছুর প্রতি আমার প্রতিক্রিয়া এক্ষেত্রে কাজে দিয়েছে। কিন্তু যারা গ্রামে বড় হয়েছে তারাই কেবল গ্রাম নিয়ে সিনেমা করতে পারে এটা ঠিক না। বহিরাগতদের পক্ষেও গ্রামের সংস্কৃতি ও পরিবেশ ফুটিয়ে তোলা সম্ভব।

ray

সিনিঅ্যাস্ট: সিনেমা করতে গিয়ে কাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন?

রায়: আমার উপর বিভূতিভূষণের (“অপু ত্রয়ী” ও “অশনী সংকেত” এর লেখক) প্রভাব অনেক। সত্যি বলতে পথের পাঁচালী পড়েই আমি গ্রাম চিনেছিলাম। তার সাথে আমি এক ধরণের বন্ধুত্ব অনুভব করতাম। গ্রাম এবং গ্রামের প্রতি বিভূতিভূষণের দৃষ্টিভঙ্গিই আমাকে পথের পাঁচালী করতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এ উপন্যাস আমাকে প্রচণ্ড প্রভাবিত করেছিল।

আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দ্বারাও বেশ প্রভাবিত, তার সাহিত্য অনেক সময় গ্রামকেন্দ্রিক না। আমাদের সাংস্কৃতিক পটভূমি ও অবকাঠামো অবশ্যই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মিশ্রণে গঠিত হয়েছে। ভারতের কোন শহরে যে বড় হয়েছে এবং ইংরেজি সাহিত্যের ধ্রুপদী রচনার সাথে যার ছোটবেলায়ই পরিচয় হয়েছে তাদের সবার সম্পর্কেই এ কথা খাটে। তাছাড়া, পশ্চিমারা আমাদের দেশ সম্পর্কে যতটা জানে আমরা পশ্চিম সম্পর্কে তার থেকে অনেক বেশি জানি। আমরা পাশ্চাত্যের শিক্ষাকেই গ্রহণ করেছি। পশ্চিমা সঙ্গীত, পশ্চিমা শিল্প, পশ্চিমা সাহিত্য সবকিছুই ভারতে অনেক প্রভাব বিস্তার করেছে।

ভাব প্রকাশের সম্পূর্ণ প্রাযুক্তিক মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রের জন্ম পশ্চিমেই হয়েছে। সময়ের মধ্যেই কোন একটি শিল্প অস্তিত্বশীল থাকতে পারে- এই ধারণা পাশ্চাত্যের, ভারতের না। তাই একটি মাধ্যম হিসেবে সিনেমাকে বোঝার জন্য পাশ্চাত্য এবং পাশ্চাত্যের শিল্পের সাথে পরিচয় থাকা জরুরী। বাংলার লোক শিল্পী বা আদিম শিল্পীদের পক্ষে শিল্প মাধ্যম হিসেবে সিনেমাকে বোঝা সম্ভব না। তাই যার পশ্চিমা শিক্ষা আছে তার পক্ষে সিনেমা বোঝা অনেক সহজ।

সিনিঅ্যাস্ট: ভারতীয় সমালোচকরা প্রায়শই বলেন, পথের পাঁচালী যুগ পরিবর্তনকারী সিনেমা কারণ এটা ভারতের অর্থনীতিতে বিশাল পরিবর্তন এনেছে। এটা প্রমাণ করেছে যে স্টুডিওর পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াও লাভজনক সিনেমা তৈরি সম্ভব। এই সিনেমার কি আসলেই তাৎক্ষণিক প্রভাব ছিল?

রায়: আমার মনে হয় না। দর্শক ও সমালোচকরা মুক্তি পাওয়ার পরপরই এটাকে যুগান্তকারী সিনেমা হিসেবে অভিহিত করেছে, কিন্তু চলচ্চিত্র নির্মাতারা এত তাড়াতাড়ি প্রভাবিত হয়নি। সে সময় অন্য কোন পরিচালকের কাজে পথের পাঁচালীর প্রভাব দেখা যায়নি। প্রভাবটা কাজে দিয়েছে আরও পরে। গত ৫-৬ বছর ধরে পুনার ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে যেসব শিক্ষার্থী পাশ করে বেরিয়ে আসছে তারা বলছে, পথের পাঁচালী তাদেরকে প্রভাবিত করেছে।

সিনিঅ্যাস্ট: ভারতের বাইরে আপনার সিনেমার এত গ্রহণযোগ্যতা দেখে কি বিস্মিত হয়েছেন?

রায়: আমি কখনোই ভাবিনি আমার সিনেমা, অন্তত পথের পাঁচালী, পুরো দেশজুড়ে বা দেশের বাইরেও প্রদর্শিত হবে। কিন্তু বাস্তবে এমনটা হয়েছে। এটা প্রমাণ করে যে, সর্বজনীন অনুভূতি, সর্বজনীন সম্পর্ক, আবেগ এবং চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারলে সিনেমা কিছু বাঁধা অতিক্রম করে সবার কাছে পৌঁছে যেতে পারে, এমনকি অবাঙালিদের কাছেও।

সিনিঅ্যাস্ট: কোন সিনেমা করে সবচেয়ে অসন্তুষ্ট হয়েছেন?

রায়: চিড়িয়াখানা। এটা অবশ্য এখন দেখানোও হচ্ছে না। একটা কারণ হল, এর বিষয়বস্তু আমি পছন্দ করতাম না। পরিবেশ-পরিস্থিতির চাপেই এটা করতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমার কিছু সহযোগীর এটা করার কথা ছিল, কিন্তু তারা হঠাৎই সাহস হারিয়ে ফেলে এবং আমাকেই কাজ শেষ করতে বলে।

চিড়িয়াখানা একটা “হুডানইট” (whodunit) এবং হুডানইট থেকে কখনও ভাল সিনেমা হয় না। আমি এমন থ্রিলার পছন্দ করি যেখানে ভিলেন কে, তা প্রথম থকেই বোঝা যায়। আর হুডানইট সিনেমায় তো শেষে একটা প্রথাগত দৃশ্য থাকতেই হয় যেখানে গোয়েন্দা তার রহস্যভেদের জটিল কাহিনী সবাইকে বুঝিয়ে দেয়। অপরাধীদের সম্পর্কে পাওয়া বিভিন্ন ক্লু এই দৃশ্যেই জোড়া লাগে। এ ধরণের কাঠামোতে আমি খুব একটা আগ্রহী নই।

সিনিঅ্যাস্ট: কোন সিনেমা করে সবচেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন?

রায়: যে সিনেমাটা আমাকে আবার বানাতে বললে ঠিক আগের মত করেই বানাবো সেটা হল “চারুলতা”। এছাড়া আরও কিছু সিনেমাকে আমি প্রশংসা করি, যেমন “অরণ্যের দিনরাত্রি”। ছোটদের সিনেমার মধ্যে “জয় বাবা ফেলুনাথ”। এই সিনেমায় সবকিছু খুব ভালভাবে ফুটে উঠেছে। এতে সরস বুদ্ধির ছাপ আছে। চমৎকার কিছু মুখ ও দৃশ্য আছে, অভিনয়ও চমৎকার হয়েছে। মিউজিক্যাল সিনেমা বানানোটাও খুব উপভোগ করি কারণ এক্ষেত্রে সুর করার একটা সুযোগ আসে। তাছাড়া এসব সিনেমা বানিজ্যিকভাবে সফল হওয়ায় একটা ভিন্ন ধাঁচের সন্তুষ্টি এনে দেয়। কাঞ্চনজঙ্ঘাও পছন্দ করি, সম্ভবত আমার প্রথম মৌলিক চিত্রনাট্য ও খুব ব্যক্তিগত সিনেমা হওয়ার কারণে। এটা সময়ের থেকেও ১০-১৫ বছর এগিয়ে ছিল।

সিনিঅ্যাস্ট: এটাতে এক ধরণের খণ্ডিত ন্যারেটিভ দেখা আছে।

রায়: হ্যা। আমাদের দর্শকরা একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র পছন্দ করে, কিংবা এমন কয়েকটি কেন্দ্রীয় চরিত্র চায় যাদেরকে তারা দেখেই চিনতে পারবে। এর পাশাপাশি সরলরৈখিক ন্যারেটিভ তাদের খুব পছন্দ। কাঞ্চনজঙ্ঘা অনেকগুলো চরিত্র নিয়ে কথা বলেছে এবং এখানকার ন্যারেটিভটাও নন-লিনিয়ার, পরের ঘটনা আগে বা আগের ঘটনা পরে দেখিয়েছি। ১ নম্বর গ্রুপ, তারপর যথাক্রমে ২, ৩ ও ৪ নম্বর গ্রুপকে ফোকাস করা হয়েছে, এরপর আবার ১ নম্বর থেকে শুরু করা হয়েছে। সিনেমার এই গড়ন খুব মিউজিক্যাল, কিন্তু দর্শকরা তা পছন্দ করেনি। প্রতিক্রিয়া ছিল খুবই বাজে। এমনকি সমালোচকরাও সন্তুষ্ট হয়নি। কিন্তু এখন পেছন ফিরে তাকালে বুঝতে পারি, সিনেমাটা খুব কৌতুহলোদ্দীপক।

সিনিঅ্যাস্ট: আপনার সিনেমার নারী চরিত্রগুলোকে পুরুষ চরিত্রের চেয়ে বেশি শক্তিশালী ও প্রত্যয়ী দেখা যায়, তারা পুরুষদের চেয়ে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে এবং প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে পারে। এটা কি বাংলার সংস্কৃতিক ইতিহাসের প্রতিফলন?

রায়: এটা অধিকাংশ সময়ই লেখকদের চিন্তাধারার প্রতিফলন। মূল বইয়ে লেখক কি বোঝাতে চেয়েছেন সেটা প্রকাশ করতে গিয়েই এমনটি হয়েছে। রবী ঠাকুর ও বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যে অনেক শক্তিশালী নারী চরিত্র দেখা যায়। অবশ্য নারীদের সাথে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও তাদের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলনও ঘটেছে।

সিনিঅ্যাস্ট: আপনার দৃষ্টিভঙ্গিটা কী রকম?

রায়: দৈহিক দিক দিয়ে পুরুষদের মত শক্তিশালী না হলেও প্রকৃতি নারীদের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য দিয়েছে যার মাধ্যমে তারা এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারে। তারা অপেক্ষাকৃত বেশি সৎ, অকপট এবং অনেক দিক দিয়েই বেশি শক্তিশালী। আমি সব নারীর কথা বলছি না, যেসব নারী চরিত্র আমাকে মুগ্ধ করে তাদের কথাই বলছি। সিনেমায় এমন নারী চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে চাই যারা পরিস্থিতির সাথে পুরুষদের চেয়ে ভাল মানিয়ে নিতে পারে।

সিনিঅ্যাস্ট: চারুলতা কি তেমনি একটি চরিত্র?

রায়: হ্যা, অবশ্যই।

সিনিঅ্যাস্ট: জলসাঘর থেকে শুরু করে শতরঞ্জ কি খিলাড়ি পর্যন্ত আপনি কখনও প্রাচীন সংস্কৃতি কখনও নবীন সংস্কৃতি, কখনও প্রথা কখনও প্রগতি নিয়ে কাজ করেছেন। মাঝেমাঝে আমার মনে হয় আপনি প্রথা ও প্রাচীন সংস্কৃতির দিকে বেশি ঝুঁকে যাচ্ছেন এবং নবীন সংস্কৃতিকে খুব একটা গ্রহণ করছেন না।

রায়: শতরঞ্জ কি খিলাড়িতে আমি নবীনকে গ্রহণ করিনি এটা ঠিক না। একটা বিষয় খুব পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করেছি, সামন্ত প্রভুরা তাদের চারপাশে যা ঘটছে তার সাথে খুব একটা সম্পৃক্ত না। চরিত্রগুলোর প্রতি অনেক সময়ই সহানুভূতি দেখিয়েছি, এসব চরিত্র দিয়ে যে কোন কাজ হবে না এই মনোভাবও প্রকাশ করেছি। কিন্তু আমি বয়ে চলা জীবনটার দিকেই বেশি আগ্রহী, জীবন চালনার স্বাভাবিক পন্থাকেই আমি প্রতিনিধিত্ব করতে দেই। চেকভের “দ্য চেরি অর্কার্ড” এ আপনি একই জিনিস দেখবেন যা আমাকে মুগ্ধ করে।

সামন্ত প্রথা ভুল এবং নির্বুদ্ধিতা এটা বললে অবশ্যই বিভিন্ন পক্ষ থেকে আক্রমণের ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এ ধরণের সিনেমার চরিত্রগুলো সম্পর্কে এক ধরণের সহানুভূতি অগ্রাহ্য করা যায় না। তাদের অবস্থা খুব করুণ, অনেকটা ডাইনোসরের মত যারা নিজেদের ধ্বংস হওয়ার কারণটাও জানতে পারেনি। এসব চরিত্রের প্রতি যে করুণা করতে হয় তাতে আমি বেশ আগ্রহী।

সিনিঅ্যাস্ট: পাশ্চাত্যের অধিকাংশ শহরেই মনে করা হয় ভারত সম্পর্ক আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বেশ শীতল ও নৈরাশ্যজনক।

রায়: একমাত্র “জন অরণ্য” সম্পর্কেই এ ধরণের কথা বলা যায়।

সিনিঅ্যাস্ট: কিন্তু অনেকে তো “অরণ্যের দিনরাত্রি” কেও নৈরাশ্যজনক হিসেবে দেখেছেন।

রায়: আমি এটাকে এতোটা হতাশাব্যঞ্জক বলব না। বেশ কিছু অপ্রিয় সত্য এখানে বলা হয়েছে কিন্তু সেগুলো নাটকেরই অংশ, সব সিনেমা সম্পর্কেই এ কথা প্রযোজ্য। পশ্চিমা অনেক সিনেমাতেও মাঝেমাঝে পশ্চিমা মূল্যবোধ সম্পর্কে খুব হতাশাব্যঞ্জক মনোভাব পাওয়া যায়। সবসময় আসলে খুশীর সিনেমা বানানো সম্ভব না।

সমস্যা নিয়ে যদি সিনেমা করেন, কিন্তু আপনার কাছে সেই সমস্যা সমাধানের কোন উপায় না থাকে, তাহলে সেটা নৈরাশ্যজনক হতে বাধ্য। মহানগর এ স্বামী-স্ত্রী দুজনেই তাদের চাকরি হারায়। আশেপাশে কোন চাকরিও নেই। তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়, ভুল বোঝাবোঝির সৃষ্টি হয়, কিন্তু একসময় তারা আবার একত্রিত হয়। একত্রিত হয়েছে, কিন্তু তাদের কিন্তু এখনও কোন চাকরি নেই। বেশ কিছু দিন চাকরি ছাড়াই হয়ত থাকতে হবে তাদের, কিন্তু এই সমাপ্তি সিনেমাকে নৈরাশ্যজনক করে না।

আমার করা একমাত্র নৈরাশ্যজনক সিনেমা হচ্ছে জন অরণ্য। এ নিয়ে কোন সংশয় নেই। চারদিকে দুর্নীতির সমারোহ দেখে এটা করার তাড়া অনুভব করেছিলাম। কলকাতায় সবাই দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে। সবাই জানে। যেমন রাস্তা ও পাতাল রেল করার জন্য যে সিমেন্ট বরাদ্দ দেয়া হয় তার পুরোটা যে কনট্রাক্টরদের হাতে যাবে এবং তা দিয়ে যে তারা নিজেদের বাড়িঘর বানাবে এটা সবারই জানা। জন অরণ্য এরকম দুর্নীতি নিয়ে কাজ করে, এবং আমার মনে হয় না এর কোন সমাধান আছে।

সিনিঅ্যাস্ট: আপনি অনেক সময় বলেছেন যে, আপনার মনে হয় না একজন শিল্পীর জন্য কোন প্রশ্নের উত্তর দেয়া, পরিস্থিতির বিচার করা বা ভাল-মন্দ সম্পর্ক মনোভাব ব্যক্ত করা আবশ্যক। এমনকি শিল্পীর এমনটা করা উচিত না বা এটা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ না- এমনটিও বলেছেন। মূলধারার রাজনৈতিক বক্তব্য থেকে আপনি সবসময়ই দূরে থেকেছেন।

রায়: মৃণাল সেন সহ অন্য যে কারও চেয়ে স্পষ্টভাবে আমি রাজনৈতিক বক্তব্য প্রকাশ করেছি। জন অরণ্য তে একটা লম্বা কথোপকথন দেখিয়েছি যেখানে কংগ্রেস সদস্য তার ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে। সে বেকুবের মত কথা বলে, মিথ্যা বলে, কিন্তু তার উপস্থিতি খুব তাৎপর্যপূর্ণ। অন্য কোন পরিচালক সিনেমা করলে এই দৃশ্যকে ছাড় দেয়া হতো না। কিন্তু পরিচালক কতটা বলবে তার একটা সীমা থাকা উচিত। আপনি জানেনই যে, কিছু বক্তব্য বা দৃশ্যায়ন সেন্সর বোর্ডে ছাড় পাবে না, তাহলে সেগুলো বানিয়ে লাভ কী?

সিনিঅ্যাস্ট: ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চলচ্চিত্র পরিচালকের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত- গৌণ পর্যবেক্ষক নাকি সক্রিয় কর্মী?

রায়: আপনি হীরক রাজার দেশে দেখেছেন? এতে বাড়িঘর উচ্ছেদের একটা দৃশ্য আছে- রাজার আদেশে বস্তিবাসী গরিবদের বাড়িঘর উচ্ছেদ করা হয়। ইন্দিরা গান্ধির জরুরী শাসনের সময় দিল্লী ও ভারতের অন্যান্য শহরে ঠিক এমন ঘটনাই ঘটেছিল। হীরক রাজার দেশের মত রূপকথার সিনেমায় অনেক কিছু সরাসরি বলে ফেলা যায়, কিন্তু বাস্তব চরিত্র নিয়ে কাজ করার সময় সেন্সরশিপের কথা মাথায় রেখে সীমা নির্ধারণ করতে হয়। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলকে আক্রমণ করে কিছু বলা অসম্ভব। “দ্য স্টোরি অফ আ চেয়ার” সিনেমায় এটা করতে চেয়েছিলাম বলেই শেষ করতে পারিনি, সিনেমাটা ধ্বংস হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে কিই বা করার আছে? সমস্যাগুলো সম্পর্কে আপনি সচেতন থাকতে পারেন, সেগুলো সমাধানের চেষ্টাও করতে পারেন, কিন্তু সবকিছু করতে হবে সীমার মধ্যে। আমাদের জন্য বেঁধে দেয়া এই সীমার বাইরে যাওয়া একেবারেই সম্ভব না।

সিনিঅ্যাস্ট: অনেকে তো মনে করে, এর মাধ্যমে আপনি চলচ্চিত্রকার হিসেবে নিজের সামাজিক দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকজন সমালোচক, বিশেষত বাংলার সমালোচকরা বলছেন, আপনি যথেষ্ট রাজনীতি সচেতন নন, আপনি চাইলে আরও কিছুদূর এগোতে পারতেন। তাদের মতে, আপনি নিজের সীমা কতদূর তা চেখে দেখেননি।

রায়: না, আমি মনে করি না আমার পক্ষে এর চেয়ে বেশি দূর যাওয়া সম্ভব। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মত লক্ষ্যবস্তুগুলোকে আঘাত করা খুব কঠিন কিছু না। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান কোনকিছুর পরোয়া করে না। আপনি যাই বলেন না কেন, এরা নিজেদের কোন পরিবর্তনই করবে না। তাহলে এতকিছু বলার অর্থ কী? চলচ্চিত্র সমাজ পরিবর্তন করতে পারে না। কখনও পারেনি। আমাকে এমন একটা সিনেমা দেখান যা সমাজ পরিবর্তন করেছে, কিছুটা হলেও।

সিনিঅ্যাস্ট: লেনি রিফেনস্টাল এর মত চলচ্চিত্রকারদের কি বলবেন? রিফেনস্টাল তো আর্য পুরাণের নাৎসি সংস্করণ তৈরি করেছিলেন। কিংবা সের্গেই আইজেনস্টাইন যিনি চলচ্চিত্রকে বিপ্লবের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।

রায়: আইজেনস্টাইন এমন এক বিপ্লবকে সাহায্য করেছেন যা ইতিমধ্যে চলছিল। বিপ্লব চলাকালীন সময়ে চলচ্চিত্রকারের ইতিবাচক ভূমিকা থাকতে পারে, সে বিপ্লবের পক্ষে কিছু করতে পারে। কিন্তু কোন বিপ্লব না থাকলে চলচ্চিত্রকারের কিছুই করার নেই।

রিফেনস্টাল একটি পুরাণকে সাহায্য করছিলেন, সেটা হল নাৎসি আদর্শ, আর নাৎসিরা সে সময় খুব শক্তিশালী ছিল। ফ্যাসিবাদের প্রথম যুগে এমনকি বুদ্ধিজীবীরাও দ্বিধান্বিত ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সে সময় ভেবে বসেছিলেন, মুসোলিনি চমৎকার কাজ করছে এবং সমাজে তার ভূমিকা খুবই ইতিবাচক। রোমাঁ রোলাঁই তার এ ভুল ভাঙিয়েছিলেন, ঠাকুরকে বলেছিলেন যে, তিনি ফ্যাসিবাদের প্রভাবটা পুরো বুঝতে পারেননি।

সিনিঅ্যাস্ট: চলচ্চিত্রকার হিসেবে নিজের সামাজিক ভূমিকা সম্পর্কে আপনার কি মত?

রায়: “প্রতিদ্বন্দ্বি” তে আমার মনোভাবটা বুঝতে পারবেন। সিনেমাটিতে দুই ভাই থাকে- ছোট ভাই নকশালপন্থী, বড় ভাই যে ছোট ভাইয়ের সাহস ও দৃঢ় বিশ্বাসের প্রশংসা করে এতে কোন সন্দেহ নেই। এখানে সিনেমার অবস্থান খুব পরিষ্কার। কিন্তু চলচ্চিত্রকার হিসেবে আমি বড় ভাইয়ের প্রতি বেশি আগ্রহী ছিলাম কারণ সে দোদুল্যমান, নিজের বিশ্বাস স্থির করতে পারেনি। মনস্তাত্ত্বিক স্বত্ত্বা হিসেবে তার মধ্যে সংশয় ছিল বলেই কিন্তু চরিত্র হিসেবে সে আমার কাছে বেশি আকর্ষণীয়। ছোট ভাই ইতিমধ্যেই নিজের লক্ষ্য স্থির করে নিয়েছে, এতে তার স্বভাব-প্রকৃতি হয়ে গেছে বৈচিত্র্যহীন, চরিত্র হিসেবে হয়ে পড়েছে অপ্রয়োজনীয়। নকশাল আন্দোলন তার সবকিছু অধিগ্রহণ করে, ব্যক্তি হিসেবে সে হয়ে পড়ে গুরুত্বহীন।

সিনিঅ্যাস্ট: কিন্তু আদর্শিক অভিব্যক্তি ও আবেগময় অভিব্যক্তির মধ্যে কোন পার্থক্য করা কি সম্ভব? আইডিওলগ কি বুদ্ধিমান সত্ত্বা নয়? এ ধরণের ডাইকোটমি তৈরি করেন কিভাবে?

রায়: করা যাবে না কেন? আমি তো কোন কারণ দেখি না। যে বৃহত্তর আন্দোলনে যোগ দেয় সে তো নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের আদেশ-নিষেধের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, নেতারাই তো তাদের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। এই নেতৃস্থানীয়দের নিয়ে করা চরিত্রগুলো অবশ্যই কৌতুহলোদ্দীপক হবে। কোন বিপ্লবের প্রভাবশালী চরিত্র নিয়ে সিনেমা করা যায়। নকশাল আন্দোলন নিয়েও এমন সিনেমা করা সম্ভব, আইজেনস্টাইনীয় সিনেমা যাতে বিপ্লবের কাজকর্ম দেখানো হবে। কিন্তু ভারতের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এমন সিনেমা বানানো সম্ভব না।

সিনিঅ্যাস্ট: শুধু আমি না, আরও অনেকে মনে করে আপনি আবেগকে বেশি গুরুত্ব দেন। রবিন উড লিখেছেন, আপনি আদর্শ প্রকাশের থেকে মানুষের আবেগময় যোগাযোগ রূপায়নে বেশি আগ্রহী।

রায়: এটা একেবারেই ঠিক না। একটু গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখবেন, আমার সব সিনেমায়ই শক্তিশালী নৈতিক মানদণ্ড থাকে।

সিনিঅ্যাস্ট: এটা কি ধর্মীয় পরিবেশে বেড়ে ওঠার কারণে, অর্থাৎ ব্রাহ্ম হওয়ার কারণে?

রায়: আমার মনে হয় না। ব্রাহ্ম হওয়ার অর্থ কি তাই তো জানি না। চৌদ্দ-পনের বছর বয়সেই আমি ব্রাহ্ম সমাজের আচারানুষ্ঠানে অংশ নেয়া বন্ধ করেছিলাম। তাছাড়া আমি তো কোন সংগঠিত ধর্মে বিশ্বাসই করি না। ধর্ম শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে থাকতে পারে। সিনেমায় রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি রূপানের তুলনায় নৈতিক স্বভাব-চরিত্র প্রকাশে আমার আগ্রহ অনেক বেশি।

সিনিঅ্যাস্ট: নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিগুলো কি মাঝেমাঝে বেশি সরল হয়ে যায় না? যেমন “পিকু” তে সম্ভবত আপনি বোঝাতে চেয়েছেন, দাম্পত্য জীবনে অবিশ্বস্ততা বিভিন্ন রকম সমস্যার জন্ম দিতে পারে; কখনও মনে হয়েছে আপনি বলতে চাচ্ছেন, সামাজিক ও যৌন মূল্যবোধের পরিবর্তন সমাজ ও পরিবারের কাঠামোকে আহত করছে।

রায়: পিকু খুবই জটিল সিনেমা। এখানে বক্তব্যগুলো কাব্যিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তাই নির্দিষ্ট কোন উপসংহার টানা সম্ভব না। একটা বক্তব্য ছিল, কোন নারী যদি বিশ্বস্ত না হয়, যদি পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে নিজ সন্তানদের প্রতি তার আবেগ কমে আসবে। এক্ষেত্রে পিকুর মাধ্যমেই সেটা ফুটে উঠেছে। মা-ছেলে কখনও একসাথে বেরোয় না। এহেন পরিস্থিতিতে মা নির্দয় হয়ে যায়। পিকু সিনেমায় মা হয়ত যতটা না নির্দয় তার চেয়ে বেশি বাঙালি। পাশ্চাত্যের সাথে এখানে বাংলার পার্থক্য আছে। একই পরিস্থিতিতে কোন পশ্চিমা নারী এমন আচরণ করতো না।

সিনিঅ্যাস্ট: চারুলতা ইনফিডেলিটির (দাম্পত্য জীবনে অবিশ্বস্ততা) সমস্যা কিভাবে সমাধান করেছে? সিনেমা দেখে আমাদের মনে হয়েছে, সে স্বামীর কাছে ফিরে গেছে। সে কি আসলেই অবিশ্বস্ত ছিল নাকি কেবলই পরিবেশের শিকার।

রায়: সে অবিশ্বস্ত ছিল, কিন্তু একই সাথে দ্বিধায় ভুগছিল, কারণ তার স্বামী খুব ভালো। সে দুশ্চরিত্র ছিল না। চারুলতা সম্ভবত স্বামীর জন্য সহানুভূতি অনুভব করছিল এবং যেকোন উপায় পরিস্থিতি সামাল দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই ঘটনার জন্য যে সে নিজেই দায়ী তা বুঝতে স্বামীর অনেক দেরি হয়ে গেছে। এজন্যই সিনেমার শেষটা সমাধানহীন, তারা একসাথে হবে এমনটা বলা হয়নি, কারণ কোন মীমাংসায় পৌঁছানোর সময় তখনও আসেনি।

সিনিঅ্যাস্ট: সিনেমার চরিত্রগুলোতে আপনার নিজের আবেগ কতটা জড়িত? অশনি সংকেত আবার দেখার পর পলিন কেল মন্তব্য করেছেন, “গঙ্গাচরণ চরিত্রে রায়ের নিজস্ব ব্যক্তিত্বের কিছু ছাপ আছে, যেমন: তার খানিকটা অপরাধবোধ, দুর্বলতা এবং প্রত্যয়।” এটা কি ঠিক?

রায়: সমালোচকরা এটা ভুলে যান যে, আমি অন্য একজন সাহিত্যিকের উপন্যাস থেকে সিনেমা করেছি এবং উপন্যাসটা অনেক আগেই লেখা হয়েছিল। অশনি সংকেত এর গঙ্গাচরণ বিভূতিভূষণের লেখায় যেমন ছিল সিনেমাতেও প্রায় তেমনভাবেই এসেছে। তাই আসল প্রশ্ন হওয়া উচিত, লেখকের নিজের মধ্যে অপরাধবোধ বা দুর্বলতার অনুভূতি ছিল কি-না। আমি গল্পের স্রষ্টা নই, তাই আমাকে কেন শুধু শুধু এর মধ্যে টেনে আনা?

এটা সত্য যে, সিনেমার চরিত্রটি আমি একটি নির্দিষ্ট উপায়ে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি বলে চরিত্রটির পরিচয় ও সে সম্পর্কে আমার বোধ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমি গঙ্গাচরণের চালিকাশক্তি, স্বভাব ও প্রতিক্রিয়া বুঝি। আমার কাছে সে বিশ্বাস্য, একটি পরিপূর্ণ চরিত্র এবং সিনেমার শেষে তার রূপান্তর খুব মর্মস্পর্শী। তাই বলে সে আমার প্রতিফলন নয়।

সিনিঅ্যাস্ট: আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, যারা মূল বই পড়েনি তাদের পক্ষে আপনার সিনেমা বোঝা বা ব্যাখ্যা করা কঠিন হতে পারে?

রায়: হ্যা, যদি তারা মূল লেখককে একেবারে অগ্রাহ্য করে তাহলে কঠিন হবে। তারা পুরো ন্যারেটিভকে চলচ্চিত্রকারের মৌলিক সৃষ্টি হিসেবে দেখবে যা সবসময় ঠিক না। গল্প বা উপন্যাসের কোন উপাদান পছন্দ হলেই কেবল আমি তা থেকে সিনেমা করার সিদ্ধান্ত নেই। চিত্রনাট্য লেখার সময় কিছু অংশ পরিবর্তন করতে পারি কিন্তু মৌলিক ধারণা বা উপাদানগুলো একই থাকে। মাঝেমধ্যে চিত্রনাট্যটি মৌলিক গল্প বা উপন্যাসের সমালোচনা হিসেবে লিখি। গল্পটি অনেকবার পড়ার পর কখনও কখনও মনে হয়, অমুক চরিত্রটির লেখক যেমন দেখিয়েছেন তেমন আচরণ করার কথা না। তখন চরিত্রের কার্যক্রম কিছুটা পরিবর্তন করি। গল্পটা অনেকবার পড়ার যখন আমার মনে হয় পুরো বুঝেছি তখন সেটা সরিয়ে রেখে একেবারে শূন্য থেকে চিত্রনাট্য লেখা শুরু করি। লেখার সময় যেসব পরিবর্তন আসে সেগুলো সঠিক মনে হলে রেখে দেই। সিনেমাটা হয় পুরোপুরি চিত্রনাট্য অবলম্বনে।

সিনিঅ্যাস্ট: কিছু সমালোচক মনে করেন আপনি দারিদ্র্যকে ভাবের জগতে নিয়ে গেছেন। তারা বলেন, আপনার সিনেমায় দারিদ্র্য ও দুর্দশার কুৎসিত রূপটা দেখা যায় না।

রায়: আমি মনে করি, পথের পাঁচালী দারিদ্র্য প্রকাশের ব্যাপারে একেবারে নির্দয় ছিল। চরিত্রগুলোর ব্যবহার, ইন্দির ঠাকুরণের প্রতি সর্বজয়ার ব্যবহার প্রচণ্ড নির্মম। পরিবারের কোন সদস্যের প্রতি এমন নিষ্ঠুরতা আর কেউ দেখিয়েছে বলে আমার মনে হয় না। অশনি সংকেত এর গ্রামটি খুব সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে, পলিন কেল এদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, ববিতা এই সিনেমায় অনেকটা পুতুলের মত। কিন্তু পলিন কেল জানেন না যে, গ্রামের অনেক ব্রাহ্মণের স্ত্রীই খুব সুন্দর ছিল, এটা বাস্তবতা।

সিনিঅ্যাস্ট: অশনি সংকেত এর মূল বক্তব্য কী এমন ছিল না যে- এটা এমন এক দুর্ভিক্ষ যা খরার প্রকোপে শুকনো হয়ে যাওয়া শস্যক্ষেত বা ক্ষুধায় ক্লিষ্ট মুখের মাধ্যমে কোন আগমনী সংকেত দেয়নি, হঠাৎ করে শুরু হয়েছে?

রায়: হ্যা, সে দুর্ভিক্ষটা এমনই ছিল। সবাই যখন দলে দলে শহরে আসতে শুরু করে তখনই সবাই প্রথম বুঝতে পেরেছিল, শস্যের ফলন ভাল হওয়ার পরও মানুষ ক্ষুধায় মারা যেতে পারে। আমার রঙের ব্যবহার এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লেখকের বর্ণনা থেকেই আমি রঙের ধারণা পেয়েছি- প্রকৃতিতে তখন রসের প্রাচুর্য ছিল, সবকিছু ছিল অনিন্দ্য সুন্দর, তারপরও মানুষ ক্ষুধায় মারা যাচ্ছিল।

সিনিঅ্যাস্ট: আপনি, ফেলিনি, কুরোসাওয়া এবং বার্গম্যান একই সময়ে সিনেমা বানানো শুরু করেছিলেন। অনেক সমালোচক অনুভব করেন যে, আপনি অন্যদের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে গেছেন, ফেলিনি বা বার্গম্যান যেসব নৈসর্গ্যিক ও ন্যারেটিভ ঝুঁকি নিয়েছেন তা আপনি নেননি। প্রায় ত্রিশ বছরের চলচ্চিত্র জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে অন্যদের তুলনায় আপনি নিজেকে কিভাবে মূল্যায়ন করেন?

রায়: আমি মনে করি, আমি অনেক আগেই পরিপক্কতা অর্জন করেছি। আমার লক্ষ্য ছিল, খুব সরল ও সাধারণ ন্যারেটিভ কাঠামোর মধ্যে থেকে কত বেশি সিনেমা বানানো যায়, কত গভীরে প্রবেশ করা যায়। সিনেমা বানানোর সময় আমি পশ্চিমা দর্শকদের কথা মাথায় রাখি না, কেবল বাংলায় আমার নিজস্ব দর্শকদের কথা চিন্তা করি। তাদেরকে সাথে নিয়ে এগোতে চাই এবং আমি মনে করি এদিক থেকে আমি সফল। শুরুতে এই দর্শকদের সংবেদনশীলতা ছিল খুবই কম। হঠাৎ লাফ দিলে কি পরিণতি হয় তা “কাঞ্চনজঙ্ঘা” বা “অরণ্যের দিনরাত্রি” র যুগে ফিরে গেলেই বোঝা যায়। এসব সিনেমায় আমি দর্শক হারিয়ে ফেলেছিলাম।

দর্শকদের সাথে নিবিঢ়ভাবে সম্পর্কিত এমন ঝুঁকি ফেলিনি বা বার্গম্যান নেননি। বার্গম্যান সরলতা বজায় রেখেছেন, যদিও কখনও কখনও তাকে বিমর্ষ ও কর্কশ হতে দেখা গেছে; অনেক সময় চমৎকার চিত্রগ্রহণ তার সিনেমাকে সাহায্য করেছে। ফেলিনি বোধহয় একই সিনেমা বারবার বানিয়ে গেছেন, তার সিনেমায় প্রচুর শৈল্পিক অভিনবত্ব আছে। গল্প নিয়ে ফেলিনির তেমন আগ্রহ না থাকা সত্ত্বেও দর্শকরা তার অনন্য শৈল্পিক মাধুর্য দেখার জন্য হলে গিয়েছে।

বার্গম্যান ও ফেলিনি যা করেছেন তার সবকিছু আমার পক্ষে করা সম্ভব না। আমার তাদের মত দর্শক নেই, তাছাড়া আমি সেই কনটেক্সট এও কাজ করি না। আমার অধিকাংশ দর্শকই মূল্য বিচারে অক্ষম। ভারতের দর্শক নিয়ে আমাকে ত্রিশ বছর কাজ করতে হয়েছে, কিন্তু দর্শকদের সার্বিক রুচিতে এর মধ্যে বড় কোন পরিবর্তন আসেনি। বাংলায় তো নয়ই। সেখানকার অনেক পরিচালকের মূর্খতা ও অজ্ঞতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তাদের সিনেমাকে আবর্জনা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। আপনার বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে যে এসব সিনেমার সাথেই আমার সিনেমা দেখানো হয়। পরিবেশের চাপেই আমার সিনেমার গল্পকে বেশ সরল রাখতে হয়, দর্শকদের ধাক্কা দেয়া বা তাদেরকে আক্রমণ করার ঝুঁকি নেয়া যায় না। আমার পক্ষে সর্বোচ্চ যেটা করা সম্ভব তা হল, সিনেমাগুলোকে অর্থবোধকতা এবং মনস্তাত্ত্বিক মোড়ক পরিয়ে দেয়া। আমার সিনেমার নিগূঢ় অর্থ তাই ছায়ার মত থাকে, সরল-সহজ কথাগুলোই ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার অবকাশ থাকে, দর্শকদের কেউ চাইলে সে ছায়ার মাধ্যমে আমার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে।

*****

সূত্র: Copyright 1982 by Dan Georgakas. Reprinted by permission from The Cineaste Interviews: On the Art and Politics of the Cinema. Georgakas, Dan and Lenny Rubenstein, eds. Chicago: Lake View Press, 1982. (মাইক্রোসফট এনকার্টা)
মূল ইংরেজি সাক্ষাৎকার: Cineaste magazine interview with Satyajit Ray

২৪ টি মন্তব্য : “সত্যজিৎ রায়ের সাক্ষাৎকার: সিনিঅ্যাস্ট”

  1. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    ১.

    একটা মজার জিনিস বলি, আগে খেয়াল করেছিস কিনা জানি না। আমিও প্রথম যখন ছবিটা দেখি তখন বুঝিনি, পরে একটা লেখা পড়ে এইটা বুঝতে পেরে খুব মজা পেয়েছি-

    চারুলতা ছবিতে- এক সন্ধ্যেবেলা, ব্রিটেনের নির্বাচনে লিবারেলদের জয় উদযাপন করতে ভূপতিদের বাড়িতে সবাই জড়ো হয়েছে, গান-গল্পগুজব হচ্ছে। এর আগের দৃশ্যে চারু অনেক কাছে এসেছে অমলের, তার শার্টের হাতা চোখের জলে ভিজিয়ে দিয়েছে।
    ভূপতির ঘরের উৎসব থেকে চারু আর অমলের সন্ধ্যাবেলার আলাপ-------

    চারুঃ ......আগে বর্ধমান যাও, তারপর তো বিলেত। তাই না? কী গো?
    অমলঃ উঁহু, আগে বর্ধমান, তারপর বিয়ে, তারপর বিলেত।
    চারুঃ তারপর?
    অমলঃ তারপর ব্রিস্টল
    চারুঃ তারপর ব্যারিস্টার, তারপর?
    অমলঃ তারপর ব্যাক টু বেঙ্গল, ব্ল্যাক নেটিভ, বাপ বাপ বলে- কেমন? (হাতে একটা বই নেয়)
    চারুঃ বেঙ্গল? ব্যস ?
    অমলঃ এন্ড বঙ্কিম- বাবু বঙ্কিমচন্দ্র। বায়রন টু বঙ্কিম। বিষবৃক্ষ।
    চারুঃ আর বউঠান?
    অমলঃ (বই থেকে বিড়বিড় করে পড়ে) যা দেবী মম গৃহেষু পেত্নীরুপেন...
    চারুঃ বউঠান বাজে? বিশ্রী? বে...

    সত্যজিত এই সংলাপগুলি দিয়ে আশ্চর্য খেলেছেন। সব কথাই এখানে 'ব' দিয়ে। গল্পের সাথে একটুও বেমানান না করে, কত যে কথা বলা আছে এই অল্প ক'টা সংলাপে। চারু অমলের বিয়ের কথাটা এড়িয়ে বিলেতের কথাটা আগে বলেছিলো, কিন্তু অমলের শ্বশুর অমলকে বিলেত পাঠাবে তার মেয়েকে আগে বিয়ে করলে তবে। অমল সেই অপ্রিয় কথাটা চারুকে মনে করিয়ে দেয়। এ ও বুঝিয়ে দেয় বিলেত গিয়ে মাথা ঘুরে যাওয়ার ছেলে সে নয়, নিজের আর বাঙ্গালির অবস্থান তার জানা আছে। আর সেই জন্যে আসে বঙ্কিম আর বিষবৃক্ষে'র কথা। ওদের দু'জনেরই প্রিয় লেখক বঙ্কিম আর বিষবৃক্ষে যে অবৈধ প্রেমের কথা আছে তা তো সবারই জানা...

    এই ভাবনা শুধু অকল্পনীয় ক্ষমতাবান একজন চিত্রনাট্যকারই ভাবতে পারেন।

    ২.
    সত্যজিত গুরু মানুষ। তাকে নিয়ে যতোই বলি কম হবে। শুধুই মুগ্ধতা।

    ৩.
    আমার কাছে সত্যজিতকে নিয়ে একটা চমৎকার লেখা আছে। বিশাল বড় ফাইল, নইলে আপলোড করে দিতাম। দেখি তোকে মেইলে দিতে পারি কিনা।
    অনুবাদ ভালো হয়েছে। বেশ ভালো।


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  2. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    সবাই ভালো বলাতে আমি একটু সমালোচনা করার অবকাশ পেলাম। তোর অনুবাদ আমার কাছে সবসময়ই as a whole(অর্থ জানতে চাই) ভালো লেগেছে। কিন্তু এই লেখায় যেন আবেগ পেলাম না। লেখাটা শুষ্ক বিদ্যাসাগরীয় ভাষায় লেখা বলে মনে হল। প্রমথ চৌধুরী বা মুজতবা আলীর লেখার ধরনের যে তারল্য সেটার অভাব বেশ অনুভব করলাম। আমি এটা বলছিনা যে তোকে ওঁদেরমতই লিখতে হবে, কিন্তু ওনাদের লেখার শৈলীটা ধারন করতে পারলে মনে হয় অনুবাদটা আর একটু সুখপাঠ্য হত(অন্তত আমার কাছে)।

    জবাব দিন
    • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

      প্রথমেই সমালোচনার জন্য সাধুবাদ। এরকম মন্তব্য পেলেই লেখাটা সার্থক হয়েছে মনে হয়।
      তোর কথা ঠিক, আমার সাক্ষাৎকার অনুবাদের ভাষা একেবারেই নিরস থেকে যাচ্ছে। এএটা যথেষ্ট শ্রম না দেয়ার ফল। আসলে খুব বেশি না ভেবে দ্রুত অনুবাদ করে ফেলছি, ভাল অনুবাদ করতে হলে অনেক শ্রম দিতে হয়। আগে করা বেশ কিছু প্রবন্ধের অনুবাদে যে শ্রম দিয়েছিলাম সাক্ষাৎকারে সে তুলনায় কোন শ্রমই দেইনি। "বাংলাদেশ: আশায় নতুন জীবনের বসতি" অনুবাদ করতে যেখানে আমার প্রায় ১০-১৫ দিন লেগেছিল সেখানে এই সাক্ষাৎকারগুলা ১-২ দিনে শেষ করে ফেলছি। এটাই কারণ।

      আর সাক্ষাৎকার অনুবাদে খুব বেশি গুরুত্ব না দেয়াও একটা কারণ। কারণ এগুলো নিছক কথোপকথন, সাহিত্যিক গুরুত্ব বেশ কম। ভাষণ বা নাটকের মত সাক্ষাৎকার কোন সাহিত্য মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি এবং পাওয়ার সম্ভাবনাও খুব একটা নেই। এজন্যই অনুবাদগুলো করছি কেবল তথ্য সংগ্রহের খাতিরে।

      তারপরও অনুবাদ সুখপাঠ্য রাখা আবশ্যক। ভবিষ্যতে আরও সাবলীল করার চেষ্টা করব।

      জবাব দিন
  3. শাহরিয়ার (২০০৪-২০১০)

    দারুন কাজ!
    কিন্তু পথের পাঁচালীকে নিয়ে আমার একটা কথা বলার আছে!পথের পাচালী সিনেমাটা কেন যেন তেমন ভালো লাগে নাই!মনে হয় হলিউডের সিনেমা দেখে দেখে চোখ খারাপ হয়ে গেছে!কিন্তু পরে যখন বইটা পড়লাম,মনে হচ্ছিল বিভূতিভূষণের থেকে অনেক দুরের রয়ে গেছে সত্যজিৎ!পথের পাঁচালী এবং অপরাজিত,দুই জায়গাতেই বিভূতি গ্রাম দেখানোর চেয়ে মনে হয় দারিদ্রতা আর তার নির্মমতা দেখাতে চেয়েছেন!আমার ভুলও হতে পারে,তবে পথের পাচালী তো মাত্র শুরু,এর চেয়ে আমার অপরাজিতকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে!আর অপরাজিততে গ্রামের চেয়ে শহরকে প্রাধান্য মনে হয় বেশী দিয়েছেন বিভূতিভূষণ!


    People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.

    জবাব দিন
    • মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

      আমার কাছে এখনও সত্যজিতের অন্যতম সেরা কীর্তি "অপু ত্রয়ী"। তিনটা সিনেমাই অসাধারণ।
      বইয়ের সাথে সিনেমার তুলনা দেয়ার কোন মাপকাঠি নেই। বিভূতি যা বোঝাতে চেয়েছেন সত্যজিৎ যে হুবহু সেটাই তুলে ধরতে চেয়েছেন তা ঠিক না। আমার কাছে শিল্প বিচারে উপন্যাস আর সিনেমা দুটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুয়ের মধ্যে তুলনা করলে কি হবে জানি না। হয়ত বিভূতিই এগিয়ে থাকবেন। কারণ সাক্ষাৎকার পড়ে তো বুঝেছ, সত্যজিৎ নিজেই তার দ্বারা কতটা প্রভাবিত! আমারও প্রিয় ঔপন্যাসিক বিভূতিভূষণ।

      উপন্যাসের কলেবর অনেক বড়। উপন্যাস আসলে সিনেমা করার জন্য উপযোগী রিসোর্সও না। সবচেয়ে ভাল হয় নভেলা বা ছোট-বড় গল্প থেকে সিনেমা করলে, ভাল বলতে আমি বোঝাচ্ছি গল্পের প্রতি সিনেমাতেও সুবিচার করা হয়। কিন্তু সিনেমায় উপন্যাসের প্রতি সুবিচার করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। সত্যজিতের চিত্রনাট্য লেখার পদ্ধতিটা দেখলেই বুঝবে:
      - পুরো উপন্যাস বা গল্প নয় সেটার কিছু উপাদান ও থিম পছন্দ হলেই তা থেকে সিনেমা বানানোর সিদ্ধান্ত নেন।
      - উপন্যাস অনেক বার পড়ে চরিত্র ও পরিবেশ বোঝার চেষ্টা করেন।
      - সব বোঝা হয়ে গেলে উপন্যাস দূরে রেখে একেবারে শূন্য থেকে চিত্রনাট্য লেখা শুরু করেন।

      স্বভাবতই উপন্যাসের সবকিছু সিনেমায় আসবে না। যেটুকু পরিচালক চাইবেন কেবল সেটুকুই আসবে। সিনেমায় সত্যজিৎ যা বলতে চেয়েছেন তা সবচেয়ে ভাল উপায়ে বলতে পেরেছেন বলেই পথের পাঁচালী এত বিখ্যাত, উপন্যাসের প্রতি সুবিচার করার কারণে নয়। পথের পাঁচালী এর চেয়ে ভালভাবে বানানো যেতো বলে আমার মনে হয় না। যদিও সত্যজিৎ তাই মনে করেন। "বিষয় চলচ্চিত্র" বইয়ে লিখেছেন, পথের পাঁচালী করার সময় তিনি নবীন ছিলেন এবং তার অনেক দুর্বলতা ছিল। কিন্তু সেগুলো কোন থিমেটিক বা বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট দুর্বলতা না, দৃশ্যায়ন এবং টেকনিক্যাল দুর্বলতা। তার মানে পথের পাঁচালীর থিম নিয়ে সত্যজিৎ কখনও অন্যভাবে ভাবেননি।

      জবাব দিন
  4. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    দারুণ কাজ করেছো মুহাম্মদ। যদিও দেরিতে পড়লাম। কিছুটা ফ্রি হয়ে। হীরক রাজার দেশের মতো রাজনৈতিক চলচ্চিত্র, সেটা অল্প বয়সে দেখেই বুঝেছিলাম। এরশাদ শাসনামলে এর অনেক সংলাপ আমাদের রাজপথের শ্লোগান ছিল। জহীর রায়হানের জীবন থেকে নেয়া যেমন বারবার দেখেও তৃপ্তি মেটে না। অনুবাদ ভালো হয়েছে। তবে আরো সাবলীল হতে পারতো। আসলে অনুবাদটা করার পর লেখাটা একাধিকবার রিভিশন দিলে টুকটাক শব্দ বদলে, বাক্যের গঠন বদলে অনেক ঝরঝরে করে ফেলা যায়। এই পদ্ধতিটা মনে রেখো।

    সত্যজিতের এই মন্তব্যটা উদ্ধৃত করা লোভ সংবরণ করতে পারলাম না। দারুণ, অসাধারণ পর্যবেক্ষণ। তোমাদের দুজনকেই :hatsoff: :hatsoff:

    সামন্ত প্রথা ভুল এবং নির্বুদ্ধিতা এটা বললে অবশ্যই বিভিন্ন পক্ষ থেকে আক্রমণের ঝুঁকি থাকে। কিন্তু এ ধরণের সিনেমার চরিত্রগুলো সম্পর্কে এক ধরণের সহানুভূতি অগ্রাহ্য করা যায় না। তাদের অবস্থা খুব করুণ, অনেকটা ডাইনোসরের মত যারা নিজেদের ধ্বংস হওয়ার কারণটাও জানতে পারেনি। এসব চরিত্রের প্রতি যে করুণা করতে হয় তাতে আমি বেশ আগ্রহী।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  5. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    সত্যজিতের কোন খারাপ কাজ আমি দেখি নি। অপু ত্রয়ী অসাধারণ।
    আমার কাছে বালা, টু আর সিকিম নেই। কারো কাছে থাকলে কিভাবে পেতে পারি!
    অশনি সঙ্কেত ভয়ে দেখিনি। সাহস করে উঠলেই দেখে ফেলবো।
    তুই কি জলসাঘর আর শতরঞ্জ কি খিলাড়ি নিয়ে কোন লেখা লিখেছিস?


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : টিটো রহমান (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।